tag:blogger.com,1999:blog-82746030026912990242024-03-13T10:59:39.910-07:00KALAM AZADসমাজ পরিবর্তনের অঙ্গীকারাবদ্ধKalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.comBlogger37125tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-23806149840954540022020-03-07T01:27:00.000-08:002020-03-07T01:27:27.321-08:00কক্সবাজারের রাজনীতি<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
হাজার বছর ধরে বিকশিত বাঙালি জাতি বিজাতীয় শাসন-শোষণে পিষ্ট হয়েছে দীর্ঘকাল। কিন্তু একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ার মতো চেতনা, ঐক্য ও অবস্থা সে সময়ে হয়নি। তাই বলশালী রাজরাজড়াদের দখলী সত্ত্ব মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু বৃটিশ শাসনামলে বাঙালির রাজনৈতিক সত্ত্বা দ্র্রত বিকশিত হতে আরম্ভ করে। শোষক ও লুণ্টক বৃটিশ সাম্রাজ্যের অন্যায় আর জুলুমের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে বাঙালির রাজনৈতিক সত্তা পুষ্ট ও পোক্ত হয়ে ওঠে। ১৮২৬ সালের ১৭ জানুয়ারী যুক্ত প্রদেশের সৈয়দ এর নেতৃত্বে সংগঠিত ওয়াহী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর ১৮৫৭ সালের সিপাহী সিপ্লব, ১৮৫৬-৬০ খ্রিস্টাব্দের নীলকর বিদ্রোহ, ১৯০৬ বঙ্গবঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহ এ বাংলায় সংগঠিত হলেও ১৯১৯ সালের খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের লোকেরা রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠে। এ সময় থেকে বৃটিশ কর্মকর্তা হিরাম কক্সের নামানুসারে নামকরণকৃত কক্সবাজারের রাজনীতির চিত্র পাওয়া যায়। এ আন্দোলনের পর থকে ভারত-পাকিস্তানে যে সব আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে তার সবকটি আন্দোলনে কক্সবাজারের অবদান উল্লেখ করা করা মতো। কক্সবাজারের রাজনীতি লিখতে গেলে প্রথমে কলমের ডগায় যার নাম চলে আসেন তিনি আবদুল মজিদ সিকদার। তিনি প্রথমে কংগ্রেসের রাজনীতি জড়িত হলেও খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। কিন্তু এ বিষয়ে আলোচনা করার আগে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে একটু জেনে নেওয়া দরকার। ১৯১৪-১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তুরষ্কের অখন্ডতা রক্ষা ও তুর্কী সুলতান বা খলিফার মর্যাদা, কতৃত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য বাঙালি মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় নেতাদের উদ্যোগে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেয় যা ইতিহাসে খেলাফত আন্দোলন নামে পরিচিত। ১৯১৯ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি কলকাতায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, নিখিল ভারতীয় কংগ্রেস নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বর্ধমানের আবুল কাশেম, দি মসুলমান পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক মজিবুর রহমান, এডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা মনিরুজ্জামান এসলামাবাদী, মাওলানা আবদুল্লাহেল বাকী, জাতীয় কংগ্রেস সদস্য মাওলানা মহম্মদ আলী ও শওকত আলী প্রমুখের নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের নভেম্বর মাসে মহম্মদ আলী, শওকত আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখের নেতৃত্বে দিল্লীতে সর্বপ্রথম সর্বভারতীয় খেলাফত আন্দোলনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং মিত্রশক্তির বিজয়ে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ভারতবর্ষে শান্তি উৎসব এর বিরোধিতা করে এ প্রস্তাব গ্রহীত হয়। এ সম্মেলনের মাধ্যমে খিলাফত আন্দোলন একটি কেন্দ্রে সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। এতে প্রধানত ১৯১৮ সালে মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা বামপন্থী পেটি বুর্জোয়া অংশটির হাতেই খিলাফত আন্দোলনের নেতৃত্ব ন্যস্ত হয়েছিল। আন্দোলনের নেতাদের কাছে তুরস্ক সাম্রাজ্যের পতন ও সুলতানের পদচ্যুতি আসলে প্রাচ্যে পাশ্চাত্য-শক্তির, বিশেষত ব্রিটিশ নীতির প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে প্রকটিত হওয়ায় আন্দোলনটি অচিরেই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বৈশিষ্ট্য লাভ করে। অন্যদিকে এ সময় আফগানিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলে এ আন্দোলনের প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এ বাঙলা তথা পূর্ব বাঙলার যে সব বাঙালি মুসলমান নেতা খেলাফত আন্দোলন জমিয়ে তুলেছেন তার মধ্যে অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা মনিরুজ্জামান এসলামাবাদী ছিলেন চট্টগ্রামের পটিয়ার কৃতিসন্তান। তিনি পটিয়ার লোক হওয়ায় খেলাফত আন্দোলনের প্রভাব সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার মহকুমায়ও এর প্রভাব পড়ে। এ সময় কক্সবাজারের রামু, কুতুবদিয়া ও চকরিয়ার গ্রামে গ্রামে সমাবেশ মিছিল হতো এবং ওই সব সভায় ইসলাম রক্ষার্থে ব্রিটিশকে এ দেশ থেকে তাড়াতে ব্রিটিশের শোষণ নীতি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে ভারত মাতাকে স্বাধীন করতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সচেতনতা সৃষ্টির কাজে মনোযোগ দেন এখানকার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। খেলাফত আন্দোলনে কক্সবাজারের যারা জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারাবন্দী নেতা আবদুল মজিদ সিকদার, পেকুয়ার জমিদার গোরা মিয়া চৌধুরী, কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল এলাকার মাওলানা আজিজুর রহমান, মাওলানা আফজালুর রহমান, চকরিয়ার বদিউজ্জামান আল কাদেরী, জোয়ারিয়ানালার মাওলানা মুজহেরুল হক চৌধুরী, রাম মোহন বড়–য়া, অগ্নিযুগের বিপ্লবী সুরেশ চন্দ্র সেন, এডভোকেট জ্যোতিশ্চর চক্রবর্তী, প্রমুখ। তারা তৎকতালিন কক্সবাজার মহকুমায় খেলাফত আন্দোলনকে গতিশীল করেন। তারা খেলাফত আন্দোলনের স্বপক্ষে ধুতি ছেড়ে লুঙ্গি পড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছেন। ওই সময় মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকীও সাধনা পত্রিকায় খেলাফত ও স্বদেশী আন্দোলনের স্বপক্ষে বিদেশী পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়ে সম্পাদকীয় ও প্রবন্ধ লিখে বাঙালি সমাজকে জাগরণ করার কাজ করেন। <br />
এ দিকে খেলাফত আন্দোলনের সফলতা দেখতে পেয়ে নিখিল ভারতীয় কংগ্রেসের মহাত্মা করম চাঁদ গান্ধী এ আন্দোলনকে সমর্থন জানান। জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বাধীন খেলাফত কমিটির সঙ্গে গান্ধী ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষা করে ওই আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের সাথে সার্বিক সহযোগিতা ও আলোচনাক্রমে মহাত্মা গান্ধী ও তার অনুগামীরা অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এ আন্দোলন শুরু হয় ১৯২০ সালের ১ আগস্ট থেকে। গান্ধাজী ছাড়াও লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক ও কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারা ভারতের মুসলমানদের এই খেলাফতের দাবীর প্রতি সমর্থন জানান। ফলে বিষয়ে বড়লার্টের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় নেতৃস্থানীয় এক বৈঠক হয়। এ বৈঠকে গান্ধী নতুন এক প্রস্তাব পেশ করে যা পরবতী অসহযোগ আন্দোলনের রূপ নেয়। আন্দোলনের এক পর্যায়ে গান্ধী ও খিলাফত কমিটি এবং মুসলিম লীগের অনুগামীরা বয়কট কর্মসূচী পেশ করেন। ১৯২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, খিলাফত কমিটির সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা লাল লজপাত রায়, চিত্তরঞ্জন দাশসহ বহু প্রতিষ্ঠিত নেতাদের আপত্তি সত্বেও গান্ধী উত্থাপিত অসহযোগ কর্মসূচীর অনুমোদন হয়। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর নাগপুরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলনে তা সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। ওই সময় চিত্তরঞ্জন দাশসহ পাঞ্জাব কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও এ প্রস্তাব গ্রহীত হবার পর কংগ্রেস থেকে চিরদিনের জন্য সম্পর্ক ত্যাগ করলেন।১ ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচী ছিল নিম্নরূপ : বিদেশী পণ্য বর্জন, ব্রিটিশ প্রদত্ত খেতাব পদবী বর্জন, সম্মানসূচক নিয়োগ ও উপাধি, সরকারি সংবর্ধনা, সরকার মনোনীত ভারতীয় সদস্যদের আইনসভা থেকে পদত্যাগ এবং আইন সভার নির্বাচন বর্জন, ব্রিটিশ স্কুল কলেজ আদালত বর্জন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে চরকার সুতা কাটায় উৎসাহ প্রদান, পঞ্চায়েত গড়ে তোলা এবং এ ব্যবস্থাকে সুসংহত করা, সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং সরকারী কর বন্ধ।২<br />
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের সামান্তরাল বিকাশের ফলে এবং পারস্পরিক গ্রহণ-সমর্থনের ফলে ভারত বর্ষের দুটি ধর্মীয় প্রধান সম্প্রদায় হিন্দু ও মসুলমানের জন্য মুক্তিসংগ্রামের সহযোগিতা ও যৌথ কর্ম পরিচালনার অনুকূলে পরিস্থিতি দেখা দেয়। পাশাপাশি সমগ্র ভারতবর্ষের জমিদারদের পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণীর অধিকাংশ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের তীব্রতা দ্বিগুন বৃদ্ধি পায়। <br />
এ আন্দোলনের ফল্গু সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজারেও ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের সংগ্রামী নেতা মাওলানা মনিরুজ্জামান এসলামাবাদী, ব্যারিষ্টার যতীন্দ্র মোহন সেন, কাজেম আলী মাস্টার, মাওলানা পীর নুর আহমদ প্রমুখের সখ্যতার কারণে রামুর আবদুল মজিদ সিকদারের নেতৃত্বে কক্সবাজারে অসহযোগ আন্দোলন সংঘটিত হয়। আবদুল মজিদ সিকদার প্রথম মহাযুদ্ধের সময় রামু থানা থেকে লোকাল বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। প্রথমে কংগ্রেসে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন কিন্তু পরে কংগ্রেসের সাথে আদর্শগত মিল না হওয়ায় কংগ্রেস ত্যাগ করে খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন এবং এ আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। <br />
একজন সচেতন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচীর সাথে একাত্মতা পোষণ করে কক্সবাজার লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তিনি পুরো কক্সবাজার মহকুমা জুড়ে অসযোগ আন্দোলনের রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ ও সম্মেলনের আয়োজন করতেন। তবে ্ওই বেশী প্রাধান্য পায় রামু সদর এলাকা। এ সময় তিনি রামু চৌমুহনীতে একটি খাদিখানা ও একটি সরাইখানা চালু করেছিলেন অসহযোগ আন্দোলনকাীদের জন্য। সক্রিয় রাজনীতির সুবাধে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, চট্টগ্রামের মাওলানা মনিরুজ্জামান এসলামাবাদী, ব্যারিষ্টার যতীন্দ্র মোহন সেন, বরিশালের শরৎ চন্দ্র, হাবিবুল্লাহ বাহারসহ তৎকালিন নেতবৃন্দ এসব সমাবশে যোগ দিতেন এবং জ্বালাময়ী ভাষণ দিনে। আবদুল মজিদ সিকদারের কারণে রাজনৈতিক সচেতনা এবং বৃটিশ বিরোধী মনোভাবের কারণে তৎকালিন কক্সবাজার মহকুমার মধ্যে রামু থানা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে পড়ে। <br />
রামু খিজারী ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, চিত্তরঞ্জন দাশ, কাজেম আলী মাস্টার, মনিরুজ্জামান এসলামাবাদী, মাওলানা আবদুল্লাহেল বাকী, শওকত আলীসহ উপমহাদেশ বরেণ্য ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয়সহ কক্সবাজার মহকুমার বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সভা সমাবেশের কথা সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বৃটিশ বিরোধী রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এর অনুমতি প্রদানের দায়ে রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয়কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাই স্কুল বাতিল করে সকল সহযোগিতা বন্ধ করে দেয় বৃটিশ সরকার।৩ আর এসব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন আবদুল মজিদ সিকদার। শুধু রামু নয়, সমগ্র মহকুমায়ও তাকে এ আন্দোলনের পক্ষে সভা-সমাবেশের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। এরকমই এক রাজনৈতিক সমাবেশ হয় উখিয়ার কোটবাজারে। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে হওয়া এ সমাবেশে বৃটিশ বিরোধী বক্তৃতা রাখার সময় বৃটিশ সরকারের পুলিশ বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। তার সাথে অন্য যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন তৎমধ্যে মাওলানা ওয়াজেদ আলী মক্কী ও রাস মোহন বড়–য়া অন্যতম। তাদের গ্রেফতারের পরে কক্সবাজার মহকুমার বহুলোক (বিশেষ করে রামু ্ও উখিয়া থানার) স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে এগিয়ে আসে। আবদুল মজিদ সিকদারই কক্সবাজারের প্রথম রাজনৈতিক বন্দী বা রাজবন্দী। <br />
উখিয়ার কোটবাজার থেকে আটক আবদুল মজিদ সিকদারকে গ্রেফতারের পর কক্সবাজার মহকুমা হাকিমের তৎকালিন এস.ডি.ও (সাব-ডিভিশনাল অফিসার) এম.এ. জি ইলিশন এর আদালতে হাজির করা হয়। এসডিও এলিশন তাকে প্রশ্ন করেন-‘‘What are the aims and objects of your agitation ? ’’ (আপনাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী?)<br />
উত্তর দেওয়ার আগেই আবদুল মজিদ সিকদার কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক এম এ জি এলিশনের কাছে একটি প্রশ্ন করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। মহকুমা প্রশাসক তাকে প্রশ্ন করার অনুমতি দিলে মহকুমা প্রশাসকের কাছ থেকে উল্টো জিজ্ঞেস করেন- ‘‘ÔÔWhy are the Scottish in your country struggling against the British government ?(স্কটিশরা বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে রত কেন ?’) প্রশ্ন শুনে এম এ জি এলিশন কোন ধরণের উত্তর না দিলেও মনে মনে ক্ষুব্ধ হন। এ সময় আবদুল মজিদ সিকদার আগের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘We are agitating to drive away the foreign looters from our land (আমাদের দেশ থেকে বিদেশী দস্যুদের তাড়ানোর জন্যই আমাদের আন্দোলন)’’।৪ এতে এসডিও এম.এ.জি এলিশন ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুল মজিদ সিকদারকে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। এ সময় দেশখ্যাত নেতা ব্যারিষ্টার যতীন্দ্র মোহন সেন আবদুল মজিদ সিকদারের পক্ষে ওকালতি করলেও মহকুমা প্রশাসক মজিদ সিকদারের কারাদন্ড দেবে সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাকে মুক্তি করা সম্ভব হয়নি। এর পরই তাকে কক্সবাজার কারাগার থেকে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। প্রায় কয়েক মাস পর মুক্তিপান তিনি। <br />
স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম গোরা মিয়া চৌধুরী স্বদেশী আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে খদ্দরের কাপড় ও মাটির তৈরী থালা বাসন ব্যবহার করেন এবং তার প্রজা সাধারণ, কক্সবাজারের আপামরণ জনসাধারণকে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানান।<br />
কুতুবিদয়ার কৈয়ারবিল নিবাসী মাওলনা আজিজুর রহমান খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের সংগঠক হিসেবে কুতুবদিয়া, চট্টগ্রাম, সীতাকুন্ড, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ঢাকা ও কলকাতায় খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভুমিকা রাখেন। তিনি সীতাকুন্ড আলীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার সময় এ আন্দোলন সংঘটিত হওয়ায় ওই সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্রকে এ আন্দোলনে দীক্ষিত করেছেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামের তার অনেক ছাত্রই এ আন্দোলনের শরীক হন। খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ধারার উপর তিনি তিন/চারটি পুস্তক রচনা করেছিলেন বলে যানা যায়। একজন বাগ্নী হিসেবে তাঁর সুখ্যাতি অবিভক্ত বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর অগনিত শিষ্যদের মধ্যে কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিলের স্বাধীনতাসংগ্রামী মাওলানা আফজালুর রহমান অন্যতম । খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে বৃটিশ বিরোধী বক্তৃতা রাখার দায়ে মাওলানা আফজালুর রহমানকে গ্রেফতার করে বৃটিশ পুলিশ। তিনি প্রায় ৩ মাস রাজবন্দী হিসেবে কারাগারে ছিলেন। <br />
বৃটিশ বিরোধী খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন অভিবক্ত বাংলার মুসলিম সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা চকরিয়ার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী। তিনি সরাসরি খেলাফত আন্দোলনে অংশ নেয়ার পাশাপাশি এসব আন্দোলনের পক্ষে প্রচুর লেখালেখি করেন। জাতীয় জাগরণের সাপ্তাহিক সংবাদপত্র হিসেবে সাপ্তাহিক ‘মোসলেম জগৎ’ নামে একটি পত্রিকা সম্পাদন করেন ১৫ আগস্ট ১৯২২সালে। প্রকাশ করতেন আন্তনী বাগান লেন ঠিকানা থেকে। ভারতের স্বাধীনতা প্রশ্নে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ও তার ফলাফল স্বপক্ষে তুলে ধরেন ওই পত্রিকায়। ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বাধীনতার মন্ত্রে জাগানো জন্য লেখনী ধারণ করেন তিনিও। ১৬ অক্টোবর ১৯২২ বাংলা ১৩২৯, ১৭ আশ্বিন সংখ্যায় ‘ সময় থাকতে সাবধান, বুঝে চল ব্রিটিশ’ শীর্ষক সম্পাদকীয় লিখে রাজরোষের শিকার হয়। ওই সম্পাদকীয় লেখার কারণে ভারতীয় দন্ডবিধির ১২৪-এ ১৫৩-এ ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। ওই সময় তিনি চকরিয়ার বাড়িতে ছিলেন। বাড়ি থাকাকালীন সময়ে ১৯২৯ সালের ৩১ অক্টোবর কলাকাতা থেকে টেলিগ্রাম পান যে, সরকার বিরোধী সম্পাদকীয় লেখার জন্য তার বিরুদ্ধে বেঙ্গল গর্ভমেন্টের চীফ সেক্রেটারির নামে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে। আবদুর রশিদ সিদ্দিকী চীফ সেক্রেটারির কাছে তার করে সময় নিয়ে এক মাস পরে কলকাতা গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। সরকার পক্ষ থেকে তাঁকে অসযোগ ও খেলাফত আন্দোলনের পক্ষালম্বন করার পরিবর্তে বিনাশর্তে অভিযোগ প্রত্যাহার এবং চার হাজার টাকা এককালীন সাহায্য হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু সিদ্দিকী সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তার আত্মজীবনীর ভাষায় ‘‘ আমি বলিলাম নিজের আত্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে আমি এক লক্ষ টাকা পাইলেও নিজেকে ভাসাইয়া দিতে পারিবনা। প্রায় ১ ঘন্টাকাল কথাবার্তার পর আমি আমার শেষ অভিমত জানাইলাম যে, আমি একখানা পত্র দিব, তাহাতে সরকার যদি আমাকে মুক্তি দেন ত ভালই নতুবা যাহা ইচ্ছা করিতে পারেন। পত্রটি নিম্নরূপ :‘‘আমি রাজদ্রোহী নহি। রাজদ্রোহ প্রচার করাও আমার লক্ষ নহে। এ পর্যন্ত রাজদ্রোহ মূলক কোন প্রবন্ধ আমি প্রকাশ করি নাই। সুতরাং আমার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আসিতে পারে না। ’’<br />
কিন্তু এ চিঠি পৌছার আগেই ১৯২২ সালের ২২ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ১০টায় পুলিশ সার্জেন্ট তার বাসা, বাগবাজারের ছাপাখানা এক এক করে ঘিরে ফেলে এবং তিন দল পুলিশ তিন দিকে তিন জায়গা হানা দেয়। বাসায় প্রবন্ধ লিখার সময় পুলিশ সার্জেন্ট ওয়ারেন্ট দেখিয়ে ‘মোসলেম জগৎ’ সম্পাদক আবদুর রশিদ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করে। তাকে প্রথমে লালবাজার পুলিশ কোর্ট এবং পরে চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে হাজির করা হয়। চীফ ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমা ভিক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য মোচলেকা দিতে বললে সিদ্দিকী প্রত্যাখান পূর্বক উল্টো বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে অভিমত প্রকাশ করে। যার ফলে তাকে প্রেসিডেন্সী জেলে প্রেরণ করা হয়। ওই কারাগারে তখন কাজী নজরুল ইসলামও কারাবন্দী ছিলেন। ইতোমধ্যে সিদ্দিকী লিখিত সম্পাদকীয় এর ব্যাখ্যা দিয়ে চিঠির প্রেক্ষিতে চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে জেল থেকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন। ১৮ দিন পর মোসলেম জগৎ সম্পাদক মুক্তি লাভ করেন।৫<br />
১৯২২ সালের ফেব্র“য়ারি আসামে সংঘটিত পুলিশ হত্যাকান্ডে মর্মাহত হয়ে মহাত্মা গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করে দিলেও খেলাফত আন্দোলন ১৯২৪ সালে মোস্তফা কামাল পাশা তুরস্কের নেতৃত্ব গ্রহণ পূর্বক খিলাফত অবসান ঘোষণা পর্যন্ত এ বাংলায় বিদ্যমান ছিল।<br />
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রবাদপুরুষ অগ্নিযুগের বিপ্লবী এডভোকেট সুরেশ সেন। তিনি ১৯২১ সালে স্কুলে অধ্যয়নকালে বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে স্বদেশী আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ১৯২১ সালে গ্রামে গ্রামে তরুণদের সংগঠিত করে স্বাধীন জন্মভূমির স্বপ্ন দেখার কাজ তাঁরা শুরু করেন। যেটা এখনো যেকোন দেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তির মন্ত্র হিসেবে মানুষকে সবসময় অনুপ্রেরণা যোগায়। ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় স্কুলে পড়াশুনা করেন। ঠিক ওই সময় মাস্টার দা সূর্য সেন পড়াশুনা জীবনের ইতি ঘটিয়ে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলে মাস্টারী শুরু করেছেন। ওই বছর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ অসহযোগ আন্দোলনের কাজে চট্টগ্রাম আসেন। এ উপলক্ষে এক বিরাট জনসভা হয়। এই জনসভায় চট্টগ্রামের প্রায় স্কুল-কলেজের ছাত্ররা যোগ দেন। এতে সুরেশ চন্দ্র সেনও ছিলেন। এর পরে প্রতিটি আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেনের সহকর্মী হিসেবে সুরেশ সেন অংশ গ্রহণ করেন। ১৯২৪ সালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে ডাকাতি, বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক ডাকাতি ও বিপ্লববাদীদের সশস্ত্র কার্যকলাপের কারণে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে ব্রিটিশ “বেঙ্গল অর্ডিনান্স”নামে এক জরুরি আইন পাশ করে। এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল “রাজনৈতিক কার্জকলাপের জন্য সন্দেহভাজনদের বিনা বিচারে আটক রাখা”। এই আইন পাশ হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকার সশস্ত্র বিপ্লববাদীদের গ্রেফতার করা শুরু করে। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সূর্য সেন সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করেন। ইংরেজদের সাথে যুদ্ধকালীন সময়ে চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহীরা বৃটিশদের হাত থেকে বীর চট্টলাকে ১৮-২২ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪ দিন মুক্ত এবং স্বাধীন রাখে। যুদ্ধের এক পর্যায়ে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবী অনন্ত সিংহ, অনিল মুখার্জী, বিনোদ বিহারী চৌধুরী, বিনোদ দত্ত, শৈলেশ্বর চক্রবর্তী, সুরেশ চন্দ্র সেন, জিতেন দাশগুপ্ত, সুরোজ গুহ, কালী দে, মধুসূদন দত্ত, কালী চক্রবর্তী, অর্ধেন্দু দস্তিদার, মতি কানুনগো, বিধু ভট্টাচার্য, নারায়ন সেন, পুলিন ঘোষ, নিরঞ্জন রায়, কৃষ্ণ চৌধুরী, ক্ষীরোদ ব্যানার্জি, দ্বিজেন দস্তিদারসহ একদল যুব বিদ্রোহী চট্টগ্রামে বৃটিশ পতাকা (ইউনিয়ন জ্যাক) নামিয়ে সর্বভারতীয় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। এ যুব বিদ্রোহকে ইতিহাসবিদরা ভারতীয় বিপ্লবী কাজের কর্মকান্ডের সবচেয়ে সাহসী কাজ বলে মন্তব্য করেন ৬<br />
মাত্র ২৫ বছর বয়সে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল বৃটিশ বিরোধী চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ এবং ঐতিহাসিক জালালাবাদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন সুরেশ সেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করার পূর্ব প্রস্তুতি পর্বের সকল কর্মসূচীর সাথে সুরেশ চন্দ্র সেন যুক্ত ছিলেন। ১৮ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল সংঘটিত বৃটিশ বিরোধী সকল যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। তিনি ২২ এপ্রিল ঐতিহাসিক জালালাবাদ যুদ্ধে মরণপণ লড়াইয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। তার সাথে বিনোদ বিহারী, বিনোদ দত্তও গুরুতর আহত হন।৭<br />
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করার ব্রিটিশ পুলিশ বিপ্লবীদের গ্রেফতার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। বিপ্লবী দলের অনেকেই চট্টগ্রামের অনন্ত সিং, গনেশ ঘোষ, আনন্দ গুহ, মাখম ঘোষালসহ কয়েক জন বিপ্লবী কলকাতায়, সুরেশ চন্দ্র সেন, ক্ষিতিশ দে, নেলী সেন গুপ্তসহ অনেকেই বিপ্লবী মহেশখালী, রামু, কুতুবদিয়া এবং উখিয়ায় আত্মগোপন করেন। সশস্ত্র যুদ্ধকে আরো বৃহত্তর পর্যায়ে সংগঠিত করার দায়ে ১৯৩১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে মহেশখালী আত্মগোপন কালে তিনি বৃটিশদের হাতে বন্দি হন। আটকের পর প্রহসনমূলক বিচারে ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত একটানা দীর্ঘ নয় বছর কারাভোগ করেন। আলীপুর জেল, বকসাদুয়ারা ক্যাম্প, বহরমপুর জেলসহ ভারতের বিভিন্ন কারাগারে তাঁর কারাজীবন কাটে। কারান্তরীন থাকা অবস্থায় রেকর্ড পরিমাণ মার্কস নিয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীতে বি.এ এবং ‘ল’ (আইন) পাশ করেন। জেল থেকে বের হয়ে এসে তিনি আইন পেশা এবং রাজনীতির সাথে ভালোভাবেই সম্পৃক্ত হন। মাস্টারদা সূর্যসেনের ফাঁসির পর অনেক বিপ্লবীরা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। কমিউনিস্ট পার্টি যে পথে দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে, সেই পথই ঠিক মনে হওয়ায় তিনিও কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী হিসেবে ১৯৪৩ সালের মহামারী বাংলার দুর্ভিক্ষের সময় কক্সবাজার থেকে তিনি কাজ করেছেন। ইতিহাসে মন্বান্তরের সন হিসেবে পরিচিত এ দুর্ভিক্ষের সময় কমিউনিষ্ট পার্টি সারা দেশব্যাপী লঙ্গরখানা খুলে বুভুক্ষু মানুষকে বাঁচানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে। এই দুর্ভিক্ষ থেকে মানুষকে বাঁচাতে চট্টগ্রামের পূর্ণেন্দু দস্তিদারের সাথে পুরো চট্টগ্রাম জেলা জুড়ে বিশেষ করে কক্সবাজারে অমানুষিক পরিশ্রম করে দুর্ভিক্ষ লাঘবে কাজ করেন। <br />
রাউজানের কোয়েপাড়া গ্রামের রত্মেশ্বর চক্রবর্তী মোক্তার ও শান্তিবালা দেবীর ঔরুসজাত জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী অগ্নিযুগের অন্যতম বিপ্লবী। ১৯২১সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপালিটি স্কুলে অধ্যয়নকালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। এ সময় পরিবারের আর্থিক দূর্গতি লাঘবের পক্ষে ঠান্ডাছড়ি চা বাগানে কেরানীর চাকুরী করেন। ১৯৩০ সালে ইংরেজীতে অনার্সসহ বিএ পাশ করে পটিয়া এ.এস.রাহাত আলী হাই স্কুলে শিক্ষকতায় যোগদেন। এর মধ্যে তার বাবা কক্সবাজারে বসতি স্থাপন করেন। পটিয়া রাহাত আলী হাই স্কুলে মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে পরিচিত হন। এ সময় তিনি বিপ্লবী অনেক ছাত্রদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ এবং পটিয়ার ধলঘাট যুদ্ধের পর মাস্টার সূর্যসেন পটিয়া অবস্থানকালে সূর্যসেনের বিপ্লবের প্রভাবে ডিআইবি পুলিশের নজরবন্দী হন। ১৯৩১ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাহাত আলী হাইস্কুল থেকে গ্রেফতার করে বৃটিশ ডিআইবি পুলিশ। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে কারান্তরীন শেষে ১৯৩৮ সালে কক্সবাজারে ফিরে ওকালতি শুরু করেন।৮ এর পর বিভিন্ন বাংলার বিভিন্ন আন্দোলনে শরীক হয়েছিলেন তিনি। তার ছোট ভাই শৈলেশ্বর চক্রবর্তীও একজন শহীদ বিপ্লবী। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সংঘটিত চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল তথা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সাহসী সৈনিক এবং ২২ এপ্রিল জালালাবাদ যুদ্ধে যে ৫২ জন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রী ফৌজ সদস্য অংশ নেন তার মধ্যে অন্যতম তিনি। <br />
মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশে তরুন কর্মী শৈলেশ্বর চক্রবর্তী দুই বার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্ব দেন। প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় বার ১৯৩২ সালের ১০ আগস্ট তারই নেতৃত্বে ৫ জনের একটি দল নিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত পাহাড়তলী ক্লাব থেকে কোনো সবুজ সংকেত না আসায় সে বারও ব্যর্থ হয়ে সূর্য সেনকে কিভাবে মুখ দেখাবে-এই বলে নিজের রিভলভারের গুলিতে আত্মহত্যা করেন শৈলেশ্বর চক্রবর্তী।৯ দুই বার ব্যর্থ বিপ্লবী শৈলশ্বর চক্রবর্তীর আত্মহত্যার পর মাস্টারদা সূর্য সেন নারী বিপ্লবী প্রীতিলতাকে ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের ভার অর্পণ করেন। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রীতিলতা সফল হলেও নিজে ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার চেয়ে আত্মহত্যাকে শ্রেয় মনে করে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন তিনি। <br />
ভারতে বৃটিশ হামলাদারদের লুটেরা কর্মনীতি ও উপনিবেশিক শোষণের ববর্রর পদ্ধতিই ভারতীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। সিপাহী বিপ্লব, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ, ইউরোপিয়ান আক্রমণসহ বিভিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিচ্ছেন ভারত বর্ষের সংগ্রামীরা। এ সময় ভারত উপমহাদেশে সর্বত্র এক আওয়াজ ‘ভারতবর্ষের স্বাধীনতা’ ইংরেজ সরকারের পক্ষে যুদ্ধের বিপক্ষে ভারতবর্ষের সবাই একমত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশরা কথা দিয়েছিল যুদ্ধে তাদের সহযোগিতা করলে যুদ্ধের পর তারা এ দেশ ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু যুদ্ধের পর ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া দূরের কথা উল্টো একটু লজ্জ্বিত না হয়ে সমগ্র এশিয়ায় বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের উপনিবেশিক শোষণ চাপিয়ে দেয়। যার ফলে তখনকার মুসলিম ও হিন্দু নেতৃবৃন্দ যুদ্ধের বিপক্ষেই মত দিতে লাগলেন। আরো দীর্ঘদিন চালিয়ে যাওয়ায় উদ্দেশ্যে সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে বৃটিশরা। বৃটিশ এ নীতির বিরুদ্ধে তথা যুদ্ধের বিপক্ষে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও সংগ্রামী পীর নুর আহমদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি প্রদান করে।১০ ইংরেজ সরকার বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মুসলিম ও হিন্দু নেতাদেরকে বশ করার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু দেশ প্রেমিক খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী তার সিদ্ধান্তে অবিচল রইলেন। তৎপর চট্টগ্রামের তৎকালিন ব্রিটিশ জেলা প্রশাসক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এক বৈঠকের আহ্বান করেন। ওই সময় খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী অসুস্থ ছিলেন। তাকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া জেলা প্রশাসকের অফিসে। তিনি প্রশাসক এর প্রস্তাব নাকচ করে ঘোর বিরোধীতা করেন এবং চরম বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ক্ষিপ্ত হয়ে জালাল উদ্দিন আহমদকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘জানেন, আপনাকে আমি এখন কারাগারে পাঠাতে পারি।’’ এ সময় অসীম সাহসী, দেশদরদী অসুস্থ জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনপূর্বক রক্ত চক্ষু রাঙিয়ে বাঘের মতো গর্জে ওঠে জেলা প্রশাসকের উদ্যতপূর্ণ আচরনের জবাব দেন এভাবে, ‘‘মনে রাখবেন, আপনি যদি আমাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠান পাঠান তবে জেল হাজত থেকেই আমি আপনাকে ভারত উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত করবা।’’ ১১<br />
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অধীনে ভোটাধিকার ও আইন সভার সদস্য সংখ্যার যথেষ্ট বৃদ্ধি এবং স্বায়ত্বশাসন প্রবর্তন প্রাদেশিক পর্যায়ে সরকার গঠনের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। ১৯৩৭ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রাদেশিক ও বঙ্গীয় বিধান সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাঙলায় মুসলমানদের জন্য ১১৭টি আসনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক প্রজা পার্টি এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলীম লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। উক্ত নির্বাচনে কক্সবাজার ও বাঁশখালী আসন থেকে চকরিয়ার খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টি থেকে ও সাংবাদিক সাহিত্যিক মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী মুসলীম লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৩৭ সালের শুরুতে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সারা বাংলায় ন্যায় কক্সবাজারে খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর জনসভায় বক্তব্য রাখেন। কক্সবাজার শহরের জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর বাংলাতে বিশ্রামের পর বিকেলে তৎকালিন টাউন হল ময়দানে (প্রাক্তন ইপিআর ফিল্ড ও বর্তমানে কক্সবাজার সরকারী মহিলা কলেজ ও ডিজিএফ কক্সবাজারের অফিস) নির্বাচনীয় জনসভায় ভাষন দেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। ১২ <br />
ওই নির্বাচনে মুসলীগ লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকীকে মাত্র ৩ ভোটে হারিয়ে খান বাহাদুর জালাল আহমদ চৌধুরী জয়লাভ করেন। ওই নির্বাচনে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের দল কৃষক প্রজা পার্টিও বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়। কৃষক প্রজা পার্টি সংখ্যাগরিষ্ট অর্জন করতে না পারায় মুসলীম লীগের সাথে কোয়ালিশন মন্ত্রী সভা গঠন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪১ সালের ২১ জুলাই ভাইসরয় ন্যাশনাল ডিফেন্স কাউন্সিল (জাতীয় প্রতিরক্ষা কাউন্সিল)-এ যোগদান এবং সরকারি যুদ্ধ প্রচ্ষ্টোয়র সঙ্গে সহেযাগিতা দান প্রশ্নে জিন্নাহর সঙ্গে ফজলুল হকের মধ্যে মতবিরোধ এবং মুসলীম লীগের পার্লামেন্টিয়ান সদস্যদের বিরোধীতার মুখে একই বছরের ১ ডিসেম্বর ফজলুল হকের প্রথম মন্ত্রী সভার পতন ঘটে। পরে একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর গঠিত দ্বিতীয় মন্ত্রীসভা মুসলীম লীগের অনবরত বিরোধীতার মুখে ১৯৪৩ সালের ২৮ মার্চ ফজলুল হকের পদত্যাগের মাধ্যমে দ্বিতীয় মন্ত্রীসভারও পতন ঘটে। ফজলুল হকের দ্বিতীয় মন্ত্রীসভা পতনের পর অভিবক্ত বাংলার গর্ভনর কর্তৃক সর্বদলীয় মন্ত্রী সভা গঠনের ধারণা দেওয়া হলেও কিছুদিনের মধ্যে মুসলীম লীগের নেতা খাজা নাজিমুদ্দীনকে মন্ত্রী সভা গঠনের আহ্বান জানানো হয় এবং ১৯৪৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি ১৩ সদস্য বিশিষ্ট এক মন্ত্রী সভা গঠন করেন। এই মন্ত্রীসভায় কৃষক প্রজা পার্টি থেকে মনোনীত কক্সবাজার আসনে নির্বাচিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য চকরিয়ার খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীকে জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। ১৩ তার আমলেই বাংলা প্রদেশের (বর্তমান বাংলাদেশ) সমস্ত থানা হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য কমপক্ষে চার থেকে ৮টি বেডের ব্যবস্থা করা হয়। <br />
ওই মন্ত্রীসভাকে বেশ কয়েকটি সমস্যাকে মোকাবেলা করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, অন্যটি সরকারের বিরোধীতা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান বাহিনী বার্মা (মিয়ানমার) দখল করে চট্টগ্রাম উপকূলে এসে পৌঁছলে ব্রিটিশ সরকার বাংলার পতন অত্যাসন্ন ভেবে জাপানকে ঘায়েল করার জন্য নৌ- যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল করে দেয় (যা উবহধরষ ঢ়ড়ষরপু নামে অভিহিত)। খাদ্য ভান্ডার অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এ ছাড়া মুদ্রাস্ফীতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুতদারের ফলে ১৯৪৩ সালে বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এ সময় বেসামরিক সরবরাহ মন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলকতায়, জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বিষয়ক মন্ত্রী খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে এবং রামুর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম রাজবন্দী নেতা আবদুল মজিদ সিকদার লঙ্গরখানা ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেন। অনেকটা সফলও হয় তারা। তারপরেও সারা বাঙলায় ৩৮ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৫ সালের ২৮ মার্চ বাজেট বরাদ্দের সময় ২০ জন সরকার সমর্থক সদস্য বিরোধী দলে যোগ দিলে ১০৬-৯৭ ভোটে নাজিম্দ্দুীন মন্ত্রী সভার পতন ঘটে। <br />
লাহোর প্রস্তাবের পর মুসলিম লীগ পাকিস্তান আন্দোলনে শরীক হন। কক্সবাজারে পাকিস্তান আন্দোলনে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তার মধ্যে কবির আহমদ চৌধুরী, বাঙালির মুসলিম সাহিত্য ও সাংবাদিকতার অগ্রদূত মোহাম্মদ আবদুর রশিদ ছিদ্দিকী, ফিরোজ আহমদ চৌধুরী, আজিজুর রহমান, সৈয়দ আহমদ ওয়ারেসি, জাফর আলম চৌধুরী, আলী হোসেন মিয়া, পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ড নেতা আবদুল হামিদ খান, ছালেহ আহমদ কেরানী (যিনি পাকিস্তান আন্দোলনের মিছিল করতে গিয়ে পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন, পরবর্তীতে ভাসানী ন্যাপ নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিফৌজ কমান্ডার কমরেড জাফর আলমের বাবা), খুরশিদ আহমদ চৌধুরী, আবু আহমদ চৌধুরী, আখতার কামাল চৌধুরী, মির কাসেম চৌধুরী, টেকনাফের নজির আহমদ চৌধুরী, রামুর আফসার কামাল চৌধুরী, জেলা মুসলিম ছাত্রলীগ নেতা টেকনাফের আবদুল গফুর চৌধুরী, উখিয়ার নুর আলী চৌধুরী, সুলতান আহমদ চৌধুরী, খুরশিদ আহমদ চৌধুরী ১৪প্রমুখ।<br />
পাকিস্তান আন্দোলনকে ইস্যু করে অনুষ্ঠিত ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজার ও বাঁশখালী নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকায় পেকুয়ার জমিদার মুসলীম লীগ নেতা কবির আহমদ চৌধুরী মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকীকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে অপর প্রার্থী ছিলেন কবির আহমদ চৌধুরীর ভাই ফিরোজ আহমদ চৌধুরী কংগ্রেস এর মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন।<br />
এ নির্বাচনে মুসলিম লীগ বিরোধী সংগঠন নিখিল বঙ্গীয় ইমারত প্রার্থীর আত্ম প্রকাশ ঘটে। পূর্ব বাংলার মাওলানা আবুল মওলা মুহাম্মদ শামসুল হুদা পাঁচবাগী নেতৃত্বীধাীন ইমারত পার্টি ৩টি আসনে প্রাথী দিয়ে একমাত্র আবুল মওলা মুহাম্মদ শামসুল হুদা পাঁচবাগী নির্বাচিত হয়। তার ১৯৪৬ এর নির্বাচনী পোস্টারে লেখা ছিল, মিছে কেন পাকিস্তান জিন্দাবাদ/ ইংরেজ তাড়াই পাঞ্জাবী আনতে চাই/ বাংলা নহে স্বাধীন বাংলা চির পরাধীন/ পাকিস্তান নয় ফাঁকিস্তান/ পাকিস্তান হবে জালিমের স্থান। ’<br />
পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর মাওলানা আবুল মওলা মুহাম্মদ শামসুল হুদা পাঁচবাগীর কথাই সত্যে পরিণত হয়েছে। <br />
পাকিস্তান সৃষ্টির পর ১৯৪৯ সালে প্রথম পাকিস্তান বিরাধী দল হিসেবে আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠিত হলে আফসার কামাল চৌধুরীসহ অনেকেই মুসলিম লীগ হতে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদান করেন। আবার অনেকেই আজীবন মুসলীম লীগার হয়ে পাকিস্তানেক টিকিয়ে রাখার জন্য সংগ্রাম চালিয়েছেন। <br />
১৯৪৮-১৯৫২ সাল পর্যন্ত বাংলার আকাশে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে এক তুমূল আন্দোলন সংগঠিত হয়। এ আন্দোলনে কক্সবাজারের অনেকেই অবদান রাখেন। ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজারের প্রসঙ্গটি পরবর্তী অধ্যায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার’ শীর্ষক অধ্যায়ে আলোচনা করা হবে।<br />
এরি মধ্যে ভাষাসৈনিক মৌলভী ফরিদ আহমদ বাম রাজনীতি ছেড়ে নেজামে ইসলামীতে যোগদান করলে নেজামী ইসলাম এর সংগঠন বেশ শক্তিশালী হয়। চকরিয়ার খতিবে আজম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ, আবু বকর ছিদ্দিক, মোহাম্মদ আলী, মৌলভী আহমাদুল্লাহ, নজির আহমদ চৌধুরী, ফিরোজ আহমদ চৌধুরী, মোহাম্মদ রফিক ও বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রমুখ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নেজামী ইসলামে যোগদান করলে নেজাম ইসলাম সাংগঠকিনভাবে শক্তিশালী হয় কক্সবাজারে। <br />
এ দিকে ১৯৪৬ সালের অনুষ্ঠিত ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশেষ নির্বাচনের পর ১৯৫১ সালে পূর্ব বাঙলায় প্রাদেশিক আইন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও নানা অজুহাতে মুসলীম লীগের নেতৃত্বাধীন শাসকগোষ্ঠীরা তা বিলম্ব করতে থাকে। এর প্রতিবাদে ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানরি সভাপতিত্বে আওয়ামী মুসলীম লীগ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টি, মাওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম, খোকা রায় ও আবদুস সালাম ওরফে বারীণ দত্তের কমিউনিস্ট পার্টি, হাজী মোহাম্মদ দানেশের নেতৃত্বাধীন গণতন্ত্রী দলসহ কয়েকটি সমমনা দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট নামে এক নির্বাচনী জোট গঠন করা হয়। জোটের প্রতীক নির্ধারিত হয় নৌকা। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্ন ও পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন দাবিসহ ২১ দফার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২২৩ এবং অভিবক্ত বাংলার শেষ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিমের নেতৃত্বাধীন খেলাফতে রাব্বানী পার্টি একটি, মুসলিম লীগ ৯টি আসন লাভ করে। তার মধ্যে চট্টগ্রামের রাউজান আসন থেকে খান বাহাদুর ফজলুল কাদের চৌধুরী মুসলিম লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) হিসেবে নির্বাচনের পর জয় হলে মুসলিম লীগে যোগদান করলে মুসলিম লীগের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১০-এ। এ নির্বাচনে কক্সবাজার মহকুমা ও বাশখালী থানা নিয়ে তিনটি আসন নির্ধারিত করা হয়। চকরিয়া-কক্সবাজার থানার ঈদগাঁও নির্বাচনী এলাকা নিয়ে চকরিয়া-কক্সবাজার থানার ঈদগাঁও, কক্সবাজার-মহেশখালী-কুতুবিদয়া থানা নিয়ে কক্সবাজার-মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসন এবং রামু, উখিয়া ও টেকনাফ থানা নিয়ে রামু উখিয়া টেকনাফ আসন।<br />
চকরিয়া- কক্সবাজার থানার ঈদগাঁও নির্বাচর্নী এলাকায় যুক্তফ্রন্ট তথা কৃষক প্রজা পার্টির ফিরোজ আহমদ চৌধুরী, কুতুবদিয়ার খান বাহাদুর মকবুল আলীর চৌধুরীর পুত্র মকসুদ আহমদ চৌধুরী হাস প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী, মুসলিম লীগের প্রার্থী ওয়ারেসি সৈয়দুর রহমান, ছাতা প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমান। এ আসনে যুক্তফ্রন্ট তথা কৃষক প্রজা পার্টি প্রার্থী এডভোকেট ফিরোজ আহমদ চৌধুরী বিপুল ব্যবধানে মুসলিম লীগ প্রার্থী ওয়ারেসি ছৈয়দুর রহমানকে পরাজিত করে এমএলএ নির্বাচিত হন। কক্সবাজার-মহেশখালী-কুতুবিদয়া আসনে যুক্তফ্রন্টের প্রাথী ছিলেন নেজামে ইসলামের কেন্দ্রিয় নেতা খতিবে আযম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ ও কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী মুসলীম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমদ চৌধুরী। একাধিক প্রার্থী থাকায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক লটারির মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা হতো। নেজাম ইসলামীর খতিবে আজম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ লটারিতে নৌকা প্রতীক পেয়ে সুবিধাজনক স্থানে চলে আসেন। এ আসনে মুসলীম লীগের প্রার্থী ছিলেন এডভোকেট ফজলুল করিম, স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন কুতুবদিয়ার রশিদ আহমদ এমএ। এ নির্বাচর্নী এলাকায় মুসলীম লীগের প্রার্থী এডভোকেট ফজলুল করিমমে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নেজামে ইসলাম তথা যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী খতিবে আজম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ জয়ী হন।<br />
রামু উখিয়া টেকনাফ থানা নিয়ে গঠিত প্রাদেশিক আইন পরিষদ নির্বাচেন মুসলীম লীগের প্রার্থী জাফর আলম চৌধুরীকে পরাজিত করে নেজাম ইসলামে কেন্দ্রিয় নেতা মৌলভী ফরিদ আহমদ জয়ীযুক্ত হন। এ নির্বাচনে অন্য প্রার্থী ছিলেন এক সময়ের চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম ছাত্রলীগ নেতা টেকনাফের আবদুল গফুর চৌধুরী (স্বতন্ত্র) ও বাম নেতা অধ্যাপক আসহাব উদ্দিন আহমদ। ১৫ ১৯৫৭ সালে গঠিত মন্ত্রীসভায় মৌলভী ফরিদ আহমদ শ্রমমন্ত্রী নিযুক্ত হন। <br />
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর আওয়ামী মুসলীগ লীগ থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামে নামকরণ করা হয়। আফসার কামাল চৌধুরীকে সভাপতি ও মহিউদ্দিন মোক্তারকে সম্পাদক করে কক্সবাজার মহকুমায় আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটিরা অন্যান্যেরা হলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ রশিদ বিএ, সলিম হক চৌধুরী, আবু বকর ছিদ্দিকী। চকরিয়াতে আওয়ামীলীগের সংগঠক ছিলেন আজিজুর রহমান, কুতুবদিয়ায় জালাল আহমদ চৌধুরী, মহেশখালীতে মোহাম্মদ রশিদ বিএ, রামুতে আফসার কামাল চৌধুরী। <br />
১৯৫৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালিন সময়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ও পূর্ব বাংলার স্বায়ত্বশাসনের প্রশ্নে সোহরাওয়ার্দীর সাথে মাওলানা ভাসানীর মতবিরোধ দেখা দেয়। ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্র“য়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারিতে (সন্তোষ) আওয়ামীলীগ কাউন্সিল অধিবেশনে তা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বা পাশ্চাত্য ঘেষা পররাষ্ট্র নীতির প্রশ্নে বিরোধী তীব্র আকারণ ধারণ করে। ২৫-২৬ জুলাই ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে ভাসানীর আহ্বানে নিখিল পাকিস্তান গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি সভাপতি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মাহমুদুল হক ওসমানীকে সাধারণ সম্পাদক করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হয়। পূর্ব বাঙলার বামপন্থী সংগঠন গণতন্ত্রী দল, পশ্চিম পাকিস্তানের ন্যাশনাল পার্টিসহ আরো কয়েকটি প্রগতিশীল এ দলে অর্ন্তভূক্ত হয়। পাশাপাশি ১৯৫৪ সালের ২৪ জুলাই সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টিও এ সংগঠনকে সমর্থন করে ন্যাপের হয়ে কাজ করে ওই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী ন্যাপের রাজনীতিতে জড়িত হন। চট্টগ্রাম জেলা ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন পেকুয়ার মাহমুদুল করিম চৌধুরী (যিনি ১৯৭৭ সালের জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত বিএনপিতে যোগদান করে; পরবর্তীতে বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং চকরিয়া-কুতুবদিয়ার এমপি ছিলেন)। ১৬৬৪ সালের দিকে ন্যাপ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ভাসানী চীনপন্থী এবং অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ মস্কোপন্থী। ভাসানী ন্যাপের সংগঠক ছিলেন মুফিদুল আলম চৌধুরী, আব্বাস উদ্দিন আহমদ, শামসুল হুদা ছিদ্দিকী প্রমুখ। কক্সবাজারে মস্কোপন্থী তথা ন্যাপ (মোজাফ্ফর) ন্যাপকে সংগঠিত করার প্রয়াস পান অগ্নিযুগ্নের বিপ্লবী এডভোকেট সুরেশ সেন, ডা. হরিমোন চৌধুরী, আব্বাস উদ্দিন আহমদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর মোশতাক আহমদ, ইলিয়াছ মাস্টার (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), ইদ্রিস আহমদ, নুর বক্স, ইব্রাহিম আজাদ, আকতার আহমদ, দীপক বড়–য়া, নুরুল আলম, প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম, মোক্তার আহমদ প্রমুখ। <br />
১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর দেশে সামরিক আইন জারি করা হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। ওই সময় শেখ মুজিবুর রহমান কিছু দিন কক্সবাজারের ইনানীতে আত্মগোপন করেন। জালিয়াপালং ইউনিয়ন বোর্ডের তৎকালিন চেয়ারম্যান আবুল খায়ের সিকদার বিপদের ঝুঁকি নিয়ে বন্ধুত্বের সহায়তার হাত প্রসারিত করে বাড়িতে রাখেন। এর পর ১৯৫৮ সালের ১৬ জানুয়ারী তিনি ইনানী ফরেস্ট রেস্ট হাউসে অবস্থান করেন। তার সাথে ইনানী ফরেস্ট ডাক বাংলোতে যাত্রী যাপন করেন মনসুর আলী, ডিফিও মাহমুদ, তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত মহকুমা প্রশাসক এন. আহমদ, বঙ্গবন্ধুর প্রাইভেট সেক্রেটারি এ. সুলতান প্রমুখ।১৬ এ সময় তিনি ইনানীর গহীন অরণ্য ঘেরা চেনছড়ি গ্রামে অজ্ঞাতবাসে এসেছিলেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু সেই পাহাড়ী এলাকার দাপুটে উপজাতি নেতা ফেলোরাম রোয়াজা চাকমার আশ্রয় ছিলেন। অর্ধ শতাধিক বছর আগেকার সেই দিনের এসব কাহিনীরি বিবরণ দিতে গিয়ে উখিয়ার সোনারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এবং মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হাকিম মাস্টার বলেন- পাহাড়ী উপজাতিদের রান্না খেতে না পেরে সেই সময় স্থানীয় গৃহবধু সখিনা খাতুনকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্য রান্না করা হত। মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হাকিম ছিলেন তখন কক্সবাজার মহকুমা ছাত্রলীগের একজন নেতা। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের এসব ঘটনার স্বাক্ষী হিসাবে এখনো বেঁচে আছেন আরও একজন শতায়ু আবদুল খালেক। উখিয়ার খয়রাতি গ্রামের বাসিন্দা এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগটক। <br />
এ দিকে সামরিক শাসন জারির ফলে অনেকে আত্মগোপনে থাকলেও আবার অনেকেই ভয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরী নেতৃত্বাধীন কনভেনশন মুসলীগে যোগদান করেন। এসময় মুসলীম লীগ (কাউয়ুম), মুসলীম লীগ ( কাউন্সিল)নামে হলেও কক্সবাজারে মূলত কনভেনশন মুসলীম লীগের রাজনীতি বিদ্যমান ছিল। কক্সবাজারে আওয়ামী রাজনীতি ছেড়ে যারা কনভেনশন মুসলীমে যোগদান করেন তার মধ্যে ১৯৫৪ সালের কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ রশিদ বিএ অন্যতম। <br />
১৯৬২ সালের পাকিস্তানের ৩য় নির্বাচনে কক্সবাজার মহকুমা ও বাঁশখালী থানা নিয়ে গঠিত জাতীয় পরিষদ আসনে নেজামে ইসলামী পার্টির মৌলভী ফরিদ আহমদ মুসলিম লীগের প্রার্থী স আ ম শামসুল হুদা চৌধুরীকে পরাজিত করে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই আসনের অপর প্রার্থী ছিলেন ফিরোজ আহমদ চৌধুরী। <br />
চকরিয়া থানা ব্যতিত টেকনাফ থেকে কুতুবদিয়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হন জাফর আলম চৌধুরী। চকরিয়া ও বাঁশখালী আসনে আজিজুর রহমান প্রকাশ লাল আজিজকে পরাজিত করে বাশখালীর জাকেরুল আলম চৌধুরী এমএল এ নির্বাচিত হন। <br />
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে ছাত্র ইউনিয়নের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত কক্সবাজার কলেজ এম ইদ্রিস আহমদ, নুর বক্স, সুভাষ দে, সিরাজুল মোস্তফা, আবুল কাসেম ফেরদৌস, মোশতাক আহমদ প্রমুখ ছাত্র নেতারা বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে। ১৯৬২ সালে কক্সবাজার হাই স্কুলের ছাত্র কামাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে সংগঠিত হয় ছাত্রলীগ। ছাত্র ইউনিয়ন ও ছ্ত্রালীগের নেতারা বাষট্টির শিক্ষা আন্দোনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের বিস্তারিত পরবর্তীতে জানা যাবে।<br />
১৯৬৫ সালে চকরিয়া ব্যতিত কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গঠিত কনভেনশন মুসলীমের প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী নেজামে ইসলামীর শক্তিশালী প্রার্থী মৌলভী ফরিদ আহমদকে পরাজিত করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে মৌলভী ফরিদ আহমদ আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে তার জয় নিশ্চিত করেন। <br />
কক্সবাজার মহকুমা আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম চৌধুরী মুসলীম লীগের প্রার্থী স আ ম সামশুল হুদা চৌধুরীকে পরাজিত করে এমএলএ নির্বাচিত হন। এ আসনের অন্যতম প্রাথী ছিলেন টেকনাফের আবদুল গফুর র্চৌধুরী। চকরিয়া ও সাতকানিয়া (আংশিক) আসনে কনভেনশন মুসলীগের প্রার্থী আজিজুর রহমান প্রকাশ লাল আজিজ জয়ী হন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, উনসত্তরের গণঅভুত্থান, সত্তরের নির্বাচন প্রসঙ্গ পরবর্তী আলোচনায় আলোচনা করা হবে। <br />
ষাটের দশকে জামায়াত বেশ সংগঠিত হয়ে উঠে। কক্সবাজার মহকুমা জামায়াতের নেতৃত্বে ছিলেন এডভোকেট সালামত উল্লাহ, মাওলানা মোক্তার আহমদ (খরুলিয়া), মাওলানা আবু ছাবের (ঝিলংজা), মাওলানা আবদুল গফুর, মোখতার আহমদ চৌধুরী (চকরিয়া), আবুল কাসেম মিয়ান (মহেশখালী), রুহুল আমিন (হারবাং), রুহুল কাদের চৌধুরী (চকরিয়া), জিন্নাত আলী, মৌলভী অলি আহমদ প্রমুখ।<br />
ষাটের দশকে মুসলিম লীগ নেতার মধ্যে ছিলেন মকসুদ আহমদ চৌধুরী, স আ ম শামসুল হুদা চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী, রফিক আহমদ চৌধুরী, আবদুল গফুর চৌধুরী, নজির চেয়ারম্যান, আলী হোসেন মিয়া, মৌলভী জকরিয়া, মকবুল আহমদ সিকদার (উখিয়া), জালাল আহমদ ফরাজি (ঈদগাঁও), মীর কাসেম চৌধুরী (হলদিয়া পালং), হাসেম চৌধুরী (রতœা পালং), মাওলানা আফজাল আলী, মাওলানা আমজাদ আলী, আবুল কাসেম মাস্টার, প্রমুখ। পরে মুসলীম লীগ তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। কাউয়ুম ও কাউন্সিল মুসলীম লীগের সক্রিয় না থাকলেও কক্সবাজারের অনেক প্রভাবশালী মুসলীম লীগ নেতা কনভেনশন মুসলীম লীগে যোগ দেয়ায় এ সংগঠনের প্রভাব ছিল বেশী। কনভেনশন মুসলীম লীগের নেতার মধ্যে রয়েছে জালাল আহমদ চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী এমএলএ, আবদুল গফুর চৌধুরী মোহাম্মদ রশিদ বিএ, এডভোকেট মইদুর রহমান চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, আবদুস সালাম মিয়া, আব্বাস আহমদ চৌধুরী, আবদুল জাব্বার সিকদার, প্রমুখ। <br />
১৯৬৭ সালের দিকে নেজামী ইসলাম থেকে বের হয়ে নুরুল আমিন ও মৌলভী ফরিদ আহমদের নেতৃত্বে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) গঠন করা হয়। মৌলভী ফরিদ আহমদ কক্সবাজারের সন্তান হওয়ায় এর প্রভাব কক্সবাজারেও ছিলো। পিডিপি সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন চকরিয়ার এমএলএ আজিজুর রহমান প্রকাশ লাল আজিজ, উখিয়ার মোক্তার আহমদ চৌধুরী, নজির আহমদ, আমিন মিয়া প্রমুখ। <br />
১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্রিয় মাতৃভূমি পূর্ব বাংলাকে প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া পুুঁজির শোষণ থেকে মুক্ত করে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমিক কৃষক জনতার মুক্তির পথ উন্মুক্ত করার শপথ নেয় ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছাত্র সমাজের রয়েছে গৌরবদ্বীপ্ত অংশ গ্রহণ। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিজয়ের সর্বশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে সব ছাত্র নেতা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাদের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মহকুমা ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ সুভাষ দে (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), ইদ্রিস আহমদ (১৬৬৪-৬৫ সেশনে কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি), নুর বক্স (১৬৬৪-৬৫ সেশনে কক্সবাজার সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস, ১৯৮৫-৯০ পর্যন্ত মহেশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং জাপার কেন্দ্রিয় প্রেসিডিয়াম সদস্য থাকাকালে প্রয়াত হন), পিযুষ কান্তি চৌধুরী, গোরাঙ্গ দাশ, লক্ষ্মণ দাশ, সুভাষ পাল, আবুল কাসেম ভুলু, রামুর দীপক বড়ুযা, উদয়ন বড়–য়া, সৈকত বড়–য়া, কল্লোল বড়–য়া, উখিয়ার শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, সুরক্ষিত বড়–য়া১৭, কক্সবাজার কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি বাদশা মিয়া চৌধুরী, বাহারছড়ার রামানন্দ সেন, এস এম আমিনুল হক চৌধুরী (সাংবাদিক), অমল ধর, গিয়াস উদ্দিন ম. আ. আউয়াল (মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশের তথ্য সচিব হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত), রাখাল চন্দ্র পাল, সিরাজুল মোস্তফা (কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ থেকে অবসরপ্রাপ্ত), অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম জোসেফ, ফয়েজুল আজিম জেকব (বতর্মানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রফেসর ও প্রচ্ছদশিল্পী), পেকুয়ার মো. মোস্তফা, কুতুবদিয়ার সাইফুল্লাহ খালেদ (১৯৭৩ সালে ভাসানী ন্যাপ কক্সবাজার জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৮৭ সালে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এব্ং পরবর্তীতে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি), দীলিপ দাশ (বর্তমানে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কক্সবাজার জেলা সভাপতি), উখিয়ার আবুল কাশেম প্রকাশ মামা কাশেম, পিএমখালীর নাছির উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, দেব্রবত চৌধুরী১৮, মহেশখালীল মীর কাসেম, আ.ফ. ম একরামুল হক, এম এ সিরাজ, নারায়ন চক্রবর্তী, নিহার কান্তি বড়–য়া প্রমুখ। ছ্ত্রালীগ নেতাদের মধ্যে কামাল হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ মোস্তফা, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সাকের আহমদ, কৃষ্ণ প্রসাদ বড়–য়া, প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, ২০০৮ সালে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃতি ফুটবলার সুনীল কৃষ্ণ দে (তখনকার ছাত্রলীগ নেতা), হাবিবুর রহমান, একেএম মনসুরুল হক, আল মামুন শামশুল হুদা মান্নু, মুজিবুর রহমান, রামুর মনোহরি বড়–য়া, নাসির উদ্দিন, এবং উখিয়ার দিদারুল আলম চৌধুরী, আবদুল জব্বার চৌধুরী, সন্তোষ কুমার বড়–য়া, শাহজাহান চৌধুরী (সাবেক সাংসদ), আবদুল করিম, মহিউদ্দীন চৌধুরী (মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকাকালে প্রয়াত), ফজলুল করিম (বর্তমানে কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ), চকরিয়ার শাহনেওয়াজ চৌধুরী, রামুর তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী, মনির মিয়া, রাজারকুলের জাফর আলম চৌধুরী, রশিদ, হারুন, নাসির, ইলিয়াছ, খুরুস্কুলের মোস্তাফিজুর রহমান, কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার গোলাম হাছান, এজাজুল ওমর বাট্টু, ছুরত আলম, নুরুল আবছার, স.ম নুরুন্নবী, বদরখালীর আব্দুল হাকিম চাষী, মহেশখালীর সিরাজুল মোস্তফা, আবদুর রশিদ, আজিজুর রহমান, কুতুবদিয়ার মেজবা উদ্দিন, কুতুবদিয়ার আবদুল মাবুদ সিকদার, আবদুল মোতালেব ও জালাল আহমদ, ইনানীর আবুল কালাম আজাদ, টেকনাফ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি সলিম উল্লাহ, সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক কামাল উদ্দিন টকনাফের মোহাম্মদ আলী (সাবেক সাংসদ) ও বাহারছড়ার আব্দুছ সালাম, নেজামুল হক প্রমুখ। এ সময় পাকিস্তানপন্থী ইসলামী ছাত্র সংঘ, ইসলামী ছাত্র সমাজ, এনএসফ এর সক্রিয় সংগঠন ছিলো। ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতৃত্বে ছিলেন এনামুল হক মঞ্জু, কোরবান আলী, শাহজালাল চৌধুরী, কোরবান আলী, জিন্নাত আলী, শেখ শাহাব উদ্দিন, দানেশ, আফজাল আহমদ, রুহুল আমিন প্রমুখ। <br />
ইসলামী ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে ছিলেন নুরুল হক আরমানসহ অন্যান্যরা। <br />
মুসলীম লীগের ছাত্র সংগঠন এনএসএফ এর সক্রিয় সংগঠন ছিল কক্সবাজারে। মুসলিম লীগের প্রাধাণ্য থাকায় দাপুটের সাথে দাপিয়ে বেড়াত এ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এনএসএফ নেতাদের মধ্যে ছিলেন শওকত আলী, আবদুস সালাম, আহেমদুল হক চৌধুরী, কাইয়ুম চৌধুরী, হোসেন ইমাম চৌধুরী, আতাউর রহমান, নুরুল ইসলাম, মাহমুদুল হক ওসমানী, আবু হায়দার ওসমানী প্রমুখ। <br />
ঋণী :<br />
১. সত্যেন সেন, বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা, ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশনালয় এর তৃতীয় প্রকাশ-মার্চ ২০১১, পৃ : ৯৩<br />
২. ভারতবর্ষের ইতিহাস, কোকা আন্তোনভা, গ্রিগোরি বোন্গার্দ-লেভিন, গ্রিগোরি কতোভ্স্কি (অনুবাদ, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, দ্বিজেন শর্মা ), প্রগতি প্রকাশন, মস্কো এর দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৮৬, পৃ : ৫৪২-৪৩।<br />
৩. 3. Professor Mushtaque Ahmad, Glimpses of Cox’sBazar, 1995, Cox’s Bazar Foundation, P : 185.<br />
4. Professor Mushtaque Ahmad, Glimpses of Cox’sBazar, 1995, Cox’s Bazar Foundation, P : 323.<br />
৫. শফিউল আলম, মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী, ফেব্র“য়ারি ১৯৯০, ঢাকা : বাংলা একাডেমী, পৃ : ৩৩-৩৪<br />
৬. ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ১৮ এপ্রিল যুববিদ্রোহ বা চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনাকে ‘ভারতের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে সাহসিকতাপূর্ণ কাজ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। “যা ছিল দেড়শত বছরের ইতিহাসের মধ্যে ইংরেজ জন্য খুবই অপমানজনক ঘটনা। ইংরেজ বাহিনী এদেশের মানুষের কাছে প্রথম পরাজয়”। এ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গোটা ভারতেই বিপ্লবী সংগ্রামের এক ঝড় ডেকে আনে। ১৯৩৩-৩৪ সালের সরকারি রিপোর্টেও এর স্বীকৃতি মেলে। তদানীন্তন কলকাতা পুলিশের প্রধান কুখ্যাত চার্লস টেগার্ট ১৯৩৪ সালে অবসর নিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার সময় তেহরান বিমানবন্দরে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন, ""Chittagong is the mastermind of Bengal revolutionary activities." অর্থাৎ চট্টগ্রামই বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। (সূর্যসেন স্মৃতি : বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতিসংস্থা, কলকাতা)। মাস্টারদার আরেক সহযোগী লোকনাথ বল চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহের মূল্যায়ন করতে গিয়ে পরবর্তীকালে বলেছিলেন, "চট্টগ্রামের বিপ্লবী যোদ্ধাদের পেছনে ছিল না কোনো অনুকূল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, ছিল না বৈদেশিক শক্তির সক্রিয় সমর্থন। শুধুমাত্র নিজেদের শক্তির ওপর নির্ভর করে পরাধীন দেশের বুকে তারা জ্বালিয়েছিল স্বাধীনতার আলো, ভারতবর্ষের পূর্ব সীমান্তের চট্টগ্রাম শহরকে পরাক্রান্ত বৈদেশিক শক্তির কবল থেকে থেকে মুক্ত করে বিজয়দর্পে উড়িয়েছিল স্বাধীনতার জয় পতাকা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তিমূল পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের দুর্জয় আঘাতে, সমস্ত ভারতবর্ষ হল স্তম্ভিত -- স্বাধীনতাকামী তরুণ-তরুণীদের বুকের রক্তে লাগল প্রলয় দোলা। দু'শ বছরের গোলামীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বীর যোদ্ধারা শুরু করল রক্তাক্ত অভিযান। বাংলার ও ভারতের দিকে দিকে জ্বলে উঠল বিদ্রোহের আগুন।" (বিস্তারিত দেখুন-চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন : চারুবিকাশ দত্ত, কলকাতা)<br />
৭. অশোক মুখ্যোপাধ্যায়, সূর্য সেন, ঢাকা : লানন্দা প্রকাশন, নভেম্বর ২০০৮, পৃ : ৩৩।<br />
৮. মালিক সোবহান, কক্সবাজার চরিত- কোষ, জুলাই ২০০৭, কক্সবাজার : কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী, পৃ: ৫৭-৫৮<br />
৯. ঈশান সামী, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ফেব্র“য়ারি ২০১১, ঢাকা : কথা প্রকাশ, পৃ : ৭৯<br />
১০. ড. রাগেব আহসান, খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, মাজেদ ইবনে এয়ার সম্পাদিত ‘প্রবাল’, কক্সবাজার সমিতি-চট্টগ্রাম, ১৯৭০, পৃ : ২৭<br />
১১. বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী, ‘বিচিত্র ভাবনা’, ঢাকা : গুন নাহার জাহান আরা ফাউন্ডেশন, ফেব্র“য়ারি ২০১৪, পৃ :৫৫<br />
১২. মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, কক্সবাজারের আলোকিত মানুষ, ফেব্র“য়ারি ২০০৩, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী, পৃ : ২১।<br />
১৩. ড. হারুন-অর-রশিদ, ‘বাংলাদেশ: রাজনীতি সরকার শাসনতান্ত্রিক উন্নয়ন ১৭৫৭-২০০০’, ১ ফেব্র“য়ারি ২০০১, ঢাকা: নিউ এজ পাবলিকেশন্স, পৃ : ১১৭।<br />
১৪. ডা. মাহফুজুর রহমান, ‘বাঙালির জাতীয়তাবাদী মুক্তিসংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম’, ২৬ মার্চ ১৯৯৩, চট্টগ্রাম : বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষনা কেন্দ্র, পৃ : ৪৭২। <br />
১৫. অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশের রাজনীতি : আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি, ফেব্রুয়ারি ২০১২, ঢাকা : অঙ্কুর প্রকাশনী, পৃ:৪৯৫।<br />
১৬. আহমদ শামীম আল রাজী, উখিয়া, আগস্ট ২০০৮, পৃ : ৯২<br />
১৭. ড. প্রণব কুমার বড়–য়া, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বৌদ্ধ সম্প্রদায়, ফেব্র“য়ারি ১৯৯৮, ঢাকা : বাংলা একাডেমী, পৃ : ৫৯। <br />
১৮. বালাগাত উল্লাহ, মু্িক্তসংগ্রামে চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ, গেরিলা, মুক্তিযুদ্ধকালীন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনী, বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ড, ২২ এপ্রিল ২০১১, পৃ: ২৭।<br />
<br />
<br /></div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-55971734022017699142015-08-05T01:46:00.000-07:002015-08-05T01:46:18.601-07:00ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলনকে প্রধানত দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথমত ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৫১ এবং দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায় বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজারের অবদান সর্ম্পক তথ্য অপ্রতুল। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ও অন্যান্য এলাকার ভাষা আন্দোলনের বিষয়ে যেভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, কক্সবাজার তা থেকে অনেক দূরে এবং সড়ক পথের অনুন্নয়নের কারণে মহকুমা সদরের সাথে প্রত্যেক থানার দ্রুত যোগাযোগ ছিল কষ্টকর। জলপথে দুটি স্টিমার জালালাবাদ (সিনদিয়া কোং) ও ইসলামাবাদ (এ.কে.খান এন্ড কোং) সপ্তাহে দুইদিন টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হয়ে চট্টগ্রাম যেতো। স্থলপথে ইন্দো-বার্মা বাস সিন্ডিকেট ও সেন ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির কয়েকটি বাস কক্সবাজার থেকে দোহাজারী পর্যন্ত যাতায়াত করতো। দেশের খবরাখবর জানার জন্য সংবাদপত্র ওই অঞ্চলে অনিয়মিতভাবে আসতো। ২-৪ দিন পর ঢাকা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক আজাদ’ ও ‘সাপ্তাহিক সৈনিক’ পত্রিকা আসতো। এ সমস্ত পত্রিকার মাধ্যমে দেরিতে হলেও শিক্ষিত লোকজন দেশের খবরাখবর জানার চেষ্টা করতেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
কক্সবাজারের সাংবাদিকতা জগতে তেমন সচেতন লোক না থাকায় এবং ওই সময়ে সেখান থেকে কোনো পত্রিকা প্রকাশিত না হওয়ায় কিংবা জাতীয়/ আন্তর্জাতিক পত্রিকায় কাজ করা সাংবাদিক সেখানে কর্মরত না থাকায় তেমনভাবে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়নি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কিংবা সমকালীন বৈশ্বিক গণমাধ্যমেও এ সম্পর্কিত তথ্য অনুপস্থিত। তবে বিভিন্ন জনের স্মৃতিকথায় এ সম্পর্কিত যৎকিঞ্চিত তথ্য পাওয়া যায়। এজন্য এ রচনায় প্রধানত নেতৃস্থানীয় ভাষা সংগ্রামীদের সাক্ষাৎকারের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে সাক্ষাৎকার বা স্মৃতিকথার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অন্যান্য উপাদানের অভাবে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতৃস্থানীয় ভাষা সংগ্রামীদের সাক্ষাৎকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্মৃতিকথা বা সাক্ষাৎকারগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এর সীমাবদ্ধতা যেমন তথ্য বিকৃতি, আবেগদৃপ্ত উপস্থাপনা, কথনের অতিরঞ্জন উপস্থাপনা প্রভৃতি ত্রুটির বিষয়ে যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।</div>
<div style="text-align: justify;">
মাতৃভাষার সাথে একটি জাতির জাতিসত্তা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতির কাছে মাতৃভাষা এক মূল্যবান সম্পদ তা আমাদের সকলেরই জানা। ওই অমোঘ সত্য উপলব্ধি করে ষোল শতকের কবি সৈয়দ সুলতান (জন্ম চক্রশালা-পটিয়া) তাঁর ‘ওফাতে রসুল’ গ্রন্থে লিখেন―</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">‘বঙ্গদেশী সকলের কিরূপে বুঝাইবে</em></div>
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">বাখানি আরব ভাষা এ বুঝাইতে নারিব।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">যারে যেই ভাষে প্রভূ করিল সৃজন</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">সেই ভাষে হয় তার অমূল্য ধন।’’</em></div>
</em><br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
সন্দ্বীপ নিবাসী কবি আবদুল হাকিম (১৬২০-১৬৯০) ‘নুরনামা’ গ্রন্থে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় লিখেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">কিতাব পড়িতে যার নাহিক অভ্যাস।</em></div>
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">সে সবে কহিল মোতে মনে হাবিলাষ।।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">তে কাজে নিবেদি বাংলা করিয়া রচন।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">নিজ পরিশ্রম তোষি আমি সর্বজন।।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">আরবি ফারসি শাস্ত্রে নাই কোন রাগ।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">দেশী ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ।।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">যদি বা লিখয়ে আল্লা নবীর ছিফত।।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">যেই দেশে যেই বাক্য কহে নরগণ।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন।।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">সর্ববাক্য বুঝে প্রভু কিবা হিন্দুয়ানী।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী।।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">মারফত ভেদে যার নাহিক গমন।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">হিন্দুর অক্ষর হিংসে সে সবের গণ॥</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে না জুরায়</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়।।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">মাতা পিতামহ ক্রমে বঙ্গেত বসতি।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি।।</em></div>
</em><br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
রামু নিবাসী মধ্যযুগের কবি নসরুল্লাহ খোন্দকার তাঁর ‘মুসার সওয়াল’ গ্রন্থে লিখেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">বুঝিবারে বাঙ্গালা সে কি ভাবের বাণী</em></div>
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">আপনে বুঝন্ত যদি বাঙ্গালের গণ।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">ইচ্ছা সুখে কেহ পাপে না দেয়ন্ত মন</em></div>
</em><br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
অর্থাৎ ধর্ম কথা বাঙ্গালায় বুঝিলে কেহ স্বেচ্ছায় পাপে মন দিবে না।</div>
<div style="text-align: justify;">
যুগসন্ধিক্ষণের কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত এর সময়কালে ইংরেজি শিক্ষার অভিঘাত দেশের শিক্ষা সংস্কৃতি বিপর্যস্ত হয়, বাঙালির কাছে তখন বাংলা ভাষা ছিলো তাচ্ছিল্য ও ব্যঙ্গের বিষয়। গোঁড়া সংস্কৃতজ্ঞ ও পাশ্চাত্য অনুসারী ইয়ং বেঙ্গল―উভয়ই বাংলা ভাষার অমর্যাদা প্রদর্শন করে। মাতৃভাষার এ অনাদর গুপ্ত কবি সহ্য করতে না পেরে বলে উঠেছেন―</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
হায় হায় পরিতাপে পূর্ণ দেশ</div>
<div style="text-align: justify;">
দেশের ভাষার প্রতি সকলের দ্বেষ।</div>
<div style="text-align: justify;">
…</div>
<div style="text-align: justify;">
বৃদ্ধি কর মাতৃভাষা, পুরাও তার আশা</div>
<div style="text-align: justify;">
দেশে কর বিদ্যা বিতরণ (স্বদেশ)</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
মাইকেল মধুসুদন দত্ত ‘বঙ্গভাষা’ কবিতায় লিখেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
হে বঙ্গ, ভান্ডারে তব বিবিধ রতন;-</div>
<div style="text-align: justify;">
তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,</div>
<div style="text-align: justify;">
পর-ধন-লোভে মত্ত, করিনু ভ্রমণ</div>
<div style="text-align: justify;">
পরদেশে, ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।</div>
<div style="text-align: justify;">
কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি।</div>
<div style="text-align: justify;">
অনিদ্রায়, নিরাহারে সঁপি কায়, মনঃ,</div>
<div style="text-align: justify;">
মজিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি;-</div>
<div style="text-align: justify;">
কেলিনু শৈবালে; ভুলি কমল কানন!</div>
<div style="text-align: justify;">
স্বপনে তব কুললক্ষ্মী কয়ে দিলা পরে</div>
<div style="text-align: justify;">
“ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,</div>
<div style="text-align: justify;">
এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?</div>
<div style="text-align: justify;">
যা ফিরি, অজ্ঞান তুই যারে ফিরি ঘরে!”</div>
<div style="text-align: justify;">
পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে</div>
<div style="text-align: justify;">
মাতৃভাষা-রূপে খনি, পূর্ণ মণিজালে।</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
কায়েমী স্বার্থবাদী মহল ও ভাষা সংস্কৃতিতে আক্রমণকারী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের মূল আঘাতটি ১৯৫২ সালে হলেও এ আন্দোলন এক দিনে হয়ে উঠেনি। বাঙালির দীর্ঘদিনের সংগ্রামের ফসল এ আন্দোলন। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৭৭৮ সালে বৃটিশ লেখক ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড বৃটিশ কোম্পানী সরকারের পক্ষে বাঙালিদের ইংরেজি শেখার জন্য A Grammer of the Bengal language’নামক গ্রন্থ প্রকাশ করেন। তখন ভারতীয় উপমহাদেশের রাষ্ট্রভাষা ছিল ফার্সি। হ্যালহেড তার ব্যাকরণের ভূমিকায় ফার্সির পরিবর্তে বাংলাকে সরকারি কাজ-কর্মে ব্যবহারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে, কোম্পানী সরকারের সুবিধা হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরতে গিয়ে ফার্সির পরিবর্তে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন। এ যাবৎ পাওয়া ইতিহাস থেকে প্রমাণিত হয় যে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব এটাই। তাও একজন বৃটিশ কর্মকর্তা-লেখকের জবানিতে।</div>
<div style="text-align: justify;">
প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক বাংলা ভাষার পক্ষে প্রথম উচ্চারণ হয় রাজশাহী থেকে। ‘নুর-আল-ইমান’ পত্রিকার ১ম বর্ষ, ৩য় সংখ্যায় ওই পত্রিকার সম্পাদক মির্জা মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ‘বঙ্গীয় মোসলমান ভাই বহিনের খেদমতে নুর-আল-ইমানের আপীল’ নামক সম্পাদকীয়তে উর্দু বাঙালি অনুগতদের ‘খেদমৎগার’ হিসেবে উল্লেখ করে লিখেন―</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘…শরীফ সন্তানেরা এবং তাহাদের খিদমাৎগারগণ উর্দু বলেন, বাঙ্গলা ভাষা ঘৃণা করেন, কিন্তু সেই উর্দু জবানে মনের ভাব প্রকাশ করা তো দূরে থাকুক, পশ্চিমা লোকের গিলিত চর্বিত লিখিত শব্দগুলিও অনেকে যথাস্থানে শুদ্ধ আকারে যথার্থ অর্থে প্রয়োগ করিতেও অপারগ। অথচ বাঙ্গলায় মনের ভাব প্রকাশ করিবার সুবিধা হইলেও ঘৃণা করিয়া তাহা হইতে বিরত হন।… সতেজ স্বাভাবিক বাঙ্গলা ভাষা স্বাধীনতা পাইলে তৎসঙ্গে পল্লীবাসি মোসলমান সমাজের উন্নতির যুগান্তর উপস্থিত হইবে। …বঙ্গের মোসলমান ভ্রাতাভগ্নিগণ!…. বাঙ্গলা ভাষাকে হিন্দুর ভাষা বলিয়া ঘৃণা না করিয়া আপনাদের অবস্থা ও সময়ের উপযোগী করিয়া লউন। ১</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯০৬ সালে ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলিমলীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে, সে অধিবেশনেও রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটি ওঠে। ১৯০৭ সালে বিপ্লবী আবদুর রসুল ও আবদুল হালিম গজনবীর উদ্যোগে একটি কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃক প্রকাশিত ‘দি মুসলমান’ পত্রিকার সম্পাদক মজিবর রহমান উর্দুভাষী বাঙালিদেরকে ঘৃণা করে ‘দি মুসলমান’ পত্রিকায় কলম ধরেছেন। এ সম্পর্কে সত্যেন সেন (১৯০৭-১৯৮১) ‘বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা’ নামক গ্রন্থে লেখেন―</div>
<div style="text-align: justify;">
“শিক্ষিত মসুলমান একটি চিন্তাধারা লক্ষ করা যেত তাদের মধ্যে অনেকেই উৎপত্তি ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে নিজেদের বাঙালি পরিচয় বলে স্বীকার করতে চাইতনা এবং বাংলা ভাষী হওয়া সত্ত্বেও উর্দুকে নিজেদের ভাষা বলে দাবি করতেন। ‘দি মসুলমান’ পত্রিকা সব সময় এই লজ্জাকর মনোবৃত্তির উপর তীব্র কষাঘাত করে এসেছে২ ।”</div>
<div style="text-align: justify;">
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের দাবিটি সম্ভবত প্রথম তুলেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। ১৯১৮ সালে ভাষা বিতর্ক চলাকালে ‘আল ইসলাম’ পত্রিকার আশ্বিন ১৩২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য বনাম বঙ্গীয় মুসলমান’ নামক প্রবন্ধে লিখেন―</div>
<div style="text-align: justify;">
‘মাতৃভাষাকে জাতীয় ভাষার স্থলে বরণ করা ব্যতিত কোনো জাতি কখনো উন্নতির সোপানে আরোহণ করতে পারে না।’</div>
<div style="text-align: justify;">
এ দিকে বৃটিশ ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলন ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকলে নতুন করে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ, রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গান্ধী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে চিঠি লিখে জানতে চান, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে তার সাধারণ ভাষা কী হতে পারে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে হিন্দীর পক্ষে অভিমত দেন এভাবে The only possible national language for intercourse is Hindi in India।’3 |</div>
<div style="text-align: justify;">
বাংলার বাইরে অন্যান্য প্রদেশের মুসলমানদের রায় ছিল উর্দুর পক্ষে। অপরদিকে বাঙালি মুসলমানদের মধ্য থেকে বাংলার পক্ষে আওয়াজ ওঠে। ১৯১৮ সালে রবীন্দ্রনাথ এ বিষয়ে আলোচনার জন্য শান্তি নিকেতনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন। সারা ভারত থেকে আগত ভাষাতত্ত্ববিদদের সামনে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একটি প্রবন্ধ পাঠ করে ভারতবর্ষের সাধারণ ভাষার হওয়ার যোগ্যতা রাখে বাংলা, হিন্দী ও উর্দুর কথা উল্লেখপূর্বক সাধারণ ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরে শুধু ভারত কেন, সমগ্র এশিয়া মহাদেশেই বাংলা ভাষার স্থান হবে সর্বোচ্চ এবং ভাব সম্পদ ও সাহিত্যগুণে বাংলা ভাষা এশিয়া ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে অদ্বিতীয় বলে উল্লেখ করেন। ড. শহীদুল্লাহর সূক্ষ্মদর্শী প্রস্তাবনা সত্ত্বেও অনাগত স্বাধীন ভারতবর্ষে রাষ্ট্রভাষা বিতর্ক প্রধানত হিন্দী ও উর্দুর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। হিন্দুরা হিন্দীর পক্ষে, মুসলমানরা উর্দুর পক্ষে। তবে এ হিন্দী ও উর্দু বিতর্কের ডামাডোলের মধ্যে বাঙালি মুসলমানদের চিন্তাধারা বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সবসময় এক বিশেষ স্থান লাভ করে।</div>
<div style="text-align: justify;">
অবশ্য পূর্ব থেকে শুরু হয় মুসলমান ও হিন্দু বিতর্ক। এ বির্তকের ডামাডোলে শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক নতুন বিতর্ক। এ সময় বাঙালি মুসলমানের জাতিসত্তার প্রয়োজনে মাতৃভাষা বাংলার গুরুত্ব এবং সে ক্ষেত্রে বাংলার পরিবর্তে অন্য কোনো ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার পরিণতি সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ সাতাশি বছর আগে স্পষ্ট ভাষায় হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছিলেন―</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘বাংলাদেশের শতকরা নিরানব্বইয়েরও অধিকসংখ্যক মুসলমানের ভাষা বাংলা। সেই ভাষাটাকে কোণঠাসা করিয়া তাহাদের উপর যদি উর্দু চাপানো হয় তাহা হইলে তাহাদের আধখানা কাটিয়া দেওয়ার মতো হইবে না কী? চীন দেশের মুসলমানের সংখ্যা অল্প নহে, সেখানে কেহ বলে না যে চীনা ভাষা ত্যাগ করিলে তাহাদের মুসলমানির খর্বতা ঘটিবে।’</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
বাংলা-উর্দু ঘিরে বাঙালি মুসলমানের ভাষা সমস্যার বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে হলেও দীর্ঘদিন ধরে উপস্থিত এবং রবীন্দ্রনাথ সঙ্গত কারণেই এ সম্পর্কে তার সুচিন্তিত মতামত দেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯২১ সালের খেলাফত আন্দোলনের সময় সারা ভারতের নেতৃস্থানীয় চার ভাগের তিন ভাগ মুসলমানগণ ভারতের রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার জন্য যখন বৃটিশ সরকারকে চাপ দিচ্ছিল, তখন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী লিখিতভাবে বৃটিশ সরকারকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে বলেন―‘ভারতের রাষ্ট্রভাষা যা-ই হোক না কেন বাংলার রাষ্ট্রভাষা করতে হবে বাংলাকে।’৪ বাংলা ভাষী শিক্ষার্থীদেরকে উর্দুর মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাদানের প্রচলিত প্রথার বিরুদ্ধে ‘সওগাত’ প্রতিবাদ জানায় ১৯২৬ সালে।</div>
<div style="text-align: justify;">
বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য সাধনার পথে বিরাজমান প্রথম বাধা সম্পর্কে বাংলার বিবেক আবুল ফজল চিহ্নিত করেছিলেন বাংলা ভাষার প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞামূলক মনোভাব। বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞা করে উর্দু ভাষাকে নিজের ভাষা হিসেবে গ্রহণ করার যে উৎকট মানসিকতা তিনি এক শ্রেণির বাঙালি মুসলমানের মধ্যে লক্ষ করেছিলেন, তার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হন সেই ১৯২৬ সালে, ‘মাতৃভাষা ও বাঙালি মুসলমান’ শীর্ষক প্রবন্ধে। তাঁর শ্লেষাত্মক ভাষায় সাহসী উচ্চারণ করতে দেখা যায় এই প্রবন্ধে―</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা কী? উর্দু না বাংলা? আমার মতে ইহাই সর্বাপেক্ষা অদ্ভুত কথা। আমগাছে আম ফলিবে না কাঁঠাল-এমন অদ্ভুত প্রশ্ন অন্য কোনো দেশে কেহ করিয়াছেন কিনা জানি না। (তরুণপত্র, শ্রাবণ ১৩৩২)</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
১৩২৬ বঙ্গাব্দের শুরুতে চট্টগ্রামে মুসলমান ছাত্র সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ জাতীয়তা প্রসঙ্গে বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘তোমরা কেবল ছাত্র নও, তোমরা বাঙালি। তোমরা বাঙালি মুসলমান। এ ক্ষেত্রে ধর্মকে স্বীকার করে নিয়েই বাঙালি জাতীয়তা স্বীকৃতি পায়।’</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
এ প্রসঙ্গে নুরুন্নেছা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
পুরুষানুক্রমে বাঙলাদেশের গ-ীর মধ্যে বাস করে আর বাঙ্গালা ভাষাতে সর্বক্ষণ মনের ভাব ব্যক্ত করেও যদি বাঙালি না হয়ে আমরা অপর কোনো একটা জাতি সেজে বেঁচে থাকতে চাই, তাহলে আমাদেরত আর কোনো উত্থান নাই-ই, অধিকন্তু চিরতমসাচ্ছন্ন গহ্বর মধ্যে পতন অবশ্যম্ভাবী। (‘সওগাত’ ৭ম, ১ম সংখ্যা (১৩৩৬)।</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
সাহিত্য সংস্কৃতির অঙ্গনে উর্দু-বাংলা বিতর্কের সময় একাধিক বিশিষ্ট ব্যক্তি বাংলার পক্ষে কলম ধরেছেন। ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মোজাফ্ফর আহমদও এতে অংশ নিয়েছেন। আল-এসলাম, ৩য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, শ্রাবণ ১৩২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘উর্দু ভাষা ও বঙ্গীয় মুসলমান’ প্রবন্ধে তিনি উর্দুভাষীর দালালদের তিরস্কার করে বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
যাহারা প্রকৃতই উর্দ্দুভাষী তাহারা বাংলা দেশে উর্দ্দু চালাইতে চান কোন্ সাহসে? কলিকাতার খিছুড়ি মোসলমানগুলিকে দেখিয়াই তাহারা মনে করেন যে, বাংলা দেশের মোসলেমগণের মাতৃভাষার কোনো ঠিকানা নাই? এটাই তাঁহাদের বিষম ভুল। কলিকাতা বাংলাদেশ বটে, কিন্তু বাংলা দেশটা কলিকাতা নহে। ..যখন উর্দ্দু ভাষা জন্ম গ্রহণ পর্যন্ত করে নাই তখনো বাঙ্গালী মোসলমানগণের মাতৃভাষা বাংলা ছিল। বাঙ্গালী মোসলমান কবি যখন ‘পদ্মাবতী’ কাব্য রচনা করিয়াছিলেন, তখন উর্দ্দুভাষা যে ভারতের কোনো দেশের বাজারে আবদ্ধ ছিল তাহা নির্ণয় করা সুকঠিন।… কোনো গুণে উর্দ্দু আমাদের বরেণ্য? ভারতের অর্ধেকের বেশি মোসলমান কথা বলেন বাংলায়, আর অবশিষ্ট বলেন বিভিন্ন ভাষায়। তথাপি বাঙ্গালী মোসলমানকে উর্দ্দু ধরিতে হইবে, আচ্ছা জবরদস্তি বটে। বাজারে-শিবিরের ভাষা উদ্দুর্, বাজারে-শিবিরে চলুক। একটা জাতিকে জোর করিয়া উর্দ্দু শিখাইবার কী প্রয়োজন? আর উর্দ্দুর দেশের কোনো জায়গায় এত এসলামী ভাবের দান ডাকিয়াছে যে বাঙ্গালী মোসলমানদিগকেও উর্দ্দু গ্রহণ করিতে হইবে?…ফল কথা, বাংলাদেশে আমরা উর্দ্দুকে কখনো প্রশ্রয় দিতে পারি না। সখ করিয়া যিনি শিখতে চান শিখুন, কিন্তু উর্দ্দু এদেশের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষা নহে। (মোজাফ্ফর আহমদ, আল-এসলাম, ৩য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, শ্রাবণ ১৩২৪ সংখ্যা)</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
অবিভক্ত বাংলার অবিসংবাদিত সাংবাদিক সাহিত্যিক মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী (১৮৯৪-১৯৫১) তার ‘চট্টগ্রামী-ভাষাতত্ত্ব’ গ্রন্থের ভূমিকায় লিখেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
‘পৃথিবীর কোনও ভাষাকে ভাষার পর্য্যায় হইতে বাদ দিবার অধিকার কাহারো নাই।</div>
<div style="text-align: justify;">
…. যেই বুলিতে কাঁদিতে কাঁদিতে মাতৃগর্ভ হইতে ভূমিষ্ট হইয়াছি, সেই ভাষার হাসি কান্নার ভিতর দিয়া নিজেদের উৎকর্ষ গঠন করিয়া থাকি এবং যেই বুলির মধ্যদিয়া হা হতাশময় কাতরোক্তি করিতে করিতে চির বিদায়ের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করিয়া থাকি, সেই মাতৃবুলির এটতা অবজ্ঞা এবং এক প্রকার গ্লানী আমরা কোন্ ন্যায়শাস্ত্রের দোহাই দিয়া নীরবে জীর্ণ করিয়া যাই?</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘ইসলাম প্রচারক’ এর ৮ম বর্ষ, ১১শ সংখ্যায় ‘মুসলমান সম্প্রদায় ও তাহার পতন’ প্রবন্ধে আবদুল হক চৌধুরী বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘আমরা বাঙ্গালী, আমাদের মাতৃভাষা বাঙ্গালা বলিয়াই সকলে স্বীকার করে যদিও নগরবাসী মুষ্টিমেয় মোসলমান উর্দু ভাষা বলিয়া থাকেন।…আমরা এখন এই দেশের লোক বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। …সুতরাং বঙ্গভূমিতে বাস করিতে হইলে বাঙ্গালা ভাষা শিক্ষা করা নিতান্ত দরকার। দুঃখের বিষয়, ৫০০ বৎসর যাবৎ আমরা এই দেশে বাস করিতেছি, কিন্তু এ যাবৎ বাঙ্গালা ভাষায় মুসলমান সুলেখকের আবির্ভাব হয় নাই। …বাঙ্গালা আদালতের ভাষা, অর্থকরী ভাষা, কার্যকরী ভাষা, দেশের ভাষা। আমি বলি, বাঙ্গালা ভাষা মাতৃভাষা বলিয়া স্বীকার করিলে দোষ কী?</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘বঙ্গীয় মোসলমান ও উর্দ্দু সমস্যা’ প্রবন্ধে মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘বাঙ্গালাকে ছাড়িয়া বা বাঙ্গালার পরিবর্ত্তে উর্দ্দু শিক্ষা করা হউক ইহার আমরা আদৌ সমর্থক নহি, এবং তাহা সম্ভবপর বলিয়াও স্বীকার করি না। বাঙ্গালা বঙ্গদেশের মাতৃভাষা, এই ভাষা ত্যাগ করিবার কোনো উপায় নাই।’</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
মোয়াজ্জিন, ২য় বর্ষ, ৯ম-১০ম সংখ্যা; আষাঢ় ১৩৩৭ সংখ্যায় ‘বাংলা ভাষা ও মুসলমান’ প্রবন্ধে আবুদল মজিদ বিএ লিখেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘বহু শতাব্দী যাবৎ বাংলার ক্রোড়ে লালিত পালিত হইয়া এবং যুগ-যুগান্তর যাবৎ মাতার মুখে বাংলা শুনিয়াও বঙ্গীয় মুসলমান বাংলা ভাষাকে আদর করিতে শিখে নাই। দেশটির ন্যায় ভাষাটার প্রতিও তাহাদের যেন পরদেশী ভাব। এই বিংশ শতাব্দীতে এমন অনেক অভিজাত্যাভিমানী মহাত্মা আছেন যাহাদের মতে বাংলাকে মাতৃভাষা বলিলে শরাফতের হানি হয়। আমাদের ভাবের আদান প্রদান ও চিন্তাশক্তি আরবী, পারসি ও উর্দুতে প্রকাশ করিবার বৃথা চেষ্টাই মাতৃভাষা ও সাহিত্যে আমাদের দাবি ও মর্যাদা রক্ষার সুযোগকে প্রথম হইতেই আমরা উপেক্ষা করিয়া আসিয়াছি।’</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
বাংলার মুসলমানগণ আরব, পারস্য, আফগানিস্তান অথবা তাতারের অধিবাসীই হউন না কেন বাঙালি হিসেবে আমাদের ভাষা বাংলা’ উল্লেখ করে বাসনা, ২য় ভাগ, ১ম সংখ্যা; বৈশাখ ১৩১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘উত্তর বঙ্গের মুসলমান সাহিত্য’ প্রবন্ধে হামেদ আলী বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘আমাদের পূর্ব্বপুরুষগণ আরব, পারস্য, আফগানিস্তান অথবা তাতারের অধিবাসীই হউন, আর এতদ্দেশবাসী হিন্দুই হউন, আমরা এক্ষণে বাঙ্গালী; আমাদের মাতৃভাষা বাঙ্গালা। বাস্তবিক পক্ষে যাহারা ঐ সকল দেশ হইতে এতদ্দেশে আগমন করিয়াছিলেন, তাহারাও এক্ষণে আরব, পারসি অথবা আফগান জাতি বলিয়া আত্মপরিচয় দিতে পারেন না, …মাতৃগর্ভ হইতে ভূমিষ্ট হইয়া প্রথম যে ভাষা আমাদের কর্ণকুহরে প্রবিষ্ট হইয়াছে, যে ভাষা আমরা আজীবন ব্যবহার করি, যে ভাষায় আমরা সুখ দুঃখ, হর্ষ বিষাদ প্রকাশ করি, যে ভাষায় হাটে বাজারে, ব্যবসায় বাণিজ্যে এবং বৈষয়িক কার্য্যে কথোপকথন করি; যে ভাষায় নিদ্রাকালে স্বপ্ন দেখি; সেই ভাষা বাঙ্গালা। সুতরাং বাঙ্গালা ভাষা আমাদের মাতৃভাষা; ….আমাদের অনেকেরে মোহ ছুটে নাই। তাহারা বাঙ্গালার বাঁশবন ও আম্র কাননের মধ্যস্থিত পর্ণ কুটিরে নিদ্রা যাইয়া এখনো বোগদাদ, বোখরা, কাবুল, কান্দাহারের স্বপ্ন দেখিয়া থাকেন। কেহ কেহ আবার বাঙ্গালার পরিবর্ত্তে উর্দুকে মাতৃভাষা করিবার মোহে বিভোর। দুর্বল ব্যক্তিরা যেমন অলৌকিক স্বপ্ন দর্শন করে, অধঃপতিত জাতিও তেমনি অস্বাভাবিক খেয়াল আঁটিয়া থাকে।</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
ভাষাকে মুসলমানী করার ব্যর্থ চেষ্টা না করে বঙ্গভাষার ভাবের ঘরে মুসলমানীর প্রাণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে ‘কোহিনুর’ এর মাঘ ১৩২২ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বাঙ্গালী মুসলমানের ভাষা ও সাহিত্য’ প্রবন্ধে মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘বাঙ্গালী মুসলমানের মাতৃভাষা বাঙ্গালা, ইহা দিনের আলোর মতো সত্য। ভারতব্যাপী জাতীয় সৃষ্টির অনুরোধে বঙ্গদেশে উর্দ্দু চালাইবার প্রয়োজন যতই অভিপ্রেত হউক না কেন, সে চেষ্টা আকাশে ঘর বাঁধিবার ন্যায় নিষ্ফল। বাঙ্গালা ভাষায় জ্ঞানহীন মৌলভী সাহেবগণের বিদ্যা ও বঙ্গদেশে উর্দ্দু শিক্ষার বিফলতা তাহার জলন্ত প্রমাণ। সুতরাং জনসমাজেহ উর্দ্দু শিক্ষা হইতে নিষ্কৃতি দিলে নিশ্চয়ই জাতীয়তা বৃদ্ধির অনিষ্ট হইবে না। …ভাষাকে মুসলমানি করিবার চেষ্টায় শক্তিক্ষয় না করিয়া বঙ্গভাষার ভাবের ঘরে মুসলমানীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা লক্ষ গুণে প্রয়োজন।’</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
এ প্রসঙ্গে সৈয়দ এমদাদ আলী বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘কেহ উর্দুর স্বপ্নে বিভোর হইলেও বাঙালি মুসলমানের মাতৃভাষা যে বাঙালা এ বিষয়ে কোনো মতদ্বৈত থাকা উচিত নয়। ’(বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, ১ম বর্ষ, ২য় সংখ্যা. ১৩২৫)।’</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
সবকিছু ত্যাগ স্বীকার করতে পারলেও ভাষা ত্যাগ করতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে মোহাম্মদ লুৎফর রহমান ‘বঙ্গীয়-মসুলমান-সাহিত্য পত্রিকা’ ৪র্থ বর্ষ, ১ম সংখ্যা; বৈশাখ ১৩২৮ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘উর্দু ও বাঙ্গলা সাহিত্য’ প্রবন্ধে লিখেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
‘আমি ভিখারী হইতে পারি, দুঃখ অশ্রুর কঠিনভারে চূর্ণ হইতে আপত্তি নাই। আমি মাতৃহারা অনাথ বালক হইতে পারি―কিন্তু আমার শেষ সম্বল-ভাষাকে ত্যাগ করিতে পারি না। আমার ভাষা চুরি করিয়া আমার সর্বস্ব হরণ করিও না। মাতৃভাষাকে কেমন করিয়া ভুলিব? এমন অসম্ভব প্রস্তাব করিয়া আমার জীবনকে অসাড় ও শক্তিহীন করিয়া দিতে চায়- কে? বিদেশী ভাষায় কাঁদিবার জন্য―কে আমাকে উপদেশ দেয়?..</div>
<div style="text-align: justify;">
গৃহের পার্শ্বে উর্দুর কলহাসি আমরা নিত্যই শুনি, কিন্তু তাহাতে বাঙ্গালী মোসলমানের হৃদতন্ত্রীতে জাগে না। সে তাহাতে যথার্থ আনন্দ ও শান্তি লাভ করে না।’</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
মাতৃভাষার প্রতি ঘৃণা করাকে লজ্জাজনক উল্লেখ করে খাদেমাল এসলাম বঙ্গবাসী ‘বাঙালির মাতৃভাষা’ প্রবন্ধে বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘মাতৃভাষার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করা, বাঙ্গালী হইয়া নিজেদের মাতৃভাষা উর্দু বা আরবী বলিয়া পরিচয় দেওয়া কিংবা বাঙ্গলা জানি না ভুলিয়া গিয়াছি, এরূপ বলা―এই মারাত্মক রোগ কেবল এক শ্রেণির মুসলমানের মধ্যে দেখা যায়। তাহাদের এরূপ নীতি অবলম্বন করা কি বাস্তবিক পক্ষে নিতান্ত লজ্জাজনক নহে? যাহারা এরূপ আচরণ করে তাহারা যে আপন মাতা ও মাতৃভূমির প্রতি নিন্দা প্রকাশ করে এবং নিজমুখে নিজের মায়ের এবং দেশের দীনতা জ্ঞাপন করে, তাহাতে কিছুমাত্র সংশয় নাই।’</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজের মাতৃভাষাকে অস্বীকার করাকে নিজের মা-কে অস্বীকার করার নামান্তর উল্লেখ করে ‘সাহিত্যিক, ১ম বর্ষ, ১১শ সংখ্যা; আশ্বিন ১৩৩৪ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বাঙ্গলা সাহিত্য ও মুসলমান’ প্রবন্ধে মোহাম্মদ গোলাম মাওলা বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
বাঙ্গলার পরিবর্ত্তে আরবী ও উর্দ্দু শব্দ ব্যবহার করার সঙ্গে যেন জাতীয়তা বা ধার্মিকতার একটা অন্ধ মনোভাব সংশ্লিষ্ট রহিয়াছে। …বাঙ্গলা ভাষার প্রতি একটা হৃদয় নিহিত স্বাভাবিক মমতা যেন আমাদের নেই, আরবী, ফার্সি বা উর্দ্দুই যেন তদপেক্ষা আমাদের চেয়ে বেশি আপন। নিজের মাতৃভাষার প্রতি এই যে একটা অজ্ঞাত অশ্রদ্ধা ও তাচ্ছিল্যের ভাব এবং অন্যভাষার প্রতি একটা প্রচ্ছন্ন দরদ ইহাকে আমি বড় অশ্রদ্ধা করি। …আরবী আমাদের ধর্মভাষা, আল্লাহর বাণী উহাতে নাজিল হইয়াছে, রসুলের সুন্নত ও হাদিস উহাতে, তাই উহা আমাদের প্রিয়, ফার্সি ও উর্দুতে ইসলামের আলেমগণ অসাধ্য সাধন করিয়া রাখিয়া গিয়াছেন, তাই উহাদিগকে আমরা ভালোবাসি। কিন্তু উহাদিগকে ভালবাসিব বলিয়া নিজের মাতৃভাষাকে অপমান করিব…ইহা কোন ন্যায়ের অন্তর্গত! …ধর্মের গোঁড়ামি একবার আমাদিগকে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্ধ শতাব্দী পিছাইয়া ফেলিয়া দিয়াছে, আবার যেন মুসলমানী বাঙ্গলার মোহ আমাদিগকে পথ না ভুলায়।’</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগের সভাপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে দলের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রবর্তনের উদ্যোগ নিলে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে বাঙালি প্রতিনিধিদের বিরোধিতায় সে উদ্যোগ সফল হয়নি। মাতৃভাষাকে সকল পর্যায়ের শিক্ষার মাধ্যমরূপে গ্রহণ করার জন্য শিখা গোষ্ঠীও সংগঠিত আন্দোলন চালায় এ সময় থেকেই। এক রাষ্ট্রভাষার নির্বাচন নিয়ে হিন্দু উর্দুর সমর্থকদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ অন্যদিকে রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ। এ দুটি দিক বিবেচনা করে ১৯৩৭ সালের ২৩ এপ্রিল আজাদ একটি দারুণ সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। পত্রিকার ভাষায়―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
সাহিত্যের দিক দিয়ে বাংলা ভাষা ভারতের সমস্ত প্রাদেশিক সাহিত্যের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বাংলা ভাষায় বিবিধ ভাব প্রকাশোপযোগী শব্দের সংখ্যাও বেশি। অতএব, বাংলা সবদিক দিয়েই ভারতের রাষ্ট্রভাষা হবার দাবি করতে পারে।….রাষ্ট্রভাষার নির্বাচন লয়ে হিন্দী-উর্দুর সমর্থকদের মধ্যে আজ যে তুমুল সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ উপস্থিত হয়েছে, তার ফলে হয়তো উর্দু ও হিন্দীর মধ্যে কোনোটারই রাষ্ট্রভাষার আপন অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভবপর হবেনা। কিন্তু বাংলাকে রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করা হলে এ সাম্প্রদায়িক সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা বহু পরিমাণ কমে যেতে পারে।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৩৪৫ বাংলা সনে ভারতে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ সম্পর্কে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ভারতের রাষ্ট্রভাষা সম্বন্ধে ‘বিদ্বজ্জনের আলোচনা’ শিরোনামে এক সংবাদ ও আলোচনায় বলা হয়―</div>
<div style="text-align: justify;">
‘সম্প্রতি রাষ্ট্রভাষা সম্বন্ধে আলোচনা করার নিমিত্তে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ভবনে একটি সভার অধিবেশন হয়। সুপ-িত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয় সভাপতির আসন গ্রহণ করেন। তিনি এবং অতুল চন্দ্রগুপ্ত, অর্ধেন্দু কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীতি কমার চট্টোপাধ্যায়, খগেন্দ্রনাথ মিত্র, প্রফুল্ল কুমার সরকার, সুন্দরী মোহন দাস ও দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্র আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। ‘বাংলার বহুলতার জন্য লিখিত ও অন্যান্য উপায় অবলম্বন করা উচিত: বিশেষ প্রয়োজন ভিন্ন বাঙালি মাত্রেরই দৈনন্দিন কার্য ও ব্যবহারে বাংলা ভাষা ব্যবহার করা কর্তব্য, বাংলাদেশ প্রবাসী অন্য ভাষাভাষী ব্যক্তিদের সহিত যতদূর সম্ভব বাংলা ভাষায় কথোপকথন ও চিন্তার বিনিময় কর্তব্য, এই সভার মতে ভারতীয় রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ভাষা নির্ধারণের চেষ্টা কালোচিত নহে ও অসমীচীন। ভারতবর্ষে পূর্ণ স্বরাজ প্রতিষ্ঠিত হইবার পর ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের অন্তভূক্ত প্রদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিবর্গ কর্তৃক রাষ্ট্রীয় ভাষা নির্দিষ্ট হওয়া উচিত মর্মে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার সম্ভাবনা সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং বলেন যে, ‘সাহিত্যের গৌরব থাকিলেই ভাষার প্রসার হয় না।’ ব্যস, এখানেই সমাপ্তি ঘটে ভারতের রাষ্ট্রভাষা সম্বন্ধে বিদ্বজ্জনের আলোচনা ’</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
ইতোমধ্যে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে শুরু হয় পাকিস্তান আন্দোলন। এ আন্দোলনের সময় আবার উঠে আসে রাষ্ট্রভাষা বাঙলার প্রশ্নটি। ইতোমধ্যে অনেক লেখকরা লিখেন পাকিস্তান নিয়ে বিভিন্ন রকমের বই। ওই সব লেখকদের মধ্যে কতিপয় লেখক উর্দু ভাষার পক্ষে লিখলেও কয়েকজন লেখক বাংলা ভাষার পক্ষেই লেখেন। তার মধ্যে অন্যতম মুজীবর রহমান খাঁ। মুজীবর রহমান খাঁ তার রচিত ‘পাকিস্তান’ গ্রন্থে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘মুসলিম লীগ এতদিন উর্দুকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা বলিয়া প্রচার করিয়াছে সত্য। কিন্তু যতদিন লীগ অখ- ভারতে বিশ্বাসী ছিল, ততদিন তার এ দাবির জোর ছিল। লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা ভিন্ন আর কিছুই হতে পারেনা। (পাকিস্তান, মুজীবর রহমান খাঁ, পৃ: ১৭২)। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘ভারতে উর্দুুর সাথে একমাত্র বাংলা সমমর্যাদা দাবি করিতে পারে। এই উভয় ভাষা যেমন শব্দ সম্পদে উন্নত, তেমনই উভয় সাহিত্যও বিশ্বের বড় বড় সাহিত্যের পার্শ্বে স্থান লাভের যোগ্য। সুতরাং নির্ভয়ে বলা যাইতে পারে, পূর্ব পাকিস্তানে যেমন বাংলা, হিন্দুস্থানে যেমন হিন্দী তেমনই পশ্চিমা পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হইবে উর্দু।৫ মুজীবর রহমান খাঁর মতো একই ধরনের মতামত প্রকাশ করেন হাবিবুল্লাহ বাহার তাঁর ‘পাকিস্তান’, তালেবুর রহমানের ‘পাকিস্তানবাদের ক্রমবিকাশ’ ও ‘সর্বহারাদের পাকিস্তান’ গ্রন্থে এবং অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমদ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কবি ফররুখ আহমদ, ড. ফেরদৌস খান প্রমুখ তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে।</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক বছর আগে ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সম্পাদক আবুল হাশিম কর্তৃক প্রাদেশিক কাউন্সিলের নিকট পেশকৃত খসড়া ম্যানিফেস্টোতে বাংলাকে পূর্ব বাংলার রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করা হয়।</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯৪৭ সালের ৩ জুন ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন এর নেতৃত্বে মাউনব্যাটেন পরিকল্পনা ঘোষণার পরপরই আবুল মনসুর আহমদ দৈনিক মিল্লাত এর সম্পাকদীয় কলামে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা যে বাংলা ভাষাই হবে, বলাইবাহুল্য বলে অভিমত প্রকাশ করেন। একই মাসের ৩০ জুন দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ শীর্ষক প্রবন্ধে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। এর কয়েকদিন পরই যখন রাষ্ট্রভাষা নিয়ে দিন দিন জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে ঠিক তখনি মো. তোয়াহা, অলি আহাদ, তাজউদ্দিন আহমদ, ও কমরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় গণ আজাদী লীগ। এই দলের ম্যানিফেস্টোতে বলা হয়―‘বাংলা হইবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’।</div>
<div style="text-align: justify;">
মাসিক মোহাম্মদীতে ১৩৫০, কার্তিক সংখ্যায় আবুল মনসুর আহমদ ‘পূর্ব পাকিস্তানের জবান’ শীর্ষক প্রবন্ধে রাষ্ট্রভাষা উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার বিরোধিতা করে বলেন―</div>
<div style="text-align: justify;">
‘উর্দু নিয়ে এই ধস্তাধস্তি না করে আমরা সোজাসুজি বাংলাকে যদি পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও জাতীয় ভাষারূপে গ্রহণ করি, তবে পাকিস্তান প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা মুসলিম বাংলার শিক্ষিত সম্প্রদায় নিজেরাই পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, শিক্ষাগত, অর্থনৈতিক ও শিল্পগত রূপায়ণে হাত দিতে পারবো।’</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
কিন্তু সংখ্যায় কম হলেও ভিন্ন মতাবলম্বীদের অভাব ছিলো না এ পূর্ব বাংলায়। ১৯৪৭ সালের ১৭ মে বর্তমান ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের অন্তর্গত হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত এক উর্দু সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য এবং পরে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর চৌধুরী খালিকুজ্জামান (১৮৮৯-১৯৬০) ঘোষণা করেন যে,‘উর্দু হবে পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা।’ বিভাগ পূর্বকালে ১৯৪৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন এক শ্রেণির শিক্ষিত ব্যক্তির রাষ্ট্রভাষা বাংলার বিপক্ষে বক্তব্য রাখার কঠোর সমালোচনা করে ‘পাকিস্তান: রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য ’ শীর্ষক প্রবন্ধে কবি ফররুখ আহমদ বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
পাকিস্তানের অন্তত: রাষ্ট্রভাষা যে বাংলা হবে এ কথা সর্ববাদীসম্মত হলেও আমাদের এই পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন তথাকথিত শিক্ষিত ব্যক্তি বাংলা ভাষার বিপক্ষে এমন অর্বাচীন মত প্রকাশ করেছেন, যা নিতান্ত লজ্জাজনক। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় রূপায়িত করলে ইসলামী ঐতিহ্যের সর্বনাশ হবে এই তাদের অভিমত। কী কুৎসিত পরাজয়ী মনোবৃত্তি এর পেছনে কাজ করছে―এ কথা ভেবে আমি বিস্মিত হয়েছি। যে মনোবৃত্তির ফলে প্রায় ২০০ বছর বাঙলা ভাষায় ইসলামের প্রবেশ প্রায় নিষিদ্ধ ছিল সেই অন্ধ মনোবৃত্তি নিয়েই আবার আমরা ইসলামকে গলাটিপে মারার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছি। (মাসিক সওগাত, আশ্বিন সংখ্যা, ১৩৫৪)।</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
চৌধুরী খালিকুজ্জামানের উর্দুর পক্ষে দালালির এক মাস ছয় দিন পর অর্থাৎ ২২ জুন কলকাতার ইত্তেহাদ পত্রিকার রবিবাসরীয় বিভাগে ‘বাংলা ভাষা বিষয়ক প্রস্তাব ’ শিরোনামে এক দীর্ঘ প্রবন্ধে বামপন্থী লেখক-সাংবাদিক আবদুল হক বাংলার ভাষাগত স্বাতন্ত্র্য এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে লেখকের গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেন। ৩০ জুন দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ’ প্রবন্ধে বাঙলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করেন―</div>
<div style="text-align: justify;">
যে স্বাধীনতা আসছে, ভাষাগত স্বাধীনতা না পেলে তা হবে আংশিক এবং বদ্ধমুখ স্বাধীনতা। অতএব, পাকিস্তানের―কেবল পূর্ব পাকিস্তানের নয়, পূর্ব এবং পশ্চিম উভয় পাকিস্তানকে নিয়ে সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হবার যোগ্যতা সবচেয়ে বেশী বাংলা ভাষার।’</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক মাসে আগে (জুলাই মাসে) আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ অভিমত ব্যক্ত করেন, হিন্দীকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যুঙ্গিসংগত কারণে উদর্ুূকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা উচিত। ড. জিয়াউদ্দিন আহমদের বক্তব্য খ-ন করে ২৯ জুলাই দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা’ নামক প্রবন্ধ লিখে জোরালো প্রতিবাদ করে রাষ্ট্রভাষারূপে বাংলার দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘কংগ্রেসের নির্দিষ্ট হিন্দীর অনুকরণে উর্দু পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষারূপে গণ্য হইলে তাহা শুধু পশ্চাদগমনই হইবে। …যদি বিদেশী ভাষা বলিয়া ইংরেজি ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ না করার পক্ষে কোনো যুক্তি নাই। …পূর্ব পাকিস্তানের কোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার পরিবর্তে উর্দু বা হিন্দীকে গ্রহণ করা হইলে ইহা রাজনৈতিক পরাধীনতার নামান্তর হইবে। ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ পাকিস্তানের প্রদেশসমূহের বিদ্যালয়ের শিক্ষার বাহনরূপে প্রাদেশিক ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষার পক্ষে যে অভিমত প্রকাশ করেছেন, আমি একজন শিক্ষাবিদরূপে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এটা বৈজ্ঞানিক শিক্ষানীতির বিরোধীই নয়, বরং প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের নীতি বিহর্গিতও বটে। (সূত্র: দৈনিক আজাদ, ২৯ জুলাই ১৯৪৭)</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
৩০ জুলাই ১৯৪৭ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ‘রাষ্ট্রভাষা বিষয়ক প্রস্তাব’ নামক প্রবন্ধে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন মাহবুব জামাল জাহেদী।৬ উর্দুকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা করার উদ্ভট স্বপ্নকে আলাদিনের বিচিত্র প্রদীপ অপেক্ষা বিস্ময়াবহ বলে উল্লেখ করে শেখ আবদুল গফুর জালালী ‘আল ইসলাম’ ৫ম বর্ষ, ৩য় সংখ্যায় ‘শিক্ষা বিস্তারের উপায়’ প্রবন্ধে বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
‘বাঙ্গালা দেশে জন্মগ্রহণ করিয়া, বাঙ্গলার জলবায়ুতে দেহপুষ্ট করিয়া যাহারা মাতৃঅঙ্ক হইতে বাঙ্গালা কথা শুনিয়া আসিয়াছেন এবং মাতৃস্তন পানের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙ্গালা কথা শিক্ষা করিয়াছেন তাহারাই আবার বাঙ্গালাকে মাতৃভাষা বলিয়া স্বীকার করিতে নাসিক্য কুঞ্চন করিয়া থাকেন। যাহারা উর্দ্দুকে মাতৃভাষা করিবার কল্পনা জল্পনা আঁটিতেছেন, তাহাদের এই উদ্ভট কল্পনা আলাদিনের বিচিত্র প্রদীপ অপেক্ষাও বিস্ময়াবহ বটে।’</div>
<div style="text-align: justify;">
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ‘কৃষ্টি’ নামক এক পত্রিকার ১৩৫৪ এর কার্তিক সংখ্যায় ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ এনামুল হক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলার উপযোগিতার বিষয়টি তুলে ধরে বলেন,</div>
<div style="text-align: justify;">
‘ইহাতে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় সর্বনাশ হইবে। উর্দু বাহিয়া আসিবে পূর্ব পাকিস্তানবাসীর মরণ, …রাজনৈতিক, রাষ্ট্রীয়, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক মৃত্যু। এই রাষ্ট্রীয় ভাষার সূত্র ধরিয়া শাসন, ব্যবসা বাণিজ্য ইত্যাদি সর্ববিষয়ে পূর্ব পাকিস্তান হইবে উত্তর ভারতীয় ও পশ্চিম পাকিস্তানী উর্দু ওয়ালাদের শাসন ও শোষণের ক্ষেত্র, যেমন ভারত ছিল ইংরেজী রাষ্ট্রভাষার সূত্রে শাসন ও শোষণের ক্ষেত্র’৭</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯৪৭ সালে আগস্ট মাসে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগ ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান খান সাহেব আবুল হাসনাতের বেচারাম দেউরির বাসভবনে শুরু হওয়া সম্মেলনে ৭ সেপ্টেম্বর সাবজেক্ট কমিটির গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়―</div>
<div style="text-align: justify;">
‘বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা করা হোক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হইবে তৎসম্পর্কে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হউক এবং জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলিয়া গৃহীত হউক।’</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
বাংলা, পাকিস্তান ও ভারত সৃষ্টির আগে তথা ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্র ফেডারেশন কর্মী শহীদ সাবের ও সাইমুম শমসের কক্সবাজার থেকে জাগরণ নামে একটি সাহিত্য প্রকাশ করেন। ‘জাতীয় জাগরণের অগ্রদূত’ সেøাগানে প্রকাশিত ‘জাগরণ’-এ বাংলা ভাষার স্বীকৃতি দানের বিষয়টি তুলে ধরে সম্পাদকীয় লেখেন শহীদ সাবের।</div>
<div style="text-align: justify;">
এ কে ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২) উত্থাপিত ও চৌধুরী খালেকুজ্জামান (১৮৮৯-১৯৬০) সমর্থিত লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগুরু মুসলিম অঞ্চলগুলি নিয়ে ‘স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ’ (ওহফবঢ়বহফধহঃ ঝঃধঃবং) গঠনের কথা উল্লেখ থাকলেও ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল দিল্লীতে মুসলিম আইন পরিষদ সম্মেলনে বাংলার প্রতিনিধিদের প্রতিবাদকে স্তব্ধ করে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ (১৮৭৬-১৯৪৮) ‘স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ’ (Independent States) থেকে ‘এস’ কে অসাবধানতাপ্রসূত ও ছাপাখানার ভুল বলে উল্লেখপূর্বক ‘পাকিস্তান’ এর পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করেন। ফলে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে কায়েমী স্বার্থবাদী মহলের মিথ্যা প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে এ সময় সারা প্রদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের অধিকাংশ নেতা পাকিস্তান আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ওই ইস্যুকে ঘিরে অনুষ্ঠিত ১৯৪৬ এর প্রাদেশিক নির্বাচনে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু ওই নির্বাচন হয়েছিল প্রদেশগুলোতে সরকার গঠনের জন্যে। কোনো প্রদেশ বিভক্ত করার কথা ছিলো না। কিন্তু মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর প্রখর বুদ্ধিমত্তা ও কূটকৌশলের কাছে ভারতের স্বাধীনতার জন্য সা¤্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বকারী প্রধান দল ভারতের জাতীয় কংগ্রেস এর মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী (১৮৬৯-১৯৪৮), প-িত জওহরলাল নেহেরু (১৮৮৯-১৯৬৪), সরদার বল্লভ ভাই প্যাটেল (১৮৭৫-১৯৫০) প্রমুখ কংগেস নেতা হার মানে। বৃটিশ শাসকদের সর্বশেষ প্রতিনিধি ভাইসরয় লর্ড মাউন্ট ব্যাটনের প্রত্যক্ষ প্রভাবে ও তত্ত্বাবধানে ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলের-রাজস্থানের অংশ বিশেষ নিয়ে গঠিত সিন্ধু, পাঞ্জাবের পশ্চিম অংশ নিয়ে গঠিত পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ (যা আফগানিস্তানের পাখতুন অঞ্চল নামে পরিচিত ছিল) এবং পূর্বাঞ্চলে তৎকালে পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব বাংলা নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ পূর্ববঙ্গ নিয়ে গঠিত হয় একটি নতুন রাষ্ট্র, যার নাম পাকিস্তান। এই পাকিস্তানের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে প্রায় ১২০০ মাইল ব্যবধান; মধ্যবর্তী ভূভাগের পুরোটাই ভারতের। পরবর্তীতে পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যে পূর্বাংশের নাম দেওয়া হয় পূর্ব বাঙলা (পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান, আজকের বাংলাদেশ) আর পশ্চিমাংশের চার প্রদেশকে (পাঞ্জাব, সিন্ধু, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তান) একত্রে নাম দেওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তান। যে নির্বাচনের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠিত হয় সে নির্বাচনে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানের দাবিদার নিখিল ভারত মুসলিম লীগ কেবল পূর্বে বাংলাদেশ ও সিন্ধুতে সরকার গঠন করতে পারে। পাঞ্জাবে সরকার গঠন করে ইউনিয়নিস্ট পার্টি, সীমান্ত প্রদেশ ও বেলুচিস্তানে কংগ্রেস। অর্থাৎ এই প্রদেশসমুহে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ও মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি প্রত্যাখ্যাত হয়। সেই মতে, কেবল পশ্চিমে সিন্ধু ও পূর্বে বাংলাদেশ নিয়ে পাকিস্তান হওয়া উচিত ছিল। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের শেষ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম (১৯০৫-১৯৯৪), নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু (১৮৯৭-১৯৪৫)’র বড় ভাই কংগ্রেস নেতা শরৎচন্দ্র বসু (১৮৮৯-১৯৫০) এবং কংগ্রেস নেতা কিরণ শঙ্কর রায় (১৮৯১-১৯৫১), প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখের দাবি মোতাবেক বঙ্গদেশ তথা বাংলাদেশকে (আজকের পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরা-আসাম ও বাংলাদেশ) একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকার করে নেয়া যেতো। যদি সেটাই হতো তাহলে ১৯৪০ সালে বাংলার বাঘ এ কে ফজলুল হক উত্থাপিত ও চৌধুরী খালেকুজ্জামান সমর্থিত লাহোর প্রস্তাবের ‘স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ’ (ওহফবঢ়বহফধহঃ ঝঃধঃবং) এর সাথে সংগতিপূর্ণ। তাহলে বাংলা হতো নিখিল বঙ্গভূমির বিরাট এক জনগোষ্ঠীর অবিসংবাদিত রাষ্ট্রভাষা। কিন্তু বাস্তবে তা না করে, জনগণের কোনো ম্যা-েট না নিয়েই পশ্চিম পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান ও উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে পাকিস্তানের সাথে জুড়ে দেয়। আর পূর্ব পাঞ্জাব এবং বঙ্গদেশের পশ্চিম অংশ ও উত্তরাঞ্চলের অনেকটা তুলে দেয়া হয় ভারতের হাতে। মোটকথা ভারত বিভাগ ছিল ভারত জাতীয় কংগ্রেস ও নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অদূরদর্শী ও স্বার্থপর কিছু নেতার দ্বারা বানরের পিঠা ভাগের মতো।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারত নামক পৃথক দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি হলে বৃটিশরা ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত হন। ভারত বিভক্তির সাথে সাথে পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ বিত্তবান শিক্ষিত হিন্দুরা চলে গেলো পশ্চিমবঙ্গে আর অধিকাংশ বাঙালি মুসলমান যারা শিক্ষিত ও নগরকেন্দ্রিক হয়ে উঠলো, তারা যেন রাতারাতি আরব সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ধর্মের আবেগে পাকিস্তানি ভাবধারায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। ফলে সংস্কৃতির অঙ্গনে দেখা দিল শূন্যতা। তবে বাঙালি মুসলমানদের পাকিস্তান প্রেমের আচ্ছন্নতা কেটে যেতে বেশি সময় লাগেনি। পাকিস্তান কায়েমের এক বছরের মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার বিষয়টি নিষ্পত্তি না করেই এনভেলাপ, পোস্টকার্ড, ডাকটিকেট, মানি অর্ডার, ট্রেন টিকেট ও টাকার উপর উর্দু এবং ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে বাঙালির ভাষা-সংস্কৃতিতে আঘাত শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে পটিয়ার কৃতিসন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাসেম (১৯২০-১৯৯১) পাকিস্তান সৃষ্টির ১৭ দিনের মাথায় ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গঠন করেন ‘তমদ্দুন মজলিস’। অনেকটা ইসলামী তমদ্দুনকে সমুন্নত করার প্রত্যয়ে এ সংগঠন গঠিত হলেও এ সংগঠনই প্রথম বাংলা ভাষার দাবিতে প্রতিবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন। এর ধারাবাহিকতায় ওই সনের ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস থেকে প্রকাশিত হয় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না ঊর্দু’ শিরোনামে পুস্তিকা। এই পুস্তিকায় অধ্যাপক আবুল কাসেম ‘আমাদের প্রস্তাব’, ড. কাজী মোতাহের হোসেন ‘রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা’ এবং আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৭-১৯৭৯) ‘বাংলাই আমাদের রাষ্ট্রভাষা হইবে’ নামক তিনটি প্রবন্ধ লিখে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে পাকিস্তান আমলে প্রথম আন্দোলন সংগঠিত করেন। এ পুস্তিকায় ‘আমাদের প্রস্তাব’ প্রবন্ধে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবির পাশাপাশি তমদ্দুন মজলিস কর্তৃক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ী পূর্ব বাংলার স্বায়ত্বশাসন অন্যথায় স্বাধীনতার দাবি তোলা হয়। ১৫ সেপ্টেম্বর বিকালে তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে ঢাকা সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজ (ঢাকা কলেজ) ছাত্রাবাস নূপুর ভিলায় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা ও উর্দু করা হোক’ শীর্ষক এক ঘরোয়া সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১৮৮৫-১৯৬৯) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না ঊর্দু’ শিরোনামের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ঘোষণাপত্রের উপর বিস্তারিত আলোচনা হয় এবং ঘোষণাপত্র মতে কর্মপন্থা নির্ধারণের জন্য উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ঐক্যমত হয়। এ সেমিনারে অংশ নেন, অধ্যাপক আবুল কাসেম, ড. কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১), প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ (১৮৯৪-১৯৭৮), কবি জসীম উদ্দীন (১৯০৩-১৯৭৬), অধ্যাপক কাজী আকরাম হোসেন, অধ্যাপক শামসুল হক, শাহেদ আলী (১৯২৫-২০০২), সানাউল্লাহ নূরী (১৯২৮-২০০১)। ভাষা আন্দোলনের প্রথম ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে গণ্য এ পুস্তিকা জনমনে রেখাপাত করে এবং ব্যাপক জনমত তৈরি করে। এ অবস্থায় তমদ্দুন মজলিস মাওলানা আকরাম খাঁ (১৮৭০-১৯৬৮), মাওলানা আব্দুল্লাহিল বাকী (মেম্বার অব লেজিসলেটিভ এসেম্বলী), আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ (১৮৭১-১৯৫৩), আবুল কালাম শামসুদ্দিন (১৮৯৭-১৯৭৮), শামসুন নাহার মাহমুদ (১৮৮৮-১৯৬৪)সহ হাজারো মানুষের দস্তখত সংগ্রহ করে তা স্মারকলিপি আকারে ১৯৪৭ সালের ১৪ নভেম্বর পূর্ব বাঙলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীনকে প্রদান করে। কিন্তু এতেও শাসক দলের টনক না নড়ায় শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে সভা সমাবেশের আয়োজনে নামে। ১৯৪৭ সালের ৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে প্রথম জনসভা হয়। তমদ্দুন মজলিসের কর্ণধার অধ্যাপক আবুল কাসেম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের (বর্তমানে ছাত্র সংসদ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ফরিদ আহমদ (১৯২৩-১৯৭১; পরবর্তীতে মৌলভী ফরিদ আহমদ নামে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পরিচিত এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে ঘৃণিত হন ও নিহত হন), অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী (১৯২৫-১৯৭১; শহিদ বুদ্ধিজীবী), আবদুর রহমান চৌধুরী (১৯২৬-১৯৯৪; পরবর্তীতে বিচারপতি), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক এ কে এম আহসান (পরে সিএসপি/সচিব), কল্যাণ দাশগুপ্ত, এস. আহমদ প্রমুখ।</div>
<div style="text-align: justify;">
ডাকসু’র সভাপতি হিসেবে ফরিদ আহমদ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা এবং শিক্ষার মাধ্যম করার লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন। উত্থাপিত প্রস্তাব জানার সুবিধার্থে নি¤েœ প্রদত্ত হলো:</div>
<div style="text-align: justify;">
(ক) বাংলাকে পাকিস্তান ডোমিনিয়নের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার বাহন করা হোক।</div>
<div style="text-align: justify;">
(খ) রাষ্ট্রভাষা ও লিংগুয়া ফ্রাংকা নিয়ে যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে তার মূল উদ্দেশ্য আসল সমস্যাকে ধামাচাপা দেয়া এবং বাংলা ভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা।</div>
<div style="text-align: justify;">
(গ) পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ফজলুর রহমান এবং প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী হাবিবুল্লাহ বাহার (১৯০৬-১৯৬৬) উর্দু ভাষার দাবিকে সমর্থন করার জন্য সভা তাঁদের আচরণের নিন্দা করছে।</div>
<div style="text-align: justify;">
(ঘ) সভা মর্নিং নিউজ এর বাঙলা বিরোধী প্রচারণার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছে এবং জনসাধারণের ইচ্ছার প্রতি অবক্ষা প্রদর্শনের জন্য পত্রিকাটিকে সাবধান করে দিচ্ছে।৮</div>
<div style="text-align: justify;">
ফরিদ আহমদ তখন একদিকে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র, তেমনি অন্য দিকে ঢাকা গভর্নমেন্ট কলেজ এর ইংরেজি অধ্যাপক ছিলেন। সভাশেষে অধ্যাপক আবুল কাসেম এর নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল সহকারে সেক্রেটারিয়েট অভিমূখে গমন করে মুখ্যমন্ত্রী নাজিম উদ্দিন, নুরুল আমিন, সৈয়দ আফজালের বাসভবন ও সেক্রেটারিয়েট ঘেরাও করা হয়।৯ এভাবে ধীরে ধীরে ভাষা আন্দোলন অঙ্কুরিত হতে থাকে। এরইমধ্যে ১৯৪৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে রাষ্ট্রভাষা সাব কমিটি নামে প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রভাষার দাবিতে গঠিত প্রথম এ সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক নিযুক্ত হন ঢাবির তরুন অধ্যাপক ড. নুরুল হক ভূঁইয়া (১৯২৩-১৯৯৮), সদস্য- অধ্যাপক আবুল কাসেম, অধ্যাপক আবদুল গফুর, গণতান্ত্রিক যুবলীগের কমরেড মো. তোয়াহা (১৯২২-১৯৮৭), ডাকসু ভিপি ফরিদ আহমদ (১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং পাকিস্তান শান্তি ও কল্যাণ পরিষদ এর সভাপতি) অলি আহাদ, ফজলুর রহমান ভুঁইয়া (এসএম হলের প্রচার সম্পাদক), শামসুল আলম (১৯২৬-১৯৯৪; এসএম হলের সমাজসেবা সম্পাদক), শওকত আলী (১৯২৮-১৯৭৫), সৈয়দ নজরুল ইসলাম (১৯২৬-১৯৭৫; এসএম হলের ভিপি ও তমদ্দুন মজলিসের সদস্য ও পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি), আজিজ আহমদ (১৯১৬-১৯৬৫), প্রকৌশলী আজিজুর রহমান, আখলাকুর রহমান, আবদুল মতিন খান চৌধুরী, আবুল খায়ের (নোয়াখালী থেকে তৎকালীন আইন পরিষদ সদস্য), আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী, প্রকৌশলী নুরুল হুদা (১৯২৪-২০০৭; ঢাকা ই্িঞ্জনিয়ারিং কলেজ প্রতিনিধি), মির্জা মাজহারুল ইসলাম (ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রতিনিধি), সিদ্দিক উল্লাহ (জিএস, এসএম হল), এ কে এম আহসান, শাহেদ আলী, সানাউল্লাহ নূরী, অধ্যাপক রেয়াত খান (একমাত্র উর্দুভাষী সদস্য), খালেক নেওয়াজ খান (১৯২৬-১৯৭১), আবদুল মান্নান, কামরুদ্দিন আহমদ (১৯১২-১৯৮২), আবদুর রহমান চৌধুরী, আনোয়ারা খাতুন (১৯১৯-১৯৮৮), নুরুল আলম (টাঙ্গাইল), লিলি খান, নইমুদ্দিন আহমদ (১৯২৪-১৯৬৯), রণেশ দাশগুপ্ত (১৯১২-১৯৯৭), সরদার ফজলুল করিম (১৯২৫-২০১৪) প্রমুখ।</div>
<div style="text-align: justify;">
ইতোমধ্যে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার বিষয় তালিকা হতে বাংলা ভাষাকে বাদ দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। এর প্রতিবাদ করায় এবং ভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার অভিযোগে পূর্ব পাকিস্তানের চীফ সেক্রেটারি আজিজ আহমদ ঢাকা সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজের (বর্তমানে ঢাকা কলেজ) লেকচারার ফরিদ আহমদকে ডেকে সতর্ক করে দিলে, তিনি সঙ্গে সঙ্গে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার বিষয় তালিকা হতে বাংলা ভাষাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ৬ জানুয়ারি পদত্যাগ করেন। আনন্দবাজার পত্রিকার ভাষায়―</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
‘ঢাকা, ৬ই জানুয়ারী। পাকিস্তান পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার বিষয় তালিকা হতে বাংলা ভাষাকে বাদ দেয়ার প্রতিবাদে এবং অন্যান্য কয়েকটি কারণে ঢাকার সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজের ইংরেজির লেকচারার মি: ফরিদ আহমদ পদত্যাগ করেছেন।’ – এ, পি (সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা, ৯ জানুয়ারী ১৯৪৮)</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
সরকারি চাকুরী থেকে ইস্তফাদানকারী ফরিদ আহমদ কক্সবাজারের সন্তান হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলা জুড়ে এ খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থানগত দিক দিয়ে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের মহকুমা কক্সবাজারের রামুতেও এ খরবটি পৌঁছে। অনেক আগে থেকেই তথা খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আবদুল মজিদ সিকদার, মাওলানা মজহেরুল হক চৌধুরী, রাস মোহন বড়–য়ার বদৌলতে রাজনৈতিক দিক থেকে রামুর পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কক্সবাজারে ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। ওই স্কুলের ১০ম শ্রেণির ছাত্র মো. বদরুজ্জামান (পরবর্তীতে ডা. এম বি জামান নামে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ), নবম শ্রেণির ছাত্র ওবায়দুল হক (যিনি ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কক্সবাজার মহকুমা থেকে মুসলিম লীগের প্রার্থী কবির আহমদ চৌধুরীর একজন ক্ষুদে কর্মী হিসেবে কাজ করেন এবং পরবর্তীতে ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন), রসিক চন্দ্র বড়–য়া, ৮ম শ্রেণির ছাত্র নুরুল ইসলাম হেলালী (পরবর্তীতে অধ্যাপক, বর্তমানে বাংলাদেশ লেখক শিবির-চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি) প্রমুখের নেতৃত্বে তৎক্ষনাৎ ক্লাস বর্জন করে মিছিল বের হয়ে রামু চৌমুহনীতে মিলিত হন। এ দিকে বড় ভাইদের মিছিলে অংশগ্রহণ দেখে রামু সেন্ট্রাল প্রাইমারী স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র আমিরুল কবির চৌধুরী, মোশতাক আহমদ (প্রফেসর), ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী (১৯৩৭-২০১০) প্রমুখ মিছিলে যোগ দেন। মিছিল পরবর্তী সময়ে চৌমুহনীতে এক জনসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় বক্তব্য রাখেন মো. বদরুজ্জামান (১৯৩০-২০০৮), ওবায়দুল হক (১৯৩২-২০১২), রসিক চন্দ্র বড়–য়া, জাকের আহমদ, মোশতাক আহমদ, আমিরুল কবির চৌধুরী প্রমুখ। ওই সমাবেশে আমিরুল কবির চৌধুরী জীবনের প্রথম বক্তৃতা করেছেন বলে তার ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার’ শীর্ষক লেখায় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু চতুর্থ শ্রেণির একজন ছাত্র হয়ে কীভাবে বক্তৃতা রাখতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। ওই সমাবেশ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আমরণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯৪৮ সালের ৬ জানুয়ারি মৌলভী ফরিদ আহমদ অধ্যাপক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে কক্সবাজারে চলে আসেন এবং কক্সবাজারের সচেতন ব্যক্তি, ছাত্রদের মাঝে রাজনৈতিক চেতনা সঞ্চার করেন। ওই সময় কক্সবাজার সরকারি বিদ্যালয় সংলগ্ন বেণী মাধব পাল এবং বর্তমান নিরিবিলি হোটেলস্থ এডভোকেট নলিশী রঞ্জন দত্তের বাসগৃহে (বর্তমান সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন) বৈঠকে রাজনৈতিক আলোচনার পাশাপাশি ভাষা আন্দোলন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন বলে ভাষাসংগ্রামীদের স্মৃতিকথায় উঠে আসে।</div>
<div style="text-align: justify;">
এ ধরনের বৈঠকে এডভোকেট প্রবোধ রঞ্জিত, এ্যাডভোকেট সুরেশ সেন, এম.এ. সালাম (প্রাক্তন পৌর চেয়ারম্যান ও মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষালম্বন করে শান্তি কমিটির দায়িত্ব নেন), মহিউদ্দিন মোক্তার (পরবর্তীতে কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক) প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা করতেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র সাত মাসের ব্যবধানের মধ্যে পাকিস্তানের সামন্তবাদী ও সা¤্রাজ্যবাদী স্বার্থ-গোষ্ঠীর আসল চরিত্র ফুঠে ওঠে। ১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণ-পরিষদের অধিবেশনে মুসলিম সরকার উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেয়। মুসলিম লীগের মুসলিম জনপ্রতিনিধির কেউ এর প্রতিবাদ না করলেও পূর্ব বাঙলার সদস্য কংগ্রেস নেতা ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত (১৮৮৬-১৯৭১; মুক্তিযুদ্ধে শহীদ) গণপরিষদের সেই সিদ্ধান্তের সংশোধনী প্রস্তাব পেশ করে বাংলা ভাষা ব্যবহারের পক্ষে প্রস্তাব উত্থাপন করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান (১৮৯৬-১৯৫১), ওই অধিবেশনের সহ-সভাপতি তমিজ উদ্দিন খান (১৮৮৯-১৯৬৩), পূর্ব বাঙলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন (১৮৯৪-১৯৬৪), পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ত্রাণ ও পুনবার্সন মন্ত্রী গজনফর আলীর তীব্র বিরোধিতার মুখে তা নাকচ হয়ে যায়। লিয়াকত আলী খান ধীরেন্দ্র নাথ দত্তের দেশপ্রেমের প্রতি কটাক্ষ করে বলেন, ‘মাননীয় সদস্য পাকিস্তানের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ভুল ধারণা, মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং সৃষ্টির অবাঞ্ছিত উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলার প্রশ্ন উত্থাপন করেন। খাজা নাজিম উদ্দিন তখন সদম্ভে ঘোষণা করেন―‘পূর্ববাংলার অধিকাংশ অধিবাসীরই এ মনোভাব যে একমাত্র উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করা যাইতে পারে।’</div>
<div style="text-align: justify;">
মোহাজির ও পুনর্বাসন মন্ত্রী গজনফর আলি খান প্রস্তাবটির বিরোধিতা ও উর্দু ভাষার সাফাই গেয়ে বলেন, ‘পাকিস্তানের একটিমাত্র সাধারণ ভাষা থাকবে এবং সে ভাষা হবে উর্দু। আমি আশা করি, অচিরেই সমস্ত পাকিস্তানি ভালোভাবে উর্দু শিক্ষা গ্রহণ করে উর্দুতে কথাবার্তা বলাবলিতে সক্ষম হবে।’ সেই সাথে তিনি উর্দু ভাষার সঙ্গে ইসলামী সংস্কৃতির যোগসূত্র আবিষ্কার করে বলেন, ‘উর্দু কোনো প্রদেশের ভাষা নয়, তা হচ্ছে মুসলিম সংস্কৃতির ভাষা। উর্দু ভাষাই হচ্ছে মুসলিম সংস্কৃতি। ’১০</div>
<div style="text-align: justify;">
পক্ষান্তরে গণপরিষদে কংগ্রেস দলের সম্পাদক রাজকুমার চক্রবর্তী সংশোধনী প্রস্তাবের সমর্থনে বলেন―</div>
<div style="text-align: justify;">
উর্দু পাকিস্তানের কোনো প্রদেশেরই কথ্য ভাষা নয়। তা হচ্ছে পশ্চিম পাকিস্তানের উপরতলার কিছু মানুষের ভাষা। … বাংলাকে আমরা দুই অংশের সাধারণ ভাষা করার জন্য কোনো চাপ দিচ্ছি না। আমরা শুধু চাই পরিষদের সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলারও স্বীকৃতি।’</div>
<div style="text-align: justify;">
কিন্তু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সেদিন তার দল কংগ্রেস এর হিন্দু সদস্য শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ভুপেন্দ্র কুমার দত্ত, প্রেমহরি বর্মা, প্রভাষ লাহিড়ী ছাড়া আর কোনো পূর্ব বঙ্গীয় প্রতিনিধির সমর্থন পায়নি। ফলে সংশোধনী প্রস্তাবটি সাম্প্রদায়িকতায় গিয়ে পৌঁছায়।</div>
<div style="text-align: justify;">
গণপরিষদের অন্যতম ব্যবহারিক ভাষা বাংলা করার বিপক্ষে পূর্ববঙ্গের মুসলিম লীগ দলীয় বাঙালি প্রতিনিধিদের ভোট দেওয়ার খবর এসে পৌঁছলে ঢাকা ছাত্র সমাজে এবং পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে ওই সময় তমদ্দুন মজলিস পাকিস্তানে একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটিতে অন্যান্য দলের লোক অন্তর্ভুক্ত করে শামসুল আলমকে আহ্বায়ক করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটিকে সম্প্রসারিত করে ২ মার্চ ১৯৪৮। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি ঢাকায় এক সভায় মিলিত হয়ে ১১ মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১১, ১২, ১৩ মার্চের প্রতিবাদ দিবস প্রদেশব্যাপী পালন করা হয়। এর প্রভাব কক্সবাজার জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।</div>
<div style="text-align: justify;">
১১ মার্চের প্রবল ছাত্র বিক্ষোভের পর খাজা নাজিম উদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সাথে ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
ভাষাচুক্তির ৮ দফা সংক্ষেপে নিম্নরূপ :</div>
<div style="text-align: justify;">
১। ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৮ থেকে বাংলা ভাষা প্রশ্নে যাঁদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁদেরক অবিলম্বে মুক্তি দেয়া হবে।</div>
<div style="text-align: justify;">
২। পুলিশী নির্যাতনের অভিযোগ সম্পর্কে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তদন্ত করে এক মাসের মধ্যে বিবৃতি দিবেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
৩। ১৯৪৮ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব বাংলা ব্যবস্থাপক সভায় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার এবং বাংলাকে পাকিস্তান গণপরিষদে ও কেন্দ্রীয় সরকারের পরীক্ষাদিতে স্থান দেওয়ার জন্য প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।</div>
<div style="text-align: justify;">
৪। ব্যবস্থাপক সভায় বাংলাকে প্রদেশের সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে।</div>
<div style="text-align: justify;">
৫। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কারো বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা।</div>
<div style="text-align: justify;">
৬। আন্দোলন সমর্থনকারী সংবাদপত্রগুলির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে।</div>
<div style="text-align: justify;">
৭। যেসব স্থানে ভাষা আন্দোলনের জন্য ১৪৪ ধারা জারী করা হয়েছে সেখান থেকে তা প্রত্যাহার করা হবে।</div>
<div style="text-align: justify;">
(সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দের দাবির মুখে খাজা নাজিমুদ্দিন নীচের দফাটি নিজ হাতে লিখে দেন)।</div>
<div style="text-align: justify;">
৮। সংগ্রাম পরিষদের সাথে আলোচনায় আমি নিঃসন্দেহে হয়েছি যে, এ আন্দোলন রাষ্ট্রের দুশমনদের দ্বারা অনুপ্রাণিত নয়।</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
যদিও জিন্নাহ তা পরে অস্বীকার করে ‘এটা জোর করে আদায় করা হয়েছে মর্মে ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ঘোষণা করে বলেন―</div>
<div style="text-align: justify;">
The State language therefore, must obviously be Urdu, a language that has been nurtured by a hundred million Muslims of this sub-continent, a language understood throughout the length and breadth of Pakistan and above all a language which, more than any other provincial language, embodies the best that is in Islamic culture and Muslim tradition and is nearest to the language used in other Islamic countries.”</div>
<div style="text-align: justify;">
পাকিস্তানের গভর্নর মুহম্মাদ আলী জিন্নাহ মনে করেছিলেন, কয়েক শতাব্দী আগে বাংলাদেশকে শাসন ও শোষণ করতে এসে সংস্কৃত ভাষাভিমানী ব্রাহ্মণ শাসকেরা যেমন ‘বাংলা রৌরব নরকের ভাষা’ বলে ঘোষণা করে অত্যাচার শুরু করেছিলেন বাংলাভাষাভাষী স্থানীয় লোকদের উপর―যার পরিণামে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির কিছু নিদর্শন নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল ও অন্যান্য দেশে; ঠিক তেমনি বিশ শতকের মধ্যপাদেও উর্দুভাষী শাসক জিন্নাহর ঘোষণায় পাকিস্তানের নেটিভ বাঙালি প্রজারা তাই করবে।১১ কিন্তু বাস্তবে তা হলো না। জিন্নাহ বক্তব্যের সময় আবদুল মতিন (ভাষা মতিন), পটিয়ার কৃতি সন্তান একেএম হাসান, নইমুদ্দিন, আতাউর রহমান খান ‘নো’, ‘নো’ বলে চিৎকারে তার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে জিন্নাহ বলেন, Its is my views পরক্ষণে তিনি কথা না বাড়িয়ে I hope Bengal will not fail me বলে বক্তব্য শেষ করেন। ওই দিন বিকেলে তমদ্দুন মজলিসের অধ্যাপক আবুল কাসেম, শামসুল হক, তাজউদ্দিন আহমদ, লিলি খান, আজিজ আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কমরেড মো. তোয়াহা, অলি আহাদ, নঈমুদ্দিন ও এম শামসুল আলমের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে দেখা করেন। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলা এ বৈঠকে জিন্নাহ প্রতিনিধি দলকে পাকিস্তানের সংহতির স্বার্থে এক রাষ্ট্রভাষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ নিয়ে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জিন্নাহর তর্ক হয়। তর্কের এক পর্যায়ে মাগরিবের আজান দিলে নামাজের বিরতিতে শামসুল হক জিন্নাহকে নামায পড়ার আহ্বান জানালে পরিবেশ জটিল হয়ে পড়ে (জিন্নাহ ইসলামকে ভালবেসে পাকিস্তান আন্দোলন, পাকিস্তানের জনক; উর্দুকে ভালবাসলেও বিলেত ফেরত ব্যক্তি হিসেবে নামাজ পড়েননি তেমন, পাশাপাশি নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তাও জানতেন না, ব্যক্তিগত স্বার্থে নেতা হওয়ার জন্য মুসলিম লীগের সাথে জড়িত হয়েছিলেন। যার কারণে প্রতিনিধিদলের নেতা শামসুল হক নামাজ পড়ার কথা বললে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়)।১২ এতে বিতর্ক সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। ভাষা প্রশ্নে শেষ না হলেও প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে জিন্নাহকে স্মারকলিপি প্রদান করে।</div>
<div style="text-align: justify;">
জিন্নাহ ঢাকা সফর শেষে চট্টগ্রাম সফরে আসেন। ১৯৪৮ সালের ২৫-২৭ মার্চ চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনে অবস্থানকালে উর্দু ভাষার পক্ষে এবং আরবী হরফে বাংলা লেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। মুসলিম লীগ নেতা এ কে খান ও আহমদ সগীর চৌধুরী এ সভায় বক্তব্য রাখলেও জিন্নাহ সভায় উর্দুর পক্ষে বলায় শ্রোতাদের মধ্যে থেকে জোরালো কোনো প্রতিবাদ হয়নি। কিন্তু এ খবরটি বাইরে প্রচার হলে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ ক্ষোভে ফেটে উঠে। এর কয়েকদিন পর চট্টগ্রামে সাহিত্যিক মাহবুব আলম চৌধুরী (১৯২৭-২০০৭), গোপাল বিশ্বাস, ফরমান উল্লাহ খান ও শহিদ সাবের (পরবর্তীতে একাত্তরের শহিদ বুদ্ধিজীবী) প্রমুখ মিলে ‘সংস্কৃতি বৈঠক’, ‘তমদ্দুন মজলিস’, ‘ছাত্র ফেডারেশন’ প্রভৃতি সমমনা দল নিয়ে জেএমসেন হলে জিন্নাহর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এক সভার ডাক দেয়। প্রতিবাদ সভার প্রচারের জন্য ঘোড়ারগাড়ি নিয়ে মাইকে প্রচারের সময় মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশের ভাড়াটে গুন্ডারা কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবাধীন মাহবুব আলম চৌধুরী, ছাত্র ফেডারেশন নেতা শহিদ সাবের (একাত্তরের শহিদ বুদ্ধিজীবী) ও সাহিত্যিক গোপাল বিশ্বাসের উপর হামলা করে। হামলাকারীরা সেদিন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সভাপতিত্বে নির্ধারিত সভাও প- করে।১৩</div>
<div style="text-align: justify;">
এ প্রেক্ষাপটে একই সালের ১৫ মার্চের চুক্তি ভঙ্গ করে তার ২০ দিন পর অর্থাৎ ৬ এপ্রিল পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক সভায় ভাষাচুক্তি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ব্যবস্থাপক সভার বিরোধীদলীয় নেতা বসন্ত কুমার দাস সে চুক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দিলে নাজিমুদ্দীন সেকথা অগ্রাহ করে বলেন―‘সুপারিশ করতে হলে তা গভর্নরের মাধ্যমেই করতে হবে’। তিনি চুক্তির কথা উল্লেখ করে আরো বলেন―</div>
<div style="text-align: justify;">
‘ভাষার এই প্রশ্নটি মি: দত্ত এবং তার পার্টির কয়েকজন এখানে উত্থাপন করেছেন। তাঁরা ১৫ মার্চের সেই তারিখটির এবং আমি যে চুক্তি করেছিলাম, তা রেখেছেন। কিন্তু ২১ মার্চ অথবা ২৪ মার্চ যা ঘটেছিল, তার সবকিছু ভুলে গেছেন। তারা পাকিস্তানের প্রতি অনুগত, তারা পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতিও অনুগত; কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রপ্রধান যা বলেন, তার কিছুই তাঁদের মনে থাকে না।’’</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
তিনি জিন্নাহর ঘোষণার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন―</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">‘পাকিস্তানের মঙ্গল কীসের মধ্যে নিহিত, সেটা অন্য যে কোনো ব্যক্তির নিকট থেকে কায়েদে আজমই যে বেশি বোঝেন, এ কথাও আমি তাদের বিবেচনা করতে বলি। যে ব্যক্তি পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা ও গঠন করেছেন, তিনি বলেছেন যে রাষ্ট্রের স্বার্থেই তা করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও এই ভাষার প্রশ্নটি যে এখানে আনা হয়েছে, সেটা আমার পক্ষে একটা দুর্ভাগ্যের বিষয়।’</em></div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; text-align: justify; vertical-align: baseline;">
পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক সভার অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন বাংলা ভাষাকে পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম করার জন্য প্রথমেই একটি প্রস্তাব পেশ করেন। সম্ভবত সেটিই ছিল সরকারি প্রস্তাব। প্রস্তাবে বলা হয়:</div>
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
ক. পূর্ববাংলা প্রদেশে ইংরেজির স্থলে বাংলাকে সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণ করিতে হইবে; এবং</div>
<div style="text-align: justify;">
খ. পূর্ববাংলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার মাধ্যম হইবে যথাসম্ভব বাংলা অথবা প্রতিষ্ঠানগুলির অধিকাংশ স্কলারদের মাতৃভাষা। আপাতদৃষ্টিতে প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য মনে হলেও বিরোধী দলীয় কংগ্রেস নেতা বসন্তকুমার দাস প্রস্তাবটির ওপর আলোচনার জন্য সময় প্রার্থনা করেন। একদিন মুলতবির পর ৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় সভার কাজ পুনরায় শুরু হলে প্রথমেই বিরোধী দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সরকারি প্রস্তাবের ওপর নি¤œলিখিত সংশোধনী পেশ করেন―</div>
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">১. এই পরিষদের অভিমত হল এই যে―</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">ক) বাংলা পূর্ববাংলা প্রদেশের সরকারি ভাষারূপে গৃহীত হইবে;</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">খ) পূর্ববাংলা প্রদেশে ইংরেজির স্থলে বাংলা প্রবর্তনের জন্য আশু ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে;</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">গ) পূর্ববাংলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার মাধ্যম হইবে বাংলা।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">২। এই পরিষদ আরো মনে করেন যে, বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত;</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">৩। এই পরিষদ পাকিস্তান সরকারের নিকট সুপারিশন করে যে―</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">ক) সর্বপ্রকার নোট ও টাকা পয়সা, টেলিগ্রাফ, পোস্টকার্ড, ফর্ম, বই ইত্যাদি ডাক সংক্রান্ত যাবতীয় জিনিস, রেলওয়ে টিকিট এবং পাকিস্তান সরকারের অন্য সর্বপ্রকার সরকারি ও আধা-সরকারি ফার্মে অবিলম্বে বাংলা প্রচলন করা হউক;</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">খ) কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে এবং সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে যোগদানের জন্য সকল প্রকার প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যম এবং অন্যতম বিষয় হিসেবে বাংলা প্রবর্তন করিতে হইবে এবং</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">৪। এই পরিষদ সংবিধান সভার সকল সদস্যকে অনুরোধ জানাইতেছে এবং পূর্ববাংলার প্রতিনিধিদের নিকট বিশেষভাবে আবেদন করিতেছে, যাহাতে তাহারা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করিবার জন্য সর্বপ্রকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করেন।</em></div>
</em><div style="text-align: justify;">
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বক্তৃতা দেন বাংলা ব্যবস্থাপক সভার সদস্য আবদুল বারী চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী আবদুল হামিদ, অর্থ দফতরের মন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী, আবদুস সবুর খান, শামসুদ্দিন আহমদ খোন্দকার, প্রধানমন্ত্রী নাজিম উদ্দিন প্রমুখ। কিন্তু ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সেদিন তার দল কংগ্রেস এর হিন্দু সদস্য বসন্ত কুমার দাশ, বিনোদচন্দ্র চক্রবর্তী, সতীন্দ্রনাথ ভদ্র, অমূল্যচন্দ্র অধিকারী, সুরেশচন্দ্র দাসগুপ্ত, গোবিন্দলাল ব্যানার্জি, রাজেন্দ্রনাথ সরকার, মনোরঞ্জন ধর, পূর্ণেন্দু কিশোর সেনগুপ্ত, শ্রীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ভুপেন্দ্র কুমার দত্ত, প্রেমহরি বর্মা, প্রভাষ লাহিড়ী ছাড়া আর কোনো পূর্ব বঙ্গীয় প্রতিনিধির সমর্থন পায়নি। ফলে সংশোধনী প্রস্তাবটি সাম্প্রদায়িকতায় গিয়ে পৌঁছায়। প্রস্তাবটি নাকচ হয়ে যাওয়ার পর পরিষদের অনুমতি নিয়ে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত প্রথম প্রস্তাবের চতুর্থ অংশ বাদ দিয়ে তিনি তার দ্বিতীয় প্রস্তাব পেশ করেন। দ্বিতীয় প্রস্তাবটিও বাতিল হয়ে গেলে তৃতীয় ও শেষ প্রস্তাব পেশ করেন। প্রথম প্রস্তাবের প্রথম অংশটি সামান্য পরিবর্তন করে তিনি শেষ প্রস্তাবটি পেশ করেন―</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
১। এই পরিষদের অভিমত যে,</div>
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">(ক) বাংলা পূর্ববাংলা প্রদেশের সরকারি ভাষারূপে গৃহীত হইবে।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">(খ) দুই বৎসরের মধ্যে পূর্ব বাংলা প্রদেশে ইংরেজির স্থলে বাংলা প্রবর্তনের জন্য আশু ব্যবস্থা অবলম্বন করিতে হইবে।</em></div>
</em><em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;"><div style="text-align: justify;">
<em style="border: 0px; box-sizing: border-box; font-family: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">(গ) পূর্ববাংলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষার মাধ্যম হইবে বাংলা।</em></div>
</em><div style="text-align: justify;">
দীর্ঘ বক্তৃতা শেষে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে পরিষদের কাছে আবেদন করেন বলেন―‘৭ কোটি বাঙালির মধ্যে ৪ কোটির উপর পাকিস্তানী রয়েছে। তাদের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হওয়া যুক্তিসঙ্গত, এইজন্য আমি এই দাবি উত্থাপন করেছিলাম। আমি আশা করি, মন্ত্রীম-লী এবং জনগণের প্রতিনিধি যারা আছেন তারা জনগণের এই দাবি সমর্থন করিবেন এবং নিজেরাই এই প্রস্তাব করিবেন। শুধু বাংলায় বক্তৃতা করলে চলিবে না। বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করিতে হইবে।’</div>
<div style="text-align: justify;">
পূর্ববাংলা ব্যবস্থাপক সভার বিরোধী দলীয় নেতা বসন্ত কুমার দাস আরেকটি সংশোধনী প্রস্তাব পেশ করেন। সেটি হলো:</div>
<div style="text-align: justify;">
(ক) পূর্ববাংলা প্রদেশের সকল অফিস এবং আদালতে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা সরকারি ভাষা হিসেবে গৃহীত হইবে এবং</div>
<div style="text-align: justify;">
(খ) পূর্ববাংলায় বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে বাঙালিদের শিক্ষার মাধ্যম হইবে বাংলা। ১৪</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯৪৮ সালের ৮ এপ্রিল পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদ এর মূলতবি অধিবেশনে বাংলাকে (পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা না করে) কেবলমাত্র পূর্ব বাঙলার সরকারি ভাষারূপে ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রীর ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত ৮ দফা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে আরবি হরফে বাংলা লেখার অদ্ভুত সুপারিশ করে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শিক্ষাবোর্ড। যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে সারা বাঙলায় ছড়িয়ে পড়ে আরবী হরফের বাংলার প্রতিরোধ আন্দোলন। পালিত হয় ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচী।</div>
<div style="text-align: justify;">
সারাদেশের প্রদেশের ন্যায় রামুতেও পালিত হয় ছাত্র ধর্মঘট। ১১ এপ্রিল মো. বদরুজ্জামানের (১৯৩০-২০০৮) নেতৃত্বে রামু খিজারী বিদ্যালয় থেকে মিছিল সহকারে বের হয়ে রামু চৌমুহনীতে জনসভায় মিলিত হয়। ওই সভায় ওবায়দুল হক (প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, ফতেখাঁরকুল ইউনিয়ন কাউন্সিল), আফসার কামাল চৌধুরী, নুরুল ইসলাম হেলালী, রসিক চন্দ্র বড়–য়া, জাকের আহমদ (গর্জনিয়া), আমিরুল কবির চৌধুরী, মোশতাক আহমদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।১৫ ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজারের অন্য কোথাও সক্রিয় অবদান আছে কিনা তা জানা যায়নি।</div>
<div style="text-align: justify;">
<img alt="" class="" height="300" src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195454/xlarge/?token_id=768d08616ed6eb1cfa5f528e1131dbb8" style="box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%;" width="243" /><img alt="" class="" height="296" src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195455/xlarge/?token_id=768d08616ed6eb1cfa5f528e1131dbb8" style="box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%;" width="230" /> <img alt="" class="" height="303" src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195445/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%;" width="216" /><a href="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/devo-bubu-sir-1.jpg" style="border-bottom-color: rgb(197, 197, 197); border-bottom-style: solid; border-width: 0px 0px 1px; box-sizing: border-box; color: #7eb940; font-family: inherit; font-style: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; text-decoration: none; vertical-align: baseline;"><img alt="Devo bubu Sir 1" class="alignnone wp-image-25" height="336" src="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/devo-bubu-sir-1.jpg?w=192&h=336" style="border: 0px; box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%; vertical-align: bottom;" width="192" /></a><img alt="" class="" height="294" src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195447/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%;" width="234" /><img alt="" class=" alignnone" height="292" src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195450/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%; vertical-align: bottom;" width="207" /></div>
<div style="text-align: justify;">
<img alt="" src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195444/xlarge/?token_id=4c39094c812a127c9744edda98b74328]%3Cbr/%3E/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%;" /><img alt="" class="" height="250" src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195449/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%;" width="234" /><img alt="" class="" height="253" src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195448/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%;" width="181" /><img alt="" class="" height="282" src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195453/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%;" width="234" /> <a href="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/mn-nur-ahamed.jpg" style="border-bottom-color: rgb(197, 197, 197); border-bottom-style: solid; border-width: 0px 0px 1px; box-sizing: border-box; color: #7eb940; font-family: inherit; font-style: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; text-decoration: none; vertical-align: baseline;"><img alt="MN Nur Ahamed" class="alignnone wp-image-19" height="316" src="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/mn-nur-ahamed.jpg?w=259&h=316" style="border: 0px; box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%; vertical-align: bottom;" width="259" /></a><a href="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/jalal-ahmed-chowdhury-copy.jpg" style="border-bottom-color: rgb(197, 197, 197); border-bottom-style: solid; border-width: 0px 0px 1px; box-sizing: border-box; color: #7eb940; font-family: inherit; font-style: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; text-decoration: none; vertical-align: baseline;"><img alt="Jalal Ahmad chy" class=" wp-image-20" height="315" src="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/jalal-ahmed-chowdhury-copy.jpg?w=246&h=315" style="border: 0px; box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%;" width="246" /></a><a href="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/editor-dc.jpg" style="border-bottom-color: rgb(197, 197, 197); border-bottom-style: solid; border-width: 0px 0px 1px; box-sizing: border-box; color: #7eb940; font-family: inherit; font-style: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; text-decoration: none; vertical-align: baseline;"><img alt="Editor-dc" class="alignnone size-medium wp-image-22" height="300" src="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/editor-dc.jpg?w=236&h=300" style="border: 0px; box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%; vertical-align: bottom;" width="236" /></a><a href="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/fazlul-karim-24.jpg" style="border-bottom-color: rgb(197, 197, 197); border-bottom-style: solid; border-width: 0px 0px 1px; box-sizing: border-box; color: #7eb940; font-family: inherit; font-style: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; text-decoration: none; vertical-align: baseline;"><img alt="FAZLUL KARIM-24" class="alignnone size-full wp-image-21" src="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/fazlul-karim-24.jpg?w=648" style="border: 0px; box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%; vertical-align: bottom;" /></a><a href="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/muktijudda_baddsha-miphoto.jpg" style="border-bottom-color: rgb(197, 197, 197); border-bottom-style: solid; border-width: 0px 0px 1px; box-sizing: border-box; color: #7eb940; font-family: inherit; font-style: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; text-decoration: none; vertical-align: baseline;"><img alt="muktijudda_baddsha miphoto" class="alignnone wp-image-23" height="289" src="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/muktijudda_baddsha-miphoto.jpg?w=216&h=289" style="border: 0px; box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%; vertical-align: bottom;" width="216" /></a><a href="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/shamsul-huda-siddiqi-25.jpg" style="border-bottom-color: rgb(197, 197, 197); border-bottom-style: solid; border-width: 0px 0px 1px; box-sizing: border-box; color: #7eb940; font-family: inherit; font-style: inherit; font-weight: inherit; margin: 0px; outline: 0px; padding: 0px; text-decoration: none; vertical-align: baseline;"><img alt="SHAMSUL HUDA SIDDIQI-25" class="alignnone size-medium wp-image-24" height="300" src="https://kalamazadcox.files.wordpress.com/2015/04/shamsul-huda-siddiqi-25.jpg?w=245&h=300" style="border: 0px; box-sizing: border-box; height: auto; max-width: 100%; vertical-align: bottom;" width="245" /></a></div>
<div style="text-align: justify;">
এরপরে ভাষা আন্দোলন প্রসঙ্গটির কথা তেমন ভাবে না উঠলেও ১৯৪৯ সালের দিকে শুরু হয়ে চট্টগ্রামে সামান্য আন্দোলন চলে ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। ১৯৪৯ সালের ৯ মার্চ গঠিত পূর্ব বঙ্গভাষা কমিটি ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব বাঙলার বিদ্যালয়সমূহে উর্দুকে সরকারি ভাষা করায় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদ সভা, ১৯৪৯ সালে চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান সফরে আসলে উর্দুর কথা বলায় তাকে অপমানসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে।</div>
<div style="text-align: justify;">
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মূল আঘাতটি আসে ১৯৫২ সালে। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ স্বাক্ষরিত ৮ দফা চুক্তি ভঙ্গ করে ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে মুসলিম লীগের সম্মেলনে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পুনরায় ঘোষণা করেন―‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে একমাত্র উর্দু’ এবং ‘উর্দু হরফে বাংলা লিখনের প্রচেষ্টা সাফল্যমন্ডিত হইতেছে’। তার এ বক্তব্যে পূর্ব পাকিস্তানে জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালার মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর প্রতিবাদে ২৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের এক প্রতিবাদ সভা হয়। ৩০ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ প্রতীকী ধর্মঘট পালন করে এবং বিভিন্ন শিক্ষায়তনের ছাত্রদের সহযোগে এক বিরাট শোভাযাত্রা বের করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। ওই দিন নাজিমুদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদে পূর্ব পাক মুসলিম ছাত্রলীগের উদ্যোগে বার লাইব্রেরি হলে আহুত সর্বদলীয় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ, খেলাফত রব্বানী পার্টি, যুব সংঘ, তমদ্দুন মজলিস, গণতান্ত্রিক যুবলীগ, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ, পুর্ব পাকিস্তান জমিয়তে আরাবিয়া, মোহাজের সমিতিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্র প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ জন প্রতিনিধি সমন্বয়ে কাজী গোলাম মাহবুবকে আহ্বায়ক করে একটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সর্বদলীয় সভায় বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অফিসাদির ভাষা এবং কেন্দ্রের অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণের জন্য খাজা নাজিমুদ্দীন পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী থাকতে ১৫ মার্চ ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তা ভঙ্গ করায় নিন্দা প্রকাশ করা হয় এবং অনতিবিলম্ভে ভাষা সম্পর্কিত তার উক্তির প্রত্যাহারপূর্বক বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়ার দাবি জানানো হয় এবং উর্দু হরফে বাংলা লেখার চক্রান্তের বিরুদ্ধেও এক প্রস্তাবে সরকারকে হুশিয়ারী করে দেয়া হয়।১৬</div>
<div style="text-align: justify;">
সংগ্রাম পরিষদ ৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার ঢাকা শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ধর্মঘট ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ, ১১ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পতাকা দিবস পালন করে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি সারা পূর্ব বাংলায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ও হরতালের কর্মসূচী ঘোষণা করে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এ লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার মধ্যে লাগাতার প্রচারণা শুরু করে। এই দিকে পূর্ব পাকিস্তান সরকার এতে বিচলিত হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেলে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এস.এইচ.কোরাইশি এক মাসের জন্য ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করে সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করে। নির্দেশে বলা হয়―</div>
<div style="text-align: justify;">
‘যেহেতু এটা দেখা যাচ্ছে যে, জনগণের একটি অংশ ঢাকা শহরে জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল সংঘটিত করার চেষ্টা করছে এবং যেহেতু, আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি যে সেই ধরনের শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল জনসাধারণের জীবনে শান্তি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে পারে, তাই আমি, এস.এইচ. কোরেশী সি.এস.পি, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সি. আর.পি.সি-র ১৪৪ ধারা অনুযায়ী কোতোয়ালী, সূত্রাপুর, লালবাগ, রমনা ও তেজগাঁও পুলিশ স্টেশন নিয়ে গঠিত ঢাকা শহরের সমগ্র এলাকায় আমার লিখিত পূর্ব অনুমতি ব্যতিত ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ থেকে ত্রিশ দিনের জন্য সেই ধরনের সকল জনসভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিল নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি।’ ১৭</div>
<div style="text-align: justify;">
পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ১৪৪ ধারা জারির প্রেক্ষিতে ছাত্ররা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গ করে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সকাল ১১ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে সমবেত হয় এবং তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মিছিল নিয়ে ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত করে তোলে। পথিমধ্যে পাহারারত পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ উপেক্ষা করে প্রাদেশিক পরিষদ ভবনকে ঘেরাও করার উদ্দেশ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল প্রাঙ্গনে পৌঁছলে বিক্ষোভরত ছাত্রদের উপর পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ ক্লাসের ছাত্র মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন (্অবশ্য সালাহ উদ্দিন নামে কোনো ছাত্র শহীদ হয়নি বলে ভাষা ইতিহাস গবেষক ও ভাষা আন্দোলনকারীরা তাদের স্ব-স্ব-গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক লিখিত ‘ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য’ নামক গ্রন্থে যুক্তির মাধ্যমে মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্র কলেজের ছাত্র এবং বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের পুত্র রফিকুদ্দীন (১৯৩২-১৯৫২) কে সালাহ উদ্দিন নামে উল্লেখ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন এবং ওই সময়ের বাংলা একাডেমির গ্রন্থাগারিক মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক এর জবানী উল্লেখ করার মাধ্যমে সিদ্ধান্তে পৌঁছান। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আজাদ পত্রিকার কল্যাণে সালাহ উদ্দীনের শাহাদাত বরণের খবর প্রকাশিত হবার পর জনাব সালাহ উদ্দিন সশরীরে তার কর্মস্থলে এসে সবার সাথে দেখা করেছিলেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে ১৮) ঘটনাস্থলে নিহত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল জাব্বার (৩০), আবুল বরকত (২৫), নবাবপুর রোডের রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমানের ছেলে তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র অহিউল্লাহ, সলিমুল্লাহ মোছলেম হলের ছাত্র আনোয়ারুল এছলাম (২৪), জগন্নাথ কলেজের ছাত্র এ আর ফৈয়াজ (১৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিরাজুদ্দীন খান (২২), সরকারি শুল্ক বিভাগের পিয়ন আবদুস সালাম (২৭), এলাহী বখশ (৪০), মনসুর আলী (১৬), বছিরুদীন আহমদ (১৬), তাজুল এছলাম (২২), মাছুদুর রহমান (১৬), আবদুস সালাম (২২), আখতারুজ্জামান (১৯), এ রেজ্জাক (১৭), মোজাম্মেল হক (২৩), সুলতান আহমদ (১৮), এ রশিদ (১৪), মোহাম্মদসহ বহু সংখ্যক ছাত্র ও পথচারী আহত হয়।</div>
<div style="text-align: justify;">
পরে ওই দিন রাতে আবদুল জাব্বার (৩০), আবুল বরকত (২৫), নবাবপুর রোডের রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমানের ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র অহিউল্লাহ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান এবং দৈনিক আজাদ’র ৮ এপ্রিল ১৯৫২- সংখ্যার সংবাদ অনুযায়ী, ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে পুলিশের গুলিতে আহত সরকারি শুল্ক বিভাগের পিয়ন আবদুস সালাম (২৭) প্রায় দেড় মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ২২ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা হাইকোর্টের কর্মচারী সফিউর রহমান নবাবপুর রোড হয়ে কাজে যাওয়ার পথে পুলিশের গুলিতে আহত হয়। ওই দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. এ্যালিনসন এর তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টায় মারা যান।</div>
<div style="text-align: justify;">
এ খবর সারা দেশে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। ২২ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ অধিবেশন চলাকালে পরিষদ হতে আজাদ সম্পাদক ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য আবুল কালাম শামসুদ্দিন, ২৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদের সদস্য মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ (১৯০০-১৯৮৬) লীগ পার্লামেন্টারি পার্টি হতে ও ঢাকায় ১৪৪ ধারার প্রবর্তন এবং ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদের সদস্য আহমদ হোসেন, খয়রাত হোসেন মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টি এবং প্রাদেশিক লীগ ওয়ার্কিং কমিটির পদ থেকে এস্তেফা দেন। এ সময় পূর্ববাঙলা ব্যবস্থা পরিষদের মুসলিম ও কংগ্রেস দলীয় ১২ জন সদস্য ওয়াকআউট করেন। তার মধ্যে খয়রাত হোসেন (১৯১১-১৯৭২), রাজশাহীর মনির উদ্দিন আখন্দ, আলী আহমদ খান, আলী আহমদ চৌধুরী, মোবারক আলী, বসন্ত কুমার দাশ, শামসুদ্দিন আহমদ, আহমেদ কবীর চৌধুরী, মনোরঞ্জন ধর, আহমেদ হোসেন, আনোয়ারা খাতুন, কক্সবাজারের এমএলএ কবির আহমদ চৌধুরী অন্যতম।১৯</div>
<div style="text-align: justify;">
২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকায় রক্তপাতের খবর পেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী জ্বরে আক্রান্ত সাহিত্যিক ও সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে ছাত্র ফেডারেশন কর্মী ননী ধর এর সহায়তায় ‘কাঁদতে আসেনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ কবিতা রচনা করেন। এ কবিতাটি বাংলার ভাষা আন্দোলনের উপর প্রথম রচিত কবিতা। কবিতাটি কোহিনুর ইলেকট্রিক প্রেস থেকে ছেপে বের করা হয় বিলি করতে। কিন্তু সরকার কবিতটি নিষিদ্ধ ও বাজেয়াপ্ত করায় গোপনে রাতারাতি ছাপিয়ে প্রেস ম্যানেজার কম্পোজিটার ও মেশিনম্যানরা জনগণের ক্ষোভের বাস্তবরূপ দান করে। কবিতাটি প্রকাশ করার দায়ে কোহিনুর ইলেকট্রিক প্রেস বন্ধ করার আদেশ এবং ২৩ ফেব্রুয়ারি দবির উদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করে পাকিস্তান সরকার। বিচারে তার ৬ বছর সশ্রম কারাদ-ের পর মুক্তি পান।</div>
<div style="text-align: justify;">
রাষ্ট্রভাষা বাঙলার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি এবং ছাত্র নিহত ঘটনার খবরটি প্রথম কক্সবাজারে আসে টেলিফোনের মাধ্যমে কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক মৌলভী গফুরুজ্জামান চৌধুরীর বাসায়। ওই টেলিফোন সেটের একটি সংযোগ ছিল কক্সবাজার সিএ-বির প্রকৌশলী এস আর খানের বাসায়। সেই সুবাদে মহকুমা প্রশাসকের সাথে এ সম্পর্কিত বিষয়ে এস আর খান আলাপ করার সময় তার ভাগিনা কক্সবাজার ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র খালেদ মোশাররফ (পরবর্তীতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, কে ফোর্সের অধিনায়ক এবং স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের সেনা প্রধান) শুনে ফেলেন। তিনি যথারিতি ২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার (ওই সময় সাপ্তাহিক ছুটি ছিল রবিবার) স্কুলে গিয়ে তার সহপাঠী ও স্কুলের ছাত্রদের জানালে ছাত্রদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সকাল ১০টার দিকে খালেদ মোশাররফ ও একই ক্লাসের ছাত্র আবদুল মাবুদ এখলাছী ও নুরুল হুদা চৌধুরী (স্বাধীনতার সময় মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং ক্যাপ্টেন ফরহাদ হত্যার নেতৃত্ব দেন) এর নেতৃত্বে ছাত্ররা কাস বর্জন করে নিহত ও রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। ১০ম শ্রেণির ছাত্র আবুল মাবুদ এখলাছী নিজের হাতে স্কুলের ঘণ্টা বাজিয়ে বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ঢাকায় মিছিলরত অবস্থায় গুলি করে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে মিছিলে অংশ গ্রহণ করার আহ্বান জানান। এ সময় ছাত্ররা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে মিছিল সহকারে কক্সবাজার শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাহারছড়ায় গিয়ে জনসভা করে। একটি ভাগের নেতৃত্ব দেন খালেদ মোশাররফ। খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে মিছিলে অংশ নেন নুরুল হুদা চৌধুরী (বদরমোকাম), আকতারুজ্জামান চৌধুরী (তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক মৌলভী গফুরুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে), আবদুল মাবুদ এখলাছী (চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও কক্সবাজার মহকুমা আদালতের আইনজীবী মৌলভী এখলাছুর রহমানের ছেলে), ৯ম শ্রেণির ছাত্র নুর আহমদ (এডভোকেট, সাবেক এমএনএ), এস এম রফিক উল্লাহ (বড় মহেশখালী), শামসুল হুদা (পেতাসওদাগর পাড়া), ওসমান গণি (মহেশখালী), জালাল আহমদ (নতুন বাহারছড়া), আবদুর রহমান (টেকপাড়া), টেকপাড়ার কামাল উদ্দিন, প্রভাস রক্ষিত, নিখিলেশ্বর চক্রবর্তী (অগ্নিযুগের বিপ্লবী জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তীর ছেলে এবং চট্টগ্রাম ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্বকারী শহীদ শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর ভাইপো, বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী), নাসির উদ্দিন (তৎকালিন কক্সবাজার রেঞ্জ অফিসারের ছেলে) প্রমুখ। কক্সবাজার হাই স্কুলের ছাত্র সালামত উল্লাহ (১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ায় ঘৃণিত হন এবং কক্সবাজার মহকুমা শান্তি কমিটির অফিস সেক্রেটারী ছিলেন) ও আমিরুল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৫০-২০০ জন ছাত্রের অপর দলটি দক্ষিণ বাহারছড়া হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ এবং পথে সভার আয়োজন করে। এ মিছিল ও সমাবেশে আবদুল কাদের (পরবর্তীতে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক), মোহাম্মদ মুসলিম, আবুল কাসেম (পরবর্তীতে লাইন্সম্যান), জয়নাল আবেদিন (বাহারছড়া), সগীর আহমদ (নুনিয়ারছড়া), মোজাম্মেল হক (খুরুস্্কুল), ওয়াহিদুল আলম (টেকপাড়া), মোস্তাক আহমদ (টেকপাড়া), গুরা মিয়া (তহসিলদার, চৌফলদন্ডী), গোলাম আহমদ (বাহারছড়া), আলতাজ আহমদ (কস্তুরাঘাট)সহ আরো অনেকে অংশ নেন।২০</div>
<div style="text-align: justify;">
খালেদ মোশাররফ এর নেতৃত্বে ২০-৩০ জন ছাত্রের এ দলটি একটি মিছিল নিয়ে বাহারছড়ায় গিয়ে সালামত উল্লাহ ও আমিরুল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সভায় মিলিত হন। উক্ত সভাস্থল থেকে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে তারা সি.এ্যান্ড. বি.এর জনৈক ঠিকাদারকে একটি ট্রাক যোগাড় করে দেয়ার অনুরোধ করলে তিনি একটি ট্রাক যোগাড় করে দেন। এই ট্রাক নিয়ে ছাত্ররা ‘রক্তের বদলা রক্ত চাই’, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘ছাত্র হত্যার বিচার চাই’ প্রভৃতি সেøাগান সহকারে কক্সবাজার শহর প্রদক্ষিণ করার পর আবদুল মাবুদ এখলাছী, আখতারুজ্জামান চৌধুরী, নিখিলেশ্বর চক্রবর্তী, আমিরুল কবির চৌধুরী, জালাল আহমদসহ ১৫/১৬ জনের একটি দল ওই ট্রাকে করে রামু হয়ে, ঈদগাঁও হয়ে চকরিয়া পর্যন্ত ট্রাক মিছিল করে। ট্রাক মিছিলেও চলে সেøাগান। ট্রাকটি চকরিয়া গিয়ে মৌলভীর কুমের কাছে গিয়ে আবার কক্সবাজার ফিরে আসে। মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গনের ফলে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে আর উত্তর দিকে তথা চকরিয়া হাই স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ট্রাক মিছিল করে ফিরে এসে তারা শহরের লালদিঘির পাড়ের আহমদ সওদাগরের হোটেলে বসে ভাত খেয়ে যার যার বাড়ি চলে যান। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক মৌলভী গফুরুজ্জামান চৌধুরী রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে থাকায় ওই সকল মিছিল-সমাবেশে পুলিশ তথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার বাধা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ওই সময়ের ভাষা সৈনিকবৃন্দ। ওই দিন (২২ ফেব্রুয়ারি) বর্তমানে যেখানে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত সেখানে একটি অনির্ধারিত সভা অনুষ্ঠিত হয়।</div>
<div style="text-align: justify;">
পরদিন ২৩ ফেব্রুয়ারি খুনী নুরুল আমিনের বিচার চাই, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’সহ বিভিন্ন সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত করে কক্সবাজার শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ পূর্বক কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরিতে এক জনসভায় মিলিত হন ছাত্ররা। খালেদ মোশাররফের আত্মীয় আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ১০ম শ্রেণির ছাত্র খালেদ মোশাররফ, আবদুল মাবুদ এখলাছি, আকতারুজ্জামান চৌধুরী, কামাল উদ্দিন, ৮ম শ্রেণির ছাত্র আমিরুল কবির চৌধুরী, নুরুল হুদা চৌধুরী, আবদুল কাদের, সালামত উল্লাহ (এডভোকেট), আবদুর রহমান (টেকপাড়া), নিখিলেশ্বর চক্রবর্তী, শামসুল হুদা (ঝিলংজা), ওসমান গণি (মহেশখালী), আবুল কাসেম, নুনিয়াছড়ার সগীর আহমদ, বাহারছড়ার জয়নাল আবেদিন প্রমুখ।২১ পরবর্তী দিক নির্দেশনার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটায় কক্সবাজার উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে খালেদ মোশাররফ, তৎকালিন মহকুমা প্রশাসক মৌলভী গফরুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে আখতারুজ্জামান চৌধুরী, নাসির উদ্দিন, আমিরুল কবির চৌধুরী, নুরুল হুদা চৌধুরী প্রমুখ ছাত্রবৃন্দ সমবেত হন। কিন্তু গোয়েন্দা দারোগা আবদুল আউয়াল সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়ে বাধা প্রদান এবং তাদেরকে ধমকাতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে নূরুল হুদা চৌধুরীকে আটক করে। (যদিও পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়) ফলে সভাটি প- হয়ে যায়।২২</div>
<div style="text-align: justify;">
২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটি অমিমাংসিত রেখে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে ফের পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বক্তব্য এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার পুলিশ জন নিরাপত্তা আইনে এমএলএ মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, গোবিন্দ লাল ব্যানার্জি, মনোরঞ্জন ধর, অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের শেষ সাধারণ সম্পাদক, খেলাফত রাব্বানী পার্টির আবুল হাশিম, হামিদুল হক চৌধুরীসহ আটজনকে গ্রেফতার করার পর সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠে। সারাদেশের ন্যায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের সর্বত্র হরতাল পালিত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকালে কক্সবাজারে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে আরো জোরদার করতে ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে তথা ১৯৪৮ সালের ৬ জানুয়ারি বাংলার দাবিতে সরকারি থেকে পদত্যাগকৃত অধ্যাপক ও সাবেক ডাকসু ভিপি ফরিদ আহমদ এর নেতৃত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অগ্নিযুগের বিপ্লবী সুরেশ সেন (১৯০৫-১৯৮১), এডভোকেট জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী (১৯০৬-১৯৯৯) প্রমুখের উপস্থিতিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি রুমালিয়ারছড়া এক জন সমাবেশের সিদ্ধান্ত এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি আহুত ৫ মার্চ শহিদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৫ মার্চের জনসভা সফল করতে খালেদ মোশাররফ, পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ড সালারে আওয়াল আবদুল হামিদ খান, আফসার কামাল চৌধুরী, আমিরুল কবির চৌধুরী, নুরুল হুদা চৌধুরীসহ ছাত্র জনতা ব্যাপক প্রচারণা চালায়। রামুতে মিছিলোত্তর এক জনসভা হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা আফসার কামাল চৌধুরী (১৯২৫-১৯৯২)র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জাকের আহমদ, মোশতাক আহমদ, ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী, মন্মথ বড়–য়া, মনির আহমদ, নিউথু মং, থাংলাগ্য, আবুল কাশেম, গর্জনিয়ার রশিদ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন এবং সভায় অচিরেই ছাত্র হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি উত্থাপিত হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি রুমালিয়ারছড়ায় ফরিদ আহমদ (পরবর্তীতে মৌলভী ফরিদ আহমদ নামে পরিচিত, ওই সময় ফরিদ আহমদ কক্সবাজার কোর্টে ওকালতি করতেন) এর সভাপতিত্বে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে খালেদ মোশাররফ, আবদুল মাবুদ এখলাছি, আমিরুল কবির চৌধুরী, সালামত উল্লাহ, নুরুল আজিম চৌধুরী, সিরাজ আহমদ নাজির, নুরুল হুদা চৌধুরীর নেতৃত্বে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে রুমালিয়ারছড়াস্থ জনসভায় অংশ নেন। সভায় বক্তব্য রাখেন এডভোকেট সুরেশ সেন, এডভোকেট জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী, ক্রীড়াবিদ বদিউল আলম প্রকাশ বদু মাস্টার, সিরাজ আহমদ, ওবাইদুল হাকিম, অমরেন্দু মজুমদার, মনতোষ কুমার চৌধুরী, এডভোকেট মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।২৩ওই সভা থেকে মিছিল সহকারে রামু চৌমুহনীতে জন সমাবেশে গিয়ে মিলিত হন।</div>
<div style="text-align: justify;">
ঢাকা সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির ডাকা ৫ মার্চ শহিদ দিবস সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারে পালিত হয়। ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে খতমে কোরআন, ছাত্র ধর্মঘট, সব দোকান পাট বন্ধ, কোর্ট-অফিস বন্ধ ছিল সেই দিন। কক্সবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, চকরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রামু খিজারী বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রধর্মঘট পালনের পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষার দাবিতে মিছিল করে। কক্সবাজার শহরে কাছারী পাহাড়ে ১৯৩০ সালে সংঘটিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ ও জালালাবাদ যুদ্ধের সাহসী সৈনিক সুরেশ সেন, মৌলভী ফরিদ আহমদ, আয়ুব আলী, বদিউল আলম প্রকাশ বদু মাস্টারের পরামর্শে ছাত্র নেতা খালেদ মোশাররফ, আবদুল মাবুদ এখলাছি, আমিরুল কবির চৌধুরী এর নেতৃত্ব এক প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে কাছারী পাহাড়ে হাজারো ছাত্র জনতার সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশে সরকারি দমন পীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানোনা হয়। মো. আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুরেশ সেন, জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী, ফরিদ আহমদ, ওবাইদুল হাকিম, খালেদ মোশাররফ, আবদুল হামিদ খান, আবদুল মাবুদ এখলাছী, সগীর আহমদ, জয়নাল আবেদীন প্রমুখ। সভায় প্রদেশের অফিস আদালতের ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ, গুলিবর্ষণের দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচার এবং ভাষা আন্দোলনে ধৃত ব্যক্তিদের মুক্তির দাবি তোলা হয় এবং সভা শেষে কক্সবাজার কাছারী পাহাড় থেকে কস্তুরাঘাট, কাছারী পাহাড় থেকে বাজারঘাটা, বাজারঘাটা থেকে সী-বিচ পর্যন্ত তিনটি সড়কের নাম সালাম, জাব্বার ও বরকতের নামে নামকরণ করা হয়েছিল বলে ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার’ নামক এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন ভাষাসৈনিক বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী।</div>
<div style="text-align: justify;">
তন্মধ্যে বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা সরণীটি দীর্ঘদিন বেসরকারিভাবে শহিদ ছালাম রোড নামে পরিচিত ছিল। অন্যান্য নামের ফলকগুলো পুলিশ তুলে ফেলেছিল। কক্সবাজার উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে বিশেষ করে সংস্কৃত প-িত শ্রী দেবপ্রসাদ চৌধুরী ছাত্রদেরকে যথেষ্ট অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। এ সমস্ত কর্মকা-ে সাধারণ মানুষের প্রচুর সহানুভূতি ও সহযোগিতা ছিল।</div>
<div style="text-align: justify;">
আমিরুল কবির চৌধুরী রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে কক্সবাজারে আমাদের আন্দোলন চলাকালে ঢাকা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন সংবাদ নিয়ে আমি চিঠি পাঠাতাম রামু স্কুলের ছাত্র নেতৃবৃন্দের কাছে। সর্ব বিষয়ে আমাদের পরামর্শ দিতেন জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী এডভোকেট, বদিউল আলম মাস্টার প্রমুখ। কক্সবাজার থাকাকালে ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকলের জন্য কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করতাম।’</div>
<div style="text-align: justify;">
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভাষা আন্দোলনের সমর্থনে ও একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ২৪ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ে ধর্মঘট করে। প্রায় ৮০/৯০ জন ছাত্রের একটি মিছিল ঈদগাঁও এলাকা প্রদক্ষিণ করে জনগণকে ভাষা চেতনায় জাগ্রত করে। ‘ছাত্রহত্যার বিচার চাই, নূরুল আমিনের ফাঁসি চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতো দেবো না; ‘মাতৃভাষা বাংলা চাই, ছাত্র হত্যার বিচার চাই’ প্রমুখ সেøাগানে সেøাগানে মুখরিত করে এবং এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্র হত্যাসহ রাষ্ট্রীয় জুলুমের প্রতিবাদ এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করা হয় ওই সভা থেকে। এই মিছিলের নেতৃত্ব দেন তৎকালীন মুসলিম ছাত্র লীগের মহকুমা নেতা নূরুল আজিম চৌধুরী (জোয়ারিয়ানালা ইউপি চেয়ারম্যান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষালম্বন করায় ঘৃণিত হন), ছিদ্দিক আহমদ খালভী (পরবর্তীতে পোকখালী ইউপি চেয়ারম্যান) ও সুলতানুল আলম চৌধুরী। মিছিলে অংশ নেন বিদ্যালয় ছাত্র নজরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ লেদু মিয়া, গোপাল ভট্টাচার্য (ঈদগাঁও), রাখাল ভট্টাচার্য্য (বর্তমানে কানাডা প্রবাসী), ছৈয়দ নূর ফরাজী (বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা), মোহাম্মদ ইব্রাহিম (বাংলা একাডেমির প্রয়াত পরিচালক), মথুরা বিকাশ পাল (পরবর্তীতে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক, কক্সবাজার সরকারি কলেজ), কেদারেশ্বর ভট্টাচার্য্য, মোজাফফর আহমদ (পরবর্তীতে ঈদগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য), ছৈয়দুল আলম চৌধুরী (১৯৩৭-২০০৩, পরবর্তীতে ডুলাহাজারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত), সুলতানুল আলম চৌধুরী (পরবর্তীতে ঈদগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক), বদিউল আলম (পরবর্তীতে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সভাপতি) প্রমুখ ছাত্রবৃন্দ। চকরিয়া উপজেলার হারবাং এলাকার আবদুল হামিদ খান স্কুলের প্রধান শিক্ষক, প্রাক্তন ওসি এবং পাকিস্তান আন্দোলনের অন্যতম নেতা হিসেবে নেতৃত্বের গুণাবলি এবং মানুষের মন জয় করার অধিকারী হওয়ায় তিনি এ ব্যাপারে ছাত্রদেরকে যথেষ্ট সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন এবং তিনি নিজেও ভাষা আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
মহকুমার প্রবেশদ্বার উপজেলা হিসেবে পরিচিত চকরিয়ায় যে কোনো আন্দোলনে সব সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে নির্বাচিত প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমএলএ) তমদ্দুন মসলিস নেতা কবির আহমদ চৌধুরী (পেকুয়া) কক্সবাজার মহকুমার প্রতিনিধিত্ব করতেন। রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলনে চট্টগ্রাম ও চকরিয়ায় সবকটি কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছেন। পূর্ববাংলা ব্যবস্থা পরিষদের মুসলিম ও কংগ্রেস দলীয় যে ১২ জন সদস্য ওয়াকআউট করেন তার মধ্যে কক্সবাজারের এমএলএ কবির আহমদ চৌধুরীও ছিলেন। ভাষার প্রশ্নে তার ওয়াক আউট ছিলো এ এলাকার ছাত্র সমাজের জন্য নিয়ামক শক্তি। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনার প্রথম খবর চকরিয়া পৌঁছে ২২ ফেব্রুয়ারি।</div>
<div style="text-align: justify;">
২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের গুলি এবং ছাত্র হত্যা ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ২২ ফেব্রুয়ারি চকরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র এস কে শামসুল হুদা, ৯ম শ্রেণির ছাত্র জামাল উদ্দীন আহমদ (পরবর্তীতে রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক এবং চকরিয়া ডায়াবেটিক হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা) প্রমুখের নেতৃত্বে ক্লাস বর্জনপূর্বক বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে মিছিল সহকারে থানা সদরের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে। এই মিছিলে অন্তত ২০০-২৫০ ছাত্র অংশগ্রহণ করেছিলো। মিছিল শেষে নিকটস্থ ডাকবাংলো মাঠে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ছাত্ররা মিছিলে ‘ছাত্রহত্যার বিচার চাই, নূরুল আমিনের ফাঁসি চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতো দেবো না’, ‘মাতৃভাষা বাংলা চাই, ছাত্র হত্যার বিচার চাই’―এসব সেøাগান দেয়। এই মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা হলেন, ১০ম শ্রেণির ফাস্টবয় শাহনওয়াজ আহমদ জাহাঙ্গীর (পরবর্তীতে কক্সবাজার হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক, এডভোকেট এবং কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা), এস কে শামসুল হুদা (পরবর্তীতে চকরিয়া থানা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ছিলেন) সিরাজ উদ্দীন রেজা (শিক্ষক), মোহাম্মদ ইসহাক, নাসির আব্বাস, আমান উল্লাহ, হাবিব উল্লাহ, নাসির উদ্দীন রেজা, মোসলিম উদ্দীন রেজা (পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক, নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম), আনোয়ার হোসেন (পরবর্তীতে ঠিকাদার ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক), রাজা মিয়া (জমিদার মোশতাক আহমদ চৌধুরী পরিবারের সদস্য), কাকারার মাহবুব, ছালামত উল্লাহ, মাহবুব হোসেন, এম. এ গণি (পরবর্তীতে রাজনীতিবিদ), নজির আহমদ (পরবর্তীতে ব্যুরো প্রধান বাসস, চট্টগ্রাম প্রমুখ) এনামুল হক, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, আবদুস সালাম (প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে অরসরপ্রাপ্ত), মোহাম্মদ সাকের আহমদ (পরবর্তীতে মাস্টার) প্রমুখ। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক জগবন্ধু বড়–য়া (চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার বাণীগ্রাম এলাকার বাসিন্দা) ছাত্রদেরকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছিলেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
ওই দিনের স্মৃতির কথা উল্লেখ করতে গিয়ে জামাল উদ্দিন আহমদ বলেন, কক্সবাজার হাই স্কুল থেকে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বকারী খালেদ মোশাররফ এর নেতৃত্বে জালাল আহমদ, নুরুল হুদা চৌধুরী, এডভোকেট সালামাত উল্লাহ, আমিরুল কবির চৌধুরী, আখতারুজ্জামান চৌধুরী, নাসির উদ্দিনসহ ২০-৩০ জন ছাত্রের এ দলটি সি.এ্যান্ড.বি.এর জনৈক ঠিকাদারকে একটি ট্রাক যোগাড় করে দেয়ার অনুরোধ করলে তিনি একটি ট্রাক যোগাড় করে দেন। এই ট্রাক নিয়ে ছাত্ররা ‘রক্তের বদলা রক্ত চাই’, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘ছাত্র হত্যার বিচার চাই’ প্রভৃতি সেøাগান সহকারে কক্সবাজার শহরে প্রদক্ষিণ করার পর রামু, ঈদগাঁও হয়ে চকরিয়া আসেন বিকেল ৩-৪টার দিকে। উনারা আসলে চকরিয়া হাই স্কুল মাঠে অবস্থানরত ছাত্রদের নিয়ে আমরা মিছিল সহকারে তাদেরকে স্বাগত জানাই এবং তাদের সাথে মিছিলে মিলিত হয়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবি জানাই। মিছিলোত্তর সমাবেশে খালেদ মোশাররফ, নুরুল হুদা চৌধুরী, ছালামত উল্লাহ, শাহনেওয়াজ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, সিরাজ উদ্দিন রেজা, জামাল উদ্দিন আহমদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। পরে সন্ধ্যায় পুনরায় তারা কক্সবাজারে ফিরে যায়। ২৪</div>
<div style="text-align: justify;">
এছাড়া চকরিয়া উপজেলার আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতা আজিজুর রহমান (প্রকাশ লাল আজিজ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পিডিপিতে যোগদান করে নির্বাচন করেন এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন চকরিয়া শান্তি কমিটির অন্যতম সদস্য গ্রহণ করে বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান করায় ঘৃণিত হন) ওই সময় তমদ্দুন মজলিস চট্টগ্রাম শাখার একজন সদস্য হিসেবে চট্টগ্রাম, পটিয়া, সাতকানিয়া, হাতিয়া, নাজিরহাট, চকরিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষা বিষয়ক বিভিন্ন আন্দোলন, সেমিনার ও সমাবেশে সক্রিয় অবদান রাখতেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
পেকুয়া জিএমসি ইন্সটিউিটের ছাত্ররাও রাজধানী ঢাকায় একুশে ফেব্রুয়ারি ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার সমর্থনে ২২ বা ২৩ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল, বিক্ষোভ সমাবেশ, ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। এ খবরটি জানার পর পেকুয়ার জমিদার আবদুল আজিজ চৌধুরীর ছেলে মাহমুদুল করিম চৌধুরী (১৯৩৮-২০০৬)সহ অন্যান্য ছাত্ররা পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউটে ক্লাস বর্জনপূর্বক মিছিল নিয়ে বের হয়ে পড়ে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার স্বীকৃতি এবং ছাত্রহত্যার নিন্দা ও বিচার দাবি জানানো হয় ওই মিছিল-সমাবেশে। পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউটের ৮ম শ্রেণির ছাত্র মাহমুদুল করিম চৌধুরী জমিদারপুত্র হওয়ায় তারই নেতৃত্বে শুরু হওয়া ছাত্র ধর্মঘটে অংশ নেন ওই স্কুলের ছাত্র জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ কামাল চৌধুরী, আবুল কাসেম চৌধুরী (বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা জিএম চৌধুরীর দৌহিত্র), ওই স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র এবং ছাত্র মনিটরের এজিএস এম এ শুকুর (পরবর্তীতে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও উখিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক), আবুল বশর (এডভোকেট, সদ্য প্রয়াত), আবদুল মজিদ (অধ্যক্ষ, পাহাড়তলী কলেজ, চট্টগ্রাম), মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রমুখ।</div>
<div style="text-align: justify;">
এম এ শুকুর স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। তিনি স্কুলের এজিএস ছিলেন। একই সাথে তিনি নিখিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৫২ সালে আমি অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হই। আমার সহপাঠিদের মধ্যে ছিলেন মাহমুদুল করিম চৌধুরী (সাবেক সাংসদ), আবদুল মজিদ, মোহাম্মদ ইদ্রিস, কামরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ কামাল চৌধুরী, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, আবুল কাসেম চৌধুরী (বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা গোরা মিয়া চৌধুরী প্রকাশ জিএম চৌধুরীর দৌহিত্র এবং এমএলএ কবির আহমদ চৌধুরীর ছেলে)। ২১ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ভাষার দাবিতে আন্দোলন করে। ছাত্রদের মিছিলে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে অনেক ছাত্র শহিদ হয়। এ খবর একদিন কি দুইদিন পরে অর্থাৎ ২২ বা ২৩ ফেব্রুয়ারি পেকুয়া জিএমসি ইন্সটিটিউটে এসে পৌঁছে। খবর পেকুয়া এসে পৌঁছার সাথে সাথেই আমরা ক্লাশ থেকে বেরিয়ে পড়ি। আমাদের সহপাঠি মাহমুদুল হক চৌধুরী এলাকার জমিদারের ছেলে। জমিদারের ছেলে হিসেবে তার নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা ছিলো। মাহমুদুল করিম চৌধুরী পূর্ব থেকেই বাম রাজনীতির সাথে পরিচিত ও জড়িত ছিলেন। ফলে মাহমুদুল করিম চৌধুরীসহ আমরা স্কুলের মাঠে সমবেত হই। ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে আমরা বিদ্যালয় মাঠেই সমাবেশ করি এবং এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। সমাবেশে অনেকেই বক্তব্য প্রদান করেন। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বিদ্যালয় থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় এক মাইল ও পশ্চিম দিকে পেকুয়া বাজার পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে আবার স্কুলে ফিরে আসি। ‘ছাত্রহত্যার বিচার চাই, নূরুল আমিনের ফাঁসি চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতো দেবো না’, ‘মাতৃভাষা বাংলা চাই, ছাত্র হত্যার বিচার চাই’ সেøাগান দিয়ে পর পর দুইদিন আমরা ছাত্রদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করি। দুই দিন ধরে স্কুলের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ ছিলো। এসময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি এলাকার আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী। স্কুলের কোনো শিক্ষকই ছাত্রদের বিক্ষোভ সমাবেশে বাধা প্রদান করেননি। শিক্ষকদের মৌন সমর্থন না থাকলে আমরা বিদ্যালয় থেকে বের হতে পারতাম না, ছাত্রদের নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করতে পারতাম না, পারতাম না বিক্ষোভ মিছিল করতে। যদিও এলাকার দু’একজন শিক্ষিত লোকজন আমাদের বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ নিয়ে নাক ছিটকায়। তবে তাদেরকে আমরা আমলে নিই নি।’ ২৫</div>
<div style="text-align: justify;">
কুতুবদিয়া উপজেলা চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার খবরটি কুতুবদিয়ায় পৌঁছায় ২২ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন চট্টগ্রাম থেকে আসা এ কে খান স্টিমার থেকে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকার মাধ্যমে এ খবরটি পায়। তৎক্ষনাৎ ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে কুতুবদিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে কুতুবদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ধুরং হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। কুতুবদিয়া হাই স্কুলের ৯ম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম (বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা ও দৈনিক কক্সবাজারের সম্পাদক) জানিয়েছেন এ তথ্য।</div>
<div style="text-align: justify;">
তিনি সেই স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে একান্ত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের মতো বড়ঘোপ স্টীমার ঘাটে গিয়ে চট্টগ্রাম থেকে আসা এ কে খান স্টীমারে গিয়ে তখনকার সাপ্তাহিক ইত্তেফাক (পরবর্তীতে দৈনিক ইত্তেফাক) আনতে গিয়ে ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির মিছিলে পুলিশের গুলি ও ছাত্র হত্যার খবরটি দেখা মাত্র কুতুবদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে স্কুলের বড় ভাই এবং সহপাঠী বন্ধুদের বলি এবং তাদের সম্মতিতে আমি নিজেই স্কুলের ঘণ্টা বাজিয়ে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে ক্লাস বর্জন করে মিছিলে যোগদান করার আহ্বান জানাই ছাত্রদেরকে। ১০ম শ্রেণির ছাত্র এস কে মকবুল আহমদ, শামসুল হুদা সিদ্দিকী, সিরাজুল ইসলাম ও আমার নেতৃত্বে স্কুলের ছাত্ররা খরবটি লুফে নিয়ে প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী কুতুবদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই, ‘খুনী আমিনের ফাসী চাই’ সেøাগানে সেøাগানে বের হয়ে বর্তমানের থানা কম্পাউন্টসহ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কুতুবদিয়া হাই স্কুলের সমবেত হই। এ দিকে ধুরং হাই স্কুলের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রমিজ উদ্দিন আহমদ এর নেতৃত্বে অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে আমাদের হাই স্কুলের সামনে সমবেত হয়। পরে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন এস কে মকবুল আহমদ, ৯ম শ্রেণির ফাস্ট বয় মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, আমি মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, ধুরং হাই স্কুলের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রমিজ উদ্দিন আহমদ, (পরবর্তীতে ধুরুং হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন কুতুবদিয়ায় সংঘটিত ঘটনায় পাকিস্তান সরকার কর্তৃক দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার ২০ নং আসামী), মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী, শামসুল হুদা সিদ্দিকী, ছালেহ আহমদ চৌধুরী (প্রাক্তন চেয়ারম্যান) প্রমুখ। ওই সমাবেশে ছাত্র হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করা হয়। ওই সময় কুতুবদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জালাল আহমদ চৌধুরী (১৯১৮-১৯৮৯) যথেষ্ট সহায়তা করেন বলে জানান তিনি। ২৬</div>
<div style="text-align: justify;">
ওই মিছিল ও সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন, এস কে মকবুল আহমদ, মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, রাখাল চন্দ্র নাথ, রেজা শাহ মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী, শামসুল হুদা ছিদ্দিকী, মোসলেম খান (পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ নেতা)। তবে প্রায় ২ শতাধিক শিক্ষার্থী মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আরো কয়েকটি পথসভাও হয়েছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে। ওই পথসভায় সকল ছাত্র হত্যার বিচার এবং বাংলাকে রাষ্টভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার জোর দাবি জানানো হয়।</div>
<div style="text-align: justify;">
ওই সময় ‘আউলিয়ার দেশ কুতুবদিয়া’ গ্রন্থের প্রণেতা রশিদ আহমদ (১৯২০-?) ধুরং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে বাংলার দাবিতে মিছিল-সমাবেশে যথেষ্ট সহায়তা করেন। তাছাড়া তিনি ১৯৪৭ সালে অল ইন্ডিয়া রেডিও, ঢাকা স্টেশনে প্রোগ্রাম সেক্রেটারী হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৮ সালে মৌলভী ফরিদ আহমদের প্রভাবে সরকারি চাকুরিতে ইস্তফা দিয়ে নিজ থানা কুতুবদিয়ায় ফেরত আসেন বলে ইতিহাস পাঠে জানা যায়।</div>
<div style="text-align: justify;">
ওই সময় পুর্ব বঙ্গ ছাত্র ফেড়ারেশন, কৃষক সভা এবং গণতান্ত্রিক যুবলীগ নেতা কবি ধীরেন শীলও ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভাষার আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। যিনি পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দেয়ার জন্য ৫৮ দিন জেলে অনশন করেছিলেন। এ তথ্য সরদার ফজলুল করিমের ‘অনশনে আত্মদান’ বইয়ে উল্লেখ আছে।</div>
<div style="text-align: justify;">
ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলি, ছাত্র হত্যার খবরটি রামুতে পৌঁছে ২৩ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন রামু খিজারী হাই স্কুলের অস্টম শ্রেণির ছাত্র প্রতিনিধি মোশতাক আহমদ (প্রফেসর) এর নিকট চিঠি দেন কক্সবাজারের সালামত উল্লাহ ও আমিরুল কবির চৌধুরী।২৭ চিঠির নিদের্শ মতে মোশতাক আহমদ ছাত্রদেরকে একত্রিত করে। ঢাকার ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে এবং ভাষার দাবিতে ছাত্ররা স্কুলে ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৫০-২০০ ছাত্রের একটি মিছিল রামুর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এই মিছিলে জাকের আহমদ (গর্জনিয়া), মোশতাক আহমদ, ফজলুল করিম (পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক ও ভারুয়াখালী ইউপি চেয়ারম্যান), অনমদর্শী বড়–য়া (লন্ডন প্রবাসী), ওবাইদুল হক (১৯৩২-২০০৭), ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী (১৯৩৭-২০১০), মনির আহমদ, মন্মথ বড়–য়া (পরবর্তীতে বৌদ্ধ নেতা ও সাংবাদিক), নিউথু মং, থাংলাগ্য, ক্যাথিন প্রমুখ ছাত্র অংশগ্রহণ করে। এই মিছিলে সাধারণ জনগণের মৌন সমর্থন লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে জ্ঞানেন্দ্র বিকাশ বড়–য়া, নরেন্দ্র দস্তিদার (বিপ্লবী পূর্ণেন্দু দস্তিদারের ভাই), আবুল কাশেম মাস্টার (খুরস্কুল, ১৯৭০ সালে কক্সবাজার মহেশখালী প্রাদেশিক আসনে জামায়াতের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে হেরে যান) ছাত্রদেরকে প্রগতিশীল ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ করেন। আবুল কাসেম ১৯৫২ সালে দক্ষিণ মিঠাছড়ি জুনিয়র হাইস্কুলের চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে রামু খিজারী হাইস্কুলে যোগদান করেন। মিঠাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন আবুল কাশেম ২১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদের উপর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে ‘দৈনিক আযাদ’ পত্রিকার সম্পাদক ও এম, এল, এ আবুল কালাম শামশুদ্দীন পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করায় তাকে টেলিগ্রাম মারফত একটি অভিনন্দন বার্তা প্রেরণ করেছিলেন বলে ইতিহাস পাঠে জানা যায়।</div>
<div style="text-align: justify;">
কক্সবাজার জেলার দক্ষিণের উপজেলা উখিয়া ও টেকনাফ। সর্বদক্ষিণের উপজেলা টেকনাফে ১৯৫২ সালে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় ছিলো না। টেকনাফে তখন ছিলো মাত্র একটি এম ই বিদ্যালয়। তাও খুব বেশি সুবিধের ছিলো না। এছাড়া দক্ষিণের অপর উপজেলা উখিয়া। উখিয়া সদরে তখন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি। উখিয়া উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট কোটবাজার (রতœাপালং) এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো পালং মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। পালং মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৭ সালে। রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলনের ঢেউ কক্সবাজার মহকুমার দক্ষিণের উপজেলা উখিয়ার পালং মডেল হাই স্কুলেও এসে আছড়ে পড়ে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে মিছিলে গুলিতে ছাত্র হত্যার খবরটি ওই দিন রাত্রেই রেডিও এর মাধ্যমে খবর পায় পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্ররা। ২২ ফেব্রুয়ারি উখিয়ায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে তৎকালীন উখিয়া টেকনাফের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয় পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।</div>
<div style="text-align: justify;">
রাজধানী ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবির মিছিলে খুনী নুরুল আমিন সরকারের নির্দেশে গুলি করে ছাত্র হত্যার খবরটি ওই দিন রাত্রে পেয়ে যায়। ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিদিনের মতো পালং উচ্চ বিদ্যালয়ে এসে স্কুলের সহপাঠী বন্ধুদের সাথে আলাপ তৎক্ষনাৎ ক্লাস বর্জন করে ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে মিছিল ও উখিয়া থানা ঘেরাও করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাদশা মিয়া চৌধুরী ও স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র মোহাম্মদ জকরিয়া (শিক্ষক, বর্তমানে প্রয়াত) এর নেতৃত্বে পালং হাই স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে মিছিল সহকারে আরাকান সড়ক হয়ে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ সেøাগান দিতে দিতে পায়ে হেঁটে উখিয়া থানা স্টেশনে যায়। এক পর্যায়ে উখিয়া থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদেরকে বলা হয় যে, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলার সমর্থনে আপনারা আপনাদের কার্যক্রম বন্ধ করে আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করুন। নতুবা থানা উড়িয়ে দেয়া হবে’। পরক্ষণে থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা আমাদের সমর্থন জানালেও উখিয়া স্টেশন ঘুরে এসে দেখি থানার পুলিশ তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা থানায় গিয়ে লাঠি মেরে দরজা বন্ধ করি। অসংখ্য লাঠির আঘাতে থানার দরজা ফাটল হয়ে যায়।’ দীর্ঘদিন যাবৎ উক্ত ফাটল দরজা ভাষা আন্দোলনের আলামত হিসেবে বহাল ছিলো। তখন উখিয়া স্টেশনে জনতার উদ্দেশ্যে বাংলার ভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাদশা মিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ জাকারিয়া, নিরোধবরণ বড়–য়া, প্রিয়দর্শী বড়ুয়া, ললিত বড়–য়া প্রমুখ। ওই সমাবেশে ছাত্র হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলা আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করা হয়। ২৮</div>
<div style="text-align: justify;">
এছাড়া মিছিলে ছিলেন, ছালেহ আহমদ চৌধুরী (পরবর্তীতে কৃষক লীগ নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন চৌধুরীর পিতা), প্রিয়দর্শী বড়–য়া, এ কে আহমদ হোসেন (পরবর্তীতে এডভোকেট), আয়ুব আলী, রশিদ আহমদ, আজিজুর রহমান প্রকাশ আজিরান মিয়া (পরবর্তীতে এডভোকেট), তোফায়েল আহমদ চৌধুরী, ফরিদ আহমদ খোন্দকার (পরবর্তীতে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন), আবদুল হক চৌধুরী (পরবর্তীতে উখিয়া আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং উখিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক)সহ অনেকেই। সে সময় স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার বোয়ালখালী উপজেলার কাননুগোপাড়া নিবাসী লোকনাথ দে। ছাত্রদের ক্লাশ বর্জন, বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশে শিক্ষকদের মৌন সম্মতি ছিলো।</div>
<div style="text-align: justify;">
কক্সবাজার মহকুমার সাথে উখিয়া-টেকনাফের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত থাকায় ঢাকায় ভাষা আন্দোলনে ছাত্রদের মৃত্যুর সংবাদ টেকনাফে পৌঁছে বেশ দেরিতে। ২৬ ফেব্রুয়ারী দৈনিক আজাদ পত্রিকার মাধ্যমে খবর পেয়ে টেকনাক এম.ই স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবিনাশ চন্দ্র দে (প্রয়াত), মংনি রাখাইন(প্রয়াত), ছৈয়দুর রহমান (প্রয়াত পোস্ট-মাস্টার), মাস্টার আবদুর রবের উৎসাহে ও সহযোগিতায় ছাত্ররা সংগঠিত হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ এম.ই বিদ্যালয়ের ছাত্ররা রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ক্লাস বর্জনপূর্বক মিছিল করে টেকনাফ স্টেশন প্রদক্ষিণ করে। এ মিছিলে আলী আহমদ সওদাগর (টেকনাফ বাজার সমিতির নেতা), আবদুর রহমান, বাবু মংনি, আবদুল গণি (পরবর্তীতে টেকনাফ সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য এবং এরশাদ সরকারের আমলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচিত), ছালেহ আহমদ মাস্টার, জালাল উদ্দিন আহমদ, মোহাম্মদ মিয়া মেইকার, হোছেন আহমদ, নুরুজ্জামান, নুরুল হক (পরবর্তীতে শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন), আবদুল মোনাফ, বদিউর রহমান, বাবু সুব্রুত, আমির হামজা প্রমুখ ছাত্র অংশ নেন। ছাত্র মিছিলের উৎসাহ ও সহযোগিতা করার দায়ে ৩জন শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়। টেকনাফে ২ দিনে ২ টি ছাত্র মিছিলের পরপরই সরকারি দল মুসলিম লীগ নেতা নজির আহমদ চৌধুরী ও আবদুল গফুর চৌধুরীর নেতৃত্বে ভাষা আন্দোলন নস্যাৎ করতে ৪টি সভা করে। সভায় নেতারা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা দেন এবং এ ভাষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করেন। এ চারটি সভায় উপস্থিত উল্লেখ্যযোগ্যরা হলেন খান বাহাদুর ফজলুল কাদের চৌধুরী, মকসুদ আহমদ চৌধুরী, আনোয়ার চৌধুরী, মীর কাসেম চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী( ১৯০৩-১৯৭৭), আবদুর গফুর চৌধুরী (১৯৩০-১৯৯০) নজির আহমদ চৌধুরী প্রমুখ। এরা প্রায় সকলেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে অবলম্বন করে বাংলার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ভূমিকা পালন করেন।২৯</div>
<div style="text-align: justify;">
তাছাড়া কক্সবাজারের কৃতিসন্তান ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রতিটি আন্দোলনে শরীক হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী মাহফিল আরা আজমত (১৯২৯-১৯৯৩; তিনি অবিভক্ত বাঙলার জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বিষয়ক মন্ত্রী খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী (১৮৮১-১৯৫৭)’র ভাই কবির উদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে)। তিনি ভাষা আন্দোলনের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে একজন সক্রিয় কর্মী হিসেবে মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ ছাড়াও ব্যানার, পোস্টার ও ফেস্টুন লিখতেন এবং ছাত্রীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মর্মে খবর রটে যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভাঙতে তিনি ছাত্রীদের সংগঠিত করার নেতৃত্ব দিয়েছেন অন্যদের সঙ্গে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী ডুলাহাজারার শাহাবুদ্দিন চৌধুরী (পরবর্তীতে চকরিয়া কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ও কক্সবাজার কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক)। ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণের দায়ে সলিমুল্লাহ্ মুসলিম হল থেকে পুলিশ শাহাবুদ্দিন চৌধুরীকে গ্রেফতার করে। তিনি প্রায় এক সপ্তাহ জেল-হাজতে ছিলেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র মো. বদরুজ্জামান বায়ান্নর ভাষা দাবির মিছিলে অংশগ্রহণ করেন (১৯৩০-২০০৮) যার নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে রামুতে জনসভা এবং মিছিল সমাবেশ হয়)। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজারের মতো মফস্বল এলাকার অবদান গৌরবদীপ্ত। কক্সবাজারের আন্দোলন ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো সহিংস না হলেও তা ছিল যথেষ্ট সুসংগঠিত ও জনসমর্থিত।</div>
<div style="text-align: justify;">
ভাষা আন্দোলনের সে উত্তাল দিনগুলোতে কক্সবাজারের ভূমিকাকে আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার আক্রমণ, জালালাবাদ যুদ্ধে অংশ নেয়া ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম দুই বিপ্লবী এডভোকেট সুরেশ চন্দ্র সেন, জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী এবং ভাষা আন্দোলনের পক্ষে প্রথম সরকারি চাকুরিতে পদত্যাগকারী অধ্যাপক মৌলভী ফরিদ আহমদ কক্সবাজারের সন্তান ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনে শরিক হয়েছেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের দ্বিতীয় গণ পরিষদ নির্বাচনে নেজাম ইসলামের পক্ষ থেকে মৌলভী ফরিদ আহমদ দ্বিতীয় বারের মতো গণপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকারেরর কাছ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে স্বীকৃতি আদায়কারীর অন্যতম জাতীয় পরিষদ সদস্য ছিলেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
আমাদের মানতেই হবে ভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিকরা ভাষার মর্যাদা বা সম্মান প্রতিষ্ঠা করলেও তাদের প্রকত উদ্দেশ্য আজো বাস্তবায়িত হয়নি। তাদের উদ্দেশ্য শুধু বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা ছিল না। ছিল এ ভাষাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি ও জীবন ধারার বিকাশও অবশ্যই। যতদিন না বাংলা সংস্কৃতি আর বাঙালির জীবনধারা শতদলে বিকশিত না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত মহান ভাষাসৈনিকদের মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত হবে না, অন্তত পরিপূর্ণরূপে।</div>
<div style="text-align: justify;">
শহিদমিনারের কথা</div>
<div style="text-align: justify;">
শহিদমিনার ভাষা শহিদদের উদ্দেশে নির্মিত হয় স্মৃতিস্তম্ভ। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা আন্দোলনে নিহত শহিদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে এই স্তম্ভ নির্মিত হয়, যা বর্তমানে ‘শহিদমিনার’ নামে পরিচিত। এই শহিদমিনারে শহিদদের স্মৃতিই কেবল নয়, বেশ কয়েকবার ভাঙচুরের বেদনাও বিদ্যমান। ঢাকায় প্রথম শহিদমিনার নির্মিত হয় এ স্থানেই ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে। ১৯৫২ সালের ঘটনাবহুল ২১ এবং ২২ ফেব্রুয়ারির রেশ ধরে ২৩ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতেও কারফিউ বলবৎ ছিল ঢাকায়। পথে পথে ছিল সেনা প্রহরাও। তবু এরই মাঝে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে অবস্থানরত রাজনীতি সচেতন ছাত্ররা আকস্মিক ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে একটি মিনার নির্মাণের। সর্বসম্মতিক্রমে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র বদরুল আলম এই কলেজেরই আরেকজন ছাত্র সাইদ হায়দারের সহায়তায় প্রণয়ন করেন একটি মিনারের নকশা। সেই নকশা অনুযায়ী সেখানে উপস্থিত সর্বসাধারণের যৌথশ্রমে একরাতেই নির্মিত হয় প্রায় সাড়ে দশ ফুট উঁচু এবং ছয় ফুট চওড়া প্রথম শহিদমিনারটি।</div>
<div style="text-align: justify;">
পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি রবিবার, অনানুষ্ঠানিকভাবে মিনারটি উদ্ধোধন করেন ভাষা শহিদ শফিউর রহমানের পিতা। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে মিনারটি উদ্বোধন হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্ধোধন করেন দৈনিক আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন।</div>
<div style="text-align: justify;">
বর্তমান শহিদমিনারের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে শহিদদের রক্তভেজা স্থানে সাড়ে ১০ ফুট উঁচু এবং ৬ ফুট চওড়া ভিত্তির ওপর ছোট স্থাপত্যটির নির্মাণকাজ শেষ হলে এর গায়ে ‘শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ’ লেখা একটি ফলক লাগিয়ে দেওয়া হয়। নির্মাণের পরপরই এটি শহরবাসীর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে; প্রতিবাদী আন্দোলনের প্রতীকী মর্যাদা লাভ করে। এখানে দলে দলে মানুষ এসে ভিড় জমায়। কিন্তু সেই উদ্বোধনের পর মিনারের সুদূরপ্রসারী গুরুত্ব এবং এর চেতনাবিকাশী শক্তির কথা দ্রুত অনুধাবন করে ওই দিনই বিকেলে পুলিশ হোস্টেল ঘেরাও করে গুড়িয়ে দেয় বাঙালির প্রাণের আবেগজড়িত মিনারটি। ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এসে ৯ মে’র অধিবেশনে একুশ দফার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শহিদমিনার তৈরি, একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহিদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করে বটে, কিন্তু ওই বছর ৩০ মে সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় তা আইনসিদ্ধ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মানুষ কালো কাপড়ে ঘিরে রাখে স্মৃতির মিনারের বিদীর্ণ স্থানটি।</div>
<div style="text-align: justify;">
প্রথম নির্মিত শহিদমিনারটি এভাবে ভেঙ্গে ফেললেও পাকিস্তানি শাসকরা শহীদের স্মৃতি মুছে ফেলতে পারেনি। সারা দেশে, বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনগুলিতে অনুরূপ ছোট ছোট অসংখ্য শহিদমিনার গড়ে ওঠে এবং ১৯৫৩ সাল থেকে দেশের ছাত্র-যুবসমাজ একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করতে থাকে। মেডিকেল হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহিদমিনারের শূন্য স্থানটিতে লাল কাগজে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের অবিকল প্রতিকৃতি স্থাপন করে তা কালো কাপড়ে ঢেকে দেওয়া হয়। সেই প্রতীকী শহিদমিনার থেকেই সে বছর ছাত্রদের প্রথম প্রভাতফেরি শুরু হয়। পরের বছরও ছাত্ররা একইভাবে শহিদ দিবস পালন করেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
স্বাধীনতার পর থেকেই প্রবাসীদের উদ্যোগে বিদেশের মাটিতে শহিদমিনার নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেলে শহিদমিনার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার প্রতীকস্বরূপ হয়ে ওঠে। বহির্বিশ্বে ১৯৯৭ সালে প্রথম যুক্তরাজ্যের এডিনবার্গের ওল্ডহ্যামে এবং ১৯৯৯ সালে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটে শহিদমিনার নির্মিত হয়। তাছাড়া গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ২০০৫ সালে জাপানের টোকিওতে শহিদমিনার নির্মিত হয়। জাপান-বাংলাদেশ সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে প্রতিবছর বৈশাখি মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার সূত্র ধরে বাংলাদেশ সরকার এই শহিদমিনারটি নির্মাণ করে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইতালীসহ বেশ কয়েকটি দেশে শহিদমিনার নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
কক্সবাজারে শহিদমিনার</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে একুশের ভাষা শহিদদের ফুল দিয়ে সম্মান জানানোর সংস্কৃতি। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে এবং পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ যতদিন পর্যন্ত থাকবে ততদিন পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকাতে একুশের ভাষা শহিদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানানোর সংস্কৃতি চালু হলেও প্রান্তিক জেলা কক্সবাজারে তা শুরু হয়েছে দীর্ঘ কয়েক বছর পরে।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯৫৯-৬০ সালের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষা দিবস পালন করা হতো। এ সময়ে রামু থেকে ছাত্র প্রভাতফেরি করতে ট্রাকযোগে মহকুমা সদরে আসতেন। তবে ১৯৬১ সালেই সর্বপ্রথম রামুতে আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষা দিবস পালিত হয়। মহকুমা সদর এবং রামু থানা সদর ছাড়া অন্য কোনো স্থানে এ সময়ে ভাষা দিবস উদযাপনের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। স্বাধীনতার আগপর্যন্ত কক্সবাজার মহকুমায় কোনো শহিদমিনার নির্মাণ হয়নি। শাসকগোষ্ঠীর গোয়েন্দাদের নীরব নির্যাতনের কারণে তা স্থাপন করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে প্রতিবছর মহকুমা সদরে বিভিন্ন স্থানে অনাড়ম্বরভাবে ভাষা দিবস উদযাপন করা হতো। ১৯৬৩ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট মাঠে ভাষা দিবস পালিত হয়। মৌলভী ফরিদ আহমদ, কামাল হোসেন চৌধুরী, নজরুল ইসলাম চৌধুরীসহ আরো কয়েকজন ছাত্রনেতা এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। মূলত স্বাধীনতার পরে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মিত শহিদমিনারটি মহকুমার সর্বপ্রথম শহিদমিনার স্বীকৃত।</div>
<div style="text-align: justify;">
তবে এখন তার অস্তিত্ব নেই। ১৯৬৯ সালের দিকে কমরেড ইদ্রিস আহমদ, সুভাষ দাশ, সিরাজুল মোস্তফা প্রমুখ ছাত্র ইউনিয়ন নেতাদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় পালের দোকানস্থ শহিদমিনার। যেটি এখন পুরাতন শহিদমিনার নামে পরিচিত। এ শহিদমিনারটি কক্সবাজার পৌর মেয়র ১৮ জুন ২০০৬ সালে নতুনভাবে সংস্কার করেন। এ শহিদমিনারে ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা প্রথম একুশের পালন করে করে বলে জানিয়েছেন কমরেড ইদ্রিস আহমদ।</div>
<div style="text-align: justify;">
তবে কেন্দ্রীয়ভাবে শহিদ দিবস পালনের জন্য কোনো চেষ্টাও পরিলক্ষিত হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধে কক্সবাজারের বহু মানুষ শহিদ হয়েছেন। তাদের জন্য কোনো স্মৃতি ফলক বা স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধে কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বশির আহমদ ও মাস্টার শাহ আলম নামে ২ জন শিক্ষক শহিদ হওয়ায় মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ ছাত্রদের চৈতন্যের মধ্যে আশায় তারা উদ্যোগী হন।</div>
<div style="text-align: justify;">
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি আমরা শহিদমিনার নির্মাণের জন্য জায়গা এবং অনুমতি প্রদানের জন্য তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের অনুরোধ করে মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামকে। প্রথমে সরকারি অনুমতি ছাড়া শহিদমিনার নির্মাণের অনুমতি প্রদানে আবদুল কাদের অপারগতা প্রকাশ করায় ছাত্রনেতা কামাল হোসেন চৌধুরী প্রমুখকে দিয়ে অনুমতি প্রদানে রাজি করানো হয়।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৮ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদেরের সভাপতিত্বে শিক্ষক পরিষদ এবং পরবর্তীতে ছাত্রদের নিয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কক্সবাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বকারী ছাত্র এবং প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদেরকে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি ‘শহিদমিনার ও স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন―মাস্টার আবদুল রাজ্জাক, বদরুল আলম, সৈয়দ আহমদ, সুগত বড়–য়া, দ্বীননাথ রায়। ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন―মো. আলী, আলতাফ হোসেন, মুজিবুর রহমান, আবদুল কাদের, কবির আহমদ, সমীর পাল, খোরশেদ আলম, বিপুল সেন ও বিশ্বজিত সেন বাঞ্চু। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সামাদকে দিয়ে জাতীয় শহিদমিনারের আদলে একটি শহিদমিনার এবং স্মৃতিস্তম্ভের ২টি নকশা তৈরি করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভ দুটি হল স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বিদ্যালয়ের শিক্ষক শহিদ শাহ আলম ও শহিদ বশির আহমদের জন্য। তারা দু’জনই ঢাকায় বি.এড প্রশিক্ষণরত অবস্থায় ১৯৭১ সালে ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে শহিদ হন। তাদের স্মৃতিস্বরূপ কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলনায়তনের নাম ‘শহীদ শাহ আলম-বশির আহমদ মিলনায়তন’ নামকরণ করা হয়। অপর স্মৃতিস্তম্ভটি হল স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য। ছাত্রদের মধ্যে স্বপন ভট্টাচার্য, সুভাষ দাশ, শিশির বড়–য়া স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের হাতে নির্মমভাবে শহিদ হন। প্রস্তুতকৃত শহিদমিনার ও স্মৃতিস্তম্ভের নকশা অনুযায়ী ঘোনারপাড়া নবী হোসেন মিস্ত্রিকে দিয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুল কাদের এবং কামাল হোসেন চৌধুরীসহ অন্যান্যের দ্বারা ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে স্কুলের পশ্চিম গেইটের পার্শ্বে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি শহিদমিনার ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। শিক্ষক ও ছাত্র সবার কাছ থেকে চাঁদা তুলে এবং স্টেডিয়াম কমিটির কাছ থেকে কিছু পরিত্যক্ত ইট সংগ্রহ করে ১৯৭২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শহিদমিনার ও স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। তৎকালীন জাতীয় পরিষদ সদস্য এডভোকেট নুর আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা এ.কে.এম মোজাম্মেল হক, ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম চৌধুরী, কামাল হোসেন চৌধুরী, দিদারুল আলম, হাবিবুর রহমান কক্সবাজারে প্রথম শহিদমিনার ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ২১ শে ফেব্রুয়ারি উদ্যাপনকালে মহকুমা প্রশাসক মোহাম্মদ ওমর ফারুক, জাতীয় পরিষদ সদস্য এডভোকেট নূর আহমদ এবং অন্যান্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের উপস্থিতিতে শহীদ মিনার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। একই দিনে শহিদ মাস্টার শাহ আলমের বৃদ্ধ পিতা একই স্থানে শিক্ষক-ছাত্রদের জন্য নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভের শুভ উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতাত্তোর কক্সবাজারে এটিই ভাষা শহিদদের জন্য নির্মিত প্রথম স্থায়ী শহিদ মিনার, এ এলাকায় স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত শহিদদের স্মরণে প্রথম স্মৃতিস্তম্ভ এবং শহিদদের স্মৃতিস্বরূপ তাদের নামে প্রথম কোনো স্থাপনার নামকরণ। ৩০</div>
<div style="text-align: justify;">
উদ্বোধনের পর কক্সবাজারের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন, বিদ্যালয়, কলেজ, পুলিশ বাহিনী, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহিদদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। বর্তমান কেন্দ্রীয় শহিদমিনার নির্মাণ না হওয়ায় পর্যন্ত দীর্ঘ সময় কক্সবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শহিদমিনার কেন্দ্রীয় শহিদমিনার হিসাবে পরিগণিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে শহিদ সরণিস্থ শহিদমিনারটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পরিণত হয়েছে। মাঝে বেশ কিছু দিন শহিদমিনারটি কক্সবাজার পৌরসভার অধীনে থাকলেও বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পরিষদের তত্বাবধানে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় শহিদমিনার পরিচালিত হচ্ছে।</div>
<div style="text-align: justify;">
টেকনাফে স্বাধীনতার পরই নির্মিত হয় শহিদমিনার। এ ছাড়া উখিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালীতে আলাদা ব্কেন্দ্রীয় শহিদমিনার এবং জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদমিনার নির্মাণ করা হয়েছে।</div>
<br />
<div style="background-color: white; border: 0px; box-sizing: border-box; color: #303030; font-family: 'PT Sans', sans-serif; font-size: 16px; line-height: 24px; margin-bottom: 24px; outline: 0px; padding: 0px; vertical-align: baseline;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
দোহাই</div>
<div style="text-align: justify;">
১. মুস্তফা নুরউল ইসলাম, ‘সাময়িকপত্রে জীবন ও জনমত’, ঢাকা: বাংলা একাডেমি, ১৯৮৩, পৃ: ৩১৩।</div>
<div style="text-align: justify;">
২. সত্যেন সেন, ‘বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা’, ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশনালয় এর তৃতীয় প্রকাশ-মার্চ ২০১১, পৃ : ৫৩</div>
<div style="text-align: justify;">
৩. প্রভাত মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র বর্ষপঞ্জী, কলকাতা, ১৯৬৮, পৃ: ৭৮।</div>
<div style="text-align: justify;">
৪. অধ্যাপক আবদুর গফুর, বাংলা ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাতায় মুসলমান, শেখ তোফাজ্জ্বল হোসেন সম্পাদিত ‘বাংলা ভাষায় মুসলমানদের অবদান’, ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, অক্টোবর ২০০৩, পৃ: ৯১-৯২।</div>
<div style="text-align: justify;">
৫. ড. আসকার ইবনে শাইখ, বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম, অধ্যাপক কাযী আযিযউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম স্মারকগ্রন্থ’, সেপ্টেম্বর ১৯৯১, চট্টগ্রাম: প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম গণস্মরণ সভা কমিটি, পৃষ্ঠার নম্বর উল্লেখ নাই।</div>
<div style="text-align: justify;">
৬. এম এ বার্ণিক, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাস- ঘটনাবহ ও প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ’, ঢাকা: এ এইচ ডেভেলপমেন্ট পাবলিশিং হাউস, জানুয়ারি ২০০৫, পৃ: ২৭</div>
<div style="text-align: justify;">
৭. ড. রংগলাল সেন, ‘বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’, ফেব্রুয়ারি ২০০৩, ঢাকা: শিখা প্রকাশনী, পৃ: ১৭০-১৮০।</div>
<div style="text-align: justify;">
৮. বদরুদ্দীন উমর, ‘পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীত’, ১ম খ-, ২য় সংস্করণ: পৃ:৩৫/ মোরশেদ শফিউল হাসান, ‘পূর্ব বাংলায় চিন্তাচর্চা ১৯৪৭-১৯৭০ দ্বন্দ¦ ও প্রতিক্রিয়া’, ২০০৭, ঢাকা: অনুপম প্রকাশনী, পৃ: ৯৭/ ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী, ‘পূর্ব বাংলার সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন (১৯৪৭-১৯৭১)’, ঢাকা : জ্ঞান বিতরণী, মার্চ ২০০২ পৃ: ২৯১।</div>
<div style="text-align: justify;">
৯. বশীর আল হেলাল, ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’, ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫, ঢাকা: বাংলা একাডেমি, পৃ: ১৮৯-৯১।/মোস্তফা কামাল, ‘ভাষা আন্দোলন: সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন’, দ্বিতীয় প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লি. পৃ: ১৪।</div>
<div style="text-align: justify;">
১০. শহীদুল ইসলাম, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যুদয়’, ঢাকা: বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলাপমেন্ট রিসার্চ বিশ্বসাহিত্য ভবন, বইমেলা ২০১৩, পৃ: ৬০।</div>
<div style="text-align: justify;">
১১. আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস, সৈয়দ আলী আহসান সম্পাদিত ‘বাংলাদেশ’, ঢাকা: তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭২, পৃ: ২৭।</div>
<div style="text-align: justify;">
১২. বদরুদ্দীন উমর,‘আমাদের ভাষার লড়াই’’, টাপুর টুপুর গ্রন্থমালা-১, দ্বিতীয় প্রকাশ-মাঘ ১৩৯৫, চট্টগ্রাম: শিশু সাহিত্য বিতান, পৃ: ৩১-৩২।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৩. মোহাম্মদ খালেদ সম্পাদিত, ‘হাজার বছরের চট্টগ্রাম’, মার্চ ১৯৯৫, দৈনিক আজাদীর ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যা, পৃ: ৪০।/ শরীফ শমশির, ‘চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলন’, আগস্ট ২০০৩, ঢাকা: আগামী প্রকাশনী, পৃ: ২০।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৪. শহীদুল ইসলাম, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যুদয়’, ঢাকা: বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলাপমেন্ট রিসার্চ বিশ্বসাহিত্য ভবন, বইমেলা ২০১৩, পৃ:৬৯।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৫. বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১১, দৈনিক ইনানী।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৬. সূত্র: সৈনিক, ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২, উদ্বৃতি: নুরুল ইসলাম, ‘সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে’ ঢাকা: বাংলা একাডেমী, জুন ১৯৯০, পৃ: ১।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৭. শহিদুল ইসলাম, ‘একাত্তরে বাংলাদেশের অভ্যুদয়’, ঢাকা: বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ, বইমেলা ২০১৩, পৃ: ৮৮/ বদরুদ্দীন উমর, ‘পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালিন রাজনীত’, ৩য় খ-, চট্টগ্রাম: বইঘর, ১৯৮৫, পৃ: ২৫২-২৫৩।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৮. বিস্তারিত দেখুন- আবদুল মতিন ও আহমদ রফিক ; ‘ভাষা আন্দোলন: ইতিহাস ও তাৎপর্য’, ঢাকা : জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ১৯৯১, পৃ: ৮৮-৯০।</div>
<div style="text-align: justify;">
19. Rangalal Sen, ÔPolitical Elites In BangladeshÕ, UPL-Dhaka, 1986, pp: 116</div>
<div style="text-align: justify;">
২০. শরীফ শমশির, ‘চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলন’, আগস্ট ২০০৩, ঢাকা: আগামী প্রকাশনী, পৃ: ৫২।</div>
<div style="text-align: justify;">
২১. বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১১, দৈনিক ইনানী।</div>
<div style="text-align: justify;">
২২. নুরুল হুদা চৌধুরী, ভাষাসংগ্রামী, বদরমোকাস্থ তার বাসায়। /এম এ বার্ণিক, ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের ইতিহাস- ঘটনাবহ ও প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ’, ঢাকা: এ এইচ ডেভেলপমেন্ট পাবলিশিং হাউস, জানুয়ারি ২০০৫, পৃ:২৪৮।</div>
<div style="text-align: justify;">
২৩. বদিউল আলম, কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বিকাশ, সাগর তীরে, ১৫ জুলাই ২০০৭, রামু: রম্য প্রকাশন, পৃ: ১৭-১৮।</div>
<div style="text-align: justify;">
২৪. সাক্ষাৎকার, ডা. জামাল উদ্দিন আহমদ, ভাষাসংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, জাসদ নেতা, ১৩ জানুয়ারি ২০১৪, কক্সবাজার শহরের চৌধুরী কুটিরস্থ মুহম্মদ নুরুল ইসলামের বাসায়।</div>
<div style="text-align: justify;">
২৫. ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, এম এ শুকুর, পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউটের ৮ম শ্রেণির ছাত্র, (১৯৫২), পরবর্তীতে টেকনাফ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও উখিয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব (১৯৭১), ২৫ অক্টোবর ২০১৩, টেকনাফ অলিয়াবাদস্থ বাসায়।</div>
<div style="text-align: justify;">
২৬. ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, কুতুবদিয়া বড়ঘোপ হাই স্কুলের তৎকালিন ৯ম শ্রেণির ছাত্র, সম্পাদক―দৈনিক কক্সবাজার এবং সহসভাপতি, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ, ২৫ জানুয়ারি ২০১৪, কক্সবাজার শহরের উত্তর রুমালিয়ারছড়াস্থ বাসায়।</div>
<div style="text-align: justify;">
২৭. ব্যক্তিগত সাক্ষাতকার, প্রফেসর মোশতাক আহমদ, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১০, রামু, কক্সবাজার।</div>
<div style="text-align: justify;">
২৮. বাদশা মিয়া চৌধুরী, ব্যক্তিগত সাক্ষাতকার-২৩ ডিসেম্বর ২০১৪, হলদিয়া পালং, উখিয়া কক্সবাজার।</div>
<div style="text-align: justify;">
২৯. আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন সম্পাদিত, ‘ভাষা আন্দোলনের আঞ্চলিক ইতিাহস, জুন ২০০০, বাংলা একাডেমী, ঢাকা: ১০৩।</div>
<div style="text-align: justify;">
৩০. এম এম সিরাজুল ইসলাম, কক্সবাজারের প্রথম শহিদমিনার ও স্মৃতিস্মম্ভ, বিজয় স্মারক ২০১৪, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪, পৃ: ১৯৭-৯৮।</div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-70273473572074734752015-07-30T12:02:00.000-07:002015-07-30T12:02:33.715-07:00বৃটিশ বিরোধী খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের আপসহীন সংগ্রাম আবদুল মজিদ সিকদার<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
হাজার বছর ধরে বিকশিত বাঙালি জাতি বিজাতীয় শাসন-শোষণে পিষ্ট হয়েছে
দীর্ঘকাল। কিন্তু একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র গড়ার মতো চেতনা, ঐক্য ও অবস্থা সে
সময়ে হয়নি। তাই বলশালী রাজরাজড়াদের দখলী সত্ত্ব মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে।
কিন্তু বৃটিশ শাসনামলে বাঙালির রাজনৈতিক সত্তা দ্র্রত বিকশিত হতে আরম্ভ
করে। শোষক ও লুণ্টক বৃটিশ সাম্রাজ্যের অন্যায় আর জুলুমের বিরুদ্ধে লড়তে
গিয়ে বাঙালির রাজনৈতিক সত্তা পুষ্ট ও পোক্ত হয়ে ওঠে। ১৮২৬ সালের ১৭
জানুয়ারী যুক্ত প্রদেশের সৈয়দ আহমদ (১৭৮৬-১৮৩১) এর নেতৃত্বে সংগঠিত ওয়াহন
আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। এরপর
তিতুমীরের বিদ্রোহ (১৮৩০), ১৮৫৭ সালের সিপাহী সিপ্লব, ১৮৫৬-৬০
খ্রিস্টাব্দের নীলকর বিদ্রোহ, ১৯০৬ সালের বঙ্গবঙ্গ বিরোধী স্বদেশী
আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহ এ বাংলায় সংঘঠিত হলেও ১৯১৯ সালের খেলাফত
আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে কক্সবাজারের লোকেরা রাজনীতি সচেতন
হয়ে উঠে। এ সময় থেকে বৃটিশ কর্মকর্তা হিরাম কক্সের নামানুসারে নামকরণকৃত
কক্সবাজারের রাজনীতির চিত্র পাওয়া যায়। এ আন্দোলনের পর থেকে
ভারত-পাকিস্তানে যে সব আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে তার সবকটি আন্দোলনে
কক্সবাজারের অবদান উল্লেখ করার মতো। কক্সবাজারের রাজনীতি সম্পর্কে লিখতে
গেলে প্রথমে কলমের ডগায় যার নাম চলে আসে তিনি আবদুল মজিদ সিকদার। তিনি
প্রথমে কংগ্রেসের রাজনীতিতে জড়িত হলেও খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের
নেতৃত্ব দেন। আজীবন সমাজের কুসংস্কার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন।
রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন। আবদুল মজিদ সিকদার প্রথম মহাযুদ্ধের সময়
রামু থানা থেকে লোকাল বোর্ডের সদস্য এবং পরবর্তীতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত
হন। প্কিন্তু এ বিষয়ে আলোচনা করার আগে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে
একটু জেনে নেয়া দরকার। ১৯১৪-১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের পর তুরষ্কের অখ-তা রক্ষা ও তুর্কী সুলতান বা খলিফার মর্যাদা,
কতৃত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য বাঙালি মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয় নেতাদের
উদ্যোগে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেয় যা ইতিহাসে খেলাফত আন্দোলন নামে
পরিচিত। ১৯১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় এ কে ফজলুল হক (১৮৭৩-১৯৬২), নিখিল
ভারতীয় কংগ্রেস নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (১৮৮৮-১৯৫৮), বর্ধমানের আবুল
কাশেম, দি মুসলমান পত্রিকার সম্পাদক মৌলভী মজিবুর রহমান (১৮৭৩-১৯৪০),
এডভোকেট নাজিম উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা
মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী (১৮৭৫-১৯৫০), মাওলানা আবদুল্লাহেল বাকী, জাতীয়
কংগ্রেস সদস্য মাওলানা মহম্মদ আলী ও শওকত আলী প্রমুখের নেতৃত্বে খেলাফত
আন্দোলনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের নভেম্বর মাসে মহম্মদ আলী
(১৮৭৮-১৯৩১), শওকত আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখের নেতৃত্বে
দিল্লীতে সর্বপ্রথম সর্বভারতীয় খেলাফত আন্দোলনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং মিত্রশক্তির বিজয়ে বৃটিশ সরকার কর্তৃক
ভারতবর্ষে শান্তি উৎসব এর বিরোধিতা করে এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ সম্মেলনের
মাধ্যমে খিলাফত আন্দোলন একটি কেন্দ্রে সাংগঠনিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা পায়। এতে
প্রধানত ১৯১৮ সালে মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা বামপন্থী পেটি বুর্জোয়া
অংশটির হাতেই খিলাফত আন্দোলনের নেতৃত্ব ন্যস্ত হয়েছিল। আন্দোলনের নেতাদের
কাছে তুরস্ক সাম্রাজ্যের পতন ও সুলতানের পদচ্যুতি আসলে প্রাচ্যে
পাশ্চাত্য-শক্তির, বিশেষত ব্রিটিশ নীতির প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে প্রকটিত হওয়ায়
আন্দোলনটি অচিরেই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বৈশিষ্ট্য লাভ করে। অন্যদিকে এ সময়
আফগানিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলে এ আন্দোলনের প্রবণতা আরো বৃদ্ধি
পেয়ে সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। পূর্ব বাঙলার যে সব বাঙালি মুসলমান নেতা
খেলাফত আন্দোলন জমিয়ে তুলেছেন তার মধ্যে অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা
মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী ছিলেন চট্টগ্রামের পটিয়ার কৃতিসন্তান। তিনি পটিয়ার
লোক হওয়ায় খেলাফত আন্দোলনের প্রভাব সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার মহকুমায়ও এর
প্রভাব পড়ে। এ সময় কক্সবাজারের রামু, কুতুবদিয়া, উখিয়া-টেকনাফ ও চকরিয়ার
গ্রামে গ্রামে সমাবেশ মিছিল হতো এবং ওই সব সভায় ইসলাম রক্ষার্থে ব্রিটিশকে এ
দেশ থেকে তাড়াতে ব্রিটিশের শোষণ নীতি সম্পর্কে ধারণা দিয়ে ভারতমাতাকে
স্বাধীন করতে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের সচেতনতা সৃষ্টির কাজে মনোযোগ দেন
এখানকার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে
কক্সবাজারের যারা জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারাবন্দী
নেতা আবদুল মজিদ সিকদার (১৮৮৭-১৯২৫), পেকুয়ার জমিদার গোরা মিয়া
চৌধুরী(১৮৭০-১৯৩৪), কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল এলাকার মাওলানা আজিজুর রহমান,
মাওলানা আফজালুর রহমান, চকরিয়ার বদিউজ্জামান আল কাদেরী (১৮৪৬-১৯২৩),
জোয়ারিয়ানালার মাওলানা মুজহেরুল হক চৌধুরী (১৮৬৯-১৯৩২), রাম মোহন বড়–য়া,
অগ্নিযুগের বিপ্লবী সুরেশ চন্দ্র সেন (১৯০৫-১৯৮১), এডভোকেট জ্যোতিশ্বর
চক্রবর্তী প্রমুখ। তারা তৎকালীন কক্সবাজার মহকুমায় খেলাফত ও অসহযোগ
আন্দোলনকে গতিশীল করেন। তারা খেলাফত আন্দোলনের সপক্ষে ধুতি ছেড়ে লুঙ্গি পড়ে
প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছেন। ওই সময় মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকীও
সাধনা পত্রিকায় খেলাফত ও স্বদেশী আন্দোলনের সপক্ষে বিদেশী পণ্য বর্জনের
আহ্বান জানিয়ে সম্পাদকীয় ও প্রবন্ধ লিখে বাঙালি সমাজকে জাগরণ করার কাজ
করেন। এ দিকে খেলাফত আন্দোলনের সফলতা দেখতে পেয়ে নিখিল ভারতীয় কংগ্রেস নেতা
মহাত্মা করম চাঁদ গান্ধী এ আন্দোলনকে সমর্থন জানান। জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য
মাওলানা মহম্মদ আলী ও মাওলানা শওকত আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বাধীন খেলাফত
কমিটির সঙ্গে গান্ধী ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষা করে ওই আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের
সাথে সার্বিক সহযোগিতা ও আলোচনাক্রমে মহাত্মা গান্ধী ও তার অনুগামীরা
অসহযোগ আন্দোলনে ডাক দেন। এ আন্দোলন শুরু হয় ১৯২০ সালের ১ আগস্ট থেকে।
গান্ধীজী ছাড়াও লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক ও কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারা
ভারতের মুসলমানদের এই খেলাফতের দাবির প্রতি সমর্থন জানান। ফলে এ বিষয়ে
বড়লার্টের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় নেতৃস্থানীয় এক বৈঠক হয়। এ বৈঠকে
গান্ধী নতুন এক প্রস্তাব পেশ করে যা পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয়।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে গান্ধী ও খিলাফত কমিটি এবং মুসলিম লীগের অনুগামীরা
বয়কট কর্মসূচী পেশ করেন। ১৯২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কলকাতায় লাল লাজপত রায় এর
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, খিলাফত কমিটির সম্মেলনে কংগ্রেস
নেতা লাল লাজপাত রায়, চিত্তরঞ্জন দাশ (১৮৭০-১৯২৫), বিপিন চন্দ্র পাল
(১৮৫৮-১৯৩২), হাকিম আজমল খান (১৮৬৩-১৯২৭), মৌলভী আবদুল বারীসহ বহু
প্রতিষ্ঠিত নেতাদের আপত্তি সত্ত্বেও গান্ধী উত্থাপিত অসহযোগ কর্মসূচীর
অনুমোদন হয়। প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা বিপিন চন্দ্র পাল বৃটিশ দ্রব্য
বর্জনকে বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মোক্ষম অস্ত্র বলে উল্লেখ করলেও
গান্ধীজীর অন্যান্য দফাগুলোতে তার ততটা আস্থা ছিলো না। তারপরেও একই বছরের
২৩ ডিসেম্বর নাগপুরে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলনে তা সিদ্ধান্ত
আকারে গৃহীত হয়। ওই সময় চিত্তরঞ্জন দাশসহ পাঞ্জাব কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও এ প্রস্তাব গ্রহীত হবার পর মুহম্মদ আলী জিন্নাত
কংগ্রেস থেকে চিরদিনের জন্য সম্পর্ক ত্যাগ করেন। ঔপনেবিশিক সরকারের
বিরুদ্ধে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচী ছিল নিম্নরূপ : বিদেশী পণ্য
বর্জন, ব্রিটিশ প্রদত্ত খেতাব পদবী বর্জন, সম্মানসূচক নিয়োগ ও উপাধি,
সরকারি সংবর্ধনা, সরকার মনোনীত ভারতীয় সদস্যদের আইনসভা থেকে পদত্যাগ এবং
আইন সভার নির্বাচন বর্জন, বৃটিশ স্কুল কলেজ আদালত বর্জন এবং দ্বিতীয়
পর্যায়ে চরকার সুতা কাটায় উৎসাহ প্রদান, পঞ্চায়েত গড়ে তোলা এবং এ
ব্যবস্থাকে সুসংহত করা, সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং সরকারি কর বন্ধ।
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের সামান্তরাল বিকাশের ফলে এবং পারস্পরিক
গ্রহণ-সমর্থনের ফলে ভারতবর্ষের দুটি ধর্মীয় প্রধান সম্প্রদায় হিন্দু ও
মুসলমানের জন্য মুক্তি সংগ্রামের সহযোগিতা ও যৌথ কর্ম পরিচালনার অনুকূলে
পরিস্থিতি দেখা দেয়। পাশাপাশি সমগ্র ভারতবর্ষের জমিদারদের পাশাপাশি শ্রমিক
শ্রেণির অধিকাংশ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের
তীব্রতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। এ আন্দোলনের ফল্গু সারা দেশের ন্যায়
কক্সবাজারেও ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের সংগ্রামী নেতা মাওলানা মনিরুজ্জামান
এছলামাবাদী, ব্যারিষ্টার যতীন্দ্র মোহন সেন, কাজেম আলী মাস্টার, মাওলানা
পীর নুর আহমদ প্রমুখের সাথে সখ্যতার কারণে রামুর আবদুল মজিদ সিকদারের
নেতৃত্বে কক্সবাজারে অসহযোগ আন্দোলন সংঘটিত হয়। আবদুল মজিদ সিকদার প্রথম
মহাযুদ্ধের সময় রামু থানা থেকে লোকাল বোর্ডের সদস্য এবং পরবর্তীতে
চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রথমে কংগ্রেস রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন কিন্তু
কংগ্রেসের সাথে আদর্শগত মিল না হওয়ায় কংগ্রেস ত্যাগ করে খেলাফত আন্দোলনে
যোগ দেন এবং এ আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। একজন সচেতন রাজনৈতিক
ব্যক্তিত্ব হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচীর সাথে একাত্মতা পোষণ করে
কক্সবাজার লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে
জড়িয়ে পড়েন। তিনি পুরো কক্সবাজার মহকুমা জুড়ে অসহযোগ আন্দোলনের রাজনৈতিক
সভা, সমাবেশ ও সম্মেলনের আয়োজন করতেন। তবে বেশি প্রাধান্য পায় রামু সদর
এলাকা। এ সময় তিনি রামু চৌমুহনীতে একটি খাদিখানা একটি সরাই খানা চালু
করেছিলেন অসহযোগ আন্দোলনকারীদের জন্য। সক্রিয় রাজনীতির সুবাধে দেশবন্ধু
চিত্তরঞ্জন দাশ, মাওলানা মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী, ব্যারিষ্টার যতীন্দ্র
মোহন সেনগুপ্ত, বরিশালের শরৎ চন্দ্রসহ তৎকালিন সংগ্রামী নেতৃবৃন্দ এসব
সমাবশে যোগ দিতেন এবং জ্বালাময়ী ভাষণ দিতেন। আবদুল মজিদ সিকদারের কারণে
রাজনৈতিক সচেতনতা এবং বৃটিশ বিরোধী মনোভাবের কারণে তৎকালিন কক্সবাজার
মহকুমার মধ্যে রামু থানা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে পড়ে। রামু খিজারী ইংরেজি
উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, চিত্তরঞ্জন দাশ, কাজেম
আলী মাস্টার, পীর নুর আহমদ, মনিরুজ্জামান এছলামাবাদী, মাওলানা আবদুল্লাহেল
বাকী, মাওলানা মহম্মদ শওকত আলীসহ উপমহাদেশের বরেণ্য বৃটিশ বিরোধী আন্দোনের
নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয়সহ কক্সবাজার মহকুমার
বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক সভা সমাবেশের কথা সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এ
সময় বৃটিশ বিরোধী রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এর অনুমতি প্রদানের দায়ে রামু খিজারী
উচ্চ বিদ্যালয়কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাই স্কুল বাতিল করে সকল
সহযোগিতা বন্ধ করে দেয় বৃটিশ সরকার।৪ আর এসব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন আবদুল
মজিদ সিকদার। শুধু রামু নয়, সমগ্র মহকুমায়ও তাকে এ আন্দোলনের পক্ষে
সভা-সমাবেশের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে। এ রকমই এক রাজনৈতিক সমাবেশ হয় উখিয়ার
কোটবাজারে। ১৯২১ সালে অসহযোগ আন্দোলনের এ সমাবেশে বৃটিশ বিরোধী বক্তৃতা
রাখার সময় বৃটিশ সরকারের পুলিশ বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। তার সাথে অন্য
যারা গ্রেফতার হয়েছিলেন তৎমধ্যে মাওলানা ওয়াজেদ আলী মক্কী ও রাস মোহন বড়–য়া
অন্যতম। তাদের গ্রেফতার করায় কক্সবাজার মহকুমার বহুলোক (বিশেষ করে রামু ও
উখিয়া থানার) স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে এগিয়ে আসে। উখিয়ার কোটবাজার থেকে আটক
আবদুল মজিদ সিকদারকে গ্রেফতারের পর কক্সবাজার মহকুমা হাকিমের তৎকালিন
এস.ডি.ও (সাব-ডিভিশনাল অফিসার) এম.এ. জি ইলিশন এর আদালতে হাজির করা হয়।
এসডিও এলিশন তাকে প্রশ্ন করেন-‘ What are the aims and objects of your
agitation ? ’ (আপনাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী?) উত্তর দেওয়ার আগেই আবদুল
মজিদ সিকদার কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক এম এ জি এলিশনের কাছে একটি প্রশ্ন
করার অনুমতি প্রার্থনা করেন। মহকুমা প্রশাসক তাকে প্রশ্ন করার অনুমতি দিলে
মহকুমা প্রশাসকের কাছ থেকে উল্টো প্রশ্ন করেন- Why are the Scottish in
your country struggling against the British government ? (স্কটিশরা বৃটিশ
সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত কেন ?’) প্রশ্ন শুনে এম এ জি এলিশন কোনো ধরনের
উত্তর না দিলেও মনে মনে ক্ষুব্ধ হন। এ সময় আবদুল মজিদ সিকদার আগের
প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ We are agitating to drive away the foreign
looters from our land’ (আমাদের দেশ থেকে বিদেশী দস্যুদের তাড়ানোর জন্যই
আমাদের আন্দোলন)’’। এতে এসডিও এম.এ. জি এলিশন ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুল মজিদ
সিকদারকে ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেন। এ সময় দেশখ্যাত নেতা ব্যারিষ্টার
যতীন্দ্র মোহন সেন আবদুল মজিদ সিকদারের পক্ষে ওকালতি করলেও মহকুমা প্রশাসক
মজিদ সিকদারের কারাদন্ড দিবেন সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাকে মুক্ত করা সম্ভব হয়নি।
এর পরই তাকে কক্সবাজার কারাগার থেকে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে স্থানান্তর
করা হয়। পরে কয়েক মাস পর মুক্তিপান তিনি। ১৯১৪ সালে মাসিক মোহাম্মদীতে
মুসলমানদের কুসংস্কার সম্বন্ধে প্রবন্ধ লিখেন। ১৯১৭-১৮ সালে বান্দরবানের
বোমাং রাজার বিরুদ্ধে ‘রক্ষক কবলে গরীব প্রজা শিরোনামে স্বচরিত কবিতায়
বোমাং রাজার তৎকালীন কিছু বিতর্কিত কার্যক্রমের কাহিনী বর্ণনা করেন। তখনকার
ভাইসরয় রাজার কর্মকাণ্ড তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাজার জমিদারী কোর্ট
অব-ওয়ার্ডের অধীনে আনা হয়। ১৯১৯ সালে ‘জন্মভূমি রামু’ কবিতা রচনা। এ ছাড়া
মুদ্রাস্ফীতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুতদারের ফলে
১৯৪৩ সালে বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এ সময় বেসামরিক সরবরাহ মন্ত্রী
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (১৮৯২-১৯৬৩) কলকাতায়, জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয়
স্বায়ত্বশাসন বিষয়ক মন্ত্রী খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী পুরো
চট্টগ্রাম জুড়ে ও কমরেড সুরেশ সেন, ধীরেন শীল, ডা. উপেন শীল, চকরিয়ার
জমিদার জামাল উদ্দিনআহমদ চৌধুরীসহ অন্যান্যের সঙ্গেও আবদুল মজিদ সিকদার
লঙ্গরখানা ও রেশনিং ব্যবস্থা করেন। তিনি রামু এবং উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন
জায়গায় লঙ্কর খানা প্রতিষ্ঠা করে দুর্ভিক্ষ কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ান। এ
ছাড়া তিনি রামু ইসলামিয়া মাদ্রাসা এবং ১৯৪৮ সালে রামুতে স্বাধীনতা স্মৃতি
স্তম্ভ নির্মাণ করেন। আজীবন আপসহীন সংগ্রামী আবদুল মজিদ সিকদার ১৯৬৫ সালের
২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের ছেড়ে ইহজগতে পা রাখেন। তিনি নাই কিন্তু তার
অনুপ্রেরণা এবং সংগ্রামী জীবনের ভূমিকা এবং অন্যায় ও প্রতিবাদের চেতনার
মধ্য দিয়ে আমাদের মাঝে আজীবন বেঁচে থাকবেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
দোহাই<br />
১. মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম, আগস্ট ২০১৩, ঢাকা : চারদিক।<br />
২. সত্যেন সেন, বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা, ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশনালয় এর তৃতীয় প্রকাশ-মার্চ ২০১১।<br />
৩. কোকা আন্তোনভা,গ্রিগোরি বোন্গার্দ-লেভিন, গ্রিগোরি কতোভ্স্কি,
‘ভারতবর্ষের ইতিহাস’, প্রগতি প্রকাশন, মস্কো এর দ্বিতীয় সংস্করণ ১৯৮৬।<br />
৪. Professor Mushtaque Ahmad, Glimpses of Cox’sBazar, 1995, Cox’s Bazar Foundation.<br />
৫. মালিক সোবহান, কক্সবাজার চরিত-কোষ, জুলাই ২০০৭, কক্সবাজার : কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী।<br />
৬. কক্সবাজারের ইতিহাস, জুন ১৯৯০, কক্সবাজার: কক্সবাজার ফাউণ্ডেশন।</div>
<div style="text-align: justify;">
৭. কালাম আজাদ, মুক্তিসংগ্রামে কক্সবাজার: প্রসঙ্গ রাজনীতি, বিজয় স্মারক ২০১৪, জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার।</div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-64696671837136891942014-08-12T00:25:00.003-07:002020-03-07T01:26:52.917-08:00কক্সবাজারের রাজনীতি<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
হাজার বছর ধরে বিকশিত বাঙালি জাতি
বিজাতীয় শাসন-শোষণে পিষ্ট হয়েছে দীর্ঘকাল। কিন্তু একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র
গড়ার মতো চেতনা, ঐক্য ও অবস্থা সে সময়ে হয়নি। তাই বলশালী রাজরাজড়াদের দখলী
সত্ত্ব মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু বৃটিশ শাসনামলে বাঙালির রাজনৈতিক
সত্ত্বা দ্র্রত বিকশিত হতে আরম্ভ করে। শোষক ও লুণ্টক বৃটিশ সাম্রাজ্যের
অন্যায় আর জুলুমের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে বাঙালির রাজনৈতিক সত্তা পুষ্ট ও
পোক্ত হয়ে ওঠে। ১৮২৬ সালের ১৭ জানুয়ারী যুক্ত প্রদেশের সৈয়দ এর নেতৃত্বে
সংগঠিত ওয়াহী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়।
এরপর ১৮৫৭ সালের সিপাহী সিপ্লব, ১৮৫৬-৬০ খ্রিস্টাব্দের নীলকর বিদ্রোহ, ১৯০৬
বঙ্গবঙ্গ বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনসহ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহ এ বাংলায় সংগঠিত
হলেও ১৯১৯ সালের খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের
লোকেরা রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠে। এ সময় থেকে বৃটিশ কর্মকর্তা হিরাম কক্সের
নামানুসারে নামকরণকৃত কক্সবাজারের রাজনীতির চিত্র পাওয়া যায়। এ আন্দোলনের
পর থকে ভারত-পাকিস্তানে যে সব আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে তার সবকটি আন্দোলনে
কক্সবাজারের অবদান উল্লেখ করা করা মতো। কক্সবাজারের রাজনীতি লিখতে গেলে
প্রথমে কলমের ডগায় যার নাম চলে আসেন তিনি আবদুল মজিদ সিকদার। তিনি প্রথমে
কংগ্রেসের রাজনীতি জড়িত হলেও খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব
দেন। কিন্তু এ বিষয়ে আলোচনা করার আগে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন সম্পর্কে
একটু জেনে নেওয়া দরকার। ১৯১৪-১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী হওয়া প্রথম
বিশ্বযুদ্ধের পর তুরষ্কের অখন্ডতা রক্ষা ও তুর্কী সুলতান বা খলিফার
মর্যাদা, কতৃত্ব অক্ষুন্ন রাখার জন্য বাঙালি মুসলিম বুদ্ধিজীবী ও ধর্মীয়
নেতাদের উদ্যোগে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের ডাক দেয় যা ইতিহাসে খেলাফত আন্দোলন
নামে পরিচিত। ১৯১৯ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি কলকাতায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক,
নিখিল ভারতীয় কংগ্রেস নেতা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, বর্ধমানের আবুল কাশেম,
দি মসুলমান পত্রিকার মালিক ও সম্পাদক মজিবুর রহমান, এডভোকেট নাজিম উদ্দিন
আহমদ চৌধুরী, আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, মাওলানা মনিরুজ্জামান এসলামাবাদী,
মাওলানা আবদুল্লাহেল বাকী, জাতীয় কংগ্রেস সদস্য মাওলানা মহম্মদ আলী ও শওকত
আলী প্রমুখের নেতৃত্বে খেলাফত আন্দোলনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। একই বছরের
নভেম্বর মাসে মহম্মদ আলী, শওকত আলী, মাওলানা আবুল কালাম আজাদ প্রমুখের
নেতৃত্বে দিল্লীতে সর্বপ্রথম সর্বভারতীয় খেলাফত আন্দোলনের সম্মেলন অনুষ্ঠিত
হয়। এতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসান এবং মিত্রশক্তির বিজয়ে ব্রিটিশ সরকার
কর্তৃক ভারতবর্ষে শান্তি উৎসব এর বিরোধিতা করে এ প্রস্তাব গ্রহীত হয়। এ
সম্মেলনের মাধ্যমে খিলাফত আন্দোলন একটি কেন্দ্রে সাংগঠনিক নেতৃত্ব
প্রতিষ্ঠা পায়। এতে প্রধানত ১৯১৮ সালে মুসলিম লীগ থেকে বেরিয়ে আসা বামপন্থী
পেটি বুর্জোয়া অংশটির হাতেই খিলাফত আন্দোলনের নেতৃত্ব ন্যস্ত হয়েছিল।
আন্দোলনের নেতাদের কাছে তুরস্ক সাম্রাজ্যের পতন ও সুলতানের পদচ্যুতি আসলে
প্রাচ্যে পাশ্চাত্য-শক্তির, বিশেষত ব্রিটিশ নীতির প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে
প্রকটিত হওয়ায় আন্দোলনটি অচিরেই সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বৈশিষ্ট্য লাভ করে।
অন্যদিকে এ সময় আফগানিস্তানে স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলে এ আন্দোলনের
প্রবণতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এ বাঙলা তথা পূর্ব
বাঙলার যে সব বাঙালি মুসলমান নেতা খেলাফত আন্দোলন জমিয়ে তুলেছেন তার মধ্যে
অন্যতম প্রবক্তা মাওলানা মনিরুজ্জামান এসলামাবাদী ছিলেন চট্টগ্রামের পটিয়ার
কৃতিসন্তান। তিনি পটিয়ার লোক হওয়ায় খেলাফত আন্দোলনের প্রভাব সারাদেশের
ন্যায় কক্সবাজার মহকুমায়ও এর প্রভাব পড়ে। এ সময় কক্সবাজারের রামু,
কুতুবদিয়া ও চকরিয়ার গ্রামে গ্রামে সমাবেশ মিছিল হতো এবং ওই সব সভায় ইসলাম
রক্ষার্থে ব্রিটিশকে এ দেশ থেকে তাড়াতে ব্রিটিশের শোষণ নীতি সম্পর্কে ধারণা
দিয়ে ভারত মাতাকে স্বাধীন করতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সচেতনতা সৃষ্টির
কাজে মনোযোগ দেন এখানকার ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। খেলাফত
আন্দোলনে কক্সবাজারের যারা জড়িত ছিলেন তাদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী
আন্দোলনের কারাবন্দী নেতা আবদুল মজিদ সিকদার, পেকুয়ার জমিদার গোরা মিয়া
চৌধুরী, কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল এলাকার মাওলানা আজিজুর রহমান, মাওলানা আফজালুর
রহমান, চকরিয়ার বদিউজ্জামান আল কাদেরী, জোয়ারিয়ানালার মাওলানা মুজহেরুল হক
চৌধুরী, রাম মোহন বড়–য়া, অগ্নিযুগের বিপ্লবী সুরেশ চন্দ্র সেন, এডভোকেট
জ্যোতিশ্চর চক্রবর্তী, প্রমুখ। তারা তৎকতালিন কক্সবাজার মহকুমায় খেলাফত
আন্দোলনকে গতিশীল করেন। তারা খেলাফত আন্দোলনের স্বপক্ষে ধুতি ছেড়ে লুঙ্গি
পড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছেন। ওই সময় মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকীও
সাধনা পত্রিকায় খেলাফত ও স্বদেশী আন্দোলনের স্বপক্ষে বিদেশী পণ্য বর্জনের
আহ্বান জানিয়ে সম্পাদকীয় ও প্রবন্ধ লিখে বাঙালি সমাজকে জাগরণ করার কাজ
করেন। <br />
এ দিকে খেলাফত আন্দোলনের সফলতা দেখতে পেয়ে নিখিল ভারতীয়
কংগ্রেসের মহাত্মা করম চাঁদ গান্ধী এ আন্দোলনকে সমর্থন জানান। জাতীয়
কংগ্রেসের সদস্য মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বাধীন খেলাফত
কমিটির সঙ্গে গান্ধী ঘনিষ্ট যোগাযোগ রক্ষা করে ওই আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের
সাথে সার্বিক সহযোগিতা ও আলোচনাক্রমে মহাত্মা গান্ধী ও তার অনুগামীরা
অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এ আন্দোলন শুরু হয় ১৯২০ সালের ১ আগস্ট থেকে।
গান্ধাজী ছাড়াও লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক ও কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারা
ভারতের মুসলমানদের এই খেলাফতের দাবীর প্রতি সমর্থন জানান। ফলে বিষয়ে
বড়লার্টের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় নেতৃস্থানীয় এক বৈঠক হয়। এ বৈঠকে
গান্ধী নতুন এক প্রস্তাব পেশ করে যা পরবতী অসহযোগ আন্দোলনের রূপ নেয়।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে গান্ধী ও খিলাফত কমিটি এবং মুসলিম লীগের অনুগামীরা
বয়কট কর্মসূচী পেশ করেন। ১৯২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কলকাতায় অনুষ্ঠিত
কংগ্রেস, মুসলিম লীগ, খিলাফত কমিটির সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা লাল লজপাত রায়,
চিত্তরঞ্জন দাশসহ বহু প্রতিষ্ঠিত নেতাদের আপত্তি সত্বেও গান্ধী উত্থাপিত
অসহযোগ কর্মসূচীর অনুমোদন হয়। একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর নাগপুরে অনুষ্ঠিত
কংগ্রেসের বার্ষিক সম্মেলনে তা সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। ওই সময়
চিত্তরঞ্জন দাশসহ পাঞ্জাব কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট
দিলেও এ প্রস্তাব গ্রহীত হবার পর কংগ্রেস থেকে চিরদিনের জন্য সম্পর্ক ত্যাগ
করলেন।১ ঔপনিবেশিক সরকারের বিরুদ্ধে পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচী
ছিল নিম্নরূপ : বিদেশী পণ্য বর্জন, ব্রিটিশ প্রদত্ত খেতাব পদবী বর্জন,
সম্মানসূচক নিয়োগ ও উপাধি, সরকারি সংবর্ধনা, সরকার মনোনীত ভারতীয় সদস্যদের
আইনসভা থেকে পদত্যাগ এবং আইন সভার নির্বাচন বর্জন, ব্রিটিশ স্কুল কলেজ
আদালত বর্জন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে চরকার সুতা কাটায় উৎসাহ প্রদান, পঞ্চায়েত
গড়ে তোলা এবং এ ব্যবস্থাকে সুসংহত করা, সম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং
সরকারী কর বন্ধ।২<br />
খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের সামান্তরাল বিকাশের ফলে এবং
পারস্পরিক গ্রহণ-সমর্থনের ফলে ভারত বর্ষের দুটি ধর্মীয় প্রধান সম্প্রদায়
হিন্দু ও মসুলমানের জন্য মুক্তিসংগ্রামের সহযোগিতা ও যৌথ কর্ম পরিচালনার
অনুকূলে পরিস্থিতি দেখা দেয়। পাশাপাশি সমগ্র ভারতবর্ষের জমিদারদের পাশাপাশি
শ্রমিক শ্রেণীর অধিকাংশ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় জাতীয় মুক্তি
সংগ্রামের তীব্রতা দ্বিগুন বৃদ্ধি পায়। <br />
এ আন্দোলনের ফল্গু সারা দেশের
ন্যায় কক্সবাজারেও ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের সংগ্রামী নেতা মাওলানা
মনিরুজ্জামান এসলামাবাদী, ব্যারিষ্টার যতীন্দ্র মোহন সেন, কাজেম আলী
মাস্টার, মাওলানা পীর নুর আহমদ প্রমুখের সখ্যতার কারণে রামুর আবদুল মজিদ
সিকদারের নেতৃত্বে কক্সবাজারে অসহযোগ আন্দোলন সংঘটিত হয়। আবদুল মজিদ সিকদার
প্রথম মহাযুদ্ধের সময় রামু থানা থেকে লোকাল বোর্ডের সদস্য নির্বাচিত হন।
প্রথমে কংগ্রেসে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন কিন্তু পরে কংগ্রেসের সাথে
আদর্শগত মিল না হওয়ায় কংগ্রেস ত্যাগ করে খেলাফত আন্দোলনে যোগ দেন এবং এ
আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। <br />
একজন সচেতন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
হিসেবে অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচীর সাথে একাত্মতা পোষণ করে কক্সবাজার লোকাল
বোর্ডের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। তিনি
পুরো কক্সবাজার মহকুমা জুড়ে অসযোগ আন্দোলনের রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ ও
সম্মেলনের আয়োজন করতেন। তবে ্ওই বেশী প্রাধান্য পায় রামু সদর এলাকা। এ সময়
তিনি রামু চৌমুহনীতে একটি খাদিখানা ও একটি সরাইখানা চালু করেছিলেন অসহযোগ
আন্দোলনকাীদের জন্য। সক্রিয় রাজনীতির সুবাধে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ,
চট্টগ্রামের মাওলানা মনিরুজ্জামান এসলামাবাদী, ব্যারিষ্টার যতীন্দ্র মোহন
সেন, বরিশালের শরৎ চন্দ্র, হাবিবুল্লাহ বাহারসহ তৎকালিন নেতবৃন্দ এসব
সমাবশে যোগ দিতেন এবং জ্বালাময়ী ভাষণ দিনে। আবদুল মজিদ সিকদারের কারণে
রাজনৈতিক সচেতনা এবং বৃটিশ বিরোধী মনোভাবের কারণে তৎকালিন কক্সবাজার
মহকুমার মধ্যে রামু থানা রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়ে পড়ে। <br />
রামু খিজারী
ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্ত, চিত্তরঞ্জন দাশ,
কাজেম আলী মাস্টার, মনিরুজ্জামান এসলামাবাদী, মাওলানা আবদুল্লাহেল বাকী,
শওকত আলীসহ উপমহাদেশ বরেণ্য ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোনের নেতৃবৃন্দের
উপস্থিতিতে রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয়সহ কক্সবাজার মহকুমার বিভিন্ন স্থানে
রাজনৈতিক সভা সমাবেশের কথা সমগ্র ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বৃটিশ বিরোধী
রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ এর অনুমতি প্রদানের দায়ে রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয়কে
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হাই স্কুল বাতিল করে সকল সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়
বৃটিশ সরকার।৩ আর এসব আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতেন আবদুল মজিদ সিকদার। শুধু
রামু নয়, সমগ্র মহকুমায়ও তাকে এ আন্দোলনের পক্ষে সভা-সমাবেশের নেতৃত্ব দিতে
হয়েছে। এরকমই এক রাজনৈতিক সমাবেশ হয় উখিয়ার কোটবাজারে। ১৯২১ সালে অসহযোগ
আন্দোলনের পক্ষে হওয়া এ সমাবেশে বৃটিশ বিরোধী বক্তৃতা রাখার সময় বৃটিশ
সরকারের পুলিশ বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। তার সাথে অন্য যারা গ্রেফতার
হয়েছিলেন তৎমধ্যে মাওলানা ওয়াজেদ আলী মক্কী ও রাস মোহন বড়–য়া অন্যতম। তাদের
গ্রেফতারের পরে কক্সবাজার মহকুমার বহুলোক (বিশেষ করে রামু ্ও উখিয়া থানার)
স্বেচ্ছায় কারাবরণ করতে এগিয়ে আসে। আবদুল মজিদ সিকদারই কক্সবাজারের প্রথম
রাজনৈতিক বন্দী বা রাজবন্দী। <br />
উখিয়ার কোটবাজার থেকে আটক আবদুল মজিদ
সিকদারকে গ্রেফতারের পর কক্সবাজার মহকুমা হাকিমের তৎকালিন এস.ডি.ও
(সাব-ডিভিশনাল অফিসার) এম.এ. জি ইলিশন এর আদালতে হাজির করা হয়। এসডিও এলিশন
তাকে প্রশ্ন করেন-‘‘What are the aims and objects of your agitation ? ’’
(আপনাদের আন্দোলনের উদ্দেশ্য কী?)<br />
উত্তর দেওয়ার আগেই আবদুল মজিদ সিকদার
কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক এম এ জি এলিশনের কাছে একটি প্রশ্ন করার অনুমতি
প্রার্থনা করেন। মহকুমা প্রশাসক তাকে প্রশ্ন করার অনুমতি দিলে মহকুমা
প্রশাসকের কাছ থেকে উল্টো জিজ্ঞেস করেন- ‘‘ÔÔWhy are the Scottish in your
country struggling against the British government ?(স্কটিশরা বৃটিশ
সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে রত কেন ?’) প্রশ্ন শুনে এম এ জি এলিশন কোন ধরণের
উত্তর না দিলেও মনে মনে ক্ষুব্ধ হন। এ সময় আবদুল মজিদ সিকদার আগের
প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘We are agitating to drive away the foreign
looters from our land (আমাদের দেশ থেকে বিদেশী দস্যুদের তাড়ানোর জন্যই
আমাদের আন্দোলন)’’।৪ এতে এসডিও এম.এ.জি এলিশন ক্ষিপ্ত হয়ে আবদুল মজিদ
সিকদারকে ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। এ সময় দেশখ্যাত নেতা ব্যারিষ্টার
যতীন্দ্র মোহন সেন আবদুল মজিদ সিকদারের পক্ষে ওকালতি করলেও মহকুমা প্রশাসক
মজিদ সিকদারের কারাদন্ড দেবে সিদ্ধান্ত নেয়ায় তাকে মুক্তি করা সম্ভব হয়নি।
এর পরই তাকে কক্সবাজার কারাগার থেকে চট্টগ্রাম জেলা কারাগারে স্থানান্তর
করা হয়। প্রায় কয়েক মাস পর মুক্তিপান তিনি। <br />
স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম
গোরা মিয়া চৌধুরী স্বদেশী আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে খদ্দরের কাপড় ও মাটির
তৈরী থালা বাসন ব্যবহার করেন এবং তার প্রজা সাধারণ, কক্সবাজারের আপামরণ
জনসাধারণকে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িত হওয়ার আহ্বান জানান।<br />
কুতুবিদয়ার
কৈয়ারবিল নিবাসী মাওলনা আজিজুর রহমান খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনের
সংগঠক হিসেবে কুতুবদিয়া, চট্টগ্রাম, সীতাকুন্ড, নোয়াখালী, কুমিল্লা, ঢাকা ও
কলকাতায় খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভুমিকা রাখেন। তিনি সীতাকুন্ড
আলীয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার সময় এ আন্দোলন সংঘটিত হওয়ায় ওই সময় অনেক
মাদ্রাসা ছাত্রকে এ আন্দোলনে দীক্ষিত করেছেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামের তার
অনেক ছাত্রই এ আন্দোলনের শরীক হন। খেলাফত আন্দোলন ও ইসলামী ধারার উপর তিনি
তিন/চারটি পুস্তক রচনা করেছিলেন বলে যানা যায়। একজন বাগ্নী হিসেবে তাঁর
সুখ্যাতি অবিভক্ত বাংলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁর অগনিত শিষ্যদের মধ্যে
কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিলের স্বাধীনতাসংগ্রামী মাওলানা আফজালুর রহমান অন্যতম ।
খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনে বৃটিশ বিরোধী বক্তৃতা রাখার দায়ে মাওলানা আফজালুর
রহমানকে গ্রেফতার করে বৃটিশ পুলিশ। তিনি প্রায় ৩ মাস রাজবন্দী হিসেবে
কারাগারে ছিলেন। <br />
বৃটিশ বিরোধী খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা
ছিলেন অভিবক্ত বাংলার মুসলিম সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা চকরিয়ার
মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী। তিনি সরাসরি খেলাফত আন্দোলনে অংশ নেয়ার
পাশাপাশি এসব আন্দোলনের পক্ষে প্রচুর লেখালেখি করেন। জাতীয় জাগরণের
সাপ্তাহিক সংবাদপত্র হিসেবে সাপ্তাহিক ‘মোসলেম জগৎ’ নামে একটি পত্রিকা
সম্পাদন করেন ১৫ আগস্ট ১৯২২সালে। প্রকাশ করতেন আন্তনী বাগান লেন ঠিকানা
থেকে। ভারতের স্বাধীনতা প্রশ্নে খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ও তার ফলাফল
স্বপক্ষে তুলে ধরেন ওই পত্রিকায়। ভারতের স্বাধীনতা লাভের জন্য মুসলমান ও
হিন্দু সম্প্রদায়ের স্বাধীনতার মন্ত্রে জাগানো জন্য লেখনী ধারণ করেন তিনিও।
১৬ অক্টোবর ১৯২২ বাংলা ১৩২৯, ১৭ আশ্বিন সংখ্যায় ‘ সময় থাকতে সাবধান, বুঝে
চল ব্রিটিশ’ শীর্ষক সম্পাদকীয় লিখে রাজরোষের শিকার হয়। ওই সম্পাদকীয় লেখার
কারণে ভারতীয় দন্ডবিধির ১২৪-এ ১৫৩-এ ধারা অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা
হয়। ওই সময় তিনি চকরিয়ার বাড়িতে ছিলেন। বাড়ি থাকাকালীন সময়ে ১৯২৯ সালের ৩১
অক্টোবর কলাকাতা থেকে টেলিগ্রাম পান যে, সরকার বিরোধী সম্পাদকীয় লেখার জন্য
তার বিরুদ্ধে বেঙ্গল গর্ভমেন্টের চীফ সেক্রেটারির নামে ওয়ারেন্ট জারি করা
হয়েছে। আবদুর রশিদ সিদ্দিকী চীফ সেক্রেটারির কাছে তার করে সময় নিয়ে এক মাস
পরে কলকাতা গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন। সরকার পক্ষ থেকে তাঁকে অসযোগ ও
খেলাফত আন্দোলনের পক্ষালম্বন করার পরিবর্তে বিনাশর্তে অভিযোগ প্রত্যাহার
এবং চার হাজার টাকা এককালীন সাহায্য হিসেবে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়।
কিন্তু সিদ্দিকী সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। তার আত্মজীবনীর ভাষায় ‘‘
আমি বলিলাম নিজের আত্মবিশ্বাসের বিরুদ্ধে আমি এক লক্ষ টাকা পাইলেও নিজেকে
ভাসাইয়া দিতে পারিবনা। প্রায় ১ ঘন্টাকাল কথাবার্তার পর আমি আমার শেষ অভিমত
জানাইলাম যে, আমি একখানা পত্র দিব, তাহাতে সরকার যদি আমাকে মুক্তি দেন ত
ভালই নতুবা যাহা ইচ্ছা করিতে পারেন। পত্রটি নিম্নরূপ :‘‘আমি রাজদ্রোহী নহি।
রাজদ্রোহ প্রচার করাও আমার লক্ষ নহে। এ পর্যন্ত রাজদ্রোহ মূলক কোন প্রবন্ধ
আমি প্রকাশ করি নাই। সুতরাং আমার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আসিতে পারে
না। ’’<br />
কিন্তু এ চিঠি পৌছার আগেই ১৯২২ সালের ২২ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল
১০টায় পুলিশ সার্জেন্ট তার বাসা, বাগবাজারের ছাপাখানা এক এক করে ঘিরে ফেলে
এবং তিন দল পুলিশ তিন দিকে তিন জায়গা হানা দেয়। বাসায় প্রবন্ধ লিখার সময়
পুলিশ সার্জেন্ট ওয়ারেন্ট দেখিয়ে ‘মোসলেম জগৎ’ সম্পাদক আবদুর রশিদ
সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করে। তাকে প্রথমে লালবাজার পুলিশ কোর্ট এবং পরে চীফ
প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেটের কোর্টে হাজির করা হয়। চীফ ম্যাজিস্ট্রেট
ক্ষমা ভিক্ষা ও ভবিষ্যতের জন্য মোচলেকা দিতে বললে সিদ্দিকী প্রত্যাখান
পূর্বক উল্টো বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করবে বলে অভিমত প্রকাশ করে। যার
ফলে তাকে প্রেসিডেন্সী জেলে প্রেরণ করা হয়। ওই কারাগারে তখন কাজী নজরুল
ইসলামও কারাবন্দী ছিলেন। ইতোমধ্যে সিদ্দিকী লিখিত সম্পাদকীয় এর ব্যাখ্যা
দিয়ে চিঠির প্রেক্ষিতে চীফ প্রেসিডেন্সী ম্যাজিস্ট্রেট তাকে জেল থেকে
মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দেন। ১৮ দিন পর মোসলেম জগৎ সম্পাদক মুক্তি লাভ করেন।৫<br />
১৯২২
সালের ফেব্র“য়ারি আসামে সংঘটিত পুলিশ হত্যাকান্ডে মর্মাহত হয়ে মহাত্মা
গান্ধী অসহযোগ আন্দোলন স্থগিত করে দিলেও খেলাফত আন্দোলন ১৯২৪ সালে মোস্তফা
কামাল পাশা তুরস্কের নেতৃত্ব গ্রহণ পূর্বক খিলাফত অবসান ঘোষণা পর্যন্ত এ
বাংলায় বিদ্যমান ছিল।<br />
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রবাদপুরুষ
অগ্নিযুগের বিপ্লবী এডভোকেট সুরেশ সেন। তিনি ১৯২১ সালে স্কুলে অধ্যয়নকালে
বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে স্বদেশী আন্দোলনের
সাথে যুক্ত হন। ১৯২১ সালে গ্রামে গ্রামে তরুণদের সংগঠিত করে স্বাধীন
জন্মভূমির স্বপ্ন দেখার কাজ তাঁরা শুরু করেন। যেটা এখনো যেকোন দেশের
স্বাধীনতা এবং মুক্তির মন্ত্র হিসেবে মানুষকে সবসময় অনুপ্রেরণা যোগায়। ১৯২১
সালের অসহযোগ আন্দোলনের সময় স্কুলে পড়াশুনা করেন। ঠিক ওই সময় মাস্টার দা
সূর্য সেন পড়াশুনা জীবনের ইতি ঘটিয়ে চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল স্কুলে
মাস্টারী শুরু করেছেন। ওই বছর দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ অসহযোগ আন্দোলনের
কাজে চট্টগ্রাম আসেন। এ উপলক্ষে এক বিরাট জনসভা হয়। এই জনসভায় চট্টগ্রামের
প্রায় স্কুল-কলেজের ছাত্ররা যোগ দেন। এতে সুরেশ চন্দ্র সেনও ছিলেন। এর পরে
প্রতিটি আন্দোলনে মাস্টারদা সূর্য সেনের সহকর্মী হিসেবে সুরেশ সেন অংশ
গ্রহণ করেন। ১৯২৪ সালে চট্টগ্রাম রেলওয়ে ডাকাতি, বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায়
রাজনৈতিক ডাকাতি ও বিপ্লববাদীদের সশস্ত্র কার্যকলাপের কারণে বঙ্গীয়
প্রাদেশিক পরিষদে ব্রিটিশ “বেঙ্গল অর্ডিনান্স”নামে এক জরুরি আইন পাশ করে।
এই আইনের উদ্দেশ্য ছিল “রাজনৈতিক কার্জকলাপের জন্য সন্দেহভাজনদের বিনা
বিচারে আটক রাখা”। এই আইন পাশ হওয়ার পর ব্রিটিশ সরকার সশস্ত্র
বিপ্লববাদীদের গ্রেফতার করা শুরু করে। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সূর্য সেন
সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করেন। ইংরেজদের
সাথে যুদ্ধকালীন সময়ে চট্টগ্রামের যুব বিদ্রোহীরা বৃটিশদের হাত থেকে বীর
চট্টলাকে ১৮-২২ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৪ দিন মুক্ত এবং স্বাধীন রাখে। যুদ্ধের
এক পর্যায়ে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবী অনন্ত সিংহ, অনিল
মুখার্জী, বিনোদ বিহারী চৌধুরী, বিনোদ দত্ত, শৈলেশ্বর চক্রবর্তী, সুরেশ
চন্দ্র সেন, জিতেন দাশগুপ্ত, সুরোজ গুহ, কালী দে, মধুসূদন দত্ত, কালী
চক্রবর্তী, অর্ধেন্দু দস্তিদার, মতি কানুনগো, বিধু ভট্টাচার্য, নারায়ন সেন,
পুলিন ঘোষ, নিরঞ্জন রায়, কৃষ্ণ চৌধুরী, ক্ষীরোদ ব্যানার্জি, দ্বিজেন
দস্তিদারসহ একদল যুব বিদ্রোহী চট্টগ্রামে বৃটিশ পতাকা (ইউনিয়ন জ্যাক)
নামিয়ে সর্বভারতীয় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। এ যুব বিদ্রোহকে
ইতিহাসবিদরা ভারতীয় বিপ্লবী কাজের কর্মকান্ডের সবচেয়ে সাহসী কাজ বলে
মন্তব্য করেন ৬<br />
মাত্র ২৫ বছর বয়সে ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল বৃটিশ বিরোধী
চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ এবং ঐতিহাসিক জালালাবাদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন সুরেশ
সেন। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করার পূর্ব প্রস্তুতি পর্বের সকল কর্মসূচীর
সাথে সুরেশ চন্দ্র সেন যুক্ত ছিলেন। ১৮ এপ্রিল থেকে ২২ এপ্রিল সংঘটিত বৃটিশ
বিরোধী সকল যুদ্ধে অংশ নেন তিনি। তিনি ২২ এপ্রিল ঐতিহাসিক জালালাবাদ
যুদ্ধে মরণপণ লড়াইয়ে ব্রিটিশ বাহিনীর গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন। তার সাথে বিনোদ
বিহারী, বিনোদ দত্তও গুরুতর আহত হন।৭<br />
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার দখল করার
ব্রিটিশ পুলিশ বিপ্লবীদের গ্রেফতার করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। বিপ্লবী দলের
অনেকেই চট্টগ্রামের অনন্ত সিং, গনেশ ঘোষ, আনন্দ গুহ, মাখম ঘোষালসহ কয়েক জন
বিপ্লবী কলকাতায়, সুরেশ চন্দ্র সেন, ক্ষিতিশ দে, নেলী সেন গুপ্তসহ অনেকেই
বিপ্লবী মহেশখালী, রামু, কুতুবদিয়া এবং উখিয়ায় আত্মগোপন করেন। সশস্ত্র
যুদ্ধকে আরো বৃহত্তর পর্যায়ে সংগঠিত করার দায়ে ১৯৩১ সালের মধ্যবর্তী সময়ে
মহেশখালী আত্মগোপন কালে তিনি বৃটিশদের হাতে বন্দি হন। আটকের পর প্রহসনমূলক
বিচারে ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত একটানা দীর্ঘ নয় বছর কারাভোগ করেন।
আলীপুর জেল, বকসাদুয়ারা ক্যাম্প, বহরমপুর জেলসহ ভারতের বিভিন্ন কারাগারে
তাঁর কারাজীবন কাটে। কারান্তরীন থাকা অবস্থায় রেকর্ড পরিমাণ মার্কস নিয়ে
তিনি প্রথম শ্রেণীতে বি.এ এবং ‘ল’ (আইন) পাশ করেন। জেল থেকে বের হয়ে এসে
তিনি আইন পেশা এবং রাজনীতির সাথে ভালোভাবেই সম্পৃক্ত হন। মাস্টারদা
সূর্যসেনের ফাঁসির পর অনেক বিপ্লবীরা কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দিয়েছেন।
কমিউনিস্ট পার্টি যে পথে দেশের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছে, সেই পথই ঠিক
মনে হওয়ায় তিনিও কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। কমিউনিস্ট পার্টির কর্মী
হিসেবে ১৯৪৩ সালের মহামারী বাংলার দুর্ভিক্ষের সময় কক্সবাজার থেকে তিনি কাজ
করেছেন। ইতিহাসে মন্বান্তরের সন হিসেবে পরিচিত এ দুর্ভিক্ষের সময়
কমিউনিষ্ট পার্টি সারা দেশব্যাপী লঙ্গরখানা খুলে বুভুক্ষু মানুষকে বাঁচানোর
সর্বাত্মক চেষ্টা করে। এই দুর্ভিক্ষ থেকে মানুষকে বাঁচাতে চট্টগ্রামের
পূর্ণেন্দু দস্তিদারের সাথে পুরো চট্টগ্রাম জেলা জুড়ে বিশেষ করে কক্সবাজারে
অমানুষিক পরিশ্রম করে দুর্ভিক্ষ লাঘবে কাজ করেন। <br />
রাউজানের কোয়েপাড়া
গ্রামের রত্মেশ্বর চক্রবর্তী মোক্তার ও শান্তিবালা দেবীর ঔরুসজাত
জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী অগ্নিযুগের অন্যতম বিপ্লবী। ১৯২১সালে চট্টগ্রাম
মিউনিসিপালিটি স্কুলে অধ্যয়নকালে অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন। এ সময় পরিবারের
আর্থিক দূর্গতি লাঘবের পক্ষে ঠান্ডাছড়ি চা বাগানে কেরানীর চাকুরী করেন।
১৯৩০ সালে ইংরেজীতে অনার্সসহ বিএ পাশ করে পটিয়া এ.এস.রাহাত আলী হাই স্কুলে
শিক্ষকতায় যোগদেন। এর মধ্যে তার বাবা কক্সবাজারে বসতি স্থাপন করেন। পটিয়া
রাহাত আলী হাই স্কুলে মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে পরিচিত হন। এ সময় তিনি
বিপ্লবী অনেক ছাত্রদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল
চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ এবং পটিয়ার ধলঘাট যুদ্ধের পর মাস্টার
সূর্যসেন পটিয়া অবস্থানকালে সূর্যসেনের বিপ্লবের প্রভাবে ডিআইবি পুলিশের
নজরবন্দী হন। ১৯৩১ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাহাত আলী হাইস্কুল থেকে গ্রেফতার করে
বৃটিশ ডিআইবি পুলিশ। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে
কারান্তরীন শেষে ১৯৩৮ সালে কক্সবাজারে ফিরে ওকালতি শুরু করেন।৮ এর পর
বিভিন্ন বাংলার বিভিন্ন আন্দোলনে শরীক হয়েছিলেন তিনি। তার ছোট ভাই শৈলেশ্বর
চক্রবর্তীও একজন শহীদ বিপ্লবী। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সংঘটিত চট্টগ্রাম
অস্ত্রাগার দখল তথা চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সাহসী সৈনিক এবং ২২
এপ্রিল জালালাবাদ যুদ্ধে যে ৫২ জন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রী ফৌজ সদস্য অংশ নেন
তার মধ্যে অন্যতম তিনি। <br />
মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশে তরুন কর্মী
শৈলেশ্বর চক্রবর্তী দুই বার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্ব
দেন। প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় বার ১৯৩২ সালের ১০ আগস্ট তারই নেতৃত্বে
৫ জনের একটি দল নিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু
দুর্ভাগ্যবশত পাহাড়তলী ক্লাব থেকে কোনো সবুজ সংকেত না আসায় সে বারও ব্যর্থ
হয়ে সূর্য সেনকে কিভাবে মুখ দেখাবে-এই বলে নিজের রিভলভারের গুলিতে
আত্মহত্যা করেন শৈলেশ্বর চক্রবর্তী।৯ দুই বার ব্যর্থ বিপ্লবী শৈলশ্বর
চক্রবর্তীর আত্মহত্যার পর মাস্টারদা সূর্য সেন নারী বিপ্লবী প্রীতিলতাকে
ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণের ভার অর্পণ করেন। ১৯৩২ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর
প্রীতিলতা সফল হলেও নিজে ব্রিটিশ বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার চেয়ে আত্মহত্যাকে
শ্রেয় মনে করে আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন তিনি। <br />
ভারতে বৃটিশ হামলাদারদের
লুটেরা কর্মনীতি ও উপনিবেশিক শোষণের ববর্রর পদ্ধতিই ভারতীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে
পড়ে। এক পর্যায়ে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। সিপাহী বিপ্লব, চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার
আক্রমণ, ইউরোপিয়ান আক্রমণসহ বিভিন্ন সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিচ্ছেন ভারত
বর্ষের সংগ্রামীরা। এ সময় ভারত উপমহাদেশে সর্বত্র এক আওয়াজ ‘ভারতবর্ষের
স্বাধীনতা’ ইংরেজ সরকারের পক্ষে যুদ্ধের বিপক্ষে ভারতবর্ষের সবাই একমত।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বৃটিশরা কথা দিয়েছিল যুদ্ধে তাদের সহযোগিতা করলে
যুদ্ধের পর তারা এ দেশ ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু যুদ্ধের পর ভারত ছেড়ে চলে
যাওয়া দূরের কথা উল্টো একটু লজ্জ্বিত না হয়ে সমগ্র এশিয়ায় বিশেষ করে ভারতীয়
উপমহাদেশে তাদের উপনিবেশিক শোষণ চাপিয়ে দেয়। যার ফলে তখনকার মুসলিম ও
হিন্দু নেতৃবৃন্দ যুদ্ধের বিপক্ষেই মত দিতে লাগলেন। আরো দীর্ঘদিন চালিয়ে
যাওয়ায় উদ্দেশ্যে সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করে বৃটিশরা। বৃটিশ এ নীতির
বিরুদ্ধে তথা যুদ্ধের বিপক্ষে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান
বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ও সংগ্রামী পীর নুর আহমদসহ অন্যান্য
নেতৃবৃন্দ ইংরেজ সরকারের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি প্রদান করে।১০ ইংরেজ সরকার
বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মুসলিম ও হিন্দু নেতাদেরকে বশ করার চেষ্টা করতে
লাগলেন। কিন্তু দেশ প্রেমিক খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী তার
সিদ্ধান্তে অবিচল রইলেন। তৎপর চট্টগ্রামের তৎকালিন ব্রিটিশ জেলা প্রশাসক
নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের এক বৈঠকের আহ্বান করেন। ওই সময় খান বাহাদুর জালাল
উদ্দিন আহমদ চৌধুরী অসুস্থ ছিলেন। তাকে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া জেলা
প্রশাসকের অফিসে। তিনি প্রশাসক এর প্রস্তাব নাকচ করে ঘোর বিরোধীতা করেন এবং
চরম বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ক্ষিপ্ত হয়ে
জালাল উদ্দিন আহমদকে জেলে পাঠানোর হুমকি দিয়ে বলেন, ‘‘জানেন, আপনাকে আমি
এখন কারাগারে পাঠাতে পারি।’’ এ সময় অসীম সাহসী, দেশদরদী অসুস্থ জালাল
উদ্দিন আহমদ চৌধুরী বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনপূর্বক রক্ত চক্ষু রাঙিয়ে বাঘের
মতো গর্জে ওঠে জেলা প্রশাসকের উদ্যতপূর্ণ আচরনের জবাব দেন এভাবে, ‘‘মনে
রাখবেন, আপনি যদি আমাকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠান পাঠান তবে জেল হাজত
থেকেই আমি আপনাকে ভারত উপমহাদেশ থেকে বিতাড়িত করবা।’’ ১১<br />
১৯৩৫ সালের
ভারত শাসন আইনের অধীনে ভোটাধিকার ও আইন সভার সদস্য সংখ্যার যথেষ্ট বৃদ্ধি
এবং স্বায়ত্বশাসন প্রবর্তন প্রাদেশিক পর্যায়ে সরকার গঠনের গুরুত্ব বৃদ্ধি
পায়। ১৯৩৭ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রাদেশিক ও বঙ্গীয় বিধান সভার নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে বাঙলায় মুসলমানদের জন্য ১১৭টি আসনে শেরে বাংলা এ
কে ফজলুল হকের নেতৃত্বাধীন কৃষক প্রজা পার্টি এবং মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর
নেতৃত্বে মুসলীম লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। উক্ত নির্বাচনে কক্সবাজার ও
বাঁশখালী আসন থেকে চকরিয়ার খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী কৃষক
প্রজা পার্টি থেকে ও সাংবাদিক সাহিত্যিক মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী
মুসলীম লীগ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৩৭ সালের শুরুতে শেরে বাংলা এ কে
ফজলুল হক সারা বাংলায় ন্যায় কক্সবাজারে খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ
চৌধুরীর জনসভায় বক্তব্য রাখেন। কক্সবাজার শহরের জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর
বাংলাতে বিশ্রামের পর বিকেলে তৎকালিন টাউন হল ময়দানে (প্রাক্তন ইপিআর ফিল্ড
ও বর্তমানে কক্সবাজার সরকারী মহিলা কলেজ ও ডিজিএফ কক্সবাজারের অফিস)
নির্বাচনীয় জনসভায় ভাষন দেন শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক। ১২ <br />
ওই নির্বাচনে
মুসলীগ লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকীকে মাত্র ৩ ভোটে হারিয়ে
খান বাহাদুর জালাল আহমদ চৌধুরী জয়লাভ করেন। ওই নির্বাচনে শেরে বাংলা এ কে
ফজলুল হকের দল কৃষক প্রজা পার্টিও বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়। কৃষক প্রজা
পার্টি সংখ্যাগরিষ্ট অর্জন করতে না পারায় মুসলীম লীগের সাথে কোয়ালিশন
মন্ত্রী সভা গঠন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪১ সালের ২১ জুলাই
ভাইসরয় ন্যাশনাল ডিফেন্স কাউন্সিল (জাতীয় প্রতিরক্ষা কাউন্সিল)-এ যোগদান
এবং সরকারি যুদ্ধ প্রচ্ষ্টোয়র সঙ্গে সহেযাগিতা দান প্রশ্নে জিন্নাহর সঙ্গে
ফজলুল হকের মধ্যে মতবিরোধ এবং মুসলীম লীগের পার্লামেন্টিয়ান সদস্যদের
বিরোধীতার মুখে একই বছরের ১ ডিসেম্বর ফজলুল হকের প্রথম মন্ত্রী সভার পতন
ঘটে। পরে একই বছরের ১৮ ডিসেম্বর গঠিত দ্বিতীয় মন্ত্রীসভা মুসলীম লীগের
অনবরত বিরোধীতার মুখে ১৯৪৩ সালের ২৮ মার্চ ফজলুল হকের পদত্যাগের মাধ্যমে
দ্বিতীয় মন্ত্রীসভারও পতন ঘটে। ফজলুল হকের দ্বিতীয় মন্ত্রীসভা পতনের পর
অভিবক্ত বাংলার গর্ভনর কর্তৃক সর্বদলীয় মন্ত্রী সভা গঠনের ধারণা দেওয়া হলেও
কিছুদিনের মধ্যে মুসলীম লীগের নেতা খাজা নাজিমুদ্দীনকে মন্ত্রী সভা গঠনের
আহ্বান জানানো হয় এবং ১৯৪৩ সালের ২৪ এপ্রিল তিনি ১৩ সদস্য বিশিষ্ট এক
মন্ত্রী সভা গঠন করেন। এই মন্ত্রীসভায় কৃষক প্রজা পার্টি থেকে মনোনীত
কক্সবাজার আসনে নির্বাচিত বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য চকরিয়ার খান
বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীকে জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন
বিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়। ১৩ তার আমলেই বাংলা প্রদেশের (বর্তমান
বাংলাদেশ) সমস্ত থানা হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জন্য কমপক্ষে চার থেকে ৮টি
বেডের ব্যবস্থা করা হয়। <br />
ওই মন্ত্রীসভাকে বেশ কয়েকটি সমস্যাকে মোকাবেলা
করতে হয় তার মধ্যে অন্যতম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, অন্যটি সরকারের বিরোধীতা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান বাহিনী বার্মা (মিয়ানমার) দখল করে
চট্টগ্রাম উপকূলে এসে পৌঁছলে ব্রিটিশ সরকার বাংলার পতন অত্যাসন্ন ভেবে
জাপানকে ঘায়েল করার জন্য নৌ- যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অচল করে দেয় (যা
উবহধরষ ঢ়ড়ষরপু নামে অভিহিত)। খাদ্য ভান্ডার অন্যত্র সরিয়ে নেয়। এ ছাড়া
মুদ্রাস্ফীতি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের মজুতদারের ফলে
১৯৪৩ সালে বাংলায় দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এ সময় বেসামরিক সরবরাহ মন্ত্রী
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলকতায়, জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বিষয়ক
মন্ত্রী খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে এবং
রামুর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম রাজবন্দী নেতা আবদুল মজিদ সিকদার
লঙ্গরখানা ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেন। অনেকটা সফলও হয় তারা। তারপরেও সারা
বাঙলায় ৩৮ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করেন। ১৯৪৫ সালের ২৮ মার্চ বাজেট বরাদ্দের
সময় ২০ জন সরকার সমর্থক সদস্য বিরোধী দলে যোগ দিলে ১০৬-৯৭ ভোটে
নাজিম্দ্দুীন মন্ত্রী সভার পতন ঘটে। <br />
লাহোর প্রস্তাবের পর মুসলিম লীগ
পাকিস্তান আন্দোলনে শরীক হন। কক্সবাজারে পাকিস্তান আন্দোলনে যারা
গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তার মধ্যে কবির আহমদ চৌধুরী, বাঙালির মুসলিম
সাহিত্য ও সাংবাদিকতার অগ্রদূত মোহাম্মদ আবদুর রশিদ ছিদ্দিকী, ফিরোজ আহমদ
চৌধুরী, আজিজুর রহমান, সৈয়দ আহমদ ওয়ারেসি, জাফর আলম চৌধুরী, আলী হোসেন
মিয়া, পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ড নেতা আবদুল হামিদ খান, ছালেহ আহমদ কেরানী
(যিনি পাকিস্তান আন্দোলনের মিছিল করতে গিয়ে পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হন, পরবর্তীতে
ভাসানী ন্যাপ নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন মুক্তিফৌজ কমান্ডার কমরেড জাফর
আলমের বাবা), খুরশিদ আহমদ চৌধুরী, আবু আহমদ চৌধুরী, আখতার কামাল চৌধুরী,
মির কাসেম চৌধুরী, টেকনাফের নজির আহমদ চৌধুরী, রামুর আফসার কামাল চৌধুরী,
জেলা মুসলিম ছাত্রলীগ নেতা টেকনাফের আবদুল গফুর চৌধুরী, উখিয়ার নুর আলী
চৌধুরী, সুলতান আহমদ চৌধুরী, খুরশিদ আহমদ চৌধুরী ১৪প্রমুখ।<br />
পাকিস্তান
আন্দোলনকে ইস্যু করে অনুষ্ঠিত ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে
কক্সবাজার ও বাঁশখালী নিয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকায় পেকুয়ার জমিদার মুসলীম
লীগ নেতা কবির আহমদ চৌধুরী মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকীকে পরাজিত করে
নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে অপর প্রার্থী ছিলেন কবির আহমদ চৌধুরীর ভাই ফিরোজ
আহমদ চৌধুরী কংগ্রেস এর মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করেন।<br />
এ নির্বাচনে মুসলিম
লীগ বিরোধী সংগঠন নিখিল বঙ্গীয় ইমারত প্রার্থীর আত্ম প্রকাশ ঘটে। পূর্ব
বাংলার মাওলানা আবুল মওলা মুহাম্মদ শামসুল হুদা পাঁচবাগী নেতৃত্বীধাীন
ইমারত পার্টি ৩টি আসনে প্রাথী দিয়ে একমাত্র আবুল মওলা মুহাম্মদ শামসুল
হুদা পাঁচবাগী নির্বাচিত হয়। তার ১৯৪৬ এর নির্বাচনী পোস্টারে লেখা ছিল,
মিছে কেন পাকিস্তান জিন্দাবাদ/ ইংরেজ তাড়াই পাঞ্জাবী আনতে চাই/ বাংলা নহে
স্বাধীন বাংলা চির পরাধীন/ পাকিস্তান নয় ফাঁকিস্তান/ পাকিস্তান হবে জালিমের
স্থান। ’<br />
পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পর মাওলানা আবুল মওলা মুহাম্মদ শামসুল হুদা পাঁচবাগীর কথাই সত্যে পরিণত হয়েছে। <br />
পাকিস্তান
সৃষ্টির পর ১৯৪৯ সালে প্রথম পাকিস্তান বিরাধী দল হিসেবে আওয়ামী মুসলীম লীগ
গঠিত হলে আফসার কামাল চৌধুরীসহ অনেকেই মুসলিম লীগ হতে আওয়ামী মুসলিম লীগে
যোগদান করেন। আবার অনেকেই আজীবন মুসলীম লীগার হয়ে পাকিস্তানেক টিকিয়ে রাখার
জন্য সংগ্রাম চালিয়েছেন। <br />
১৯৪৮-১৯৫২ সাল পর্যন্ত বাংলার আকাশে
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে এক তুমূল আন্দোলন সংগঠিত হয়। এ আন্দোলনে
কক্সবাজারের অনেকেই অবদান রাখেন। ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজারের প্রসঙ্গটি
পরবর্তী অধ্যায় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার’ শীর্ষক অধ্যায়ে আলোচনা করা
হবে।<br />
এরি মধ্যে ভাষাসৈনিক মৌলভী ফরিদ আহমদ বাম রাজনীতি ছেড়ে নেজামে
ইসলামীতে যোগদান করলে নেজামী ইসলাম এর সংগঠন বেশ শক্তিশালী হয়। চকরিয়ার
খতিবে আজম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ, মাওলানা মোহাম্মদ হানিফ, আবু বকর ছিদ্দিক,
মোহাম্মদ আলী, মৌলভী আহমাদুল্লাহ, নজির আহমদ চৌধুরী, ফিরোজ আহমদ চৌধুরী,
মোহাম্মদ রফিক ও বদরুদ্দোজা চৌধুরী প্রমুখ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নেজামী
ইসলামে যোগদান করলে নেজাম ইসলাম সাংগঠকিনভাবে শক্তিশালী হয় কক্সবাজারে। <br />
এ
দিকে ১৯৪৬ সালের অনুষ্ঠিত ভারতীয় উপমহাদেশের সর্বশেষ নির্বাচনের পর ১৯৫১
সালে পূর্ব বাঙলায় প্রাদেশিক আইন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও
নানা অজুহাতে মুসলীম লীগের নেতৃত্বাধীন শাসকগোষ্ঠীরা তা বিলম্ব করতে থাকে।
এর প্রতিবাদে ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বরে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানরি
সভাপতিত্বে আওয়ামী মুসলীম লীগ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা
পার্টি, মাওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলাম, খোকা রায় ও আবদুস সালাম ওরফে
বারীণ দত্তের কমিউনিস্ট পার্টি, হাজী মোহাম্মদ দানেশের নেতৃত্বাধীন
গণতন্ত্রী দলসহ কয়েকটি সমমনা দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট নামে এক নির্বাচনী জোট
গঠন করা হয়। জোটের প্রতীক নির্ধারিত হয় নৌকা। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্ন ও পূর্ব
বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন দাবিসহ ২১ দফার ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে
যুক্তফ্রন্ট ২২৩ এবং অভিবক্ত বাংলার শেষ সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিমের
নেতৃত্বাধীন খেলাফতে রাব্বানী পার্টি একটি, মুসলিম লীগ ৯টি আসন লাভ করে।
তার মধ্যে চট্টগ্রামের রাউজান আসন থেকে খান বাহাদুর ফজলুল কাদের চৌধুরী
মুসলিম লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী (স্বতন্ত্র) হিসেবে নির্বাচনের পর জয় হলে
মুসলিম লীগে যোগদান করলে মুসলিম লীগের সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১০-এ। এ
নির্বাচনে কক্সবাজার মহকুমা ও বাশখালী থানা নিয়ে তিনটি আসন নির্ধারিত করা
হয়। চকরিয়া-কক্সবাজার থানার ঈদগাঁও নির্বাচনী এলাকা নিয়ে চকরিয়া-কক্সবাজার
থানার ঈদগাঁও, কক্সবাজার-মহেশখালী-কুতুবিদয়া থানা নিয়ে
কক্সবাজার-মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসন এবং রামু, উখিয়া ও টেকনাফ থানা নিয়ে রামু
উখিয়া টেকনাফ আসন।<br />
চকরিয়া- কক্সবাজার থানার ঈদগাঁও নির্বাচর্নী এলাকায়
যুক্তফ্রন্ট তথা কৃষক প্রজা পার্টির ফিরোজ আহমদ চৌধুরী, কুতুবদিয়ার খান
বাহাদুর মকবুল আলীর চৌধুরীর পুত্র মকসুদ আহমদ চৌধুরী হাস প্রতীকে স্বতন্ত্র
প্রার্থী, মুসলিম লীগের প্রার্থী ওয়ারেসি সৈয়দুর রহমান, ছাতা প্রতীকের
স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমান। এ আসনে যুক্তফ্রন্ট তথা
কৃষক প্রজা পার্টি প্রার্থী এডভোকেট ফিরোজ আহমদ চৌধুরী বিপুল ব্যবধানে
মুসলিম লীগ প্রার্থী ওয়ারেসি ছৈয়দুর রহমানকে পরাজিত করে এমএলএ নির্বাচিত
হন। কক্সবাজার-মহেশখালী-কুতুবিদয়া আসনে যুক্তফ্রন্টের প্রাথী ছিলেন নেজামে
ইসলামের কেন্দ্রিয় নেতা খতিবে আযম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ ও কক্সবাজার মহকুমা
আওয়ামী মুসলীম লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমদ চৌধুরী। একাধিক প্রার্থী
থাকায় কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত মোতাবেক লটারির মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করা
হতো। নেজাম ইসলামীর খতিবে আজম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ লটারিতে নৌকা প্রতীক
পেয়ে সুবিধাজনক স্থানে চলে আসেন। এ আসনে মুসলীম লীগের প্রার্থী ছিলেন
এডভোকেট ফজলুল করিম, স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন কুতুবদিয়ার রশিদ আহমদ এমএ। এ
নির্বাচর্নী এলাকায় মুসলীম লীগের প্রার্থী এডভোকেট ফজলুল করিমমে বিপুল
ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে নেজামে ইসলাম তথা যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী খতিবে
আজম মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ জয়ী হন।<br />
রামু উখিয়া টেকনাফ থানা নিয়ে গঠিত
প্রাদেশিক আইন পরিষদ নির্বাচেন মুসলীম লীগের প্রার্থী জাফর আলম চৌধুরীকে
পরাজিত করে নেজাম ইসলামে কেন্দ্রিয় নেতা মৌলভী ফরিদ আহমদ জয়ীযুক্ত হন। এ
নির্বাচনে অন্য প্রার্থী ছিলেন এক সময়ের চট্টগ্রাম জেলা মুসলিম ছাত্রলীগ
নেতা টেকনাফের আবদুল গফুর চৌধুরী (স্বতন্ত্র) ও বাম নেতা অধ্যাপক আসহাব
উদ্দিন আহমদ। ১৫ ১৯৫৭ সালে গঠিত মন্ত্রীসভায় মৌলভী ফরিদ আহমদ শ্রমমন্ত্রী
নিযুক্ত হন। <br />
১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর আওয়ামী মুসলীগ লীগ
থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ নামে নামকরণ করা হয়। আফসার কামাল
চৌধুরীকে সভাপতি ও মহিউদ্দিন মোক্তারকে সম্পাদক করে কক্সবাজার মহকুমায়
আওয়ামী লীগের প্রথম কমিটি গঠিত হয়। এ কমিটিরা অন্যান্যেরা হলেন, সাংগঠনিক
সম্পাদক জালাল আহমদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ রশিদ বিএ, সলিম হক
চৌধুরী, আবু বকর ছিদ্দিকী। চকরিয়াতে আওয়ামীলীগের সংগঠক ছিলেন আজিজুর রহমান,
কুতুবদিয়ায় জালাল আহমদ চৌধুরী, মহেশখালীতে মোহাম্মদ রশিদ বিএ, রামুতে
আফসার কামাল চৌধুরী। <br />
১৯৫৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী থাকাকালিন সময়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি ও পূর্ব বাংলার
স্বায়ত্বশাসনের প্রশ্নে সোহরাওয়ার্দীর সাথে মাওলানা ভাসানীর মতবিরোধ দেখা
দেয়। ১৯৫৭ সালের ৭-৮ ফেব্র“য়ারি টাঙ্গাইলের কাগমারিতে (সন্তোষ) আওয়ামীলীগ
কাউন্সিল অধিবেশনে তা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। পাক-মার্কিন সামরিক চুক্তি বা
পাশ্চাত্য ঘেষা পররাষ্ট্র নীতির প্রশ্নে বিরোধী তীব্র আকারণ ধারণ করে।
২৫-২৬ জুলাই ঢাকার রূপমহল সিনেমা হলে ভাসানীর আহ্বানে নিখিল পাকিস্তান
গণতান্ত্রিক কর্মী সম্মেলনে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীকে সভাপতি
সভাপতি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মাহমুদুল হক ওসমানীকে সাধারণ সম্পাদক করে
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হয়। পূর্ব বাঙলার বামপন্থী সংগঠন
গণতন্ত্রী দল, পশ্চিম পাকিস্তানের ন্যাশনাল পার্টিসহ আরো কয়েকটি প্রগতিশীল এ
দলে অর্ন্তভূক্ত হয়। পাশাপাশি ১৯৫৪ সালের ২৪ জুলাই সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ
কমিউনিস্ট পার্টিও এ সংগঠনকে সমর্থন করে ন্যাপের হয়ে কাজ করে ওই সংগঠনের
নেতৃবৃন্দ। সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের অনেক আওয়ামী লীগ কর্মী ন্যাপের
রাজনীতিতে জড়িত হন। চট্টগ্রাম জেলা ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন
পেকুয়ার মাহমুদুল করিম চৌধুরী (যিনি ১৯৭৭ সালের জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে
গঠিত বিএনপিতে যোগদান করে; পরবর্তীতে বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং
চকরিয়া-কুতুবদিয়ার এমপি ছিলেন)। ১৬৬৪ সালের দিকে ন্যাপ দু ভাগে বিভক্ত হয়ে
যায়। ভাসানী চীনপন্থী এবং অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ মস্কোপন্থী। ভাসানী
ন্যাপের সংগঠক ছিলেন মুফিদুল আলম চৌধুরী, আব্বাস উদ্দিন আহমদ, শামসুল হুদা
ছিদ্দিকী প্রমুখ। কক্সবাজারে মস্কোপন্থী তথা ন্যাপ (মোজাফ্ফর) ন্যাপকে
সংগঠিত করার প্রয়াস পান অগ্নিযুগ্নের বিপ্লবী এডভোকেট সুরেশ সেন, ডা.
হরিমোন চৌধুরী, আব্বাস উদ্দিন আহমদ, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, প্রফেসর মোশতাক
আহমদ, ইলিয়াছ মাস্টার (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), ইদ্রিস আহমদ, নুর বক্স,
ইব্রাহিম আজাদ, আকতার আহমদ, দীপক বড়–য়া, নুরুল আলম, প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম,
মোক্তার আহমদ প্রমুখ। <br />
১৯৫৮ সালের ১৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে শ্রমিক সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন। ওই দিন মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামের নেতাদের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন এবং জনসাধারণকে আওয়ামীলীগের পতাকা তলে শরীক হওয়ার আহ্বান জানান। <br />
১৬ জানুয়ারী তিনি
ইনানী ফরেস্ট রেস্ট হাউসে অবস্থান করেন। তার সাথে ইনানী ফরেস্ট ডাক
বাংলোতে যাত্রী যাপন করেন মনসুর আলী, ডিফিও মাহমুদ, তৎকালিন ভারপ্রাপ্ত
মহকুমা প্রশাসক এন. আহমদ, বঙ্গবন্ধুর প্রাইভেট সেক্রেটারি এ. সুলতান
প্রমুখ।১৬<br />
এ দিকে ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর সামরিক শাসন জারির ফলে অনেকে আত্মগোপনে থাকলেও
আবার অনেকেই ভয়ে ফজলুল কাদের চৌধুরী নেতৃত্বাধীন কনভেনশন মুসলীগে যোগদান
করেন। এসময় মুসলীম লীগ (কাউয়ুম), মুসলীম লীগ ( কাউন্সিল) নামে হলেও
কক্সবাজারে মূলত কনভেনশন মুসলীম লীগের রাজনীতি বিদ্যমান ছিল। কক্সবাজারে
আওয়ামী রাজনীতি ছেড়ে যারা কনভেনশন মুসলীমে যোগদান করেন তার মধ্যে ১৯৫৪
সালের কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ
রশিদ বিএ অন্যতম।<br />
১৯৬২ সালের পাকিস্তানের ৩য় নির্বাচনে কক্সবাজার
মহকুমা ও বাঁশখালী থানা নিয়ে গঠিত জাতীয় পরিষদ আসনে নেজামে ইসলামী পার্টির
মৌলভী ফরিদ আহমদ মুসলিম লীগের প্রার্থী স আ ম শামসুল হুদা চৌধুরীকে পরাজিত
করে জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই আসনের অপর প্রার্থী ছিলেন ফিরোজ
আহমদ চৌধুরী। <br />
চকরিয়া থানা ব্যতিত টেকনাফ থেকে কুতুবদিয়া আসনে স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হন জাফর আলম চৌধুরী। চকরিয়া ও
বাঁশখালী আসনে আজিজুর রহমান প্রকাশ লাল আজিজকে পরাজিত করে বাশখালীর জাকেরুল
আলম চৌধুরী এমএল এ নির্বাচিত হন। <br />
১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলনকে কেন্দ্র
করে কক্সবাজারে ছাত্র ইউনিয়নের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত
কক্সবাজার কলেজ এম ইদ্রিস আহমদ, নুর বক্স, সুভাষ দে, সিরাজুল মোস্তফা, আবুল
কাসেম ফেরদৌস, মোশতাক আহমদ প্রমুখ ছাত্র নেতারা বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনসহ
প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করে। ১৯৬২ সালে কক্সবাজার
হাই স্কুলের ছাত্র কামাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে সংগঠিত হয় ছাত্রলীগ। ছাত্র
ইউনিয়ন ও ছ্ত্রালীগের নেতারা বাষট্টির শিক্ষা আন্দোনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান
রাখেন। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনের বিস্তারিত পরবর্তীতে জানা যাবে।<br />
১৯৬৫
সালে চকরিয়া ব্যতিত কক্সবাজার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে গঠিত কনভেনশন
মুসলীমের প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী নেজামে ইসলামীর শক্তিশালী প্রার্থী
মৌলভী ফরিদ আহমদকে পরাজিত করে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন।
পরে মৌলভী ফরিদ আহমদ আইনী লড়াইয়ের মাধ্যমে তার জয় নিশ্চিত করেন। <br />
কক্সবাজার
মহকুমা আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী জাফর আলম চৌধুরী মুসলীম লীগের প্রার্থী স আ
ম সামশুল হুদা চৌধুরীকে পরাজিত করে এমএলএ নির্বাচিত হন। এ আসনের অন্যতম
প্রাথী ছিলেন টেকনাফের আবদুল গফুর র্চৌধুরী। চকরিয়া ও সাতকানিয়া (আংশিক)
আসনে কনভেনশন মুসলীগের প্রার্থী আজিজুর রহমান প্রকাশ লাল আজিজ জয়ী হন। ১৯৬৬
সালের ছয় দফা, উনসত্তরের গণঅভুত্থান, সত্তরের নির্বাচন প্রসঙ্গ পরবর্তী
আলোচনায় আলোচনা করা হবে। <br />
ষাটের দশকে জামায়াত বেশ সংগঠিত হয়ে উঠে।
কক্সবাজার মহকুমা জামায়াতের নেতৃত্বে ছিলেন এডভোকেট সালামত উল্লাহ, মাওলানা
মোক্তার আহমদ (খরুলিয়া), মাওলানা আবু ছাবের (ঝিলংজা), মাওলানা আবদুল গফুর,
মোখতার আহমদ চৌধুরী (চকরিয়া), আবুল কাসেম মিয়ান (মহেশখালী), রুহুল আমিন
(হারবাং), রুহুল কাদের চৌধুরী (চকরিয়া), জিন্নাত আলী, মৌলভী অলি আহমদ
প্রমুখ।<br />
ষাটের দশকে মুসলিম লীগ নেতার মধ্যে ছিলেন মকসুদ আহমদ চৌধুরী, স আ
ম শামসুল হুদা চৌধুরী, জাফর আলম চৌধুরী, রফিক আহমদ চৌধুরী, আবদুল গফুর
চৌধুরী, নজির চেয়ারম্যান, আলী হোসেন মিয়া, মৌলভী জকরিয়া, মকবুল আহমদ সিকদার
(উখিয়া), জালাল আহমদ ফরাজি (ঈদগাঁও), মীর কাসেম চৌধুরী (হলদিয়া পালং),
হাসেম চৌধুরী (রতœা পালং), মাওলানা আফজাল আলী, মাওলানা আমজাদ আলী, আবুল
কাসেম মাস্টার, প্রমুখ। পরে মুসলীম লীগ তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। কাউয়ুম ও
কাউন্সিল মুসলীম লীগের সক্রিয় না থাকলেও কক্সবাজারের অনেক প্রভাবশালী
মুসলীম লীগ নেতা কনভেনশন মুসলীম লীগে যোগ দেয়ায় এ সংগঠনের প্রভাব ছিল বেশী।
কনভেনশন মুসলীম লীগের নেতার মধ্যে রয়েছে জালাল আহমদ চৌধুরী, জাফর আলম
চৌধুরী এমএলএ, আবদুল গফুর চৌধুরী মোহাম্মদ রশিদ বিএ, এডভোকেট মইদুর রহমান
চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, আবদুস সালাম মিয়া, আব্বাস আহমদ চৌধুরী, আবদুল
জাব্বার সিকদার, প্রমুখ। <br />
১৯৬৭ সালের দিকে নেজামী ইসলাম থেকে বের হয়ে
নুরুল আমিন ও মৌলভী ফরিদ আহমদের নেতৃত্বে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি
(পিডিপি) গঠন করা হয়। মৌলভী ফরিদ আহমদ কক্সবাজারের সন্তান হওয়ায় এর প্রভাব
কক্সবাজারেও ছিলো। পিডিপি সংগঠকদের মধ্যে ছিলেন চকরিয়ার এমএলএ আজিজুর রহমান
প্রকাশ লাল আজিজ, উখিয়ার মোক্তার আহমদ চৌধুরী, নজির আহমদ, আমিন মিয়া
প্রমুখ। <br />
১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত প্রিয় মাতৃভূমি পূর্ব বাংলাকে
প্রতিক্রিয়াশীল শাসকগোষ্ঠী বিশেষ করে সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ ও একচেটিয়া
পুুঁজির শোষণ থেকে মুক্ত করে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার
মাধ্যমে শ্রমিক কৃষক জনতার মুক্তির পথ উন্মুক্ত করার শপথ নেয় ছাত্রলীগ ও
ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছাত্র সমাজের রয়েছে
গৌরবদ্বীপ্ত অংশ গ্রহণ। বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিজয়ের
সর্বশেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সে সব ছাত্র নেতা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাদের
মধ্যে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা মহকুমা ছাত্র ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ
সুভাষ দে (মুক্তিযুদ্ধে শহীদ), ইদ্রিস আহমদ (১৬৬৪-৬৫ সেশনে কক্সবাজার
সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি), নুর বক্স (১৬৬৪-৬৫ সেশনে কক্সবাজার সরকারী
কলেজ ছাত্র সংসদের জিএস, ১৯৮৫-৯০ পর্যন্ত মহেশখালী উপজেলা পরিষদের
চেয়ারম্যান এবং জাপার কেন্দ্রিয় প্রেসিডিয়াম সদস্য থাকাকালে প্রয়াত হন),
পিযুষ কান্তি চৌধুরী, গোরাঙ্গ দাশ, লক্ষ্মণ দাশ, সুভাষ পাল, আবুল কাসেম
ভুলু, রামুর দীপক বড়ুযা, উদয়ন বড়–য়া, সৈকত বড়–য়া, কল্লোল বড়–য়া, উখিয়ার
শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, সুরক্ষিত বড়–য়া১৭, কক্সবাজার কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি
বাদশা মিয়া চৌধুরী, বাহারছড়ার রামানন্দ সেন, এস এম আমিনুল হক চৌধুরী
(সাংবাদিক), অমল ধর, গিয়াস উদ্দিন ম. আ. আউয়াল (মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে
বাংলাদেশের তথ্য সচিব হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত), রাখাল চন্দ্র পাল, সিরাজুল
মোস্তফা (কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ থেকে অবসরপ্রাপ্ত),
অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম জোসেফ, ফয়েজুল আজিম জেকব (বতর্মানে চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের প্রফেসর ও প্রচ্ছদশিল্পী), পেকুয়ার মো.
মোস্তফা, কুতুবদিয়ার সাইফুল্লাহ খালেদ (১৯৭৩ সালে ভাসানী ন্যাপ কক্সবাজার
জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৮৭ সালে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সাংগঠনিক
সম্পাদক এব্ং পরবর্তীতে জেলা বিএনপির সহ সভাপতি), দীলিপ দাশ (বর্তমানে
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কক্সবাজার জেলা সভাপতি), উখিয়ার আবুল কাশেম
প্রকাশ মামা কাশেম, পিএমখালীর নাছির উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, দেব্রবত চৌধুরী১৮,
মহেশখালীল মীর কাসেম, আ.ফ. ম একরামুল হক, এম এ সিরাজ, নারায়ন চক্রবর্তী,
নিহার কান্তি বড়–য়া প্রমুখ। ছ্ত্রালীগ নেতাদের মধ্যে কামাল হোসেন চৌধুরী,
মোহাম্মদ মোস্তফা, নজরুল ইসলাম চৌধুরী, সাকের আহমদ, কৃষ্ণ প্রসাদ বড়–য়া,
প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, ২০০৮ সালে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃতি ফুটবলার সুনীল
কৃষ্ণ দে (তখনকার ছাত্রলীগ নেতা), হাবিবুর রহমান, একেএম মনসুরুল হক, আল
মামুন শামশুল হুদা মান্নু, মুজিবুর রহমান, রামুর মনোহরি বড়–য়া, নাসির
উদ্দিন, এবং উখিয়ার দিদারুল আলম চৌধুরী, আবদুল জব্বার চৌধুরী, সন্তোষ কুমার
বড়–য়া, শাহজাহান চৌধুরী (সাবেক সাংসদ), আবদুল করিম, মহিউদ্দীন চৌধুরী
(মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকাকালে প্রয়াত),
ফজলুল করিম (বর্তমানে কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ), চকরিয়ার শাহনেওয়াজ চৌধুরী,
রামুর তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী, মনির মিয়া, রাজারকুলের জাফর আলম চৌধুরী, রশিদ,
হারুন, নাসির, ইলিয়াছ, খুরুস্কুলের মোস্তাফিজুর রহমান, কক্সবাজার শহরের
টেকপাড়ার গোলাম হাছান, এজাজুল ওমর বাট্টু, ছুরত আলম, নুরুল আবছার, স.ম
নুরুন্নবী, বদরখালীর আব্দুল হাকিম চাষী, মহেশখালীর সিরাজুল মোস্তফা, আবদুর
রশিদ, আজিজুর রহমান, কুতুবদিয়ার মেজবা উদ্দিন, কুতুবদিয়ার আবদুল মাবুদ
সিকদার, আবদুল মোতালেব ও জালাল আহমদ, ইনানীর আবুল কালাম আজাদ, টেকনাফ থানা
ছাত্রলীগের সভাপতি সলিম উল্লাহ, সেক্রেটারি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সাংগঠনিক
সম্পাদক কামাল উদ্দিন টকনাফের মোহাম্মদ আলী (সাবেক সাংসদ) ও বাহারছড়ার
আব্দুছ সালাম, নেজামুল হক প্রমুখ। এ সময় পাকিস্তানপন্থী ইসলামী ছাত্র সংঘ,
ইসলামী ছাত্র সমাজ, এনএসফ এর সক্রিয় সংগঠন ছিলো। ইসলামী ছাত্র সংঘের
নেতৃত্বে ছিলেন এনামুল হক মঞ্জু, কোরবান আলী, শাহজালাল চৌধুরী, কোরবান আলী,
জিন্নাত আলী, শেখ শাহাব উদ্দিন, দানেশ, আফজাল আহমদ, রুহুল আমিন প্রমুখ। <br />
ইসলামী ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে ছিলেন নুরুল হক আরমানসহ অন্যান্যরা। <br />
মুসলীম
লীগের ছাত্র সংগঠন এনএসএফ এর সক্রিয় সংগঠন ছিল কক্সবাজারে। মুসলিম লীগের
প্রাধাণ্য থাকায় দাপুটের সাথে দাপিয়ে বেড়াত এ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এনএসএফ
নেতাদের মধ্যে ছিলেন শওকত আলী, আবদুস সালাম, আহেমদুল হক চৌধুরী, কাইয়ুম
চৌধুরী, হোসেন ইমাম চৌধুরী, আতাউর রহমান, নুরুল ইসলাম, মাহমুদুল হক ওসমানী,
আবু হায়দার ওসমানী প্রমুখ। <br />
ঋণী :<br />
১. সত্যেন সেন, বৃটিশবিরোধী
স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা, ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশনালয় এর তৃতীয়
প্রকাশ-মার্চ ২০১১, পৃ : ৯৩<br />
২. ভারতবর্ষের ইতিহাস, কোকা আন্তোনভা,
গ্রিগোরি বোন্গার্দ-লেভিন, গ্রিগোরি কতোভ্স্কি (অনুবাদ, মঙ্গলাচরণ
চট্টোপাধ্যায়, দ্বিজেন শর্মা ), প্রগতি প্রকাশন, মস্কো এর দ্বিতীয় সংস্করণ
১৯৮৬, পৃ : ৫৪২-৪৩।<br />
৩. 3. Professor Mushtaque Ahmad, Glimpses of Cox’sBazar, 1995, Cox’s Bazar Foundation, P : 185.<br />
4. Professor Mushtaque Ahmad, Glimpses of Cox’sBazar, 1995, Cox’s Bazar Foundation, P : 323.<br />
৫. শফিউল আলম, মোহাম্মদ আবদুর রশিদ সিদ্দিকী, ফেব্র“য়ারি ১৯৯০, ঢাকা : বাংলা একাডেমী, পৃ : ৩৩-৩৪<br />
৬.
ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার ১৮ এপ্রিল যুববিদ্রোহ বা চট্টগ্রাম
অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের ঘটনাকে ‘ভারতের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সবচেয়ে
সাহসিকতাপূর্ণ কাজ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। “যা ছিল দেড়শত বছরের ইতিহাসের
মধ্যে ইংরেজ জন্য খুবই অপমানজনক ঘটনা। ইংরেজ বাহিনী এদেশের মানুষের কাছে
প্রথম পরাজয়”। এ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে গোটা ভারতেই বিপ্লবী সংগ্রামের এক
ঝড় ডেকে আনে। ১৯৩৩-৩৪ সালের সরকারি রিপোর্টেও এর স্বীকৃতি মেলে। তদানীন্তন
কলকাতা পুলিশের প্রধান কুখ্যাত চার্লস টেগার্ট ১৯৩৪ সালে অবসর নিয়ে দেশে
ফিরে যাওয়ার সময় তেহরান বিমানবন্দরে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন,
""Chittagong is the mastermind of Bengal revolutionary activities."
অর্থাৎ চট্টগ্রামই বাংলার বিপ্লবী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। (সূর্যসেন
স্মৃতি : বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম স্মৃতিসংস্থা, কলকাতা)। মাস্টারদার আরেক
সহযোগী লোকনাথ বল চট্টগ্রাম যুববিদ্রোহের মূল্যায়ন করতে গিয়ে পরবর্তীকালে
বলেছিলেন, "চট্টগ্রামের বিপ্লবী যোদ্ধাদের পেছনে ছিল না কোনো অনুকূল
আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি, ছিল না বৈদেশিক শক্তির সক্রিয় সমর্থন। শুধুমাত্র
নিজেদের শক্তির ওপর নির্ভর করে পরাধীন দেশের বুকে তারা জ্বালিয়েছিল
স্বাধীনতার আলো, ভারতবর্ষের পূর্ব সীমান্তের চট্টগ্রাম শহরকে পরাক্রান্ত
বৈদেশিক শক্তির কবল থেকে থেকে মুক্ত করে বিজয়দর্পে উড়িয়েছিল স্বাধীনতার জয়
পতাকা। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিত্তিমূল পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল চট্টগ্রামের
বিপ্লবীদের দুর্জয় আঘাতে, সমস্ত ভারতবর্ষ হল স্তম্ভিত -- স্বাধীনতাকামী
তরুণ-তরুণীদের বুকের রক্তে লাগল প্রলয় দোলা। দু'শ বছরের গোলামীর বিরুদ্ধে
চট্টগ্রামের বীর যোদ্ধারা শুরু করল রক্তাক্ত অভিযান। বাংলার ও ভারতের দিকে
দিকে জ্বলে উঠল বিদ্রোহের আগুন।" (বিস্তারিত দেখুন-চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার
লুণ্ঠন : চারুবিকাশ দত্ত, কলকাতা)<br />
৭. অশোক মুখ্যোপাধ্যায়, সূর্য সেন, ঢাকা : লানন্দা প্রকাশন, নভেম্বর ২০০৮, পৃ : ৩৩।<br />
৮. মালিক সোবহান, কক্সবাজার চরিত- কোষ, জুলাই ২০০৭, কক্সবাজার : কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী, পৃ: ৫৭-৫৮<br />
৯. ঈশান সামী, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ফেব্র“য়ারি ২০১১, ঢাকা : কথা প্রকাশ, পৃ : ৭৯<br />
১০.
ড. রাগেব আহসান, খান বাহাদুর জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, মাজেদ ইবনে এয়ার
সম্পাদিত ‘প্রবাল’, কক্সবাজার সমিতি-চট্টগ্রাম, ১৯৭০, পৃ : ২৭<br />
১১. বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী, ‘বিচিত্র ভাবনা’, ঢাকা : গুন নাহার জাহান আরা ফাউন্ডেশন, ফেব্র“য়ারি ২০১৪, পৃ :৫৫<br />
১২. মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, কক্সবাজারের আলোকিত মানুষ, ফেব্র“য়ারি ২০০৩, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী, পৃ : ২১।<br />
১৩.
ড. হারুন-অর-রশিদ, ‘বাংলাদেশ: রাজনীতি সরকার শাসনতান্ত্রিক উন্নয়ন
১৭৫৭-২০০০’, ১ ফেব্র“য়ারি ২০০১, ঢাকা: নিউ এজ পাবলিকেশন্স, পৃ : ১১৭।<br />
১৪.
ডা. মাহফুজুর রহমান, ‘বাঙালির জাতীয়তাবাদী মুক্তিসংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে
চট্টগ্রাম’, ২৬ মার্চ ১৯৯৩, চট্টগ্রাম : বাংলাদেশ মুক্তিসংগ্রাম ও
মুক্তিযুদ্ধ গবেষনা কেন্দ্র, পৃ : ৪৭২। <br />
১৫. অ্যাডভোকেট জহিরুল
ইসলাম, বাংলাদেশের রাজনীতি : আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি,
ফেব্রুয়ারি ২০১২, ঢাকা : অঙ্কুর প্রকাশনী, পৃ:৪৯৫।<br />
১৬. আহমদ শামীম আল রাজী, উখিয়া, আগস্ট ২০০৮, পৃ : ৯২<br />
১৭. ড. প্রণব কুমার বড়–য়া, মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বৌদ্ধ সম্প্রদায়, ফেব্র“য়ারি ১৯৯৮, ঢাকা : বাংলা একাডেমী, পৃ : ৫৯। <br />
১৮.
বালাগাত উল্লাহ, মু্িক্তসংগ্রামে চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ, গেরিলা,
মুক্তিযুদ্ধকালীন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা বাহিনী,
বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কমান্ড, ২২ এপ্রিল ২০১১, পৃ: ২৭।</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-36610379998266054612014-07-02T03:49:00.000-07:002014-07-02T03:49:33.919-07:00রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলনে কক্সবাজার<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
মাতৃভাষা সাথে একটি জাতির জাতিসত্তা অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। আত্মমর্যাদা
সম্পন্ন জাতির কাছে মাতৃভাষা এক মূল্যবান সম্পদ তা আমাদের সকলেরই জানা। ওই
অমোঘ সত্য উপলব্ধি করে ষোল শতকের কবি সৈয়দ সুলতান (জন্ম চক্রশালা-পটিয়া)
তাঁর ‘ওফাতে রসুল’ গ্রন্থে লিখেন,</div>
<div style="text-align: justify;">
‘ বঙ্গদেশী সকলের কিরূপে বুঝাইবে</div>
<div style="text-align: justify;">
বাখানি আরব ভাষা এ বুঝাইতে নারিব</div>
<div style="text-align: justify;">
যারে যেই ভাষে প্রভূ করিল সৃজন</div>
<div style="text-align: justify;">
সেই ভাষে হয় তার অমূল্য ধন।’’</div>
<div style="text-align: justify;">
যারে যেই ভাষে প্রভূ করিল সৃজন</div>
<div style="text-align: justify;">
সেই ভাষে হয় তার অমূল্য ধন।’’</div>
<div style="text-align: justify;">
সন্দ্বীপ নিবাসী কবি আবদুল হাকিম তাঁর গ্রন্থে লিখেন,</div>
<div style="text-align: justify;">
যে সব বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী</div>
<div style="text-align: justify;">
সে সবা কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি</div>
<div style="text-align: justify;">
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মন ন যুরায়</div>
<div style="text-align: justify;">
নিজ দেশ তেয়াগি কেন বিদেশে ন যায়।</div>
<div style="text-align: justify;">
মাতা পিতামহক্রমে বঙ্গেতে বসতি</div>
<div style="text-align: justify;">
দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি</div>
<div style="text-align: justify;">
রামু নিবাসী মধ্যযুগের কবি নসরুল্লাহ খোন্দকার তাঁর ‘মুসার সওয়াল’ গ্রন্থে লিখেন,</div>
<div style="text-align: justify;">
বুঝিবারে বাঙ্গালা সে কি ভাবের বাণী</div>
<div style="text-align: justify;">
আপনে বুঝন্ত যদি বাঙ্গালের গণ।</div>
<div style="text-align: justify;">
ইচ্ছা সুখে কেহ পাপে না দেয়ন্ত মন</div>
<div style="text-align: justify;">
অর্থাৎ ধর্ম কথা বাঙ্গালায় বুঝিলে কেহ স্বেচ্ছায় পাপে মন দিবেনা।</div>
<div style="text-align: justify;">
কায়েমীস্বার্থবাদী মহল ও ভাষা সংস্কৃতিতে আক্রমণকারী প্রতিক্রিয়াশীল
গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভাষা আন্দোলনের মূল আঘাতটি ১৯৫২ সালে হলেও এ আন্দোলনে এক
দিনে হয়ে উঠেনি। বাঙালির দীর্ঘদিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল এ আন্দোলন। ১৯০০
খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলা ভাষার পক্ষে কলম সৈনিকরা কলম ধরেছেন। প্রাপ্ত তথ্য
মোতাবেক বাংলা ভাষা পক্ষে প্রথম উচ্চারণ হয় রাজশাহী। রাজশাহী থেকে
প্রকাশিত ‘নুর-আল-ইমান’ পত্রিকার ভাদ্র ১৩০৭ সংখ্যায় ওই পত্রিকার সম্পাদক
মির্জা মোহাম্মদ ইউসুফ আলী ঊর্দু বাঙালি অনুগতদের ‘খেদমৎগার’ হিসেবে উল্লেখ
করে লিখেন:</div>
<div style="text-align: justify;">
‘‘ শরীফ সন্তানেরা এবং তাহাদের খিদমাৎগারগণ ঊর্দু বলেন, বাংলা ভাষা ঘৃণা
করেন, কিন্তু সেই ঊর্দু জবানে মনের ভাব প্রকাশ করা তো দূরে থাকুক, পশ্চিমা
লোকেরা লিখিত শব্দগুলিও অনেকে যথাস্থানে শুদ্ধ আকারে যথার্থ অর্থে প্রয়োগ
করিতেও অপারগ। অথচ বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করিবার সুবিধা হইলেও ঘৃণা করিয়া
তাহা হইতে বিরত হন…. সতেজ স্বাভাবিক বাংলা ভাষা স্বাধীনতা পাইলে তৎসঙ্গে
মুসলমান সমাজের উন্নতির যুগান্তর উপস্থিত হইবে। ১</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯০৬ সালে ঢাকায় নিখিল ভারত মুসলীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে, সে অধিবেশনেও
রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নটি ওঠে। ১৯০৭ সালে বিপ্লবী আবদুর রসুল ও আবদুল হালিম
গজনবীর উদ্যোগে একটি কোম্পানী লিমিটেড কর্তৃক প্রকাশিথ ‘ দি মুসলমান’
পত্রিকার সম্পাদক মজিবর রহমান এসব উর্দুভাষী বাঙালি ঘৃণা করে ‘দি
মুসলমান’পত্রিকাায় কলম ধরেছেন। এ সম্পর্কে সত্যেন সেন ‘বৃটিশ বিরোধী
স্বাধীনতা সংগ্রামে মসুলমানদের ভূমিকা নামক গ্রন্থে লেখেন</div>
<div style="text-align: justify;">
‘‘শিক্ষিত মসুলমান একটি চিন্তাধারা লক্ষ্য করা যেত তাদের মধ্যে অনেকেই
উৎপত্তি ও সংস্কৃতির দিক দিয়ে নিজেদের বাঙালি পরিচয় বলে স্বীকার করতে
চাইতনা এবং বাংলা ভাষী হওয়া সত্বেও ঊর্দুকে নিজেদের ভাষা বালে দাবী করতেন।
‘দি মসুলমান’ পত্রিকা সব সময় এই লজ্জাকর মনোবৃত্তির উপর তীব্র কষাঘাত করে
এসেছে। ২</div>
<div style="text-align: justify;">
মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের দাবিটি সম্ভবত প্রথম তুলেন চট্টগ্রামের
পটিয়ার কৃতি সন্তান আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ। ১৯১৮ সালে ভাষা বির্তক
চলাকালে ‘আল ইসলাম’ পত্রিকার আশ্বিন ১৩২৫ সংখ্যায় প্রকাশিত ‘বঙ্গভাষা ও
সাহিত্য বনাম বঙ্গীয় মুসলমান’ নামক প্রবন্ধে লিখেন,</div>
<div style="text-align: justify;">
‘ মাতৃভাষাকে জাতীয় ভাষার স্থলে বরণ করা ব্যতিত কোন জাতি কখনও উন্নতির সোপানে আরোহন করতে পারেনা।’</div>
<div style="text-align: justify;">
এ দিকে বৃটিশ ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলন ধীরে ধীরে শক্তিশালী হযে উঠতে থাকলে
নতুন করে বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রীয় ভাষা মর্যাদা নিয়ে আলাপ আলোচনা
শুরু হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গান্ধী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে চিঠি লিখে
জানতে চান, ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে তার সাধারণ ভাষা কী হতে পারে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতের সাধারণ ভাষা হিসেবে হিন্দীর পক্ষে অভিমত জ্ঞাপন
করেন।৩ বাংলার বাইরে অন্যান্য প্রদেশের মুসলমানদের রায় ছিল ঊর্দুর পক্ষে।
অপরদিকে বাঙালি মুসলমানদের মধ্য থেকে বাংলার পক্ষে আওয়াজ ওঠে। ১৯১৮সালে
রবীন্দ্রনাথ এ বিষয়ে আলোচনার জন্য শান্তি নিকতনে এক আলাচনা সভার আয়োজন
করেন। সারা ভারত থেকে আগাত ভাষাতত্ত্ববিদদের সামনে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
একটি প্রবন্ধ পাঠ করে ভারতবর্ষের সাধারণ ভাষার হওয়ার যোগত্যা রাখে বাংলা,
হিন্দু ও উর্দু</div>
<div style="text-align: justify;">
কথা উল্লেখপূর্বক সাধারণ ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরে শুধু
ভারত কেন, সমগ্র এশিয়া মহাদেমেই বাংলা ভাষার স্থান হবে সর্বোচ্চ এবং ভাব
সম্পদ ও সাহিত্যগুনে বাংলা ভাষা এশিয়া ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে অদ্বিতীয় বলে
উল্লেখ করেন। ড. শহীদুল্লাহর সুক্ষ্মদর্শী প্রস্তাবনা সত্বেও অনাগত স্বাধীন
ভাষতবর্ষে রাষ্ট্রভাষা বির্তক প্রধানত হিন্দু ও উর্দুর মধ্যে সীমাবদ্ধ
থাকে। হিন্দুরা হিন্দু পক্ষে, মুসলমানরা উর্দুর পক্ষে। তবে এ হিন্দু ও
উর্দু বির্তকের ডামাডোলের মধ্যে বাঙালি মুসলমানদের চিন্তাধারা বাংলা ভাষার
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সব সময় এক বিশেষ স্থান লাভ করে। ১৯২১ সালে বৃটিশ
সরকারের কাছে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য লিখিতভাবে দাবী উত্থাপন করেন
সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী দাবিনামায় তিনি বলেন, ‘ভারতের রাষ্ট্রভাষা যাই হোক,
বাংলার রাষ্ট্রভাষা করতে হবে বাংলাকে।’৪</div>
<div style="text-align: justify;">
বাঙলা ভাষী শিক্ষার্থীদেরকে উর্দুর মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা দানের প্রচলিত
প্রথার বিরুদ্ধে ‘সওগাত’ প্রতিবাদ জানায় ১৯২৬ সালে। ১৯৩৭ সালে মুসলীম লীগের
সভাপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ জিন্নাহ উর্দুকে দলের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে
প্রবর্তনের উদ্যোগ নিলে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে বাঙালি
প্রতিনিধিদের বিরাধীতায় সে উদ্যাগ সফল হয়নি। মাতৃভাষাকে সকল পর্যায়ের
শিক্ষার মাধ্যমরূপে গ্রহণ করার জন্য শিখা গোষ্ঠীও সংঘটিতত আন্দোলন চালায় এ
সময় থেকেই। এ পটভূমিকায় ড. আনিসুজ্জামান লিখেন.</div>
<div style="text-align: justify;">
এটা মোটেও আশ্বর্য ছিল না যে,, রামের জন্মের আগে রামায়নের মতো, পাকিস্তান
প্রতিষ্ঠার আগেই তার রাষ্ট্রভাষার বিষয়টি আলোচিত হয়। ১৯৪৭ সালের ৩ জুন
ভারতের গর্ভণর জেনারেল লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন এর নেতৃত্বে মাউনব্যাটেন
পরিকল্পনা ঘোষনার পরপরই আবদুল হক ও মাহবুব জামাল জাহেদীর মতো তরুন লেখক এবং
ড. শহীদুল্লাহর মতো প্রবীণ ভাষাবিদ ও শিক্ষাবিদ দেশের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা
হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দানের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন। ‘মিল্লাত’,
‘ইত্তেহাদ’ সেই মত প্রকাশ করেন এবং গণ আজাদী লীগের ঘোষণা পত্রে এ দাবী
লিপিবদ্ধ হয়। ৫</div>
<div style="text-align: justify;">
১৩৪৫ বাংলা সনে ভারতে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ
সম্পর্কে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় ভারতের রাষ্ট্রভাষা সম্বন্ধে বিদ্বজ্জনের
আলোচনা’ শিরোনামে এক সংবাদ ও আলোচনায় বলা হয়, সম্প্রতি রাষ্ট্রভাষা
সম্বন্ধে আলোচনার করার নিমিত্তে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ ভবনে একটি সভার
অধিবেশন হয়। সুপন্ডিত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত মহাশয় সভাপতির আসন গ্রহণ করেন।
তিনি এবং অতুল চন্দ্রগুপ্ত, অর্ধেন্দু কুমার গঙ্গোপাধ্যায়, উপেন্দ্রনাথ
গঙ্গোপাধ্যায়, সুনীতি কমার চট্টোপাধ্যায়, খগেন্দ্র নাথ মিত্র, প্রফুল্ল
কুমার সরকার, সুন্দরী মোহন দাস ও দ্বিজেন্দ্র নাথ মৈত্র আলোচনায় অংশগ্রহণ
করেন। ‘বাংলার বহুলতার জন্য লিখিত ও অন্যান্য উপায় অবলম্বন করা উচিত: বিশেষ
প্রয়োজন ভিন্ন বাঙালি মাত্রেরই দৈনন্দিন কার্য ও ব্যবহারে বাংলা ভাষা
ব্যবহার করা কর্তব্য, বাংলাদেশ প্রবাসী অন্য ভাষাভাষী ব্যক্তিদের সহিত
যতদূর সম্ভব বাংলা ভাষায় কথোপকথন ও চিন্তার বিনিময় কর্তব্য, এই সভার মতে
ভারতীয় রাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ভাষা নির্ধারণের চেষ্টা
কালোচিত নহে ও অসমীচীন। ভারতবর্ষে পূর্ণ স্বরাজ প্রতিষ্ঠিত হইবার পর ভারতীয়
যুক্তরাষ্ট্রের অন্তভূক্ত প্রদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিবর্গ কর্তৃক
রাষ্ট্রীয় ভাষা নির্দিষ্ট হওয়া উচিত মর্মে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায়
ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার সম্ভাবনা
সম্বন্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং বলেন যে, ‘সাহিত্যের গৌরব থাকিলেই ভাষার
প্রসার হয় না।’ ব্যস, এখানেই সমাপ্তি ঘটে ভারতের রাষ্ট্রভাষা সম্বন্ধে
বিদ্বজ্জনের আলোচনা।</div>
<div style="text-align: justify;">
ইতোমধ্যে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের ভিতিত্তে শুরু হয় পাকিস্তান আন্দোলন। এ
আন্দোলনের সময় আবার ওঠে আসে রাষ্ট্রভাষা বাঙলার প্রশ্নটি। ইতোমধ্যে অনেক
লেখকরা লিখেন পাকিস্তান নিয়ে বিভিন্ন রকমের বই। ওই সব লেখকদের মধ্যে কতিপয়
লেখক উর্দু ভাষার পক্ষে লিখলেও কয়েকজন লেখক বাংলা ভাষার পক্ষেই লেখেন। তার
মধ্যে অন্যতম মুজিবুর রহমান খাঁ। মুজীবর রহমান খাঁ তার রচিত ‘পাকিস্তান’
গ্রন্থে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, ‘মুসলিম লীগ
এতদিন উর্দুকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা বলিয়া প্রচার করিয়াছে সত্য। কিন্তু যত
দিন লীগ অখন্ড ভারতে বিশ্বাসী ছিল, ততদিন তার এ দাবীর জোর ছিল। লাহোর
প্রস্তাব গৃহিত হওয়ার পর পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা বাংলা ভিন্ন আর
কিছুই হতে পারেনা। (পাকিস্তান, মুজীবর রহমান খাঁ, পৃ: ১৭২)। এ প্রসঙ্গে
তিনি আরো বলেন, ‘ভারতে উর্দুুর সাথে একমাত্র বাংলা সমমর্যাদা দাবী করিতে
পারে। এই উভয় ভাষা যেমন শব্দ সম্পদে উন্নত, তেমনই উভয় সাহিত্যও বিশ্বের বড়
বড় সাহিত্যের পার্শ্বে স্থান লাভের যোগ্য। সুতরাং নির্ভয়ে বলা যাইতে পারে,
পূর্ব পাকিস্তানে যেমন বাংলা, হিন্দুস্থানে যেমন হিন্দু, তেমনই পশ্চিমা
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হইবে উদু। ৬ মুজীবর রহমান খাঁর মতো একই ধরনের
মতামত প্রকাশ করেন হাবিবুল্লাহ বাহার এর ‘পাকিস্তান’, তালেবুর রহমানের
‘পাকিস্তানবাদের ক্রমবিকাশ’ ও ‘সর্বহারাদের পাকিস্তান’ অধ্যাপক, আবুল মনসুর
আহমদ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কবি ফররুখ আহমদ ড.ফেরদৌস খান প্রমুখরা তাদের
নিজ নিজ গ্রন্থে।</div>
<div style="text-align: justify;">
মাসিক মোহাম্মদীতে ১৩৫০ বাংলা সালের কার্তিক সংখ্যায় আবুল মনসুর আহমদ
‘পূর্ব পাকিস্তানের জবান’ শীর্ষক প্রবন্ধে রাষ্ট্রভাষা উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার
বিরোধীতা করে বলেন, ‘উর্দু নিয়ে এই ধস্তাধস্তি না করে আমরা সোজাসুজি
বাংলাকে যদি পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ও জাতীয় ভাষারূপে গ্রহণ করি,
তবে পাকিস্তান প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা মুসলিম বাংলার শিক্ষিত
সম্প্রদায় নিজেরাই পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রিক, সামাজিক, শিক্ষাগত,
অর্থনৈতিক ও শিল্পগত রূপায়নে হাত দিতে পারবো।’</div>
<div style="text-align: justify;">
কিন্তু সংখ্যায় কম হলেও ভিন্ন মতাবলম্বীদের অভাব ছিল না এ পূর্ব বাংলায়।
১৯৪৭ সালের মে মাসে হায়দ্রাবাদে অনুষ্ঠিত এক উর্দু সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে
কেন্দ্রিয় মুসলীম লীগ নেতা চৌধুরী খালিকুজ্জামান ঘোষণা করেন যে ‘উর্দু হবে
পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা।’ বিভাগপূর্বকালে ১৯৪৪ সালে পূর্ব পাকিস্তানের
তৎকালিন এক শ্রেণীর শিক্ষিত ব্যক্তির রাষ্ট্রভাষা বাংলার বিপকেটষ বক্তব্য
রাখার কঠোর সমালোচনা করে ‘পাকিস্তান : রাষ্ট্রভাষা ও সাহিত্য শীর্ষক
প্রবন্ধে কবি ফররুখ আহমদ বলেন, পাকিস্তানের অন্তত : রাষ্ট্রভাষা যে বাংলা
হবে এ কথা সর্ববাদীসম্মত হলেও আমাদের এই পূর্ব পাকিস্তানের কয়েকজন তথাকথিত
শিক্ষিত ব্যক্তি বাংলা ভাষার বিপক্ষে এমন অর্বাচীন মত প্রকাশ করেছেন যা
নিতান্ত লজ্জাজনক। বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষায় রূপায়িত করলে ইসলামী ঐতিহ্যের
সর্বনাশ হইবে এই তাদের অভিমত। কী কুৎসিত পরাজয়ী মনোবৃত্তি এর পেছনে কাজ
করছে এ কথা ভেবে আমি বিষ্মিত হয়েছি।। যে মনোবৃত্তির ফলে প্রায় ২০০ বছর
বাঙলা ভাষায় ইসলামের প্রবেশ প্রায় নিষিদ্ধ ছিল , সেই অন্ধ মনোবৃত্তি নিয়েই
আবার আমরা ইসলামকে গলাটিপে মারার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছি। (মাসিক সওগাত,
আশ্বিন সংখ্যা, ১৩৫৪)।</div>
<div style="text-align: justify;">
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার এক মাসে আগে (জুলাই মাসে) আলীগড় মুসলিম
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ অভিমত ব্যক্ত করেন, হিন্দীকে
ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর যুঙ্গিসংগত কারণে উদর্ুূকেই
পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা উচিত। ড. জিয়াউদ্দিন আহমদের বক্তব্য খন্ডন করে
২৯ জুলাই দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ‘আমাদের ভাষা সমস্যা’
নামক প্রবন্ধ লিখে জোরালো প্রতিবাদ করে রাষ্ট্রভাষারুপে বাংলার দাবী তুলে
ধরেন। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসের নির্দিষ্ট হিন্দীর অনুকরণে উর্দু পাকিস্তানের
একমাত্র রাষ্ট্রভাষারূপে গণ্য হইলে তাহা শুধু পশ্চাদগমনই হইবে।… যদি বিদেশী
ভাষা বলিয়া ইংরেজি ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের
রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ না করার পক্ষে কোন যুক্তি নাই। ….পূর্ব পাকিস্তানের
কোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার পরিবর্তে উর্দু বা হিন্দীকে গ্রহণ করা হইলে
ইহা রাজনৈতিক পরাধীনতার নামান্তর হইবে। কবি ফররুখ আহমদও কলম ধরেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
পাকিস্তান ও ভারত সৃষ্টির আগে তথা ১৯৪৭ সালের ফেব্র“য়ারির দিকে ছাত্র
ফেডারেশন কর্মী শহীদ সাবের ও সাইমুম শমসের নামে কক্সবাজারের দুই কৃতি
সন্তান কক্সবাজার থেকে জাগরণ নামে একটি সাহিত্য প্রকাশ করেন। ‘জাতীয়
জাগরনের অগ্রদূত’ স্লোগানে প্রকাশিত ‘জাগরণ’-এ বাংলা ভাষার স্বীকৃতি দানের
বিষয়টি তুলে ধরে সম্পাদকীয় লেখেন শহীদ সাবের।</div>
<div style="text-align: justify;">
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে প্রধানত দুটি পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথমত: ১৯৪৭ সাল
থেকে ১৯৫১ এবং দ্বিতীয় বা চূড়ান্ত পর্যায় বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন।
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজারের অবদান সম্পর্ক তথ্য অপ্রতুল। ঢাকা ও
চট্টগ্রাম ও অন্যান্য এলাকার ভাষা আন্দোলনের বিষয়ে যেভাবে সংবাদ প্রকাশিত
হয়েছে কক্সবাজার তা থেকে অনেক দূরে। সাংবাদিকতা জগতে তেমন সচেতন না থাকায়
এবং ওই সময়ে কক্সবাজার থেকে কোন পত্রিকা কিংবা জাতীয়/আন্তর্জাতিক পত্রিকায়
কাজ করা সাংবাদিক কর্মরত না থাকায় তেমনভাবে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা কিংবা সমকালীন বৈশ্বিক গণমাধ্যমেও এ সম্পর্কিত
তথ্য অনুপস্থিত। তবে বিভিন্ন জনের স্মৃতিকথায় এ সম্পর্কিত যৎকিঞ্চিত তথ্য
পাওয়া যায়। এজন্য এ রচনায় প্রধানত: নেতৃস্থানীয় ভাষা সংগ্রামীদের
সাক্ষাৎকারের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। ইতিহাস রচনার উৎস হিসেবে সাক্ষাৎকার
বা স্মৃতিকথার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অন্যান্য উপাদানের অভাবে প্রত্যক্ষ
অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতৃস্থানীয় ভাষা সংগ্রামীদের সাক্ষাৎকার অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। স্মৃতিকথা বা সাক্ষাৎকারগুলো ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এর
সীমাবদ্ধতা যেমন তথ্য বিকৃতি, আবেগদৃপ্ত উপস্থাপনা, কথনের অতিরঞ্জন
উপস্থাপনা প্রভৃতি ত্র“টির বিষয়ে যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯৪০ সালে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক উত্থাপিত লাহোর প্রস্তাবে ভারতের উত্তর
পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের সংখ্যাগুরু মুসলিম অঞ্চলগুলি নিয়ে ‘স্বাধীন
রাষ্ট্রসমুহ’(Indépendant States) গঠনের কথা উল্লেখ থাকলেও ১৯৪৬ সালের ৯
এপ্রিল দিল্লীতে মুসলিম আইন পরিষদ সম্মেলনে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ একে
অসাবধানপ্রসূত ও ছাপাখানার ভুল বলে উল্লেখপূর্বক ‘পাকিস্তান’ এর পক্ষে
প্রস্তাব গ্রহণ করে। ফলে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে কায়েমী স্বার্থবাদী
মহলের মিথ্যা প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে এ সময় পূর্ব বাঙলার সারা প্রদেশের
ন্যায় অধিকাংশ চট্টগ্রামবাসী পাকিস্তান আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। ১৯৪৭
সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট দ্বি-জাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান ও ভারত নামক
দুটি রাষ্ট্র সৃষ্টি করে বৃটিশরা ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত হন। ভারত বিভক্তির
সাথে সাথে পূর্বাঞ্চলের বেশিরভাগ বিত্তবান শিক্ষিত হিন্দুরা চলে গেল
পশ্চিমবঙ্গে আর বাঙালি মুসলমান যারা শিক্ষিত ও নগরকেন্দ্রিক হয়ে উঠলো তারা
যেন রাতারাতি আরব সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হযে ধর্মের আবেগে পাকিস্তানী
ভাবধারায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। ফলে সংস্কৃতির অঙ্গনে দেখা দিল শূন্যতা। তবে
বাঙালি মুসলমানদের পাকিস্তান প্রেমের আচ্ছন্নতা কেেেট যেতে বেশি সময়
লাগেনি। পাকিস্তান কায়েমের এক বছরের মধ্যে কেন্দ্রিয় সরকার পাকিস্তানের
রাষ্ট্রভাষার বিষয়টি নিষ্পত্তি না করেই এনভেলাপ, পোস্টকার্ড, ডাকটিকেট,
মানি অর্ডার, ট্রেন টিকেট ও টাকার উপর ঊর্দু এবং ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করার
মধ্য দিয়ে বাঙালির ভাষা সংস্কৃতিতে আঘাত শুরু করে। এ প্রেক্ষাপটে পটিয়ার
কৃতি সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক আবুল কাসেম
পাকিস্তান সৃষ্টির ১৭ দিনের মাথায় ১৯৪৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় গঠন করেন
‘তমদ্দুন মজলিস’। অনেকটা ইসলামী তমদ্দুনকে সমুন্নত করার প্রত্যয়ে এ সংগঠন
গঠিত হলেও এ সংগঠনই প্রথম বাংলা ভাষার দাবিতে প্রতিবাদী আন্দোলনের সূচনা
করেন। এর ধারাবহিকতায় ওই সনের ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিস থেকে প্রকাশিত
হয় ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা না ঊর্দু’ শিরোনামে পুস্তিকা। এই
পুস্তিকায় অধ্যাপক আবুল কাসেম ‘আমাদের প্রস্তাব’, অধ্যাপক ড. কাজী মোতাহের
হোসেন ‘রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা সমস্যা’ এবং আবুল মনসুর আহমদ
‘বাংলাই আমাদের রাষ্ট্রভাষা হইবে’ নামক তিনটি প্রবন্ধে লিখে রাষ্ট্রভাষা
বাংলার পক্ষে পাকিস্তান আমলে প্রথম আন্দোলন সংঘটিত করেন। ভাষা আন্দোলনের
প্রথম ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে গণ্য এ পুস্তিকা জনমনে রেখাপাত করে এবং ব্যাপক
জনমত তৈরী করে। এ অবস্থায় তমদ্দুন মজলিস হাজার হাজার মানুষের দস্তখত সংগ্রহ
করে তা স্মারকলিপি আকারে ১৯৪৭ সালের ১৭ নভেম্বর পূর্ব বাঙলার মুখ্যমন্ত্রী
খাজা নাজিম উদ্দীনকে প্রদান করে। কিন্তু এতেও শাসক দলের টনক না নড়ায়
শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্দ হয়ে সভা সমাবেশের আয়োজনে নামে। ১৯৪৭ সালের ৬
ডিসেম্বর রাষ্ট্রভাষার দাবীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম
পরিষদের পক্ষে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের প্রথম জনসভায় হয়। তমদ্দুন মজলিসের
কর্ণধার অধ্যাপক আবুল কাসেম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফরিদ আহমদ (পরবর্তীতে
মৌলভী ফরিদ আহমদ নামে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পরিচিত), অধ্যাপক মুনীর
চৌধুরী, আবদুর রহমান চৌধুরী(পরবর্তীতে বিচারপতি), পটিয়ার কৃতিসন্তান ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক এ কে এম আহসান, কল্যাণ দাশগুপ্ত,
এস. আহমদ প্রমুখ। ডাকসুর সভাপতি হিসেবে ফরিদ আহমদ বাংলাকে পাকিস্তানের
অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের সরকারী ভাষা এবং শিক্ষার মাধ্যম
করার লিখিত প্রস্তাব পেশ করে বক্তৃতা করেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
<img src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195454/xlarge/?token_id=768d08616ed6eb1cfa5f528e1131dbb8" style="align: center; border: 1px solid #ccc; clear: both;" /><img src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195455/xlarge/?token_id=768d08616ed6eb1cfa5f528e1131dbb8" style="align: center; border: 1px solid #ccc; clear: both;" /></div>
<div style="text-align: justify;">
[img|http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195454/small</div>
<div style="text-align: justify;">
<img src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195445/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="align: center; border: 1px solid #ccc; clear: both;" /><img src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195447/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="align: center; border: 1px solid #ccc; clear: both;" /><img src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195449/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="align: center; border: 1px solid #ccc; clear: both;" /><img src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195448/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="align: center; border: 1px solid #ccc; clear: both;" /><img src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195450/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="align: center; border: 1px solid #ccc; clear: both;" /><img src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195453/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="align: center; border: 1px solid #ccc; clear: both;" /><img src="http://cms.somewhereinblog.net/ciu/image/195452/xlarge/?token_id=2aa96ea456a0f5f352b375d565349861" style="align: center; border: 1px solid #ccc; clear: both;" /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
ফরিদ আহমদ তখন একদিনে যেমন ঢাবির আইনের ছাত্র, তেমনি অন্যদিকে ঢাকা
গভর্ণমেন্ট কলেজ এর ইংরেজি অধ্যাপক ছিলেন। তিনি আরেকটি প্রস্তাবে
রাষ্ট্রভাষা এবং লিংগুয়া ফ্রাংকা নিয়ে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে তার মূল
উদ্দেশ্য আসল সমস্যাকে চাপা দেয়া এবং বাংলা ভাষা ও পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি
বিশ্বাসঘাতকতা বলে মন্তব্য করা হয়।৭ সভাশেষে অধ্যাপক আবুল কাসেম এর
নেতৃত্বে একটি বিশাল মিছিল সহকারে সেক্রেটারিয়েট অভিমূখে গমন করে
মুখ্যমন্ত্রী নাজিম উদ্দিন, নুরুল আমিনর বাসভবন ও সেক্রেটারিয়েট ঘেরাও করা
হয়। ৮ এভাবে ধীরে ধীরে ভাষা আন্দোলন অঙ্কুরিত হতে থাকে। এরই মধ্যে ১৯৪৭
সালের ৩০ ডিসেম্বর তমদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে রাষ্ট্রভাষা সাব কমিটি নামে
প্রথম রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রভাষার দাবীতে গঠিত
প্রথম এ সংগ্রাম পরিষের আহ্বায়ক নিযুক্ত হন ঢাবির তরুন অধ্যাপক ড. নুরুল হক
ভূইয়া, সদস্য- অধ্যাপক আবুল কাসেম, অধ্যাপক আবদুল গফুর, গণতান্ত্রিক
যুবলীগের কমরেড মো. তোয়াহা, ডাকসু ভিপি ফরিদ আহমদ, শামসুল আলম, অলি আহাদ,
সৈয়দ নজরুল ইসলাম, চট্টগ্রামের প্রকৌশলী আজিজুর রহমান, প্রকৌশলী নুরুল
হুদা, নুরুল আলম (টাঙ্গাইল), লিলি খান, নইমুদ্দিন, আখলকুর রহমান, আবদুল
মতিন খান চৌধুরী, আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী প্রমুখ।</div>
<div style="text-align: justify;">
ইতোমধ্যে ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম পাবলিক সার্ভিস
কমিশনের পরীক্ষার বিষয় তালিকা হতে বাংলা ভাষাকে বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে ১৯৪৮
সালের ৬ জানুয়ারি ঢাকা সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজের (বর্তমানে ঢাকা কলেজ)
লেকচারার ফরিদ আহমদ পদত্যাগ করেন। (৯ জানুয়ারি ১৯৪৮, দৈনিক আনন্দ বাজার
পত্রিকা)। ভাষা আন্দোলনের জড়িত থাকার অভিযোগে পূর্ব পাকিস্তানের চীফ
সেক্রেটারি আজিজ তাকে ডেকে সতর্ক করে দিলে, তিনি সঙ্গে সঙ্গে পাবলিক
সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার বিষয় তালিকা হতে বাংলা ভাষাকে বাদ দেওয়ার
প্রতিবাদে অধ্যাপকের পদ থেকে ইস্তফা দেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
সরকারী চাকুরী থেকে ইস্তফাকারী ফরিদ আহমদ কক্সবাজারের কৃতি সন্তান হওয়ায়
চট্টগ্রাম জেলা জুড়ে এ খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অবস্থানগত দিক দিয়ে
বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণের মহকুমা কক্সবাজারের রামুতেও এ খরবটি পৌঁেছ। অনেক
আগে থেকেই তথা খেলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আবদুল মজিদ সিকদার,
মাওলানা মজহেরুল হক চৌধুরী, রাস মোহন বড়–য়ার বদৌলতে রাজনৈতিক দিক থেকে
রামুর পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। ব্রটিশ বিরোধী আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে
পরিচিত রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কক্সবাজারে এ আন্দোলনের
যাত্রা শুরু হয়। ওই স্কুলের ১০ শ্রেণীর ছাত্র মো. বদরুজ্জামান (পরবর্তীতে
ডা. এম বি জামান নামে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ), নবম শ্রেণীর
ছাত্র ওবায়দুল হক ( যিনি ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে কক্সবাজার মহকুমা থেকে
মুসলিম লীগের প্রার্থী কবির আহমদ চৌধুরী একজন ক্ষুদে কর্মী হিসেবে কাজ করেন
এবং পরবর্তীতে ফতেখাঁরকুল ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন), রসিক চন্দ্র বড়–য়া, ৮ম
শ্রেণীর ছাত্র নুরুল ইসলাম হেলালী (পরবর্তীতে অধ্যাপক, বর্তমানে বাঙলাদেশ
লেখক শিবির-চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি) প্রমুখের নেতৃত্বে তৎক্ষনাৎ ক্লাস
বর্জন করে মিছিল সহকারে বের হয়ে রামু চৌমুহনীতে মিলিত হন। এ দিকে বড় ভাইদের
মিছিলে অংশ গ্রহণ দেখে রামু সেন্ট্রাল প্রাইমারী স্কুলের ৪র্থ শ্রেণীর
ছাত্র আমিরুল কবির চৌধুরী, মোশতাক আহমদ (প্রফেসর), ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী
প্রমুখ মিছিলে যোগ দেন। মিছিল পরবর্তী সময়ে রামুর চৌমুহনীতে এক জনসমাবেশ
অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় বক্তব্য রাখেন মো. বদরুজ্জামান, ওবায়দুল হক, রসিক
চন্দ্র বড়–য়া, জাকের আহমদ চৌধুরী, মোশতাক আহমদ, ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী
প্রমুখ। ওই সমাবেশে আমিরুল কবির চৌধুরীর জীবনের প্রথম বক্তৃতা করেছেন বলে
তার ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার’ শীর্ষক লেখায় উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এ
নিয়ে দ্বিমত এই যে, চতুর্থ শ্রেণীর একজন ছাত্র হয়ে কিভাবে বক্তৃতা রাখতে
পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন অনেকে। ওই সমাবেশ থেকে রাষ্ট্রভাষা বাংলার
দাবীতে আমরণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৯৪৮ সালের ২৫ ফেব্র“য়ারি পাকিস্তান গণ-পরিষদের অধিবেশনে পূর্ব বাঙলার
সদস্য কুমিল্লার ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত গণপরিষদে বাংলা ভাষা ব্যবহারের পক্ষে
প্রস্তাব উত্থাপন করলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, পূর্ব
বাঙলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনের তীব্র বিরোধীতার মুখে তা নাকচ হয়ে
যায়। এর প্রেক্ষিতে ওই সময় তমদ্দুন মজলিস পাকিস্তানে একটি গণতান্ত্রিক
আন্দোলনের ধারা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটিতে অন্যান্য
দলের লোক অন্তর্ভূক্ত করে শামসুল আলমকে আহ্বায়ক করে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম
কমিটিকে সম্প্রসারিত করে ২ মার্চ ১৯৪৮। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটি ঢাকায় এক
সভায় মিলিত হয়ে ১১মার্চ ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিবাদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত
নেয় । ১১ মার্চের প্রতিবাদ দিবস সারা প্রদেশব্যাপী পালন করা হয়। এর প্রভাব
চট্টগ্রাম জেলা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।</div>
<div style="text-align: justify;">
১১ মার্চের প্রবল ছাত্র বিক্ষোভের পর খাজা নাজিম উদ্দিন রাষ্ট্রভাষা
সংগ্রাম পরিষদের সাথে ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। যদিও জিন্নাহ তা পরে
অস্বীকার করে ‘এটা জোর করে আদায় করা হয়েছে মর্মে ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ ঢাকার
রেসকোর্স ময়দান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তন
অনুষ্ঠানে ঘোষণা করে বলেন, The State language therefore, must obviously
be Urdu, a language that has been nurtured by a hundred million Muslims
of this sub-continent, a language understood throughout the length and
breadth of Pakistan and above all a language which, more than any other
provincial language, embodies the best that is in Islamic culture and
Muslim tradition and is nearest to the language used in other Islamic
countries.”</div>
<div style="text-align: justify;">
জিন্নাহ বক্তব্যের সময় আবদুল মতিন (ভাষা মতিন), চট্টগ্রামের পটিয়ার কৃতি
সন্তান একেএম হাসান, নইমুদ্দিন, আতাউর রহমান খান ‘নো’, ‘নো’ বলে চিৎকারে
তার তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে জিন্নাহ বলেন, ‘‘ Its is
my views. পরক্ষণে তিনি কথা না বাড়িয়ে I hope Bengal will not fail me
বলে বক্তব্য শেষ করেন। ওই দিন বিকেলে তমদ্দুন মজলিসের অধ্যাপক আবুল কাসেম,
শামসুল হক, তাজউদ্দিন আহমদ, লিলি খান, আজিজ আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, কমরেড
মো. তোয়াহা, অলি আহাদ, নঈমুদ্দিন ও এম শামসুল আলমের নেতৃত্বে রাষ্ট্রভাষা
সংগ্রাম পরিষদ মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সাথে দেখা করেন। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে
চলা এ বৈঠকে জিন্নাহ প্রতিনিধি দলকে পাকিস্তানের সংহতির স্বার্থে এক
রাষ্ট্রভাষা ওপর গুরত্বারোপ করেন। এ নিয়ে প্রতিনিধি দলের সঙ্গে জিন্নাহর
তর্ক হয়। তর্কের এক পর্যায়ে মাগরিবের আজান দিলে নামাজের বিরতিতে শামসুল হক
জিন্নাহকে নামাজ পড়ার আহ্বান জানালে পরিবেশ জটিল হয়ে পড়ে (জিন্নাহ ইসলামকে
ভালবেসে পাকিস্তান আন্দোলন, পাকিস্তানের জনক, উর্দুকে ভালবাসলেও বিলেত ফেরত
ব্যক্তি হিসেবে নামাজ পড়েননি তেমন, পাশাপাশি নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তাও
জানতেন না, ব্যক্তিগত স্বার্থে নেতা হওয়ার জন্য মুসলীম লীগের সাথে জড়িত
হয়েছিলেন। যার কারণে প্রতিনিধিদলের নেতা শামসুল হক নামাজ পড়ার কথা বললে
পরিস্থিতি জটিল হয়ে যায়)।৯ এতে বির্তক সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। ভাষা প্রশ্নে শেষ
না হলেও প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে জিন্নাহকে স্মারকলিপি
প্রদান করে।</div>
<div style="text-align: justify;">
জিন্নাহ ঢাকা সফর শেষে চট্টগ্রামে সফরে আসেন। ১৯৪৮ সালের ২৫-২৭ মার্চ
চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনে অবস্থানকালে উর্দু ভাষার পক্ষে এবং আরবী
হরফে বাংলা লেখার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। মুসলীম লীগ নেতা এ কে খান ও আহমদ
সগীর চৌধুরী এ সভায় বক্তব্য রাখলেও জিন্নাহ সভায় উর্দুর পক্ষে বক্তব্য
রাখলেও শ্রোতাদের মধ্যে থেকে জোরালো কোন প্রতিবাদ হয়নি। কিন্তু এ খবরটি
বাইরে প্রচার হলে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠে। চট্টগ্রামের ছাত্র সমাজ ক্ষোভে
ফেটে উঠে। এর কয়েকদিন পর চট্টগ্রামে সাহিত্যিক মাহবুব আলম চৌধুরী, গোপাল
বিশ্বাস, ফরমান উল্লাহ খান, শহীদ সাবের (পরবর্তীতে একাত্তরের শহীদ
বুদ্ধিজীবী) প্রমুখ মিলে ‘সংস্কৃতি বৈঠক’, ‘তমদ্দুন মজলিস’, ‘ছাত্র
ফেডারেশন’ প্রভৃতি সমমনা দল নিয়ে জেএমসেন হলে জিন্নাহর বক্তব্যের
প্রতিক্রিয়া এক সভার আয়োজন করা হয়। প্রতিবাদ সভার প্রচারের জন্য ঘোড়া গাড়ী
নিয়ে মাইকে প্রচারের সময় মুসলিম লীগের প্রতিক্রিয়াশীল অংশের ভাড়াটে
গুন্ডারা কমিউনিস্ট পার্টির প্রভাবাধীন মাহবুব আলম চৌধুরী, ছাত্র ফেডারেশন
নেতা শহীদ সাবের ও সাহিত্যিক গোপাল বিশ্বাসের উপর হামলা করে। সেদিন
হামলাকারীরা আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভাও পন্ড
করে।১০</div>
<div style="text-align: justify;">
এরপর আন্দোলন সংগ্রাম চলতে থাকে সারা প্রদেশে। ১৯৪৮ সালের ৮ এপ্রিল পূর্ব
বাঙলার প্রাদেশিক পরিষদ অধিবেশনে বাংলাকে (পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা
না করে) কেবলমাত্র পূর্ব বাঙলার সরকারী ভাষারূপে ঘোষণা করে মুখ্যমন্ত্রীর
ইতোপূর্বে স্বাক্ষরিত ৮ দফা চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে আরবী হরফে বাংলা লেখার
অদ্ভুত সুপারিশ করে পাকিস্তান কেন্দ্রিয় শিক্ষাবোর্ড। যার প্রতিক্রিয়া
হিসেবে সারা বাঙলায় ছড়িয়ে পড়ে আরবী হরফের বাংলার প্রতিরোধ আন্দোলন। পালিত
হয় ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচী। সারাদেশের প্রদেশের ন্যায় রামুতেও পালিত হয়
ছাত্র ধর্মঘট। ১১ এপ্রিল মো. বদরুজ্জামানের নেতৃত্বে রামু খিজারী স্কুল
থেকে মিছিল সহকারে বের হয়ে রামু চৌমুহনীতে জনসভায় মিলিত হয়। ওই সভায়
ওবায়দুল হক, আফসার কামাল চৌধুরী, নুরুল ইসলাম হেলালী, রসিক চন্দ্র বড়–য়া,
জাকের আহমদ চৌধুরী, আমিরুল কবির চৌধুরী, মোশতাক আহমদ, ওসমান সরওয়ার আলম
চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।১১ ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজারের অন্য
কোথাও সক্রিয় অবদান আছে কিনা তা জানা যায়নি। এরপরে ভাষা আন্দোলন
প্রসঙ্গটির কথা তেমনভাবে না উঠলেও ১৯৪৯ সালের দিকে শুরু হয়ে চট্টগ্রামে ঝট
সামান্য আন্দোলন চলে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত। ১৯৪৯ সালের ৯ মার্চ গঠিত পূর্ব
বঙ্গভাষা কমিটি ১৯৫০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পূর্ব বাঙলার স্কুলসমুহে
উর্দুকে সরকারী ভাষা করায় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির প্রতিবাদ সভা, ১৯৪৯ সালে
চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান সফরে আসলে উর্দুর কথা বলায় তাকে
অপমানসহ বিভিন্ন আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে।</div>
<div style="text-align: justify;">
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের মূল আঘাতটি আসে ১৯৫২ সালে। ১৯৪৮ সালে রাষ্ট্রভাষা
আন্দোলনকারীদের দাবীর প্রেক্ষিতে ১৫ মার্চ স্বাক্ষরিত ৮ দফা চুক্তি (দেখুন
পরিশিষ্ট ১) ভঙ্গ করে ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি ঢাকার পল্টন ময়দানে মুসলিম
লীগের সম্মেলনে পাকিস্তান প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন পুনরায় ঘোষণা
করেন, ‘‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে একমাত্র উর্দু ’-এবং ‘‘ঊর্দু হরফে
বাংলা লিখনের প্রচেষ্টা সাফল্যমন্ডিত হইতেছে’। তার এ বক্তব্যে পূর্ব
পাকিস্তানে জ্বলন্ত আগুনে ঘি ঢালার মতো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এর
প্রতিবাদে ২৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের এক প্রতিবাদ সভা হয়। ৩০
জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণ প্রতীকী ধর্মঘট পালন করেন এবং বিভিন্ন
শিক্ষায়তনের ছাত্রদের সহযোগ এক বিরাট শোভাযাত্রা বের করে বিক্ষোভ প্রদর্শন
করেন। ওই দিন নাজিমুদ্দিনের বক্তব্যের প্রতিবাদে পূর্ব পাক মুসলিম ছাত্র
লীগের উদ্যোগে বার লাইব্রেরী হলে আহুত সর্বদলীয় এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই
সভায় পূর্ব পাক মুসলীম ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ, তমদ্দুন মজলিস,
গণতান্ত্রিক যুবলীগ, ইসলামী ভ্রাতৃসংঘ প্রভৃতি রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও
ছাত্র প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৪০ জন প্রতিনিধি সমন্বয়ে কাজী গোলাম মাহবুবকে
আহ্বায়ক করে একটি কেন্দ্রিয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। সর্বদলীয়
সভায় বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের অফিসাদির ভাষা এবং কেন্দ্রের অন্যতম
রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণের জন্য খাজা নাজিমুদ্দীন পূর্ব পাকিস্তানের
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে ১৫ মার্চ ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনের সময়
আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যে ৮ দফা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন তা ভঙ্গ করার
নিন্দা প্রকাশ করা হয় এবং অনতিবিলম্ভে তার ভাষা সম্পর্কিত উক্তির
প্রত্যাহারপূর্বক বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকার
করে নেওয়ার দাবী জানানো হয় এবং উর্দু হরফে বাংলা লেখার চক্রান্তের
বিরুদ্ধেও এক প্রস্তাবে সরকারকে হুশিয়ারী করে দেয়া হয়।১২</div>
<div style="text-align: justify;">
সংগ্রাম পরিষদ ৪ ফেব্র“য়ারি সোমবার ঢাকা শহরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র
ধর্মঘট ও প্রতিবাদ বিক্ষোভ, ১১ ও ১৩ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় পতাকা দিবস পালন করে
এবং ২১ ফেব্র“য়ারি সারা পূর্ব বাঙলায় সভা, সমাবেশ, মিছিল ও হরতালের
কর্মসূচী ঘোষণা করে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ও ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ এ লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার মধ্যে
লাগাতার প্রচারণা শুরু করে। এই দিকে পুর্ব পাকিস্তান সরকার এতে বিচলিত হয়ে
২০ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেলে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জনাব কোরাইশি এক
মাসের জন্য ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করে সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা প্রভৃতি
নিষিদ্ধ করে। ২১ ফেব্র“য়ারি ১৯৫২ দৈনিক আজাদ-এ প্রকাশিত খবরে বলা হয়:ঢাকার
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গতকল্য (বুধবার) ১৪৪ ধারার আদেশজারী করিয়া এক মাসের
জন্য ঢাকা শহরে সভা, শোভাযাত্রা প্রভৃতি নিষিদ্ধ করিয়াছেন। আদেশজারীর
কারণস্বরূপ তিনি বলেন যে, একদল লোক শহরে সভা, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ
প্রদর্শনের প্রয়াস পাওয়ায় এবং তদদ্বারা জনসাধারণের শান্তি ও নিরাপত্তা
বিনষ্ট হওয়ায়র আশংকা থাকায় এই ব্যবস্থা অবলম্ভিত হইয়াছে। কোতোয়ালী,
সূত্রাপর, লালবাগ, রমনা ও তেজগাঁও থানার অন্তর্গত সমুদয় এলাকায় ইহা
প্রবর্ত্তিত হইয়াছে। ১৩</div>
<div style="text-align: justify;">
পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ১৪৪ ধারা জারির প্রেক্ষিতে ছাত্ররা আরো বিক্ষুব্দ
হয়ে উঠে। ১৪৪ ধারা জারি ভঙ্গ করে ২১ ফেব্র“য়ারি ঢাকা শহরের বিভিন্ন শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে সমবেত
হয় এবং তারা ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মিছিল নিয়ে ঢাকার রাজপথ প্রকম্পিত করে
তোলে। পথিমধ্যে পাহারাত পুলিশের কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ উপেক্ষা করে
প্রাদেশিক পরিষদ ভবনকে ঘেরাও করার উদ্দেশ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেল
প্রাঙ্গনে গেলে বিক্ষোভরত ছাত্রদের উপর পুলিশ গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ ক্লাসের ছাত্র মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন (২৬)
ঘটনাস্থলে নিহত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল জাব্বার (৩০), আবুল
বরকত (২৫), নবাবপুর রোডের রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমানের ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর
ছাত্র অহিউল্লাহ, বাদামতলী কর্মাশিয়াল প্রেসের মালিকের পুত্র রফিকুদ্দীন
(২৭), সলিমুল্লাহ মোছলেম হলের ছাত্র আনোয়ারুল এছলাম (২৪), জগন্নাথ কলেজের
ছাত্র এ আর ফৈয়াজ (১৯), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিরাজুদ্দীন খান (২২),
সরকারী শুল্ক বিভাগের পিয়ন আবদুস সালাম (২৭), এলাহী বখশ (৪০), মনসুর আলী
(১৬), বছিরুদীন আহমদ (১৬), তাজুল এছলাম (২২), মাছুদুর রহমান (১৬), আবদুস
সালাম (২২), আখতারুজ্জামান (১৯), এ রেজ্জাাক (১৭), মোজাম্মেল হক (২৩),
সুলতান আহমদ (১৮), এ রশিদ (১৪), মোহাম্মদসহ বহু সংখ্যক ছাত্র ও পথচারী আহত
হয়। পরে ওই দিন রাতে আবদুল জাব্বার (৩০), আবুল বরকত (২৫), নবাবপুর রোডের
রাজমিস্ত্রি হাবিবুর রহমানের ছেলে তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র অহিউল্লাহ, বাদামতলী
কর্মাশিয়াল প্রেসের মালিকের পুত্র রফিকুদ্দীন আহমদ(২৭) ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে মারা যান এবং দৈনিক আজাদ’র ৮ এপ্রিল ১৯৫২ একটি সংবাদ অনুযায়ী,
ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছে পুলিশের গুলিতে আহত সরকারী শুল্ক বিভাগের পিয়ন
আবদুস সালাম (২৭) প্রায় দেড় মাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল
কলেজ হাসপাতালে এবং ২২ ফেব্র“য়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা হাইকোর্টের কর্মচারী
সফিউর রহমান নবাবপুর রোড হয়ে কাজে যাওয়ার পথে পুলিশের গুলিতে আহত হয়। ওই
দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা. এ্যালিনসন এর তত্বাবধানে চিকিৎসাধীন
অবস্থায় সন্ধ্যা ৬টায় মারা যান। এ খবর সারা দেশে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে।
২২ ফেব্র“য়ারি পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ অধিবেশন চলাকালে পরিষদ হতে
আজাদ সম্পাদক ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য আবুল কালাম
শামসুদ্দিন, ২৩ ফেব্র“য়ারি শনিবার পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদের সদস্য
মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ লীগ পার্লামেন্টারি পার্টি হতে ও ঢাকায় ১৪৪
ধারার প্রবর্তন এবং ২১ ও ২২ ফেব্র“য়ারি ছাত্রদের উপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে
পূর্ববঙ্গ পরিষদের সদস্য আহমদ হোসেন মোছলেম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টি এবং
প্রাদেশিক লীগ ওয়ার্কিং কমিটির পদ থেকে এস্তেফা দেন।</div>
<div style="text-align: justify;">
রাষ্ট্রভাষা বাঙলার দাবীতে ২১ ফেব্র“য়ারি ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মিছিলে গুলি
এবং ছাত্র নিহত ঘটনার খবরটি প্রথম কক্সবাজারে আসে টেলিফোনের মাধ্যমে
কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক মৌলভী গফুরুজ্জামান চৌধুরীর বাসায়। ওই টেলিফোন
সেটের একটি সংযোগ ছিল কক্সবাজার খাস মহলের তৎকালিন কে.টি অর্থাৎ রাজস্ব
বিভাগের কর্মকর্তা এস আর খানের বাসায়। সেই সুবাদে মহকুমা প্রশাসকের সাথে এ
সম্পর্কে এস আর খান আলাপ করার সময় তার ভাগিনা কক্সবাজার ইংরেজি উচ্চ
বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র খালেদ মোশাররফ (পরবর্তীতে একাত্তরের
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, কে ফোর্সের অধিনায়ক এবং স্বাধীনতাত্তোর
বাংলাদেশের সেনা প্রধান) শুনে ফেলেন। তিনি যথারিতি ২২ ফেব্র“য়ারি শুক্রবার
(ওই সময় সাপ্তাহিক ছুটি ছিল রবিবার) স্কুলে গিয়ে তার সহপাঠী ও স্কুলের
ছাত্রদের জানালে ছাত্রদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। সকাল ১০টার দিকে খালেদ
মোশাররফ ও একই ক্লাসের ছাত্র আবদুল মাবুদ এখলাসী ও নুরুল হুদা হুদা চৌধুরী
এর নেতৃত্বে ছাত্ররা ক্লাস বর্জন করে নিহত ও রাষ্ট্রীয় জুলুমের বিরুদ্ধে
প্রতিবাদ জানায়। ১০ম শ্রেণীর ছাত্র আবুল মাবুদ এখলাছী নিজের হাতে স্কুলের
ঘন্টা বাজিয়ে স্কুল ছুটি ঘোষণা করে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে মিছিলরত
ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে মিছিলে অংশ গ্রহণ করার আহ্বান জানান। এ সময়
ছাত্ররা দুটি ভাগে হয়ে মিছিল সহকারে কক্সবাজার শহরের প্রধান প্রধান সড়ক
প্রদক্ষিণ করে বাহারছড়ায় গিয়ে জনসভা করে। একটি ভাগের নেতৃত্ব দেন দিন খালেদ
মোশাররফ। খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে মিছিলে অংশ নেন নুরুল হুদা চৌধুরী
(বদরমোকাম, ওই সময়ে ৮ম শ্রেণীর ছাত্র), আকতারুজ্জামান চৌধুরী (তৎকালিন
মহকুমা প্রশাসক মৌলভী গফুরুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে), আবদুল মাবুদ এখলাসী
(চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালত ও কক্সবাজার মহকুমা আদালতের আইনজীবী
মৌলভী এখলাছুর রহমানের ছেলে), শামসুল হুদা (ঝিলংজা), ওসমান গণি (মহেশখালী),
নুরুল আজিম চৌধুরী (ধলিরছড়া, পরবর্তীতে ইউপি চেয়ারম্যান), ছালেহ আহমদ,
বাদশা মিয়া চৌধুরী, জালাল আহমদ (নতুন বাহারছড়া), আবদুর রহমান (টেকপাড়া),
নুর আহমদ (এডভোকেট, প্রথম কক্সবাজারের ইতিাস রচয়িতা), টেকপাড়ার কামাল
উদ্দিন (সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ এর বড় ভাই), প্রভাস
রক্ষিত, নিখিলেশ্বর চক্রবর্তী (অগ্নিযুগের বিপ্লবী জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তীর
ছেলে এবং চট্টগ্রাম ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমনের নেতৃত্বকারী শহীদ শৈলেশ্বর
চক্রবর্তীর ভাইপো, বর্তমানে লন্ডন প্রবাসী), নাসির উদ্দিন (তৎকালিন
কক্সবাজার রেঞ্জ অফিসারের ছেলে) প্রমুখ।</div>
<div style="text-align: justify;">
কক্সবাজার হাই স্কুলের ছাত্র সালামত উল্লাহ (এডভোকেট) ও আমিরুল কবির
চৌধুরীর নেতৃত্বে ১৫০-২০০ জন ছাত্রের অপর দলটি দক্ষিণ বাহারছড়া হয়ে প্রধান
সড়ক প্রদক্ষিণ এবং পথে সভার আয়োজন করে। এ মিছিল ও সমাবেশে আবদুল কাদের
(পরবর্তীতে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক), মোহাম্মদ মুসলিম (ইপিআর-বিডিআর),
আবুল কাসেম (পরবর্তীতে লাইন্সম্যান), জয়নাল আবেদিন (বাহারছড়া), সগীর আহমদ
(নুনিয়ারছড়া), মোজাম্মেল হক (খুরস্কুল), ওয়াহিদুল আলম (টেকপাড়া), মোস্তাক
আহমদ (টেকপাড়া), গোলাম আহমদ (বাহারছড়া), আলতাজ আহমদ(কস্তুরাঘাট)সহ আরো
অনেকে অংশ নেন।১৪</div>
<div style="text-align: justify;">
খালেদ মোশাররফ এর নেতৃত্বে ২০-৩০ জন ছাত্রের এ দলটি একটি মিছিল নিয়ে
বাহারছড়ায় গিয়ে সালামত উল্লাহ ও আমিরুল কবির চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন সভায়
মিলিত হন। তাঁরা সি.এ্যান্ড. বি.এর জনৈক ঠিকাদারকে একটি ট্রাক যোগাড় করে
দেয়ার অনুরোধ করলে তিনি একটি ট্রাক যোগাড় করে দেন। এই ট্রাক নিয়ে ছাত্ররা
‘রক্তের বদলা রক্ত চাই’, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’, ‘ছাত্রহত্যার বিচার চাই’
প্রভৃতি শ্লোগান সহকারে কক্সবাজার শহরে প্রদক্ষিণ করার পর রামু, ঈদগাঁও হয়ে
চকরিয়া পর্যন্ত যান এবং সন্ধ্যায় পুনরায় কক্সবাজারে ফিরে আসেন। তৎকালিন
মহকুমা প্রশাসক মৌলভী গফরুজ্জামান চৌধুরী রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষ থাকায় ওই
সকল মিছিল ও সমাবেশে পুলিশ তথা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন প্রকার বাঁধ দেয়া
হয়নি বলে জানিয়েছেন এডভোকেট সালামত উল্লাহ ও ক্রীড়াবিদ নুরুল হুদা চৌধুরী।</div>
<div style="text-align: justify;">
পরদিন ২৩ ফেব্র“য়ারি খুনী নুরুল আমিনের বিচার চাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা
চাই’সহ বিভিন্ন শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত করে কক্সবাজার শহরের প্রধান
প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ পূর্বক কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীতে এক জনসভায় মিলিত
হন। খালেদ মোশাররফের আত্মীয় আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে
বক্তব্য রাখেন ১০ম শ্রেনীর ছাত্র খালেদ মোশাররফ, আবদুল মাবুদ এখলাছি,
আকতারুজ্জামান চৌধুরী, কামাল উদ্দিন, ৮ম শ্রেণীর ছাত্র আমিরুল কবির চৌধুরী,
নুরুল হুদা চৌধুরী, নুরুল আজিম চৌধুরী (ধলিরছড়া, পরবর্তীতে ইউপি
চেয়ারম্যান), আবদুল কাদের (পরবর্তীতে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক), সালামত
উল্লাহ (এডভোকেট), ছালেহ আহমদ চৌধুরী, আবদুর রহমান (টেকপাড়া), নিখিলেশ্বর
চক্রবতী, শামসুল হুদা (ঝিলংজা), ওসমান গণি (মহেশখালী), আবুল কাসেম,
নুনিয়াছড়ার সগীর আহমদ, বাহারছড়ার জয়নাল আবেদিন (পরবর্তীতে ব্যাংকার)
প্রমুখ। ১৫ -</div>
<div style="text-align: justify;">
২১ ও ২২ ফেব্র“য়ারি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশের গুলি এবং
ছাত্রহত্যা ও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে চকরিয়া হাই স্কুলের ছাত্র এস কে
শামসুল হুদা, আবদুল মালেক (পরবর্তীতে আবদুল মালেক মাস্টার নামে পরিচিত),
জামাল উদ্দিন আহমদ (পরবর্তীতে ডা. জামাল উদ্দিন আহমদ নামে পরিচিত), নজির
আহমদ (পরবর্তীতে বাসস এর প্রধান বার্তা সম্পাদক) এর নেতৃত্বে ক্লাস
বর্জনপূর্বক মিছিলে বের হয়।১৬ মিছিলে শত শত ছাত্র-জনতার সমাবেশ হয়। </div>
<div style="text-align: justify;">
ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের মিছিলে গুলি, ছাত্র হত্যার খবরটি রামুতে পৌঁছে ২৩
ফেব্র“য়ারি। রামু খিজারী হাই স্কুলের অস্টম শ্রেণীর ছাত্র প্রতিনিধি মোশতাক
আহমদ (প্রফেসর) এর নিকট চিঠি দেন কক্সবাজারের সালামত উল্লাহ ও আমিরুল কবির
চৌধুরী।১৭ চিঠির নির্দেশক্রমে মোশতাক আহমদ নুরুল ইসলাম হেলালী, ওসমান
সরওয়ার আলম চৌধুরী, মনির আহমদ, মন্মথ কুমার বড়–য়া ( পরবর্তীতে বৌদ্ধ নেতা ও
সাংবাদিক), নিউথু মং, থাংলাগ্য, জাকের আহমদ প্রমুখরা তৎক্ষনাৎ ক্লাস
বর্জনপূর্বক স্কুল প্রাঙ্গন থেকে এক জঙ্গী মিছিল শুরু করে রামুর চৌমুহনীতে
গিয়ে জন সমাবেশে মিলিত হয়। ওই মিছিলে ১৫০-২০০ ছাত্রসহ অসংখ্য জনতা অংশ নেন
বলে এক ব্যক্তিগত সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন প্রফেসর মোশতাক আহমদ। </div>
<div style="text-align: justify;">
২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটি অমিমাংসিত রেখে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা
পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে ফের পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী
নুরুল আমিন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বক্তব্য এবং ২৫ ফেব্র“য়ারি সোমবার পুলিশ
জন নিরাপত্তা আইনে এমএলএ মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন,
গোবিন্দ লাল ব্যানার্জি, মনোরঞ্জন ধর, অবিভক্ত বাংলার মুসলীম লীগের শেষ
সাধারণ সম্পাদক, খেলাফত রাব্বানী পার্টির আবুল হাশিম, হামিদুল হক চৌধুরীসহ
আটকজনকে গ্রেফতার করার পর সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠে। সারাদেশের ন্যায় ২৪
ফেব্র“য়ারি ও ২৫ ফেব্র“য়ারি কক্সবাজারের সর্বত্র হরতাল পালিত হয়। ২৫
ফেব্র“য়ারি বিকালে কক্সবাজারে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে আরো জোরদার করতে ভাষা
আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে তথা ১৯৪৮ সালের ৬ জানুয়ারি বাংলার দাবীতে সরকারী
থেকে পদত্যাগকৃত অধ্যাপক ও সাবেক ডাকসু ভিপি ফরিদ আহমদ এর নেতৃত্বে এক সভা
অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অগ্নিযুগের বিপ্লবী সুরেশ চন্দ্র সেন, জ্যোতিশ্বর
চক্রবর্তী প্রমুখের উপস্থিতিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি রুমালিয়ারছড়া এক জন সমাবেশের
সিদ্ধান্ত এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি আহুত ৫ মার্চ শহীদ দিবস পালনের
সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৫ মার্চের জনসভা সফল করতে খালেদ
মোশাররফ, পাকিস্তান ন্যাশনাল গার্ড সালারে আওয়াল আবদুল হামিদ খান, আফসার
কামাল চৌধুরী, আমিরুল কবির চৌধুরী, নুরুল হুদা চৌধুরীসহ ছাত্র জনতা ব্যাপক
প্রচারণা চালায়। রামুতে মিছিলোত্তর এক জনসভা হয়। আওয়ামী মুসলিম লীগ নেতা
আফসার কামাল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জাকের আহমদ, মোশতাক আহমদ,
ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী, মন্মথ বড়–য়া, মনির আহমদ, নিউথু মং, থাংলাগ্য,
আবুল কাশেম, গর্জনিয়ার রশিদ আহমদ চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন এবং সভায়
অচিরেই ছাত্র হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা
করার দাবী উত্থাপিত হয়। </div>
<div style="text-align: justify;">
২৭ ফেব্র“য়ারি রুমালিয়ারছড়ায় ফরিদ আহমদ (পরবর্তীতে মৌলভী ফরিদ আহমদ নামে
পরিচিত, ওই সময় ফরিদ আহমদ কক্সবাজার কোর্টে ওকালতি করতেন) এর সভাপতিত্বে এক
প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে খালেদ মোশাররফ, আবদুল মাবুদ এখলাছি, আমিরুল
কবির চৌধুরী, সালামত উল্লাহ, নুরুল আজিম চৌধুরী, সিরাজ আহমদ, নুরুল হুদা
চৌধুরীর নেতৃত্বে মিছিল নিয়ে রুমালিয়ারছড়াস্থ জনসভায় অংশ নেন। সভায় বক্তব্য
রাখেন এডভোকেট সুরেশ সেন, এডভোকেট জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী, ক্রীড়াবিদ বদিউল
আলম প্রকাশ বদু মাস্টার, সিরাজ আহমদ, ওবাইদুল হাকিম, অমরেন্দু মজুমদার,
মনতোষ কুমার চৌধুরী, এডভোকেট মোহাম্মদ আলী প্রমুখ।১৮ ওই সভা থেকে মিছিল
সহকারে রামু চৌমুহনীতে জন সমাবেশে গিয়ে মিলিত হন। </div>
<div style="text-align: justify;">
ঢাকা সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির ডাকা ৫ মার্চ শহীদ দিবস
সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারে পালিত হয়। ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে খতমে
কোরআন, ছাত্র ধর্মঘট, সব দোকান পাট বন্ধ, কোর্ট-অফিস বন্ধ ছিল সেই দিন।
কক্সবাজার হাই স্কুল, চকরিয়া হাই স্কুল, রামু খিজারী স্কুলসহ বিভিন্ন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রধর্মঘট পালনের পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষার দাবীতে মিছিল
করে। কক্সবাজার শহরে কাছারী পাহাড়ে ১৯৩০ সালে সংঘটিত চট্টগ্রাম যুব
বিদ্রোহ ও জালালাবাদ যুদ্ধের সাহসী সৈনিক সুরেশ সেন, মৌলভী ফরিদ আহমদ, আয়ুব
আলী, বদিউল আলম প্রকাশ বদু মাস্টারের পরামর্শে ছাত্র নেতা খালেদ মোশাররফ,
আবদুল মাবুদ এখলাছি, আমিরুল কবির চৌধুরী এর নেতৃত্ব এক জঙ্গি মিছিল নিয়ে
কাছারী পাহাড়ে হাজারো ছাত্র জনতার সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশে সরকারী দমন
পীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানোনা হয়। মো. আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে
অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী, সুরেশ সেন, ফরিদ
আহমদ, ওবাইদুল হাকিম, খালেদ মোশাররফ, আবদুল হামিদ খান, আবদুল মাবুদ এখলাছী,
সগীর আহমদ, জয়নাল আবেদীন, নুরুল আজিম চৌধুরী, আবুল কাশেম প্রমুখ। সভায়
প্রদেশের অফিস আদালতের ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ, গুলিবর্ষনের
দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিচার এবং ভাষা আন্দোলনে ধৃত ব্যক্তিদের মুক্তির
দাবী করা হয়। এবং সভা শেষে কক্সবাজার কাছারী পাহাড় থেকে কস্তুরাঘাট, কাছারী
পাহাড় থেকে বাজারঘাটা, বাজারঘাটা থেকে সী-বিচ পর্যন্ত তিনটি সড়কের নাম
সালাম, জাব্বার ও বরকতের নামে নামকরণ করা হয়েছিল বলে ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে
কক্সবাজার’ নামক এক নিবন্ধে উল্লেখ করেন ভাষাসৈনিক বিচারপতি আমিরুল কবির
চৌধুরী।</div>
<div style="text-align: justify;">
এছাড়া ঈদগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের তৎকালিন প্রধান শিক্ষক পাকিস্তান আন্দোলনের
অন্যতম নেতা আবদুল হামিদ খানের সহায়তায় ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি
রাখাল ভট্টাচার্য, সুলতানুল আলম সিকদার, (পরবর্তীতে ওই স্কুলের প্রধান
শিক্ষক), মনজুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ লেদু মিয়ার নেতৃত্বে ্ঈদগাঁও হাই
স্কুলে, এস কে শামসুল হুদা, জামাল উদ্দিন আহমদ ও আবদুল মালেক এর নেতৃত্বে
চকরিয়া হাই স্কুল, কুতুবদিয়া ও টেকনাফে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে।
এসব এলাকায় ভাষা আন্দোলনকারীদের মধ্যে কুতুবদিয়ার মো. রমিজ আহমদ (পরবর্তীতে
ধুরং হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকালীন
কুতুবদিয়ায় সংঘটিত ঘটনায় পাকিস্তান সরকার কর্তৃক দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহী
মামলার ২০ নং আসামী), রফিক আহমদ চৌধুরী, টেকনাফের অবিনাশ চন্দ্র, বাবু
মংনি, আবদুর রহমান, হাজী আবদুল গণি প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।১৯</div>
<div style="text-align: justify;">
তাছাড়া কক্সবাজারের কৃতিসন্তান ঢাকায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে প্রতিটি
আন্দোলনে শরীক হন চকরিয়ার শাহাব উদ্দিন চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
অর্থনীতি বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী মাহফিল আরা (তিনি অবিভক্ত বাঙলার
জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্বশাসন বিষয়ক মন্ত্রী খান বাহাদুর জালাল
উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর ভাই কবির উদ্দিন চৌধুরীর মেয়ে), ঢাকা মেডিকেল কলেজের
ছাত্র মো. বদরুজ্জামান (যার নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলনে রামুতে
জনসভা এবং মিছিল সমাবেশ হয়)।</div>
<div style="text-align: justify;">
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজারের মতো মফস্বল এলাকার অবদান গৌরবদীপ্ত।
কক্সবাজারের আন্দোলন ঢাকা-চট্টগ্রামের মতো সহিংস না হলেও তা ছিল যথেষ্ট্ সু
সংগঠিত ও জনসমর্থিত। ভাষা আন্দোলনের সে উত্তাল দিনগুলোতে কক্সবাজারের
ভূমিকাকে আঞ্চলিকতার দোহাই দিয়ে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ
চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার আক্রমণ, জালালাবাদ যুদ্ধে অংশ তথা ব্রিটিশ বিরোধী
আন্দোলনের অন্যতম দুই বিপ্লবী এডভোকেট সুরেশ চন্দ্র সেন, জ্যোতিশ্বর
চক্রবর্তী এবং ভাষা আন্দোলনের পক্ষে প্রথম সরকারী চাকুরীতে পদত্যাগকারী
অধ্যাপক মৌলভী ফরিদ আহমদ কক্সবাজারের সন্তান ছিলেন এবং ভাষা আন্দোলনে শরীক
হয়েছেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের পর ১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সরকার
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়। রাষ্ট্রভাষা
বাংলাকে স্বীকৃত আদায়কারীর অন্যতম জাতীয় পরিষদ সদস্য ছিলেন মৌলভী ফরিদ
আহমদ। </div>
<div style="text-align: justify;">
আমাদের মানতেই হবে ভাষা আন্দোলনের মহান সৈনিকরা ভাষার মর্যাদা বা সম্মান
প্রতিষ্ঠা করলেও তাদের প্রকত উদ্দেশ্য আজো বাস্তবায়িত হয়নি। তাদের উদ্দেশ্য
শুধু বাংলা ভাষার প্রতিষ্ঠা ছিল না। ছিল এ ভাষাকেন্দ্রিক সংস্কৃতি ও জীবন
ধারার বিকাশও অবশ্যই। যতদিন না বাংলা সংস্কৃতি আর বাঙালির জীবনধারা শতদলে
বিকশিত না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত মহান ভাষাসৈনিকদের মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত হবে
না, অন্তত পরিপূর্ণরূপে।</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
ঋণী</div>
<div style="text-align: justify;">
১. ড.সাইফুদ্দীন চৌধুরী, বাঙালি মুসলমানের বাংলা ভাষা চর্চা, শেখ
তোফাজ্জ্বল হোসেন সম্পাদিত ‘বাংলা ভাষায় মুসলমানদের অবদান’, ঢাকা: ইসলামিক
ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, অক্টোবর ২০০৩, পৃ: ১৪২।</div>
<div style="text-align: justify;">
২. সত্যেন সেন, বৃটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে মুসলমানদের ভূমিকা, ঢাকা : সাহিত্য প্রকাশনালয় এর তৃতীয় প্রকাশ-মার্চ ২০১১, পৃ : ৫৩</div>
<div style="text-align: justify;">
৩. প্রভাত মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্র বর্ষপঞ্জী, কলকাতা, ১৯৬৮, পৃ : ৭৮।</div>
<div style="text-align: justify;">
৪. অধ্যাপক আবদুর গফুর, বাংলা ভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠাতায মুসলমান, শেখ
তোফাজ্জ্বল হোসেন সম্পাদিত ‘বাংলা ভাষায় মুসলমানদের অবদান’, ঢাকা: ইসলামিক
ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, অক্টোবর ২০০৩, পৃ: ৯১-৯২।</div>
<div style="text-align: justify;">
৫. ড. আনিসুজ্জামান, বাঙলা ভাষা ও বাঙলাদেশ, উদ্ধৃতি: ‘একুশের প্রবন্ধ,’ ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ফেব্র“য়ারি ১৯৮৫, পৃ: ১১।</div>
<div style="text-align: justify;">
৬. ড. আসকার ইবনে শাইখ, বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রিন্সিপাল আবুল
কাসেম, অধ্যাপক কাযী আযিযউদ্দিন আহমদ সম্পাদিত ‘প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম
স্মারকগ্রন্থ’, সেপ্টেম্বর ১৯৯১, চট্টগ্রাম: প্রিন্সিপাল আবুল কাসেম
গণস্মরণ সভা কমিটি, পৃষ্টার নম্বর উল্লেখ নাই। </div>
<div style="text-align: justify;">
৭. মোস্তফা কামাল, ‘ভাষা আন্দোলন: সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন’, দ্বিতীয়
প্রকাশ ফেব্র“য়ারি ১৯৯৭, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ বুক সোসাইটি লি.
পৃ:১৪</div>
<div style="text-align: justify;">
৮. বশীর আল হেলাল, ‘ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস’, ফেব্র“য়ারি ১৯৮৫, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, পৃ: ১৮৯-৯১। </div>
<div style="text-align: justify;">
৯. বদরুদ্দীন উমর, আমাদের ভাষার লড়াই, টাপুর টুপুর গ্রন্থমালা-১, দ্বিতীয়
প্রকাশ-মাঘ ১৩৯৫, চট্টগ্রাম: শিশু সাহিত্য বিতান, পৃ: ৩১-৩২।</div>
<div style="text-align: justify;">
১০. শরীফ শমশির, চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলন, আগস্ট ২০০৩, ঢাকা: আগামী প্রকাশনী, পৃ: ২০</div>
<div style="text-align: justify;">
১১. বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার, ২১ ফেব্র“য়ারি ২০১১, দৈনিক ইনানী। </div>
<div style="text-align: justify;">
১২. সূত্র:- সৈনিক, ৩ ফেব্র“য়ারি ১৯৫২, উদ্ধৃতি: নুরুল ইসলাম, ‘সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে’ ঢাকা: বাংলা একাডেমী, জুন ১৯৯০, পৃ:১</div>
<div style="text-align: justify;">
১৩. সূত্র: আজাদ, ২১ ফেব্র“য়ারি ১৯৫২, উদ্ধৃতি: নুরুল ইসলাম, ‘সে আগুন ছড়িয়ে গেল সবখানে’, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, জুন ১৯৯০, পৃ: ৪</div>
<div style="text-align: justify;">
১৪. শরীফ শমশির, ‘চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলন’, আগস্ট ২০০৩, ঢাকা: আগামী প্রকাশনী, পৃ: ৫২</div>
<div style="text-align: justify;">
১৫. বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার, ২১ ফেব্র“য়ারি ২০১১, দৈনিক ইনানী। </div>
<div style="text-align: justify;">
১৬. ডা. মাহফুজুর রহমান, ‘বাঙালির জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে
চট্টগ্রাম’, মার্চ ১৯৯৩, চট্টগ্রাম: বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও
মুক্তিযুদ্ধে গবেষণা কেন্দ্র, পৃ: ২০২।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৭. ব্যক্তিগত সাক্ষাতকার, প্রফেসর মোশতাক আহমদ, ১২ ফেব্র“য়ারি ২০১০, রামু, কক্সবাজার।</div>
<div style="text-align: justify;">
১৮. বদিউল আলম, কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বিকাশ, সাগর তীরে, ১৫ জুলাই ২০০৭, রামু: রম্য প্রকাশন, পৃ: ১৭-১৮। </div>
<div style="text-align: justify;">
১৯. শরীফ শমশির, চট্টগ্রামে ভাষা আন্দোলন, আগস্ট ২০০৩, ঢাকা: আগামী প্রকাশনী, পৃ: ৫২</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
এ রচনাটি ‘মুক্তিসংগ্রামে কক্সবাজার’ র্শীষক গবেষণাকর্ম থেকে সংকলিত। এ
রচনায় কোন তথ্যগত ভুল কিংবা বাদ পড়ে থাকলে ০১৮১৪৪৯৫৪৬৬ ফোন নাম্বারে
জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়।</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
কালাম আজাদ : লেখক/সাংবাদিক, হাতফোন-০১৮১৪৪৯৫৪৬৬</div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-38489350728481449632014-03-20T07:13:00.002-07:002014-03-20T07:13:32.052-07:00বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন ও কক্সবাজার<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
<b>১৯৬২</b> সালের ফেব্র“য়ারি থেকে শুরু হয় আইয়ুব খানের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন। আগস্ট মাস থেকে শুরু হয় শিক্ষা আন্দোলন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর একটি জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৫৯ সালেল ৫ জানুয়ারি পশ্চিম পাকিস্তান শিক্ষা বিভাগের সচিব এবঙ আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে আইয়ুবের প্রাক্তন শিক্ষক এস এম শরীফকে চেয়ারম্যান করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৬ জন এবং পূর্ব পাকিস্তান থেকে ৪জন করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করা হয়। যা পরবর্তীতে শরীফ শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিত। এ কমিশনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে যাদের সদস্য করা হয় তারা হলেন:<br />১. ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ, উপাচার্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়<br />২. আবদুল হক, প্রেসিডেন্ট, ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড<br />৩. আতোয়ার হোসেন, অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়<br />৪. ড. এ. রশীদ, অধ্যক্ষ, ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। ১<br />কমিশন শিক্ষার সকল স্তর বিস্তারিতভাবে পর্যালোচনা করে ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট অন্তবর্তীকালিন প্রতিবেদন হিসেবে কমিশনের সুপারিশ সহ প্রেসিডেন্ট এর কাছে দাখিল করে এবং ১৯৬০ সালের ৮ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন পেশ করেন এবঙ তা গ্রন্থাগারে প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। তাতে প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হিসেবে দেশ থেকে নিরক্ষতা দূর করা, আট বছর মেয়াদী সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন, বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও কারিগর সৃষ্টিতে অনেক সদিচ্ছা ব্যক্ত করা হয়। <br />শরীফ কমিশনের সুপারিশে শিক্ষার মাধ্যম বলা হয়, <br />আমাদের জাতীয় জীবনে ইংরেজির বিরাট প্রয়োজনীয়তা আছে এবং সেই জন্যে ষষ্ট শ্রেণী হইতে ডিগ্রি স্তর পর্যন্ত ই্ংরেজিকে বাধ্যতামূলক পড়া হিসেবে শিক্ষা দিতে হইবে<br />এবঙ উদূকে মুষ্টিমেয় লোকের পরিবর্তে জনগণের ভাষায় পরিণত করিতে হইবে।’<br />অন্যত্র ‘উর্দূ ও বাঙলা ভাষার সম্পকের্ঃ আরও ঘনিষ্টতর করার প্রয়োজনীয়তার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব আরোপ করিতে হইবে। <br />শরিফ কমিশন শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের জন্য একটি অভিন্ন বর্ণমালার সুপারিশ করে। স্মর্তব্য যে, এর মাত্র ৭ বছর ্আগে তথা ১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলায় সংগঠিত হয় ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলন। জাতীয় ভাষা ও জাতীয়তার প্রশ্নে পূর্ব বাংলা তথা ্আজকের বাংলাদেশের জনগণ তখনো সরগরম। শরিফ কমিশন অত্যন্ত চতুরতার সাথে বির্তক টেনে বলে যে:<br />পাকিস্তানের জাতীয় ভাষার জন্য একটি সাধারণ বর্ণমালা প্রবর্তন করিতেই হয় তাহা হইলে পবিত্র কোরআন যাহাতে লেখা এবং যাহা সকল মসুলমানই পাঠ করে সেই আরবীয় (নাস্খ্) দাবি কিছুতেইই উপেক্ষা করা যায়না। <br />এ কথা থেকে বুঝা যায়, পশ্চিমা পাকিস্তানীরা পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের শতকরা ৫৬ জনের একটি ভাষাকে অস্বীকার করে উর্দূ চাপিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে প্রতিক্রিয়াশীল পাকিস্তানী শাসকচক্র (সাথে এ পূর্ব পাকিস্তানের ৪জন মহাজ্ঞানী (!) অত্যন্ত সুকৌশলে ধর্মীয় আবেগকে ব্যবহার করে আরবিকে বাঙলার বিকল্প হিসেবে কমিশনের মাধ্যমে বাঙালিদেরকে উপর চাপিয়ে দিতে চায়। কিন্তু শরীফ কমিশন শেষপর্যন্ত এই বিতর্কের অবসানের জন্যে সিদ্ধান্ত নেয় অন্যরকম, যা মাতৃভাষার বিরুদ্ধে পূর্ব বাঙলা তথা আজকের বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের কাছে আরেকটি ষড়যন্ত্র হিসেবে আবিস্কৃত হয়। কমিশনের ভাষ্যমতে,<br />আমরা মনে করি যে, একদিকে উর্দু ও বাঙলা বর্ণমালাসমুহের সংস্কার ও উন্নয়ন করা উচিত এবং অপরদিকে রোমান বর্ণমালায় এমন একটি আকারের উদ্ভব ও মান নির্ধারণ করা উচিত যাহা পাকিস্তানি ভাষাসমুহে অক্ষরান্তর করার উপযোগী হইবে। <br />শিক্ষা ব্যয়কে বিনিয়োগ তথা লাভ লোকসানের ব্যবসা হিসেবে দেখিয়ে শরীফ কমিশন তার প্রতিবেদনে সরারসরি লিপিবদ্ধ করে:<br />শিক্ষা সস্তায় পাওয়া সম্ভব নয়। <br />শরীফ কমিশনের অর্থনেতিক দিক নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও অবৈতনিক শিক্ষার ধারণাকে অবাস্তব কল্পনা বলে উল্লেখ করায় ছাত্র সমাজকে ক্ষেপিয়ে তুলে। কমিশনে বলা হয় <br />বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার মান উন্নত করিবার উদ্দেশ্যে আমরা অতীব জোরের সহিত সুপারিশ করতেছি যে, স্নাতক (এৎধফঁধঃব)ডিগ্রী কোর্সকে সম্প্রসারণ করিয়া তিন বছর মেয়াদী করা উচিত হইবে। <br />এ পর্যন্ত উল্লেখিত বিষয়দাদি পর্যালোচনা করে বলা যায়, শরীফ কমিশনের রিপোর্ট ছিল পূঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থ রক্ষাকারী একটি প্রতিক্রিয়াশীল রিপোর্ট। যা পশ্চিম পাকিস্তানীরা (সাথে তাদের সহযোগী ৪জন পূর্ব পাকিস্তানীও) ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও মার্কিন শিক্ষাবিদদের দ্বারা রিপোর্টটি প্রণীত হয়। এ কথা শুধু আমার নয়- মুক্তিযুদ্ধকালীন চট্টগ্রাম জেলা ইউনিয়নের সভাপতি ও পরবর্তীতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক (যিনি বাংলা ভাষা, বাংলা বানান, শিক্ষা নীতি নিয়ে অনেক গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন) শিক্ষানীতি ও ছাত্র ইউনিয়ন নামক এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন। <br />শিক্ষা সংস্কারের নামে কমিশনে কীভাবে শিক্ষাকে মুষ্টিমেয় ধনিক পরিবারের স্বার্থ রক্ষার কাজে লাগানো যায় এবং কীভাবে ছাত্রদের গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ ও খর্ব করে ছাত্র আন্দোলনের পথ রুদ্ধ করে ব্যক্তিগত শোষনের পথ নিরঙ্কুশ এবং বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে নতুন ষড়যন্ত্র এ চারটি দিক প্রাধ্যান্য পায়। আইয়ুব খানের এই শিক্ষানীতি চালু করার উদ্যোগ নিলে এ শিক্ষানীতিকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল শিক্ষা নীতি চিহ্নিত করে সর্বপ্রথম ছাত্র ইউনিয়ন এ রিপোর্ট বাতিলের দাবী এবং এজন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেয়। জুলাই মাসে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে শরীফ শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিলের দাবী উত্থাপন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এবং ওই দাবীতে আন্দোলনের জন্যে ছাত্র সমাজকে আহ্বান জানানো হয়। শুরু হয় আন্দোলন। সম্ভবত প্রথম আন্দোলন শুরু হয় ঢাকা কলেজ থেকে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা তাতে অংশ নেন। মোহাম্মদ হাননান ১৯৭৭ সালের বিচিত্রা ঈদসংখ্যার ষাটের দশকে ছাত্র রাজনীতির লেখক মাহবুব উল্লাহর উদ্ধতি দিয়ে ডিগ্রী পার্সের ব্যাপারে ঢাকা কলেজের ডিগ্রীর ছাত্র এম আই চৌধুরী এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাথীরা ইংরেজিকে অতিরিক্ত চাপ এবং স্কুলের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। ১৯৬২ সালের ১০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা কলেজ ক্যান্টিনে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা কলেজ সংসদের সাধারণ সম্পাদক কাজী ফারুক আহমদের সভাপতিত্বে শিক্ষার্থীদের এক সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশে কাজী ফারুক আহমদ তার বক্তৃতায় উপস্থিত সকলকে বুঝাতে সক্ষম হন যেম শিক্ষার আন্দোলন ও গণতন্ত্রের আন্দোলন এক সূত্রে গাঁথা। সেপ্টেমর মাসে এ আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্র জনতার পাশাপাশি সাধারণ জনগণও এ দাবীর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করে ছাত্র জনতার মিছিল মিটিংয়ে শামিল হন। ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগ যৌথভাবে শরীফ শিক্ষা কমিশন১ বাতিলের দাবীতে ১৭ সেপ্টেম্বর পূর্ব বাংলার ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয়। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। ঢাকায় আন্দোলন দমনে আইয়ুব সরকার সেনাবাহিনী ইপিআর ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে। ছাত্র ইউনিয়ন নেতা কাজী জাফর আহমদের সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা শেষে ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল আলম খান, মফিজুর রহমান, মহিউদ্দিন আহমদ এবং ছাত্র ইউনিয়ন নেতা হায়দার আকবর খান রুনো, আবদুর রহিম আজাদ, রাশেদ খান মেনন প্রমুখের নেতৃত্বে মিছিলটি হাইকোর্ট পেরিয়ে আবদুল গনি রোডে প্রবেশ করার মূহুর্তে মিছিলের পেছনে টিয়ারগ্যাস ও গুলি ছোড়ে পুলিশ। পুলিশের গুলিতে নিহত বাবুল, গোলাম মোস্তফা (ইপিআর টিসি সরকারি বাসের কন্ট্রাক্টর)। একই সঙ্গে আহত করা হয় ওয়াজিউল্লাহ (গৃহভৃত্য, যিনি পরের দিন হাসপাতালে মারা যান), সিরাজুল আলম খানসহ অনেককে। <br />সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও পালিত হয় এ ধর্মঘট। শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট মানিনা বাতিল কর, গণবিরোধী শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট কেরানী সৃষ্টির রিপোর্ট বাতিল কর, বর্জন কর প্রভৃতি শ্লোগানে ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মিছিল বের করে কক্সবাজারের ছাত্র নেতারা। কক্সবাজার হাই স্কুলের ছাত্রনেতা কামাল হোসেন চৌধুরী, মোহাম্মদ মোস্তফা, ইদ্রিস আহমদ, নুর বক্স, নজরুল ইসলাম চৌধুরী সুভাষ দে, আনোয়ারুল আজিম জোসেফ প্রমুখের নেতৃত্বে মিছিলে ছাত্র জনতার পাশাপশি কক্সবাজারের সাধারণ জনগণও মিছিলে যোগ দেয়। ছাত্র আন্দোলনের খবর কক্সবাজার শহর পেরিয়ে রামু, চকরিয়া, কুতবদিয়া এবং উখিয়া টেকনাফে ছড়িয়ে পড়ে। ৩<br />রামুতে ছাত্র ইউনিয়ন নেতা দীপক বড়ুযা, সৈকত বড়–য়া, কল্লোল বড়–য়া, ছাত্রলীগ নেতা মনোহরি বড়–য়া, নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে এবং উখিয়ায় আবদুল করিম, ফজলুল করিম, আবদুল জব্বার চৌধুরী, ছাত্র ইউনিয়ন নেতা শাহাবুদ্দিন চৌধুরী, ছাত্র শক্তির নেতা কামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে মিছিল বের করে শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট বাতিলের দাবীতে। </div>
<div style="text-align: justify;">
কালাম আজাদ: কবি সাংবাদিক 01814495466<br /></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-58590019224966143312014-01-28T06:24:00.001-08:002014-01-28T06:24:29.903-08:00GBNews24.com::Great Britain News 24<a href="http://gbnews24.com/article.php?articlesid=3224#.Uue9a1f9geA.blogger">GBNews24.com::Great Britain News 24</a>KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-51990087162971074152013-11-23T08:24:00.000-08:002013-11-23T08:36:13.542-08:00কালাম আজাদ এর কবিতা<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
<h2>
জলের বোতাম কাব্যগ্রন্থের কবিতা</h2>
</div>
<h2 style="text-align: justify;">
<b>কালাম আজাদ</b></h2>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>সবুজ হৃদয়</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
বরজের পানকে হৃদয় ভেবে</div>
<div style="text-align: justify;">
বাঁশের বেড়াতে রেখেছো সুরক্ষিত</div>
<div style="text-align: justify;">
পান কী আর হতে পারে কারো সবুজ হৃদয়</div>
<div style="text-align: justify;">
যেখানে প্রতিদিন কীটের দংশন</div>
<div style="text-align: justify;">
বুকের মাত্রাহীন নি:শ্বাস ফুরাবে এখন</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
যতবার ব্যর্থ, মনে জাগে প্রতিশোধের চর</div>
<div style="text-align: justify;">
পানের বাজারে নিলাম চলে প্রেমের বাজারে নয়</div>
<div style="text-align: justify;">
বুকের জীর্ণঘরে সময়ের অনলস্রোত</div>
<div style="text-align: justify;">
যেখানে আজ নিলামের হাট</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
পান ভেবে যাকে তুলেছো নিলামে</div>
<div style="text-align: justify;">
সে তো বরজ নয়- তোমার সবুজ হৃদয়</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>উদ্বাস্তু আমি</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
পূর্ব পুরুষের শংকিত চর ছেড়ে এখন অনেক দূরে</div>
<div style="text-align: justify;">
অগ্রজের ক্লান্ত চোখের উঠোনে ঘাসফডিংয়ের উড়াউড়ি</div>
<div style="text-align: justify;">
সুপারী গাছের দীর্ঘ ভ্রু হঠাৎ ছুঁয়ে যাওয়া পলাতক পাখি</div>
<div style="text-align: justify;">
ন্যূব্জ বৃদ্ধার প্রাত্যহিক ধানভাঙার স্মৃতি থেকে </div>
<div style="text-align: justify;">
আমার গন্তব্য শীতার্ত শিশুরমত চমকে ফিরে দাঁড়ায়</div>
<div style="text-align: justify;">
দুপুরের পরিশ্রান্ত সময়কে যে চড়–ই মেয়ে</div>
<div style="text-align: justify;">
চুঁড়ির ভাঙনে তাড়িয়ে নিয়ে যেত </div>
<div style="text-align: justify;">
দিন যাপনের অভ্যস্ত ডানায় বিন্যস্ত তার পালক</div>
<div style="text-align: justify;">
কিশোরী মেয়ের অসময়ে পুকুর মাতানোর মত রোদ</div>
<div style="text-align: justify;">
এলে। সুর্যের দিকে প্রশ্রয়ের বকুনি ছুড়েছি কতকাল</div>
<div style="text-align: justify;">
একদিন সেই রোদ শীর্ণ শরীরে ম্লান এসে দাঁড়ায়</div>
<div style="text-align: justify;">
সেই স্মৃতির পরাগ হতে আমি উদ্বাস্তু হলাম</div>
<div style="text-align: justify;">
উদ্বাস্তু আমার প্রিয় সময়, যাবতীয় সাহস</div>
<div style="text-align: justify;">
দূর হাটে হারিয়েছি আমি ফিরে যাওয়ার পথ </div>
<div style="text-align: justify;">
সামনে এখন ম্লান সন্ধ্যায় উড়ে যাওয়া পাখি</div>
<div style="text-align: justify;">
ফিরে দাঁড়াও, হে নীড়ে ফেরা সন্ধ্যার পাখিরা</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>কবিতার নাট্যশালা</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
কবে শেষ হয়ে গেছে বৃক্ষের গান</div>
<div style="text-align: justify;">
এখন শুধু দিনরাত গণিতের পাতায় চাষাবাদ</div>
<div style="text-align: justify;">
তবুও জানালার ওপাশে আলোর জলসা</div>
<div style="text-align: justify;">
চোখের তারায় নাচে কবিতার নাট্যশালা</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>রোসাঙ বালিকা</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
তাকালে দেখিনা, না তাকালে পাশে থাকো</div>
<div style="text-align: justify;">
সভ্যতার দেয়ালে নিষিদ্ধ টোট্যাম</div>
<div style="text-align: justify;">
হাঁটতে হাঁটতে অরণ্য পথে</div>
<div style="text-align: justify;">
শাহ্ সুজা, আলাওল কাফেলা পদ্মাবতীর</div>
<div style="text-align: justify;">
হাজার বছর শুনেছি পাহাড়, বৃক্ষের কাঁন্না</div>
<div style="text-align: justify;">
রাখাইন রমণী খুঁজে পায় সমুদ্র-পুরুষ</div>
<div style="text-align: justify;">
কীটদষ্ট ইতিহাস-পুরাণের পাতায়</div>
<div style="text-align: justify;">
আর কতকাল ঘুমাবে রোসাঙ-বালিকা</div>
<div style="text-align: justify;">
বনবালিকার ছিল দীঘল সবুজ কেশ</div>
<div style="text-align: justify;">
সেখানে আমিও তো দেখেছি</div>
<div style="text-align: justify;">
যুগ-যুগান্তরের অন্ধকার</div>
<div style="text-align: justify;">
তামাক ক্ষেতের গন্ধ শুঁকে মন ভুলানো পথে</div>
<div style="text-align: justify;">
আরাকান সড়ক কুড়াতে কুড়াতে পৌঁছে যায়</div>
<div style="text-align: justify;">
আলাওলের চাট্গাঁ শহরে।</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>পুঁজির স্বার্থপরতায়</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
স্বপ্ন এবং বাস্তবতার মাঝে একটিমাত্র হাইফেন</div>
<div style="text-align: justify;">
সময়টা বেসামাল অভিকর্ষ-মহাকর্ষের ক্রিয়ায়</div>
<div style="text-align: justify;">
পৃথিবী স্তব্দ লালসার ক্ষুধায়</div>
<div style="text-align: justify;">
পাপের কোন সংজ্ঞা জানে না শ্রমিক</div>
<div style="text-align: justify;">
নির্ভেজাল উৎপাদনে জীবনের অপচয়</div>
<div style="text-align: justify;">
মালিকের তৈরী গারদে</div>
<div style="text-align: justify;">
এভাবেই ঘাম আর রক্তের স্রোতে</div>
<div style="text-align: justify;">
সভ্যতার বিবর্তন...</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
পুঁজির স্বার্থপরতায় প্রেমের নকশা</div>
<div style="text-align: justify;">
পণ্যের মূল্য তালিকায়</div>
<div style="text-align: justify;">
ডেবিট ক্রেডিট হিসাব কষে</div>
<div style="text-align: justify;">
আমরা একেকজন মুনাফার জেরক্স কপি</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>জলরেণু</b></div>
<div style="text-align: justify;">
শেষ না হওয়া সবুজ ধানক্ষেত, বৃষ্টি থেমে</div>
<div style="text-align: justify;">
পান্ডর আকাশে দিকভ্রান্ত বাদল পোকার দল</div>
<div style="text-align: justify;">
উড়তে উড়তে বিলিয়ে দিচ্ছে গুচ্ছ</div>
<div style="text-align: justify;">
দিবাস্বপ্নের আলাপ</div>
<div style="text-align: justify;">
বাতাসের কারুকাজ কাশফুলের সব দু:খ</div>
<div style="text-align: justify;">
রেজু খালে মিছে গেছে</div>
<div style="text-align: justify;">
কুমারী ধানের বুকে নি:শব্দ দুধ এসে</div>
<div style="text-align: justify;">
যৌবণের পূর্ণতায়</div>
<div style="text-align: justify;">
অগ্নীময়ী প্রজাপতি চুম্বনের শরীরে</div>
<div style="text-align: justify;">
পথ হাঁটতে হাঁটতে আকাশকে নামিয়ে ফেলে</div>
<div style="text-align: justify;">
নদীর ধারে তাদের হলুদ, নীল আঁচল ঢেকে</div>
<div style="text-align: justify;">
জলরেণুর আল্পনা হয়ে বেজে উঠে</div>
<div style="text-align: justify;">
কোনো এক প্রেমিকের ফোঁটা ফোঁটা কান্নায়</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>অগ্নিকুন্ড</b></div>
<div style="text-align: justify;">
রাতের কোলে ঘুমিয়ে আছে রাত </div>
<div style="text-align: justify;">
ইথারে আমি মেলেছি দুহাত</div>
<div style="text-align: justify;">
হাতের মুঠোয় ছিল তারাফুল</div>
<div style="text-align: justify;">
আধাঁরে কাঁপে দশটি আঙুল</div>
<div style="text-align: justify;">
মেঘের মাঝে মেঘেরা ডুবে যায়</div>
<div style="text-align: justify;">
হৃদয় দেখি ক্লান্ত জোছনায় </div>
<div style="text-align: justify;">
মৃত্যু সহসা বুনে যায় দাঁত</div>
<div style="text-align: justify;">
অগ্নিকুন্ডে আমি রাখি দুহাত</div>
<div style="text-align: justify;">
হাতের মুঠোয় শুধু ভ্রুণ বংশ</div>
<div style="text-align: justify;">
দশ আঙুলে ভাসে হাজার ধ্বংশ</div>
<div style="text-align: justify;">
ধ্বংশের ওপাশে ছাইভষ্মের ছবি</div>
<div style="text-align: justify;">
সঞ্চারিত আগুনে পুড়ে মরে কবি</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>বিধাতার অভিশাপ</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
দিনের পিপাসা ছেঁড়া অবরূদ্ধ এক স্বপ্নচারী</div>
<div style="text-align: justify;">
সবুজ চোখের নীড়ে বাস করে আলোর কিশোরী</div>
<div style="text-align: justify;">
অনাবিল স্বপ্ন আঁকে শুভ্র জোছনায়</div>
<div style="text-align: justify;">
কুয়াশার আবরণে অহর্নিশ সবুজ ছায়ায়</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
ঘুমের তলায় শুয়ে শরবিদ্ধ যন্ত্রণায় কাঁদে</div>
<div style="text-align: justify;">
যাতনা জীবন ঠেলে, ফিরে যায় শুন্য চাঁদে</div>
<div style="text-align: justify;">
বিধাতার অভিশাপে পুড়ে যায় আলোর শহর</div>
<div style="text-align: justify;">
অতঃপর শূন্যে ঝোলে বেদনার বিবর্ণ নগর</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>শব্দভুক্</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
সংঘাত জারি হোক- মহাজাগতিক শক্তিশালী কে</div>
<div style="text-align: justify;">
ধ্বনিত হ’লো শব্দরা... যাদের শেকলে বন্দী সভ্যতা-সকাল</div>
<div style="text-align: justify;">
মৃদু উচ্চারণে প্রতিটি ফ্ল্যাটের কামরা হয়ে ওঠে যৌথ খামার</div>
<div style="text-align: justify;">
অত:পর বিকিকিনিতে হেরে গেলে বিরহ-বিসংবাদ</div>
<div style="text-align: justify;">
শব্দ বিকিকিনিতে সভ্যতা চুমো খায় যুদ্ধ নৃশংস স্বপ্নরাজ</div>
<div style="text-align: justify;">
উপমা খোঁজা অন্ধচোখে ও বেতসে আঁকা মানবীর ঠোটে জমায় শোলক</div>
<div style="text-align: justify;">
প্রতিরাত কূজনে শব্দ জাগেড়-জাগে অচৈতন্যে কিছু মানব শরীর</div>
<div style="text-align: justify;">
শব্দরাও নদী কিংবা জল-পত্র-রূপ-রঙে হাসে</div>
<div style="text-align: justify;">
শতাব্দীর করোটিতে শোষক সিংহাসন-</div>
<div style="text-align: justify;">
মানুষের সংঘাতে শব্দভুক ব্যবসায়ী দায়ী</div>
<div style="text-align: justify;">
আলোর নাচনে রশ্নি বিভাজন-কেড়ে নেয় সভ্যতা-সৃজন</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>বাসন্তি আকাশ</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
রঙিণ বসন্ত বুকে রংধনু রূপালী জোৎস্নায় যেতে</div>
<div style="text-align: justify;">
যেতে ক্লান্তি জুড়ে জীবনের বাসন্তি আকাশ</div>
<div style="text-align: justify;">
প্রেমখেলা নীড়ে সুখ স্তরে স্তরে মিতালির ডাকে</div>
<div style="text-align: justify;">
বিভোর বিজনে হাসে-</div>
<div style="text-align: justify;">
সোনালী আলোর ঢেউ তালে তালে অন্তরালে আসে</div>
<div style="text-align: justify;">
মধুমাখা ঝিঁঝিঁ রাতে যুবতীর হৃদয়ে মৌ ঝরে</div>
<div style="text-align: justify;">
কতগান কত কথা রচে নিল দিপালী ভাষায়</div>
<div style="text-align: justify;">
ছন্দের তরঙ্গ স্রোতে </div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>ক্ষরণকাল</b></div>
<div style="text-align: justify;">
দিনের বিবর নিন্দ্রায় জেগে রয় মোহনমায়ায়</div>
<div style="text-align: justify;">
সিগারেটের ধুম্রজাল উপহাস করে</div>
<div style="text-align: justify;">
মদের মালে যাইনা কতকাল</div>
<div style="text-align: justify;">
বুকে শিশু মাকড়সা</div>
<div style="text-align: justify;">
এখন আমি নষ্টালজিয়ায়...</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
হৃদয়ের ক্রমাগত স্রোত ক্ষরণের কাল</div>
<div style="text-align: justify;">
অলৌকিক খুনে কাছিম জীবন</div>
<div style="text-align: justify;">
কিছুটা বাকী রয় ভোরের কুয়াশায়</div>
<div style="text-align: justify;">
পার্বতীর প্রতারণায় জীবন্ত দেবদাস</div>
<div style="text-align: justify;">
আমি নষ্ট হলে সবুজের ক্ষতি,তার কী</div>
<div style="text-align: justify;">
নষ্ট বলে কিছুই নেই শ্রেণীত্বই নষ্টের প্রতিনিধি</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>বোধের জানালা</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
বয়েসী রাতের শূণ্যতা মানে</div>
<div style="text-align: justify;">
একাকী বিরহ নয়-</div>
<div style="text-align: justify;">
সাদা কাগজে কলমী সঙ্গমে</div>
<div style="text-align: justify;">
দেখি কবিতার উদয়</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
প্রশান্তির আশায় ছটপট করি</div>
<div style="text-align: justify;">
সারা শহর অলি-গলি বেশ্যালয়</div>
<div style="text-align: justify;">
ধর্মালয় কিম্বা সকল মানবের কাছে </div>
<div style="text-align: justify;">
কোথাও তো নেই একবিন্দু ঠাঁই; </div>
<div style="text-align: justify;">
কেবল বয়েসী রাত </div>
<div style="text-align: justify;">
আপন ভেবে খোলে দেয় </div>
<div style="text-align: justify;">
এক দুর্জ্ঞেয় বোধের জানালা</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>জলশরীর</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
বয়েসী রাতের নিরবতায় ভাঙে আত্মার জোছনা</div>
<div style="text-align: justify;">
নির্জন নিস্তব্ধতাই আমার সারথী</div>
<div style="text-align: justify;">
প্রকৃতির মোহন মাধুর্যে </div>
<div style="text-align: justify;">
ভাব বিনিময় করি চোখে চোখ রেখে</div>
<div style="text-align: justify;">
শ্রবণশক্তির শেষ সীমানায়</div>
<div style="text-align: justify;">
দুলতে থাকে অন্তরে অনন্ত হৃদয় </div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
এভাবে বুকের জমানো আনন্দ</div>
<div style="text-align: justify;">
বিহ্বলতা নিয়ে</div>
<div style="text-align: justify;">
কেটে যায় রাত নিশিথের রথ</div>
<div style="text-align: justify;">
তবুও ভাঙেনি মনের শপথ</div>
<div style="text-align: justify;">
জলের শরীরে সাঁতার কেটেছি</div>
<div style="text-align: justify;">
জলের বোতাম খুুলে নিঙড়েই দেখেছি</div>
<div style="text-align: justify;">
অনন্ত সুখ ...</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>জলের জরায়ু</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
ঝাউবিথী জলধার রাখে বুকের গভীরে</div>
<div style="text-align: justify;">
জোছনায় জ্বলে মুকুটের অজস্র কুমকুম ফোঁটা</div>
<div style="text-align: justify;">
তার বুকে জমে থাকা কত কথা</div>
<div style="text-align: justify;">
মানুষের দুঃখের জলধারা</div>
<div style="text-align: justify;">
সুর্যের কাছে প্রতিটি নিঃশ্বাসের তাপে</div>
<div style="text-align: justify;">
কথা বলে যায়</div>
<div style="text-align: justify;">
কারো অবসর নেই শুনে-</div>
<div style="text-align: justify;">
দীনতম ঝাউবিথী কোন গান গায়</div>
<div style="text-align: justify;">
কারো চোখে ঘুম নেই বলে</div>
<div style="text-align: justify;">
জলের জরায়ু থেকে কৌমুদ ফোঁটে</div>
<div style="text-align: justify;">
হৃদয়ের পাঁজর</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
হৃদয়ের করিডোরে বিষম কষ্ট</div>
<div style="text-align: justify;">
উত্তাল সাগরের উর্মির মত বয়ে যায়</div>
<div style="text-align: justify;">
অলৌকিক ভালবাসার নীলে সিক্ত</div>
<div style="text-align: justify;">
চিত্তের মাঝে জাগে স্মৃতির অশ্র“</div>
<div style="text-align: justify;">
যন্ত্রণা মননে বিধস্ত বুকের পাঁজর</div>
<div style="text-align: justify;">
ভুলতে চাই কষ্ট, ভাঙি তাই স্মৃতির মিনার</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>মোহনা সঙ্গম</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
গন্তব্যে চলে গেছো তুমি</div>
<div style="text-align: justify;">
পড়ে আছি মহাশূন্যে</div>
<div style="text-align: justify;">
ইউরেনাস চলে যায়</div>
<div style="text-align: justify;">
ফিরে আসে সূর্যের সংসারে</div>
<div style="text-align: justify;">
মার্শিংয়ের বৃত্তাবদ্ধ জল</div>
<div style="text-align: justify;">
সমতল ছুঁয়ে ছুঁয়ে মোহনা সংগমে</div>
<div style="text-align: justify;">
অতঃপর সমুদ্র আকাশ হয়ে</div>
<div style="text-align: justify;">
ফিরে আসে মৃত্তিকা শরীরে</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
তোমার অপক্ষোয় রাত জাগে বাদামী পুরুষ</div>
<div style="text-align: justify;">
শতাব্দীর সিক্ত চাঁদ দিগন্তে মিলায়</div>
<div style="text-align: justify;">
সভ্যতার হাজার বছর উড়ে স্মৃতির হাওযায়</div>
<div style="text-align: justify;">
তুমি শুধু সুদূরের নারী...</div>
<div style="text-align: justify;">
অন্ধকার ডাক দেয় ফিরে এসো রাত</div>
<div style="text-align: justify;">
ইন্দ্রানী সেনের মেঘলা কন্ঠস্বর কাঁদে</div>
<div style="text-align: justify;">
আমার হৃদয় ভাঙে</div>
<div style="text-align: justify;">
ভেঙে ভেঙে জোৎস্নায় ছাই হয়ে যায়।</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<br />
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>শবের হাসি</b></div>
<div style="text-align: justify;">
বাঁকখালীর বাঁকে বাঁকে চল্লিশ লোভাতুর বিড়াল</div>
<div style="text-align: justify;">
পুষনি তাদের, মন্ত্র:পুত করেছ শঙ্খ ও শামুকে</div>
<div style="text-align: justify;">
শুকরাক্রমনে তছনছ সবুজ ঝাউ-বন-বীথি</div>
<div style="text-align: justify;">
প্রতিবাদী পরশ হাতে বিনাশ শূকর</div>
<div style="text-align: justify;">
তবু কামড় দিতে চায়..</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
একদিন রুপালী কামড়ে- সোনালি ঝলকে</div>
<div style="text-align: justify;">
অতলে নীল সাগরে জাহাজের ভোঁ ভোঁ জেগে ওঠে</div>
<div style="text-align: justify;">
তারও পরে একদিন সবাইকে চমকে</div>
<div style="text-align: justify;">
দেখালে শবের হাসি </div>
<div style="text-align: justify;">
সেই থেকে আত্মসিদ্ধ আমি </div>
<div style="text-align: justify;">
ঝাউবনে রাখি শোঁকের আঁচল</div>
<div style="text-align: justify;">
সেই থেকে নদী আমি, সমুদ্র আমার</div>
<div style="text-align: justify;">
শুধু তুমি</div>
<div style="text-align: justify;">
নীলাকাশ পাড়ি দিয়ে সূদুরে মিলাও...</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>অসময়ের মেঘ</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
নক্ষত্র ফিরে গেলে</div>
<div style="text-align: justify;">
আকাশে তাকাবেনা কেউ</div>
<div style="text-align: justify;">
সূর্যটা ডুবুডুবু। অমবস্যা চাঁদ</div>
<div style="text-align: justify;">
বাউরি বাতাস নি:শ্বাস ফেলে তিমিরের দ্বীপে </div>
<div style="text-align: justify;">
অসময়ের মেঘালয় দক্ষিণা জানালায়...</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
পশ্চিমা বাতাসে কেঁপে ওঠে মানচিত্র</div>
<div style="text-align: justify;">
লাল-সবুজের মানচিত্র যদি বুলেটবিদ্ধ করে</div>
<div style="text-align: justify;">
ঐ বিষাক্ত হাত; রক্ষা করবে কে</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
বিজলীর আলোয় নগর দ্যুতিময় হলেও </div>
<div style="text-align: justify;">
সূর্যকে মনে হয় পনের কোটি মানুষ</div>
<div style="text-align: justify;">
বিবর্ণ দেখি রক্তিম সূর্য রক্তরেখা</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>রাত হত্যাকারী</b></div>
<div style="text-align: justify;">
পুরনো বাংলা মদের পাসপোর্টে পৌছে যাই </div>
<div style="text-align: justify;">
সেই- সেইসব পুরনো রাতের নষ্টালজিক আয়তনে</div>
<div style="text-align: justify;">
পূর্ণজাগরণ হয় নিজের ভেতর </div>
<div style="text-align: justify;">
অমোঘ অ্যালকোহলীয় আবহ কিংবা নতুন ব্রহ্মান্ড</div>
<div style="text-align: justify;">
সে এক গায়েবী নবায়নে</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
পুরনো সময় শৈশব,স্মৃতি, প্রেম সর্বোপরি অবোধ</div>
<div style="text-align: justify;">
এক জগত ধরা দেয়</div>
<div style="text-align: justify;">
নতুন থেকে নতুনতর হয়ে</div>
<div style="text-align: justify;">
পার্থক্য খুঁজে পাইনা একাল সেকালের </div>
<div style="text-align: justify;">
হৃদয়গ্রাহী ইতিবৃত্ত</div>
<div style="text-align: justify;">
কী যে রহস্যে থাকে মনোচিত্তে</div>
<div style="text-align: justify;">
পুরনো ওয়াইংয়ের নেশায় মত্ত হয়ে বারংবার</div>
<div style="text-align: justify;">
ফিরে যায় পুরনো স্মৃতিপাড়ায়</div>
<div style="text-align: justify;">
যেখানে আমি হয়ে যায় </div>
<div style="text-align: justify;">
অন্য এক আমি</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>শুয়ে আছি কবরে</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
শুয়ে আছি কবরে, ভাবতেই শিউরে উঠে গা</div>
<div style="text-align: justify;">
মৃত্যু অনিবার্য, পালাতে পারে না কেউ</div>
<div style="text-align: justify;">
শত কবরের ফিরিস্তি শুনি বৃদ্ধ দাদুর মুখে</div>
<div style="text-align: justify;">
‘কবর’ পড়তে গিয়ে প্রথম মৃত্যু ভয় জাগে</div>
<div style="text-align: justify;">
বাঁশবাগানে সন্ধ্যাকালে এখনো চাঁদ উঠে</div>
<div style="text-align: justify;">
মনটা আমার কেঁদে উঠে ‘কাজলা দিদি’র শোকে </div>
<div style="text-align: justify;">
‘ছিন্নমুকুল’ পড়তে গিয়ে পেলাম কচি মুখের ছোঁয়া </div>
<div style="text-align: justify;">
আমরা ছিলাম ভাইবোন জনা পাঁেচক </div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
সন্ধ্যাকালে দিঘির জলে </div>
<div style="text-align: justify;">
হারালাম একদিন ছোট্টবোনের মায়া</div>
<div style="text-align: justify;">
মায়ের কান্না, বাবার বিষণœ মুখ </div>
<div style="text-align: justify;">
‘একটি ফটোগ্রাফ’-এ শামসুর রাহমানের </div>
<div style="text-align: justify;">
বুকের রুক্ষচরে হঠাৎ জেগে উঠা শোক</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>নীলকণ্ঠ বালক</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
পাতার মুকুট পরে আছে নীলকণ্ঠ বালক</div>
<div style="text-align: justify;">
কাকবন্ধ্যা রমণীর ম্রিয়মান কাঁচুলিতে</div>
<div style="text-align: justify;">
রঙছটা ছাতা বগলে চেপে</div>
<div style="text-align: justify;">
অফিসে চলে কেরাণী</div>
<div style="text-align: justify;">
দূর-লোকালয়ে বেজে ওঠে</div>
<div style="text-align: justify;">
সূর্যোদয়ের আনন্দ রাগিনী</div>
<div style="text-align: justify;">
অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে</div>
<div style="text-align: justify;">
এক নীলকন্ঠ বালক</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>সমুদ্রবিধান</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
সমুদ্র পাড়ার সন্তান আমি </div>
<div style="text-align: justify;">
সকাল সন্ধ্যায় মেতে রই সমুদ্র সঙ্গমে</div>
<div style="text-align: justify;">
সমুদ্র পাড়ার শব্দকার সমদ্র বিধান</div>
<div style="text-align: justify;">
অচেতন বোধ কাঁদে ভিজিয়ে সমুদ্র সিথান</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
মাঝে মাঝে সমুদ্রও কাছের হয়</div>
<div style="text-align: justify;">
মানুষ কখনো কাছের নয়</div>
<div style="text-align: justify;">
নিয়ত নিয়মে সমুদ্রও দূরের হয়</div>
<div style="text-align: justify;">
তখোন মন মানুষ কাছের হয় কী</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
রাত্রি-রাত আঁধারী সঙ্গম সময় অবজ্ঞা করে</div>
<div style="text-align: justify;">
সাথীল্য গড়ে আমার সীমালয়ে</div>
<div style="text-align: justify;">
কবিতার চারুস্বাদ সঙ্গ করে পোষিয়ে নেয়</div>
<div style="text-align: justify;">
নিয়তির বিকল্প প্রয়োজন</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>আমি বর্ণমালা</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
আমি বর্ণমালা অ আ ক খ</div>
<div style="text-align: justify;">
আমাতে আমি শুধু একা</div>
<div style="text-align: justify;">
আমি চর্যাপদের চপলা হরিণী</div>
<div style="text-align: justify;">
বড়– চন্ডীদাসের কৃষ্ণকীর্তনের শব্দখেলা</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
আমি ধ্বনি ব্যঞ্জনা তুলি বাকযন্ত্রে</div>
<div style="text-align: justify;">
আমারি ধ্বনিগুচ্ছে ছন্দ ও সূরের অনুরাগ</div>
<div style="text-align: justify;">
আমি কখনও মাত্রাহীন,কখনও বিযুক্ত</div>
<div style="text-align: justify;">
কখনো পরাশ্রয়ী ৎ ং ঃ চাঁদেরবিন্দু</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
আমি নি:সঙ্গ অ আ ক খ</div>
<div style="text-align: justify;">
এ নিঃসঙ্গতা কেটে ভাল লাগে </div>
<div style="text-align: justify;">
যখন দেখি আমার ধ্বনি সুষমায়</div>
<div style="text-align: justify;">
গড়ে ওঠে শব্দ বাক্য কাহিনী সুর</div>
<div style="text-align: justify;">
রচিত হয় সাহিত্য ইতিহাস</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>সমুদ্রপুরীর শৈলীতোরণ</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
সে কবেই জয় করে লঙ্কা</div>
<div style="text-align: justify;">
ডুব দিয়েছ সমুদ্রপুরী ...</div>
<div style="text-align: justify;">
আমার আবাস গড়ে দেবে বলে</div>
<div style="text-align: justify;">
তোমার পদচিহ্ন বক্ষে ধরে আছে</div>
<div style="text-align: justify;">
মঙ্গলগ্রহের আজীবনাষ্ম ধুলি </div>
<div style="text-align: justify;">
পিরামিড ভেদ করে</div>
<div style="text-align: justify;">
মমির ভেতর দেখি তোমার হৃৎস্পন্দন</div>
<div style="text-align: justify;">
দাঁড়িয়ে আছে ঝুলন্ত ব্যাবিলন</div>
<div style="text-align: justify;">
সাজাতে আমার ভিতর-বাহির</div>
<div style="text-align: justify;">
বগলের নিচে নিয়ে এলে</div>
<div style="text-align: justify;">
ভেনাস-অ্যাপেলো-কিন্নরীর মূর্তি</div>
<div style="text-align: justify;">
গেটওয়াল-টুইন-আইফেলেও তোমার দর্প</div>
<div style="text-align: justify;">
তোমাকে স্বাগত জানাতে গেঁথেছি উচ্চ শৈলীতোরণ</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>হা- খোলা ঈশ্বর</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
সব আঙুল এক হয়না, ছড়িয়ে যায় এদিক-বিদিক</div>
<div style="text-align: justify;">
কররেখা সাপের সুরত ধরে ফণা নাড়ে</div>
<div style="text-align: justify;">
এতটা খারাবি ছিল তকদিরে</div>
<div style="text-align: justify;">
দুহাত মুনাজাত মুদ্রায় জ্বলে নিভেঃ</div>
<div style="text-align: justify;">
প্রেম আমার উড়ে যাচ্ছে একা</div>
<div style="text-align: justify;">
আমি একদিনও আর দেখবো না তাকে</div>
<div style="text-align: justify;">
করতলে শুয়ে আছে দুবলা জীবন</div>
<div style="text-align: justify;">
আঙুলের ফাঁকে ঘনিয়ে আসে কার ছায়া</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
নখের আকাশিতে তবু পেড়ে আমি ্অর্ধেক আকাশ</div>
<div style="text-align: justify;">
তার অর্ধেক ঝুলে আছে পাপ-বৃক্ষ ডালে</div>
<div style="text-align: justify;">
এখন মাথার উপর হা- খোলা ঈশ্বর</div>
<div style="text-align: justify;">
আমার সকল খারাবি আহা</div>
<div style="text-align: justify;">
খায়াবি রঙে ঝিলমিল</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>দলিত সমাজ</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
সাম্রাজ্যবাদের আগ্রাসী যুদ্ধে বিপন্ন বিশ্ব</div>
<div style="text-align: justify;">
চলছে মহাযুদ্ধের আয়োজন</div>
<div style="text-align: justify;">
দেশ বিক্রির পুঁজির খেলা</div>
<div style="text-align: justify;">
যুদ্ধের বলি বিশ্বের কোটি জনতা</div>
<div style="text-align: justify;">
যুদ্ধের উদ্দেশ্য জনগণের ঘাড়ের উপর</div>
<div style="text-align: justify;">
পঁচা-গলা সমাজটাকে চাপিয়ে রাখা</div>
<div style="text-align: justify;">
স্বার্থোদ্ধার করা গুটিকয়েক ধনিক রাষ্ট্র,</div>
<div style="text-align: justify;">
গুটিকয়েক ব্যক্তির এই যুদ্ধের অনিবার্যতা কোথায়</div>
<div style="text-align: justify;">
বিশ্ব জনগণ কি বলি হবে এ আগ্রাসী যুদ্ধের</div>
<div style="text-align: justify;">
না কি সমষ্টির স্বার্থে অবশ্যই ঠেকাবে</div>
<div style="text-align: justify;">
যুদ্ধের মাধ্যমে যুদ্ধকে</div>
<div style="text-align: justify;">
পঁচা-গলা সমাজকে মুছে দিবে ইতিহাস থেকে</div>
<div style="text-align: justify;">
লিখবে নতুন ইতিহাস, অসম্ভবকে সম্ভব করবে</div>
<div style="text-align: justify;">
আমরা ইতিহাসের সেই অনিবার্যতায় বিশ্বাসী</div>
<div style="text-align: justify;">
যে ইতিহাসের রচয়িতা বিশ্বের কোটি কোটি</div>
<div style="text-align: justify;">
নিপীড়িত মানুষ</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<br />
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>অসময়ের মেঘ</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
নক্ষত্র ফিরে গেলে</div>
<div style="text-align: justify;">
আকাশে তাকাবেনা কেউ</div>
<div style="text-align: justify;">
সূর্যটা ডুবুডুবু। অমবস্যা চাঁদ</div>
<div style="text-align: justify;">
বাউরি বাতাস নি:শ্বাস ফেলে তিমিরের দ্বীপে</div>
<div style="text-align: justify;">
অসময়ের মেঘালয় দক্ষিণা জানালায়...</div>
<div style="text-align: justify;">
পশ্চিমা বাতাসে কেঁপে ওঠে মানচিত্র</div>
<div style="text-align: justify;">
লাল-সবুজের মানচিত্র যদি বুলেটবিদ্ধ করে</div>
<div style="text-align: justify;">
ঐ বিষাক্ত হাত; রক্ষা করবে কে</div>
<div style="text-align: justify;">
বিজলীর আলোয় নগর দ্যুতিময় হলেও</div>
<div style="text-align: justify;">
সূর্যকে মনে হয় পনের কোটি মানুষ</div>
<div style="text-align: justify;">
বিবর্ণ দেখি রক্তিম সূর্য রক্তরেখা</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>চোখের পাতায়</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
দক্ষিণা জানালায় জেগে আছে চাঁদ </div>
<div style="text-align: justify;">
চৈতি হাওয়ায় ভেসে যায় মেঘ</div>
<div style="text-align: justify;">
কোন দূর অজানায়</div>
<div style="text-align: justify;">
ক্লান্তির খরা কাটেনা চোখের পাতায়</div>
<div style="text-align: justify;">
মনে হয় কোথাও নির্বাসনে আমি</div>
<div style="text-align: justify;">
তবু কাকতাড়–য়ার পোশাক পরে</div>
<div style="text-align: justify;">
তোমার অপেক্ষায় আছি</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
নীলাভ আকাশে কী তাঁরা ফোটেনা</div>
<div style="text-align: justify;">
হেমন্তের কুয়াশা ঢাকা সন্ধ্যায়</div>
<div style="text-align: justify;">
স্মৃতির পাখিরা কী শীতপাখির মতোন</div>
<div style="text-align: justify;">
ফিরে আসেনা বাঁকখালীর বাঁক ফেরানো সে’ </div>
<div style="text-align: justify;">
মহেশখালী চ্যানেলের মোহনায়</div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>বিজয়</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
বিজয় তুমি এসেছিলে</div>
<div style="text-align: justify;">
রাত্রির অন্ধকারে দূর্গম পথ মাড়িয়ে</div>
<div style="text-align: justify;">
কস্তুরাঘাটের শহীদ ফরহাদের কবর ছুঁয়ে</div>
<div style="text-align: justify;">
সুভাষের শ্বশানের নীরবতায়</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
আকাশে ছিলনা চাঁদ</div>
<div style="text-align: justify;">
ছিল না শোকতারা</div>
<div style="text-align: justify;">
তবুও তুমি হওনি দিশেহারা</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
বিজয় তুমি এসেছিলে</div>
<div style="text-align: justify;">
সাহসী বীর যোদ্ধার অন্তর জুড়ে</div>
<div style="text-align: justify;">
লক্ষ মায়ের বুক খালি করে</div>
<div style="text-align: justify;">
লাল-সবুজের পতাকায়</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
বিজয় তুমি এসেছিলে </div>
<div style="text-align: justify;">
একাত্তরের ষোলই ডিসেম্বর</div>
<div style="text-align: justify;">
শস্য-শ্যামল এই বাংলার আঙিনায়</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>রেজু খালের মোহনায়</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
রেজু খালের মোহনায় একাত্তুরে</div>
<div style="text-align: justify;">
মিত্রবাহিনীর নৌযান এসেছে সংবাদে</div>
<div style="text-align: justify;">
পাকিস্তান তখন ফাঁকিস্থান হলে পর</div>
<div style="text-align: justify;">
জিন্দাবাদ ভুলে স্বাধীনচেতা বাঙালি</div>
<div style="text-align: justify;">
জয়বাংলা জয়ধ্বনিতে আকাশ কাঁপিয়েছিল</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
দুদিন পরেই মহান ষোল ডিসেম্বর</div>
<div style="text-align: justify;">
মুক্তির মন্দিরে অবরুদ্ধ বাঙালির</div>
<div style="text-align: justify;">
মহানন্দের বিজয় দিবস</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
কক্সবাজার মুক্ত হয়েছিল দুদিনই আগেই</div>
<div style="text-align: justify;">
স্বাধীন দেশের পতাকা উড়িয়ে</div>
<div style="text-align: justify;">
জয়বাংলা জয়ধ্বনিতে</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
রেজুখালের মোহনা খুঁজে কক্সবাজার নামতেই</div>
<div style="text-align: justify;">
মিত্রবাহিনীর দুই সেনা</div>
<div style="text-align: justify;">
বঙ্গোপসাগরের চোরাবালিতে প্রাণ দিল</div>
<div style="text-align: justify;">
এত্তোসব গল্প মোহিত ও মোহনারা কী আজো </div>
<div style="text-align: justify;">
জানে মুুক্তিযুদ্ধের চেতনায়</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<br />
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>ভাঙনের শব্দ</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
ভ্ঙানের শব্দ বাজে বুকে অনাহুত </div>
<div style="text-align: justify;">
শব্দ এক ঘুরে ঘুরে শিউয়ের পাশ ঘেষে শোয়</div>
<div style="text-align: justify;">
জীবনের করুণগাঁথা</div>
<div style="text-align: justify;">
বিউগলের সুর হয়ে বাজে</div>
<div style="text-align: justify;">
‘যে নদী হারায়ে স্রোত চলিতে না পারে’</div>
<div style="text-align: justify;">
তার কেন ভাঙনের ঘরপোড়া ভয়</div>
<div style="text-align: justify;">
জৈষ্টের খরতাপে </div>
<div style="text-align: justify;">
তার আবার কে খবর লয়</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>রাতের পাখি</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
আমার ইচ্ছের আকাশে তোমাকে উড়াই</div>
<div style="text-align: justify;">
কবিতার আকাশেও তোমাকে উড়াই</div>
<div style="text-align: justify;">
তোমার বেণীকরা চুল, নীল কামিজের ডানায়</div>
<div style="text-align: justify;">
মধ্যরাতের জোছনার সাথে আড়িপাতা</div>
<div style="text-align: justify;">
ডেকে যায় রাতের পাখি</div>
<div style="text-align: justify;">
আমি একাকী</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
আমার ইচ্ছের আকাশ ও রাতের আকাশে</div>
<div style="text-align: justify;">
তুমি জেগে থাকো</div>
<div style="text-align: justify;">
মানুষ ঘুড়ির আদলেই...</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<b><br /></b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>কালাম আজাদ, বাহারছড়া, কক্সবাজার, শিক্ষাগত যোগ্যতা: বিএ অনার্স বাংলা, পেশা: সাংবাদিকতা ও লেখালেখি, সম্পাদনা: গরাণ (শিল্প সাহিত্যেরকাগজ)</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<b>০১৮১৪৪৯৫৪৬৬</b></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-86211004222575017322013-11-08T09:16:00.001-08:002013-11-08T09:16:11.728-08:00সকলকে বুঝি বলেই<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<span class="fwn fcg"></span><br />
<ul class="uiList uiStream uiStreamHomepage translateParent uiStreamRedesign uiStreamLargeHeadline _4kg _4ks">
<li class="uiUnifiedStory uiStreamStory genericStreamStory aid_100000771172954" id="stream_story_527d1b8fe86005a90535534"><div class="storyInnerContent storyContent">
<div class="mainWrapper">
<div class="storyInnerWrapper">
<h5 class="uiStreamMessage userContentWrapper" data-ft="{"type":1,"tn":"K"}">
সকলকে বুঝি বলেই বুঝেনা কেউই আমাকে<span class="messageBody" data-ft="{"type":3,"tn":"K"}"><div>
<span class="userContent"> নিরেট নি:স্বার্থ ভালোবাসি বলেই কী এ দুর্বিপাকে<br /> পৃথিবী নামক গ্রহে একমাত্র অভিভাবক জানি যারে<br /> অথচ সেও শেষতক বুঝে ওঠতে পারেনি আহারে</span></div>
</span></h5>
</div>
</div>
</div>
</li>
</ul>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-11038735190363244172013-08-02T08:25:00.000-07:002014-08-22T08:16:59.567-07:00সত্তরের নির্বাচন ও কক্সবাজার<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
পূর্ব
পাকিস্তানের সাবির্ক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ
সেনাবাহিনী প্রধান আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে
সামরিক আইন জারি করে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। আইয়ুব খানের আহ্বানে ইয়াহিয়া
খান সতর্কতার সাথে ২৬ মার্চ ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ
দেন। ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমি পরিস্কারভাবে বলতে চাই যে, আমার কোন ব্যক্তিগত
উচ্চাশা নেই, আমি শুধু একটি সাংবিধানিক সরকার গঠনের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি
করতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, একটি গঠনমুলক রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য এবং
অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে
বিনা ঝামেলায় ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বশর্ত হলো, একটি নির্ভরযোগ্য
পরিচ্ছন্ন ও সৎ প্রশাসন। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দায়িত্ব হবে একটি
প্রয়োগবাদী সংবিধান প্রণয়ন করা এবং সমুদয় রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক
সমস্যাবলির সমাধান খুঁজে বের করা।<br />
<ins style="border: none; display: inline-table; height: 90px; margin: 0; padding: 0; position: relative; visibility: visible; width: 728px;"></ins></div>
<div style="text-align: justify;">
রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপের জন্য ইয়াহিয়া
খানকে পূর্ব বাংলার প্রজাহিতৈষী শাসক মনে হলেও তার আসল চেহারা প্রকাশ পায়
১৯৭০ সালের ২৮ মার্চ জারী খবমধষ ঋৎধসব ডড়ৎশ (খঋঙ)এর ঘোঘণার মাধ্যমে। এ
ঘোষণার সঙ্গে ছয় দফা কর্মসূচির অনেক সাদৃশ্য থাকলেও ১৪(১) ধারানুযায়ী এসব
প্রস্তাবের কোন মূল্য ছিল না বলেই পূর্ব পাকিস্তানের মাওলানা আবদুল হামিদ
ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ এলএফও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। মস্কোপন্থী ন্যাপ
নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো কিনা সে সম্বন্ধে কিছু না বলে এল এফ ও ’র ২০,
২৫ এবং ২৭ ধারা সমুহ বদলা দেওয়ার দাবী জানান। সকল মুসলিম লীগ, পিডিপি,
জায়ামাতে ইসলামী, নেজামী ইসলামী কোন শর্ত ছাড়ায় এলএফও’ গ্রহণ করেন। ৫আওয়ামী
লীগও বৃহত্তর সার্থে এলএফও গ্রহণ করে। এ সম্পর্কে শেখ মুজিবুর রহমান তার
দলীয় কর্মীদের এক সভায় বলেন : ‘ আমার লক্ষ্য বাঙলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা,
নির্বাচন শেষ হওয়া মাত্রই আমি এলএফও টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলব।<br />
জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দখল করেই পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম সাধারণ
নির্বাচন দেবার ঘোষণা করে। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর জাতীয় পরিষদ ও ১৭
ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের তারিখ ঘোষণা করা হয়। । এতে করে পূর্ব
পাকিস্তানের লোকজন আশান্বিত হয়ে উঠে। সাধারণ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসতে লাগলো
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মধ্যকার চাপা আনন্দ উচ্ছ্বাস আকারে দেখা দেল।
পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ পশ্চিম পাকিস্তানীদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো। সাধারণ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার কয়েকদিন পর ১৯৭০
সালের ১২ নভেম্বর পূর্ব পাকিস্তানের উপকূলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে
আসে। এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝঙেই দশ লক্ষ মানুষ আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যায়।
সে রকম দুর্যোগ পৃথিবীতে খুব কমই হয়েছিল। ঘুর্ণিঝঙের আঘাতে একসাথে এত বনি
আদমের প্রাণহানি এর আগে কোথাও হয়নি। পুরো উপকূল ঘুর্ণিঝঙের তান্ডবে
লন্ডভন্ড হয়ে যায়। দশ লক্ষ মানুষ মারা গেল, পুরো উপকূল কবরস্থানে পরিণত
হলো, পুরো উপকূল বিধ্বস্থ হলো কিন্ত পাকিস্তানের স্বৈর শাসকেরা সাহায্যের
হাত নিয়ে বাঙালিদের কাছে এগিয়ে আসল না। ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকার মানুষ যারা
বেঁচে ছিল তারাও ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। অনেকেই মারা গেল
খাদ্যের অভাবে, পান করার জন্য বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে। ঘূর্ণিঝড় কবলিত অসহায়
মানুষের প্রতি পাকিস্তানী শাসকদের অনিহা ও অবহেলা দেখে সমগ্র পূর্ব
পাকিস্তানের বাঙালিরা ক্ষোভে-দুঃখে ফুঁঁসে উঠলো। সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে
বাঙালিরা পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া এবং উর্দু ভাষাভাষি
পশ্চিম পাকিস্তানীদের প্রতি ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটালো। প্রচন্ড ক্ষোভে, দুঃখে
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এসময়
ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত উপকূলের মানুষের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে সাধারণ নির্বাচন
বন্ধ রাখার দাবি জানো হয। । কিন্তু স্বৈরশাসকেরা মনে করেছিল নির্বাচন হলে
তাদের তল্পিবাহক এবং পাকিস্তানপন্থি মুসলিমলীগ, নেজামে ইসলাম পার্টি,
পাকিস্তান পিপলস পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হবে। ক্ষুব্ধ হয়ে মাওলানা
আবদুল হামিদ খান ভাসানী এক জনসভায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবার ঘোষণা দেন
এবং একই সাথে পাকিস্তানীদেরকে ‘আস্সালাসু আলাইকুম’ জানিয়ে দেন। এই
‘আসসালামু আলাইকুম’ই শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানীদের জন্য বিদায় ঘন্টা বাজিয়ে
দেয় এবং পূর্ব পাকিস্তানকে পৃথক করে বাঙালিদের আবাসভূমি ‘বাংলাদেশ’ সৃষ্টির
মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায়।<br />
বাঙালির প্রচন্ড অনাগ্রহ ও অনিহার মধ্যেও ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর
অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের ১০টি
জাতীয় পরিষদের আসনের জন্য ৫০ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। তারমধ্যে
চট্টগ্রাম জেলার কক্সবাজার মহকুমায়ও দুটি আসন নির্ধারিত হয়।
সাতকানিয়া-কুতুবদিয়া-চকরিয়া নিয়ে এন-ই- ১৬০- সাতকানিয়া- কুতুবদিয়া- চকরিয়া
আসনের মনোনয়ন দাখিলকারী প্রার্থীরা হল- আবু সালেহ (আওয়ামী লীগ), আজিজুর
রহমান প্রকাশ লাল আজিজ (পিডিপি), মৌলানা সিদ্দিক আহমদ (নেজাম ইসলামী),
আলহাজ্জ্ব মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরী (কনভেনশন মুসলিম লীগ), গৌরি শংকর পাল
(স্বতন্ত্র)। চকরিয়া-কুতুবদিয়া ছাড়া সমগ্র কক্সবাজার মহকুমায় একটি নিয়ে
আসন। এন-ই-১৬১-কক্সবাজার আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী প্রার্থীরা হল- নুর
আহমদ (আওয়ামী লীগ), মৌলভী ফরিদ আহমদ (পিডিপি), জাফর আলম চৌধুরী (কনভেনশন
মুসলিম লীগ), ফিরোজ আহমদ (স্বতন্ত্র)।<br />
অবশেষে ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সাতকানিয়া-কুতুবদিয়া-চকরিয়া আসনে
তরুণ আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু সালেহ ১৯৬২ সনের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য
আজিজুর রহমান প্রকাশ লাল আজিজ এবং ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত
এমএলএ নেজামী ইসলামীর কেন্দ্রিয় নেতা মাওলানা সিদ্দিক আহমদকে হারিয়ে জয়লাভ
করেন এবং এন-ই- ১৬১-কক্সবাজার আসনে ডাকসুর সাবেক ভিপি, পাকিস্তানের সাবেক
এমএলএ ও মন্ত্রী মৌলভী ফরিদ আহমদকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে কক্সবাজার
মহকুমা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা নুর আহমদ জয়লাভ
করেন।<br />
এ দিকে ১৯ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদের কক্সবাজার মহকুমার
তিনটি আসনে ১৭জন মনোনয়নপত্র পেশ করেন। চকরিয়া-কুতুবদিয়া থানাকে একটি,
কক্সবাজার মহেশখালী থানা নিয়ে একটি এবং রামু উখিয়া টেকনাফ থানা নিয়ে একটি
আসন নিয়ে নির্বাচনী এলাকা নির্ধারিত হয়। পি-ই-২৯৬-১৬-চকরিয়া-কুতুবদিয়া আসনে
ডা. শামসুদ্দিন (আওয়ামী লীগ), জালাল আহমদ চৌধুরী (কনভেনশন মুসলিম লীগ),
জহিরুল ইসলাম (আওয়ামী লীগ), মোস্তাক আহমদ চৌধুরী (মুসলিম লীগ), মোখতার আহমদ
চৌধুরী (জামায়াত), আব্বাস আহমদ চৌধুরী (স্বতন্ত্র), রুহুল কাদের চৌধুরী
(স্বতন্ত্র)। কক্সবাজার মহেশখালী থানা নিয়ে গঠিত
পি-ই-২৯৭-চ-কক্সবাজার-মহেশখালী আসনে মোস্তাক আহমদ চৌধুরী (স্বতন্ত্র), এ কে
এম মোজাম্মেলল হক ( আওয়ামী লীগ), মোহাম্মদ রশিদ (কনভেনশন মুসলিম লীগ),
আবদুস সালাম (স্বতন্ত্র), মৌলভী জাকারিয়া (নেজাম ইসলামী), আবুল কাশেম মিয়ান
(জামায়াত)। রামু উখিয়া টেকনাফ থানা নিয়ে গঠিত
পি-ই-২৯৮-চ-১৮-রামু-উখিয়া-টেকনাফ আসনে ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী (আওয়ামী
লীগ), আবদুল গফুর চৌধুরী (কনভেনশন মুসলিম লীগ), এডভোকেট সালামত উল্লাহ
(জামায়াত), মোক্তার আহমদ চৌধুরী (পিডিপি)। ২৮ অক্টোবর চকরিয়া- কুতুবদিয়া
আসনে মনোয়নপত্র দাখিলকারী আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. শামসুদ্দিন প্রাদেশিক
পরিষদ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন।<br />
১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল ১৮ ডিসেম্বর ঘোষণা করা হয়। এ
নির্বাচনে পি-ই-২৯৬-১৬-চকরিয়া-কুতুবদিয়া আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জহিরুল
ইসলাম ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও তৎকালিন
মহকুমা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রার্থী
জালাল আহমদ চৌধুরীকে ৫৮৮৯ ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেন। এ নির্বাচনে আওয়ামী
লীগের প্রার্থী জহিরুল ইসলাম ১৮৬২৭ ভোট, কনভেনশন মুসলিম প্রার্থী জালাল
আহমদ চৌধুরী ১২৭৪৪, স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্বাস আহমদ চৌধুরী ১০৭৫৪, মোস্তাক
আহমদ চৌধুরী ১৭৮১, জামায়াত ইসলামী প্রার্থী মোখতার আহমদ চৌধুরী ৬৮২৯ এবং
স্বতন্ত্র প্রার্থী রুহুল কাদের চৌধুরী ৭২৯ ভোট পায়।<br />
পি-ই-২৯৭-চ-কক্সবাজার-মহেশখালী আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোস্তাক আহমদ
চৌধুরী কনভেনশন মুসলিম প্রার্থী মোহাম্মদ রশিদ বিএকে ৬০০৯ ভোটে পরাজিত করে
জয়যুক্ত হন। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ কে এম মোজাম্মেল হক ১১২০৪ ভোট,
জামায়াত প্রার্থী আবুল কাসেম মিয়ান ১০৪৬৭, নেজাম ইসলামী প্রার্থী মৌলভী
জাকারিয়া ৪৩৩৯, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুস সালাম ৩৮১ ভোট পায়।<br />
পি-ই-২৯৮-চ-১৮-রামু-উখিয়া-টেকনাফ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওসমান সরওয়ার
আলম চৌধুরী ১৯৫৪ ও ১৯৬২ সনের মুসলিম লীগ প্রার্থী আবদুল গফুর চৌধুরী
(কনভেনশন মুসলিম লীগ) কে ১১৯৬৬ ভোটের বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করে জয়লাভ
করেন। এ আসনে জয়ী প্রার্থী ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী ২১১৩২, কনভেনশন মুসলিম
লীগ প্রার্থী আবদুল গফুর চৌধুরী ১১৯৬৫, জামায়াত প্রার্থী এডভোকেট সালামত
উল্লাহ ৯৩২০ এবং পিডিপি প্রার্থী মোক্তার আহমদ চৌধুরী ১০৪১ ভোট পান।<br />
১৯৭০ এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদ এবং প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত
আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ছিল নবাগত, বয়সে তরুন। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করতে হয়েছিল সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠিত জৈষ্ঠ ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে। এ
নির্বাচনে কক্সবাজারের দুটি আসনেই আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত হয়। জাতীয়
পরিষদ নির্বাচনে সাতকানিয়ার কিছু অংশ- কুতুবদিয়া-চকরিয়া আসনে ১৯৫৪ সালের
যুক্তফ্রন্ট থেকে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত এমএলএ ও পঞ্চাশ দশকের নেজামী
ইসলামীর শক্তিশালী কেন্দ্রিয় নেতা খতীবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমদ (
মাওলানা ছিদ্দিক আহমদ একজন তুখোড় বক্তা, ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে বেশকয়েকটি
গ্রন্থের প্রণেতা ও বাগ্মী ছিলেন) এবং ১৯৬৫ সনের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য
মুসলীগের শক্তিশালী নেতা আজিজুর রহমান প্রকাশ লাল আজিজ (উল্লেখ্য আজিজুর
রহমান একজন তুখোড় ও বাগ্মী ছিলেন। পুরো চট্টগ্রামে তখন দু আজিজই দাপিয়ে
বেড়াতেন। একজন ছয় দফা নয় এক দাবীর উত্থাপনকারী চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি এম এ আজিজ অন্যজন চকরিয়ার আবদুল আজিজ। এম এ আজিজ একটু কালো হওয়ায়
তাকে কালু আজিজ এবং আজিজুর রহমান একটু শ্যামলা ও সুন্দর হওয়ায় তাকে লাল
আজিজ নামে পরিচিত ছিলেন) এবং মোজাফ্ফর আহমদ চৌধুরীও সামাজিক ভাবে
প্রতিষ্ঠিত কনভেনশন মুসলিম লীগের শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। এ রকম
সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত তিন জন প্রতাপশালী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে পরাজিত
করে সদ্য ছাত্র শেষ হওয়া তরুণ আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবু সালেহ জয় লাভ করাটা
সহজ বিষয় নয়।<br />
এবং এন-ই- ১৬১-কক্সবাজার আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কারী মৌলভী ফরিদ আহমদ
প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন থেকে ডাকসুর সাবেক ভিপি নির্বাচিত হন, ১৯৪৮ সালে
রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সময় প্রথম সরকারী চাকুরজীবী হিসেবে রাষ্ট্রভাষা
আন্দোলনের সমর্র্থনে প্রথম চাকরীতে ইস্তাফাকারী, ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট
নির্বাচনের সাবেক এমএলএ ও শ্রম মন্ত্রী, ১৯৬২ এবং ১৯৬৫ সনের জাতীয় পরিষদ
নির্বাচনে নির্বাচিত এমএলএ পিডিপির কেন্দ্রিয় ভাইস প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক
ব্যক্তিত্ব। ১৯৬২ সালের কুতুবদিয়া উখিয়া টেকনাফ আসনে থেকে নির্বাচিত জাতীয়
পরিষদ সদস্য জাফর আলম চৌধুরীর মত সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিকভাবে
শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের মহকুমা সাধারণ
সম্পাদক এডভোকেট নুর আহমদ জয়লাভ করেন।<br />
প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে চকরিয়া কুতুবদিয়া আসনের পরাজিত প্রার্থী জালাল
আহমদ চৌধুরী যিনি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে কক্সবাজার মহকুমা
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সরকারের
সাবেক স্পীকার ও অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন
কনভেনশন মুসলীম লীগের সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত নেতা ছিলেন। সমাজে প্রতিষ্ঠিত
রাজনীতিবিদ আব্বাস আহমদ চৌধুরী, জামায়াত নেতা মোখতার আহমদ চৌধুরী, মোস্তাক
আহমদ চৌধুরী ও রুহুল কাদের চৌধুরীর মত শক্তিশালী প্রাথীকে পরাজিত করে তরুন
আওয়ামী লীগ আইনজীবী জহিরুল ইসলাম জয়যুক্ত হন।<br />
কক্সবাজার মহেশখালী আসনে কক্সবাজার মহকুমা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা প্রচার
সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধের সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত কনভেনশন
মুসলীম লীগের প্রভাবশালী নেতা মোহাম্মদ রশিদ বিএ, সমাজে প্রতিষ্ঠিত জামায়াত
নেতা আবুল কাশেম মিয়ান, নেজামী ইসলামীর জেলার শক্তিশালী নেতা মৌলভী
জাকারিয়া, তৎকালিন কক্সবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান শক্তিশালী মুসলীম লীগ নেতা
আবদুস সালাম (যিনি সালাম নামে পরিচিত) এর মতো শক্তিশালী হেবিয়েট
প্রার্থীকে পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চৌফলদন্ডীর জমিদার খান
বাহাদুর মোজাফফর আহমদ চৌধুরীর সন্তান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী (যিনি ১৯৭৩ সালে
কক্সবাজার মহেশখালী, ১৯৯১ সালে কক্সবাজার রামু আসনে নির্বাচিত এমপি ছিলেন
এবং বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন)
জয়লাভ করেন। অবশ্য উক্ত আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন এ কে এম
মোজাম্মেল হক। তিনিও ১১২০৭ ভোট পেয়ে তিন নম্বর স্থানে ছিলেন।<br />
রামু উখিয়া টেকনাফ আসনে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে মুসলিম লীগ
প্রার্থী আবদুল গফুর চৌধুরী, কক্সবাজারে বিগদ্ধ সমাজের কাছে পরিচিত
কক্সবাজার মহকুমা জামায়াতের আমীর এডভোকেট সালামত উল্লাহ এবং উখিয়া রতœা
পালং এলাকার জমিদারের সন্তান পিডিপি প্রার্থী মোকতার আহমদ চৌধুরীর মতো
সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগ নেতা
রামুর ওসমান সরওয়ার আলম চৌধুরী জয়লাভ করেন।<br />
অত্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল
দেখে পাকিস্তানী স্বৈরাশাসক ও পাকিস্তানের ক্ষমতালিপ্সু রাজনৈতিক
নেতৃবৃন্দের অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল। নির্বাচনের ফলাফলে পাকিস্তানী
স্বৈরশাসকের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। পাকিস্তানী সেনা শাসকসহ পশ্চিম
পাকিস্তানীদের বদ্ধমূল ধারণা ছিল নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দল একক
সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। সাধারণ নির্বাচনের ভোট গণনার পরে দেখা গেল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যা
গরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের
মধ্যে ১৬০টি আসনে জয়ী হয়। যখন সকল আসনে নির্বাচন শেষ হলো তখন দেখা গেল,
মনোনীত মহিলা আসনসহ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ৩১৩টি আসনের মধ্যে পূর্ব
পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন, পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকার আলী ভুট্টোর
নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস্ পার্টি-পিপিপি ৮৮টি আসনে বিজয়ী হয়েছে।
অন্যান্য সব দল মিলে পেয়েছে অবশিষ্ট ৫৮টি আসন। পাকিস্তান পিপলস্ পার্টিসহ
অন্যান্য আসনে বিজয়ী দলগুলো এলাইয়েন্স করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে
পারে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায়
বসানো ছাড়া পাকিস্তানী স্বৈরশাসকদের হাতে আর কোন বিকল্প নাই। কিন্তু পূর্ব
পাকিস্তানের বাঙালিদের হাতে তো ক্ষমতা দেওয়া যায় না। এসময় পশ্চিম
পাকিস্তানের শাসকগোন্ঠী বলাবলি করতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানের‘জলদাসেরা কী
প্রধানমন্ত্রীর সিংহাসনে বসবে’? পশ্চিম পাকিস্তানী শাসকেগোষ্ঠী পূর্ব
পাকিস্তানের জনগণ তথা বাঙালিদেরকে জলদাসই মনে করতো। তাই বাঙালিদেরকে
সিংহাসনে বসতে দেয়া যায় না। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী
সেনা শাসকদের পরিষ্কার করে বলে দিলেন যে, ‘আমি ছয় দফার কথা বলে জনগণের কাছ
থেকে ভোট নিয়েছি। শাসনতন্ত্র রচনা করতে হবে ছয় দফার ভিত্তিতে, দেশ শাসিত
হবে ছয় দফার ভিত্তিতে।’ পাকিস্তানের সেনাশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া এবং পশ্চিম
পাকিস্তানি শোষকেরা শুরু করলো ষড়যন্ত্র। তাদের ষড়যন্ত্রের একমাত্র বিষয়,
কিভাবে বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা দেয়া না যায়। তাদের এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে
পাকিস্তান নামের অখন্ড রাষ্ট্রের কবর রচিত হলো। সংখ্যাগরিষ্টতা অজর্ন করেও
ক্ষমতা হস্তান্তরের তালবাহনা করা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মুসলিম লীগ, নেজামী
ইসলাম, পিডিপি ও জামায়াত ইসলামের নেতা-কমী ও সমর্থকরা। আসতে আসতে কক্সবাজার
সফর করতে আসে। এ নির্বাচনে জামায়াত প্রার্থীরা জয়লাভ না করলেও প্রায় সব
কটি আসনে সন্তোষজনক অবস্থানে থাকায় খুশী হয়ে পাকিস্তানের অখন্ডতা রাখার
মহান (!) কাজে প্রসার প্রচারণা চালাতে পুর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমীর
গোলাম আযম কক্সবাজার সফর করেন ৭১ সালের ২১ জানুয়ারি।</div>
<div style="text-align: justify;">
<b>দোহাই:</b></div>
<div style="text-align: justify;">
১. ডা.মাহফুজুর রহমান, বাঙালির
জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম, মার্চ ১৯৯৩, বাংলাদেশের
মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে গবেষণা কেন্দ্র, চট্টগ্রাম,।<br />
২. কামরুদ্দীন আহমদ, ‘স্বাধীন বাংলার অভ্যূদয় এবং অত:পর’, ফেব্রুয়ারি ২০০৬, ধ্রপদ সাহিতাঙ্গন, ঢাকা।<br />
৩. মো.কামরুল হোদা, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস: উৎস সন্ধান’, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, জুন ২০১২।<br />
৪. ড. মোহাম্মদ ফায়েকউজ্জামান, মুজিবনগর সরকার ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮।<br />
৫. কালাম আজাদ, মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজার: জানা অজানা তথ্য, বিজয় (বিজয়ের ৪১
পূর্তি স্মারক), কক্সবাজার জেলা প্রশসন, ১৬ ডিসেম্বর ২০১২।</div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-27395841881436299462013-07-28T11:00:00.001-07:002013-07-28T11:00:52.798-07:00কবি ও নজরুল সমালোচক মুহম্মদ নূরুল হুদা<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
সাহিত্যে একটি প্রবাদ আছে ‘কবিরা তৈরী হয়না, তারা জন্মগ্রহণ করেন। সমকালীন বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবি মুহম্মদ নূরুল হুদাও একজন জন্ম-স্বাধীন কবি। একজন জনপ্রিয় ও শক্তিশালী লেখক হিসেবে মুহম্মদ নূরুল হুদা সাহিত্যের শুধু একটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নন, তাঁর পদচারণা সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে। নিসর্গ এবং পরিবেশ একজন কবির শিক্ষক হিসাবে কাজ করে। মুহম্মদ নুরুল হুদা এমন একটি প্রকৃতির মাঝে জন্ম গ্রহণ করেন, যেখানে হাজারো দেশী-বিদেশী পর্যটক এসে ভিড় জমায়। দরিয়ানগর (কক্সবাজার) জেলার উত্তর পোকখালী গ্রামে ১৯৪৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাজী মোহাম্মদ সেকান্দার ও আঞ্জুমান আরা বেগমের ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন। ষাটের দশকে ইংরেজী সাহিত্যের অনার্সে ছাত্র থাকাকালীন সময়ে কবি হিসাবে মুহম্মদ নূরুল হুদার অগ্রযাত্রা শুরু হয়। ষাটের দশকে (১৯৬৭) উর্মি মালা সাহিত্য সংসদ থেকে কক্সবাজারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সাহিত্য সংকলন “কলতান” প্রকাশ হয় তাঁরই সম্পাদনায় । কবি হিসাবে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শোণিতে সমুদ্রপাত’ স্বাধীনতার এক বছর পরই প্রকাশিত হয়। ষাটের দশকের উত্তাল রাজনৈতিক আবহাওয়ায় তিনি মানুষ। সময়ের স্বাক্ষর তাঁর রচনায় ষ্পষ্ট ও প্রকাশ্যভাবে ধরা পড়েছে। এ সময়ের কবিতার কেন্দ্রীয় সুরই বিক্ষুদ্ধ গণ-আন্দোলন, রাজনৈতিক ও সামাজিক সচেতনতার। সেদিক বিবেচনায় মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁর সহজীবী কবিদের সঙ্গে একই পাটাতনে দাঁড়িয়ে ওই দশকের দ্বিতীয় প্রজন্মের কবি হিসাবে স্বীকৃতি আদায় করতে সক্ষম হয়। গ্রাম বাংলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঠিক রূপায়ন তাঁর কবিতার প্রধান সুর। প্রকৃতি, নারী ও প্রেম বিষয়ক কবিতা রচনায় তিনি অত্যন্ত সাবলীল। ছন্দ সচেতন এই কবির রচনাকর্মে অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত এবং স্বরবৃত্তের ছন্দের সমানুপাতিক মিশ্রণ লক্ষণীয়। তাঁর বিভিন্ন কবিতার বিষয় ও ভাবনা বাস্তব জীবন থেকে আহৃত। সাহিত্য তাঁর আশার প্রদীপ ও সংগ্রামশীলতার প্রতীক এবং মানবতাবাদের পতাকা। কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা এ পর্যন্ত ৪৫ টির অধিক কাব্যগ্রন্থ রচনা করে বাংলা কাব্য সাহিত্যে একটি অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন। যদিও তিনি গতানুগতিক কবিতা লেখেন। আমরা আশা করি মাইকেল মধূসুদন, কাজী নজরুল ইসলামের মতো কাব্য জগতে একটি নতুন প্রবাহ সৃষ্টি করে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এক নতুন আইকন হিসাবে মুহম্মদ নূরুল হুদার নাম ব্যবহৃত হয়।
মুহম্মদ নূরুল হুদা একজন একনিষ্ট যৌবন শক্তি সম্পন্ন পন্ডিত কবি, কথা সাহিত্যিক এবং নিষ্ঠাবান গবেষক। তার গবেষনাক্ষেত্র বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই নিবন্ধে সামগ্রিক দিক বিবেচনা না করে একমাত্র নজরুল বিষয়ক তাঁর রচনা সমুহের প্রতিই আলোকপাতে প্রয়াসী হচ্ছি। বিদ্রোহী কবি নজরুল বাংলাসাহিত্যে একজন ‘অদ্বয় কুটাভাস’। সাহিত্যে তাঁর আগমন, পদচারনা এবং বিদায় এক নাটকীয় বৈশিষ্ট্যে দেদীপ্যমান। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুল এক বিশেষ স্থান দখল অধিকারী । তাঁর কবিতার চারণিক বৈশিষ্ট্য, বিষয় –বৈচিত্র্যের আভিজাত্য শব্দ ও প্রতীকী ব্যবহারে তাঁর পরিসিত জ্ঞান এবং কবিত্ব প্রতিভার অপুর্ব প্রকাশ মানতা বা আমাদের নাড়া দেয়। আমরা অভিভূত হই- একজন স্বল্প শিক্ষিত ব্যক্তির মধ্যে গভীর পান্ডিত্য, স্বয়দ্ভ কবি – প্রতিভা কত সক্রিয়ভাবে উজ্জীবিত ছিল- তা দেখে। মুহম্মদ নূরুল হুদার নজরুল বিষয়ক অনেক কবিতা রয়েছে। যে কবিতাগুলোর মধ্য দিয়ে কাজী নজরুল ইসলামের চেতনাকে স্বরূপে উন্মোচন করা যায়। কবি হুদার কবিতায় কাজী নজরুলের দিলখোলা সহজ সারল্য,আনন্দমুখী জীবন, উচ্ছ্বাসমুখীকর্মকোলাহল, ভালোবাসামুখী অন্তর, প্রতিভার প্রদীপ্ত উজ্জ্বলতা তাকে অসাধারণ করে তুলেছেন-
‘কত জন্ম, কত পূণ্য কত রক্তবলে
বেড়েছিস চক্রবৃদ্ধি হারে
তোরই বংশের ধারা
আজ জনে জনে শত্র“ঘœ জনতা,
তোকেই রাখবে তারা চোখে,
বল, তুই পালাবি কোথায়?
‘নজরুল সুন্দর’কবিতায় নজরুল সাহিত্য যে এদেশ থেকে বৃটিশ তাড়াতে বিদ্রোহ ধ্বনিত প্রতিধ্বনি হয়েছিল সে যুগের মুক্তি প্রয়াসে। নজরুলের শৃঙ্খলিত সাহিত্যের গান গাইতে গাইতে সত্যি সত্যি আমরা যুদ্ধে গিয়েছিলাম এবং স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনেছিলাম। সে কথাটিরই উল্লেখ পাওয়া যায় মুহম্মদ নুরুল হুদার নজরুল বিষয়ক অনেক কবিতায়-
‘তোমার অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বাঙালি অকুতোভয়
মুক্তিযুদ্ধে আনলো ছিনিয়ে জয় বাংলার জয়
সবুজ স্বদেশ সোনালী বৃত্তে আনলো সূর্যক্ষণ
স্বাধীন বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা, আত্মার রূপায়ন তুমি দেখেছিলে প্রতীক প্রতিমা এ জাতিস্বত্তার।
(অগ্নিছোঁয়ায় উঠলো জেগে/সুর সমুদ্র)
এবং আরো পাওয়া যায়-
“স্বপ্নদ্রষ্টা তুমি তাই সর্বমানবিক স্বাধীন স্বত্তার
স্বপ্নদ্রষ্টা তুমি তাই তোমার স্বদেশভূমি সার্বভৌম বাংলার
তোমার স্বপ্নাভূক ধরে দুর্গম কান্তগিরি পার হয়ে বাস্তব স্বদেশ
জনে জনে মুক্তিযোদ্ধা, জমেছে জনতা, সমতটে, হরিকেলে, রাঢ়ে, বঙ্গে
এলেন শ্যামাঙ্গ এক জাতি পিতা বাঙালির জাতির, কণ্ঠে তাঁর বজ্রের উদ্দাম;
‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”
বাংলাদেশে জন্মনিলো স্বপ্নবাস্তবের উপত্যকায় বাঙালির জাতিরই এক
তুমিই জাতীয় কবি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার? (নজরুল সুন্দর/পদ্মাপারের ঢেউসোয়ার)
এ জাতি কোনদিন নজরুলকে ভুলতে চায় না। তাঁরই কাছে জাতি চির শ্রদ্ধাবনত-
বাংলার আবালবণিতা, মুক্তি জাগানিয়া’ (নজরুল সুন্দর/পদ্মাপারের ঢেউসোয়ার)
কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলমাকে নিয়ে “নজরুল বাড়ি’’, ‘অগ্নিছোঁয়ায় উঠলো জেগে’, ‘কথা ছিল প্রমীলার পাশে’, নজরুলের জন্য কয়েক পঙক্তি-২০০৫’ সহ কয়েকটি কবিতা লেখেছেন, যা নজরুলকে নতুন ভাবে চেনা জানার কৌতুহল জাগায়। যাক, এ বিষয় নিয়ে “মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতায় নজরুল বন্দনা” নামে একটি আলাদা রচনা লিখার আশা আছে বিধায় নজরুল বিষয়ক কবিতায় এখানেই ইতি টানছি।
কবিতার মতো গদ্যেও মুহম্মদ নূরুল হুদা বহুপ্রজ সফল এক লেখক। ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমী থেকে “শর্তহীন শর্তে” নামক প্রবন্ধ গ্রন্থের মধ্যদিয়ে প্রাবন্ধিক মুহম্মদ নূরুল হুদার অগ্র যাত্রা শুরু। ‘শর্তহীন শর্তে’ থেকে শুরু করে একে একে Methodology: Valuation of Identified Traditional Cultural Expressions of Bangladesh পর্যন্ত মোট ২১টি প্রবন্ধ গ্রন্থের নির্মাতা তিনি (অবশ্যি সম্পাদনা গ্রন্থ ছাড়া)।
বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখালেখি করার পাশাপাশি নজরুল বিষয়ক দু’চারটি মৌলিক প্রবন্ধ গ্রন্থও প্রকাশ করেন তিনি। মুহম্মদ নূরুল হুদা তার রচিত নজরুল বিষয়ক মৌলিক ৪টি গ্রন্থে বিভিন্ন অনুসন্ধিৎসায় নিজস্ব গবেষনার ফসল উদঘাটন করেছেন। এ গ্রন্থগুলেকে যথার্থ গবেষনাকর্ম হিসেবে কেউ কেউ স্বীকার না করতে চাইলে ও তাঁর গভীর অনুসন্ধিৎসু ও নিষ্ঠার স্বাক্ষর যে রেখেছে তা স্বীকার রেখেছে তা স্বীকার করতে দোষের কী ? ১৯৯৬ ইং সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নজরুল ইনষ্টিটিউট, ঢাকার নির্বাহী পরিচালক থাকাকালীন সময়ে নজরুল বিষয়ক মৌলিক এবং সম্পাদনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তাঁর মৌলিক গ্রন্থের মধ্যে-(১) শিশু সাহিত্য-(ক) ছোটদের নজরুল জীবনী (২০০১)। (২) গবেষনা গ্রন্থ- ক. নানন্দিক নজরুল (২০০১), খ. Nuzrul aesthetics and other Aspects (2001) গ . Atatruk’s Influence (2001)|
এ ছাড়া বিভিন্ন পত্র পত্রিকা, সাময়িকী ও মাসিক পত্রকায় তাঁর নজরুল বিষয়ক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে প্রায় শতাধিক এই প্রবন্ধ গুলোতে নজুরুলকে জানার, বুঝার এবং চিনের নিরলস প্রচেষ্টা দেখার মত। বিভিন্ন দৃষ্টি কোন মূল্যায়ন প্রয়াসী হওয়াতেই বিষয় বৈচিত্রে সুস্পষ্ট চাপ তাঁর রচিত গ্রন্থ ও প্রবন্ধে ফুটেছে। তাঁর প্রথম মৌলিক গ্রন্থ ‘নান্দনিক নজরুল’ ২০০১ সালের একুশে বইমেলায় আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থ নজরুল সাহিত্য আলোচনার একটি উল্লেখ যোগ্য গ্রন্থ। এতে নজরুল জীবনীর একটি সুদীর্ঘ অধ্যায় ছাড়াও বিভিন্ন অধ্যায়ে নজরুলের কবিতা, শিশু সাহিত্য, গদ্য সাহিত্য এবং নজরুলের কথাসাহিত্য, প্রবন্ধ ইত্যাদি সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। ‘ছোটদের নজরুল জীবনী’ বইটি সত্যিকার অর্থে ছোটদের জন্য লিখিত। নজরুল মানসে শিশু- চরিত্র বৈশিষ্ঠ্য ও ছোটদের নজরুল জীবনী ধারাবাহিক বর্ণনা দিতে প্রয়াসী হয়েছে। এতে একদিকে একটা মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ যেমন রয়েছে, অপর দিকে কবি চিত্তে শিশুর ভাবও ফুটে উটেছে।
নজরুল ইসলামকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করার লক্ষ্যে- ড. গোপাল হালদার, মীযানুর রহমান, উইলিয়াম রাড়িচে, কবির চৌধূরী, প্রবোধ চন্দ্র সেন, আমির হোসেন চৌধূরী, সিরাজুল ইসলাম চৌধূরী, আবু রূশ্দ, বাসুদা চক্রবর্তী, করুণা গোস্বামী, প্রীতিকুমার মৈত্র, তারিনী প্রসাদ ঘোষ, জাহাঙ্গীর তারেক, এস. কৃষ্ণমুর্তি, লাবিবা হাসান পাইখাই ইউয়ান, সুব্র“ত কুমার দাস, অধ্যাপক ডাব্লিউ. এফ লংলি, সাজেদ কামাল, সাইয়েদ মুজিবুল হক, আব্দুল হাকিম সহ কয়েকজন নজরুল চর্চার যে ধারা প্রবাহিত করে যাচ্ছেন, মুহম্মদ নূরুল হুদাও তার অংশীদার। ইংরেজী ভাষায় নজরুল বিষয়ক তাঁর গ্রন্থদ্বয় Nazrul Aesthetics and other Aspects (2001) এবং Atatruk’s Influence (2001)| এ গ্রন্থদ্বয়ে নজরুলের কাব্য, গদ্য সাহিত্যের বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। নজরুল সাহিত্য বিবেচনায় অন্যান্য লেখকের ইংরেজী বইয়ের মতো এই বইও নজরুলকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করতে উল্লেখ্য যোগ্য সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। ষাট বছরের অধিককাল ধরে নজরুল সাহিত্যের আলোচনা সমালোচনায় মৎ সংগৃহীত এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে, ২৫০ জনের অধিক লেখকের ৫৫০টি নজরুল বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশের যে ধারা প্রবাহিত হয়েছে এবং হচ্ছে, স্বল্প হলেও মুহম্মদ নূরুল হুদা তারই অংশীদার।
পেশাদার নজরুল গবেষক না হয়েও আমলা হিসেবে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা নজরুল বিষয়ক যেসব গ্রন্থ একক সম্পাদনা করেছেন- 'Nazrul: An Evalution. (2001, N.T), oetry of Kazi Nazrul Islam in English Translation' 1997)নজরুলের হারানো গানের খাতা (১৯৯৭), নজরুল ও বঙ্গবন্ধু (১৯৯৭), জন্মশত বর্ষে নজরুলকে নিবেদিত কবিতা (১৯৯৯), নজরুলের মক্তব সাহিত্য (২০০১), নজরুলের লাঙল (২০০১) ইত্যাদি। নজরুল বিষয়ক গবেষক রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, সুধীন দাশ, রশিদুন্নবী সহ কয়েক জনের সাথে অন্যতম সম্পাদক হিসাবে নজরুলের উপন্যাস সমগ্র (১৯৯৭), নজরুলের কাব্যনুবাদ (১৯৯৭), নজরুলের নির্বাচিত নাটক (১৯৯৭) নজরুলের ছোটগল্প (২০০১) রেকর্ড ভিত্তিক নজরুলের সঙ্গীতের নির্বাচিত বাণী সংকলন (১৯৯৭)। এ সম্পাদনা গ্রন্থগুলোতে দেশী-বিদেশী বিভিন্নজনের নজরুল বিবেচনা সংকলিত হয়েছে। যা ভাবি নজরুল গবেষককে নজরুল গবেষণা কাজে সহযোগিতা করবে।
মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁর স্বকীয় দৃষ্টিপাতেই নজরুলকে অবলোকন ও মূল্যায়ন করেছেন। কোন বহির্দেশী প্রেরণা বা তাড়নায় নয়, সামাজিক-রাজনৈতিক চেতনাই তার কণ্ঠে উচ্চারিত। তারই আরেক নতুন প্রকাশ তার নজরুল সাহিত্য বিবেচনা। নজরুল ও কাব্য বিবেচনা তার গদ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মুহম্মদ নূরুল হুদার বিবেচনা তাঁর আত্মবোধের উপর প্রতিষ্ঠিত। ‘নজরুল সাহিত্য সাধনার মূলে প্রেরণা দান করেছে সমাজ বিপ্লবের এষণা’। নজরুলের পুর্বসূরী রবীন্দ্রনাথ সহ কয়েকজন বলেন- জাগো দেশ, জাগো জাতি। আর নজরুল বললেন- জাগো নিপীড়ত, জাগো কৃষক, শ্রমিক, জাগো নারী। এখানেই তাঁর স্বাতন্ত্র ষ্পষ্ট এবং এখানেই তিনি কালোত্তর। দীর্ঘদিন মার্কসবাদ ও তৎকালীন রাজনীতি বিষয়ে অল্পবিস্তর জ্ঞানগম্যি স্বত্ত্বেও নিজেকে একনিষ্ঠ পার্টি সদস্য হিসেবে হাজির করেন। তার একান্ত বন্ধু কমরেড মুজাফ্ফর আহমদের সান্নিধ্যে তাঁর কবি জীবন পার্টি জীবনে পরিণত হয়নি। মার্কসীয় সামাজিক মমতা নজরুল মোটামুটি গ্রহণ করেছেন, কিন্তু মাকর্সীয় তত্ত্বের ছকে ফেলে কবিতা রচনা করেন নি তিনি। জগৎ ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে নজরুল পদ্ধতির শিকল ভাঙতে চেয়েছেন।
নজরুল ইনিষ্টিটিউট এর নির্বাহী পরিচালক থাকাকালে দেশী-বিদেশী নজরুল বিষয়ক বিভিন্ন সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। নজরুল সাহিত্যে অবদানের স্বরুপ নজরুল জন্মশত বার্ষিকী সম্মাননা (১৯৯৯, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ), নজরুল জন্মশত বর্ষ উদযাপন সম্মাননা (১৯৯৯, যশোর),নজরুল ফাউন্ডেশন সম্মাননা (২০০০, কলকাতা), নজরুল জন্মশত বার্ষিকী গুণীজন সম্বর্ধনা (বাংলাদেশ আইনজীবী সংসদ, ২০০১), নজরুল সম্মাননা (২০০৯) অর্জন করেন।
জনৈক ইংরেজ সমালোচক ভাষায় কবি হচ্ছেন At the most conscious point of his age (ড: মো. হারুন-অর-রশিদ, শিল্পিত নজরুল: অন্বেষিত অপচয়, ফেব্র“য়ারী ২০০৪ ঢাকা, পৃ: ৭১) জাগ্রত বিবেক ও যুগ চৈতন্যের উজ্জল প্রতিভার স্বাক্ষর বেখে কালের তাগিদ, কার প্রয়োজন ও কালের বিবেক কবি নজরুলের কাব্য- গদ্যে গাঢ়বদ্দ বাণীরূপ যে লাভ করেছে মুহম্মদ নুরুল হুদা তাঁর কাব্য- গদ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। যা নজরুল কাব্য-গদ্য সাহিত্য বিবেচনায় অন্যান্য বিবেচকদের থেকে আলাদা। এখানে তিনি স্বাতন্ত্র। - See more at: http://www.nagorikblog.com/node/11875#sthash.dh9VZJgZ.dpuf</div>
<div id="stcpDiv" style="left: -1988px; position: absolute; top: -1999px;">
১ অক্টোবর ২০১০, দৈনিক পুর্বকোণ, চট্টগ্রাম।</div>
<div style="text-align: justify;">
<b> ১ অক্টোবর ২০১০, দৈনিক পূর্বকোণ</b></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-37868901205559535432013-07-21T12:18:00.002-07:002013-07-21T12:18:30.153-07:00মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতায় মুক্তিযুদ্ধ চেতনা <div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
পরাধীনতার শিকল ভেঙ্গে গড়ে ওঠা স্বাধীন বাংলাদেশের কবিতাঙ্গনে এক ঝাঁক তরুণ কবির আবির্ভাব ঘটে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখন্ডে মানুষ পেয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চার অবারিত প্লাটফর্ম। আর এই সুযোগে এক ঝাঁক তরুণ কবিদের ছোঁয়ায় বাংলা কবিতায় ফিরে পেয়েছে নতুন প্রাণ। সময়ের উত্তাপ বাংলার কবিদের কবিতায় এনেছে একটি উচ্চকিত শ্লোগান। আর এই শ্লোগানের সঙ্গে মিশে গেছে স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলার ঘরে ঘরে প্রত্যাশার একটি নাম ছিলো স্বাধীনতা। স্বাধীনতা শব্দটি কিভাবে আমদের হলো সেই বর্ণনা কবি নির্মলেন্দু গুণের কবিতায় মঞ্জুরীত হয়েছে এভাবে-“স্বাধীনতার জনক শেখ মুজিবুর রহমানের উচ্চারণে,শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে রবীন্দ্র নাথের মত দ্বীপ্ত পায়ে হেঁটে কবি জনতার মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন,তারপর বজ্রকন্ঠে ঘোষণা করলেন-‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের হয়েছে। স্বাধীনতা বিষয়ক কবিতায় ঐতিহ্যধারা কতটুকু নির্মিত হয়েছে তা নির্ণয় করতে হলে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে করতে হবে। তবে স্বাধীনতাকে মধ্যম পুরুষে সম্বোধিত করে কবিতা লেখার যে দ্বারা শামসুর রাহমান সৃষ্টি করেছেন তা সবচেয়ে আলোড়িত করে। স্বাধীনতা উপর প্রথম কবিতা রচনা করেনও তিনি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ‘সন্ত্রাসবাদী বুলেটবিদ্ধ দিন-রাত্রি’ রচনা করেন। তবে তাঁর কবিতার মধ্যে সবচেয়ে নাড়া দেয় ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি- “স্বাধীনতা তুমি-/রোদেলা দুপুরে মধ্য পুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার/স্বাধীনতা তুমি/উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির আচঁল/স্বাধীনতা তুমি/বোনের হাতে নম্র পাতায় মেহেদী রঙ।”
স্বাধীনতা শব্দটিকে আমাদের কবিরা সর্বোত্তম ব্যবহার করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়েই শুধু নয়, যুদ্ধোত্তর সময়েও আমাদের সমস্ত নবীন-প্রবীণ কবিদেরকে স্বাধীনতা শব্দটি বেশী আলোড়িত করেছে। এ শব্দটি ধারণ করে লিখেছে অসংখ্য কবিতা। দীর্ঘ সংগ্রাম ও তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ষোল ডিসেম্বর বাংলায় স্বাধীনতা রক্তিম সূর্য উদিত হলো, অর্জিত হলো স্বাধীনতা। পূর্ণ জন্ম হলো যেন বাঙালী জাতির। শহীদদের উদ্দেশ্য করে জাতিসত্তা ও দরিয়া নগরের কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা তাঁর ‘বাঙালির জন্মতিথি’ কবিতায় বলেন-
‘তোমাদের হাড় গুলো বাংলার অবিনাশী ঝড়
বাঙালীর জন্মতিথি, রক্তে লেখা ষোল ডিসেম্বর।’ (বাঙালির জন্মতিথি)
শহীদের হাড়গুলো বাংলার হৃৎপিন্ড অবিনাশী ঝড়, আর রক্তের লেখা ষোলই ডিসেম্বর বাঙালির জন্মতিথি এ যেন বাঙালির প্রদীপ্ত অহংকার। যে অহংকার শুধু রক্তের বিনিময়ে অর্জন করা সম্ভব। প্রাণের বিনিময়েও আনা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন জাতির মুক্তি বা স্বাধীনতার ইতিহাস মূলত রক্তক্ষয়ের ইতিহাস। অর্জিত স্বাধীনতা তাই যুদ্ধোত্তর কবিতার একটি অন্যতম অনুসঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে কবিতা কর্মীদের চৈতন্যে।
সমকালীন বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ কবিসত্তার অধিকারী মুহম্মদ নূরুল হুদা ষাট দশকের দ্বিতীয় প্রজন্মের কবি। স্বাধীনতা উত্তর সমাজ রাজনৈতিক সঙ্কট, উত্তেজনা ও অবক্ষয়ের পটভূমিতে মুহম্মদ নুরুল হুদা শিল্পীমন জীবনের স্বতন্ত্রীকতায় জাগ্রত হওয়ার প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ। জীবনের তাৎক্ষনিক চঞ্চলতার মধ্যে সমাজমনস্ক কবিকে কখনো কখনো স্লোগান ধর্মী হয়ে উঠতে দেখা যায়। এই প্রবাহের মধ্য দিয়ে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং বাবার কাছ থেকে অর্থ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেন। একাত্তুরের মুক্তিযুুেদ্ধ যখন পাক-হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙ্গালীর সব কিছু কেড়ে নিচ্ছিল, ঠিক তেমনি মুহুর্তে আপামর জন-সাধারণকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকবাহিনী তথা শিকারী কুকুরকে তাড়ানো আহ্বান জানিয়ে মুহম্মদ নুরুল হুদা নিজেরই কন্ঠে ঘোষণা করেন-
‘ছিঁড়ে ফেলবো, খুঁড়ে ফেলবো, ফেঁড়ে ফেলবো ফেঁড়ে
শিকারী কুকুর কেউ না আসুক তেড়ে
ছিঁড়ে ফেলবো, খুলে ফেলবো, গিলে ফেলবো
শিকারী কুকুর কেউ না আসুক তেড়ে (দ্রবিড়ার প্রতি উত্তর-তিরিশে, হাজার কবিতা, ফেব্র“’২০০০)
মুক্তিযুদ্ধোত্তর ষাটের দশকের বিক্ষুব্দ গণজোয়ার এবং পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পাক সরকারের নির্যাতনের স্টীম রোলার কবিকে দারুনভাবে আহত করে। জাতীয় জীবনের সমস্যা সঙ্কটে, আন্দোলনে ঝলসে উঠে তার কলম। মুক্তিযুদ্ধ ও সংগ্রামের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের সংঘাত ও রক্তক্ষরণে,জাতির প্রত্যাশিত অস্তিত্ববাদী জীবনজিজ্ঞাসায় কবি উপস্থাপন করেন-
“জলের ডাকাত এসে কেড়ে নেয়
অসহায় যুবতীর লাশ
সভ্যতার সাজঘরে
নির্মম উলঙ্গ নদী
প্রতিশোধে জলদস্যু হয়। (উলঙ্গ নদী/শোণিতে সমুদ্রপাত)
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শুধু নগর-বন্দর আক্রমিত হয়নি,গ্রাম্যএলাকাও আক্রমণ হয়েছে, অত্যাচারের স্টীমরোলার তাদের সহ্য করতে হয়েছে।পুরো বাংলার পাশাপাশি কবির নিজ এলাকা কক্সবাজারও আক্রমণের শিকার হয়েছেন.নির্যাতিত ও শহীদ হয়েছেন-
‘মুক্তিযুদ্ধে বাব মুখোমুখি ছিলেন,তার চেয়ে জঘন্য এক দুশমনের
বলা নেউ কওয়া নেই একদিন এক পাল খাকি পাকি এসে
তছনছ করে গেল সাগরপােেড়র এই গাঁও
ধরে নিয়ে গেল ইলিয়াস কাকাসহ
এ পাড়ার লেখাপড়া জানা কিছু লোক
তারপর পালপাড়া গিয়ে ঘরে ঘরে আগুন লাগিয়ে
গোপালের যুবতী মেয়েকে তুলে নিল জিপে( বাবা ফিরে আসে/ স্মৃতিপুত্র)
তামাটে জাতির কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা মানুষের প্রত্যয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মিথ ব্যবহার করে আশার বাণীর জানান দেন। স্বাধীনতার অর্থকে গভীর বি¯তৃত, অর্থবহ ও সর্বগ্রাহী করতে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে উচ্চারণ করেন-
স্বাধীনতা?
-সে তো হোমারের লেখা স্বজাতির শ্রমকাব্য
শ্রমিক, বণিক মালিক জনতা মিলনের মহাকাব্য
স্বাধীনতা নয় পতাকার নামে
বাতাসে উড়ানো মন্ত্র
স্বাধীনতা নয় বুর্জোয়া বিলাসী সমাজতন্ত্র (স্বাধীনতা/যিসাস মুজিব)।
এই কবিতার মাধ্যমে কবি স্বাধীনতাকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক বলে মনে করেন। কবি স্বাধীনতাকে শ্রমিক, বণিক, মালিক জনতার সম্পর্কের সেতুবন্ধন হিসাবে চিত্রিত করেছেন। মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায় ইতিহাস চেতনায় পুরো বাংলার ইতিহাস স্বরুপ বিশ্লেষণ প্রকটিত। আজকের বাংলাদেশে কত যে অপশাসন, কত নেতার বিদ্রোহ, কত যে রক্ত ঝরেছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। সাম্যের এই দেশে মিলন মেলায় বারবার আক্রমণ। বেনিয়া দখল প্রভূ, নবাব সিরাজের রক্তে রঞ্জিত হল বাংলার মাটি। সেই থেকেই স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হলো। সেই অস্তে যাওয়া সূর্যকে উদয়ের পথে নিয়ে আসার জন্য দামাল ছেলেরা সিপাহী বিদ্রোহ, দিব্য, কৈবর্ত্য, তিতুমীর, সূর্যসেন, প্রীতিলতা, ক্ষুদিরাম আর শত শহীদের আত্মত্যাগে বাংলা সামনে এসে দাঁড়ায়, প্রায় ২০০ বছরের অপশাসন। তার পর সাতচল্লিশ, বায়ান্ন, ঊনসত্তর, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের বিজয়- এভাবে আসতে আসতে কবির কবিতায় ধরা পড়ে-
“এলো সাতচল্লিশ, তারপর ভাষাযুদ্ধ
তারপর স্বাধীকার, তারপর একাত্তর
কারা আবার তছনছ করে দিতে চায় মহামানবের শান্তি থেকে এ বাংলার ঘর?
বিতাড়িত বেনিয়া প্রভূর পরে নব্য দখলকার ইয়াহিয়া, আয়ুবের প্রেতাত্মা
বাঙালির গণরায়কে পাল্টে দিতে শুরু করলো নির্বিচারে গণহত্যা;
গর্জে উঠলো বঙ্গোপসাগর, রয়েল বেঙ্গল টাইগার,
শাপলা, দোয়েল আর বাংলার লোকশ্র“ত শান্তিধাম
গর্জে উঠলেন জাতির জনক, ইতিহাসের মহা নায়ক, মুজিব যার নামঃ
‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’
শুরু হল শেষ যুদ্ধ, ছড়িয়ে পড়লো বাংলার নগর-বন্দর, হাট-গ্রাম প্রান্তরম
বিচ্ছু মুক্তিসেনা, তিরিশ লক্ষ শহীদ আর অগণিত মা-বোনের আত্মদানের বিনিময়
ছিনিয়ে নিল লাল সবুজের পতাকাঃ
জয় বাংলা, বাংলার জয় (বিজয়ী বাঙালি, আমার সাহস নেই টোকা মেরে সুন্দরকে উড়িয়ে দেবার)
মুহম্মদ নূরুল হুদার কবিতায় সমকাল সমাজ বাস্তবতা ও মুক্তিযুদ্ধোতর আবর্ত পরিবেশের চিত্র প্রবাহিত। পরাধীন সমাজের জাতির শ্রেষ্ট সন্তান হারানোর বেদনার ধারা প্রবাহিত । জীবন-দৃষ্টির তীক্ষèতায় নির্বাচনের স্বাধীনতা ভোগ করেন কবি। যেমনটি উপভোগ করেছিলেন নোবেল পুরষ্কার প্রত্যাখ্যানকারী কবি জঁ পাল সার্ত্রে। তিনি স্বাধীনতার যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন,সেখানে ‘নির্বাচনের স্বাধীনতা স্বীকৃত। নির্বাচনের আগে মানুষ শক্তি দ্বারা পরিচালিত হলে স্বাভাবিকভাবে তাঁর স্বাধীনতা খর্ব হয়। সার্ত্রের মতে, স্বাধীন মানুষ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করলেও নিজে নিয়ন্ত্রিত হয় না । তিনি মনে করেন-মানুষ হয় সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। সে এক সঙ্গে দু’রকম হতে পারেনো।’(নীরু কুমার চাকমা: ‘অস্তিত্ববাদ: কয়েকটি দিক’,জুন ১৯৭৯,ঢা.বি পত্রিকা) জঁ পল সার্ত্রের বক্তব্যের অনুসারী হয়ে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা ব্যক্তি স্বাধীনতা ও সামষ্টিক বিভিন্ন আন্দোলন- সংগ্রামের কথা তাঁর কবিতায় তুলে ধরেছেন-
“ওরা প্রতিটি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশের মতো
মিছিলটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে, বলছে
বন্ধুগণ, থামুন, ন্যায্য মূল্যে সিংহাসন বরাদ্দ হবে/আপনারা কেনাকাটা করুন।
কে কার কথা শোনে। রাজাও তাঁর রাজকীয়
বাহিনী নিয়ে মিছিলে যোগ দিলো, পাল্টা শ্লোগান তুললো,
‘গ্রহ না মর্ত্য-মর্ত্য, মর্ত্য’
জনতার নিঃশব্দ মিছিল উঠলো ফুঁসে,
‘ধর ধর শালাকে ধরতো।” (অগ্নিময়ী হে মৃন্ময়ী/১০)
একাত্তরের ২৫শে মার্চের ভয়াল কালো রাতের কথা আমরা সবাই জানি। সেদিন পাক হানাদার বাহিনী পুর্ব পাকিস্তানের সাথে বেইমানী করে রাতের অন্ধকারে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর। নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর চালায় নগ্ন হামলা। এই হামলায় পুরো বাংলা বিধ্বস্ত। পুরো দেশ তখন মৃত্যুর উপত্যকায় পরিণত হয়। ২৫ মার্চের সেই ভয়াল অবস্থার কথা বর্ণনা করে মুহম্মদ নুরুল হুদা অত্যন্ত সচেতন ভাবে উপযুক্ত শব্দ দিয়ে তুলে ধরেন-
তেড়ে আসে মুক্তপক্ষ ইস্পাত-ঈগল
শেষ রাতে জেগে উঠে বিস্ফোরণে, বৈশ্বিক আগুনে
আর
লোহিতাভ বঙ্গমার ঠোঁটে
ছিন্নভিন্ন হয় হর্ম্যরাজি, অতিকায়, ধানব মানব (ব্লীভৎস ১৯৭১/শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি)
‘১৯৭১ এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে বাঙ্গালী যে স্বাধীন ভূ-খন্ড সৃষ্টি করে, কবি তার কাবিতিক ঐতিহ্যসূত্র সন্ধান ও নির্মাণ করা জরুরী। কেননা বাঙ্গালীকে বর্তমানের এলোমেলো সাংস্কৃতিক ব্যাখা বাখানের হযবরল দশা থেকে নয়, বরং তার পুরাকালীন শেকড় অন্বেষা থেকেই প্রকৃত অবয়বে সনাক্ত করা সম্ভব।’(হাফিজ রশিদ খান.মুহম্মদ নূরুল হুদার মূল পরিচয়,শিল্পসাহিত্য,দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ)।
সেই জন্যই কবি চেয়েছেন দ্রাবিড় সভ্যতাকে খনন করতে এবং তার ভেতরের মণি-মুক্তা আহরণে সন্ধানী হয়। এখানে দ্রাবিড়া একটি বাঙ্গালী রমণীর প্রতীক বিভাসিত। স্বাধীন বাংলাদেশ আর দ্রাবিড়া কবির মানসভূমি সৃষ্টি করে যুগ্ম ভাববেণী। কিন্তু এ দ্রাবিড়াই শরীররূপে কবির চেতনায় জ্বালিয়ে তুলে দৃপ্ত মশাল। অগ্নিময়ী লেলিহান শিখার তেজে কবি নির্লিপ্ত থাকতে পারেন নি। কবির ভাষায়-
বিশাল তিমির মতো একটি নতুন দ্বীপ
আজ রাতে জাগবে সাগরে, ক্রমে ক্রমে বাড়বে ভূ-ভাগ
শ্যামল বৃক্ষের সারি, পাখি ডাকা বন আর
দৃপ্ত জনপদ
বাড়বে ক্রমশ-
তুমিও কিশোরী ছিলে, এখন যুবতী
শব্দ শুনো শব্দ মিছিলের অনাদী মিছিল আজ
যাবে সেই দ্বীপে
স্বদেশ-স্বজনহীন এই সব অনাত্মীয় মানুষের ভীড়ে”।
স্বদেশ চেতনায় সমুজ্জল কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা তাঁর কবিতার পংক্তিতে মুক্তিযোদ্ধার অসীম শৌর্য্যবীর্য ও সাহসের কথা ধ্বনিত হয়েছে। কখনো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা দিয়ে আবার কখনো নিজেই শব্দ সৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে প্রাণের বিপুল প্রবাহ মুক্তির নেশায় সমস্ত বাঁধন ছিন্ন করে স্বাধীন মানচিত্র গড়ার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন-
গরুঘোড়া আর হাঁস ও পাখিরা
চলো, সকলেই মেহনত করি
ধন্য তোমার আমার জীবন
যদি স্বাধীনতা যুদ্ধে মরি (পশু জনতার স্বাধীনতার সংগীত/ কুসুমের কণা)
বাঙ্গালীরা বীরের জাতি, যে কোন কিছুর বিনিময়ে ছিনিয়ে আনতে পারে অধিকার। যেমনটি এনেছিল মহান ভাষা আন্দোলনের ফসল হিসাবে রাষ্ট্রভাষা বাংলার মর্যাদা। তদ্রুপ ওই আন্দোলনের প্রেরণায় আমাদের ফাল্গুনের রক্ত আজো প্রবাহিত হচ্ছে। এই মন্ত্রে দৃপ্ত প্রাণের শপথ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র পাই জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায়-
‘না কোন পরাজয় নেই
এই মাটি চিরদিনেই রয়েছে অজেয়; জন্ম হয় তবু তাদের
..................
তারাতো জানে না রক্তের পানিতে ঋগ্ধ ফাল্গুনের প্রতিটি কুসুমে জেগে আছে প্রতিবাদের ফণা
(কুসুমের ফণা/জাতিসত্তার কবিতা)।
তারা জানেনা এই বীর বাঙ্গালীর রক্তে জলের সমারোহ, একুশ, গণঅভ্যূত্থান। যে রক্তে ফল্গু ধারা প্রবাহিত হয়ে বাঙ্গালীরা পাক-ভারত যুদ্ধে মরণ-পরণ লড়াই করে বীরত্ব দেখিয়েছিলেন। পাকিস্তানীদের রক্তে প্রবাহিত হয়েছিল জলদস্যু হার্মাদের পাপের রক্ত। যার ফলে পাপ পাপীর কাছে পরাজিত হয়েছে। তার একটি বাস্তব চিত্র মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায়-
হানাদার আততায়ী নিমজ্জিত জানে না যে এদেশ জলের
তাদের বিষাক্ত অস্থি জমে আছে স্তরে স্তরে পলির আগুনে
তোমার অপাপ রক্তে তার পাপ স্পর্শ আছে (শোভাযাত্র দ্রাবিড়ার প্রতি-১৪)
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের জর্জরিত বাংলাদেশ। তাদের আক্রমন থেকে সে সময় কেউ রেহায় পায়নি। আক্রান্ত মানুষের আর্ত চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। বেদনার ভার সইতে পারেনি ভূমি, অনেকে স্বজন হারায়, অনেকে মা ডাক শুনতে পারে নি, ঘর-সংসার হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে যায় বাংলার সাত কোটি নারী ও পুরুষ। ভুলুণ্ঠিত হয় মানবতা। পল্টন হয় রক্তাক্ত বঙ্গোপসাগরে। তারই একটি বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে মুহম্মদ নুরুল হুদার অনেক কবিতায়-
‘উনসত্তুরের গণঅভ্যূত্থানের আর
সত্তুরের মহাপ্লাবনের পর একদা বিকেল বেলা
পল্টনের ভরা মাঠে নেমে এলো বঙ্গোপসাগর;
স্বদেশ স্বজনহীন ভিটেমাটিহীন/বাংলার সাত কোটি নারী ও পুরুষ
ডুবলো-ভাসলো হায় ঢাকার রাস্তায়;
যেন অজ্ঞাত পাপের বোঝা ভারী হয়ে নেমেছে মাথায়
আজ প্রত্যেকের;প্রায়শ্চিত্তহীন কেউ আর
কোন দিন পাবো না উদ্ধার।’ (সমুদ্র ও পাহাড়ের সম্মিলন’/কুসুমের ফণা)
মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায় চির সবুজ বাংলার আর্তনাদ, স্বদেশ, সামাজিক উপপ্লবে ও সংঘাত, পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে অর্জন স্বাধীন বাংলাদেশ। এ স্বাধীন দেশ সাত কোটি পরিবারের অবস্থান বিষাক্ত সাপের কালো বিষতান্ত্রিক মন্ত্রের মতো ছুঁড়ে যেভাবে সামগ্রিক এলাকা। মুক্তিযুদ্ধের সময় অনেক বাস্তুভিটা হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে যায়। স্বজন-হারিয়ে শোক বিহ্বল হয়ে দুঃখের শিকার হয়ে সাত কোটি রশ্মি (মানুষ)র নদীর কুরে এসে ভিড় জমায়- কবির ভাষায়-
‘তুমিও ভুলেছো কবে বাস্তুভিটা,সংসারের সঠিক দ্রাঘিমা
স্বজনহারানো শোক সময়ের মতো দীর্ঘ দু:খের মিনার। (শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি-৯)
মুহম্মদ নুরুল হুদার স্বদেশ চেতনার সূত্র ধরেই কবিতা কখনো কখনো রাজনৈতিক চেতনা সঞ্চারিত হয়েছে। মানব জাগরণ ও মানবতার প্রকৃতির কবির সাথে একাত্ম হয়েই যায়। কবি মাটির সত্তাকে কখনো অস্বীকার করতে পারে না-
নদীমাতৃক একটি ভূগোল
ঘুরতে ঘুরতে আমি ঘুরে এলাম
উড়তে উড়তে আমি উড়ে এলাম
কখনো দু’পায়া আমি
কখনো দু’পাখা
এই ঘুরোঘুরি, এই উড়াউড়ি।’’
আত্মসত্তার সঙ্গে জাতিসত্তার গভীর সংযুক্তি বেশী। হুদার শিল্পী চৈতন্যের নিয়ন শক্তি। যে কারণে ঐতিহ্যের দৃঢ়তর উৎস অনুভবের ক্ষেত্রেও তিনি স্বদেশ ও স্বজনের বস্তুগত পটভূমি প্রকটিত-
‘সম্রাটের চোখে অশ্র“
সেই অশ্র“ নেমে আসে
জনপদে
শহরে নগরে
ক্রমে ক্রমে রাজপথ খরস্রোতা নদী হয়ে যায়
অশ্র“র বন্যায় ডোবে বিষন্ন ইথাকা (ইথাকা/শোভাযাত্র দ্রাবিড়ার প্রতি)
কবিরা এমন এক আলপিন, যা তাদেরকে সব সময় স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। ষাটের বিরলপ্রজ কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায় স্বদেশ একটি মুখ্য বিষয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার দুর্জয় চেতনাকে ধারণ করে। স্বাধীনতা কবির অনুভূতিতে প্রচন্ড চাপ ও সময়ের তাগাদায় আপ্লুত হয়ে বলেন-
দুর্যোগ ঘনিয়ে আসছে-সেতো আমাদেরই চারপাশ
আমরা যারা ভঙ্গুর। যারা উড়ে যাই বাতাসে
পূণ্যের প্রবাহ হোক, পাপের উৎসমূলে
তোমার কি ভয়?
তুমিতো দাঁড়াতে পারো
অনায়াসে খুলতে ধরতে পারো
অবিনাশী করতলে (আলোকদূতের প্রতি/আমরা তামাটে জাতি)
মুহম্মদ নুরুল হুদার কবিতায় মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন এবং যুদ্ধ ফেরত তাদের কথাই বেশী শব্দ শিল্পের মাধ্যমে তুলে আনেন। কবি ৭১’র নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের হাজারো স্বজন হারায়, যাদের রক্তের হুলিখেলায় বেঁচে আছে বাংলার মানুষ ও কবি। তাই কবি হুদার কবিতায় চিত্রকল্প ও চিন্তা ও বোধের উৎপ্রেক্ষার মাধ্যমে প্রকাশ করেন-
‘আমিতো রক্তের সাক্ষী, যে রক্তে ফুটে ওঠে দিনের কমল
আমিতো রক্তের সাক্ষী
যে রক্তে খুলে যায় হরিণ তোরন
আমিতো রক্তের সাক্ষী, যে রক্তে ফিরে আসে হারানো স্বজন (শোভাযাত্রা দ্রাবিড়ার প্রতি)
এক শিকড় সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী পথে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার শৈল্পিক যাত্রা । এখানেই তার কবিতার প্রধান ধারার যাত্রা। এই যাত্রা যেমন স্বাপ্নিকতায়, তেমনি সময় ও ইতিহাসের হাত ধরে বিশেষ বিচিত্র পরিসীমা দর্শনে অভিলাষী। তাই হুদার কবিতার আকাংখা গন্ডিবদ্ধ ভূ-খন্ডের সংকীর্ণতা পেরিয়ে দূরভুবন যাত্রায় বিশ্বাসী। তাই কবি হুদা উচ্চারণ করেন-
গাঙের পিপাসা নিয়ে বায়ান্নের যে যুব শোনিতে
দ্রাবিড় বদ্বীপ জড়ো হয়ে গেল মানবিক নদী
তাদের পলিতে দেখো, গড়ে উঠে অনার্য স্বদেশ
অনন্ত ঝর্ণার মতো বুকে তার সবুজ মানুষ (আমরা তামাটে জাতি)।
যে প্রাকৃত চেতনা থেকে বৌদ্ধ দোহার জন্ম সে প্রাকৃত চেতনাই আধূনিক রাষ্ট্র কাঠামোর ভাষা- ভাষার আন্দোলনকে সম্ভব করে তুলে। কিন্তু এই চেতনা অর্জন বাঙ্গালী রসনা কাঠামো স্বদেশকে কবি ‘অনার্য অসুখে’ ভুগতে দেখেছেন-
‘অসহ্য সুন্দর এই বাঙ্গালী রমনী
লতানো তানিমা জুড়ে ফণা তোলে শ্যামাদী আগুন
যে আগুনে পুঁড়ে যায় দ্রাবিড় ভূ-ভাগ
গুচ্ছ গুচ্ছ ভষ্ম হয়ে ফুটে উঠে সবুজ প্রকৃতি
হীরের দ্যূতির মতো জলে উঠে পৌষের ফণা
তরল ব-দ্বীপ জুড়ে স্পীড দুঃখিত ধমনী
কেবল দুঃখের মতো
জেগে থাকে ভেড্ডিড পুরুষ
পুরুষ দুঃখের নদী, পুরুষের বুকে শুধু অনার্য সুখ (অসহ্য সুন্দর এই বাঙ্গালী রমনী/যিসাস মুজিব)
শেকড় সন্ধান করতে গিয়ে কবি পৌছেন সেই প্রান্তে, যে প্রান্তের ঐতিহাসিক পরিবর্তন ঘটেছে একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে। যেখানে কবি হুদা শুধু বর্তমানকে নয়, ভবিষ্যতকেও প্রত্যক্ষ করেন-
‘পৃষ্ঠদেশ তার
সঙ্গীনের বাঁকা ক্ষত দেখে
নিমিষেই খুলে গেছে সমুদ্রের পণে; সন্ত্রাসের কড়া হাতে
অনিবার্য সেই পথে কারা যেন তুলছে দু’হাত
যেন আমি যেনে গেছি পরিধি আমার
যেন আমি সুনিশ্চিত ভেঙ্গে ফেলবো দুই দ্বাহু নীল কারাগার।
এখানে একই সঙ্গে যষ্টির সঙ্গীর সাথে নিসর্গ নামে সেই শ্যামাঙ্গ রমনীকেও তুলে ধরেছেন।
বাঙালীর জীবনে একাত্তুর একটি রক্তাক্ত ইতিহাস। এই ইতিহাসের পেছনে যারা ভূমিকা পালন করে এ বীর বাঙ্গালী জাতি। বীর মুক্তিসেনারা জীবন বাজি রেখে বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য এনে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই তাদের আত্মত্যাগ ও উপকারের কথা কোনদিন ভুলার নয়। কবি নুরুল হুদা কবিতায় কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে উচ্চারণ করেন-
লড়াই যখন শুরু হল, এলো মুক্তিসেনা
শোধ হবেনা তাদের কাছে তোমার আমার দেনা
লাঙ্গল কোদাল বর্শা বুলেট জীবন বাজি রেখে রাখলো দিবসরাতে (একাত্তরে ছড়া/হাজার কবিতা, পৃ-৭০৬)।
কালো ভয়াল ২৫ শে মার্চ রাত থেকে শুরু হওয়া নয় মাস ব্যাপী রক্তময়ী মুক্তিযুদ্ধের পর এলো স্বাধীনতার রক্তিম সুর্যোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী ডিসেম্বর। এই ডিসেম্বর তিরিশ লক্ষ শহীদের চূড়ান্ত আত্মদানের শিখা অনির্বাণের নাম। কবির ভাষায়-
২৫শে মার্চের হত্যাযজ্ঞ আর নয় মাসের রক্তময়ী মুক্তিযুদ্ধের পর
এলো অরুণোদয়ের অগ্নিস্বাক্ষী, এলো বিজয়ের প্রহর ষোল ডিসেম্বর;
বাঙালির মুক্তির নাম ডিসেম্বর, তার বিজয়ী অভিব্যক্তির নাম ডিসেম্বর;
চূড়ান্ত আত্মদানের পর মুক্তিযোদ্ধার শিখা অনির্বাণের নাম ডিসম্বের;-
মুক্তিযোদ্ধা বাঙালী জাতির অগ্নি ঘোষিত জন্মতিথির নাম ডিসেম্বর।’’
(বিজয়ী বাঙালি/আমার সাহস নেই টোকা মেরে সুন্দরকে উড়িয়ে দেবার)।
তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলা। বাঙালিরা আজো যেন সত্যিকারের স্বাধীনতা পায়নি। আগের মতো বর্গীরা এখন আসে না, তবুও কেন এই বাঙালি এত অরক্ষিত, এই নিয়ে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা খুবই ভারাক্রান্ত। তাই তাঁর কবিতায় উচ্চারিত হয়-
এখানে আসেনা বর্গী মাঘের মধ্যরাতে
রাজা আলী বর্দী নেই সিংহাসনে; তবুও
বড় বেশী অরক্ষিত এই বাংলাদেশ
হানাদার- স্বদেশী- বিদেশী
কমবেশী এখন উধাও
তন্ত্রমন্ত্র, রাজতন্ত্র জপমালা হাতে
ছেড়ে গেছে সমতট, হরিকেল
নিক্ষিপ্ত পাততাড়ি গুটিয়েছে
সৈব সব বন্ধুকের নল
তবু বড়বেশী অরক্ষিত এই বাংলাদেশ। (অরক্ষিত এই সময়)
বাঙ্গালীরা স্বাধীন ভূখন্ড লাভের পর এই জাতির মধ্যে এক ধরণের বৈকল্য বিভ্রান্ত এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এই চিত্র সৃজনের যুক্তিতে দৃশ্যমান। হুদা তাঁর কবিতায় বাঙ্গালী জাতির পুরান ইতিহাস-ঐতিহ্য অন্বেষনের সূত্রে জাতির ব্যক্তিক, সামাজিক, রাজনৈতিক বিপন্ন দশা, নিমকহারামী, স্বার্থপরতা ইত্যাদির বিরুদ্ধে কথা বলতে লেখনী ধারণ করতে পিছপা হননি-
‘রাজপথে ত্রিকাল দর্শক সে অন্ধ পুরোহিত
যার রক্তে রাজপথ নদী বনে যায়’-
এই শাতিতিক মন্ত্রতুল্য উচ্চাকাংখায় তিনি ‘প্রতীক মানুষ’।
সমকাল জ্ঞান, ইতিহাস জ্ঞান ও জাতিসত্তার সমবায়ে কাব্য ভূগোলপ্রদীপ্ত কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা তাঁর কবিতায় স্বাধীনতাকে তুলে এনে স্বাধীনতার কাব্য ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন বলে মনে হয়। তাঁর স্বাধীনতা বিষয়ক কবিতায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশ, কবি শামসুর রাহমান, কবি আল মাহমুদ, কবি ওমর আলী, কবি শহীদ কাদরী, হাসান হাফিজুর রহমান, সিকান্দার আবু জাফরের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। স্বাধীনতার পর বাংলা কাব্য সাহিত্য যে নতুন বাঁক নেয়, এ ক্ষেত্রে কবি মুহম্মদ নুরুল হুদার ভূমিকা অগ্রগন্য। বাঙ্গালী জাতিসত্তার শেখড় সন্ধানে তাঁর নিরলস প্রচেষ্টা তাঁর কাব্যে, উপন্যাসে প্রতিফলিত। </div>
<div style="text-align: justify;">
- See more at: http://www.nagorikblog.com/node/11877#sthash.TSMmNP0O.dpuf</div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-11466169345801763142013-07-21T12:12:00.001-07:002013-07-21T12:12:41.958-07:00একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাহসী কলম সৈনিক সাইমন ড্রিং<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
<!--[if gte mso 9]><xml>
<w:WordDocument>
<w:View>Normal</w:View>
<w:Zoom>0</w:Zoom>
<w:PunctuationKerning/>
<w:ValidateAgainstSchemas/>
<w:SaveIfXMLInvalid>false</w:SaveIfXMLInvalid>
<w:IgnoreMixedContent>false</w:IgnoreMixedContent>
<w:AlwaysShowPlaceholderText>false</w:AlwaysShowPlaceholderText>
<w:Compatibility>
<w:BreakWrappedTables/>
<w:SnapToGridInCell/>
<w:WrapTextWithPunct/>
<w:UseAsianBreakRules/>
<w:DontGrowAutofit/>
</w:Compatibility>
<w:BrowserLevel>MicrosoftInternetExplorer4</w:BrowserLevel>
</w:WordDocument>
</xml><![endif]--></div>
<div style="text-align: justify;">
<!--[if gte mso 9]><xml>
<w:LatentStyles DefLockedState="false" LatentStyleCount="156">
<w:LsdException Locked="false" Name="Default Paragraph Font"/>
</w:LatentStyles>
</xml><![endif]--><!--[if gte mso 10]>
<style>
/* Style Definitions */
table.MsoNormalTable
{mso-style-name:"Table Normal";
mso-tstyle-rowband-size:0;
mso-tstyle-colband-size:0;
mso-style-noshow:yes;
mso-style-parent:"";
mso-padding-alt:0in 5.4pt 0in 5.4pt;
mso-para-margin:0in;
mso-para-margin-bottom:.0001pt;
mso-pagination:widow-orphan;
font-size:10.0pt;
font-family:"Times New Roman";
mso-ansi-language:#0400;
mso-fareast-language:#0400;
mso-bidi-language:#0400;}
</style>
<![endif]-->
</div>
<h4 class="MsoNormal" style="text-align: justify;">
<span style="color: black; font-family: SutonnyMJ;"> </span>`Behold,I don’t give the little charity;</h4>
<h4 style="text-align: left;">
<b style="mso-bidi-font-weight: normal;"><span style="color: black;"></span></b></h4>
<h4 style="text-align: left;">
</h4>
<h4 class="MsoNormal" style="text-align: justify;">
<b style="mso-bidi-font-weight: normal;"><span style="color: black;">when I give,I give myself</span></b></h4>
<h4 style="text-align: left;">
</h4>
<h4 class="MsoNormal" style="margin-left: 1in; text-align: justify; text-indent: 0.5in;">
<b style="mso-bidi-font-weight: normal;"><span style="color: black;">Walt Whitman </span></b></h4>
<div style="text-align: justify;">
মুক্তিযোদ্ধা বলতে কাদের বোঝায়- যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন ,সহযোগিতা করেছেন , এমনকি যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন নাই, সার্বিকভাবে সকলেই মুক্তিযোদ্ধা দাবিদার। এই কথা আমার নিজের নয়। ‘মুকসুদপুরের মুক্তিযুদ্ধ’গ্রন্থের লেখক মো. ফিরোজ খান’র। উপরোক্ত বির্তকের বিশেষ্ত্ব তৎসময়ে আ’লীগের নেতাকর্মীলা একচেটিয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবি করত। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আ’লীগ সরকার গঠিত হলে তৎকালিন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আঃ আহাদ চৌধূরী সরকারের পরামর্শে সেক্টর কমান্ডার , বিএলএফ কামান্ডার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারীদের নিয়ে একটি কমিটির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার যে সংজ্ঞা নির্ধারণ করেন এই ভাবে-১. যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ’র সেনাবাহিনী, ইপি আর পুলিশ ও আনসার (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তারা, ২.যারা ভারতে গিয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শেষ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তারা, ৩. স্থানীয়ভাবে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তারা, ৪.যারা মুজিব বাহিনীর নামে ভারত থেকে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তারা এবঙ প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক (বিদেশী সাংবাদিকসহ), লেখক,শিল্পী, ডাক্তার. সংশ্লিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ উপযুক্ত সাক্ষ্য প্রমাণ সাপেক্ষ্যে মুক্তিযোদ্ধাা হিসেবে গন্য হবেন। এর বাইরে কাউকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য করা হবেনা।(দ্র:মুকসুদপুরের মুক্তিযুদ্ধ, মো. ফিরোজ খান, পৃ-২১)<br />
উপরোক্ত সংজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় – একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহ চিত্রধারণকারী লন্ডনস্থ ‘দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফ’পত্রিকার সাহসী কলম সৈনিক সাইমন ড্রিংও একজন মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার অবদানের কখনো ভুলার নয়। তিনিই সর্বপ্রথম ২৫,২৬,২৭ মার্চের ভয়াবহ গণহত্যার প্রথম প্রত্যক্ষ বিবরনী বিশ্ব^বাসীর কাছে জানান দেন। সাইমন ড্রিং তখন ২৭ বছরের তরুন যুবক। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান আর্মির নির্দেশ অমান্য করে তৎকালিন পুর্ব পাকিস্তান ত্যাগ না করে বরং কখনো হোটেলের রান্নাঘরে, কখনো ভাড়ার ঘরে, কখনো খাবার ঘরে আবার কখনো বা ম্যানহোলের লূকিয়ে থেকে থেকে পাক হানাদারের নৃশংস গণহত্যার খবর বিশ্ববাসীকে জানান দেন। ১৯৯৬ সালের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় একাত্তরের ২৫ মার্চ হত্যাযজ্ঞের সুচনা এবং কিভাবে সাহসিকতার সাথে লুকিয়ে থেকে সেই হত্যাযজ্ঞের রিপোর্ট তিনি সংগ্রহ করেছিলেন এবং ঢাকা থেকে বের হয়ে কিভাবে পত্রিকায় পাঠিয়েছিলেন তার বর্ণনা দেন সাইমন ড্রিং।<br />
‘১৯৭১ সালে টেলিগ্রাফের রিপোর্টার হিসেবে ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিউজ কভারের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় ছিলাম। এই সময় লন্ডন থেকে নির্দেশ আসে পুর্ব পাকিস্তানের পরিস্তিতি খুবই উত্তপ্ত এবং উত্তেজনাপুর্ণ হয়ে উঠছে। আমাকে ঢাকায় যেতে হবে ্এবঙ রিপোর্ট পাঠাতে হবে। তাই আমি ৬ মার্চ ঢাকায় আসি। হোটেল ইন্টাকন্টিনেন্টাল (বর্তমান শেরাটন ) উঠি। সেইসময় ঢাকার পরিস্থিতি কভার করার জন্য আরো ৪০জন সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত ছিলেন।’’<br />
২৫ মার্চ রাতে পাক আর্মির আক্রমণ শুরু করার পুর্বে থেকেই সকল সাংবাদিকদের হোটেলে আটক রাখা হয়। সেদিন মধ্যরাতের ঢাকার পরিস্থিতির রিপোর্ট পাঠানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করলেও হোটেলের টেলিফোন অচল থাকায় সম্ভব হয়ে উঠেনি। শুধু সাইমন ড্রিং নন- হো টলে অবস্থানরত সকল বিদেশী সাংবাদিকরাও পরিস্থিতির খবর পাঠাতে ব্যর্থ হয়। পরে হোটেলের টেলিফোন অপারেটর ওসমান ব্যাপারীর মাধ্যমে জানতে পারে পুর্ব পাকিস্তানের সাথে বহির্বিশ্বের সকল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। পরদিন তথা ২৬ মার্চ সকালে শহরের অবস্থা ভয়াবহ, চারদিকে কারফিউ জারি ।এরই মাঝে ঢাকার জনমানবশুন্য। কেবলমাত্র সৈন্য বোঝাই ট্রাক মাঝে মধ্যে দেখা যেত। চারদিকে শুধু গোলাগুলির শব্দ। গোলাগুলির আগুনের শিখা ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়নি শহরে । ওইদিন নিয়াজীর প্রেস সচিব মেজর সিদ্দিক সালিক হোটেলে প্রবেশ করে হোটেলের অবস্থানরত সাংবাদিকদের বলেছিলেন -‘ পুর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। তোমাদের এখানে থাকা নিরাপদ নয়, তোমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তোমাদের করা<span id="goog_99838369"></span><span id="goog_99838370"></span>চি পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা আমরা করেছি।’ ঠিক সে মুহুর্তে সাহসী কলম সৈনিক সাইমন ড্রিং মেজর কে বলেন- ‘এটা কি আপনাদের নির্দেশ। আর্মি অফিসার প্রতিউত্তরে বলে-তুমিইচ্ছে করলে থাকতে পার সেক্ষেত্রে তোমার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা আমরা করব।’(একাত্তরের সত্যনিষ্ট রিপোর্টার সাইমন ড্রিং, সীমা মোসলেম, নিরীক্ষা ১৯৯৭) <br />
মেজর সিদ্দিক সালিকির এ উদ্বতপুর্ণৃ কথা বলার ভঙ্গিতে বুঝা যায় সাইমন ড্রিং কে তার হত্যা করার হুমকি লক্ষণীয়। মেজর সাহেবের এ কথায় তিনি একটু বিব্রত হয়েছিলেন। তিনি ভয়ে সংশয় ছিলেন যে মনে হয় তার দায়িত্ব তিনি পালন করতে পারবেনা। কিন্তু তাকে থেকে যেতে হবে যেমন করে হোক রিপোর্ট সংগ্রহ করে পত্রিকায় পাঠাতে হবে। তাই তিনি পুর্ব পাকিস্তান না ছাড়ার সিদান্ত নিয়ে ফেলেন। এখন শুনা যাক তার নিজের বয়াণ থেকে-‘ আমি মনে করি একজন সাংবাদিক হিসেবে ঘটনাস্থলে থাকাই আমার দায়িত্ব। ঘটনার কেন্দ্রে না থাকলে রিপোর্ট বস্তুনিষ্টু হতে পারেনা । সুতরাং সাংবাদিক হিেেসব আমার প্রধানতম দায়িত্ব ও কর্তব্য পুর্ব পাকিস্তানে থাকা এবঙ যথাসম্ভব তথ্য সংগ্রহ করে রিপোর্ট পাঠানো।’’<br />
এই দিন অন্যান্য বিদেশী সাংবাদিকরা ব্যাগ গোছানোর কাজে ব্যস্ত তখন সাইমন ড্রি ং কিভাবে লুকিয়ে থাকবে সে চিন্তায় মগ্ন। সে চিন্তা বুঝতে পারে হোটেলের বাঙালি কর্মচারীরা। তাই তারা তাকে লুকানের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু এই দিকে বিমানবন্দরে তাকে না পেয়ে আবার হোটেলে তল্লাশী করা হয় । কিন্তু হোটেলের বাঙালি কর্মচারীদের সহায়তায় সে বার বার বেঁচে যায়। এ সময় আরেক সাহসী ফটোগ্রাফার লুকিয়ে থাকেন এই হোটেলে। তাকেও সহযোগিতা করেছিলেন বাঙালি কর্মচারিরা। ২৭ মার্চ কারফিউ শিথিল হলে মিশেল ও সাইমন ড্রিং বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা,ইকবাল হল, রাজার বাগ পুলিশ লাইনস,নিউ মার্কেট , ৩২ নং বাড়ী সহ শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখেন। শহরের আর্মির টইল । তাদের চোখকে ফাকি দিয়ে থপাক হানাদারের ভয়াবহ চিত্র ধারণ করেন্ শহরের এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে সাইম ড্রিং বলেছিলেন- আমি আরো অনেক যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করেছি এত বর্বর ও বীভৎস চিত্র আর কোথাও দেখিনি।’’<br />
২৭মার্চ ঢাকা শহরে পাক হানাদারের গণনিধন ও ধ্বংসযজ্ঞের রিপোর্ট ও ছবি সংগ্রহ করে বিশ্ববাসীকে জানাতে চাইলেও সম্ভব হয়ে উঠেনি। পরে তিনি ও মিশেল অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে করাচিতে পৌছেন। কিন্তু সেখানেও তাদের সার্চ করা হয়। জেরা ও তল্লাশীর জন্য প্রায় ১০ ঘন্টা আটক রাখা হয় তাদেরকে। রিপোর্ট ও ছবি কখনো কোমরে, কখনো পায়ের জুতায় লূকিয়ে রাখেন। জুতার মৌজাও চেক করে পাক হানারা। এভাবে ঘন্টাখানেক যুদ্ধ করার পর তারা কোনমতে ব্যাংককে গিয়ে পৌছেন । সেখানেও পাক হায়েনারা তাকে নাজেহাল করার জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে । সেখানেও তাদেরকে বেগ পোহাতে হয়। পরে ছাড়া পেয়ে ব্যাংকক থেকে ২৭ মার্চের রিপোর্ট ‘দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় পাঠিয়ে দেয়। <br />
৩০ মার্চ সাইমন ড্রিং পাঠানো রিপোর্ট ও ছবি পত্রিকার লীড নিউজ হিসেবে ছাপানো হয়। শিরোনাম ছিল এইভাবে- <span style="color: black; font-family: "Times New Roman"; font-size: 12.0pt; mso-ansi-language: EN-US; mso-bidi-font-family: "Times New Roman"; mso-bidi-language: AR-SA; mso-fareast-font-family: "Times New Roman"; mso-fareast-language: EN-US;">Tanks Crush Revolt in Pakistan,
7,000 sloughered: Home burned’ রিপোর্টের শুরুতে লেখা হয়েছিল -</span><!--[if gte mso 9]><xml>
<w:WordDocument>
<w:View>Normal</w:View>
<w:Zoom>0</w:Zoom>
<w:PunctuationKerning/>
<w:ValidateAgainstSchemas/>
<w:SaveIfXMLInvalid>false</w:SaveIfXMLInvalid>
<w:IgnoreMixedContent>false</w:IgnoreMixedContent>
<w:AlwaysShowPlaceholderText>false</w:AlwaysShowPlaceholderText>
<w:Compatibility>
<w:BreakWrappedTables/>
<w:SnapToGridInCell/>
<w:WrapTextWithPunct/>
<w:UseAsianBreakRules/>
<w:DontGrowAutofit/>
</w:Compatibility>
<w:BrowserLevel>MicrosoftInternetExplorer4</w:BrowserLevel>
</w:WordDocument>
</xml><![endif]--></div>
<div style="text-align: justify;">
<!--[if gte mso 9]><xml>
<w:LatentStyles DefLockedState="false" LatentStyleCount="156">
<w:LsdException Locked="false" Name="Default Paragraph Font"/>
</w:LatentStyles>
</xml><![endif]--><!--[if !mso]><img src="//img2.blogblog.com/img/video_object.png" style="background-color: #b2b2b2; " class="BLOGGER-object-element tr_noresize tr_placeholder" id="ieooui" data-original-id="ieooui" />
<style>
st1\:*{behavior:url(#ieooui) }
</style>
<![endif]--><!--[if gte mso 10]>
<style>
/* Style Definitions */
table.MsoNormalTable
{mso-style-name:"Table Normal";
mso-tstyle-rowband-size:0;
mso-tstyle-colband-size:0;
mso-style-noshow:yes;
mso-style-parent:"";
mso-padding-alt:0in 5.4pt 0in 5.4pt;
mso-para-margin:0in;
mso-para-margin-bottom:.0001pt;
mso-pagination:widow-orphan;
font-size:10.0pt;
font-family:"Times New Roman";
mso-ansi-language:#0400;
mso-fareast-language:#0400;
mso-bidi-language:#0400;}
</style>
<![endif]-->
</div>
<div class="MsoNormal">
<span style="color: black;">In the name of God and a united Pakistan’. Dacca is today a crushed and frightined
city.After 24 hours of ruthless,cold-bolooded shelling by the Pakistan Army, as
many as.7000 people are dead. Large areas have been levelled and East Pakistan’s fight for indipendence has been britally
put to an end.<span style="mso-spacerun: yes;"> </span></span></div>
<div class="MsoNormal">
<span style="color: black;">Despine claims by President Yahya Khan, head of the
country’s militari government,that the situation is now calm ten of thousand of
people are fleeling to the countryside,the city steets are almost deserted and
the killing are still going on in other parts of province.’</span></div>
<div class="MsoNormal">
<span style="color: black;">এর সাথে ঢাকা শহরের ধ্বংসযজ্ঞের ছবিও ছাপা হয়। এই রিপোর্ট ও ছবির মাধ্যমেই বিশ্ববাসী প্রথম এদেশের গণহত্যার প্রত্যক্ষ বিবরণী জানতে পারে। এই রিপোর্টের ঠিক বাম পাশে সাইমন ড্রিং’র ছবিসহ</span><span style="color: black; font-family: "Times New Roman"; font-size: 12.0pt; mso-ansi-language: EN-US; mso-bidi-font-family: "Times New Roman"; mso-bidi-language: AR-SA; mso-fareast-font-family: "Times New Roman"; mso-fareast-language: EN-US;"> Telegraph Reporter Escapes Net’শিরোনামে সংবাদটিও ছাপা হয়। সাধারণত পত্রিকায় কখনো রিপোর্টা রের ছবি ছাপা হয়না। কিন্তু গণহত্যার এই ঝুকিপূর্ণ রিপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি নিজেই হয়ে গেলেন সংবাদের বিষয়বস্তু।<br />জাল ফসকে গেলেন টেলিগ্রাফ রিপোর্টার ’শিরোনামের এই সংবাদে বৈদেশিক সংবাদদাতাদের বহিস্কারের জন্য খুজে ফেরা সেনাদলের নজর এড়িয়ে কিভাবে তিনি থেকে গেলেন ও ২৫ শে মার্চের ঘটনা এবং সংঘর্ষের প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ দুর্গত রাষ্ট্রের বাইরে নিয়ে আসতে পারলেন তার বিবরণও ছাপা হয়। বিস্তারিত জানার জন্য মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত সে পত্রিকাটি দেখে নেওয়ার অনুরোধ রইল।<br />সাইমন ড্রিং সাহসিকতার সাথে এককভাবে গণহত্যা সম্পর্কে প্রতিবেদন তুলে ধরে যে দায়িত্ব পালন করে গেছেন তা সেই সময়ের অনেক বাঘা-বাঘা কুটনীতিকের পক্ষেও সম্ভব হয়নি। সেজন্য তিনি সাংবাদিক হিসেবে অনুসরণীয়। তার এ অবদানের কথা বাঙালি জাতি কোনদিন ভুলবেনা। তারই কাছে আমরা চির শ্রদ্ধাবনত।</span></div>
<div class="MsoNormal">
<b><span style="color: black; font-family: "Times New Roman"; font-size: 12.0pt; mso-ansi-language: EN-US; mso-bidi-font-family: "Times New Roman"; mso-bidi-language: AR-SA; mso-fareast-font-family: "Times New Roman"; mso-fareast-language: EN-US;">২৬ মার্চ ২০০৯, দৈনিক বাঁকখালী। </span></b><span style="color: black; font-family: SutonnyMJ; font-size: 12.0pt; mso-ansi-language: EN-US; mso-bidi-font-family: "Times New Roman"; mso-bidi-language: AR-SA; mso-fareast-font-family: "Times New Roman"; mso-fareast-language: EN-US;"> </span></div>
<br />
<div style="text-align: justify;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
</div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-70437274271470830352013-07-21T12:10:00.002-07:002013-07-21T12:10:19.601-07:00মুক্তিযুদ্ধে উখিয়া: হত্যা ও ধ্বংসলীলা <div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
বাঙালিদের জন্য এই দীর্ঘ সময়টা ছিল দুষ্কাল। পাকিস্তানীদের দুঃশাসন আর প্রতারণায় বিপর্যস্ত এদেশের মানুষ নিজেদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ক্রমশঃ অনুধাবন করতে পেরেছিল তাদের সংকটাপন্ন অস্তিত্বকে। ফলে ‘আত্ম-পরিচয়’ উদ্ধারের অন্তর্গত তাড়নায় তারা ক্রমে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে-পাকিস্তানী দুঃশাসনকে অগ্রাহ্য করতে শুরু করে- জাতিসত্তার বিকাশকল্পে স্বাধীনতা-প্রবণ হয়ে ওঠে। সেই স্বাধীনতার জন্য এদেশের মানুষকে সংগ্রাম করতে হয় দীর্ঘ ২৩টি বছর। একাত্তরে সুদীর্ঘ ন’ মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধের পর অবশেষে বিশ্ব-মানচিত্রে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। ১৯৭১-এ সংঘটিত সেই মহান মুক্তিযুদ্ধ আজ এক গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। বাংলার আপামর জনসাধারণ আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবীকে নসাৎ করার লক্ষ্যে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সশস্ত্র দখলদার বাহিনী পাশবিক শক্তি নিয়ে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাপিয়ে পড়ে। স্থানীয় দোসর রাজাকার আলম শামস এর সহায়তায় চালায় নগ্নহামলা। কিন্তু বাঙালিরা বীরের জাতি। যে কোন কিছুর বিনিময়ে ছিনিয়ে আনতে পারে তার ন্যায্য অধিকার। ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বাঙালিরা গড়ে তোলে প্রতিরোধ। কক্সবাজারের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উখিয়ার যুদ্ধোপর্ব ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসেরই একটি অবিস্মরণীয় অংশ; এ অঞ্চলের মুক্তি-পাগল জনগণের অসীম বীরত্ব, সাহসিকতা আর আত্মদানের অমর অধ্যায়। কক্সবাজারের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম পর্বে এ অঞ্চলের মানুষ পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্খা শহর থেকে গ্রামে, গ্রামান্তরে ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে সংগঠিত হতে থাকে আপামর জনসাধারণ।
১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে সরকার গঠনের দিকে মনোনিবেশ করলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করে। কিন্তু ১ মার্চ ঢাকায় হোটেল পূর্বাণীতে আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি পার্টির সভা চলাকালীন বেলা ১.০৫ মিনিটে বেতারে ইয়াহিয়া খানের জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা করে। এর পর গোটা বাংলাদেশ অচল হয়ে যায়। এ খবরটি চারদিকে পড়ে নিমিষেই । জড়ো হতে থাকে জনতা। বিকাল ৪ টায় এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২ এবং ৩ মার্চ ঢাকা ও সারাদেশে হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ২ মার্চ রাতে কার্ফ্যু জারি করা হয়। ছাত্র জনতা কার্ফ্যু ভঙ্গ করলে সেনাবাহিনী গুলি চালায়। কার্ফ্যুভঙ্গকারী শ্রমিক, ছাত্র, জনতা সেøাগান দেয়, “বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’ সেনাবাহিনীর কারফিউকে উপেক্ষা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় স্মরণকালের সমাবেশে ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। ১৩ মার্চ পল্টন জনসভায় স্বাধীনতার ইশতেহারে বঙ্গবন্ধু বাংলায় স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। ৩ মার্চ থেকেই শুরু হয় বাংলাদেশে অসহযোগ আন্দোলন। বাংলাদেশের সর্বত্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সারাদেশের মতো কক্সবাজারের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ছাত্র, শ্রমিক, জনতা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে অসহযোগ কর্মসূচী পালনের জন্য তৎপর হয়ে উঠে। ৩ মার্চ বিকাল ৩টায় কক্সবাজার ইনস্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরীর ময়দানে (বর্তমানে শহীদ দৌলত ময়দান) পাকিস্তানের সাধারণ পরিষদে বিজয়ী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবীতে এক জনসভায় জনসম্মুখে পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। কক্সবাজার শহরের জনসভা এবং পাকিস্তানি পতাকা পোড়ানোর ঘটনায় মহকুমার সর্বত্র আন্দোলনের ঢেউ জাগে। সর্বত্র হরতাল, প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান পুনরায় ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠানের ষোঘণা দিলে এর প্রতিবাদে ছাত্রজনতা ওই দিন মিছিল এবং মিটিং এর মাধ্যমে পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র সম্পর্কে জনগণকে সজাগ করে। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর ৮ মার্চ জেলা নেতৃবৃন্দ আন্দোলনের পরবর্তী করণীয় ঠিক করে। থানা ও ইউনিয়ন স্থরের নেতাদের নিয়ে মহকুমার নেতারা অসহযোগ কর্মসূচি পালন, সংগ্রাম পরিষদ গঠনসহ সার্বক্ষণিক মিটিং মিছিল ও যুদ্ধের প্রস্তুতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর ১০ মার্চের পর কক্সবাাজার মহকুমা সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য শমসের আলম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে উখিয়া থানা সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্যরা হল- বদিউর রহমান চৌধুরী, নুর আহমদ চৌধুরী, মোহাম্মদ সিরাজুল হক চৌধুরী, আবদুল হক চৌধুরী (উখিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক), লোকমান হাকিম মাস্টার, আবদুল মান্নান, জাফর আলম চৌধুরী, জাফর উল্লাহ চৌধুরী, আলী মিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ ঠান্ডা মিয়া বখতিয়ার আহমদ চৌধুরী, আলী আহমদ সিকদার, এজাহরুল হক, ইব্রাহিম আজাদ (প্রয়াত প্রধান শিক্ষক মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়), তেজেন্দ্র বিজয় রায় চৌধুরী। ২তাঁরা কোটবাজারে প্রকাশ্য জনসভায় পাকিস্তানি পতাকা পুড়িয়ে ফেলে তদস্থলে স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করেন। কোর্ট বাজারের দর্জি টুকু প্রকাশ টুইক্কা এ পতাকা তৈরি করেন।৩ মুক্তিযুদ্ধের সময় উখিয়ার সে সব ছাত্র নেতা মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে সহায়তা করেন তাদের মধ্যে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন গেরিলা কমান্ডের উখিয়ার কমান্ডার ছাত্র নেতা অরবিন্দ বড়–য়া৪, উখিয়ার তৎকাালিন ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান চৌধুরী ( সাবেক হুইপ ও বর্তমানে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি), ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল করিম, মহিউদ্দীন চৌধুরী (মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক থাকাকালে প্রয়াত), ফজলুল করিম (বর্তমানে কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ) প্রমুখ।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বৈঠকের নামে তালবাহনা করে পাকিস্তানি হানাদার বাঙালি নিধনযজ্ঞের সবুজ সংকেত প্রদান ক'রে সন্ধ্যায় গোপনে পশ্চিম পাকিস্তান যাত্রা করে। সে রাতেই পাকিস্তান বাহিনী শুরু করে অপারেশন সার্চলাইট নামের হত্যাযজ্ঞ। ২৫ মার্চ ভয়াল কালো রাতে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরাঞ্চলে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর লোকজন বাঙালিদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে। প্রাণ হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ। তার পাশাপাশি পূর্ব বাংলায় সামরিক আইন জারি করা হলে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও এর প্রভাব পড়ে। এর পর মুক্তিযোদ্ধারা চকরিয়া, ডুলাহাজারা, রামুসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড বসায়। যাতে পাকবাহিনী কক্সবাজারে আগমণ করতে না পারে। ২৭ এপ্রিল চকরিয়া এবং ৫ মে কক্সবাজার পতন হলে মুক্তিযোদ্ধারা কেউ কেউ ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য এবং কেউ কেউ বার্মায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় বার্মায় উখিয়ার সেসব মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠকরা আশ্রয় নেন তাদের মধ্যে শমসের আলম চৌধুরী, বাদশা মিয়া চৌধুরী, প্রিয়দর্শী বড়–য়া, বদিউর রহমান চৌধুরী, মোহাম্মদ সিরাজুল হক চৌধুরী, আবদুল মান্নান, আলী মিয়া চৌধুরী, নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ ঠান্ডা মিয়া, বখতিয়ার আহমদ চৌধুরী, আলী আহমদ সিকদার প্রমুখ। এ সময় মিয়ানমার সরকার মুক্তিযোদ্ধা সংগঠকদেরকে এক রকম বন্দী করে রাখে। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কঠোর নিয়ন্ত্রণ সত্ত্বেও শরণার্থীরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সীমিত পরিসরে হলেও কার্যক্রম গ্রহণ করে। শরণার্থী নেতৃবৃন্দ মিয়ানমারে আশ্রয় গ্রহণকারী ইপিআর ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যদের সংগঠিত করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গেরিলা তৎপরতা চালানোর জন্য ৯-১০টি গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। অবশেষে ৬ সেপ্টেম্বর ১৬ জনের একটি গেরিলা দল প্রথম বাংলাদেশে প্রবেশ করে। মিয়ানমার থেকে গোপনে সংগঠিত হয়ে ছোট ছোট মোট পাঁচটি গেরিলা দল বাংলাদেশে প্রবেশ করে। ওই গেরিলা দলের নেতৃত্বে ছিলেন হাবিলদার আবদুস সোবহান। গেরিলা দলগুলো দক্ষিণ চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি সফল গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করতে সক্ষম হয়।শরণার্থী নেতৃবৃন্দ মিয়ানমারে আশ্রয়গ্রহণের পূর্বে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে তাঁদের সংগৃহীত অস্ত্রশস্ত্র দেশের অভ্যন্তরে লুকিয়ে রেখে গিয়েছিলেন। মিয়ানমার প্রত্যাগত গেরিলা দলগুলো প্রাথমিকভাবে এসব অস্ত্র নিয়ে তাঁদের তৎপরতা শুরু করে। পরবর্তীতে তাঁদের প্রয়োজনীয় অস্ত্রের যোগান দিয়েছিল বিভিন্ন অপারেশনের মাধ্যমে প্রাপ্ত গোলাবারুদ।
উখিয়ায় কোন সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত না হলেও মিয়ানমার থেকে হাবিলদার সোবহানের নেতৃত্বে আসা একদল মুক্তিযোদ্ধা পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে মুক্তিবাহিনী তথা মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।
উখিয়া থানা অপারেশন: উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সংগ্রাম কমিটির সদস্য সিরাজুূল হক চৌধুরী প্রকাশ গুরা মিয়া ও তৎকাালিন ছাত্রলীগ নেতা শাহজাহান চৌধুরী ( সাবেক হুইপ ও বর্তমানে কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি) চিঠির বদৌলতে হাবিলদার সোবহান গ্রুপ অবগত হয়- পাক হানাদার বাহিনী ও শান্তি কমিটির সদস্যরা উখিয়া থানায় রক্ষিত অস্ত্র এবং গোলাবারুদ নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনার। পরে মু্িক্তযোদ্ধাদেরকে ৫টি বাহিনীতে বিভক্ত করে ১২ ডিসেম্বর উখিয়া থানা অপারেশন চালানো হয় সোবহানের নেতৃত্বে। উখিয়া থানা ঘেরাও করে রাজাকার ও পুলিশকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন ৪২ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধার দল। বিনা রক্তপাতে রাজাকার ও পুলিশ আত্মসমর্পন করার পর ৮৭ টি থ্রি নট থ্রি রাইফেল, ৪৭৪০ রাউন্ড গুলি মুক্তিযোদ্ধাদের হস্তগত করে।
এ ছাড়া ক্যাপ্টেন সোবহান, মুক্তিযোদ্ধা পরিমল বড়–য়া, অরবিন্দ বড়–য়া প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধারা হলদিয়া পাতাবাড়ি ফুরিইখ্যা বাহিনীর ক্যাম্পে অভিযান পরিচালিত করে তাদের পরাজিত করে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা চালানো হয়। ২৫শে মার্চের কালোরাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর শুরু করা অপারেশন সার্চলাইট নামক ধ্বংসযজ্ঞ বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত চলে এবং এ নয় মাসে বাংলাদেশি কিছু ঘাতক দোসরদের সহায়তায় কত বাঙালি প্রান হারিয়েছে তা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন রকম পরিসংখ্যান প্রচলিত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন এনাসাইক্লোপেডিয়া ও বইতে এই সংখ্যাটিকে ২,০০,০০০ থেকে শুরু করে ৩০,০০,০০০ পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে।৫ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যাটিকে ৩০,০০,০০০ হিসেবে অনুমান করা হয়। যুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে বা মায়ানমারে আশ্রয় গ্রহণ করে, যারা সে সময় দেশত্যাগ না করলে হয়তো গণহত্যার শিকার হত।৬
ভৌগলিক কারণে যদিও বা উখিয়ায় সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। কিংবা মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ না হলেও উখিয়ার বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাকবাহিনী ও তাদের দোসরা হত্যা করেছে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশলাখ শহীদের আত্মত্যাগকারীর অন্যতম শহীদ এটিএম জাফর আলম। পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ জাফর আলম। উখিয়ার রুমখাঁপালং ছৈয়দ হোসাইনের পুত্র ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের বড় ভাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালে তৎকালীন ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হল) হলের ৩০৩ নম্বর কক্ষে থাকতেন এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ঐ হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ও হল সংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭০ এ তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি অংশগ্রহণ করেন ৬ দফা আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে, ৭০ এর নির্বাচনে উখিয়া-টেকনাফে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে সক্রিয়ভাবে কাজ করেন।৭ তৎকালিন পাবলিক সার্ভিস কমিশন ( সিএসপি) পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়ে এসডিও হিসেবে উত্তীর্ণ হয়। ২৪ মার্চ ১৯৭১ নোয়াখালী জেলায় যোগদান পত্র গ্রহণ করার পরে ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার প্রাক্কালে অর্থাৎ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাক হানাদারেরা নিরস্ত্র বাঙালির উপর নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে। একাত্তরের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলোতে স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কর্মকান্ড পরিচালিত হয় ইকবাল হল তথা জহুরুল হক হল থেকে। (বস্তুত ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় থেকে ওই ছাত্রাবাসটি ছিল স্বাধিকার তথা স্বাধীনতা সংগ্রামের সদর দপ্তর বিশেষ। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনের ঐতিহাসিক গণরায়কে নস্যাত করার জন্য একাত্তর সালের ১ মার্চ পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান বেতার ঘোষণার মাধ্যমে ৩ মার্চ ঢাকায় আহূত জাতীয় সংসদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করার প্রতিক্রিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে যে অভূতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন পরিচালিত হয়, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ একাত্তরের মার্চ মাসে ধাপে ধাপে তা স্বাধীনতা সংগ্রামের দিকে নিয়ে যায়। এ সময় বঙ্গবন্ধু এক রাতে জহুরুল হক হলে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতাদের সঙ্গে এক অঘোষিত সভায় মিলিত হন বলে জানা যায়। পাকিস্তান বাহিনী অপারেশন সার্চ লাইটের অন্যতম প্রধান লক্ষ্যস্তুু ছিল জহরুল হক হল। সৌভাগ্যবশত ২৫ মার্চ মধ্যরাতের আগে প্রায় সব ছাত্রনেতা ও কর্মী হল ছেড়ে চলে যান। কক্সবাজারের কৃতি সন্তান আবু তাহের মোহাম্মদ জাফর আলমও ২৫ মার্চ রাতে চলে আসার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ডাক তাকে আসতে বাঁধা দেয়। সেদিন রাত থেকে ২৬ মার্চ সারাদিন ওই হরে উপর নীলক্ষেত রোড থেকে মার্টার, রকেট, লষ্ণার রিকলেস রাইফেলস এবং ভারী মেশিন গান ও ট্যাংক থেকে প্রচন্ড আক্রমণ পরিচালিত হয়। এ সময় কক্সবাজারের কৃতি সন্তান জাফর আলম অন্যান্য স্বাধীনতাকামী ছাত্রনেতাদের নিয়ে ইকবাল হলে অবস্থান করেছিলেন। সেদিন রাইফেল দিয়ে হানাদার বাহিনীর আক্রমণকে প্রতহত করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি। এ সময় তিনি পাক বাহিনীর হামলায় ইকবাল হলে শহীদ হন। তাঁর তারই সাথে একই দিনে উক্ত হলের ৭ জন মেধাবী ছাত্র চিশতি শাহ, হেলালুর রহমান, সালেহ আহমদ মজুমদার, জাহাঙ্গীর মনির, আবুল কালাম, মো.আশরাফ আলী খান, আবু তাহের পাঠান এবং শামসুদ্দিন ও আবদুল জলিল নামের ২ কর্মচারীসহ নাম না জানা আরো অনেকেই নির্মমভাবে খুন হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে এম মুনিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭৭১-৭২ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে শুধু জহুরুল হক হলেই প্রায় ২০০ ছাত্র নিহত হয় বলে উল্লেখ করেছেন।৮শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এটিএম জাফর আলম চৌধুরীর একান্ত বন্ধু নায়ক সোহেল রানা তাঁকে বাংলাদেশের প্রথম মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বলে বিভিন্ন টক শো, লেখায় উল্লেখ করেন। ২০১২ সালের ৫ মে দীর্ঘ ৪১ বছর পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক শহীদ এটিএম জাফর আলমের ছোট ভাই রাষ্টপ্রতি কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের কাছে জাফর আলমের বিএসসি অনার্স (১৯৬৯) ও এম এসসি (১৯৭০) পরীক্ষার সার্টিফিকেট হস্তান্তর করেন। ৯শহীদ জাফর আলম’র স্মৃতিকে ধরে রাখার লক্ষ্যে মাহমুদুল হক চৌধুরী উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে রেজু খালের সড়কটিকে শহীদ জাফর আলম চৌধুরী সড়ক এবং কক্সবাজার- টেকনাফ সড়কের আরাকান সড়কটি শহীদ এটিএম জাফর আলম চৌধুরী আরাকান সড়ক নামকরণ করা হয়েছে।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের উখিয়ার আরেকজন বৃদ্ধ শহীদ ইলিয়াছ মাষ্টার। কক্সবাজার সদর উপজেলার নাইক্ষ্যংদিয়া গ্রামে হাজী হাফেজ মোবারক আলীর ঔরসে জন্মগ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৬২ সালে ¯œাতক ডিগ্রী অর্জনের পর উখিয়া হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন এবং পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে ঘুমধুম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক থাকাকালীন সময়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন। তাই পাকিস্তানী দোসর গোলাম রসুল এর নজরে পড়ে। একদিন রাজাপালংস্থ তার শশুর বাড়ী থেকে বের হওয়ার পথে উৎপেতে থাকা রাজাকার গোলাম রসুল ও তৎকালীন উখিয়া থানার ওসি সানাউলাহ প্রথমে উখিয়া দক্ষিণ ষ্টেশনে নিয়ে এসে। দক্ষিণ ষ্টেশন থেকে রশি এনে তাকে বন্দী করে প্রথমে ঘুমধুম, ঘুমধুম থেকে পরে পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায়। পরে তাকে পাকিস্তানী কারাগারে নিয়ে বন্দী রাখে। তাঁকে বন্দী করার ১৫ দিন পর বড় মহেশখালী নিবাসী মোহাম্মদ আমির মিয়া (তৎসময়ে পালং হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক) কে পালং আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে মুক্তি বাহিনীকে জায়গা দেওয়ার অপরাধে পাকিস্তানী কারাগারে বন্দী করা হয়। তার সাথে ঐ দিন ঐ কারাগারে ইলিয়াছ মাষ্টারের দেখা হয়। ইলিয়াছ মাস্টারের সম্পর্কে বলতে গিয়ে মোহাম্মদ আমির লিখেন- আমার ঘনিষ্ট বন্ধু মোহাম্মদ ইলিয়াছ। বাড়ী পোকখালী ও বালুখালী জুনিয়র হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, এক অবাঙালি বিহারীর (কানকাটা গোলাম রসুল) হাতে ধরা পড়ে কক্সবাজার শহরে হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে আটক আছেন। তাকে আমার ১৫/২০ দিন পুর্বে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দেখলূম, তার শরীরের প্রতিটি অংশে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন। তার পরেও সেদিন তার হাসি-হাসি মুখ দেখলুম। অনেক চেষ্টা তদবীরের পর সেতিন তাকে ছেড়ে দেওয়া বলে বর্বর সামরিক কর্তৃপক্ষ তাকে কথা দিয়েছিল। জেলের কয়েদিরা তার চুল কেটে দিয়েছিল। তার জন্য বাড়ী থেকে পাঠানো উপহার সামগ্রী অকাতরে কয়েদিদের নিকট বিলিয়ে দিয়েছেন। হায়রে মুক্তির স্বাধ! আমার পাশ ঘেষে বসে তিনি গ্রেপ্তারের ও নির্যাতনের কাহিনী বলছিলেন। বাহিরে আছরের আজান শুনা গেল। আমরা নামাজ পড়ে নিলাম। হঠাৎ জানা গেল। ৩ জন আর্মির লোক সশস্ত্র জেলে প্রবেশ করছে। লকারের পুুলিশ ও মেট আমাদিগকে জেলের পুর্ব পাশে অবস্থিত মেঝেতে ৪ জন করে ফাইল করে বসাল। একজন হাবিলদারের হাতে স্টেন। অপর ২জনের হাতে এসএল আর। পাক পবিত্রভূমির পবিত্রতা সম্বন্ধে ১০/১৫মিনিট উর্দুতে বক্তৃতা দিল। দেশের বিরোধিতা যারা করছে তাদের গাদ্দার। বেইমান বলে গালি ও দিল। এমনি সময় হাবিলদার জানতে চাইল ‘মাস্টার সাহেব কাহা হায়! ’আমিও মাস্টার ইলিয়াচ ভাইও মাস্টার। কাকে চাচ্ছে বুঝা গেলনা। তখন আমার অবস্থা মুর্চা যাওয়ার মত। কিছুক্ষণ পর হাবিলদার এসে একেক জন করে খুটিয়ে দেখল এবঙ ইলিয়াচ ভাইয়ের নিকট এসে বল¬- তোম হোম ত মাস্টার’। এই বলে ফ্াইল থেতে উঠিয়ে নিল। জেল ফটকের জমাদার ইলিয়াচ ভাইয়ের জামা কাপড়গুলি দেবার প্রস্তাব করলে ওই জল্লাদ পর হাবিলদার মুখের ওপর স্পষ্ট বলল-‘কাপড়কা জরুত ক্যা,ওসকো ত আবি সুট কর দেগা।’ পরে তার কি হল জানাযায়নি। আমি জেল থেকে মুক্ত হবার পর লোক মারফত জানতে পেরেছি। তার নিজের হাতে খনন করা কবরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।১০ তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার জন্য উখিয়া উপজেলা পরিষদের সৌজন্যে ১৯৮৮ সনের এরশাদ সরকারের আমলে উখিয়া মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ‘শহীদ ইলিয়াছ মিয়া পাঠাগার’ এবং ঘুমধুম হাই স্কুলে ‘শহীদ ইলিয়াছ মিয়া পাঠাগার’ প্রতিষ্ঠিত হয়। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি ধরে রাখতে উখিয়ার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষের দাবীর মূখে উখিয়া সদর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের এক পার্শ্বে স্থাপিত শহীদ মাষ্টার ইলিয়াছ মিয়া গণ-পাঠাগারটি দীর্ঘ এক যুগ ধরে অযতেœ-অবহেলায় পড়ে রয়েছে। স্থানীয় সাংসদ, ইউএনও এবং উপজেলা পরিষদ থেকে জরাজীর্ণ ওই পাঠাগার সংস্কার কল্পে এ পর্যন্তও দেয়া হয়নি কোন বরাদ্দ। শহীদ পরিবারের পক্ষে এটি সংস্কার কল্পে আবেদনও করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা রুমখা পালং এর ভট্টাচার্য মহাজন, মরিচ্যা হাই স্কুলের ছাত্র নির্মল ধর, ভালুকিয়ার আবুল হোসেন, রাজাপালং এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে আমানত উল্লাহ, রুমখা পালং এলাকার মনীন্দ্র বড়ুয়াসহ নাম না জানা আরো হত্যা করে।
একাত্তুরের মুক্তিযুদ্ধে সারাদেশ ব্যাপী নির্যাতনের চিত্র হিসেবে দেখা যায় নারী নির্যাতন, হত্যা এবং মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠকদের বসতবাড়ি-দোকানঘরে আগুন দেয়া ও লুটপাত করা। সারাদেশের ন্যায় উখিয়াও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রায় সব কটি ইউনিয়নে নির্যাতন ও বাড়িঘর পুড়িয়ে লুটপাট চালানো হয়। প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক উখিয়া উপজেলার যে সমস্ত বাড়ি পাক বাহিনী পুড়ে দিয়েছে তার মধ্যে উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের প্রেসিডেন্ট ও কক্সবাজার মহকুমা সংগ্রাম কমিটির সদস্য বাদশা মিয়া চৌধুরী, উখিয়া থানা সংগ্রাম পরিষদ সদস্য ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক নেতা মোহাম্মদ ইব্রাহিম আজাদ (প্রয়াত প্রধান শিক্ষক-মরিচ্যা পালং উচ্চ বিদ্যালয়), বখতিয়ার আহমদ চৌধুরী (উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাহমুদুল হক চৌধুরীর বাবা), কালু সওদাগর, ফণিন্দ্র শর্মা, তরনী মহাজন, রত্মাপালং নিবাসী কক্সবাজার মহকুমা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য ও উখিয়া থানা আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট শমসের আলম চৌধুরী, জাফর উল্লাহ চৌধুরী, বেলাল আহমদ, মীর আহমদ চৌধুরী, যোগেন্দ্র সিকদার, সাংবাদিক সঞ্জয় বড়–য়া ও মুক্তিযোদ্ধা সুনীল বড়–য়ার বাড়ি, তৎকালিন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অরবিন্দ বড়–য়া, মুক্তিযোদ্ধা পরিমল বড়–য়া (বতর্মান উখিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার), ছৈয়দুজ্জামান মুন্সী, ফতেহ আলী মুন্সি, রাজাপালংয়ের বদিউর রহমান চৌধুরী (নুরুল ইসলাম চৌধুরী প্রকাশ ঠান্ডা মিয়ার বাবা) , আলী আহমদ মিয়া বিকম, পালংখালী ইউনিয়নের বক্তার আহমদ চৌধুরী, জোবেদা খাতুন প্রমুখের বাড়ি।১১
নানা বিপদ আর সংকটের আবর্তে বাংলাদেশ। রুদ্দদ্বার আগুনে দগ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এদিকে সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ আর উগ্র মৌলবাদের আস্ফালন, সাম্রাজ্য বিরোধী গোষ্ঠীর উলঙ্গ লম্ফ-ঝম্প বাংলার ৫৬ হাজার বর্গমাইলকে পরিণত করেছে শ্বাপদ-সংকুল মাইনফিল্ডে। বিশ্ব দানব সাম্রাজ্যবাদের অশুভ খপ্পর থেকে বাঁচানোর জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে গণমূখী, অসাম্প্রদায়িক বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলে বাংলাদেশকে সাজাতে হবে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি যারা ৭১-এ নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল বাঙালী জাতিসত্তার অস্থিত্ব; হত্যা করেছিল ৩০ লাখ কৃতিসন্তান । সেসব যুদ্ধাপরাধীদের দ্রত বিচার করে জাতিকে কলংকমুক্ত করতে হবে।
(বি:দ্র: কোন বিশেষ সত্য তথ্য বাদ পড়লে লেখকের মোবাইল ফোন (০১৮১৪৪৯৫৪৬৬) নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হল) </div>
<div style="text-align: justify;">
দোহাই
১. বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রথম খন্ড: প্রথম পর্ব, সম্পাদনায় এরিয়া সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পৃ:১৫৪। </div>
<div style="text-align: justify;">
২. আদিল চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধের টুকিটাকি-উখিয়া, বিজয় স্মারক’১১, জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১১, পৃ: ৮৬। </div>
<div style="text-align: justify;">
৩. ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার, মুক্তিযুদ্ধ অক্টোবর ২০০৭, উখিয়া রত্মাপালংস্থ বাড়িতে।কালীন উখিয়া থানা আওয়ামী লীগের তৎকালিন প্রেসিডেন্ট শমসের আলম চৌধুরী, ২২
৪. মানিক বৈরাগী, শ্রুতিতে বামধারা একাত্তর: প্রেক্ষিত কক্সবাজার, ৭ ডিসেম্বর ২০১২, দৈনিক সমুদ্রকন্ঠ। </div>
<div style="text-align: justify;">
5. Matthew White's Death Tolls for the Major Wars and Atrocities of the Twentieth Century, http://necrometrics.com/20clm#Bangladesh </div>
<div style="text-align: justify;">
6.For details discussion on this Subject- Rummel, Rudolph J., "Statistics of Democide: Genocide and Mass Murder Since 1900", ISBN 3-8258-4010-7, Chapter 8, Table 8.2 Pakistan Genocide in Bangladesh Estimates, Sources, and Calcualtions: lowest estimate two million claimed by Pakistan (reported by Aziz, Qutubuddin. Blood and tears Karachi: United Press of Pakistan, 1974. pp. 74,226), all the other sources used by Rummel suggest a figure of between 8 and 10 million with one (Johnson, B. L. C. Bangladesh. New York: Barnes & Noble, 1975. pp. 73,75) that "could have been" 12 million|</div>
<div style="text-align: justify;">
৭. মুহম্মদ নূরুল ইসলাম, উখিয়ার ইতিহাস, একুশে বইমেলা ২০১০, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী, পৃ:২৪২।/ কালাম আজাদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে কক্সবাজারের শহীদ ও দালাল, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় (অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন চৌধুরী সম্পাদিত) ১৬ ডিসেম্বর ২০০৯, মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা ২০০৯ উদযাপন পরিষদ, উখিয়া-কক্সবাজার, পৃ-১০
৮. অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর, ফেব্রুয়ারি ২০০৩, অনন্যা প্রকাশনী, পৃ:২০৫ </div>
<div style="text-align: justify;">
৯. ঢাবিতে শহীদ ছাত্রের সার্টিফিকেট হস্তান্তর, ঢাবি প্রতিনিধি ৫ মে ২০১২, পিটিবি নিউজ ডটকম, ঢাকা, । </div>
<div style="text-align: justify;">
১০. মোহাম্মদ আমির, ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি’, ‘মুক্তির মোহনা’ (আবদুল সালাম বাঙালি সম্পাদিত), ডিসেম্বর ১৯৯৫, প্রগতিশীল সাহিত্য সংসদ, মহেশখালী, পৃ-৩৬/ আজাদ বসু, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ মাস্টার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১১, বিজয় (বিজয়ের ৪০ পুর্তি স্মারক), জেলা প্রশাসন, কক্সবাজার, পৃ:৪০
১১. কালাম আজাদ, মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনী ও দোসর কর্তৃক আগুনে ভষ্মিভূত বাড়ি ও লুটপাট: প্রেক্ষিত কক্সবাজার; ১০ ডিসেম্বর ২০১২, দৈনিক সমুদ্রকন্ঠ।
- See more at: http://www.nagorikblog.com/node/12076#sthash.pp3VVRXa.dpuf</div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-78578304076061982392013-07-16T03:52:00.002-07:002013-07-16T03:52:23.859-07:00রমজান মাসেও উপেক্ষিত ভোক্তা অধিকার আইন<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
প্রতিবছরের মতো এবারের মাহে রমজান মাসেও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য পণ্যের দাম বেড়েই চলছেই্। কোন মতেই নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছেনা নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য পরিস্থিতি। এ নিয়ে সরকারের সাথে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্র“তি কোনটিতেই শেষ পর্যন্ত কোনো কাজে আসছে না। যথারীতি নিত্য পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতি। অন্যদিকে যে আইন ভোক্তা সাধারণের অধিকার সংরক্ষণ করবে, সেই আইনও রয়েছে অনেকটা শুধু কাগজ-কলমেই সীমাবদ্ধ। দেশে ভোক্তা অধিকার আইন পাস হয়েছে ২বছর হলো। এ পর্যন্ত মাত্র ৮টি অভিযোগ পেয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার কমিশন। এতেই বোঝা যায় এ আইনের প্রয়োগ কতোটা সীমিত।<br />সংশ্লিস্টরা বলেছেন, ভোক্তা অধিকার আইনের কিছু দুর্বল দিকের কারণেই এর সুফল পাচ্ছেনা সাধারণ ভোক্তা সমাজ। তাই ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে আইনের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে আইনটি ভোক্তা বান্ধব করা, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলো ভাবতে হবে গুরুত্ব দিয়্।ে প্রতি রমজানেই দেখা যায়, কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে ভোজ্যতেল, চিনি, পেয়াজ, ছোলা, কাঁচামরিচ, বেগুন ইত্যাদি পণ্যের দাম -দর নিযে চরম দুর্ভোগে পড়েন ভোক্তারা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রায় সবধরণের পণ্য বাজারেই অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেভাবে পারছেন নানা উছিলায় বাড়তি মূল্য হাতিয়ে নিচ্ছেন ভোক্তা সাধারণের কাছ থেকে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তার খুব একটা প্রভাব নেই বাজারে। ভোক্তারা বাধ্য হচ্ছেন বেশি দামে মোকাবেলার জন্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তার একটা প্রভাব নেই বাজারে। তারপরেও ভোক্তারা বাধ্য হচ্ছেন বেশি দামে জিনিসপত্র কিনতে। এ জিম্মিদশা থেকে ভোক্তাদের মুক্তি দিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার। পাস হয়েছে ভোক্তা অধিকার আইন। কিন্তু বহু প্রতিক্ষিত আইনটি এখনো ভোক্তাদের অধিকার সংরক্ষণে কার্যক্রর কোন ভূমিকা রাখতে পারছেন না। শুধু পণ্যমূল্য বাড়ানোই নয়, পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, সেবার তালিকা সংরক্ষণ ও প্রদর্শন না করা, নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রি করা, পণ্য মজুদ করা, ভেজাল পণ্য বিক্রি করা, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণা, পণ্য নকল করা ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করা ইত্যাদিও ভোক্তা অধিকার পরিপন্থি। ভোক্তাদের এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার চাওয়ার আইনি অধিকার আছে। কিন্তু এ সম্পর্কে ভোক্তারা ওয়াকিবহাল নন বললেই চলে। <br />বাংলাদেশে ভোক্তা সাধারণের অধিকার নিশ্চিত না হওয়ার পেছনে কাজ করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের দুর্বলতা, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের যথাযথভাবে কার্যক্রর না হওয়া এবঙ সর্বোপরি এ সচেতনতার অভাব। ২ বছরে মাত্র ৮টি অভিযোগই এর প্রমাণ। অনেকেই জানেনই না কোথায় গিয়ে কীভাবে অভিযোগ করতে হয়। এছাড়া রয়েছে অভিযোগের প্রমাণের আইনগত জটিলতা। অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারলে উল্টো অভিযোগকারীকেই দণ্ড ভোগের আতঙ্কও রয়েছে। এসব কারণে দেখা যায় ক্রেতা সাধারণ জেনেশুনে ঠকলেও অভিযোগ করতে যান না॥ এসব কারণেই অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে আর ভোক্তা সাধারণ প্রতিনিয়ত হচ্ছে নিগৃহীত্। এ অবস্থা চলতে পারে না। ভোক্তা অধিকার নিশ্চিত করতে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে। আইনের দুর্বল দিকগুলো বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে সেগুলো সংশোধনের কথা ভাবতে হবে জরুরি ভিত্তিতে। নতুবা যে আইন এখন চালু হয়েছে তার বাস্তব রুপ দিতে হবে। শুধু আইন থাকলেই চলবে না, এর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরকে প্রয়োজনীয় লোকবল দিয়ে কার্যক্রর করতে হবে। ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে সাধারণ ভোক্তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, অধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা সম্পর্কে ওয়াকিবহার করতে হবে।</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<i><b>৫ আগস্ট ২০১১, দৈনিক আজকের কক্সবাজার বার্তা।</b></i><br /></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-76311705936332887712013-07-14T14:01:00.000-07:002013-07-14T14:01:02.423-07:00আমাদের কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর <div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
বাংলা পঞ্জিকার হিসেবে আজ (গতকাল ৬ আহস্ট) বাঙালীর আনন্দের বার্তাবহ দিন বাইশে শ্রাবণ আর ইংরেজি পঞ্জিকার হিসেবে ৭ আগস্ট বাঙালীর মননের সঙ্গী ও পথের দিশারী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭১তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ দিনই বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের ছেড়ে ইহজগতে চলে যান। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও বাংলা পঞ্জিকার বাইশে শ্রাবণ কবিগুরু, বিশ্বকবিসহ নানা অভিধায় সম্বোধন করে বাঙালি প্রাণের ডাক পৌঁছে দিয়েছে তাদের সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের অফুরান উৎস রবীন্দ্রনাথের কাছে। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি -কবিগুরু রচিত এ গান বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতাও বহুমাত্রিক অনন্য এ লেখক। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি নামক আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা ও কবিগুরুর মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন বাঙালীর আত্মপরিচয়ে দীপ্ত হওয়া ও আগামীর পথচলার অনুপ্রেরণা সৃষ্টির এক অপরিমেয় উৎস। কৃতজ্ঞ জাতি তাই গভীর শ্রদ্ধা-উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করছে প্রিয় কবির মৃত্যুবার্ষিকী। জাতীয় পর্যায়ে কবির স্মৃতিধন্য শিলাইদহ, শাহজাদপুর, পতিসর ও দক্ষিণডিহিতে পালিত হচ্ছে সরকারী আয়োজনে নানা অনুষ্ঠান। রাজধানী ঢাকায় সরকারী পর্যায় ছাড়াও সারাদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন রবীন্দ্র মৃত্যুজয়ন্তী পালন করছে। দৈনিক পত্রিকাগুলো প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। সরকারী-বেসরকারী চ্যানেলগুলো প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। দিনটিকে উপলক্ষ করে কক্সবাজারের স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন হেমন্তিকাও আয়োজন করতে যাচ্ছে কবির মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন। এ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরণের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাংস্কৃতিক চিন্তা ও আমাদের সংস্কৃতি নিয়েও সেমিনার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ লেখাটি এ উপলক্ষেই রচিত।</div>
<div style="text-align: justify;">
একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার ও দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের যুগবদলের সূচনাকারী। গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯১৩ সালে প্রথম এশীয় ও প্রথম বাঙালি হিসাবে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন অমিত প্রতিভাবান এই লেখক। ১৮৬১ সালে কলকাতার জোড়াসাঁকোর অভিজাত ঠাকুর পরিবারে জন্ম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। ১৯৪১ সালের ৭ আগস্ট (২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ৮০ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর।</div>
<div style="text-align: justify;">
অসাম্প্রদায়িক ও সর্বজনীন সমাজ ব্যবস্থার রূপকার রবীন্দ্রনাথ আজও বাঙালীকে দেখায় সঠিক পথের নিশানা। আজও বাঙালীর সকল সঙ্কট, আনন্দ-বেদনা ও পথ চলায় তিনিই সহায়। রবীন্দ্র সংস্কৃতির বহু ধারা ও সৃজনে স্নাত হওয়ার মাঝেই দীপ্যমান বাঙালির অগ্রযাত্রা ও বিকশিত হওয়ার সাধনা। বাঙালীর প্রত্যয়ী যাত্রাপথের সকল বাঁকেই রবীন্দ্রনাথের উপস্থিতি বিরাজমান। বাঙালীর প্রতিটি দিন, প্রতিটি ক্ষণের সঙ্গে যেন মিশে আছেন তিনি। এ কথার সুর ধরেই বলতে হয়Ñ আমার চোখে ঝলমলে দিন কিংবা নিকষ রাত/কেউ থাকে না সঙ্গে শুধুই আমার রবীন্দ্রনাথ। বাঙালীর সংস্কৃতি চর্চার এক অনন্য বাতিঘর রবীন্দ্রনাথ। বাঙালীর গান, কবিতা, গল্প, নাটক, চিত্রকলা, বিজ্ঞানমনস্কতা, লোকসাহিত্য চর্চা কিংবা ভাষাবিজ্ঞানÑকোথায় ছিলেন না তিনি? মহাসমুদ্রের মতো বিশাল ও বিস্তৃত পরিসরের সৃষ্টির আলোয় আলোকিত করেছেন বাঙালীর মনন, চিন্তা চেতনা ও ভাবনার ভুবনকে। আর রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। ব্রিটিশ আমলে নানাভাবে ভারতীয় মধ্যবিত্তের মাঝে জাগিয়ে তুলেছেন স্বাধীনতার স্পৃহা। জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকা-ের প্রতিবাদ করেছেন সাংস্কৃতিকভাবে। প্রত্যাখ্যান করেছেন ব্রিটিশ সরকার প্রদত্ত নাইট উপাধি। বাঙালীর অখ-তা রক্ষায় সক্রিয় ও সোচ্চার অংশ নিয়েছেন বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ আন্দোলনে। এমনকি তাঁর অসীম সৃষ্টি থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী জনতা। সমাজকল্যাণে ব্রতী হয়ে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। গ্রামীণ মানুষের জীবন উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করেন কৃষি ব্যাংক। এসবের বাইরে সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। আর তাঁর দর্শন চেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছে মানব কল্যাণের বাণী।</div>
<div style="text-align: justify;">
আমাদের সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ইতিহাসে রবীন্দ্রনাথের আবির্ভাব সত্যিই বিস্ময়কর। তাঁর কাব্যসাধনার ঐশ্বর্য এবং বৈচিত্র্য বাঙালি মানসকে যেভাবে অভিতূত করেছে, পৃথিবীর অন্যকোন দেশে কোনো কালে বোধহয় তার তুলনা মেলে না। একজন কবির সাধনায় প্রাদেশিক ভাষা বিশ্বসাহিত্যের পর্যায়ে পৌঁছে গেল, ইয়োরোপে দান্তের জীবনে তার দৃষ্টান্ত মেলে। কিন্তু তার চেয়েও বোধ হয় রবীন্দ্রনাথের সিদ্ধি সুদূর প্রসারী ও যুগান্তকারী।</div>
<div style="text-align: justify;">
কলকাতার ব্রহ্ম সমাজের শীর্ষ ব্যক্তিত্ব দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তিনি চতুর্দশ সন্তান। রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের প্রথম কবিতা লিখেছিলেন মাত্র আট বছর বয়সে। ১৮৭৭ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি প্রথম ছোট গল্প এবং নাটক লিখেন। এর আগেই প্রথম প্রতিষ্ঠিত কাব্যের জন্ম দিয়েছিলেন যা ভানুসিংহ ছদ্মনামে প্রকাশিত হয়। পারিবারিক শিক্ষা, ক্ষয়িষ্ণু জমিদারি পরিচালনা করতে গিয়ে লোকজীবনের সাহচর্য এবং প্রচুর ভ্রমণ তাঁর সমাজবীক্ষণ ও সৃষ্টিভাবনায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে।</div>
<div style="text-align: justify;">
জমিদারি কাজের জন্য তৎকালীন পূর্ববঙ্গের পদ্মাপাড়ের শিলাইদহ ও পতিসরে দীর্ঘ বসবাসের অভিজ্ঞতা রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প ও কবিতায় উঠে এসেছে। বিশেষ করে ছোটগল্পে তাঁর প্রগাঢ় জীবনঘনিষ্ঠ কাহিনীর প্রেরণা এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিথষ্ক্রিয়ার ফল।</div>
<div style="text-align: justify;">
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ নিকট অতীতের অনেক সংগ্রামে রবীন্দ্রনাথের লেখনী ও সুর হয়ে উঠেছিল বাঙালির উদ্দীপনার অন্যতম হাতিয়ার। চিরায়ত বাংলার রূপ-প্রকৃতি তাঁর কলমে যে মাধুর্য পেয়েছে তা বিরল। শিল্পের প্রায় সব শাখায় কৃতিত্বের ছাপ রাখা রবীন্দ্রনাথের সমাজচেতনা, দর্শন আর মানবতাবোধের উজ্জ্বল আভায় আলোকিত হয়েছে সমকালীন আন্তর্জাতিক বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমন্ডল। বাঙালি মানসে রবীন্দ্রনাথ নতুন ও নতুনতর প্রাণস্পন্দনের প্রতীক। রবীন্দ্রনাথের এই ৭১তম মৃত্যুবার্ষিকেও তাই রবীন্দ্রনাথ সম্বন্ধে আমাদের বিস্ময়ের অন্ত নেই, এখনো আমাদের জিজ্ঞাসার শেষ নেই৷ প্রাণময় তাঁর সৃষ্টির রহস্য আমাদের কাছে শেষ হয় না। আমরা সেই অশেষকে কবির সমগ্র সৃষ্টিলীলার সঙ্গে মিলিয়ে এখনো সন্ধান করে চলেছি। রবীন্দ্রনাথকে অনুভব করা, অনুধ্যান করার কাজটি বাংলাদেশে কখনো সরলরেখা অনুসরণ করে চলেনি৷ বঙ্কিম, একপেশে ও জটিল দৃষ্টিভঙ্গিতে রবীন্দ্রনাথকে অনেক সময় দেখা হয়েছে৷ আর এ অবস্থাটি সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছিল বাংলাদেশ যখন পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান ছিল তখন৷</div>
<div style="text-align: justify;">
বিস্ময়কর প্রতিভার বিচ্ছুরণে নিজেকে কবিগুরু থেকে বিশ্বকবিতে পরিণত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাঙালীর চিন্তা- মনন-অনুভূতির এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে কবিগুরুর সৃষ্টিশীলতার ছোঁয়া পড়েনি। সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও কল্যাণের পথে ধাবিত করেছেন জাতির মননকে। বাঙালীর শিল্প-সংস্কৃতি বিনির্মাণের অগ্রপথিক এই কবি। জন্মের দেড় শ’ বছর পরেও শিল্প-সাহিত্যের প্রায় সব শাখাতেই দীপ্তিমান বিশ্বকবি। আজও তাঁর সৃষ্টিসমগ্র ভাবনার বীজ বুনে দেয় সাহিত্য ও শিল্প অনুরাগীর হৃদয়ের গহীনে। আর এই সৃষ্টি দিয়েই বাঙালী ও বাংলা ভাষাকে জাতীয়তার গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিকতার সীমানায় পৌঁছে দিয়েছেন এই কবি।</div>
<div style="text-align: justify;">
আমাদের মননে বিশ্বকবির ব্যঞ্জনাময় উপস্থিতি সাম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরতন্ত্র প্রতিরোধে বাঙালীর অগ্রাত্রাকে চিরকাল অব্যাহত রাখবে। আমাদের জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে বিশ্বকবির সুগভীর প্রভাব বিদ্যমান। নিজের অতুলনীয় প্রতিভায় শুধুমাত্র বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে বিশ্ব দরবারে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠাই করেননি পাশাপাশি কর্মচঞ্চল এই মানুষটি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। এশিয়ার প্রথম নোবেল পুরস্কার পাওয়ার বিরল সম্মান অর্জনকারী রবীন্দ্রনাথ তাঁর উপন্যাস, কবিতা ও গানে গভীর জীবনবোধ, প্রকৃতির সঙ্গে সংলগ্নতা ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর আস্থা প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে এক অনাবিল শান্তি ও স্বর্গীয় আনন্দের আবহ তৈরি করে। আমরা গর্ববোধ করি তাঁর রচিত গান আমাদের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে পেয়ে।’‘ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অনাবিল সৃষ্টিতে একদিকে যেমন স্বজাতির মূঢ়তা, স্থবিরতার বিপন্ন ছবি ফুটিয়ে তুলেছিলেন, আবার অন্যদিকে তিনি জাতীয় জীবনের সব অচলায়তন ভেঙ্গে বিশ্বের অতি অগ্রসর জাতিসমূহের কীর্তিময় অর্জনগুলোকে গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর সাহিত্যকর্মে শান্তি, মানবতা, মহত্ত্ববোধ ও পরমতসহিঞ্চুতার বাণী যুগে যুগে মানুষকে প্রেরণা যুগিয়ে যাচ্ছে। হিংসা, বিদ্বেষ, শঠতা ও তিক্ততা পরিত্যাগ করে মানবতার সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যরে মধুর বন্ধন সৃষ্টিতে তাঁর লেখনী পালন করেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তাই তাঁর সৃষ্টিকর্ম জাতীয়তার গন্ডিপেরিয়ে দেশ দেশান্তরে হয়ে উঠেছে কল্যানের অকৃত্রিম আলেখ্য। মানবপ্রেম, প্রকৃতিপ্রেম ও দেশপ্রেম তাঁর লেখনীর প্রান অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করেছে। আজও আমরা সবাই তাঁর লেখনী দ্বারা উদ্বুদ্ধ এবং একই সঙ্গে তা সমাজের অনাচার, অবিচার আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হতে আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়।’</div>
<div style="text-align: justify;">
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখনো অনেক কিছুর অনবদ্য দৃষ্টান্ত। অফুরন্ত প্রাণ প্রাাচুর্য রবীন্দ্র প্রতিভার বৈশিষ্ট্য, এই প্রাচুর্যই কবি, সুরকার, সঙ্গীত ও গীতি রচয়িতা, ঔপন্যাসিক এবং শিক্ষাবিদ রবীন্দ্রনাথ বিকাশ ও প্রগতির কবি, চিরদিনই ধ্বংসের চেয়ে সৃষ্টির প্রতি তাঁর আকর্ষণ বেশি। ঐক্যের সাধনায় বিশ্ব মানবের ইতিহাস মুখর, কিন্তু চরম সত্তা ও ঐক্যের মধ্যেও যে পার্থক্য আছে, মৃত্যু ও বৈচিত্র্যের সমন্বয় করেই যে সত্য ও জীবন, অভিজ্ঞতার সজ্ঞান ক্ষেত্রে তার উপলব্ধি সহজ নয়। শেষ বয়সে রবীন্দ্রনাথের জীবনে এ সমন্বয়ের সজ্ঞান উপলব্ধির পরিচয় মেলে বলেই সেদিন তাঁর কবিতায় নতুন ও সহজ মানবরসের এত পরিব্যাপ্তি। ২৫ শে বৈশাখ আর ২২ শে শ্রাবণ বাঙালির কাছে আজো তাই নতুন আলোয় উদ্ভাসিত।</div>
<div style="text-align: justify;">
বঙ্গীয় শিল্প-সাহিত্যের আধুনিকীকরণে রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় রূপকল্পের দুর্বোধ্যতা ও কঠোরতাকে বর্জন করেন। নানা রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়কে উপজীব্য করে রচিত হয়েছে তাঁর উপন্যাস, ছোটগল্প, সঙ্গীত, নৃত্যনাট্য ও প্রবন্ধ। কবিতায় এনেছেন নতুন মাত্রা, দিয়েছেন প্রাণের ছোঁয়া। এ কারণেই কালের পরিক্রমায় উত্তীর্ণ বিশ্বনন্দিত সাহিত্যিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর বহু পরিচিত গ্রন্থগুলো হলো গীতাঞ্জলি, গোরা, ঘরে বাইরে, রক্তকরবী, মানসী, বলাকা, সোনার তরী, পূরবী, শেষের কবিতা ইত্যাদি। কবিগুরুর কাব্য, ছোটগল্প ও উপন্যাস গীতিধর্মিতা, সহজবোধ্যতা, ধ্যানগম্ভীর প্রকৃতিবাদ ও দার্শনিক চিন্তাধারার জন্য প্রসিদ্ধ। বিশ্ববাসীর জন্য কবিগুরু উপহার দিয়ে গেছেন হৃদয়ে অনুরণন সৃষ্টিকারী কয়েক হাজার শ্রুতিমধুর গান। এভাবেই সাহিত্য ও শিল্পের মাধ্যমে সাহিত্য ও শিল্পানুরাগীদের সর্বোপরি বাঙালীর হৃদয়ের শিকড়ে বেঁচে আছেন রবীন্দ্রনাথ। </div>
<div style="text-align: justify;">
৩০ আগস্ট ২০১২, দৈনিক আজকের দেশবিদেশ</div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
<br /></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-64344943280488793922013-07-14T07:10:00.000-07:002013-07-14T07:13:20.732-07:00কবির আকাশ<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
<b>আল </b>মাহমুদের কবিতা মানেই একটা অন্যরকম টান। এই টান মাটির, এই টান মায়ের, এই টান নারীর। চিরন্তন নারী ভোগি আল মাহমুদ কবিতাকে তুলে এনেছেন মায়ের উদোর থেকে। যাকে বলে আতুরঘর থেকেই আল মাহমুদের কাব্য টান। এই টান ছিল বলেই আজকের আল মাহমুদ হয়ে উঠেছেন প্রকৃত কবি। অনেক ভুল তার, ভুলের পাহাড় গড়েছেন তিনি; তারপরও কবিতা দিয়েছে তাকে অনবদ্য স্থান। এই স্থান পাননি তার সময়ের অনেক যোগ্যতম কাব্যজনও। তিনি যেভাবে লিখেছেন, ‘আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেলো শেষে/ হেথায় খুঁজি হোথায় খুজি সারা বাংলাদেশে’ সেভাবেই লিখেছেন নারী লোলুপ কবিতাও। কবিতার পথ দিয়ে হাটতে হাটতে তিনি উচারণ করেছেন, ’কথা বলি আমি ঝরে যায় ঝরাপাতা/ হাওয়ায় উড়ছে তোমাদের হালখাতা।/ তোমাদের সাথে ব্যবধান চিরদিন/ হিসেব নিকেশ মেলে না তো কোনো দিন।/ সামনে কেবল খোলা আছে এক পথ/ এই পথে কবে চলে গেছে সেই রথ।/ রথের মেলায় এসেছিল এক ছেলে/ বিস্ময়ভরা চোখের পাপড়ি মেলে।/ ওই সেই ছেলে হারিয়ে গিয়েছে মাঠে/ তাকে খুঁজে ফিরি হাটেবাটে ঘাটেঘাটে।/ তার চোখে জ্বলে আগামী দিনের রোদ/ পোশাকে তো তার ছিল সম্ভ্রম বোধ/ সাহসের কথা বলতো সে আগেভাগে/ এখন সে নেই বলো তো কেমন লাগে।’ <br />
আল মাহমুদ তিলতিল করে গড়েছেন নিজেকে। আর তাই তিনি লিখেছেন, পরাজিত হতে হতে আমি উঠে দাড়িয়েছি এবার ফিরে যাবো না খালি হাতে, স্তব্ধতা আর সৌন্দর্যের পায়ে পায়ে এগিয়ে যাই যে কবি সে কখনো খালি হাতে ফিরে যেতে পারে না। মীর আব্দুশ শাকুর থেকে আল মাহমুদ পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপ আল মাহামুদের ছিল সোনালী ডানার চিলের মত। তিনি শুধু কবিতাতেই নন, উপন্যাসে, গলে, ছড়ায়, প্রবন্ধে, সংবাদে ধরেছেন এগিয়ে যাওয়ার হাল। এই হাল ধরেছেন শক্ত হাতে। একছত্র আধিপত্য তৈরির নিমিত্তে। তার কবিতার চিত্রকলে নারীর সৌন্দর্য ও যৌনতা এসেছে পটুয়া কামরুল হাসান আর এস এম সুলতানের বলিষ্ঠ চিত্রকর্মের মত। আমাদের কবিতার আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম প্রধান কবি । কবিতার শব্দ ব্যবহারের স¡তঃবেদ্য স¡াভাবিকতা এবং বিশ¡াসের অনুকুলতা নির্মাণে তিনি প্রত্যয়ী। আধুনিক বাংলা ভাষায় একজন অগ্রগামী কবি তিনি । তার কবিতা মানেই নীল-উদার আকাশ। এই আকাশ কবির আকাশ। আমরা বর্তমান নারীলোলুপ কবিতা ও কবির সংজ্ঞায় বলতে পারি, ‘‘সমকালীন যে দুজন বাঙালী কবির দুর্দান্ত মৌলিকতা এবং বহমানতা আমাদের সময়কে বারবার আকৃষ্ট করেছে তাদের মধ্যে একজন হলেন বাংলাদেশের আল মাহমুদ , অন্যজন পশ্চিমবঙ্গের শক্তি চট্টোপাধ্যায় । " <br />
অধ্যাপক ড. রাজীব হুমায়ুনের মতে , তিনি চলিশ দশক পরবর্তী কবিদের মধ্যে অন্যতম মৌ লিক কবি , নতুন কবি । রাজীব হুমায়ুন 'তাঁর মৌলিকত্ব এবং নতুনত্ব ' দেখেছেন আল মাহমুদের ‘গাঁয়ে ফেরার পিপাসায়’ এবং 'অনিবার্য শব্দ, উপমা , চিত্রকলে সে পিপাসার প্রকাশে’ <br />
পঞ্চাশ দশকের প্রধান কবি আল মাহমুদ গ্রামে ফিরলেন এবং গ্রামের মেঠো পথ বেয়ে চলতে গিয়ে রচনা করলেন - এখন কোথায় যাওয়া যায়?/ শহীদ এখন টেলিভিশনে । শামসুর রাহমান সম্পাদকীয় হয়ে গেলেন ।/ হাসানের বঙ্গজননীর নীলাম্বরী বোনা/ আমার দ্বারা হবে না । জাফর ভাই ঘোড়ার গায়ে হাত বোলান । / অতএব কবির কোথাও যাওয়া হলো না , কেননা :/ আমার সমস্ত গন্তব্যে একটি তালা ঝুলছে । (আমার সমস্ত গন্তব্যে ) । <br />
বিধায় , আল মাহমুদ লোকজ অভিমুখে যাত্রা করে লোকায়ত বাংলার চিরায়ত শব্দ সুষমাকে আধুনিক বাক্য বন্ধনে উপস্থাপন করলেন । তার নির্মিত পটভুমির কেন্দ্রবিন্দু মানবতা ই আত্মবিশ¡াস । জসীম উদ্দিন এবং জীবনানন্দ উভয়ের থেকে তিনি সম্পুর্ন ভিন্ন প্রকৃতির কবি । কারো প্রতিধবনি নয় , নির্মীয়মাণ স্বকীয়তাই তাকে আধুনিক জগতে বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী করেছে । ক্রমশ হয়ে উঠেছেন আস্থাশীল এক কাপ্তান । আল মাহমুদই আমাদের বিপুল জনসমষ্টির জীবনধারার অভিজ্ঞতাকে কবিতায় ব্যবহার করেছেন। ‘সোনালী কাবিন’ 'সনেটগুচ্ছ কবি উপমা -রুপকের চর্চার কুশলতার যে নিদর্শন রেখেছেন , আমাদের কবিতার ক্ষেত্রে তা নতুন এবং আন্তরিক সততায় উজ্জ্বল । গ্রামের মাটি থেকে বিচিত্র আকুল আগ্রহকে কবি উন্মোচন করেছেন , নদীর চরের প্রতি কৃষানীর পতির অধিকার প্রতিষ্ঠার রূপকলে প্রমানিত হয়েছে নারীর প্রতি পুরুষের আকাঙখার ক্ষুধার্ত নদীর উপমায় নর-নারীর কামনার চিত্র ফুটে উঠেছে । এইতো আমাদের আল মাহমুদ এবং তার গ্রামীন প্রান্তরের উপটোকন যেখানে ভালোবাসামাখা যৌনতার আন্তরিক অভিব্যক্তি ঘটেছে - ‘ক্ষুধার্ত নদীর মতো তীব্র দুটি জলের আওয়াজ/ তুলে মিশে যাই চলো অকর্ষিত উপত্যকায় । "<br />
<br />
বাংলাদেশের রঙধনু, বাংলাদেশের কবিতার মেজাজ ও মন বুঝতে হলে আমাদেরকে যা করতে হবে, তা হলো- কবিতার সম্পানওয়ালা আল মাহমুদের কবিতার নদীতে নাইতে হবে। গাইতে হবে তার কবিতার গান। কেননা, তার কবিতার অপর নাম মাটি, মায়া আর ভালোবাসার হৃদকম্পন। অনেক আগে, আজ থেকে ১০ বছর আগে একবার তার সাথে কথা হয়েছিল। দ্বীপ-নদী-আর ধান-সুপারির আড়ে বসে, বরিশালের রথযাত্রাময় মায়াবী মাটিতে বসে আলাপকালে এক তারুণ্য ছুঁই ছুঁই কবির উদ্যেশ্যে তিনি ছুড়ে দিয়েছিলেন আলোকমাখা কিছু বাক্য। বাক্যগুলো ছিল কিছুটা নোনতা, কিছুটা মিষ্টি আর কিছুটা তেতো। অনেকটা ধারাবাহিক সলটেস, মন্ডা আর নিমের মত। বাক্যগুলোর স¡াদ নিয়েছিলাম এভাবে, ‘কবিতা মানুষকে আপন করে তখনই, যখন কবিতার রোদে সে অনুভব করে হারানো প্রিয়জনের আদর-ভালোবাসা। আমিতো কবিতাকে আমার চলে যাওয়া মায়ের মুখ মনে করে চেয়ে থাকি। অসংখ্য শোকের ফোটা ফোটা শব্দে আমি খুঁজে ফিরি রঙধনু, আমার স¡জন হারানো মেঘ-রোদ্দুর।’ এই হলেন আল মাহমুদ। একাধারে সুখ, দুখ, বেদনা, ছিলে ফেলা খাশির দেহে বিন্দু বিন্দু লবন। কবিতা কি ? কবিতা তো শৈশবের স্মৃতি । কবিতা চরের পাখী , কুড়োনো হাসের ডিম , গন্ধভরা ঘাস। স্নান মুখ বউটির দড়ি ছেড়া হারানো বাছুর। কবিতা তো মক্তবের মেয়ের চুলখোলা আয়েশা আক্তার ।" <br />
কবিতা সহ সাহিত্যের কোন শাখায় নর-নারীর মিলঙ্কে অস¡ীকার করা যায় না । হুইটম্যানের কবিতায় ভাবের এক বে আব্রু প্রকাশ দেখে আমাদের সময় আতঙ্কিত হলেও বেদনাশক্ত হয়না। কারন, কবিতার আসন বড়ই পোক্ত কওে গেড়েছেন এই বুড়ো। তিনি উদার সময়ার্থে গা ভাসিয়ে বলেছেন, স¡প্ন ও কবিকলনাকে একই বৃত্তে কলনা করে লিখেছেন 'স¡প্নের কবিতা : কবিতার স¡প্ন' নামক গদ্যে। এ গদ্যে স¡প্নের সাধারণ ধারণা এবং কবিতায় তার প্রতিফলন কত দূর আলোকসম্পাত করেছে তার বিশ্লেষণ রয়েছে। প্রচলিত মতানুসারে ও প্রচারিত তথ্যানুসারে শামসুর রাহমান প্রথাগত ধর্মবিশ¡াসী নন। আলোচক শামসুর রাহমানের অনেক অনেক কবিতা, আত্মজীবনী ও পারিবারিক তথ্যের মিথস্ক্রিয়া প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন শামসুর রাহমান কপটচারী ছিলেন, এ কথা বলা যায় না। তবে ব্যক্তিজীবনে মানবধর্মে ওপরে কোন ধর্মকে স্থান দিতে চাননি। <br />
কবি আল মাহমুদ দেশের শীর্ষ কবিদের একজন। একসময় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত জাসদের মুখপাত্র দৈনিক গণকণের সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আমলে এ জন্য জেলও খাটেন। আল মাহমুদের কবিতায় লেখা হয়েছে, ‘আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বন্টন। জেলে থাকা অবস্থায় তিনি নাকি ধর্মীয় রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হন। মানুষের মনন জগতে রাতারাতি কতটা যে পরিবর্তন ঘটতে পারে তার প্রমাণ উপমহাদেশের সঙ্গীত জগতের অসামান্য প্রতিভা ভূপেন হাজারিকা। সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সংশি−ষ্ট ছিলেন না এই খ্যাতনামা গায়ক। কিন্তু তারপরও তিনি ছিলেন কমিউনিস্ট এবং বামপন্থিদের আপন লোক। তার লেখা ও গাওয়া গান মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলনে। শোষণমুক্তির সংগ্রামকে করেছে বেগবান। ভারতের আসামে দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছেই তিনি ছিলেন প্রিয় ও সমানভাবে গ্রহণীয়। এই ভূপেন হাজারিকাই ভারতের ২০০৫ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে হুট করে যোগ দেন বিজেপিতে। একজন খ্যাতনামা বাম বুদ্ধিজীবী এবং সঙ্গীতশিল্পীর বিজেপিতে যোগদান ছিল সে দলের জন্য প−াস পয়েন্ট। কিন্তু আসামের মানুষ আদর্শের এই জলাঞ্জলিকে মেনে নিতে পারেনি। তার প্রমাণ সে নির্বাচনে ভূপেন হাজারিকার লজ্জাজনক পরাজয়। একজন আল মাহমুদ আদর্শিক দিক থেকে যা খুশি তা করলেও কবিতার আদর্শে কোন রকম আপোষ করেননি কখনোই। এই হলো তার বড় পরিচয়। কবি আল মাহমুদের ছড়ার দিকে চোখ রাখলে দেখবো তিনি মেলে ধরেছেন শিক্ষার ঝাঁপি। বলেছেন, আম্মু বলেন পড়ড়ে সোনা/ আব্বু বলেন মন দে/ পাঠে আমার মন বসে না কাঁঠাল চাঁপার গন্ধে। শিশুদের মনের কথা তুলে এনেছেন নিজের শৈশবের জাল ছেকে ছেকে। পাশাপাশি আবার লিখেছেন, সবাই যখন ঘুমিয়ে কর্ণফুলির কুলটায়/ দুধ মাখা ঐ চাঁদের বাটি ফেরেশতারা উলায়। ফেরেশতার প্রতি তার অগাধ বিশ¡াস। কেননা, কবি চায় হুরেদের সঙ্গ। কবিদের থাকে অপরিসিম যৌবন। যার ডানায় ভর করে নিমার্ণ করেন কবিতার ঘর বসতি। এই ঘর এই বসতিতে কবি তিনিই যিনি আল মাহমুদের কাব্যবোধ সম অথবা তাকে ছাড়িয়ে গেছেন নিজের মত করে। প্রশ্ন আসতে পারে এই বিষয়টি বোঝার উপায়? আমার কাছে প্রশ্নটি করলে সহজ-সাবলিল উত্তর- এই কথা বলবে, এই স্বীকৃতি দেবে সময়, সময়ের হাওয়ায় পাল উড়িয়ে দিয়ে বসে থাকতে হবে অপেক্ষায়। যেই অপেক্ষার কোন সময় সীমা নেই, হতে পারে জীবিতকালেই; আবার এমনও হতে পারে চলে যাওয়ার অনেকদিন পর জীবনানন্দের কবিতার গবেষনার মত কোন আব্দুল মান্নান সৈয়দ নড়ে চড়ে উঠতে পারেন। আল মাহমুদের প্রসঙ্গ আসলেই উঠে আসে তার সোনালী কবিন, বখতিয়ারের ঘোড়ার কথা। যা কবি আল মাহমুদকে একটি রাজনৈতিক ব্যানারবদ্ধ করে দেয়। ব্যানার বদ্ধ কবি বলেই কালের চাকায় পিষ্ট হয়ে হারিয়ে গেছেন অনেকেই। আল মাহমুদের কবিতা বলে লাল, নীল সময়ের কথা। সেই সময় হোক হাল ধরার মত সৌন্দর্য। কেননা, আল মাহমুদ নিজেও একজন সৌন্দর্য সচেতন কবি। আসছে আগামী। সেই আগামীতে আল মাহমুদের জন্য অপেক্ষা করছে হুর- গেলমান। এই হুর, এই গেলমানদের কাঁধে ভর দিয়েই আল মাহমুদ লিখে যাবেন বেহেশতের কবিতা। যদিও প্রথাবিরোধী লেখক ড.হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন, বেহেশত বলে কোন স্থানের অস্তিস্ত¡Í অন্তত বাংলাদেশে নেই।<br />
<br />
<br /></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-20174276803897383362013-07-08T02:49:00.002-07:002013-07-08T03:01:31.465-07:00ফুলবাড়ি কয়লা খনি ও প্রাসঙ্গিক কথা: সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর শকুন দৃষ্টি<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
(২৬ আগস্ট ‘জাতীয় সম্পদ রক্ষা দিবস’ উপলক্ষে রচিত)<br />
<br />
বিদ্রোহের আগুন জ্বালাতে সিধু-কানুরা বারবারই ফিরে আসে। এ সত্য বৃটিশ বেনিয়ারা আঁচ করতে পারলেও ঔপনিবেশিক ভক্তিরসে নিমজ্জিত, ক্ষমতার সাপলুডুর গুটি, চোরাই বিত্তবানদের ছায়ায় উৎপন্ন আমাদের মধ্যবিত্ত শাসক শ্রেণীর সাথে অনবরত গাল মিলিয়েই যাচ্ছেন। পুলসেরাতের আকাশে চড়-থাপ্পড় মান-অপমান সব তুচ্ছ ভেবে বিজ্ঞাপনী দুনিয়ার মনোজগতে ‘ভরসার সেজদা’ দিচ্ছেন আর অন্যদিকে হাটুরে ভদ্রলোকের মতো পার্টিজান বুদ্ধিজীবিকুল বৈতনিক বা অবৈতনিক দু’পদ্ধতিতেই তাদের কেবলা ঠিক রাখেন নানা জাতের পেজগী মারা প্রবন্ধ পয়দা করে। হালে টিভি-রেডিওতে বাতচিৎ প্রদর্শনী তাদের একটা বিশেষ মাধ্যম। ‘মহাভারতের কথা অমৃত সমান’ এসব মিডিয়ার কল্যাণে সকল পেজগী অমৃতসমানে পরিণত হয়েছে। অর্থ, পদবি, পুরস্কার এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিনিময়ে বিদেশি শক্তির পদলেহনকারী দালালদের অভাব বাঙালির মধ্যে কখনই হয়নি। একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশেইবা তার ব্যতিক্রম ঘটবে কেন? মার্কিন-বৃটিশ কর্পোরেট শক্তির জন্য তৈলভাণ্ড হাতে অপেক্ষমাণ বিশেষ শ্রেণীর ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সুশীল প্রজাতি এবং করিৎকর্মা সম্পাদককুলের সারি তাই আজ জনগণের মনোরঞ্জনে যথেষ্ট সহায়তা করে। অথচ, ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জনগণ আঁছ করতে সক্ষম বর্তমানে তাদের সংগ্রামের ধরণটা কি ও কেমন। জনগণ জানে, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র ও সামরিক শক্তির বিচারে দুর্বল রাষ্ট্রের রাজনীতি যে বহুলাংশে বিশ্ব ও আঞ্চলিক মোড়লদের ইশারা-ইঙ্গিতে পরিচালিত হয়, এই সত্য অস্বীকার করা আর নিজেকেই নিজে ঠকানোর মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। জনগণ জানে, বিদেশীদের এজেন্ডা গুছিয়ে দেয়ার তরিকায় বুলি আউড়ে যাওয়া আঘা মার্কা গণতান্ত্রিক দলগুলো খোশমেজাজে গদী অর্জন করে। জনগণের কাছ থেকে আদায় করা ক্ষমতা সঁপে দিয়ে বিনিময়ে তাদের তকদিরে মিলছে নিরাপত্তা এবং বিত্তের বহর। আর বোকা ভেবে জনগণকে শেখাতে থাকে- গরীবের জন্য, সব কিছু গরীবের জন্য। তারা টের পেয়েছে- গরীবের জন্য কথাটাও একটা নারকোল ভালো, নারকোল ভালো, নারকোল ভালো; আসলে নারকোল ছিচিয়ে তেল করা যায়!’<br />
কয়লা পাওয়া গেছে বলেই তাদের(ফুলবাড়ী বাসী) সবাইকে তুলে উমুক করবে তুমুক করবে। না- তা হতে পারে না। তাই তারা এশিয়া এনার্জির বাড়া ভাতে ছাই ছুঁড়ে দেয়। ভেস্তে দেয় জোচ্চুরী, সম্পদের উপর দেশী-বিদেশী শোষক, বহুজাতিক কোম্পানি/সা¤্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর শকুন দৃষ্টি-। না তারা যাবে না- ভিটে-মাটি, তিন ফসলি জমি, প্রকৃতিকর মমতা, মানুষের একে অপরের প্রতি মায়া, গান, ঢাক-ঢোল, হাজার হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের স্বারক- এসব কিছু মিলে মিশে তারা একাকার হয়ে থাকতে চায় মাটি/জননীর সাথে। কে ঠেকাবে- দেখে নিতে প্রস্তুত এই ফুলবাড়ীতেই বসবাসকারী এ মাটির মূল অধিবাসী সাঁওতাল, পাহান’রা আর আছে বাঙালি যুবার রক্ত দেবার জেদ। এইটা সিধু-কানু মাঝিদের গাঁ। এরা সহজমানুষ। কিন্তু দামাল সময়ে এরা ফুঁসে উঠতে জানে। খবরদার ! আর কে না জানে আধিবাসী জাতিসত্ত্বার নীতিই হলো- ‘ভূমি আমার নয় আমিই ভূমির’।<br />
যারা ভেবেছিল/ভাবছে ‘দিনবদলের গান’-এ সুর-তাল-লয় আছে, বোঝা যায় তারা বর্তমান সরকারের আমলকে বঙ্গালমুলুকে কোন ইউটপিয়ান সা¤্রাজ্য ভাবেছিল। হায়, ‘মার্কিন মুল্লুকের ওবামা’ ও এমনি মার্কেটিঙের প্রতিভা/পারদর্শীতা দেখিয়েছেন। বিএনপি-জামাত জোটও ক্ষমতায় এসে নাচন-কুঁদন করে ব্যর্থ হয়েছে, যে ছড়ি ঘুরিয়েছে- সেই ছড়ি তাঁর নাসারন্দ্রে, পায়ুপথে দিতে দ্বিধা করেনি জনগণ। (খবর সূত্র: ২৬ আগস্ট, ২০০৬ বিক্ষুব্ধ জনতারওপর বিডিআর-এর গুলি এবং ২৬ থেকে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত ফুলবাড়ীতে যে গণবিস্ফোরণ ঘটেছিলো, তার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন বিএনপি সরকার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে বাধ্য হয় এবং ঘোষণা করেই, সম্পাদিত চুক্তি বাতিলসহ আন্দোলনকারীদের <br />
ছয় দফা- (১) সমগ্র বাংলাদেশে উন্মুক্ত পদ্ধতি নিষিদ্ধ ও এশিয়া এনার্জি (জিসিএম) বহিষ্কারসহ রক্তে লেখা ফুলবাড়ী চুক্তির ৬ দফা অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। (২) বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পায়নসহ জাতীয় প্রয়োজনে কয়লা সম্পদের শতভাগ ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করবার জন্য অবিলম্বে জাতীয় সংস্থা গঠন এবং জাতীয় সক্ষমতার বিকাশ ঘটাতে হবে। (৩) বড়পুকুরিয়ায় পুনর্বাসনের নামে জনগণকে অন্যত্র সরিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি করার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে, ক্ষতিগ্রস্থ সকল মানুষকে যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, চীনা কোম্পানির সঙ্গে বর্তমান বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির চুক্তি শেষ হবার পর নিরাপত্তা বালু ভরাট ইত্যাদি নিশ্চিত করে জাতীয় সংস্থার মাধ্যমে নিরাপদে কয়লা উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। (৪) বড়পুকুরিয়া এলাকার কৃষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। আটক সিরাজুল মন্টুকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে (৫) জনগণের ট্যাক্সের ১৯০ কোটি টাকা লুট ও অপচয় করে ভূমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে গ্রামবাসীদের উচ্ছেদ অর্থাৎ উন্মুক্ত খনির অপতৎপরতা বন্ধ করতে হবে। (৬) জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্য জ্বালানি মন্ত্রনালয়কে বিদেশি কোম্পানির রাহুমুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে শতভাগ মালিকানায় শতভাগ গ্যাস ও কয়লা দেশের স্বার্থে ব্যবহার করার দাবী মেনে নেয়।) সব্বাস! ‘সাবাস দেব তার, ভাঙ্গছে যারা/ ভাঙ্গবে যারা ক্ষ্যাপা মোষের ঘাঁড়।’<br />
এখন আবার আওয়ামী চরিত্র এসে খেইল দেখবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জনগণের অজানা নয়- কেন ড. আনু মুহাম্মদের ঠ্যাং ভাঙে, সাথে সাথী-কর্মীদের পিটিয়ে হাড়গোড় খুলে ফেলে তক্তা বানানোর পর দু:খ প্রকাশ হয়। হা- এ পোশাকি দু:খপ্রকাশেরও উদ্দেশ্য-বিধেয় তাদের অজানা নয়। আর ভোট ব্যাংকের লোভে ফুলবাড়ীর জনগণকে প্রতিজ্ঞা করা, স্যালুট- ‘এক লম্বা স্যালুট’ মেরে আসার ফন্দি ফিকিরি বুঝতে জনগণকে বিন্দু-বিসর্গও বেগ পেতে হয় না। (খবর সূত্র: সরকার কর্তৃক চুক্তি বাতিলের ঘোষণার পর তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ফুলবাড়ীতে জনসভা করে এশিয়া এনার্জির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিলসহ আন্দোলনকারীদের ছয়দফা দাবির প্রতি অতীব জোর সমর্থন জ্ঞাপন করে। হাসিনা বেশ উচ্চ আবেগেই(?) ফুলবাড়ীবাসীকে স্যালুট মারিয়াছিলেন)। আজ যখন এই হাসিনা সরকার ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অনায়াসে ‘সম্পদ’ নামের এই কয়লা ‘উন্মুক্ত পদ্ধতিতে’ উত্তোলনের জন্য ঘাঁইঘুঁই করে, কয়লার মতো কালো নীতি বানায়, জর্মনীর উন্মুক্ত কয়লা উত্তোলনের তুলনা হাজির করে/অছিলা দেয় (“ওপেন পিট মাইনিং” এশিয়া এনার্জির পছন্দের পদ্ধতি। আর আন্দোলনকারীরা এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে, সম্পূর্ণ কয়লা তোলার বিরুদ্ধে নয়।)। অখচ, জনসংখ্যার ঘনত্ব ছাড়াও জিওলজিক্যাল এবং হাইড্রোলজিক্যাল বৈশিষ্ট্যগত পার্থক্যের দিক থেকে আমলে নিলে দেখা যায় উন্মুক্ত খনন বিষয়ে জার্মানির সাথে বাংলাদেশের কোন তুলনাই হতে পারে না। তবুও তারা ছিনালি হিড়িক তোলে। প্রপাগান্ডায় আমাদের মধ্যবিত্ত মনে-মননে ‘উন্নয়ন’র তিলকে তাল শুধাবে (আর এই সব প্রপাগান্ডা গ্রহনের মধ্যদিয়ে আমরা মধ্যবিত্ত প্রমান দেব আমাদের মতো শহুরে শিক্ষিত মানুষেরা উপনিবেশিক শিক্ষার, পঙ্গুত্ত্বের মধ্যদিয়ে সেই ব্রিটিশ দাসত্বের চিন্তা চেতনায় ফিরে যাচ্ছি।) আর দরিদ্র্য আধ-পেট খাওয়া মানুষকে ক্ষতি পূরণের/পূর্নবাসনের কিচ্ছা তুলে উদ্বাস্তু কোরে শুধুমাত্র শারীরিক ভাবে নয়, পর্যুদস্ত করবে রাজনৈতিক ও মতাদর্শগতভাবেও-। তাই আমাদের জনগণকে প্রস্তুত রাখতে হবে- মুনাফার লালসায় যে সাম্রাজ্যবাদীরা দেশ দখল করতে পারে, যাদের সাথে আছে মীরজাফরী মিথের দোস্তি, আর যারা ক্রসফারের তকমায় খতমের তালিকা বানায়, যারা মানুষ খুনের রাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত অথচ নক্সালরাই খুনি এই প্রচার চালায় তার অতো সহজে পিছু হটে যাবে- এমন আত্মতুষ্টিতে থাকার কোনো কারণ নাই। আর যারা সম্পদ রক্ষা, জনজীবনের নিশ্চয়তার কর্তব্যকে হাস্যকর ‘যুদ্ধাপরাধির বিচার ভন্ডুল’ করার তত্ত্বের মাধ্যমে ষড়যন্ত্র খুঁজে নুন হালালের চেষ্টা করে সেই এই নিকম হারামিদের জনগণ চিহ্নিয়ানয়ে ফেলে দেগে রেখেছে। অপর দিকে নাচন কোঁদন, নাটক চলছে সেই সব নুনখোর বুদ্ধিজীবির যারা চায়ের কাপে ঝড় তোলে আর বড় বড় লেখা লিখবে, ইন্টারভিয় ছাপাবে। দরকার- সময়মতো এদের চিহ্নিত করা ও সেই অপকর্মের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করে রাখা।<br />
সত্য হচ্ছে, বিদেশী বেনিয়াদের পছন্দনীয় সরকার, চামচারা নিশ্চয় বাঙলাদেশের মৌলিক কোন নীতিমালাই নির্ধারণ করে না। এটা ঠিকঠাক করে দেয় আমলাতান্ত্রিক চরিত্রধারী বিশ্ব সংস্থা গুলো। যেমন: বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ। যাদের অপার ক্ষমতাজারি দেশে দেশে গণতন্ত্রের রক্ষীবাহিনী হিসেবে, যাদের কোন দায়ের-দায়িত্বের বোঝা নেই, যাদের চক্ষু-মস্তিষ্ক-কর্ণ-হস্ত আমাদের কৃষি-শিল্প-শিক্ষা-পরিবেশ-সম্পদসহ তথাগত সুশীল/মধ্যবিত্তদের মগজ থেকে শুরু করে অর্থনীতি ও সমাজের উপর ‘একচেটিয়া পুজিঁ’র প্রকল্প নিয়ে খাঁড়া থাকে। তত্ত্বায়নে যাকে ‘সাম্রাজ্যবাদ’ বলা হয়। আর ফুলবাড়ি সংগ্রাম বাংলাদেশে নতুন করে সেই সাম্রাজ্যবাদী দাসত্ব নেমে আসার বিরুদ্ধে প্রথম সবল, রক্তাক্ত প্রতিবাদ। কৃষক-মজুরের তিবাদ।<br />
যাপনের আড়ালে আবডালে মরারই যেখানে নিয়ম-নিয়তি, সেখানে ফুলবাড়ির মানুষের মৃত্যু টকটকে সাহসের লাল পতাকা উড়ায়। নাঙাভুখা মানুষগুলো সেই দিন মরবে যেনেও এসেছিল। সে দিন ফুলবাড়ী একা গোটা বাংলাদেশের হয়ে লড়েছে। ২৬ থেকে ৩০ আগস্ট, ২০০৬ ফুলবাড়ীর জনগণ যে ইতিহাস সৃষ্টি কলেছিলো, তা সত্যিই বিস্ময়কর। ২৭ আগস্ট ২০০৬ থেকে ফুলবাড়ীতে প্রশাসনযেন ভেঙে পড়েছিলো। জনতার রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়। সারাক্ষণ চলছে মিছিল ও সভা। নারী-পুরুষ-তরুণ-মাঝ বয়সী এবং বাঙালী ও সাঁওতাল। প্রাণ খরচের (মৃত্যু) মধ্যদিয়ে বিজয়ের এ সঞ্জীবনী গুণ উপলদ্ধির ব্যাপার। কেবল মাঠ ফেরত কর্মীই জানে এর অদ্ভুত ক্ষমতা, মর্ম, শিহরণ!<br />
খোয়াল করার বিষয়, শুধু কি বাঙলাদেশ’ই এশিয়া এনার্জি’র মত রক্তপিপাসু মুনাফালোভী বহুজাতিক কোম্পানির ক্রীড়নক হয়ে আছে? না, সারা পৃথিবীতেই চলছে খনি/ভূ-সম্পদ/ শিল্পায়নের নামে ভূমি-অধিগ্রহণের লুটেরাদের পূঁজির খেলা। বেশী দূর না- ‘হাতের কাছের হয়না খবর/ কি দেখতে যাও দিল্লি-লাহোর’ হলেও আমাদের সামনে উদাহরণ হিসেবে আছে ভারতের নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, লালগড়। উন্নয়নমূলক কাজকর্ম বা শিল্পায়নরে জন্য কৃষিজমি অধিগ্রহন করতে উদত্য হওয়া সংসদীয় ধরার সুপার-ডুপার বামদের সিঙ্গুরের মতো বছরে পাঁচ ফসলি জমি তুলে, মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে সেখানে কারখানা/সেজ(ঝঊত)/ কেমিক্যাল হাব/ মোটরস কারখানাসহ নানা জাতের শিল্পায়নের দোহাই দিয়ে পাঁয়তারা করেছেন। অথচ, সিপিএম নাকি সাম্যবাদের গান গায়, আসলে কার্যত পুঁজির দাস। ধান্ধায় ডুব দিলে ঘিলু কি আর ঠিক থাকে? সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের নিরস্ত্র শোষিত জনতা তাই ঐ উন্নয়নের তত্ত্ব মেনে নেয়নি। অত্যাধুনিক রাইফেলের বাটের ঠেলা/ গুলি খেয়ে/ ধর্ষিত হয়েও দাব্বাড়েছে ‘ফিকে লাল বাহিনী’র গুন্ডাদের/পুলিশদের-। তারা কৃষিজমি অধিগ্রহন করতে চেয়েছে মূলত তথাকথিত ‘শিল্পায়ন’ এবং স্পেশ্যাল ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার জন্য যার প্রধান উদ্দেশ্য হল পুঁজিপতির শ্রমিকশ্রেণিকে ইচ্ছামতন শোষন করার উপযুক্ত বিশেষ সুবিধা এবং অধিকার সুনিশ্চিত করা- যে খায়েশ গুড়িয়ে দিয়েছে সিঙুর এবং নন্দীগ্রামের মানুষ। তবুও নীলনকশা থামে না। তবুও মৃত্যু না। মৃত্যু এখন অনেক সহজ। ‘অপারেশন নন্দীগ্রাম’, বা আজকের ‘অপারেশন গ্রিনহান্ট’- শুধু ক্রোধ, পাশবিকতা; শুধু ঘৃণা, তাল তাল ও জমাট বাঁধা- কালো, যতটা কালো হতে পারে জমাটবাঁধা রক্ত, মানুষের রক্ত, নক্সাশালী-মাওবাদী রক্ত খুবলে খাচ্ছে-।<br />
সিংগুর থেকে নন্দিগ্রাম থেকে ফুলবাড়ি সবাই যেন একই লড়াইয়ের ধারায় মেতেছে।<br />
অনেক বিপদ সংকূল পথ পাড়ি দিচ্ছেন পৃথিবী। পৃথিবীকে খাবলে খাচ্ছেন পূঁজি। সম্পদের/ শিল্পায়নের/ উন্নয়নের সংজ্ঞা ঠিক করে দিচ্ছেন অর্থনীতির দালালেরা। এই হচ্ছে ক্ষমতাবান সরকার গুলোর উন্নয়ন নীতি যা কার্যত করপোরেট পুজিবাদের উন্নয়ন নীতি- খুবলে খাও, ছিঁড়েখুঁড়ে নিঃশ্বেষ কর। যেখানে প্রকৃতিকে কেন্দ্রে রেখে মানুষ বাঁচানোর কোন নীতি নাই, ইচ্ছাও নাই। এইসব চালবাজী যাচ্ছে দেখে ঈষৎ বাঁকা, মুখটেপা, তেতো হাসি ও কাষ্ঠ হাসি এসে আঠালো হয় গাল ভর্তি থুতুতে। কিন্তু কোন মতেই হা হা নয়- এমন হাসি হাসতে পারি না৷ এই হাসি মেখে আমরা ট্রেনে-বাসে চড়ি, সিট নিয়ে মানুষের সঙ্গে ঝগড়া করি, বিকেলে বিষণ্ন হই, সকালে কোষ্ঠকাঠিন্ন্য সাফ ও রাতে সঙ্গম করি, শিশুকে আদর করি, বসকে হ্যা-হ্যা বলি৷ আর মাঝে মধ্যেই মধ্যবিত্ত ভাবালুতার খোশমেজাজে চিন্তার কারফিউতে আটকা পড়ি। আবার তাহা বুঝিয়া উঠিলে লজ্জায় গর্তে ঢুকি৷ আহা চমেৎকার— কিন্তু লড়াইয়ে থাকি না। উহা এড়াইয়া চলাই নাকি ভদ্দর লোকের কাম। কান পাতুন, গর্জে উঠবার জন্য মানুষ ফুলবাড়ীতে কোরাসে গাইছে- ‘সিধু মাঝির কিরা কোম্পানিরে ঘিরা/ কানু মাঝির <br />
<br />
কালাম আজাদ,প্রকাশনা সম্পাদক, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন-কক্সবাজার জেলা সংসদ ও সদস্য তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি কক্সবাজার জেলা শাখা। হাতফোন -০১৮১৪৪৯৫৪৬৬<br />
<br />
<br /></div>
<div style="text-align: justify;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
<i><b>২৬ আগস্ট ২০১২, দৈনিক সমুদ্রকন্ঠ।</b></i></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com1tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-7907086436319220732013-07-08T02:34:00.002-07:002013-07-08T02:34:54.536-07:00কালোত্তর নজরুল : জাতীয় অস্তিত্বের বলয় <div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
বাংলা সাহিত্যে অনন্য প্রতিভার অধিকারী কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কাজী নজরুলের আবির্ভাব বাংলা সাহিত্যে এক উজ্জ্বল ধূমকেতুর মতো। কিন্তু দরিদ্রতার মধ্যে তার শৈশব কেটেছে। তার পরও দারিদ্র্যকে তিনি ভ্রƒকুটি হেনেছেন, অভাব-অনটনকে হাসিমুখে সহ্য করেছেন। সমাজের বাধা-নিষেধ, বিদেশি শাসকদের শাসনদ-, কারাবাসের নির্মম অত্যাচার কোনোটাই তাকে হতোদ্যম করতে পারেনি। তার বাল্যশিক্ষা শুরু হয় পিতার কাছে, তারপর মক্তবে। মাত্র আট বছর বয়সে পিতাকে হারান। দশ বছর বয়সে মক্তবের পাঠ শেষ করে তিনি ওই মক্তবেই এক বছর শিক্ষকতা করেন। আসানসোল শহরে এসে পাঁচ টাকা মাইনেতে এক রুটির দোকনে ময়দা মাখার কাজ শুরু করেÑ রেলগার্ডের বাসায় বাবুর্চিগিরি, মসজিদে ইমামগিরি, মাজারে খাদেমগিরি এবং লেটোর দলে গান রচনা, সৈনিক হিসেবে বাঙালি পল্টনে যোগদান ইত্যাদি সবই করেছেন নিজের এবং পরিবারের সমস্যদের দু’মুঠো অন্ন জোগাতে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদচিহ্নে যেমন ধন্য শিলাইদহ, পতিসর, সাজ্জাদপুর, দিঘাপতিয়াÑ ঠিক তেমনি নজরুলের স্মৃতিধন্য বাংলাদেশের যে দুটি স্থান সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয় তাহলো ময়মনসিংহের ত্রিশাল এবং কুমিল্লার দৌলতপুর। যতদূর জানা যায়Ñ ১৯৪১ সালের ডিসেম্বর মাসে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই আকস্মিকভাবে একদিন কাউকে কিছু না বলেই নজরুল ময়মনসিংহ ত্যাগ করেন।<br />মাত্র বার বছর বয়সে তিনি লোটোর দলে গান লিখে ও গান গেয়ে সবার দৃষ্টি কাড়েন। আর তখন থেকেই তার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তিনি সৈনিক হিসেবে ৪৯ বাঙালি পল্টনে (১৯১৭-১৯) দুবছরের জন্য করাচিতে সেনাজীবন কাটান, আর এ সময় তিনি সৈনিক জীবনের কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলা ও ব্যস্ততার মধ্যেও কাজের ফাঁকে কবিতা ও গান লিখা শুরু করেন। আর তখন থেকেই তার কবি প্রতিভার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। প্রখ্যাত চুরুলিয়ার দুখু মিয়া একদিন বাংলা সাহিত্যের অসামান্য প্রতিভার বিমূর্ত প্রতীক হবে সেটা কারো কল্পনায় ছিল না। কাজী নজরুল ইসলাম যৌবনের কবি, মানবতার কবি, প্রেমের কবি, রোমান্টিক, গানের কবি, সর্বোপারি যুগ সচেতন দ্রোহের কবি। প্রেম ও বিদ্রোহ পৃথক সত্তা, অথচ নজরুলের একই অঙ্গে দুটি রূপ দীপ্যমান। বিদ্রোহী কবিতায় তিনি লিখলেন- ‘মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর এক হাতে রণ তূর্য।’ তিনি এক দিকে যেমন প্রেমিক অন্যদিকে তেমনই বিদ্রোহী। নজরুলের ২২টি কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আমরা তার মানস প্রতিমা বিশ্লেষণ করে দেখলে একদিকে রয়েছেÑ প্রমত্ত বিদ্রোহ ও পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্তি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তেমনি রয়েছে মানবতাবাদ, জাতীয়তাবোধ, সাম্যবাদ, রোমান্টিকতা। <br />সমাজ ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা তাঁর কবিতাগুলোতে নানা রঙে রাঙিয়েছেন। পরাধীন দেশের অসহ্য লাঞ্ছনা, আমাদের সমাজের নানা জাতির ভ-ামি, ধর্মের নামে নানা ধরনের শোষণ প্রয়াস কাজী নজরুল ইসলামের কবি মনকে প্রায় ক্ষিপ্ত করে তুলেছিল। আর তারই বহিঃপ্রকাশ এই চরণগুলোতে ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াত খেলছে জুয়া’-এর দ্বারা কবি জাত-পাত বিভক্ত সমাজকে একীভূত করার প্রয়াস পেয়েছেন। ‘দেখিনু সেদিন রেলে কুলি বলে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে/ চোখ ফেটে এল জল/এমনি করিয়া জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল’ (কুলি মুজুর)। যেখানে কবি মানবতার অবমাননা এবং ধর্মের নামে ভ-ামি দেখেছেন সেখানেই তিনি কলম ধরেছেন। ‘পূজিছে গ্রন্থ ভ-ের দল! মূর্খরা সব শোনো/ মানুষ এনেছে ধর্মগ্রন্থ; গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো’ (মানুষ)<br />আজ আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি মূলত তার সিংহভাগ দাবিদার কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম। নজরুল ইংরেজ আমলের বাংলা কাব্যে শেষ প্রতিভার কবি। উনিশ শতকের নবজাগরণের যে প্রধান সুর মানবতাবাদ, তা তাঁর মধ্য দিয়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে। তিনি নিরুদ্যম নির্জীব বাঙালিকে প্রাণ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন, পরাধীনতার তীব্র জ্বালা অনুভব করেই ক্ষান্ত হননি শৃঙ্খল মোচনের জন্য সব ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে দেশবাসীকে একত্রিত হতে বলেছেন।<br />‘গাহি সাম্যের গানÑ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান /নাই দেশ কাল পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি/ সব দেশে সব কালে ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’<br />রুশ বিপ্লবের প্রেরণায় উল্লসিত হয়ে স্বপ্ন দেখেছেন এক নতুন পৃথিবীর। যেখানে পররাজ্য গ্রাসের লিপ্সা নেই, পরশ্রমজীবীর স্থান নেই। তাঁর বিদ্রোহমূলক কবিতাগুচ্ছই তাকে জনপ্রিয় করেছে। ১৯২১ সালে অগ্নিবীণা কাব্যগ্রন্থের বিদ্রোহী কবিতাটি বিজলী পত্রিকায় ১৩২৮ বঙ্গাব্দে প্রকাশের পরই বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ১৯২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বরের ধূমকেতুতে ‘আনন্দময়ী আগমনে’ কবিতা লিখায় নজরুলের সাহিত্যকে শৃঙ্খলিত করার সূচনা করা হলো। এসব বিদ্রোহমূলক কবিতাগুচ্ছ যে বিদেশি শাসকের বিরুদ্ধে, দেশি শোষকের বিরুদ্ধে, প্রচলিত কুসংস্কারের বিরুদ্ধে, মোল্লা-পুরহিতের বিরুদ্ধে, শ্রেণী সংগ্রামের বিরুদ্ধে। নজরুলের কবিতায় যে বিপুল প্রাণোল্লাস আছে, সে প্রাণ প্রাচুর্য অন্যত্র নেই। ‘অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস’ তার প্রধান বৈশিষ্ট্য। সেদিন তার কবিতা জনমানসকে যতটা আলোড়িত করেছিল এদেশে আর কারো কবিতা করতে পেরেছে কি না সন্দেহ। আর সে কারণেই নজরুল ইসলামের কবিতা কালের প্রয়োজন মিটিয়ে কালোত্তর হয়েছে। তিনি কৈফিয়ত কবিতায় লিখেছেন- ‘বর্তমানের কবি আমি ভাই, ভবিষ্যতের নই নবি কবি ও অকবি যাহা বল মোরে মুখ বুজে তাই সই সবি।’ এই কবিতায় আরো ব্যক্ত হয়েছে তাঁর মনের স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি- ‘প্রার্থনা করো যারা কেড়ে খায় তেত্রিশ কোটির মুখের প্রয়াসে যেন লেখা হয় আমার রক্ত লেখায় তাদের সর্বনাশ’ (আমার কৈফিয়ৎ)<br />কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন রোমান্টিক চেতনার অধিকারী। এমনকি তাঁর বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আঙ্গিক ও বিষয়-সৌন্দর্যে বাংলা কবিতায় মনুমেন্ট হলেও নজরুলের ব্যক্তিগত বিদ্রোহ পরিকল্পিত ও সুদূরপ্রসারী ছিল না। তার প্রমাণ- দীর্ঘদিন মার্কসবাদ ও তৎকালীন রাজনীতিবিষয়ক অল্প-বিস্তর জ্ঞানগম্যি সত্ত্বেও নিজেকে একনিষ্ঠ পার্টি সদস্যরূপে হাজির করেননি। তাঁর একান্ত বন্ধু কমরেড মুজফফর আহমদের সান্নিধ্যে তাঁর কবি জীবন পার্টিজীবনে পরিণত হয়নি। তিনি ভারতবর্ষে এমন একটি স্থিতি অবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন- যেমনটি ব্রিটিশ আসার আগে বিদ্যমান ছিল। এদিক দিয়ে তার চেতনাকে সর্বৈব দেশজ ও উপনিবেশমুক্ত বলা যায়। তবে পরিমাণে তার চেতনা রোমান্টিকতায় মিলিয়ে যায় বলেও জানা যায় বলে গবেষক মজিদ মাহমুদ তাঁর ‘নজরুল : দ্রোহে ও তারুণ্যে’ নামক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন। আবার নজরুলের রোমান্টিকতাকে অনেকে ইংরেজি সাহিত্যের রোমান্টিকাতর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছেন। বিশেষ করে আঠার শতকের দ্বিতীয়ার্ধে- বায়রনিক যে রোমান্টিকতার সূচনা হয়। পি বি শেলী, কিটসও কোলরিজের মধ্যে যা পরিপূর্ণতা লাভ করে। এ রোমান্টিক এজের কবিদের সঙ্গে নজরুলের আশ্চর্য এক মিল লক্ষ্য করা যায়। ‘নারী প্রেম ও দেশাত্মবোধ প্রেমের চূড়ান্ত এক সাবলিমিটি তারা অর্জন করেন। জীবনের শুরতেই সব উজাড় করে প্রৌঢ়ত্বপ্রাপ্তির আগেই জীবেনর পাট চুকিয়ে দেন। এদের মধ্যে কিটস ছাব্বিস, শেলী তিরিশ, বায়রন ছত্রিশ বছর বেঁচেছিলেন। কোলরিজ বেশ কিছুদিন বেশি বেঁচে থাকলেও যৌবনেই কাব্যশক্তি হারিয়ে ফেলেন। নজরুলও ছিলেন ইংরেজি রোমান্টিক যুগের কবিদের মতো ট্রাজেডির নায়ক।’ (নজরুল : দ্রোহে ও তারুণ্যে, মজিদ মাহমুদ, ২২ মে ২০০৯)। যে কারণে অনেকেই মনে করে থাকেন, সম্ভবত নজরুল ইংরেজ এই রোমান্টিক কবিদের ভালো করে পড়েছিলেন, এমনকি তাদের দ্বারা কিছুটা উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে এক অভিভাষণে বলেন- এ কথা স্বীকার করতে আজ আমার লজ্জা নেই যে, আমি শক্তি-সুন্দর রূপ-সুন্দরকে ছাড়িয়ে আজো উঠতে পারেনি। কিটসের মতো আমারও মন্ত্র- ইবধঁঃু রং ঃৎঁঃয, ঃৎঁঃয রং নবধঁঃু’<br />নজরুল রাজনীতিবিদ না হয়ে কবি হয়েও রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা পালন করেছেন। হিন্দু-মুসলমান সম্প্রীতি রক্ষায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠত ভারতীয় কংগ্রেস, ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগ, ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত খেলাফত আন্দোলন বারবার ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনের আন্দোলনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ওই সময় স্বদেশী আন্দোলন ছিল না। ১৯১০ খ্রি. থেকে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ যুগ্মভাবে রাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ের প্রয়াসী হয়ে ওঠে এবং এরই ফলে ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে ঐতিহাসিক লক্ষেèৗচুক্তি সম্পাদিত হয়। রাজনৈতিক স্বার্থ আদায়ের জন্য হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে আঁতত হলেও তাদের পরস্পরের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য এক নয় এবং তা কখনো হতেও পারে না। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস দুটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ ও ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ, যাকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায় পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষী হয়ে ওঠে। আর এই সুযোগ গ্রহণ করে ব্রিটিশ সরকার পরস্পরের মধ্যে বিভেদ বাড়িয়ে ফায়দা লোটার চেষ্টা করে। ঠিক এই সময় নজরুল তার বিভিন্ন কবিতা, গান ও প্রবন্ধে হিন্দু- মুসলমানের ঐক্যের কথা অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেন, তাঁর কা-ারী হুঁশিয়ার কবিতায়- ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ঐ জিজ্ঞাসে কোনজন? কা-ারী বলো ডুৃবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।’ হিন্দু-মুসলমান কবিতা তিনি লিখেছেন- ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান’ মুসলিম তার নয়নমণি, হিন্দু তার প্রাণ।<br />নজরুল রাজনৈতিক নেতা না হলেও তাঁর চিন্তা ছিল পরাধীনতার শৃঙ্খল মুক্ত হয়ে পূর্ণ স্বাধীনতার। স্বাধীনতার জন্য তিনি এতই ব্যস্ত ছিলেন যে, নিজের দিকে ফিরে তাকানোর সময় তার ছিল না। ছিল না অমর কোনো কাব্য লেখার মতো সময়ও, তাই তিনি অকপটে প্রকাশ করলেন মনের অভিব্যক্তি- ‘অমর কাব্য তোমরা লিখিও বন্ধু যারা আছো সুখে।’<br />তাঁর ক্ষুরধার লেখনীতে ইংরেজ শাসক গোষ্ঠী তাঁর অশনি সংকেত পেয়েছিল। কবি কাজী নজরুল ইসলামের সবচেয়ে বড় বৈরী পক্ষ ছিল ব্রিটিশ শাসক। সত্যের পক্ষে কিংবা শোষিত মানুষের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে জাতির মুক্তি প্রয়াসে লেখনী ধারণ করে ব্রিটিশ রাজশক্তির অন্যায় অত্যাচারের যে আগুন ঝরিয়েছিলেন তাতে রাজশক্তি ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে নজরুল ব্রিটিশ রাজশক্তির রোষানলে পড়ে জেল খেটেছেন। তাঁর যুগবাণী, বিষের বাঁশী, ভাঙ্গার গান, প্রলয় শিখা, চন্দ্রবিন্দুসহ মোট পাঁচটি কাব্যগ্রন্থ সরকার বাজেয়াপ্ত করে। ভাঙ্গার গানে তিনি লিখেছিলেনÑ <br />‘কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙে ফেল কর রে লোপট রক্ত জমাট, শিকল পূজোর পাষাণ বেদি ওরে ঐ তরুণ ঈশান।’<br />এটি শুধু কবিতাই ছিল না ব্রিটিশের শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত জাতিকে মুক্তি মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ করার সঞ্জীবনী সংগীত ছিল। তৎকালীন ভারতবর্ষের ব্রিটিশ জাতিকে জাগরণের বাণী তিনি শুনিয়েছিলেন এই গানের মাধ্যমে। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ ছাড়া বাংলা সাহিত্যে সমকালীন অন্য কোনো কবির এত গ্রন্থ কখনো বাজেয়াপ্ত হয়নি। নজরুল ব্রিটিশ রোষানলে পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো তিনিই প্রথম ভারতবর্ষের র্পূণাঙ্গ স্বাধীনতার কথা উচ্চারণ করেন। নজরুল তাঁর ‘রুদ্রমঙ্গল’ গ্রন্থে ধূমকেতুর পথ (ধূমকেতু আশ্বিন, ১৩২৮) প্রবন্ধে নির্ভীকভাবে ঘোষণা করলেন। ‘সর্ব প্রথম ধূমকেতু ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতা চায়। ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশ বিদেশীদের অধীনে থাকবে না। ভারতবর্ষের পূর্ণ স্বাধীনতা রক্ষা ও শাসনভার ভারতীয়দের হাতে থাকবে।’<br />১১ আগস্ট ১৯২২ সালে ধূমকেতু প্রকাশ শুরু হলে রবীন্দ্রনাথের এই পত্রিকায় দেওয়া বাণী প্রকাশিত হতো প্রতিটি সংখ্যায়- ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু- আয় চলে আয়রে ধূমকেতু/ আঁধারে বাঁধ অগ্নি সেতু /দুর্দিনের এই দুর্গ শিরে/ উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।/অলক্ষণের তিলক রেখা/ রাতের ভালে হোক না লেখা / জাগিয়ে দে রে চমক মেরে/ আছে যারা অর্ধচেতন’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)। <br />নজরুল একটির পর একটি গ্রন্থ নিষিদ্ধ/বাজেয়াপ্ত ঘোষণার পরও ব্রিটিশ রাজার বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষুরধার লেখনী থেমে থাকেনি। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি রাজদ্রোহের মামলা দায়ের হলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় এবং তিনি প্রথম কুমিল্লায় গ্রেফতার হন ১৯২২ সালে। ১৯২৩ সালের ৮ জানুয়ারি রাজদ্রোহের অভিযোগে কারাদ- দেয়া হয়। তিনি এক বছর তিন মাস জেল খাটেন। এই উপমহাদেশের মানুষের জন্য সাহিত্য রচনা করে রাজরোষের শিকার হয়ে কোনো কবির জেলে যাওয়ার ঘটনা সেই প্রথম। তাঁকে একটির পর একটি জেলখানায় স্থানান্তর করা হয়। হুগলী জেলে নজরুলকে বিশেষ শ্রেণীর মর্যাদার পরিবর্তে সাধারণ কয়েদির অবস্থানে নামিয়ে দেয়া হয়। ফলে তিনি অনশন করেন। অনশন ভঙ্গের জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক বরেণ্য ব্যক্তি অনুরোধ করেন। মুক্তিপ্রয়াসী জনতার কণ্ঠে ছিল নজরুলের শৃঙ্খলিত সাহিত্যের এক একটা লাইন। নজরুলের বিষের বাঁশী, ভাঙ্গার গান, প্রলয় শিখা, যুগবাণী আর চন্দ্রবিন্দুর কবিতা, গান ও প্রবন্ধে সরাসরি যা বলেছিলেন তাতে ব্রিটিশ সরকারের শঙ্কিত হওয়ারই কথা। ব্রিটিশরা সারা পৃথিবীটাকে ছলেবলে-কৌশলে দখল করে তাদের শাসন ও শোষণ করেছিল। দেশ শাসনের জন্য ব্রিটিশরা যে চ-নীতি গ্রহণ করেছিল তার বিরুদ্ধে শুধু নজরুলের পক্ষেই প্রতিবাদের ভাষায় এমনভাবে বলা সম্ভব ছিল। নজরুলের শৃঙ্খলিত সাহিত্য এদেশ থেকে ব্রিটিশদের তাড়াতে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়েছিল সে যুগের মুক্তি প্রয়াসে। নজরুলের শৃঙ্খলিত সাহিত্যের গান গাইতে গাইতে সত্যি সত্যি আমরা যুদ্ধে গিয়েছিলাম এবং স্বাধীনতার লাল সূর্যকে ছিনিয়ে এনেছিলাম। ব্রিটিশ গোয়েন্দারা নজরুলের সাহিত্যকে শৃঙ্খলিত করতে চাইলেও বাস্তবে কখনই রুদ্ধ করতে পারেনি। তাই নজরুল যুগেরও কবি নন, হুজুগেরও কবি নন তিনি কালোত্তর কবি। নজরুল হিন্দু কবি নন, নজরুল মানুষের কবি। তাই তিনি অসাম্প্রদায়িক ও কালোত্তর। </div>
<div style="text-align: justify;">
<b>২৭ আগস্ট ২০১২, সপ্তসিন্ধু, দৈনিক ডেসটিনি।</b><br /><br /></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-14719655506202160252013-07-08T01:45:00.000-07:002013-07-08T01:45:32.479-07:00সত্যি কি ইসলাম গণতন্ত্র বিরোধী?<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
মুসলিম বিশ্বের গণতন্ত্রের বড় দুর্দিন। মরুভূমির কর্কশ বালুকণায় গণতন্ত্রের প্রবাহ নিষ্প্রাণ, স্তব্ধ। কারণ কী? ইসলাম কি গণতন্ত্রের প্রতিদ্বন্দ্বী? গণতন্ত্র বিরোধী? পাশ্চাত্যের কোন কোন পর্যালোচক বলেন, এজন্য ইসলামই দায়ী। ১৯৭৯ সালে লিখিত প্রবন্ধে স্টিফেন হামফ্রেজ বলেন, খ্রিষ্টধর্মে যেমন ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক সমাজের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। ইসলামে তেমন পার্থক্য বিরাজমান নয় স্টিফেন হামফেজের মন্তব্যের ঠিক দশ বছর পরে ১৯৮৯ সালে আর্নেষ্ট গেলনার বলেছেন, খ্রিস্টধর্মে যেমন ঈশ্বর ও রাজার অধিকারের যে যুগ্ম সাম্য অবস্থা বিদ্যমান, ইসলামে তা নেই। খ্রিষ্টীয় তত্ত্বে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ রয়েছে রাজার যা প্রাপ্য রাজাকে দাও আর ঈশ্বরের প্রাপ্য ঈশ্বরকে দাও (<span style="font-family: "Times New Roman"; font-size: 10.0pt; mso-ansi-language: EN-US; mso-bidi-language: AR-SA; mso-fareast-font-family: "Times New Roman"; mso-fareast-language: EN-US;">Render unto caesar thing that are caesor’s and
to God tnat belong to him</span>) ইসলামে কিন্তু মুসলমানদের কাছ থেকে তার চেয়ে অনেক বেশী দাবী করা হয়েছে। ইসলামে বিশ্বাস করা হয়, শাসক হবেন একজন বিশ্বাসী এবং ধর্মপ্রাণ। খেলাফতে বিশ্বাস করা হয় একজন উত্তম নাগিরক সর্বপ্রথম হবেন একজন সৎ ব্যক্তি, বিশ্বাসী, একজন নীতিনিষ্ট মুসলমান। ইসলামী রাষ্ট্রের শরীয়া হবে মৌল বিধিবিধান। শরিয়া এবং কোরআন বিশেষজ্ঞ হবেন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক। সরকারী নীতি নির্ধারণে ওলেমার ভূমিকা হবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সরকারের বৈধতা এবং সরকারী নীতির গ্রহণযোগ্যতার মূলে নিহিত রয়েছে ধর্মীয় অনুশাসন, ধর্মতত্ত্বে সঠিকভাবে ধর্মের অনুশাসন ব্যাখ্যার দক্ষতায়। এসব থেকে পাশ্চাত্যের পন্ডিতরা অনুমান করেছেন, ইসলামী ভাবধারা গণতন্ত্রের বিকাশে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিপূর্ণ অবয়র গঠনে ইসলাম হয়ে ওঠেনি সহযোগি। এসব অভিযোগ কতটা সঠিক, কতটা বাস্তব? এসব অভিযোগ বিশ্লেষন করার পূর্বে মুসলিম বিশ্বের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। বিশ্বের ৫৬টি রাষ্ট্রে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ট। এই ৫৬টি রাষ্ট্রে কোনটিতে গণতন্ত্রের শেকড় সমাজের গভীরে প্রোথিত হয়নি। কোনটিতে সমাজ জীবনকে অন্তরঙ্গভাবে গণতন্ত্র স্পর্শ করেনি। কোথাও গণতন্ত্র সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনের প্রধান নিয়ামক হয়ে ওঠতে পারেনি। বিশ্বের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর রয়েছে আঞ্চলিক বৈচিত্র্য। রয়েছে জলবায়ু ও আবহাওয়া সংক্রান্ত ভিন্নমুখিতা, কুলগত বৈচিত্র্য। সম্পদের দিক থেকে কোন কোনটি বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয়। কোনটি আবার দরিদ্রতম। সংস্কৃতি এবং জীবনবোধেও রয়েছে প্রচুর পার্থক্য। মিল কিন্তু এক জায়গায়। গণতন্ত্রর উৎসবে কোন মুসলিম রাষ্ট্র এখনও তেমন উজ্জ্বল হয়ে ওঠেনি। বলিষ্ট গণতান্ত্রিক জীবনাবোধে কোনটি এখন পর্যন্ত সিক্ত হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে একমাত্র তুরস্কই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কাছাকাছি এসেছে। এ সম্পর্কেও কেউ বলেন-তুরস্কের পক্ষে তা সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র কামাল আতাতুর্ক পাশার জন্য। তিনি সমাজ এবং রাজনীতির ক্ষেত্রে ইসলামিক তত্ত্ব পরিত্যক্ত করে তুরস্ককে ইহজাগতিক ধর্ম নিরপেক্ষ একটি জাতীয় রাষ্ট্রে রুপান্তরিত করতে চেয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সম্পর্কে তুরস্কের অভিজ্ঞতার পূর্ণতা সত্ত্বেও হয়ে উঠেনি সুখকর। অন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অভিজ্ঞতাও তেমনি তিক্ত। পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গৃহিত হয়েছে। এখনও কিন্তু বলা যাচ্ছে না এসময় দেশে গণতন্ত্র সুনিশ্চিত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত কিনা। তুরস্কে গতন্ত্রান্তিক ব্যবস্থা কার্যকারিতা ব্যাহত রয়েছে মাঝে মাঝে অভ্যুত্থানের দ্বারা। পাকিস্তানের কিন্তু স্বৈরশাসনে মাঝে মাঝে ছেদ পড়েছে গণতন্ত্রের আগমনে, খানিকটা অপ্রত্যাশিতভাবে। ৪১বছরের স্বাধীন বাংলাদেশ স্বৈরশাসনের সাথে সংসার করেছে ৯ বছর। আরব রাষ্ট্রগুলো মধ্যে একমাত্র লেবাননেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। খৃষ্টান ও মুসলমান জনসমষ্টি সহাবস্থানের লক্ষ্যে নিজেদের মত করে রচনা করে এক ধরণের ন্যায়ভিত্তিক গণতন্ত্র। তাও কিন্তু ঠিকলোনা। খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে দীর্ঘকালিন গৃহযুদ্ধের কুয়াশা ঢাকা পড়েছে শ্যামল প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের চারাগাছটি। ফ্রীডম হাউজের বার্ষিক প্রতিবেদনে ১৯৯০ সালে ঘোষণা করা হয় ৩৭টি মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রের মধ্যে দুটি কিছু দিনের জন্য মুক্ত ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকেছে। গ্যামবিয়া দু বছরের জন্য এবং উত্তর সাইপ্রাস চার বছরের জন্য। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একমাত্র মালয়েশিয়া গণতন্ত্রের অবসর টিক রেখেছে কিন্তু গণতন্ত্রের মর্মবাণী জনগণের রাজনৈতিক জীবনে এখনও হয়নি স্পন্দিত। ইরান পরীক্ষা ও নিরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে ইসলামী গণতন্ত্রের নীতিকে কেন্দ্র করে । কিন্তু ইতিহাসের মহা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও বর্তমানে সাম্যজ্যবাদে লোলুপদৃষ্টি পড়েছে এবং পড়ছে। এশিয়ার এ পাঁচটি রাষ্ট্রে গণতন্ত্রের হাওয়া কতটুকু বেগবর্তী হয় তা এখনও অনিশ্চিত। তাই হাজারো মনে অসংখ্য প্রশ্নঃ কেন এমনটি হচ্ছে? ইসলামে এমন কি আছে যা গণতন্ত্রের ভিত্তি দৃঢ় হতে দিচ্ছেনা? কেন মুসলিম রাষ্ট্রগুলো গণতন্ত্রের প্রবাহে আবেগসিক্ত হয়ে উঠছে না? এর উত্তর সহজ নয়। উত্তর দেবার লক্ষে এ লেখা নয়। এ সম্পর্কে সমাজ বিজ্ঞানীদেরকে ভাবিয়ে তোলায় এর প্রধান উদ্দেশ্য। সত্যি কি ইসলাম গণতন্ত্র বিরোধী? গণতন্ত্রের অবশ্য রকমফের রয়েছে। রয়েছে এর বিভিন্নতা। কিন্তু সব ধরণের গণতন্ত্রের কয়েকটি শর্ত অবশ্য পালিত হয়। রাজনৈতিক ক্ষমতায় উৎস যে জনগণ এবং জনগণের সম্মতি সাপেক্ষেই যে বৈধ সরকার পরিচালিত তা গণতন্ত্রের সব ধারায় স্বীকৃত ও পূর্বশর্ত। প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার, সরকারের দায়িত্বশীলতা আইনের শাসন গণতন্ত্রের মৌল বক্তব্য। এদিক থেকে বিচার করলে ইসলামী দর্শনের যে ছবি পরিস্ফুট হয়ে উঠে, তা কিন্তু অত্যন্ত উজ্জ্বল। আর্নেষ্ট গেলনার নিজেই একসময় বলে ফেলেছেন যে, ইসলামের উন্নত মানের সংস্কৃতি অনেক দিক থেকেই বিশিষ্ট। একত্ববাদ, নৈতিকতাভিত্তিক শাসন প্রশাসন, ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ধর্মের প্রতি অগাঢ় বিশ্বাস, নীতিনিষ্ঠতা, স্বরভেদ ও কারো মাধ্যমে চলার প্রতি অনীহা, অতিপ্রাকৃতের প্রতি উদাসীন্য-সবই আধুনিকতা বা আধুনিকী করণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ফলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে সংগতি সম্পন্ন। কিন্তু বাস্তবে অবস্থাটা ভিন্ন কেন? পাশ্চাত্যের গবেষকেরা এ ক্ষেত্রে একটি মস্ত বড় ভূল করেছেন বলে আমার মনে হয়। তাঁরা স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে ধরে নিয়েছে গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে রচনা করে ধর্ম। তার শর্ত নির্ধারণ করে ধর্ম। কোন সমাজে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে কি হবে না, হলে গণতন্ত্র স্থিতিশীল হবে কি না, তার মুখ্যনির্ধারক আর্থ-সামাজিক পরিবেশ, আত্মশাসন ও মননশীলতায় বৃহত্তর ক্ষেত্র, অগ্রগতির মাত্রা এবং সব কিছুকে চাপিয়ে সমাজ জীবনে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটে। মুসলিম সমাজে সংস্কৃতির নির্ধারণে এবং সাংস্কৃতিক জীবনের মানান্নোয়নে ইসলাম অবশ্যই এক গভীর প্রভাব বিস্তার করে, কিন্তু আর্থ সামাজিক পরিবেশ বিনির্মাণে ধর্ম ছাড়াও রয়েছে অনেক উপদান। আভ্যন্তরীন সংকট,অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আধুনিক চিন্তাভাবনার প্রসার, এমনকি ঔপনিবেশিক শাসন-শোষনও এ ক্ষেত্রে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। তাই শুধু ইসলামের দোহাই দিয়ে মুসলিম বিশ্বের অগণতান্ত্রিক প্রবণতা ব্যাখ্যা করা যথার্থ নয়। ইসলামের অনেক ক্ষেত্রে গণন্ত্রকে পরিপুষ্ঠ করতে পারে ব্যক্তিস্বতন্ত্র, নীতি নিষ্ঠতা, একত্ববাদে বিশ্বাস, সাম্য এবং মৈত্রীর বিশ্ব জোড়া আহ্বানের মতো ইসলামী মূল্যবোধ গণতন্ত্রের আদর্শকে আরো অর্থপূর্ণ করে তুলতে পারে। তাই স্বৈরতন্ত্রের সাথে ইসলামের আদর্শকে একসাথে ভাবা যথার্থ নয়। পাশ্চ্যত্যের পন্ডিতগণ আরও একটি ক্ষেত্রে ভুল করেছেন। তাদের ধারনা-মুসলমান মানেই মৌলবাদী। অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যাবে, খৃস্টানেরাই প্রথম মৌলবাদী শব্দটি আত্মপ্রচার করেন এবং মুসলমানদের উপর চাপিয়ে দিয়ে আসছেন যা সকলেই অজানা নয়। ইসলাম অনেকটা মুক্ত চেতনার ধর্ম। বিবেক জাগ্রত রেখে ধর্মাচরণের বিশ্বাস সবাইকে সাথে নিয়ে অগ্রসর হবার নৈতিকতা। কোন সংকীর্ণ গহ্বরে মুখ লুকিয়ে নিজেদের সবকিছুকে শ্রেষ্ঠতম ভাবার ধর্ম ইসলাম নয়। অতীত চার্চের একাধিপত্যের যুগে মানব সন্তান যে ভাবে ধর্মের নামে বদলী হয়েছে ইসলাম তা সমর্থন করেনা। মুসলিম বিশ্বে যা ঘটেছে তার পর্যালোচনা করলে এটি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে এখানে গণতন্ত্র বিধ্বস্ত হয়েছে প্রধানত সেনা নায়কের দ্বারা। এখানে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটেনি প্রধানত বংশানুক্রমিক রাজা-বাদশাহদের কারণে। ইসলাম এ জন্য কতটুকু দায়ী? বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে দেখলেই বিষয়টি পরিস্কার হয়। জনসমষ্টির শতকরা ৮৫ ভাগ মুসলিম ঐতিহ্য আদর্শ এবং প্রতিষ্ঠান দৈনন্দিক জীবনের অংশ। অনেকের নিকট একমাত্র সামাজিক সত্ত্বা ও সচেতনতার মূর্ত রূপও। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মুসলমানরা ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করতে দ্বিধা করেননি। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে সর্বাত্মক ত্যাগের বিনিময়ে তুলে এনেছে স্বাধীনতার লাল গোলাপ, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে লাল সবুজের পতাকায়। স্বাধীন বাংলাদেশে মুসলমানরা গণতন্ত্রকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেই শুরু করেছিল সগর্বে রাজনৈতিক অভিযাত্রা। গণতন্ত্র সুষম আর্থ সামাজিক ব্যবস্থায় কার্যকর হয়। মননশীলতার উচ্চ পর্যায়ে সজ্ঞান উদ্যোগে গণতন্ত্র বিকশিত হয়। উন্নত রাজনীতিক সৃষ্টি এবং এ ক্ষেত্রে ইসলাম প্রতিবন্ধক নয়, নয় কোন বাধা বরং স্বৈরচারের বিরুদ্ধে ইসলামই উৎসাহ যোগায়। সত্যি বটে, মুসলিম বিশ্ব এখন পর্যন্ত উন্নতি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অনুকরণের স্পন্দিত। তাই মুসলিম বিশ্ব গণতন্ত্রের সংগ্রামে এত পেছনে যেমন রয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার ক্যাথলিক বিশ্বের একাংশ।<br />আসুন আমরা গণতন্ত্রকে পুর্ণজীবিত করে গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করি এবং গণতান্ত্রিক জাগিয়ে তুলে সুন্দর ও সাবলিল ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলি। <br /></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-46535726942561226592013-07-08T01:37:00.001-07:002013-07-08T01:37:56.630-07:00কক্সবাজারের নাট্যচর্চা: একাল- সেকাল<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
মানব সভ্যতার অগ্রগতি সাধিত হয় উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশের সাথে এবং এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সংস্কৃতিসহ সভ্যতার অন্যবিধ উপাদান। উৎপাদনের সম্পর্কসমূহের সমহারই অর্থনীতি- যা সমাজের ভিত্তি। যার উপর দিয়ে গড়ে ওঠে উপরিকাঠামো। উৎপাদনের সুত্রপাত মূলত কৃষি ব্যবস্থা থেকে। কৃষি ব্যবস্থা প্রথমে ছিল নিছক রোপন ব্যবস্থা। পরে লাঙলের মাধ্যমে ভূমি কর্ষণ ব্যবস্থার সুত্রপাত। হল বা লাঙল কৃষি কাজের প্রধান হাতিয়ার। উৎপাদনের জন্য যা করা হয় তা হল কর্ষন। এই কর্ষনই জীবনের মৌলিক ভিত্তি তৈরী করে এবং তার উপরে নির্ভর করে যা কিছু বিকাশ করে যেমন রীতি-নীতি, পোষাক-পরিচ্ছদ, আইন-কানুন, সংস্কার-বিশ্বাস ইত্যাদিও হয় এই উৎপাদনের ব্যবস্থার উপরি কাঠামো। সে জন্য এ গুলোর সম্মিলিত নাম হয় কৃষ্টি, যা কর্ষণ শব্দ থেকে জাত। আর এই কর্ষণ থেকে সংস্কৃতির সুত্রপাত। মানুষের সৃষ্টিশক্তির পরিচয় তার সংস্কৃতিতে। এই সৃষ্টিশক্তির জন্যই মানুষ। মানুষ অন্যজীব থেকে স্বতন্ত্র। অন্যজীব প্রকৃতির বশ;কিন্তু মানুষ প্রকৃতিকেও বশে আনতে পারে,সৃষ্টি করতে পারে। সে কৃতি বা সৃষ্টির দ্বারা মানুষ। মানুষ তাই সংস্কৃতি। আর মানুষেরা সে সব রীতিনীতি,কলা-কৌশল মেনে চলে সংস্কৃতিকে ধারণ করে। তাই E.B tailor এর মতে বলা যায়- Culture is that
complex whole which includes knowledge’s beliefs, arts, morals law,
custom and any other capabilities and habits acquired by man as a member
of society'' (জ্ঞান, বিশ্বাস, কলা, নীতি, আইন, প্রথা এবং সমাজের সভ্য
হিসেবে আহরিত অন্যান্য যোগ্যতা ও অভ্যাসের সমষ্টিকে সংস্কৃতি বলে)। এই বিচারে আর্ট বা শিল্পকলাও সংস্কৃতির অংশ। শিল্পকলা হলো সাহিত্য, চিত্রকলা, নৃত্য, সংগীত (যন্ত্র ও কণ্ঠ), ভাস্কর্য ও স্থাপত্য। আমি বক্ষমান নিবন্ধে কক্সবাজারের নাট্যচর্চা বিষয়ে আলোচনার প্রয়াসি হচ্ছি। <br />সমুদ্রতীরবর্তী কক্সবাজারের নান্দনিক সাংস্কৃতিক চর্চায় ভুমিকাও কম নয়। যদিও আমি কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক চর্চার পুর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে পারবনা তথাপি কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক চর্চার ধারাবাহিকতার ইতিহাস প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক আলোচনা করার চেষ্টা করা গেল-সাংস্কৃতিক চর্চার বিভিন্ন অংশের মধ্যে নাট্য, সংগীত চিত্রকলা প্রভৃতি শাখার মধ্যে নাটক একটি সমৃদ্ধ শাখা। কক্সবাজারে কখন কোথায় নাট্যচর্চার শুরু হয় তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও বৃটিশ আমলে এখানে নাট্যচর্চা শুরু হয় বলে জানা যায়। ১৯২৩ সালের জানুয়ারীতে চকরিয়ায় সর্বপ্রথম নাটক মঞ্চস্থ হয়। সেক্সপিয়রের “হ্যামলেট” নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে কক্সবাজারের নাট্যচর্চা শুরু হয়। এরপর ১৯২৭ সালে চকরিয়া এম.ই স্কুলে মঞ্চায়িত হয় ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ নাটকটি। <br />ত্রিশের দশকে ‘রামু ক্লাব’ নামে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমান রামু থানার উত্তরদিকে উমেশ ধূপীর ভিটায় দানবীর খিজারী দালালের আর্থিক সহায়তায় ক্লাবঘরসহ স্থায়ী মঞ্চ সম্বলিত বৃহদাকার একটি মিলনায়তন নির্মিত হয়। উক্ত মিলনায়তনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নাট্যকর্মী এনে নাটক মঞ্চায়ন করা হতো। এ সময় মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে সিরাজ উদ্দৌলা, টিপু সুলতান, আমিনা সুন্দরী প্রভৃতি উল্লেখ যোগ্য। <br />চল্লিশের দশকের প্রথম দিকে জীবন খাস নবিশ নামে একজন সংস্কৃতিবান এস.আই রামু থানায় বদলী হয়ে আসেন। তাঁর উৎসাহ ও উদ্দীপনায় রামুর নাট্যচর্চা আরো গতিশীল হয়। এ সময় জাকের আহমদ চৌধূরীর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রামু বাজার ড্রামাটিক এসোসিয়েশন’। এখানে উল্লেখ করার দরকার যে, জাকের আহমদ চৌধূরী সম্ভবত রামুর প্রথম মুসলিম নাট্যকর্মী। তাঁর সাথে রামুর নাট্যাঙ্গনে যারা অবদান রাখেন তাদের মধ্যে রয়েছে - রাজ কিশোর চক্রবর্তী, রেবতী মোহন বড়–য়া, শ্রীধন বড়–য়া, রাস বিহারী চৌধূরী, শচীন বড়–য়া, জীবন খাসনবীশ, রমনী গাঙ্গুলী, দীনেশ বড়–য়া মহাজন। পর্যায়ক্রমে ১৯৪৭ সনে দেশবিভাগের পর কক্সবাজারে নাট্যচর্চার প্রাণ সঞ্চারিত হয়। যথেষ্ট সমস্যা বিদ্যমান সত্ত্বেও সুধীজন, ছাত্র, যুবা, চাকুরীজীবীসহ অনেকে নাট্যচর্চা করে যাচ্ছেন। ১৯৪৭ সালে এডভোকেট জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর সম্পাদক থাকাকালে তৎকালীন মহকুমা হাকিম আবুল খায়েরের পৃষ্ঠপোষকতায় কাছারী পাহাড়ে (বর্তমান কোর্ট বিল্ডিং) ‘মহারাজ নন্দকুমার’ নাটকটি মঞ্চায়নের মাধ্যমে কক্সবাজার শহরে নাট্যচর্চা শুরু হয়। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে যারা দর্শকদের দৃষ্টি কেড়েছিল তাদের মধ্যে দেবপ্রসাদ ভট্রাচার্য, ওবাইদুল হাকিম, নজিবুর রহমান, নলিনী দত্ত, প্রবোধ কুমার রক্ষিত, নিরোদ চক্রবর্তী, অমরেন্দ্র নাথ মজুমদার, মনমোহন সেন, বজল আহমদ প্রমূখ। এ সময়ে মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘কংক্যবতীর ঘাট’, ‘মেঘে ঢাকা’, ‘মোহমুক্তি’, ‘জীবন ষ্ট্যাচ’ু, ‘নাটক নয় ফাঁস’, ‘ক্ষুধা’,‘পথের শেষে’, ‘মনিকান্চল’, ‘আলোড়ন’, ‘সম্রাট শাহজাহান’, ‘সিরাজদৌল্লাহ’, ‘আরঙ্গজেব’ প্রভৃতি। <br />১৯৪৯ সালে কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম পুরোধা ওস্তাদ আবু বকর সিদ্দিকী শরীক হলে সাংস্কৃতিক অঙ্গন আরো বিকশিত হয়। অতঃপর ১৯৫৬ সালে একে এম জাকারিয়া মহকুমা হাকিম হিসাবে যোগদানের পর তাঁর ব্যক্তিগত পৃষ্টপোষকতায় পাবলিক লাইব্রেরীর ‘জর্জ ও মেরী’ হলে ‘টিপু সুলতান’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অংশগ্রহণ করেন- মৌলভী ফরিদ আহমদ, দেব প্রসাদ ভট্টাচার্য, ওবাইদুল হক, বজল আহমদ, নিরোদ বরণ চক্রবর্তী, মকবুল আহমেদ, আব্দুল হাকিম, প্রবোধ কুমার রক্ষিত, মনতোষ কুমার চৌধূরী, এডভোকেট সুরেশ চন্দ্র সেন, মোজাম্মেল হক চৌধুরী, আব্দুর রহিম চৌধূরী, এড. মোহাম্মদ আলী, সাইমুম শমশের, অমরেন্দ্রনাথ মজুমদার, প্রবোধ কুমার রক্ষিত, দুলাল পাল, বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য প্রমুখ। <br />১৯৫০ সালে নুনিয়াছড়া আবুল কাসেমের প্রযোজনায় ‘সিরাজদৌল্লাহ’ নাটকটি মঞ্চায়িত হয়। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে যারা দর্শকদের দৃষ্টি কাঁেড়ন তাদের মধ্যে রয়েছে- এড.ছালামত উল্লাহ, জয়নাল আবেদীন, আলতাজুর রহমান, মোহাম্মদ আজিজ, মুহম্মদ নাসির উদ্দীন, লিয়াকত আলী,বদিউল আলম প্রমুখ।<br />১৯৫০ সালে ১৬ ডিসেম্বর দেব প্রসাদ ভট্টাচার্য’র পরিচালনায় ‘সিরাজের স্বপ্ন’ নাটকটি কক্সবাজার হাই স্কুলে মঞ্চায়িত হয়। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- সলিমুল্লাহ, আবুল কালাম আজাদ (তৎসময়ে ৫ম শ্রেণীর ছাত্র ও বর্তমান সিনিয়র আইনজীবী), আবুল মঞ্জুর (বর্তমান কানাডা প্রবাসী), ইউ সুয়ে জান, সেলিম রাহগীর, ছালামত উল্লাহ (বর্তমান সিনিয়র আইনজীবী), জয়নাল আবেদীন প্রমুখ। কক্সবাজার হাইস্কুলে এ নাটকটি মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে স্কুলে নাট্যচর্চার ইতিহাস শুরু হয়। তাছাড়া ১৯৫৬ সালের শুরুর দিকে দেব প্রসাদ ভট্টচার্য কক্সবাজার হাইস্কুলে শিক্ষকতার করার সময়ে ‘চন্দ্রগুপ্ত’ নাটক মঞ্চস্থ হয়। এ নাটকে সক্রিয়ভবে অংশগ্রহণ করেছিলেন এড. ছালামত উল্লাহ, কবি সেলিম রাহগীর, অধ্যাপক নূর আহমদ এডভোকেট, লিয়াকত আলী, মুহাম্মদ নাসির উদ্দিনসহ স্কুলের কয়েকজন ছাত্র। এ সময়ে ‘সিরাজদ্দৌলা’, ‘ঝিলিমিলি’ (স্কুল), ‘মার্চেন্ট-অব-ভেনিস’, ‘মীর কাসেম’, ‘জাহাঙ্গীর’, ‘সাহজাহান’, ‘বিশ বছর আগে’, ‘মহুয়া’, ‘শিরি-ফরহাদ’, ‘উদয়নালা’, ‘সিরাজের স্বপ্ন’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়। আর এসব নাটকে পরিচালনায় ও নাট্য অভিনয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন- ওবাইদুল হাকিম, ডাঃ কবীর আহমদ, অধ্যাপক শাহ জাহান মনির, অধ্যাপক নূর আহমদ, পেটান আলী, সেলিম রাহগীর, মোহাম্মদ আলী, নেজামুল হক, এড.আবুল কালাম আজাদ, শওকত, কাসেম, কালু, বদিউল আলম, মকবুল আহমদ, আব্দুল হাকিম, গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ। তখনও নাট্যাভিনয়ে মেয়েরা এগিয়ে না আসায় স্ত্রী চরিত্রে ওবাইদুল হক, নুরুল হুদা চৌধূরী, দুলাল পাল, প্রবোধ কুমার রক্ষিত, অমূল্য চক্রবর্তী, আতিকুল্লাহ প্রমুখ অভিনেতারা অভিনয় করে দর্শক মাতিয়ে তুলতেন। <br />১৯৫৬ সালের ২৬ মার্চে কক্সবাজার ইনষ্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরীর সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ‘সঙ্গীত সমিতি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠিত হয়। তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক এ কে.এম জাকারিয়া এবং এস.ডি.এম সি.ও এন রহমান প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক ছিলেন। এ সময় পৌর এলাকা টেকপাড়ায় নাট্যানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ধুম পড়ে যায়। ১৯৫৬-১৯৫৭ সময়ে ‘লায়লী-মজনু’, ‘টিপু সুলতান’, ‘সিরাজদৌল্লাহ’, ‘মহুয়া’, ‘সিন্ধু বিজয়’, ‘সোহরাব-রুস্তম’, ‘উল্কা’, ‘গ্রামের দাঙ্গা’, ‘পলাতক বই’, ‘জীবন সংগ্রাম’, ‘আড্ডা’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চস্থ হয়। আর এসব নাটকে অভিনয় করেন- ওবাইদুল হাকিম, দেবপ্রসাদ ভট্টাচার্য, মো. হাসান, জয়নাল আবেদিন, এড.সুরেশ চন্দ্র সেন, এড,জ্ঞানেন্দ্র লাল চৌধুরী (একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ), হরি চৌধুরী, মকবুল নাজির, নিরোধ চক্রবর্তী, গোপাল ভট্টাচার্য, শিশির নন্দী, প্রফূল্ল রক্ষিত, ফিরোজ আহমদ চৌধুরী, অহিদুল আলম,শামশুল হুদা, কবি সেলিম রাহগীর, ডাঃ কবীর আহমদ, ড.শাহজাহান মনির, মফিজ, গোলাম নবী, পেটান আলী, জাফর আলম, গোলাম কিবরিয়া, মোহাম্মদ আলী, আব্বাছ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। এসব নাটক পরিচালনা ও প্রযোজনায় যাদের হাত বেশী তাদের মধ্যে এড. মমতাজুল হক, এড. বঙ্গিম রক্ষিত, এড. বোধেন্দু ভট্টচার্য, এড. এখলাছুর প্রবীর প্রমুখ।<br />মহকুমা প্রশাসক এ.কে.এম জাকারিয়া একজন সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কক্সবাজারের মহকুমা প্রশাসক হিসেবে যোগদানের পর কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নতুন আমেজ ফিরে পায়। ঘন ঘন নাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতে মুখরিত হয়ে উঠে লাইব্রেরীর শিলনায়তন। এই সময় মঞ্চস্থ হয়‘ টিপু সুলতান’, ‘সিরাজের স্বপ্ন’, ‘মীর কাসেম’, ‘জাহাঙ্গীর’, বিশ বছর আগে’ প্রভৃতি নাটক। তাঁর তত্ত্বাবধানেই পাবলিক লাইব্রেরীতে কবি জসিমউদ্দীনসহ নামকরা শিল্পীদের সংব^র্ধনা দেওয়া হয়। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক বদিউল আলম বলেন- ‘ মহকুমা অফিসার জনাব একেএম জাকারিয়ার আমন্ত্রনে কক্সাবাজার সফরে এসেছিলেন পল্লীকবি জসিমউদ্দীন ও প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী সোহরাব হোসেন। তাদের সম্মানে লাইব্রেরীতে আয়োজন করা হয় সম্বর্ধনা সভার। সেই সভায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন রামু খিজারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও সঙ্গীতজ্ঞ বাবু জগনানন্দ বড়–য়া।’(বদিউল আলম ১৯৮৭ঃ ১০)<br />১৯৫৮ সালে এম জে আর খান কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক হয়ে আসেন। তিনিও একজন সঙ্গীত প্রিয় মানুষ ছিলেন। তাঁর সার্বিক প্রচেষ্টায় কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর উদ্যোগে আয়োজন করা হয় রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী। তাঁর আমন্ত্রনে অতিথি শিল্পী হিসেবে অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিটিভির প্রথম কন্ঠশিল্পী ফেরদৌসি রহমান ও মোস্তফা জামান আব্বাসী।<br />১৯৫৮ সালে আবুল কালাম আজাদ ও দুলাল পাল’র পরিচালনায় মঞ্চায়িত হই। ‘আড্ডা’, ‘কুঁয়াশা’ প্রভুতি নাটক। এসব নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- কবীর আহমদ, আবুল কালাম, খুরশেদ আলম (প্রয়াত এডভোকেট), গোলাম নবী, অমুল্য চক্রবর্তী, নেজাম, বক্তিয়ার আহমদ, সিরাজুল মোস্তফা, বকর, ফখরুদ্দিন, লালু, গোলাম হাসান প্রমুখ।<br />১৯৬০ সালের প্রথম দিকে কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরীর ‘জর্জ এন্ড মেরী’ (বর্তমান শহীদ সুভাষ) হলে দু’দিনব্যাপী ‘বন্ধুর চরিত্র’ নাটকটি কক্সবাজার হাই স্কুলের উদ্যোগে মঞ্চায়িত হয়। এতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নুর আহমদ, সেলিম রাহগীর, সুভাষ দাশ, লিয়াকত আলী, শামসুল আলম, বদিউর রহমান প্রমুখ। ষাটের দশকে পুরাতনদের সঙ্গে আরো অনেক নতুন মঞ্চাভিনেতা এসে যোগ দেয়। এদের মধ্যে নুরুল হুদা চৌধুরী, অনিল বরণ চৌধুরী, এ.বি ধর, আবুল মনজুর, মোশতাক আহমদ, নেপাল ভট্টাচার্য, ইব্রাহিম খলিল, অজিত ্েদ এবং নুরুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ। এই সময়ে ঐতিহাসিক নাটক মঞ্চায়নের পাশাপাশি সামাজিক নাটক ও মঞ্চায়িত হয়েছিল। এ সময় নাট্যাভিনয় ও নির্দেশনা-পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন দুলাল পাল। তাঁর পরিচালনায় ‘নাটক নয় ফাঁস’, ‘ক্ষুধা, পথের শেষে, ‘বাদশা’, ‘বিশ বছর আগে’, ‘এরাও মানুষ’,‘মানময়ী গালর্স স্কুল’, প্রভৃতি নাটক সাফল্যজনকভাবে মঞ্চায়িত হয়। এ সময়ে মঞ্চায়িত অন্যান্য নাটকের মধ্যে ‘কেরানীর জীবন’,‘কালো অধ্যায়’,‘রক্তাক্ত গোলাপ’, ‘মাটির মায়া’,‘নিস্কৃতি’, ‘বারো ঘন্টা’, ‘টিপু সুলতান’, ‘সম্রাট শাহা জাহান’, ‘উদয়নালা’, ‘মহারাজ প্রতাপাদিত্য’,‘পলাশীর পরে’ প্রভৃতি উল্লেখ যোগ্য । <br />১৯৬৪ সালে কক্সবাজার মডেল হাই স্কুল (বর্তমান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়) এর বার্ষিক নাটক নাট্যকার নুরুল মোমেন রচিত ‘যদি এমন হতো’ তৎকালীন ইংরেজী শিক্ষক শাহনেওয়াজ আহমদ জাহাঙ্গীর (বর্তমান সিনিয়র আইনজীবী)’র পরিচালনায় মঞ্চায়িত হয়। আর এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- সুভাষ দাশ (একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদ), নুরুল আজিজ চৌধুরী, ফয়েজুল আজিম জেকব (বর্তমান চবি চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী), বদর উদ্দিন, সিরাজুল মোস্তফা, রাখাল মিত্র, একেএম নুর আহমদ প্রমুখ।<br />১৯৬৪ সনের দিকে পেশাদার মঞ্চাভিনেত্রিদের এনে নারী চরিত্রে অভিনয়ের সুচনা করা হয়। যথাযথ সম্মানীর বিনিময়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশেষত পূর্ণিমা সেন (চট্টগ্রাম), আলো পালা (চট্টগ্রাম), কুমিল্লা থেকে গীতাশ্রী, জয়শ্রী, চিত্রনায়িকা চন্দনা, চলচিচত্র নায়িকা শাবানা, জহুরী, সুবর্র্ণা মোস্তাফা, তন্দ্রা ভট্টাচার্য, চিত্রনায়িকা কবরী (বর্তমান এম পি) ও বাণী সরকারসহ আরো কয়েকজন কক্সবাজারের বহু নাটকে অভিনয় করে সুনাম কুড়িয়ে গেছেন ।<br />১৯৬৩-১৯৬৪ সালে সেলিম রাহগীর, ডাঃ কবীর আহমদ ও শামশুল হুদার পৃষ্টপোষকতায় মঞ্চায়িত হয় ‘বাগদত্তা’, ‘দেবী সুলতানা’, ‘বাঁশের বাশী’, ‘এক মুঠি অন্ন চাই’, ‘রুপবান’ প্রভৃতি নাটক। আর এ সব নাটকে অভিনয় করেন- নেপাল ভট্টাচার্য, ডাঃ কবীর আহমদ, সেলিম রাহগীর, এডঃ নুর আহমেদ প্রমূখ। ১৯৬৭ সালে কক্সবাজার শহরে টেকপাড়ায় পৃথক নাট্যচর্চা শুরু হয়। ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘টেকপাড়া যুব সংঘ’ সংগঠন থেকে নিয়মিত নাট্যচর্চা করা হত। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতি বছর দুই ঈদে টেকপাড়া প্রাইমারী স্কুলে মঞ্চ তৈরী করে নাটক মঞ্চায়ন করেন। এ সংঘ থেকে যে সব নাটক মঞ্চায়িত হয়েছিল তার মধ্যে ‘শাহাজান’, ‘পানিপথ’, ‘ইরান দুহিতা’, ‘আনার কলি’, ‘ঈশা খাঁন’, ‘গায়ের ছবি’, ‘বোবা কান্না’, ‘পরিণতি’, ‘হারানো মানিক’, ‘জীবন সংগ্রাম’, ‘আড্ডা’, ‘ভারাটে চাই’, ‘মুক্তাহার’, ‘সিরাজউদ্দৌলা’ প্রভৃতি নাটক সফলভাবে মঞ্চায়িত হয়েছিল। টেকপাড়ায় মঞ্চায়িত নাটকে যারা অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা,আবুল কালাম আজাদ, নেজামুল হক, গোলাম কিবরিয়া, ওসমান গণি, খোরশেদ আলম, কবীর আহমদ, জাফর আলম, আবদুল হাকিম, সেলিম বাহগীর, মোহাম্মদ আলী, আবু হায়দার ওসমানী, সানাউল্লাহ প্রমূখ। একালের জনপ্রিয় ‘মা’ চরিত্রে সফল অভিনেত্রী খালেদা আকতার কল্পনা টেকপাড়া মঞ্চে অভিনয় করে তাঁর নাট্য ও অভিনয় জীবন শুরু করেন। এ সময় কল্পনার বাবা সরকারী কর্মচারী হিসেবে কক্সবাজারে বসবাস করতেন।<br />১৯৬৭ সালে উস্তাদ গোলাম মুত্তাদিরের পরিচালনায় শিশু কিশোর নাটক মঞ্চায়নের সূচনা হয়। তাঁর রচিত ‘শপথ’ ও ‘আশার মানিক’ নামক দুটো তিনি নিজস্ব পরিচালনায় কক্সবাজার হাইস্কুলে মঞ্চায়িত করেন। এ দুটো নাটকে অভিনয়কারীদের মধ্যে- রঞ্জন পাল, আবদুল মতিন আজাদ, স্বপ্না ভট্টাচার্য, মাহবুবুর রহমান, রাখাল মিত্র, খোকা, মাফরোহা সুলতানা মেরী, মাহরুফা সুলতানা বেলী প্রমূখ। গোলাম মোক্তাদিরের মাধ্যমে কক্সবাজারের এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয় যা সকলকে নাড়া দেয়। তিনি প্রথম মহিলা দিয়ে নারী চরিত্রে চিত্রায়ণ করে সফল মঞ্চায়িত করিয়েছিলেন। এর আগে নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে পুরুষরা পালন করত নারীর দায়িত্ব অর্থাৎ পুরুষরাই নারী চরিত্রে অভিনয় করতেন। <br />স্বাধীনতা উত্তরকালে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক অঙ্গন তরুণদের উদ্যম প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত হয়ে উঠে। পাবলিক লাইব্রেরী হয়ে উঠে প্রাণবন্ত। আর এ সময়ে ঢাকা ও চট্রগ্রামের নাট্যচর্চার ঢেউ কক্সবাজারের নাট্যাঙ্গনকে আলোড়িত করে। এ সময় নাটক নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তথা নাটকের নান্দনিক চিন্তা চেতনা তরুণ মানসে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। বিশেষ করে গণনাট্য আন্দোলন এবং গ্র“প থিয়েটার চেতনায় যুব সমাজ সংগঠিত হয়ে উঠে। তখন থেকেই পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে দর্শনীয় বিনিময়ে নাট্যচর্চা শুরু হয় এবং ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও নাট্যচর্চায় এগিয়ে আসে। ১৯৭২ সালের শুরুতে প্রতিষ্ঠিত হয় পিনাক শিল্পী গোষ্ঠী। পিনাক শিল্পী গোষ্ঠী প্রযোজিত নাটকের মধ্যে ‘নির্বাসনে’, চোরাগলি মন, ‘শুভব্বিাহ’, ‘এখন দুঃসময়’, ‘সূর্য মহল’, ‘বারো ঘন্টা’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়ন সূধী সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়। কিন্তু সংগঠনটি বর্তমানে বিলুপ্ত।<br />পিনাক শিল্পী গোষ্ঠীর পরেই কক্সবাজারে প্রথমবারের মত গ্র“প থিয়েটার ভিত্তিক সংগঠন ‘ব্যতিক্রম নাট্য সংস্থা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্যতিক্রমী প্রত্যয়ে ব্যতিক্রমই প্রথম নাটককে যৌথ শিল্প কর্ম হিসেবে গ্রহণ করে কক্সবাজারের নাটকে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অবর্তীণ হয়। ব্যতিক্রম নাট্যসংস্থা প্রতিষ্ঠায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক মুফীদুল আলম, অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা, এড.আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী প্রমূখ। এদের প্রযোজিত নাটক- অধ্যাপক মুফীদুল আলম রচিত নাটকত্রয় যথাক্রমে ‘কবন্ধ’, ‘পাষাণ’ এবং ‘লাবনী পয়েন্ট’, ‘সমাপ্তি অন্যরকম’, ‘জননীর মৃত্যু চাই’, ‘ছায়াছবির অঙ্গনে’, ‘হৃদয় ঘটিত ব্যাপার স্যাপার’, ‘হরিন চিতা পাল’, ‘এবার ধরা দাও’, প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়ে নাটকের ক্ষেত্রে প্রত্যয়ের প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হয়। <br />অতীত এবং বর্তমান দর্শকের চিন্তা-চেতনাকে ধারণ করে ১৯৭২ প্রতিষ্ঠিত হয় নবারুণ নাট্য সংস্থা। এ সংগঠনের উদ্যোগে মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘প্রদীপ শিখা’, ‘শুভ বিবাহ’, ‘সূর্য মহল’, ‘সাগর সেঁচা মানিক’ প্রভৃতি। তবে অবশ্য এর পূর্বে ১৯৭০ সালে মোস্তাফা মিয়ার তত্ত্বাবধানে সম্পাদন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নিয়ে ‘নব আর্য অপেরা’ নামে যাত্রাদল গঠন হয়েছিল। এ যাত্রাদল ১৯৮০ পর্যন্ত কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ‘টিপু সুলতান’ সম্রাট আকবর, ‘আলোমতি প্রেম কুমার’, ‘রহিম বাদশা’, ‘রুপবান কন্যা’, ‘গরীব কেন মরে’, ‘লায়লী মজ্নু’, ‘সিদুঁর দিয়ো-না মুছে’, ‘কে দেবে কবর’ প্রভৃতি যাত্রাপালা প্রদর্শন করা হয়েছিল। এ যাত্রাপালায় নাট্যাভিনয় করেন এডঃ মন্জুরুল ইসলাম, শামশুল আলম, হায়দার আলী, আবদুল মালেক আজাদ, শামসুল আলম, নুরু চৌকিদার, ডা. আনছার আলী, মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, জাফর আলম প্রমূখ। <br />১৯৭৩ সালে শহরকেন্দ্রিক নাট্যচর্চার পাশাপাশি কক্সবাজার কলেজেও নাট্যচর্চা শুরু হয়। অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী ও অধ্যাপক মঞ্জুরুল হক হেলালের নির্দেশনায় ‘রুপোর কৌটা’ নাটকটি পাবলিক লাইব্রেরীর মিলনায়তনে মঞ্চায়িত হয়। সূচনা হয় কক্সবাজার কলেজে (তখন সরকারী করন হয়নি) নাট্যচর্চার ইতিহাস। অধ্যাপক মঞ্জরুল হক হেলাল এবং অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা’র যৌথ নির্দশনায় কক্সবাজার সরকারী কলেজ চত্বরে ১৯৭৭ সনে সর্বপ্রথম ‘জনৈকের মহাপ্রয়াণ’ এবং পরে ‘লাশ’৭৪’ মঞ্চায়িত হয়। পরবর্তীতে অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তফা‘র নির্দেশনায় কক্সŸাজার কলেজ ‘ওরা কদম আলী’, ‘ওর আছে বলেই’, ‘গলাকাটা লাশ’, ‘কবর হুজুর কখন মরবে’, ‘সুঁচ’, ‘টিপু সুলতান’, ‘মহারাজ প্রতাপাদিত্য’, স্বয়ম্বরা প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়। এসব নাটকে যারা অভিনয় করেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক মুফীদুল আলম, অধ্যাপক মকবুল আহমেদ, অধ্যাপক মনজুরুল হক হেলাল, অধ্যাপক একেএম নুরুল হক চৌধুরী, প্রফেসর এম এ বারী, অধ্যাপক মনোজ সেন, নাসিমা আক্তার লিপি, যমুনা দাশ, তোফায়েল আহমদ (সাংবাদিক ও আইনজীবী), মহিবুল্লাহ, করিম উদ্দিন ইউসুফ, লূৎফেন্নছা, সত্যপ্রিয় দৌলন চৌধুরী, তৌহিদুল আলম, এস,এম আকতার চৌধুরী (অধ্যাপক আকতার চৌধুরী), মাফরোহা সুলতানা মেরী, আবু হায়দার ওসমানী, পারুল, মাসুদা মোর্শেদা আইভি, শামীম ইকবাল, এরশাদ উল্লাহ, এ কে.এম.ফারুক আহমদ রকি, অরুপ বড়–য়া তপু, মোজাম্মেল হক, প্রমূখ। এর ধারাবাহিকতা ১৯৮৬ পর্যন্ত বজায় থাকে। ১৯৮৭ সালে প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্র ছাত্রসংগঠন ছাত্র সংসদে প্রবেশ করলে এখনো পর্যন্ত কোন নাটক মঞ্চায়িত হয়নি। যা একটি সরকারী কলেজের জন্য খুবই দুঃখজনক। <br />১৯৭৬ সালে অধ্যাপক মুফীদুল আলম রচিত প্রযোজিত ও পরিচালিত মৌলিক নাটক ‘কবন্ধ’ ও ‘লাবণী পয়েন্ট’, মাঝে বিরতি দিয়ে একই সাথে পাবলিক লাইব্রেরী মঞ্চে মঞ্চায়িত হয় এবং হিন্দি সাহিত্যের দিকপাল কৃষ্ণ চন্দ্রের গল্প অবলম্বনে রচিত ‘পাষাণ’ নাটকটি বর্তমান জেলে পার্কে অনুষ্ঠিত প্রদর্শনী মঞ্চে মঞ্চস্থ হয়। ‘কবন্ধ’ ও ‘লাবণী পয়েন্ট’ নাটকে সর্বপ্রথম কক্সবাজারস্থ মহিলা শিল্পী তৎকালীন সরকারী কলেজের ছাত্রী খালেদা বিলকিস (শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত ও আব্দুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘সারেং বউ’ ছায়াছবিতে প্রতিনায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।) ‘পাষাণ’ নাটকের নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন কক্সবাজার কলেজের ছাত্রী আখতার। <br />১৯৭৭ সালে শুদ্ধতম নাটকের প্রতিশ্র“তি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘রং বেরং নাট্য গোষ্ঠী’। এই সংস্থার নিবেদিত নাটকের মধ্যে ‘অগ্রাহ্য’, ‘দন্ডোৎসব’, ‘হুজুর কখন মরবে’, ‘প্রেক্ষিত সাজাহান ও একাল’, ‘কাফন’, ‘দুই হুজুর’, ‘পৃথিবীর ঘরে ঘরে’ প্রভৃতি নাটক দর্শকের ভিন্ন ধরণের স্বাদ প্রদানে সমর্থ হয়। আর এ সব নাটকে নাট্য অভিনয় করেন- শাহীন, শাহানা মজুমদার, স্বপ্না ভট্টাচার্য, এম.এস.মার্শাল, রতন দাশ, বিশ্বজিত সেন, বাবুল পাল, মোঃ ফারুক, মফিজুল হক প্রমূখ। <br />১৯৭৮ সনে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘এক পা সামনে নাট্যগোষ্ঠী’, ‘নাট্যসংস্থা অর্ণব’। এ সংগঠনদ্বয়ের মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘এবার ধরা দাও’, ‘সেনাপতি’, ‘সামনে যাই থাক ট্রেন চলবে’, ‘ফলাফল’, ‘নিুচাপ’, ‘আয়নায় সুন্দর মূখ’, ‘একাত্তরের তেলেসমাতি’, ‘জননীর মৃত্যু চাই’, ‘আয়না’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত করে দর্শকদের দৃষ্টি কাড়ে। এ সময় প্রতিষ্ঠিত ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠী, গ্যাংচিল, সমকাল নাট্য ও সাহিত্য সম্প্রদায়, সপ্তরুপা, পূর্বাচল প্রভৃতি সংস্থা নাট্য প্রযোজনায় সার্থক অবদান রেখেছিলেন। <br />১৯৭১-১৯৮০ সাল পর্যন্ত উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানের যারা সরবকর্মী ও পৃষ্ঠপোষকতায় এবং নাট্যাভিনয়ে যারা অবদান রাখেন অধ্যাপক মুফীদুল আলম, সোমেশ্বর চক্রবর্তী, অধ্যাপক মনজুরুল হক হেলাল, অধ্যাপক একে এম নুরুল হক চৌধুরী, সমশের বেলাল, এড.আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক সিরাজুল মোস্তাফা, দুলাল পাল, আবদুল হাকিম, অমিত চৌধুরী, পীযূষ চৌধুরী, নুরুল আবছার, শাহানা, এস.এম মার্শাল, আতাহার ইকবাল, ছানাউল্লাহ, করিম উদ্দিন ইউসুফ, নুরুল মুকতাদির, প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, সন্ধ্যা ভট্টচার্য, জসিম উদ্দিন, হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, আবদুল মতিন আজাদ, আবুল কালাম, জসিম উদ্দিন বকুল, প্রদীপ চক্রবর্তী, কানন দাস, ইলা চৌধুরী, হোসেন আরা স্বপ্না, যমুনা পাল, উষা ভট্টাচার্য, শাহীদ চৌধুরী প্রমুখ। ১৯৮০ সালে কক্সবাজার টাউন হলে মঞ্চায়িত হয় আজম ওবায়দুল্লাহ রচিত ‘মিছিল আসছে’। এ নাটকে অভিনয় করেন মোহাম্মদ সিরাজুল হক, মমতাজ উদ্দিন বাহারী, আবুল কালাম এডভোকেট, মোহাম্মদ নাযিম উদ্দিন, এডভোকেট মোস্তফা কামাল চৌধুরী, তোফাইল উদ্দিন, শাহেদ কামাল, জামাল উদ্দিন, আকবর উদ্দিন প্রমূখ। <br />১৯৮২ সনে পাবলিক লাইব্রেরী হল ময়দানে মঞ্চায়িত হয় ‘ওরা আছেই বলে’। এ নাটক মঞ্চাভিনয়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাদের মধ্যে- এন এম হাবিব উল্লাহ, আবু হায়দার ওসমানী, অরুপ বড়ৃয়া তপু, তৌহিদুল আলম, তাপস রক্ষিত, জসীম উদ্দিন বকুল, সন্তোষ শর্মা, মুহসিন উদ্দিন আনোয়ার, এ কে এম ফারুক আহমদ রকি, ইয়াছিন মোহাম্মদ শামশুল হুদা, আবুল কাশেম প্রমূখ। <br />১৯৮৫ সালে ‘ঝিনুক শিল্পি গোষ্ঠী’ ‘রং বেরং নাট্য গোষ্ঠী’সহ কয়েকটি সংগঠনের সমন্বয়ে ‘কক্সবাজার থিয়েটার’ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৯টি নাটক সাফল্যজনকভাবে প্রযোজনা করেছে। কক্সবাজার থিয়েটার প্রযোজিত নাটকের মধ্যে- ‘ইঙ্গিত’, ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘এখানে নোঙ্গর’, ‘রাজনিদ্রা’, ‘মেঘ ও রাক্ষস’, ‘রয়েল বেঙ্গল’, খোরশেদ আলম রচিত ‘মানবনা এই বন্ধন’ এবং আলিমুদ্দিনের দুঃস্বপ্ন, টু ইডিয়টস, ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’, ‘মানুষ ভূত’, ‘হ্যাম্যলেট’, ‘মনপুরা’, ‘শাহাজাহান’ প্রমূখ। নাট্য প্রযোজনা ছাড়াও নাট্য প্রশিক্ষণ ও নাট্য বিষয়ক ওয়ার্কশপের মাধ্যমে কক্সবাজার থিয়েটার নতুন নতুন নাট্যকর্মী তৈরী করার ব্যাপারে বেশ যতœবান ছিলেন। ১৯৯৫ সালে কক্সবাজার থিয়েটার থেকে সেন্টার ফর এশিয়ান থিয়েটারের তত্ত্বাবধানে সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগের অধ্যাপিকা ক্রিষ্টিনা ইগ্রেনর পরিচালনায় একটি লেকচার প্রদান করা হয়। কক্সবাজার থিয়েটারের আমন্ত্রনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়ার নাট্যসংস্থা এসে তাদের উল্লেখযোগ্য নাটক প্রদর্শন করেছে। এদের ব্যবস্থাপনায় কলকাতার লহরী সাংস্কৃতিক সংগঠন পাবলিক লাইব্রেরী হলে ‘রক্তকরবী’ নাটকসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে দর্শকদের নজর কাড়ে। কক্সবাজার থিয়েটারে এ পর্যন্ত তিন বার সপ্তাহব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়। <br />আশির দশকের শুরুতে অর্থাৎ ১৯৮৪ সনে শুদ্ধতম নাটকের প্রতিশ্র“তি নিয়ে রিঙ্গণ থিয়েটার (প্রাথমিক নাম রিঙ্গণ নাট্য গোষ্ঠী) জন্ম লাভ করে। রিঙ্গণ থিয়েটার প্রযোজিত নাটকের মধ্যে ‘তালতলার উপাখ্যান’, ‘ রাজা এলেন রাজাকার’, ‘ফেরাতে এসোনা’, ‘সাহজাহান’ প্রভৃতি নাটক। ১৯৮৪ সালের ২৬ শে মার্চ উপলক্ষ্য করে প্রতিষ্ঠিত হয় ধ্র“পদী-৪। এ সংগঠন হিসেবে যারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন তার মধ্যে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এ কে এম ফরিদ আহমদ, আবু তাহের চৌধুরী, প্রিয়তোষ পাল পিন্টু প্রমূখ। এদের প্রযোজিত নাটক যথাক্রমে ‘সেনাপতি’, এখানে নোঙ্গর’ ইব্লিস’, মাননীয় মন্ত্রির একান্ত সচিব’, মলকা বানু’, ‘ওদের ধরিয়ে দিন’ (মাষ্টার শাহ আলম রচিত) প্রমুখ। <br />শিক্ষা-সাহিত্য- সংস্কৃতি চর্চা উন্নত করার লক্ষে প্রতিষ্ঠিত হয় শিশু কিশোর সংগঠন সৈকত খেলাঘর আসর। এ আসর প্রতিষ্ঠায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন তাদের মধ্যে আষীশ ধর, সুবিমল পাল পান্না, দোলন চাঁপা চৌধুরী, নীলা পাল, রনজিত দাশ, তৌহিদুল আলম, শিবানী ধর, তাপস রক্ষিত, অরুপ বড়–য়া তপু, ইসমাঈল মার্শাল, করিম উদ্দিন ইউসুফ প্রমূখ। সৈকত খেলাঘর আসরের উদ্যোগে মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘এরা শপথ, ‘বকুল পুরের স্বাধীনতা’, ‘বন্দি ছেলে’, ‘মন্টুর পাট শালা’, ‘টোকাই, শোকার্ত শহীদ মিনার, নৌকা বিলাস প্রভৃতি নাটক। এসব নাটক কিশোরদের সঙ্গে বড়দেরও প্রশাংসা কুড়াতে সক্ষম হয়। <br />১৯৮০-১৯৯০ পর্যন্ত সে সব নাট্যকর্মী ও নাট্যনির্দেশনায় গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক এন.এম হাবিব উল্লাহ, নুরুল আবছার, সমশের বেলাল, মোঃ শাহজাহান, আবু হাযদার ওসমানী, অরুপ বড়ুয়া তপু, সত্য প্রিয় দোলন, স্বপন ভট্রাচার্য, সুশান্ত পাল বাচ্চু, আবুল কাশেম বাবু, মোঃ হোছাইন মাসু, সজল ধর, জাহেদুল ইসলাম, তৌহিদুল আলম, বিশ্বজিৎ পাল বিশু, কামরুল হাসান, এ.কে ফারুক আহমদ রকি, বিশ্বজিত সেন, আশরাফুল হুদা সিদ্দিকী জামশেদ, উত্তম পাল, সুবিমল পাল পান্না, ইয়াছিন মুহাম্মদ শামদুল হুদা, এ কে এম ফারুক আহাম্মদ রকি, আবুল কাসেম প্রমুখ।<br />১৯৯১ সলে প্রতিষ্ঠিত হয় কক্সবাজার থিয়েটার মঞ্চ। কক্সবাজার থিয়েটার মঞ্চ প্রযোজিত নাটকের মধ্যে ‘উজান পাল’, ‘১৯৭১’, ‘জুতা আবিষ্কার’, ‘ক্রসবাঁধ’, ‘মানুষ ভূত’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত করে কক্সবাজার নাট্য অঙ্গণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। <br />১৯৯১ সনে ৯০’র এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক (মানিক বৈরাগী), অধ্যাপক সুুকুমার দত্ত, পিজি ভট্টাচার্য, ফাতেমা বেগম, মাসুদ সরওয়ার প্রমূখের তত্ত্বাবধানে জাতীয় শিশু-কিশোর সংগঠন মাতামুহুরী খেলাঘর আসর প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংগঠন কর্তৃক প্রযোজিত ও নির্দেশিত নাটকের মধ্যে ‘ক্ষুদিরামের দেশে’, ‘অবশেষে জেনারেল’ (অভীক ওসমান রচিত), ‘সাহজাহান’, ‘টিপু সুলতান’, ‘স্মৃতি৭১’, ‘ওরা কদম আলী’ প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়।<br />‘নাটক হোক গণমানুষের হাতিয়ার' শ্লোগানকে সামনে রেখে ১৯৯৪ সনে ঝিনুক নাট্য গোষ্ঠি। এদের প্রযোজিত ও নির্দেশিত নাটকের মধ্যে ‘নির্বাচনী প্রেম’, ‘আমাদের সন্তান’, ‘স্বাধীনতার ময়না তদন্ত’, ‘এই সেই কণ্ঠস্বর’, ‘কন্ঠক বলয়’, ‘স্বাধীনতা একটা রক্তাক্ত বিলাপ’, ‘চাঁদ মিঞার বাইস্কোপ’, ‘চন্দ্রধরের পালা’, নীল সমুদ্রের ঝড়,’ মানুষ ভূত প্রভৃতি নাটক। ঝিনুক নাট্য কেন্দ্রের ব্যানারে ২৫ আগষ্ট ১৯৯৪ তিন দিন ব্যাপী নাট্যবিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করে। প্রতিষ্ঠাকালীন থেকে এ পর্যন্ত ১৪ টি নাটক ঝিনুক নাট্য কেন্দ্রের উদ্যোগে প্রযোজিত হয়। আর এ সব নাটকে অভিনয় ও পৃষ্ঠপোষকতায় যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে তাদের মধ্যে আবুল কাশেম বাবু, নাছির উদ্দিন, বিপুল সেন, স্বপন ভট্টাচার্য, কামরুল হাসান, সাইফুল ইসলাম, অনিল দত্ত প্রমুখ।<br />‘নাটক হোক গণমানুষের মুক্তির উচ্চারণ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ১২ ডিসেম্বর ১৯৯২ সনে গণমূখ থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়। গণমূখ থিয়েটার প্রযোজিত নাটকের মধ্যে ‘যায় দিন ফাগুন দিন’, ‘মাদারীর খেলা’, ‘নাটকের শুরু’, ‘ক্ষুদিরামের দেশে’ প্রভৃতি।<br />১৯৯১ সালের ২৩ নভেম্বর গান নাটক গণসংগীত দিয়ে কক্সবাজারের গণমানুষের মুক্তি প্রয়াসে প্রতিষ্ঠিত হয় হেমন্তিকা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। এইচ এম রিয়াজ শহীদ, সুজন কল্যান বড়–য়া, অনিল দত্ত, টুটুল পাল, সুভাশিষ বড়–য়া পিকু, উত্তম নন্দী, জহির উদ্দিন, লিনা বড়–য়া, রিকা বড়–য়া, সাইফুদ্দিন আহমেদ মানিক, লিটন পাল, প্রদীপ পাল প্রমুখ হেমন্তিকা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসেন। সে থেকে শুরু করে এ যাবৎ পর্যন্ত হেমন্তিকা নিজস্ব রচিত নাটক মঞ্চায়ন করেছেন। তার মধ্যে এইচ এম রিয়াজ শহীদ নির্দেশিত গীতিআলেখ্য ‘বকুলপুরের স্বাধীনতা, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন রচিত মহারাণীর কান্ড (২০০৪), জসিম উদ্দীন রচিত ও নির্দেশিত ‘একাত্তরের শকুন’ (২০১১), ‘জাতিশত্রু, ‘দূরে আলো’, শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়া হে স্বাধীনতা’। আর এসব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন অনিল দত্ত, আবু বকর ছিদ্দিক খোকন, আবদুল নবী, মঞ্জু বড়–য়া, লিটন সৈকত দেবনাথ, সাহেদ, আবু সুফিয়ান এনাম, হারুন অর রশিদ, নারগিস আক্তার রনি, অজয় মজুমদার, রিফাত হোসেন নির্যাস, রুনা আক্তার, কনা দাশ, লিটন কান্তি দে মিন্টু, তাকবিন আক্তার কলি, মরিয়ম আক্তার প্রমুখ। <br /><br />১৯৯২ সনে সেপ্টেম্বরের শুরুতে কিশোর থিয়েটার প্রযোজিত ও মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘হাতেম আলীরা স্বপ্ন দেখে’, ‘সুমনের নাটাই’(১৯৯৫), ‘পদ্মাপারের সাজু’(৮৭,৯২), ‘অনেক বৃষ্টি অনেক রোদ’(১৯৯০), ‘নতুন জোয়ার’(১৯৯৪), সংবাদ শিরোনাম(১৯৯৩), কুতুবদিয়ার আ.স.ম. শাহরিয়ার রচিত ‘মুকুট বিড়ম্বনা’‘(১৯৯৩), উপদ্রুত স্বপ্নেরা’(১৯৯৪), ‘মানুষ মানুষের জন্য (২০০৫), ‘দস্যি ছেলের কান্ড’(২০০১), একটু মেঘের ছায়া’(২০০২), ‘সেভেন ক্রিকেট’(২০০৭) প্রভৃতি। ১৯৯৬ সানের ১৬ ডিসেম্বর পাবলিক লাইব্রেরী দৌলত ময়দানে মঞ্চায়িত হয় উখিয়ার মাষ্টার শাহ আলম রচিত ‘ওদের ধরিয়ে দিন’ আর এ নাটকে যারা অভিনয় করেন তাদের মধ্যে আবুল কাশেম, মোজাম্মেল হক আযাদ, সিরাজুল কবির বুলবুল, আমানুল হক বাবুল, শামসাদ রেজা মুন্নী, হারুন-আল-রশিদ, পারভিন আকতার প্রমূখ। <br />১৯৯৮ সনে পাবলিক লাইব্রেরীর শহীদ দৌলত ময়দানে মঞ্চায়িত হয় মাস্টার শাহ আলম রচিত,প্রযোজিত ও পরিচালিত ‘মাথিনের প্রেম কাহিনী’। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- আবদুল কুদ্দুস রানা, পারভীন আকতার, জিয়াউল হক আযাদ, হুসনে আরা বেবী, দীলিপ মল্লিক, দীপক মল্লিক, সুজন বড়–য়া, সিরাজুল কবির বুলবুল শামসাদ রেজা মুন্নী, হারুন-আল রশিদ প্রমূখ। এ নাটকটি মঞ্চায়িত করার সময় দর্শকদের অশ্র“র জল টলমল হয়েছিল বলে জানা যায়। <br />১৯৯৯ সালের শুরুতে ডুলাহাজারায় ‘নাট্য হোক প্রগতি ও মানব মুক্তির হাতিয়ার’ শ্লোগানকে সামনে রেখে আমির উদ্দিন বুলবুল, মাহফুজুল করিম, আবুল ফজল প্রমূখের উদ্যোগে বৈশাখী নাট্যসংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সংগঠন থেকে প্রতিটি দিবস বিভিন্ন স্কুলে নিয়মিত নাট্যও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। বৈশাখী নাট্য সংগঠন প্রযোজিত নাটক‘ ক্ষুদিরামের দেশে,’ ‘পতন, ‘ওরা কদম আলী’, ‘মুকুট বিড়ম্বনা’, ‘দস্যি ছেলের কান্ড’জরিন্ াসুন্দরী’,‘রুপবান’, ‘শহীদে কারবালা’, প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়। আর এসব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- আহমদ হোছন, কবির আহমদ(কালা সোনা), আব্বাছ মিয়া, জাফর আলম, শামসুল আলম, মনিন্দ্র মাস্টার, আবু সুফিয়ান দফাদার, বাবুল চন্দ্র শীল, বাবু মোহনদে প্রমুখ। বৈশাখী নাট্য সংগঠনটি বর্তমানে নিস্ক্রিয়। <br />২০০৪ সালের শুরুতে সোহিনী শিল্পী গোষ্ঠীর উদ্যোগে কামরুল হাসানের নির্দেশনায় মঞ্চায়িত হয় জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা রচিত ‘মৈনকুমার ও তামাটে কিশোর’ নাটকটি। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- বিপুল সেন, মো. নাছির উদ্দিন, সাইফূল ইসলাম আদর, আবুল কাসেম, সাইফুল ইসলাম কাজল, রিংকু বড়ুয়া, শেখ ফেরদৌস আক্তার রিমি, তছলিমা আকতার প্রমুখ।<br />২০০৭ সালে কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন মিলে ‘সম্মলিত সাংস্কৃতিক জোট’ গঠিত হয়। এ সংগঠনের উদ্যোগে ২০০৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ৭ দিন ব্যাপী নাট্যোৎসব হয়। এ সংগঠন থেকে যে সব নাটক মঞ্চায়িত হয়- ‘চাঁদকুমারী’, ‘টু-ইডিয়টস’, ‘ময়ুর সিংহাসন’, ‘সম্পর্কের আবর্তে’, ‘মৈনকুমার ও তামাটে কিশোর’, ‘নীল সমুদ্রের ঝড়’, ‘মাধবী’, ‘টাকা দে’, ‘ওরা আছেই বলে’, সিরাজ উদ্দৌলাহ, ময়ুর সিংহাসন, মানুষ ভূত, বার্মাইয়া সুন্দরী ইত্যাদি। সম্মিলিত জোটের পরিচালনা, নির্দেশনা ও নাট্যাভিনয়ে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন- ইকবাল মুহাম্মদ শামশুল হুদা, মোহাম্মদ আলী জিন্নাত, তাপস রক্ষিত, ইউসুফ মোহাম্মদ শামসুল হদা, ইয়াছিন মুহাম্মদ শামশুল হুদা, অরুপ বড়ুয়া তপু, রনজিত দাশ, জাহেদ সরওয়ার সোহেল, অনিল দত্ত, নজীবুল ইসলাম, আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ, দীপক শর্মা দীপু, রহমান মুফিজ, মুহাম্মদ সেলিম রেজা, মাহবুবুর রহমান, বাবুল পাল, শ্যামা পাল, নাজমুল করিম জুয়েল, সুব্রত, মোবারক আলী মনির, গিয়াস উদ্দিন মুকুল প্রমুখ। <br />২০০১-২০১৩ পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের নাট্য আন্দোলন, অভিনয়ে যারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তাদের মধ্যে অধ্যাপক অজিত কুমার দাশ, নুরুল হুদা চৌধুরী, ইকবাল মুহাম্মদ শামশুল হুদা, এডভোকেট অরুপ বড়ুয়া তপু, মোহাম্মদ আলী জিন্নাত, রনজিত দাশ, সত্যপ্রিয় চৌধুরী দোলন, আশরাফুল হুদা ছিদ্দিকী জামশেদ, জাহেদ সরওয়ার সোহেল, নজিবুল ইসলাম, ইউসুফ মুহাম্মদ শামশুল হুদা, কামরুল হাসান, বিপুল সেন, নাছির উদ্দিন, পিকলো, পরেশ কান্তি দে, সুশান্ত পাল বাচ্চু, অনিল দত্ত, রহমান মুফিজ, কল্লোল দে চৌধুরী, জয়ন্তী বড়ুয়া, কনিকা বিশ্বাস, দীপক শর্মা দীপু, রিপন বড়ুয়া অর্ণব, তাপস বড়ুয়া, রুমি দে, রিনা আক্তার, সোমা পাল, রিংকু বড়ুয়া, আবুল মনজুর, আজিজুল হক চৌধুরী, সৈয়দ হোসেন ডালিম, আবু বকর ছিদ্দিক খোকন, আবদুল নবী, মঞ্জু বড়ুয়া, লিটন সৈকত দেবনাথ, সাহেদ, আবু সুফিয়ান এনাম, হারুন অর রশিদ, নারগিস আক্তার রনি, অজয় মজুমদার, রিফাত হোসেন নির্যাস, রুনা আক্তার, কনা দাশ, লিটন কান্তি দে মিন্টু, তাকবিন আক্তার কলি, মরিয়ম আক্তার, আবদুর রহিম, দেবাশীষ দাশ, সাইফূল ইসলাম আদর, সাইফুল ইসলাম কাজল, তছলিমা আকতার, মাহমুদুল হক মুন্না, বাবুল পাল, শ্যামা পাল, জিকু, কালাম আজাদ, শাহেদ আবুল আলা, শাহেদ বিন কামাল, মুমু, ইসমত আরা ইসু, শাহানা মজুমদার চুমকি, মোবারক মনির, আমান উল্লাহ, আবিদা নুর চৌধুরী মুমু, আবু দাউদ চৌধুরী রিপন, গিয়াস উদ্দিন মুকুল, রুনা বড়ুয়া বাপ্পি, আশুতোষ রুদ্র, মোহাম্মদ হানিফ, নাজমুল করিম জুয়েল, মফিজুর রহমান মুফিজ, মহীউদ্দীন প্রমুখ। <br />কক্সবাজার শহরকেন্দ্রীক নাট্যচর্চার পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়েও নাট্যচর্চা হয়। উখিয়া উপজেলার প্রথম মঞ্চায়িত ‘পানি পথের যুদ্ধ’ নাটক। ১৯৬৭ সালে উখিয়া হাই স্কুল প্রাঙ্গনে মঞ্চায়িত এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- ফয়েজ বাঙালী, সিরাজুল হক সিকদার, এয়াকুব আলী মাস্টার, নজু মিয়া কন্ট্রাক্টর, ফতেহ আলী মুন্সী, কবির মিয়া, খাইরুল বশর চৌধুরী, বশির উল্লাহ, জাকের হোছেন মুন্সী প্রমুখ। ১৯৬৭-১৯৭০ সময়ে মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘শিরি-ফরহাদ’, টিপু সুলতান, ‘শহীদে কারবালা’, রুপবান,মলকা বানু (সুচরিত চৌধুরী রচিত), ‘লায়লী মজনু’, ‘অপারেশন’ প্রভৃতি।<br />স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে উখিয়া নাট্যচর্চার পুরোদমে শুরু হয়। ১৯৭১-১৯৭৯ পর্যন্ত সময়ে মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে- ‘ ১৯৭১’, বেদের মেয়ে জোছনা, ‘ফেরারী সম্রাট’, ‘বিজয় নিশান’,‘সাগর সেঁচা মানিক ’,স্মৃতি ৭১’ প্রভৃতি। আর এসব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ইয়াকুব আলী মাস্টার, সাধন মোহন দে, সিরাজুল হক বি এ ,সুলতান আহমেদ (সিনিয়র আইনজীবী ও কবি), রফিক উদ্দিন বাবুল(সাংবাদিক), মাস্টার শামসুল আলম, মাস্টার শাহ আলম, পরিমল বড়ুয়া, আবদুল মালেক আজাদ, বাদশা মিয়া চৌধুরী, দিদারুল আলম চৌধুরী, হাজী নুরূল হক, আবু বকর ছিদ্দিক, আবদুল মোনাফ প্রমুখ।<br />আশির দশকের উখিয়ার নাট্যচর্চার ক্ষেত্রে নতুন ইতিহাস শুরু হয়। অন্যান্য সময়ের মত অন্যজনের নাটকের ওপর নির্ভর করতে হয়নি। নিজস্ব রচিত নাটক মঞ্চায়িত করে আসছে। এ ধারার নাট্যচর্চা শুরু হয় ১৯৮৬ সালে। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে উপলক্ষ্য করে মাস্টার শাহ আলম রচিত ‘কবরের বুকে হিজল তরু’ উখিয়া হাই স্কুলে মঞ্চায়িত হয়। এ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ফয়েজ বাঙালী, রুহুল আমিন মেম্বার, জাহানারা বেগম,রেজিয়া বেগম. সন্তোষ বড়ুয়া, শীলানন্দ, দীপক মল্লিক, ফরিদুল আলম, জাহেদা বেগম, মোজাম্মেল হক আজাদ, কোহিনুর আকতার, আবু আহমদ প্রমুখ। এ ছাড়া মাস্টার শাহ আলমের লেখা নাটক আশির দশক থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিভিন্ন দিবস উপলক্ষ্যে নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে এ রকম -‘একটি তারা একটি গোলাপ’(১৯৮৮), ‘শুকনো ক্ষতে রক্ত’ (২৬ মাচ১৯৮৯),‘শয়তানের কামড়’(১৯৮৯), ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের কঙ্কাল’(১৯৯০), ‘অতঃপর ধানের শীষ’(১৬ ডিসেম্বর ১৯৯২), ‘সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ চাই’(১৯৯৮), আরকাইন্যা সুন্দরী’(২০০০), ‘ভুলের মাশুল’(২০০২), ‘একাত্তরের মলিন জ্যোতিষ্ক’(২০০৩), ‘হাইস্যা বর হাতের লাঠি’(২০০৪), ‘বিয়া হা গরালী’(২০০৮) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আর এ সব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- নুরুল আলম সরকার, বশির আহমদ, ফিরোজ বাঙাল, মোজাম্মেল হক আজাদ, মুজিবুল হক আজাদ, জিয়াউল হক আজাদ, সিরাজুল কবির বুলবুল, শামসাদ রেজা মুন্নী, হারুন আল রশিদ, পারভীন আকতার, শিউলি আকতার, নুরুল হক, শায়লা শারমিন রনি, এস.এম.জসিম, খোরশেদ আলম সুজন,কালাম আজাদ, নিধু ঋষি, আবদুল হামিদ তালুকদার, হিল্লোল দাশ, দীপক মল্লিক, জাকের হোসেন জাকের, মর্জিনা আকতার, সামিরা আকতার, জুলেখা বেগম,বুলবুল আকতার মনি, রেহেনা আকতার, নাসির উদ্দিন,হেকিম জাফর,ইমতিয়াজ সুলতান জনি, গিয়াস উদ্দিন,রিয়াজুল হক,মোসলেহ উদ্দিন,নাজিম উদ্দীন,ইদ্রিস, মো.হোসেন, রফিক মাহমুদ, হোসেন মো. জুলু, আফিয়া মুবাশ্বিরা মীম, ফরিদুল আলম প্রমুখ। <br />মহেশখালী উপজেলায় ১৯৮১ সালে স্কুলভিত্তিক নাট্যচর্চা শুরু হয়। ১৯৮১ সালে ইউনুছখালী নাসির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়’র উদ্যোগে প্রতিবছর দুটি করে নাটক মঞ্চায়িত হতো ছাত্র-শিক্ষক মিলে। আখতার আহমদ,সাইফুল্লাহ খালেদ এর যোথ পরিচালনায়ও নিদের্শনায় মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে-‘‘সাগর সেঁচা মানিক’,সিরাজউদৌল্লাহ’, ‘মলকা বানু’, ‘স্মৃতি ৭১’,‘আলোড়ন’, ‘সিন্ধু বিজয়’ প্রভৃতি। এ সব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- সাইফুল্লাহ খালেদ,মাস্টার আবু সৈয়দ, জয়নাল আবেদীন, গোলাম কুদ্দুছ চৌধুরী, আবদুশ শুক্কর, আবুল হোসেন মাস্টার, ওসমান গনি, নুরুল ইসলাম খান, মাস্টার মমতাজ প্রমুখ।<br />১৯৮৪-১৯৮৬ সময়ে কালারমার ছড়া উচ্চ বিদ্যালয়েও প্রতিটি বছরে দুইটি এবং বিভিন্ন উৎসবে নাটক মঞ্চায়ন করেন। এদের মঞ্চায়িত নাটকের মধ্যে ‘বিজয় নিশান’, ‘লাশ ৭৪’, ‘গরীবের ছেলে’, ‘সোহরাব-রুস্তম’, ‘ওরা আছেই বলে’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আর এ সব নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন- সাইফুল্লাহ খালেদ,সৈয়দ লকিতুল্লাহ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, নুরুল আবসার, খালেদ মাহবুব মোর্শেদ (কবি-প্রাবন্ধিক), সুলজিৎ রুদ্র, মনজুর আহমদ, ওসমান সরওয়ার,দিলিপ দাশ প্রমুখ।<br />১৯৮৫ সালে কুতুবদিয়া সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্যোগে ‘এবার ধরা দাও’, ‘সুবচন নির্বাসনে’, স্বয়ম্বরা প্রভৃতি নাটক মঞ্চায়িত হয়। এসব নাটক পরিচালনা ও নাট্য নির্দেশনায় ছিলেন কণ্ঠ শিল্পী শেখ মোরশেদ আহমেদ এবং পৃষ্টপোষকতায় ছিলেন তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর আলম সিকদার। যারা নাট্যভিনয় করেন তাদের মধ্যে শেখ মোরশেদ আহমদ, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার, গোপা রানী, সুরেশ দে, সিরাজুল হক, নুর আল আলম, আবদুল মান্নান, তাওলাদ হোসেন প্রমুখ।<br />কক্সবাজার জেলায় জন্মগ্রহণকারী যারা চলচ্চিত্র ও টিভি অভিনেতা হিসেবে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছে একালের জনপ্রিয় চলচ্চিত্র খলনায়ক ইলিয়াস কোবরা (বাহারছড়া, টেকনাফ), খালেদ মনসুর চৌধুরী (বাজারঘাটা,কক্সবাজার), কাউসার চৌধুরী, টিভি নাট্যাভিনেতা জসিম উদ্দিন (বাহারছড়া-কক্সবাজার), জাহেদ সরওয়ার প্রমুখ।<br /><br /><br /><i><b>(বিঃদ্রঃ-এ লেখা প্রস্তুত করতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও লেখকের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ করা হয়েছে। তাঁদের নিকট হতে প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক বক্ষমান নিবন্ধটি সাজানো হয়েছে। তারপরও অসতর্কতা কিংবা অন্য কোন কারণে তথ্য/তত্ত্ব/উপাত্ত বাদ কিংবা ভুল হয়ে থাকে, তাহলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করা হল। (০১৮১৪৪৯৫৪৬৬)</b></i><br /><br />দোহাই-<br />১. বদিউল আলম (স); ‘নয়ান’ বর্ষ ১, সংখ্যা-১, ডিসেস্বর ১৯৮৭, কক্সবাজার ইনষ্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরী ।<br />২. বদিউল আলম (স); কক্সবাজারের ইতিহাস; জুন ১৯৯০, কক্সবাজার ফাউন্ডেশন,কক্সবাজার।<br />৩. ড. জাফার আহমাদ হানাফী (স); উর্মি, জুন ১৯৯৬, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। <br />৪. শাহ আলম নিপু ও আকাশ মাহমুদ (স); কালধারা (চট্টগ্রামের সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চা সংখ্যা),সেপ্টেম্বর ২০০৬,কালধাারা পরিষদ,চট্টগ্রাম।<br />৫. মালিক সোবহান;কক্সবাজার চরিত-কোষ, জুলাই ২০০৭, কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী, কক্সবাজার।<br />৬. বাবু রহমান; চট্টগ্রামের সঙ্গীত সমাজ, পুষ্পকরথ (হাফিজ রশিদ খাঁন সম্পাদিত), নভেম্বর ২০০৯, চট্টগ্রাম। <br />৭. কালাম আজাদ, কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক পরিসন্ডল ও সঙ্গীত সমাজ, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১০, বর্ষ-২৫, সংখ্যা-১৬৫, দৈনিক পুর্বকোণ।<br /><br /><br />লেখক: প্রকাশনা সম্পাদক, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, কক্সবাজার জেলা সংসদ।<br /></div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-34512167759408675952013-07-07T01:09:00.004-07:002013-07-07T01:09:58.849-07:00তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও একজন এড. খালেকুজ্জামান: বর্তমান রাজনীতি <div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
পৃথিবীতে এ ধরনের সরকার অন্য কোথাও আছে তা আমার জানা নেই। যে ধরন আছে তাতে আমাদের ব্রান্ডটি সম্পুর্ন নতুন। শুধু বাংলাদেশে ব্যতিক্রম। আমাদের প্রাজ্ঞ রাজনীতিবীদরা একে অন্যের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন না। এই সন্দেহ আর অনাস্থা থেকেই তত্বাবধায়ক বা কেয়ারটেকার সরকারের যাত্রা। পৃথিবীতে যে কোন পেশার লোক স্ব-পেশার লোককে বিশ্বাস করে। এক চোর অন্য চোরকে বিশ্বাস করে। এক ডাকাত অন্য ডাকাত বিশ্বাস করে বলে আজও এই আদিম পেশা চলছে। সাধারন বিবেকের দাবী হল একজন ভালো মানুষ অন্য ভালো মানুষকে বিশ্বাস করবে। কিন্তু আমাদের <br />রাজনীতিতে এ সাংস্কৃতি এখনো অপরিচিত এবং কল্পনা জগতের বাইরে। বিশ্বাসী হওয়া অনেক বড় বিষয়। যে ভাষায় আমাদের রাজনীতিবীদরা কথা বলেন তাতে পাগলের ও মাথা খারাপের অবস্থা। ১এর নির্বাচন কেয়ারটেকার ফর্মুলাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলে। গত (৯১-৯৬) বি এন পি সরকারের আমলে মাগুরার বিতর্কিত নির্বাচন ডান বাম সবাইকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয়। হরতাল, অবরোধ ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদি দিয়ে বের হয়ে আসে ৯৬ সালের হাবিবুর রহমানের কেয়ারটেকার সরকার। এ সরকার প্রবর্তনে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার এমপি-মন্ত্রীর ভূমিকা অপরিসীম। সংশোধন তত্বাবধায়ক সরকারের গঠনে আইনসভার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তত্বাবধায়ক সরকার পাশ হবার প্রায় তৃতীয়াংশ এমপিরা স্বাক্ষরকর করেছিলেন। অনেকেও তত্বাধবায়ক সরকার প্রবর্তনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন এবং সৌজন্য স্বাক্ষাত করেছিলেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তাদের অন্যতম ছিলেন কক্সবাজার-রামু আসনের সাড়া জাগানো সংসদ সদস্য এডভোকেট খালেকুজ্জামান। <br /><br />আবদুল মতিন খসরু ১৯৯৬ সালের আওয়ামী সরকারের আইন মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বিরোধী দলের সদস্য থাকা সত্বেও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয় এডভোকেট খালেকুজ্জামানকে। এ সময়ে খালেকুজ্জামান দেয়া বক্তব্যের মন্তব্যে তৎকালিন মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেছিলেন, এডভোকেট খালেকুজ্জামানের প্রশ্ন, যুক্তি, আইন বিচার বিষয়ের উপর যে সমস্ত মতামত দিতেন তার প্রশ্ন ও বক্তব্যকে সব সময় মূল্যায়ন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেছিলেন, এডভোকেট একজন আইনজীবী হিসেবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যে সমস্ত যুক্তি ও মতামত দিতেন তা সব সময় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়েছে। আর এ বিষয়ে না গিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বর্তমান সরকার কি তালবাহনা শুরু করেছে তা বলা যাক। বিএনপির নেতৃত্বাধীন তত্বাবধায়ক সরকার গঠন হওয়ার সময়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে ছিলেন। এখন কি তার পুর্বে সংবিধান সংশোধন করে তা নিশ্চিত করা হয়?<br />চলমান সরকার বিরোধি আন্দোলনের এক পর্যয়ে ইসলাম আর জাতিয়তাবাদী শক্তির মহা মিলন হল। গঠিত হল চারদলীয় ঐক্য জোট। তার পর আবার হরতাল, অবরোধ। কিন্তু কেয়ারটেকার ফর্মুলা নিয়ে কোন আন্দোলন হল না।<br />২০০১ এর নির্বাচন হল পহেলা অক্টোবর। এবার চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসলো। আক্ষরিক অর্থে বিএনপি ও জামায়াত যৌথভাবে দেশ চালালো। চারদলীয় জোটের নামে <br />সরকার চলল ২৭ অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত। তার পর রাজনৈতিক অংগনের আওয়ামী সৃষ্ট গজব নেমে আসল মঈন আর ফখরুদ্দিনের হাইফেন সরকার। এভাবে তিন টার্মের বয়স হল ১৫ বছর কেয়াটেকারের। নির্বচন পরিচালনা করলেন তিনটি কেয়ারটেকার সরকার প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার। জাতীর অভিজ্ঞতা হল। রাজনৈতিক দলগুলো অভিজ্ঞতা <br />অর্জন করল। আজ শেখ হাসিনা যে আদালতের দোহাই দিচ্ছেন ১৯৯৬ সালে বিএনপি সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কথা বলেছিল। তখন যেমন বলা হয়েছিলো জনগনের জন্য সংবিধান। তাই তা পরিবর্তন করতে হবে জনগনের জন্যই। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসীন হবার পর কোন বিষয়ে সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন সেটা বলতে পারা না গেলেও একটি ক্ষেত্রে সফল হয়েছে বলে মনে হয়্। আর তা হল তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে নতুন বির্তকের জন্ম দেওয়া। তারা চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন <br />আয়োজনের বিষয়টি অত সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনী আনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। এ দিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট তা মেনে নিচ্ছেনা। <br />তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন চায় বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুকে সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এই অভিমতের সঙ্গে সুশীল সমাজের অনেকেই একমত। এমনকি অধ্যাপক ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদও একই অভিমত দিয়েছিলেন। যদিও এর আগে ড. কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার রফিক-উল হকও একই ধরনের অভিমত দিয়েছিলেন। <br />ধারণা করছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক। বর্তমান সরকার তাদের ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসেছে। গত তিন বছরে তারা কতটুকু তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছে, তার ভার জনগণের ওপর ছেড়ে দেওয়াই মঙ্গল। এ ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে নির্বাচন পরিচালনার ভার দিলে তাতে ক্ষতির কিছু নেই। বরং আমার বিশ্বাস, সরকারের জনপ্রিয়তা তাতে বাড়বে। যদিও বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু বিএনপির এ দাবি কি মেনে নিচ্ছে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। না মেনে নিচ্ছেনা। মেনে না নেওয়ার কারণ তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আবার ক্ষমতায় বসতে পারবে কিনা সন্দেহ। তাই তারা সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ফেলেছে। তত্বাবধায়ক সরকারকে ইস্যু করে যে সমস্ত আন্দোলন করছে সরকারও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের দমাতে চেষ্টা করছে। এমনই দু:সময়ে খালেকুজ্জামান এর মতো এক সৎ সাহসী এবং জনদরদী ও বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানের বড়ই প্রয়োজন ছিলো। See more at: <br />http://www.nagorikblog.com/node/12293#sthash.8bcD11qf.dpuf</div><br /></div><br /></div>
<div id="stcpDiv" style="left: -1988px; position: absolute; text-align: justify; top: -1999px;">
পৃথিবীতে এ ধরনের সরকার অন্য কোথাও আছে তা আমার জানা নেই। যে ধরন আছে তাতে আমাদের ব্রান্ডটি সম্পুর্ন নতুন। শুধু বাংলাদেশে ব্যতিক্রম। আমাদের প্রাজ্ঞ রাজনীতিবীদরা একে অন্যের উপর বিশ্বাস রাখতে পারেন না। এই সন্দেহ আর অনাস্থা থেকেই তত্বাবধায়ক বা কেয়ারটেকার সরকারের যাত্রা। পৃথিবীতে যে কোন পেশার লোক স্ব-পেশার লোককে বিশ্বাস করে। এক চোর অন্য চোরকে বিশ্বাস করে। এক ডাকাত অন্য ডাকাত বিশ্বাস করে বলে আজও এই আদিম পেশা চলছে। সাধারন বিবেকের দাবী হল একজন ভালো মানুষ অন্য ভালো মানুষকে বিশ্বাস করবে। কিন্তু আমাদের
রাজনীতিতে এ সাংস্কৃতি এখনো অপরিচিত এবং কল্পনা জগতের বাইরে। বিশ্বাসী হওয়া অনেক বড় বিষয়। যে ভাষায় আমাদের রাজনীতিবীদরা কথা বলেন তাতে পাগলের ও মাথা খারাপের অবস্থা। ১এর নির্বাচন কেয়ারটেকার ফর্মুলাকে গ্রহণযোগ্য করে তুলে। গত (৯১-৯৬) বি এন পি সরকারের আমলে মাগুরার বিতর্কিত নির্বাচন ডান বাম সবাইকে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে দেয়। হরতাল, অবরোধ ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও ইত্যাদি দিয়ে বের হয়ে আসে ৯৬ সালের হাবিবুর রহমানের কেয়ারটেকার সরকার। এ সরকার প্রবর্তনে তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তার এমপি-মন্ত্রীর ভূমিকা অপরিসীম। সংশোধন তত্বাবধায়ক সরকারের গঠনে আইনসভার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তত্বাবধায়ক সরকার পাশ হবার প্রায় তৃতীয়াংশ এমপিরা স্বাক্ষরকর করেছিলেন। অনেকেও তত্বাধবায়ক সরকার প্রবর্তনকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন এবং সৌজন্য স্বাক্ষাত করেছিলেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে। তাদের অন্যতম ছিলেন কক্সবাজার-রামু আসনের সাড়া জাগানো সংসদ সদস্য এডভোকেট খালেকুজ্জামান।
আবদুল মতিন খসরু ১৯৯৬ সালের আওয়ামী সরকারের আইন মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে বিরোধী দলের সদস্য থাকা সত্বেও আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয় এডভোকেট খালেকুজ্জামানকে। এ সময়ে খালেকুজ্জামান দেয়া বক্তব্যের মন্তব্যে তৎকালিন মন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেছিলেন, এডভোকেট খালেকুজ্জামানের প্রশ্ন, যুক্তি, আইন বিচার বিষয়ের উপর যে সমস্ত মতামত দিতেন তার প্রশ্ন ও বক্তব্যকে সব সময় মূল্যায়ন করা হয়েছে। তিনি আরো বলেছিলেন, এডভোকেট একজন আইনজীবী হিসেবে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে যে সমস্ত যুক্তি ও মতামত দিতেন তা সব সময় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়েছে। আর এ বিষয়ে না গিয়ে তত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে বর্তমান সরকার কি তালবাহনা শুরু করেছে তা বলা যাক। বিএনপির নেতৃত্বাধীন তত্বাবধায়ক সরকার গঠন হওয়ার সময়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার তত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে ছিলেন। এখন কি তার পুর্বে সংবিধান সংশোধন করে তা নিশ্চিত করা হয়?<br />
চলমান সরকার বিরোধি আন্দোলনের এক পর্যয়ে ইসলাম আর জাতিয়তাবাদী শক্তির মহা মিলন হল। গঠিত হল চারদলীয় ঐক্য জোট। তার পর আবার হরতাল, অবরোধ। কিন্তু কেয়ারটেকার ফর্মুলা নিয়ে কোন আন্দোলন হল না।<br />
২০০১ এর নির্বাচন হল পহেলা অক্টোবর। এবার চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসলো। আক্ষরিক অর্থে বিএনপি ও জামায়াত যৌথভাবে দেশ চালালো। চারদলীয় জোটের নামে
সরকার চলল ২৭ অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত। তার পর রাজনৈতিক অংগনের আওয়ামী সৃষ্ট গজব নেমে আসল মঈন আর ফখরুদ্দিনের হাইফেন সরকার। এভাবে তিন টার্মের বয়স হল
১৫ বছর কেয়াটেকারের। নির্বচন পরিচালনা করলেন তিনটি কেয়ারটেকার সরকার প্রধান ও নির্বাচন কমিশনার। জাতীর অভিজ্ঞতা হল। রাজনৈতিক দলগুলো অভিজ্ঞতা
অর্জন করল। আজ শেখ হাসিনা যে আদালতের দোহাই দিচ্ছেন ১৯৯৬ সালে বিএনপি
সংবিধানের বাধ্যবাধকতার কথা বলেছিল। তখন যেমন বলা হয়েছিলো জনগনের জন্য
সংবিধান। তাই তা পরিবর্তন করতে হবে জনগনের জন্যই। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ
ক্ষমতায় আসীন হবার পর কোন বিষয়ে সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন সেটা বলতে পারা
না গেলেও একটি ক্ষেত্রে সফল হয়েছে বলে মনে হয়্। আর তা হল তত্বাবধায়ক
সরকার নিয়ে নতুন বির্তকের জন্ম দেওয়া। তারা চায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের
অধীনে পরবর্তী নির্বাচন নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন
আয়োজনের বিষয়টি অত সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনী আনা ছাড়া কোনো
বিকল্প নেই। এ দিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট তা মেনে নিচ্ছেনা।
তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন চায় বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার
ইস্যুকে সম্প্রতি যে ঘটনা ঘটেছে তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেছেন, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে
নির্বাচন হতে হবে। এই অভিমতের সঙ্গে সুশীল সমাজের অনেকেই একমত। এমনকি
অধ্যাপক ইউনূস ও ফজলে হাসান আবেদও একই অভিমত দিয়েছিলেন। যদিও এর আগে ড.
কামাল হোসেন এবং ব্যারিস্টার রফিক-উল হকও একই ধরনের অভিমত দিয়েছিলেন।
ধারণা করছি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও চায় একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে
নির্বাচন হোক। বর্তমান সরকার তাদের ক্ষমতার শেষ পর্যায়ে এসেছে। গত তিন
বছরে তারা কতটুকু তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছে, তার ভার জনগণের ওপর
ছেড়ে দেওয়াই মঙ্গল। এ ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ সরকারের হাতে নির্বাচন
পরিচালনার ভার দিলে তাতে ক্ষতির কিছু নেই। বরং আমার বিশ্বাস, সরকারের
জনপ্রিয়তা তাতে বাড়বে। যদিও বিএনপির দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কিন্তু
বিএনপির এ দাবি কি মেনে নিচ্ছে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। না
মেনে নিচ্ছেনা। মেনে না নেওয়ার কারণ তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে
আবার ক্ষমতায় বসতে পারবে কিনা সন্দেহ। তাই তারা সংবিধান সংশোধন করে
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে ফেলেছে। তত্বাবধায়ক সরকারকে ইস্যু
করে যে সমস্ত আন্দোলন করছে সরকারও প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য
রাজনৈতিক দলের নেতাদের দমাতে চেষ্টা করছে। এমনই দু:সময়ে খালেকুজ্জামান এর
মতো এক সৎ সাহসী এবং জনদরদী ও বিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ানের বড়ই প্রয়োজন
ছিলো। - See more at:
http://www.nagorikblog.com/node/12293#sthash.8bcD11qf.dpuf</div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-21363788476858115922013-07-07T00:02:00.002-07:002013-07-07T00:02:43.614-07:00কক্সবাজারের মুক্তিযুদ্ধে নারী<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<div style="text-align: justify;">
যেভাবেই বলি না কেন এটাই সত্য, মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। আর এই ইতিহাস বিনির্মাণে নারীর ভূমিকাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ যা, নানাভাবে উপেক্ষিত এখনো। '৭১-এ নারীর অবদানের কথা উঠলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সম্ভ্রমহানি আর হাসপাতালের সেবিকার চরিত্রের কথা। তাও আবার গল্পচ্ছলে, সেটাও নির্বাকই থাকে। '৭১-এর ইতিহাসেও রয়েছে লিঙ্গবৈষম্য। স্বাধীন দেশে নারীর মহান আত্মত্যাগ কিংবা শহীদের তালিকা অথবা বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের বহু ঘটনা রয়ে গেছে দৃষ্টির আড়ালে। মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনার ইতিহাস এমন একটি বিষয় যা কেউ স্বীকার করতে চায়না। কক্সবাজারের অনেক নারীকে নির্যাতন করা হয়েছে কিন্তু কেউ প্রকাশ করতে চায়না। তার পরও প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক কক্সবাজারের অধিবাসী ও জন্মগ্রহণকারী হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেণ কিংবা পাক বাহিনীল লালসার শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে শিখা রানীর অন্যতম। শিখা রানী খুরস্কুলের মেয়ে। তার নিকট আত্মীয়দের মধ্যে অনেকেই ভারতে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে অস্ত্র হাতে স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। মহেশখালীর দুর্ধর্ষ রাজাকার মৌলভী জকরিয়া তাকে ধরে নিয়ে পাক বাহিনীর লালসার শিকার করিয়ে সর্বশেষ ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে বিয়ে করেছিলেন।
দেশ স্বাধীন হবার পর তখন ভারতীয় সেনাদের একটি দল অবস্থান নিয়েছিল কক্সবাজার সার্কিট হাউসে। কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসনিক পরিষদের প্রশাসক ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এবং পরবর্তীতে মহকুমার গভর্নর অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম। মুক্তিযোদ্ধা জওহর লালের পরিবারের পক্ষ থেকে ভারতীয় সেনাদের নজরে নেওয়া হয় এ ঘটনাটি। আওয়ামী লীগের সাবেক দলীয় সংসদ সদস্য, কঙ্বাজার মহকুমার তদানীন্তন গভর্নর ও বর্তমানে গণফোরাম নেতা অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামের সামপ্রতিক প্রকাশিত 'বাংলাদেশের রাজনীতি-আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি' নামের বইতে এ ঘটনার বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম তাঁর বইতে উল্লেখ করেছেন- মৌলভী জাকারিয়া মহেশখালী দ্বীপের গোরকঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ৭০'র প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনেও একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে যখন সবাই জান বাঁচাতে ব্যাকুল তখনই শিখা রাণীকে বিয়ে করেন এই মৌলভী জাকারিয়া। মুক্তিযোদ্ধা জহর লাল এসে অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামকে অভিযোগ করেন, 'আমার ভাগ্নিকে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন-নতুবা আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব। এমনকি তখন মৌলভী জাকারিয়ার বংশের কাউকে অক্ষত রাখব না।' অবশেষে তাই করা হলো। রাজাকারের ঘর থেকে শিখাকে উদ্ধার পুর্বক নেওয়া হলো কারাগারের কাস্টডিতে। একদিন গভীর রাতে কক্সজারে অবস্থানরত ভারতীয় সেনারা কারাগারে ঢুকে সেই শিখা রানিকে বের করে নিয়ে আসেন। ভারতীয় সেনাদের নিকট গোপন সংবাদ ছিল-শিখা রানিকে জোরপূর্বক আটক রাখা হয়েছিল। প্রকৃতপক্ষে তা সত্য নয়। পরে ভারতীয় সেনা কমান্ডার অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামের নিকট এসে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন এই জন্য যে- 'আমরা একটা অন্যায় করে ফেলেছি। আপনি এখানকার এ সময়ের প্রশাসক কিন্তু আপনার অনুমতি না নিয়ে রাতের আঁধারে কারাগারে ঢুকে মেয়েটিকে বের করে এনেছি। পরে আমরা নিশ্চিত হয়েছি আপনি যে ব্যবস্থা নিয়েছেন তার যথার্থ রয়েছে।' লেখক অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম লিখেছেন-তারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বিধায় আইন ভঙ্গ করায় দুঃখও প্রকাশ করেছেন। পরে অবশ্য শিখাকে নিয়ে পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হলো-এখানে আর নয়। শেষপর্যন্ত মান-সন্মান রক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা জওহর লালের বোন শান্তি রানি তার কন্যা শিখাসহ অন্যান্যদের নিয়ে পাড়ি জমান ভারতে।
প্রিনছা খেঁ
প্রিনছা খেঁ ছিলেন রাখাইন সম্প্রদায়ের মেয়ে। কক্সবাজারের টেকনাফে আদিবাস তার। পাহাড়, পানি, অরণ্য আর সৈকতে তার বিহার, নিসর্গে তার বেড়ে ওঠা। সত্তরের নভেম্বরের জলোচ্ছ্বাসে সব হারিয়ে নিগ্রন্থ হয়ে যায় তিনি। সংগ্রাম যার সত্তা, সে অবলা হয় কী করে। অষ্টাদশী প্রিনছার ক্রর প্রকৃতির বিরুদ্ধে এক দ্রোহী সত্তা। অক্লিষ্ট প্রিনছা জলোচ্ছ্বাসের পর আর্তের সেবায় আসা এক মেডিকেল টিমের সাথে যোগ দেয়। এক জাপানী দম্পতি, এক বৃটিশ তরুনী আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রের এই ছোট্ট মেডিকেল টিমে চাল চুলোহীন প্রিনছা হয়ে গেল এক সফেদ নার্স; ব্যস্থ হয়ে হয়ে উঠল দুুস্থের সেবায়। মেডিকেল টিমটি একাত্তরের ফেব্রুয়ারি চলে আসে পটুয়াখালীর উপকূল অঞ্চলের কুয়াকাটা সৈকত এলাকায়; সাথে প্রিণছাও। পরে এপ্রিল শুরুতে মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় নিয়োজিত হয় প্রিনছা ও তার মেডিকেল টিম। পরে মেডিকেল টিম আলাদা হয়ে যায় পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।...১৯৭১ সালের মাঝামাঝিতে প্রিনছার স্থান হয় শক্র ক্যাম্পে। শক্র ক্যাম্পে পাক-আর্মির দুই বাবুর্চির সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রিনছা হয়ে গেলেন তৃতীয় বাবুর্চি। ক্যাম্পে কাঠ সংগ্রহকারী বাবুলের সঙ্গে তিনি গোপনে পরিকল্পনা করতে থাকেন। অক্টোবরে প্রিনছা ক্যাম্প অধিনায়ক সুবেদারকে জানালেন তিনি অসুস্থ, ঝালকাঠি যেতে চান ডাক্তার দেখাতে। এক হাবিলদার, এক সিপাইসহ বাবুল আর প্রিনছা এলেন ঝালকাঠি ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার যখন অসুখের জিজ্ঞেস করলেন, তখন প্রিনছা বললেন, তিনি গর্ভবতি গোপনে কথা বলবেন। পেছনের ঘরে গিয়ে তিনি ডাক্তারকে বললেন, আসলে তিনি অন্ত:সত্বা নন, কিন্ত পাকিস্তানি হাবিলদারকে যেন ডাক্তার বলে দেন, তিনি অন্ত:সত্বা, প্রতি চার দিন পরপর তাঁকে ডাক্তারের কাছে পরীক্ষার জন্য আসতে হবে। পরে ডাক্তারের কাছে গিয়ে প্রিনছা বললেন, তাঁর বিষ চাই। (কেন চান এটাও বুঝিয়ে বললেন) ডাক্তার কিছুদিন সময় নিয়ে ঝালকাঠি থেকে বিষ এনে দিলেন। সেদিন সন্ধ্যায় খুবই যতœ করে রান্না করলেন প্রিনছা। তার আগে রান্নাঘরে দুই পাকিস্তানি বাবুর্চিকে খাইয়ে এসেছেন, খাওয়া শেষে সবাই অচেতন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রিনছা বাবুলের সঙ্গে পালিয়ে যান নাজিরপুলে। সেই ক্যাম্পের ৪২ জন শক্রর মধ্যে ১৪ জন অচেতন অবস্থায় মারা যায় আর বাকিদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল চিকিৎসার জন্য। এ খবর শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে যায় প্রিনছা। তাই তিনি ঝালকাটির সহায়তাকারী ডাক্তারকে দোষারোপ করেছে। প্রিন্ছার বিশ্বাস ডাক্তার তার সাথে বেঈমানী করেছে, তাকে ভেজাল বিষ দিয়েছে। তা নাহলে সব শত্রু মরল না কেন? ৪৬
প্রিনছা খেঁ নামের ওই নারী মুক্তিযোদ্ধাকে ৩৬ বছর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার যথাযথ সম্মান দেয়া হয়নি, তেমন কেউ মনে রাখেনি। এর পরে কী হয়েছে এটা জানা নাই। ইতিহাসে এদের নাম আসে না কারণ এরা দলবাজ না। ঘুরেফিরে আসবে অল্প কিছু বিখ্যাত মানুষদের নাম। বছরের পর বছর ধরে আমরা এদের কথা শুনতে শুনতে কানের পোকা বের করে ফেলব। আসলে ভাঙ্গা গ্রামোফোনের পিনটা আটকে আছে কোথাও, এ থেকে আমাদের মুক্তি নাই। যেমনটা আমরা সম্মানিত করেছি উক্য চিং-কে...১০০ টাকা দিয়ে...।
১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সকাল হতে কক্সবাজারের রুপ বদলায়। যারা ২৬ মার্চ জয় বাংলা ধ্বনিতে আকাশ ফাটায়-তাদের অনেকের কন্ঠ নীরব। আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ এবং ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী সমর্থকরা ছাড়া বাকীদের তৎপরতা কেমন যেন স্তিমিত। জনগণের পাশাপাশি মহকুমা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে দারুন শংকা জাগে। ঢাকা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন কন্ঠ সম্পূর্ণ ভিন্ন সংবাদ প্রচারিত হতে শুরু করল। চারদিকে থমথমে ভাব। দুপুরের দিকে কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটার রাস্তায় ভীষণ হৈ-চৈ ও জটলা। সেদিন দুপুরের বাজারঘাটার জটলার বর্ণনা দিতে গিয়ে তৎকালীন কক্সবাজার মহকুমা অফিসের কর্মকর্তা রফিক আনোয়ার মুক্তিযুদ্ধের রক্তঝরা দিনগুলোর দু:সহ স্মৃতি নিয়ে আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘একাত্তরের মহাবিদ্রোহ: অগ্নিপুত্ররা কোথায়?-এ লেখেন, ‘পশ্চিম পাকিস্তানি ইপিআর ধরা পড়েছে। তাদের গোল পাহাড়ের ঢালুতে নিয়ে উৎসাহী (!) স্বাধীনতা সংগ্রামীরা জবাই করে দিলো। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা ঊর্দুভাষী এক কলেজ ছাত্র ও তার বোন মেডিকেল ছাত্রীকে গণিমতের মাল হিসেবে পাওয়া গেছে। ভাইটিকে শেষ বিদায় জানিয়ে বোনটিকে নাকি টেকপাড়ায় উঠানো হয়েছে। কক্সবাজার শহরের উদুভাষী অভিবাসী ছিলনা বললেই চলে, ভারতের ইউপি থেকে আগত বিনয়ী শান্ত নম্র একজন ভদ্রলোক কক্সবাজারে বাস করতেন তাকে লোকে সাধারণত হাড্ডি কোম্পানী বলে ডাকত। হাঙ্গরের হাড় গুরো করার এক্টি ছিল। ভদ্রলোক খুবই দানশীল ছিলেন। ভারত থেকে সর্বস্ব হারিয়ে পাকওয়াতনে এসেছিলেন। কিন্তু ইয়াহিয়া-ভূট্টো জিঘাংসা মেটাতে গিয়ে এই নিরাপদ ভদ্রলোক গোলদিঘির ঢালূতে লাশ হয়েছিল, তার একটি মাত্র স্কুল পড়–য়া সুন্দরী মেয়ে কোথায় জানেনা। বাড়িঘর সবকিছু চোখের পলকে লুন্টিত হয়েছে।
পাকবাহিনী ও তার দোসরদের লালসার শিকার হতে হয়ে কল্পনা (একালের জনপ্রিয় অভিনেত্রী), চকরিয়ার জায়নুর বেগম, হ্নীলার সিমা, হ্নীলার ধইল্যার মা, মিস্ত্রিজান। এমনি আরও শত সহ¯জানা না জানা ঘটনা, গল্প রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ ও নারীর অবদানকে ঘিরে। এই লেখাটিতে নারীকে মুক্তিযুদ্ধে উৎসাহ প্রদানকারী, সেবিকা, ধর্ষিতা এসব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। বরং এটি তাদের অন্যরকম অনন্য কিছু উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা মাত্র। </div>
<div style="text-align: justify;">
- See more at: http://www.nagorikblog.com/node/12338#sthash.FNe5Nee3.dpuf</div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-84697535600109620382013-07-06T03:08:00.002-07:002013-07-06T03:08:24.616-07:00সঙ্গীতপরিমণ্ডলে কক্সবাজার<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on">
<h3 class="post-title entry-title" itemprop="name" style="text-align: justify;">
</h3>
<div class="post-header" style="text-align: justify;">
</div>
<div style="text-align: justify;">
মানব সভ্যতার অগ্রগতি সাধিত হয় উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশের সাথে এবং এর উপর
ভিত্তি করে গড়ে উঠে সংস্কৃতিসহ সভ্যতার অন্যবিধ উপাদান। উৎপাদনের
সম্পর্কসমূহের সমাহারই অর্থনীতি- যা সমাজের ভিত্তি। যার উপর দিয়ে গড়ে ওঠে
উপরিকাঠামো। উৎপাদনের সুত্রপাত মূলত কৃষি ব্যবস্থা থেকে। কৃষি ব্যবস্থা
প্রথমে ছিল নিছক রোপন ব্যবস্থা। পরে লাঙলের মাধ্যমে ভূমি কর্ষণ ব্যবস্থার
সুত্রপাত। হল বা লাঙল কৃষি কাজের প্রধান হাতিয়ার। উৎপাদনের জন্য যা করা হয়
তা হল কর্ষন। এই কর্ষনই জীবনের মৌলিক ভিত্তি তৈরী করে এবং তার উপরে নির্ভর
করে যা কিছু বিকাশ করে যেমন রীতি-নীতি, পোষাক-পরিচ্ছদ, আইন-কানুন,
সংস্কার-বিশ্বাস ইত্যাদিও হয় এই উৎপাদনের ব্যবস্থার উপরি কাঠামো। সে জন্য এ
গুলোর সম্মিলিত নাম হয় কৃষ্টি, যা কর্ষণ শব্দ থেকে জাত। আর এই কর্ষণ থেকে
সংস্কৃতির সুত্রপাত। মানুষের সৃষ্টিশক্তির পরিচয় তার সংস্কৃতিতে। এই
সৃষ্টিশক্তির জন্যই মানুষ। মানুষ অন্যজীব থেকে স্বতন্ত্র। অন্যজীব প্রকৃতির
বশ; কিন্তু মানুষ প্রকৃতিকেও বশে আনতে পারে,সৃষ্টি করতে পারে। সে কৃতি বা
সৃষ্টির দ্বারা মানুষ। আর মানুষেরা সে সব রীতিনীতি,কলা-কৌশল মেনে চলে
সংস্কৃতিকে ধারণ করে। তাই E.B tailor এর মতে বলা যায়- Culture is that
complex whole which includes knowledge’s beliefs, arts, morals law,
custom and any other capabilities and habits acquired by man as a member
of society'' (জ্ঞান, বিশ্বাস, কলা, নীতি, আইন, প্রথা এবং সমাজের সভ্য
হিসেবে আহরিত অন্যান্য যোগ্যতা ও অভ্যাসের সমষ্টিকে সংস্কৃতি বলে)। এই
বিচারে আর্ট বা শিল্পকলা ও সংস্কৃতির অংশ। শিল্পকলা হলো সাহিত্য, চিত্রকলা,
নৃত্য, সংগীত (যন্ত্র ও কণ্ঠ), ভাস্কর্য ও স্থাপত্য। কাব্য, চিত্রকলা। আমি
বক্ষমান নিবন্ধে কক্সবাজারের সংগীত বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়াসি হচ্ছি।
সমুদ্রতীরবর্তী কক্সবাজারের নান্দনিক সাংস্কৃতিক চর্চার ভুমিকাও কম নয়।
যদিও আমি কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক চর্চার পুর্ণাঙ্গ ধারণা দিতে পারবনা তথাপি
কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক চর্চার ধারাবাহিকতার ইতিহাস প্রাপ্ত তথ্য মোতাবেক
আলোচনা করার চেষ্টা করা গেল-<br />সঙ্গীত সমাজ <br />সংগীত শিক্ষার কোন
প্রতিষ্ঠান সৃষ্টির পুর্বে সংগীত চর্চা হতো ব্যক্তি পর্যায়ে। বিশেষতঃ
হিন্দু ধর্মাবলম্বী মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা সংগীত চর্চা করতো।
তাদের চর্চার সুবিধার দিক হলো সংগীত তাদের ধর্ম চর্চার একটি অঙ্গ। ভজন,
শ্যামা সংগীতের চর্চার পাশাপাশি আসে রবীন্দ্র-নজরুল ও আধুনিক গানের চর্চা।
মুসলমান পরিবারগুলোতে সংগীত চর্চা নিষেধ থাকলেও গ্রামে-গঞ্জে কবিগান,
জারিগান ইত্যাদির আসর বসত। মাঠে চাষ করা চাষী,একজন গাড়িয়াল, নৌকার মাঝির
গান গাওয়াতে নিশ্চয় কোন বাঁধা ছিল না। এ গান তাদের পরিশ্রম লাঘবের অংশ। এতে
বুঝা যায় শিল্প একদিকে উৎপাদনের অংশ, অন্যদিকে পরিশ্রম লাঘবের উপায়ও।
কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার ভালুকিয়া গ্রামের কবিয়াল আব্দুর রহমান
পন্ডিত ও তার ছেলে টুনু পন্ডিত, কক্সবাজার সদর উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের
খামারপাড়া গ্রামের আবদুল করিম প্রকাশ বরকেতা গাইন, কবির আহমদ পণ্ডিত,
মোহাম্মদ মোস্তফা, ইনু চকিদার, তমরুদ্দিন গায়েন, বসন্ত গায়েন, তজু পন্ডিত,
ফয়েজ বাঙ্গালী, আবদু ছামাদ, শামশুল আলম বয়াতী, ফজিউর রহমান পন্ডিত,
বংশীমোহন জলদাশ, কালা মিয়া গায়েন, থাইংখালীর হারু পন্ডিতের নাম আজও স্থানীয়
লোকদের মুখে মুখে ফেরে। <br />কক্সবাজারে শাস্ত্রভিত্তিক সংগীত চর্চার
ইতিহাস বেশী দিনের নয়। পারিবারিকভাবে কোথায়ও চর্চা হলে সে তথ্য সংরক্ষনের
ব্যবস্থা নেই। পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সংগীত চর্চার পর উল্লেখ করা যায়। যারা
বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অবদান রাখেন, তাদের মধ্যে মনমোহন সেন, তার মেয়ে
রূপাঞ্জলী সেন, দেব প্রসাদ ভট্টাচার্য, অজিত কুমার রায় চৌধূরী, বিশ্বেশ্বর
ভট্টাচার্য, এ্যাডজুটেন্ড মোস্তাক আহমেদ, আবদুল হাকিম, হরি চৌধূরী, বজল
আহমদ ও স, ম, আবু বকর ছিদ্দিকী প্রমুখ। এরপর ১৯৫৬ সালে বাংলাদেশের প্রখ্যাত
শিল্পী জগদানন্দ বড়ুয়া উখিয়া নিন্ম-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (১৯৫৭ সালে রামু
খিজারী স্কুল) প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করলে কক্সবাজারে উচ্চাংগ
সংগীতের জোয়ার বয়ে যায়। তিনিই প্রথম কক্সবাজারে উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিক্ষা
প্রদান করেন। ১৯৫৯-১৯৬০ সালে কক্সবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ছিলেন আবদুল
আলিম। অত্যন্ত সঙ্গীত সমঝদার ছিলেন তিনি। তাঁর সহযোগিতায় গড়ে উঠলো আবু বকর
উস্তাদজীর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ‘সঙ্গীতায়তন’। আব্দুল আলীম কে সভাপতি ও
নুরুল হুদা চৌধূরীকে সম্পাদক করে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের বিপরীত দিকের একটি
সরকারী ভবনে ‘সঙ্গীতায়তন’র অস্থায়ী কার্যালয় নির্ধারিত হয়। কিন্তু দূরে
হওয়ায় দুই বছর পরে কার্যালয় স্থানান্তর করে উস্তাদ আবু বকর ছিদ্দিকীর নিজ
বাস ভবনে (লালদিঘীর পশ্চিম পাড়স্থ আবদুল বারী মার্কেট সংলগ্ন বর্তমান ভবনে)
নিয়ে আসা হয়। এ প্রতিষ্ঠানটি খোলার পর থেকে সঙ্গীতপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রী ও
যুবকেরা সঙ্গীত শেখার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। এসরাজ, সেতার ও কন্ঠসঙ্গীতে
তালিম নিতে শুরু করেন। তালিমে তার সহযোগী ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ মনমোহন সেন,
বিশ্বেশ্বর ভট্টাচার্য, অধ্যাপক মুফীদুল আলম। এ প্রতিষ্ঠান থেকে তালিম নেন-
চট্টগ্রামের আর্যসঙ্গীতের অধ্যক্ষ ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ মিহির লালা
(কন্ঠ), ধর্মদর্শী বড়–য়া (প্রাক্তন প্রযোজক, বাংলাদেশ বেতার), আহমদ কবির
আজাদ, আতাহার ইকবাল, রায়হান উদ্দিন থেকে শুরু করে একালের জনপ্রিয়
কন্ঠশিল্পী রবি চৌধুরী পর্যন্ত দেশখ্যাত শিল্পীদের অনেকেই ওস্তাদ আবু বকর
সিদ্দিকীর শিষ্য। সঙ্গীতায়তনের শিষ্য-প্রশিষ্যদের মধ্যে যারা গুরুত্বপূর্ণ
অবদান রেখে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে- চট্টগ্রাম আর্যসঙ্গীতের অধ্যক্ষ ও
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ মিহির লালা, অধ্যাপক মুফীদুল আলম (১৯৭৪ সাল থেকে
বর্তমান পর্যন্ত পরিচালনা কমিটির সভাপতি), এডভোকেট আবুল কালাম আজাদ,
অধ্যাপক সোমেশ্বর চক্রবর্তী, ওহীদুল আলম, আহমদ কবির আজাদ, এড.রাখাল চন্দ্র
চক্রবর্তী, নুরুল আবছার চেয়ারম্যান, কন্ঠশিল্পী-অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন,
নূরুল মোক্তাদির, হুসনে আরা স্বপ্না, দোলন চাঁপা চৌধুরী, আতাহার ইকবাল,
আবদুশ শুক্কর আজাদ, খালেদা আকতার কল্পনা, মোহাম্মদ ইলিয়াছ মামুন, নুপুর
বড়–য়া, জবা চক্রবর্তী, শিবানী ধর, এ.এস.এম সানাউল্লাহ, আবু হায়দার ওসমানী,
আলপনা দাশ, রীনা পাল, রেজাউল আমিন মোর্শেদ, শেখ মোর্শেদ আহমদ, সনজিত ধর
সনজু, আলম শাহ, ছালেহা নাসরিন স্বপ্না, আজাদ কালাম, পুষ্প পাল, ঋতিল মনীষা,
নবোষা, দ্যোতনা প্রমুখ।<br />এ সংগীত বিদ্যালয় পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান
রাখেন- নজরুল ইসলাম, এড.মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, কবি ও প্রাবন্ধিক সুলতান
আহমেদ এডভোকেট, সাংবাদিক ও গবেষক মুহম্মদ নুরুল ইসলাম, রফিক আল ইসলাম ও আবু
নাছের চৌধুরী প্রমুখ। <br />উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে সঙ্গীয়তায়তনের উদ্যোগে
কক্সবাজার ইনষ্টিটিউট ও পাবলিক লাইব্রেরীর হল মিলনায়তনে কক্সবাজারে প্রথম
উদযাপিত হয় বাংলার ঐতিহ্য পহেলা বৈশাখ উৎসব।<br />১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি
অধ্যাপক রাহগীর মাহমুদ, এডভোকেট আমজাদ হোসেন, অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী,
জয়নাল আবেদীন, বাবু সুজন বড়–য়া, সঙ্গীতজ্ঞ বদিউল আলম প্রমুখের উদ্যোগে
প্রান্তিক এলাকা চকরিয়ার সংগীত পিপাসুদের সংগীত শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যকে
সামনে রেখে মালঞ্চ সংগীত একাডেমী নামে একটি সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দিবসে সাংস্কৃতিক
অনুষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে। এ প্রতিষ্ঠান থেকে যে সব শিষ্য তৈরী হয়েছে
তাদের মধ্যে - রাজীব দাশ, কলকাতার বিখ্যাত কন্ঠশিল্পী সমজিত রায়, মুজিবুর
রহমান, হিরু বড়ুয়া মিঠু, ইশরাক ইফতিহা মাহমুদ দ্বীপি, তাসনিম মাহমুদ সারাহ,
তানিয়া আহসান মিলিসহ প্রায় পাঁচ হাজারের অধিক ছাত্রÑছাত্রীদের সংগীত
শিক্ষা প্রদান করা হয়েছে।<br />১৯৮৭ সালের শুরুতে কক্সবাজারের সঙ্গীত অঙ্গনের
এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। প্রত্যন্ত গ্রামের নারী-পুরুষ শিল্পীদের নিয়ে
অনুষ্ঠিত হয় কক্সবাজারের প্রথম লোক সাহিত্য উৎসব। ‘কক্সবাজার লোকসাহিত্য
পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন এই উৎসবের আয়োজন করে। সাংবাদিক মুহম্মদ নূরুল
ইসলাম উদ্যোগ নিয়েই লোকসাহিত্য পরিষদ গঠন করেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক কবি
এম এ কামালের পৃষ্টপোষকতায় ও সাংবাদিক-গবেষক মুহম্মদ নূরুল ইসলাম সমন্বয়ের
মাধ্যমে এই উৎসব সফল ভাবে আয়োজন করে। সাংবাদিক বদিউল আলম, কক্সবাজার পৌর
চেয়ারম্যান নূরুল আবছার, এডভেকোটে আবুল কালাম আজাদ, আবৃত্তিকার জসিম উদ্দিন
বকুল, নজরুল ইসলাম বক্সী, ফাতেমা খাতুন মনু, হাসিনা চৌধুরী লিলি, চকরিয়া
থেকে তারেকুল ইসলাম চৌধুরী, রামু থেকে ধনীরাম বড়–য়া ও উখিয়া থেকে মাস্টার
শাহ আলমসহ অনেকেই এই আয়োজনের সাথে যুক্ত ছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায়
পরবর্তীতে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর উদ্যোগে লোকসঙ্গীতের আয়োজন হয়েছে। <br />রম্যভূমি
রামুর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে উদ্দীপ্ত হয়ে চট্টগ্রাম সংগীত ভবনের
প্রতিষ্ঠাতা প্রিয়দারঞ্জন সেন গুপ্তের কনিষ্ঠ পুত্র বিভাস সেন গুপ্ত
জিগমী’র তত্ত্বাবধানে রামুতে ২০০৩ সালে রামু সংগীত ভবন প্রতিষ্ঠা করা হয়।
অদ্যাবধি এই প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক গুণী শিল্পীর আবির্ভাব হয়ে আসছে। এছাড়া
রামু সমীহা সংগীতালয়, রামু সুরাঙ্গন, ওস্তাদ নুরুল মোক্তাদিরের রুপম সঙ্গীত
বিদ্যালয়, উখিয়া সপ্তরতœ সংগীতালয়, সারদা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত পরিষদ,
কক্সবাজার সঙ্গীত একাডেমী, কক্সবাজার শিল্পী গোষ্ঠী, হেমন্তিকা সাংস্কৃতিক
গোষ্ঠী, চকরিয়া সংগীত নিকেতন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান কক্সবাজারের সংগীত
পিপাসুদের সংগীত শিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে।<br />২০০৮ সালের শুরুতে শুদ্ধতম
সংগীত, লোক-সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ এবং লোক শিল্পীকে একত্র করার লক্ষ্যে
মাস্টার শাহ আলম, অধ্যাপক তহিদুল আলম তহিদ, মোজাম্মেল হক আজাদ, সিরাজুল
কবির বুলবুল, ফিরোজ বাঙাল, এস. এম জসিম, কালাম আজাদ, আবদুর রহিম, আবদুল
করিম, নুরুল হক প্রমুখের নেতৃত্বে উখিয়া লোকশিল্পী পরিষদ গঠিত হয়। <br />কক্সবাজারের
সংগীত অঙ্গনকে উর্বর করার লক্ষ্যে যে সব শিল্পী সংগঠন কাজ করে যাচ্ছেন তার
মধ্যে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, উদীচি শিল্পী গোষ্ঠী, ঝংকার শিল্পী গোষ্ঠী, লায়ন শিল্পী গোষ্ঠী,
ত্রিরতœ শিল্পী গোষ্ঠী, বালুনাফ শিল্পী গোষ্ঠী, সোহিনী শিল্পী গোষ্ঠী,
অনির্বাণ শিল্পী গোষ্ঠী, দুর্বার শিল্পী গোষ্ঠী, হেমন্তিকা শিল্পী গোষ্ঠী,
নাফ শিল্পী গোষ্ঠী, পালং শিল্পী গোষ্ঠী, সাইনিং শিল্পী
গোষ্ঠী অন্যতম। বর্তমানে কক্সবাজার ইসলামী সাহিত্য সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশন
নামক একটি প্রতিষ্ঠানকে সংগীত চর্চায় এগিয়ে আসতে দেখা যায়। তবে সাইমুম
শিল্পী গোষ্ঠী কক্সবাজারের ইসলামী গানকে জনগণের কাছে কাছ শুরু করে। এছাড়া
সরকারী সংগঠন হিসেবে কক্সবাজার শিল্পকলা একাডেমী, কক্সবাজার সাংস্কৃতিক
কেন্দ্র, কক্সবাজার শিশু একাডেমী থেকেও আলাদা আলাদা ভাবে সংগীত শিক্ষা
প্রদান করা হয়। <br />কক্সবাজারের সন্তান যারা বাংলাদেশ বেতার, বিটিভি,
আরটিভি, এটিএন বাংলা ও বিভিন্ন চ্যানেলে সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে যারা অবদান
রেখে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে- কন্ঠশিল্পী ধর্মদর্শী বড়ুয়া, কন্ঠশিল্পী মীনা বড়ুয়া , আহমদ কবির আজাদ, কন্ঠশিল্পী শেখ মোরশেদ আহমদ (বাংলাদেশ টেলিভিশন ও
বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত সংগীত শিল্পী, সুরকার ও সংগীত প্রযোজক), আশির
দশকের কিংবদন্তী গান ‘তুরে পুতুলের মত করে সাজিয়ে’র গীতিকার আবদুল্লাহ আল
মামুন (রেডিও অষ্ট্রেলিয়া’র বাংলাভাষা অনুষ্ঠান পরিচালক ও সংগীত শিল্পী এবং
সুরকার), নাছির উদ্দিন বিপু (বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুুক্ত সংগীত
শিল্পী) প্রমুখ। এছাড়া কক্সবাজার বেতারের তালিকাভূক্ত শিল্পীদের ইভেন্ট
অনুযায়ী দেওয়া হল।<br /><b>আধুনিক গান</b>- অধ্যাপক রাহগীর মাহমুদ, দিল মোহাম্মদ
দিলু, অধ্যাপক রায়হান উদ্দিন, আবু হায়দার উসমানী, আতাহার ইকবাল, তালেব
মাহমুদ, মিজানুর রহমান চৌধুরী, তপা গুহ, জয়া গুহ, এ্যানি বড়–য়া, সঙ্গীতজ্ঞ
বদিউল আলম, ইকবাল হায়দার, আজম চৌধুরী (বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত সংগীত
শিল্পী ও সুরকার), শামসাদ ববি, এ. আর. হারুন, পপি বড়–য়া, নিলীমা দাশ, রিনা
মল্লিক, তমালিকা মিত্র, ফারহানা পারভীন (আরটিভি,এটিএন বাংলা ও বাংলাদেশ
বেতারের তালিকাভুুক্ত সংগীত শিল্পী), আলাউদ্দিন তাহের, সমীর কান্তি শীল,
মানসী বড়ুয়া, মন্দিরা বড়ুয়া, মনিকা বড়ুয়া, তাবেঈন আশরাফী, সাইদা নুশরাত
তোফা, রাফায়েত নেওয়াজ কচি, সুমি দাশ, কামরুন নাহার হাসেম, রিদু চৌধুরী,
প্রবীর বড়–য়া, মীনা মল্লিক, এইচ.এম.মিজান, একরামুল হক প্রমুখ।<br /><b>রবীন্দ্র
সংগীত</b>- মানসী বড়ুয়া, নুপুর বড়ুয়া, উৎপলা বড়ুয়া, জয়শ্রী বড়ুয়া, জবা
চক্রবর্তী, আন্না পাল, মেঘলা দেব, বনানী চক্রবর্ত্তী, সুপর্ণা পাল, কাজল
দত্ত, পিংকী ধর, অনামিকা দত্ত, সীমা চৌধুরী, মিতশ্রী চৌধুরী, পংকজ বৈদ্য,
মৌসুমী সেন তনু, কাজল দত্ত, কেসিউ, এ্যানি চৌধুরী প্রমুখ।<br /><b>নজরুল সংগীত</b>-
আবদুশ শুক্কর আজাদ (বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত সংগীত শিল্পী ও সংগীত
পরিচালক), বশিরুল ইসলাম (বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত সংগীত শিল্পী ও
সংগীত প্রযোজক), আহমদ বশীর, এ.এস.এম সানাউল্লাহ, জাফর আলম আজাদ, ইছহাক
মাহমুদ, ফাতেমা ইসলাম, সন্তোষ কুমার সুশীল, লায়েক হায়দার, রিনা কনা পাল,
নাঈমা তাজনোভা ইসলাম চৌধুরী, রিতা দাশ, সুষমা রাম শান্তা, সুনিয়া বড়ুয়া,
রিটা ভট্টচার্য, কল্যাণ কান্তি পাল, সুপর্না শর্মা, রাখি গোলদার, সনিন্দ্র
শর্মা, প্রিয়াংকা দত্ত মুন্না, পুলমী দাশ, মিলন চন্দ্র নাথ, মুনমুন
চক্রবর্তী, মুনমুন চৌধুরী অপু (চ্যানেল আই’র তালিকাভুক্ত সংগীত শিল্পী)
প্রমুখ।<br /><b>পল্লী গীতি</b>- রেজাউল আমিন মোর্শেদ (বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতারের
তালিকাভুক্ত কন্ঠশিল্পী), জাহাঙ্গীর আলম, কাকলী বড়–য়া, সুমি আক্তার, গোলাম
মোস্তফা বাবুল, মুবিনুল ইসলাম, শামীম আক্তার, ইসমাইল মুন্সি, দুলাল
আচার্য্য, ইছহাক বদরী, শেখ জয়নাল আবেদীন, দেবাশীষ ভট্টচার্য, রোকন কান্তি
দেব, আবুল কাসেম, এস.এস. জসিম, ছালেহা নাসরিন স্বপ্না, নাজনীন সোলতানা
জোঁনাকী, সংগীতা বড়ুয়া, গোলাম মোর্শেদ, সুলেখা বড়ুয়া, প্রদীপ ঘোষ, সুবর্ণা
হক রূপা, শ্রী জয় দত্ত, অমৃত লাল মন্ডল, মোমিনুল ইসলাম নওশাদ, সুমন দে
প্রমুখ।<br />লোক গীতি/হাসন রাজা- গোলাম মোর্শেদ, সুলেখা বড়–য়া, জুলেখা বেগম, গোলাম আলী,সুমন দে প্রমুখ। <br /><b>দেশাত্ববোধক-</b>
সোনিয়া বড়ুয়া, তানজিন বিনতে রহিম, প্রিয়া দত্ত, ইমা বড়ুয়া, নাইম ছিদ্দিকী,
ছাদিয়া বিনতে রহমান, তাহরীম আফরোজা, টুমপা, জোহাইকা তাবাচ্ছুম রেশমী,
মন্দিরা বড়ুয়া প্রমুখ।<br />আঞ্চলিক গান- সিরাজুল ইসলাম আজাদ (বাংলাদেশ
টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুুক্ত সংগীত শিল্পী ও সংগীত প্রযোজক),
বুলবুল আক্তার, জাফর আলম আজাদ, মো.আমান উল্লাহ, আলম শাহ, ইসহাক বদরী,
দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ সেলিম, অনামিকা বড়–য়া, এস্তফা আরা, মৈত্রী বড়–য়া,
শেলী বড়–য়া, মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, মো. নুরুল আলম প্রমুখ। <br /><b>রাখাইন শিল্পী</b>- কি কি প্র“, ক্যমন, নি নি, উথিন ঞো, ক্যাচেন, কেসি উ প্রমুখ।<br /><b>শিশু
শিল্পী</b>- সুমং চৌধুরী, বৃষ্টি চক্রবর্তী, পাপিয়া দাশ, সৌরভ ভৌমিক, তানজিনা
মরিয়ম রুম্পা, আফরোজা ইসলাম, ফজলেতুন নিগার রিফাত, সানজিনা হুসনা বাপ্পী,
আবিদা জান্নাত শ্যাম্পা, শাকির আহমেদ শুভ, রিতীল পাল, হিরু রানা বড়ুয়া,
শাহ্রিন নাছরিয়া রুম্পা, কাকলী পাল, ঋতিল রুবাইয়া হ্নদি, সাবজিন হাছনা
লাইছি, শতাব্দি চৌধুরী, তাছনোভা তাশিন রহমান, রাজেশ্বর দাশ গুপ্ত, মুমিতা
সুমি দাশ, মাকছুদুল হক আকাশ, শামীমা পারভীন শিমু, ফাতেমা রুহী, নাফিস আবিদ
প্রিয়ম, হোছাইন রহমান রাফছান, সুবর্না দাশ, প্রিয়াল দাশ, নিলয় চৌধুরী
প্রমুখ।<br />বেতার ও টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত না হয়েও গান গেয়ে কক্সবাজার তথা
চট্টগ্রাম সঙ্গীত সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছে- প্রয়াত
এডভোকেট মোহাম্মদ আলী, দক্ষিণ চট্টলার আঞ্চলিক গানের সম্রাট জাহাঙ্গীর
আজাদ, নুরুল হুদা, মোকতার ফকির, তহিদুল আলম, বেবী আকতার, বদিউল আলম, সেলিনা
আকতার, নাসিমা আকতার, জিয়া, পারভীন আকতার, রওশান আকতার, রুপ সাগর, দিল
আরা, রিজিয়া আকতার, মনসুর আলম আজাদ, কামাল আজাদ, নেজাম উদ্দিন, মো. নুর
হোসেন, শ্রিপা প্রমুখ।<br />সঙ্গীত সমাজে গীতিকারের ভূমিকাও কম নয়।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত কক্সবাজারে গীতিকার
হিসেবে নিরবচ্ছিন্ন অবদান রেখে চলেছেন- কবি ও নাট্যকার আশীষ কুমার,
কন্ঠশিল্পী সিরাজুল ইসলাম আজাদ, কন্ঠশিল্পী আহমদ বশির, কথাসাহিত্যিক ও
কন্ঠশিল্পী শেখ মোরশেদ আহমেদ, কবি সিরাজুল হক সিরাজ, কবি আবদুল হাকিম তাদের মধ্যে অন্যতম। </div>
<div style="text-align: justify;">
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের একুশে বইমেলায় কক্সবাজারের
শেকড়সন্ধানী কবি সিরাজুল হক সিরাজ’র প্রথম গীতি সংকলন “নীল জোছনার ঘর’
বলাকা প্রকাশনী থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। বইটি কক্সবাজারের ভূমিজ
সন্তানদের মধে প্রথম গানের সংকলন। বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার
হিসেবে নাম পাওয়া যায় অধ্যাপক রাহগীর মাহমুদ, আতাহার ইকবাল, টিভি অভিনেতা
কাউসার আহমেদ চৌধূরী, মুহম্মদ নাসির উদ্দিন, আশিক বন্ধু, গীতিকার ও কন্ঠশিল্পী
আবদুল্লাহ আল মামুন, এ.আর.হারুন, চাষী রুপম, ইসহাক বদরী, জোবায়ের আহমদ,
শাহেদ ইকবাল প্রমুখ। <br />এ ছাড়া গান লিখে যারা কক্সবাজারের সংগীতকে এগিয়ে
নিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে প্রফেসর মোশতাক আহমদ, অধ্যাপক মুফীদুল আলম,
জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, মো. আমানত উল্লাহ, লোকসাহিত্য
সংগ্রাহক-নাট্যকার মাস্টার শাহ আলম, আলম শাহ, আহমদ শাহ বাঙালি, নুরুল হুদা,
কবি ও গীতিকার আসিফ নূর, কবি শফিউল আলম মাসউদ, এস.বি রতœ, সোহেল মাহমুদ,
এবি সিদ্দিক,আবদুল খালেক, এম.এ তালেব, ইউনুছ, মাহমুদ হাসান টুকুন, মনোয়ারা
আকতার মিনু প্রমুখ। উল্লেখ্য, মুফীদুল আলম রচিত ও মরহুম ওস্তাদ আবু বকর
ছিদ্দিকী সুরারোপিত ও স্বরলিপিকৃত দেশাত্মবোধক, রাগ ভিত্তিক ও ঋতু বিষয়ক
৪টি গান বাংলাদেশের বর্তমান কালের একমাত্র সংগীত বিষয়ক পত্রিকা মাসিক সরগম এ
ছাপা হয়। এ ছাড়া মুফীদুল ্আলম এর কথা, সুর ও স্বরলিপিতে আরও কয়েকটি গান
ছাপা হয়। কক্সবাজারের তৃতীয় স্বরলিপিকার হিসাবে আব্দুশ শুক্কুর আজাদের স্বর
লিপি করা গানও এ পত্রিকায় ছাপা হয়।</div>
<div style="text-align: justify;">
<b>গরাণ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১২/ কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমীর মুখপত্র সমুদ্র সংলাপ এর ১৫তম সংখ্যায় প্রকাশিত</b>। </div>
</div>
KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0tag:blogger.com,1999:blog-8274603002691299024.post-4132754983523876132013-07-06T02:50:00.001-07:002013-07-06T02:50:17.447-07:00Cox's Bazar Sahittya Academy: কক্সবাজারের সঙ্গীতপরিমণ্ডল<a href="http://coxsbazarsahittyaacademy.blogspot.com/2013/07/blog-post_8781.html?spref=bl">Cox's Bazar Sahittya Academy: কক্সবাজারের সঙ্গীতপরিমণ্ডল</a>: : কালাম আজাদ : মানব সভ্যতার অগ্রগতি সাধিত হয় উৎপাদন ব্যবস্থার বিকাশের সাথে এবং এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সংস্কৃতিসহ সভ্যতার অন্যবিধ উপাদা...KalamAzadhttp://www.blogger.com/profile/08818227047144888694noreply@blogger.com0